নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প দা তি ক

১২ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৪১



লিংক----পদাতিক/১৭,১৮

১৯
ভিড় আর ভিড়। সুবিধে আছে ভিড়ের। নানা ভাষা, নানা জাত। স্টেশনের ওয়েটিং রুমের এককোণে ঠেলে ঠুলে জায়গা নিয়েছে সুবোধ আর জাহানারা। রাতের ঠাঁই। ট্রেনটা অনেক দেরিতে শিয়ালদা পৌঁছোয়। পৌঁছনোর পর তারা উভয়েই স্টেশনের ভিড় দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। কিন্তু মাথায় তখনও ধরা পড়ার আতংক। তাই শিয়ালদা স্টেশন খুব নিরাপদ মনে হলো না। ফলে তারা বেরিয়ে আবার লোকাল ট্রেনের টিকিট কেটে চলে আসে বালিগঞ্জ। এসে এই ওয়েটিং রুমে ঢুকে পড়ে। প্রকাশ্য স্টেশনে বসা বা ঘোরাঘুরি করার বিপদ আছে। মনে মনে ভাবলো কাজটা খারাপ হয়নি। রাতটা কাটুক। পরদিন সকালে যা করার করা যাবে।

দু’জন পাশাপাশি বসে যেন কিছুটা দম ফেলার সুযোগ পেল। মানুষের ঘেরাটোপে কিছুটা নিশ্চিন্তিও বোধ করলো। ফিরে তাকালো পাশে বসা জাহানারার দিকে। এতক্ষণ সময় পাশাপাশি চলা সত্ত্বেও সে জাহানারার দিকে ঠিকমতো তাকাতে পারে নি। এখন তাকিয়ে দেখছে। মাথায় ঘোমটা। কাপড়টা একটানা পরে থাকার দরুণ যা হয়, একেবারেই খারাপ অবস্থা। জড়বৎ একজন মানুষ অথবা কাপড়ের একটা পুটুলি মাত্র। ঘর থেকে বের হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুবোধের সঙ্গে তার কোন কথা হয়েছে কিনা সুবোধ মনে করতে পারছে না। জাহানারার দিকে মুখ ঘুরিয়ে সুবোধ জিজ্ঞেস করল—‘বলি, সঙ্গে কিছু আছে’?
প্রায় দু’দিনের নিঃশব্দ অনুসরণ। ট্রেনের মধ্যে ঠেলা,ধাক্কা, ঘুমের মধ্যে পরস্পর আশ্রয় করা—হঠাৎ জাহানারার মনে হলো, যেন কতকাল কথা কওয়া হয়নি। নিজের কণ্ঠস্বর যেন নিজেরই আর মনে নেই। বিমূঢ় জাহানারা উত্তর দিতে গিয়ে ভীষণ শ্রান্ত বোধ করলো। তবু অনেকটা চাপা আর ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে উঠলো—‘না’।
বলেই বুঝতে পারলো আর একটু বলা দরকার। সুবোধ উত্তর শুনে শুধু বলল—‘অ’। প্রায় সঙ্গেই জাহানারা বলে উঠলো,
--একখান চুড়ি আছে সোনার।
--থাক্‌। কাপড়চোপড় আছে কিছু?
--একখান আছে, ছিরা, পরন যাইব না।
--হুম।
--আমারে বাপের কাছে দিয়া আসেন।
--যাওয়ার উপায় নাই।
--য্যামন কইর্যাা পারেন, আপনের পায় পড়ি—
--উপায় নাই, বললাম তো। ধরা পড়লে আমি শ্যাষ, সাথে থাকলে তুমিও বাঁচবানা।
--হায় আল্লাহ্‌!
হাতে বিড়ি আর দেশলাই নিয়ে সুবোধ উঠে দাঁড়ালো। বলল,
--নড়বানা,এইখান থাইক্যা—আমি আসতাছি--
--যান কই, লইয়া যান আমারে—
ফিরে দাঁড়াল সুবোধ। কাছে এসে একটু ঝুঁকে বলল
--যাব না। ফেলে রেখে যাওয়ার জন্য সাধ করে আনিনি। বস চুপ করে। এখুনি আসছি।

ঘোমটার আড়াল থেকে যতক্ষণ সুবোধকে দেখা গেল এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকল জাহানারা। দৃষ্টির বাইরে যেতেই বুকটা তার কেমন ধড়াস করে উঠলো। টের পেল তলপেটে মারাত্মক মোচড়। সঙ্গে মাথা ঘোরানো। ক্রমে ঝাপসা হয়ে এলো চোখ। ধীরে ধীরে অসম্ভব ভারি হয়ে এলো শরীরটা। দেয়াল ঘেঁসে কোনরকমে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর আর মনে নেই।
মনে হলো অনেকক্ষণ। চোখ মেলে দেখে সুবোধ তার দিকে ঝুঁকে আছে। মুখে মাথায় জল—ভেজা ভেজা। ঘোমটার জন্য কাপড় না পেয়ে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। জায়গাটা জলে ভিজে গেছে। সুবোধ ধরে ধরে একটু সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো। সামান্য পোটলা দুটির একটি খুলে শুকনো একটা কাপড়ের অংশ বের করে জাহানারার হাতে দিল।

পাশে রাখা—এতক্ষণ জাহানারার চোখে পড়েনি, একটা ঠোঙার মধ্যে কিছু খাবার আর প্লাস্টিকের বোতলে জল। সুবোধ ইশারা করলো ওগুলো খাওয়ার জন্য।
--আপনে খান—
--খেয়েই এনেছি। তাড়াতাড়ি খাও।
জাহানারা একটু মুখ ঘুরিয়ে খেতে লাগলো। বোঝা গেল খিদের তীব্রতা।
--বাড়ি গেলে বাপের ঘরে নেবে-তো?
--ক্যান--?
--ঠিক করে ভাইবা কও। তাড়াহুড়া নাই।
--না নিলে ওইখানেই মরুম।
--মরবাই যখন, তখন আর পলাইলা ক্যান?
জাহানারা চুপ। বিহ্বল চোখে এক পলক সুবোধকে দেখে চোখ নামিয়ে নিল।

অনুচ্চ গলায় তাদের এই কথাবার্তাগুলো একান্ত তাদের মধ্যেই থেকে গেল।‘যান কই, লইয়া যান আমারে’—কথাগুলো সুবোধের মাথায় তখন থেকে রিন রিন করে বাজছে। কান্না-ভেজা এই আর্ততার সঙ্গে তার কি আগে কোনোদিন দেখা হয়েছিল?—মনে করতে পারছে না। ভেতরে ভেতরে খুব অস্থির লাগছে তার।
সুবোধ কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণ পায়াচারি করলও এদিক ওদিক। তারপর একসময় জাহানারার পাশে একটু জায়গা নিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসেও পড়ল। দেয়ালের একটা ঠান্ডা স্পর্শ এই সময় যেন সুবোধকে একটু বেশি মাত্রায় সচেতন করে তুলল। চোখে ঘুম, কিন্তু শরীর ত্রস্ত। একটু পরেই বোঝা গেল খাওয়ার পর জাহানারার ঘুম—কেঁপে কেঁপে ওঠা শ্বাস-প্রশ্বাস—বসে বসেই ঘুমোচ্ছে। ঘুমোক। ওর অনেক ঘুম দরকার।(ক্রমশ:)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.