নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প দা তি ক

০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪


লিংক----প দা তি ক/৪



হাত মুখ ধুয়ে লুঙ্গি পরে একটা গেঞ্জি গায়ে সুবোধ সদ্য ঠিকঠাক করা চারপাইটার উপর বসলো।
ঊর্মিলা ঘরে নেই। বোধ হয় বাইরে গেছে। সুবোধের মনে পড়লো কয়েকবার চা বিস্কুট ছাড়া সে সারাদিন আজ তেমন কিছুই খায়নি। পেটে বেশ জানান দিচ্ছে খিদে। ঘরের ভেতরটা ভালো করে লক্ষ্য করার চেষ্টা করলো। দেখলো জন্মাবধি দেখা কোন বাস-গৃহের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। খুব নিরীহ এক মালিন্য যেন সর্বত্র ঝুলছে। নিজের চেনা জীবন যাপনের কোন চিহ্ন নেই এখানে। মাঝখানে এক চৌকিতে শুধু ছবির মত নিদ্রামগ্ন চার চারটে শিশু। কিছুটা দূরে একটা কেরোসিনের কুপি জ্বলছে। সুবোধের চোখে ঘরটাতে শুধু ‘নাই’এর সমারোহ।এতগুলো ‘নাই’ এর মধ্যেও তা হলে মানুষ বাঁচে,বেঁচে থাকে--এই বেঁচে থাকা মানুষদের কি সে চেনে? তার আজন্ম শিক্ষা আদর্শ রাজনীতি বা ছাত্র আন্দোলন থেকে সে কি কোনোদিন এই সব মানুষদের চেনার কোনো প্রেরণা পেয়েছে?--না। সে শুধু শুনেছে এ বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই নাকি অনেক ‘নাই’এর মধ্যে বাঁচে। হয়তো বাঁচে। কিন্তু এরা তো তার কাছে শুধু তথ্য আর পরিসংখ্যান মাত্র ছিল এ যাবৎ। তবে কি সে এই বিশ্বব্যব্যস্থার এক ক্ষুদ্র কণার দেখা পেলো আজ? ভাবনার ভেতর সুবোধ খুব বেশি আর ডুবতে পারলো না। ঊর্মিলা ঘরে ঢুকে পড়লো। মনে হয় বাইরে কোথাও থেকে স্নান সেরে এসেছে। আবছা আলোতে ঘরের খুব বেশি দেখাও যায় না। সুবোধকে উদ্দেশ্য করে বললো—সারাদিনতো মনে হয় পেটে কিছু পড়ে নি। আইসা পড়েন । গরীবের খাওয়া একটু খাইয়া নেন, না হইলে ঘুম হইবো না। বিনাবাক্যে সুবোধ এক সময় খেতে বসে গেল। অতঃপর এই মাত্র দেখা অনেক ‘নাই’এর নুন তার শরীরে প্রবেশ করতে লাগলো।

যে পরিমান ক্লান্তি আর ধকল গেছে দু’জনের তাতে রাতে খাওয়ার পর জেগে থাকাটা অসম্ভবই ছিল। কিন্তু কথা বলতে বলতে কিছুটা ঝিমুনি এলেও তারা ঘুমিয়ে পড়লো না। একটা অসম্ভব সহাবস্থানের সঙ্গে তারা মানানসই হওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। তার মধ্যে তারা টুকটাক কথা বার্তাও চালাতে লাগলো। রাত হলেও বস্তি বোধ হয় জেগে থাকে। গা’লাগা ঘর, কথাবার্তা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস কানে আসে। রাত হলে আরো বেশি শোনা যায়। সুবোধ ভাবছে একটু রিস্ক নিয়ে রাতটা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পড়ে থাকলেই হতো । পরের দিন, মানে দিনের বেলায় ভাবার সময় পাওয়া যেতো। ঊর্মিলার কথায় এতোটা ভয় না পেলেও চলতো। আসলে খুব সাহসী সে কোনকালেই ছিল না । অবস্থার বিপাকে আজ তার এই অবস্থা। তার উপর নতুন দেশ—সব কিছুই নতুন, অজানা। তাছাড়া ভয়তো সেই কবে থেকেই তার পিছু নিয়েছে। প্রাণের ভয়। এর কোন আলাদা কোনো ব্যাখ্যা নেই তার কাছে। সবটাই তার কাছে এখন প্রাণ রক্ষার তাগিদ। কথায় কথায় ঊর্মিলা জানিয়ে দিল যে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তার পরিচয় হবে ঊর্মিলার দূর সম্পর্কের ভাই। ওপার থেকেই এসেছে। ওপার থেকে এখানে অনেকেই আসে, যায়। চোরাই পথে এলো কি পাসপোর্ট করে এলো, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। ঊর্মিলাও একসময় ওপারেরই ছিল। যেন এককালে তাদের অবস্থা যে ওপারে একপ্রকার ভালই ছিল তা আজ ভাইকে দেখে বোঝা যায়। একটা আবছা প্রমাণ আর কি। দিন সবার সব সময় সমান থাকে না। তাই ঊর্মিলা আজ এই রকম । এতে কেউ সন্দেহ করবেনা ।

জীবনের এই স্রোত তাদের কোন দিকে টানছে তারা পরিষ্কার বুঝতে পারছে না। বোঝার মতো ফুরসতও নেই তাদের। ঊর্মিলা এক রকম গা’য়ের জোরেই চলছে। যা তার একমাত্র পুঁজি। আর সুবোধ মাঝে মাঝে টের পাচ্ছে নিজের কাছেই নিজের অপরিচিত হয়ে ওঠার অনুভূতি।

দেশত্যাগ, ভাঙা সমাজ, ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ, একটা অবয়বহীন স্বাধীনতা, একটা আত্মকেন্দ্রিক জৈব উত্থান—এ-সব কিছুর মধ্যে থেকেও কেমন করে যে সে ছিন্নমূল হয়ে পড়লো—সুবোধ চেষ্টা করে
উত্তর খোঁজার । পায় না।

জীবন, জীবনের এই সব কথা বলতে বলতে বা কখনো কথা না-বলা নৈঃশব্দের ভেতর তারা এক সময় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল । (ক্রমশ:)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.