নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প দা তি ক

০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১৫

লিংক---পদাতিক/১১ ১২


১৩
কল্যান সেন’এর দেয়া কুড়ি টাকার দায় মেটাতে একদিন সুবোধ সময়মতোই দেবেনের দোকানে ঢুকলো। দেবেন তো দেখে অবাক। এলেও যে দিনের বেলা কখনো চা খেতে আসে, সে কিনা আজ এই সময়!
--কী হলো শালাবাবু আজ হঠাৎ এই সময়?
--এই একটু এলাম আর কি।
--চলবে নাকি একটু?
--হ্যাঁ, এই সময়তো আর চা চলেনা—মানে ঐ আর কি।
--বসেন বসেন।
-- দ্যাও এক গ্লাস।
পাশে ততক্ষণ আড্ডা জমজমাট। ঋতিক ঘটকের কোন সিনেমা নিয়ে চলছে। কিছুদিন হলো উনি বুঝি মারা গেছেন। সুবোধ গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে টেবিলে নামিয়ে রাখলো গ্লাস। মনে মনে ভাবতে লাগলো কল্যান সেন’কে কী কী বলতে হবে। অনেকটাই তাকে বানাতে হবে। ঋতিক ঘটকের পর আবার শুরু হয়েছে সাহিত্যের অশ্লীলতা, মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে সশস্ত্র বিপ্লব—না সশস্ত্র বিপ্লব নিয়ে কিছু বলা যাবে না—বরং ‘ময়নামতী’ নাটকের নারী চরিত্রের রহস্য তাৎপর্য নিয়ে কিছুটা বললেও চলবে।
আসলে ওদের আলাপ আলোচনা খুব বৃত্তবন্দী। নিজেরাও অনেকটা তাই। এই যে আজ সুবোধ অনেকক্ষণ ওদের কাছকাছিই বসে আছে সেটা ওদের গ্রাহ্যের মধ্যে একেবারেই নেই। যাই হউক, রিপোর্ট একটা তাকে দিতেই হবে। বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলার তার খ্যাতি আছে। এটা ছাত্র জীবনের বন্ধু মহলে জানতো অনেকেই। এই কারণে বিশেষ করে কুসুম তাকে গল্প লেখার জন্য খুব বলতো। কিন্তু তার বক্তব্য ছিল আমি লেখক নই কথক। আসলে লেখা-কাজ তার কাছে এক শ্রমসাধ্য বিষয় ছিল বরাবর।

এদিকে হঠাৎ-ই সুবোধের মন আবার আড্ডার দিকে ঘুরে গেল। এখন একটা গল্প বলছে অরিন্দম। গল্প ঠিক নয়, শুনে মনে হচ্ছে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা। ঘটনা স্থলও মনে হচ্ছে অরিন্দমের নিকট প্রতিবেশীর বাড়ি। আত্মীয় হলেও হতে পারে। যেমন, সেখানে সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে একটি পরিবার এসেছে।পরিবারের বিবাহযোগ্যা একটি মেয়ে আছে। ওদেশে যুবতী হিন্দু মেয়ে নিয়ে পরিবারের নানা বিপদ-তো আছেই, তারমধ্যে আছে যোগ্য পাত্রের অভাব।মূলত সেই কারণে তাদের এই দেশে আসা। এখানে ইতিমধ্যে কয়েকটি পাত্রের খোঁজ খবর পাওয়া গেছে। দেখাশোনাও হয়েছে কয়েকটি। কথাবার্তা চলছে। দু’এক পক্ষের পছন্দও হয়েছে। এরমধ্যেই একদিন সেই বাড়িতে হৈ চৈ ব্যাপার। কারণ বিবাহযোগ্যা ঐ মেয়েটি নাকি ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছে।একবার সে আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছে। দেখে শুনে সারাবাড়ির লোকজন তটস্থ। শোনা যাচ্ছে এক পাত্রপক্ষের লোক ঐদিন বাড়িতে এসে বলে গেছেন—মেয়ে-তো সুন্দরী—আমাদের পছন্দই, কিন্তু একাত্তর সনে, হিসেব করে দেখা যাচ্ছে মেয়ের বয়স ছিলো তেরো।সুতরাং ঐ সময়, সবাই জানে, গোপন করার কিছুই নেই, ওদেশে-তো আইন কানুন বলে কিছু ছিলো না, যে যা খুশি করেছে। ঐ অরাজকতার মধ্যে একটা মেয়ের নষ্ট হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। আমরা দুঃখিত। হিন্দু ধর্মে সতীত্ব একটি ঘোরতর ব্যাপার, আপনারাও মানেন নিশ্চই। আমরা আর এগোতে চাই না। অতঃপর পরস্পর আরো শোনা যায় যে পাত্র পক্ষের ঐ ভদ্রলোক নাকি একাত্তর সালের পর এই দেশে এসেছেন। এখানে পাত্রী বাংলাদেশের—এই কথা শুনে তিনি পাত্রপক্ষের একজন একান্ত সুহৃদ হিসেবে পাত্রীর বয়স নিয়ে হিসেব নিকেশ করে তার মতামত শুধু পাত্রপক্ষকেই দিলেন না, বাড়ি বয়ে এসে পাত্রীপক্ষের দরজায় দাঁড়িয়ে মুক্ত কণ্ঠে তাদেরকেও বলে গেলেন।
সতীত্বের এই গল্পটি সুবোধ সহ্য করতে পারলো না। গ্লাসের বাকি মদটা খেয়ে আর এক গ্লাস দিতে বললো দেবেনকে।
--কী ব্যাপার আজ খুব ফুর্তি মনে হচ্ছে। ভর্তি আর এক গ্লাস টেবিলে রেখে দেবেন প্রশ্ন করলো সুবোধকে।
--হ্যাঁ, আজ খুব ফুর্তি—ফুর্তির রাত।

১৪
দেবেন সুবোধের মুখ দেখে খুব ভরসা পেলো না। বোঝা যাচ্ছে নেশা হয়েছে বেশ। এদিকে অরিন্দমদের দলটা ঊঠে পড়লো। গ্লাস শেষ করে সুবোধও ঊঠে পড়লো। দেবেনকে টাকা দিতে গিয়ে দেখলো অরিন্দমও তাদের বিল মেটাচ্ছে। দোকান থেকে বের হওয়ার মুখে হঠাৎ কী মনে করে সুবোধ অরিন্দমকে বলে উঠলো,
--একটা কথা বলবো?
--বলুন। উত্তর দিতে দিতেই অরিন্দম নির্লিপ্ত চোখে সুবোধকে দেখে নিল।
--মাফ করবেন, আড্ডার বাইরের কেউ হয়েও আমি আপনার বলা ঘটনাটা শুনেছি।
--ঠিক আছে—তো কথাটা কী?
--না, বলছিলাম যে মেয়েটির এরপর কী হবে?
--তা দিয়ে তোমার কী দরকার?
--দরকার-তো আমাদের সকলেরই।
--মানে, কী বলতে চাও?
--প্লিজ, আপনি রেগে যাবেন না---
হঠাৎ মানস এগিয়ে আসে। অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে বললো—
--কী হয়েছে রে?
--হবে আবার কী, এই যে ইনি, ইনি আমাদের কথাবার্তা মন দিয়ে শুনেছেন, এখন বলছেন—মেয়েটার কী হবে—এটা ওনার জানা দরকার।
অরিন্দমের কথা শুনে মানস সুবোধের দিকে তাক করে বললো—
--নেশা হয়েছে, ক’গ্লাস মেরেছো—
--নেশা একটু হয়েছে, কিন্তু কথাটা---
--কিন্তু টিন্তু কী হ্যাঁ—নিজের কাজ করোগে বাছা, অন্যের কথায় নাক গলাতে এসো না।
--সরি! দুঃখিত—আপনাদের ডিস্‌টার্ব করলাম—
কথাবার্তার মাঝেই দেবেন এসে সুবোধকে ঠেলতে ঠেলতে দূরে নিয়ে গেল।–বললো, যাও তো যাও—বিনা কামে প্যাচাল পাইরোনাতো। যাও, ঘরে যাও।
দেবেন দেখলো এই দলটা তার সলিড ‘সলিড কাস্টমার’।সুবোধের সঙ্গে ঝামেলা হয়ে গেলে হয়তো আর এদিকেই আসবে না। সুতরাং সময়মতো পদক্ষেপ।

প্রথম দিকের রাতে সাধারণত সুবোধের ঘুম হয় না। আজ ভেবেছিলো পেটে যখন দু’তিন গ্লাস পড়েছে তখন হয়তো ঘুম আসবে। কিন্তু কোথায়। অরিন্দমের সঙ্গে কথাটা বলতে গিয়ে নেশাটাই কেটে গেল। আর নেশা-কাটা জাগরণে জেগে থাকলো আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করা মেয়েটি, যার বয়স ছিলো সত্তর সনে মাত্র তেরো বছর। এ ছাড়া হিন্দু ধর্ম—সতীত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি।
এভাবে নির্ঘুম শুয়ে থাকার ভেতর সুবোধ সাধারণত নিজের সঙ্গে এক দীর্ঘ কথপোকথন চালায়। পরিণামে একেবারে বিধ্বস্ত না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু আজ আর কোনো কথপোকথন নয়, যেন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার হয়ে পড়েছে। ফলতঃ একটা ছট্‌ফট্‌ করা ধারালো অবস্থা। মাঝে একবার ঊর্মিলা জানান দিলো যে রাত অনেক হয়েছে। না ঘুমিয়ে এতো বারবার বিড়ি টানা বা বসে থাকা কেন। টের পেলাম মদও খেয়েছিস—কে খাওয়ায় তোকে মদ? প্রশ্ন করে উত্তরের অপেক্ষা করে না ঊর্মিলা। এটাই তার দস্তুর। দু’ মিনিটও সময় দিতে পারে না। ঘুমিয়ে পড়ে। বোঝা যায় এ-ঘুম তার খুব জরুরী ঘুম। কারণ, তার পরের দিন আছে।

ঘর জুড়ে নিঃসাড় এক ঘুমের তরঙ্গ বয়ে চলেছে। ছিঁটেফোঁটা রাস্তার আলো বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া সত্ত্বেও ঘরের এই অন্ধকার ঘুমের পক্ষে খুব অনুকুল। আজ শুধু শুয়ে বা বসে থাকতে পারছে না সুবোধ। মাঝে মাঝে ঘরের মধ্যে এক পা, দু’পা করে হাঁটাহাঁটি করছে বা কখনো দাঁড়িয়েও থাকছে। অন্ধকারে এমনই এক অন্যমনষ্কতার ভেতর একটা স্পর্শ পেয়ে বেশ চমকে উঠলো সুবোধ। বোঝাই যাচ্ছে তার স্নায়ু বেশ পীড়িত। টের পেলো স্পর্শটা ঊর্মিলার।চট্‌ করে সে যেমন ঘুমোয়, আবার খুব সামান্য শব্দেও সে জেগে ওঠে। খুব নীচু গলায় বললো—কী রে দাঁড়িয়ে আছিস্‌ যে?
--কিচ্ছু না, শুয়ে পড়ো তুমি।
--কিন্তু কী হইছে কী তোর?
--কী হইবো আবার—কিছু না—তুমি শোওগে যাও।
এই বলে সুবোধ ঊর্মিলার হাত ছাড়াতে গেল। কিন্তু ঊর্মিলা বেশ দৃঢ় গলায় বলে উঠলো—
--কী হইছে আমারে কওন লাগব।
বলে ঠেলতে ঠেলতে সুবোধকে তার চারপাইয়ের উপর বসিয়ে দিল।
সুবোধের কাছে ঊর্মিলার কোন আড়ষ্টতা নেই আর। এখন তার মতো করে সে সুবোধের কাছে জানার চেষ্টা করতে লাগলো—কীসের জন্য তার এই নির্ঘুম রাত—কেনই বা সে এতোটা অবোধ্য লাগে তার কাছে।
প্রশ্নের উত্তর ঠিক পেলো কি পেলো না ঊর্মিলা আর বুঝতে পারে না। একসময় টের পায় সুবোধ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তার খোলা বুকের উপর সুবোধের হাত। সন্তর্পণে একসময় সুবোধের হাত বুক থেকে নামিয়ে রেখে ঊর্মিলা নিজের বিছানায় চলে গেলো। (ক্রমশঃ)




মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.