নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প দা তি ক

২০ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:২৭



লিংক--পদাতিক/২৩


২৪
ক’দিন বলা সত্ত্বেও সুবোধের আর দুপুর আসা হয় না। একা একা দুপুরে তার কান্নাও পায় মাঝে মাঝে। কিন্তু সুবোধকে কথা দিয়েছে আর কাঁদবে না। কাজের বাড়ির কর্ত্রী, যাকে এখন জাহানারা মাসি বলে ডাকে,আজ এক শাঁখাওলাকে ডেকে তার হাতে একজোড়া শাঁখা পরিয়ে দিল। দুটো লাল চুড়িও কিনে দিল। বললেন—সধবা মানুষের হাত আমি খালি দেখতে পারি না। সুবোধ এলে এগুলো দেখাতে পারতো। এরমধ্যে একদিন বললেন—এই মেয়ে তুই-তো ছুটি নিস না-রে। সপ্তাহে একদিন ছুটি আছে তোর। আর শোন রবিবার করে তুই এখন ছুটি নিবি। রবিবারে বাড়ির সবাই থাকে—কাজ কর্ম আমরা করে নেব। তোর শরীর দেখে-তো আমার সন্দেহ হয়—নিজে-তো কিছু বলিসও না। যাক এমাস থেকে তোর মাইনে আরো পঞ্চাশ টাকা বাড়ানো হলো। ভালো খাওয়া দাওয়া করবি। লজ্জায় কৃতজ্ঞতায় জাহানারা মাথা নিচু করে মাসির পা’এর কাছে বসে থাকে। মাসি মনে মনে ভাবে এই যুগে এমন মেয়ে কোথায়, কার ঘরে জন্মালো—ভগবানের কী লীলা কে জানে !

দেখতে দেখতে আরো ক’মাস চলে গেল। অল্প সময়ের শীত এসে চলেও গেল। তবু রাতের বেলা এখনও ঠাণ্ডাটা যাব যাব করেও যাচ্ছে না। সুবোধের এখন বাড়ি ফেরার কোন ঠিক থাকে না। অনেক সময় বেশ রাত হয়ে যায়। আগে সুবোধকে দিয়ে অনেক অফিসের কাজ করাতো,কিন্তু এখন কিছুদিন যাবত নাকি সারাদিন বাইরে বাইরে কাজ করতে হয়। ঠিকাদারের কাজ কি—কে জানে ! সারাদিন নাকি লোহা সিমেন্টের ট্রাকে করে ওখানে পৌঁছাও, সেখানে পৌঁছাও। সুবোধ প্রায় বিধ্বস্ত। কিন্তু তবু সব কাজে সুবোধ। কিছুটা বিদ্যে বুদ্ধি আর ইংরেজি জানার কারণে প্রথম প্রথম নাকি মালিকের সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু ঠিক মত কাজ হাসিল করার দক্ষতা দেখে পরে সুবোধকে মালিক অনেক কাছের করে নিয়েছে। কিন্তু এই কাছের লোক হওয়ার বিপদ সুবোধ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। কারণ তাকে প্রায়ই পুলিশের কাছে প্যাকেট পৌঁছাতে যেতে হয়। এসব অসহ্য মনে হলেও সে কাজ ছাড়তে পারছে না। কারণ সেটা নিরাপদ হবে না অন্তত এখানে থেকে। এসব কারণে প্রায়ই সুবোধ খুব মনমরা থাকে। জাহানারা যতটা সম্ভব তার মানসিক সঙ্গী হওয়ার চেষ্টা করে। সমস্যার ভাগ নিতে চায়। কিন্তু সুবোধ জানে জাহানারা তার ভার লাঘব করতে পারবে না। তবু তার এই মনোভাব সুবোধকে ভীষণ তৃপ্তি দেয়। মাঝে মাঝে ভাবে এই মেয়েটার মধ্যে এত ভালবাসা লুকিয়ে ছিল !—কোথায় বাংলাদেশের কোন গণ্ড গ্রাম থেকে ভাসতে ভাসতে আসা মেয়ে—কিছুই সে হারায় নি দেখছি । শুনেছি মানুষ নাকি ধ্বংস হতে পারে কিন্তু হারে না । সত্যি তাই? জাহানারাকে দেখে কথাটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। তাই-তো সুবোধ বার বার অবাক হয়, বাইরের থেকে বয়ে আনা সব গ্লানি ওর স্পর্শ পেলেই কেমন দূর হয়ে যায় দেখে।

ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে সুবোধ। ঠিকাদারের বে-আইনি কাজের সুবাদে। সুবোধ কর্মচারী, আইনি বে-আইনি নিয়ে মাথা ঘামানো তার কাজ নয়। কিন্তু কাজের সূত্রে পুলিশের কাছে যাতায়াত তাকেই করতে হয়,--আর ভয়টা সেখানেই। ধীরে ধীরে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। মাঝে মাঝে ভাবে সেই কবে থেকে সে পুলিশি সংস্পর্শ চেষ্টা করেও এড়িয়ে থাকতে পারছে না। বিপদ-তো একটাই, সে এখনও পুলিশের খাতায় ফেরার। সেটা এখানে এবং ওখানে—দুই দেশেই।
এখন একটা বড় কাজ শুরু হয়েছে কন্‌স্ট্রাকশানের। কাজের সাইটে একদিন মালিক ডেকে বললো—‘একবার শিলিগুড়ি যেতে হবে যে জয়দেব—একটা পেমেন্ট আর কিছু কাগজ পত্র পৌঁছাতে হবে—ওখানকার অফিসে আমি বলে রেখেছি—কোন অসুবিধে হবে না’।
কথাটা বলে মালিক নিয়ম অনুযায়ী কর্মচারীর কথা না শুনে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। যেতে যেতে আর একবার বললো—‘কাল দুপুরে অফিসে এসো একবার, কথা হবে, আর অফিস থেকে টিকিটটাও নিয়ে নেবে’।
মালিকের চলে যাওয়া গাড়ির দিকে তাকিয়ে সুবোধ এবার আবার একটা বিপদের ঝুঁকি প্রত্যক্ষ করতে পারলো। শিলিগুড়ি যাওয়ার অর্থ তার কাছে খুব পরিষ্কার। ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকছেই। যাওয়া ঠিক হবে কি হবে না বুঝতে পারছে না। সাইটের ম্যানেজারকে বলে আজ একটু তাড়াতাড়িই সে বেরিয়ে গেল। বঙ্কু ঠিকাদার নামে একজনের কাছ থেকে একটা পেমেন্ট আনার কথা আছে। ক’দিন থেকে দিচ্ছি দেব করছে। তার মালিক, শিবু মিত্তিরও বেশ বিরক্ত। সুবোধের বেশ ক’মাসের পরিচয় বঙ্কু ঠিকাদারের সঙ্গে । তার অভিজ্ঞতা এই লোকটা সম্পর্কে একদম ভাল-না বলা ভুল, বলা ভাল শূন্য। পৃথিবীতে না-মানুষের অনেক সৃষ্টির কথা শোনা যায়। কিন্তু শূন্য মানুষ আসলে আগাছা। সুবোধের ধারণা লোকটার জন্ম অপরাধের গর্ভে। মনে হয় এমন কোন অপরাধ নেই যা সে করে না। যাওয়া আসার সূত্রে এ বিষয়ে সুবোধ জানতে পারে ওর মুখ থেকেই। সে আসলে ঠিকাদার নয়, অথচ নামের সঙ্গে কী করে ঠিকাদার কথাটা জুড়ে গেল সে নিজেই জানে না। বোধ হয় ঠিকাদারদের অবৈধ কাজের সঙ্গী বলেই এটা হয়েছে। তার কাজ সবই অবৈধ। সে নিজেই বলে এবং গর্ব করেই বলে। যে কাজে অবৈধতা দরকার বঙ্কুকে ডাকো, কাজ হয়ে যাবে। সাইটের চৌকিদার কাউকে না-বলার শর্তে একদিন বলেছে যে শোনা যায় সুপারি কিলিং-এর ফাইনান্সারও নাকি সে হয় এবং সোনাগাছিতে মেয়ে-বিক্রির একটা সিন্ডিকেটও নাকি সে চালায়। আজ কী হলো কে জানে—পেমেন্ট পাবে না জেনেই সুবোধের যাওয়া, অথচ যেতে না যেতেই ক্যাশ পেমেন্ট দশ হাজার টাকা কাগজে মুড়ে দিয়ে দিল। এখানে ওখানে টাকা পয়সা আনা-নেয়ার কাজে সুবোধ বিশ্বস্ত। তবু বঙ্কু তাকে সতর্ক করে দিল টাকাটা যেন সে সাবধানে নেয় । সুবোধ বঙ্কুর অফিসের বাইরে এসে এক দলা থুথু ফেলল। মনে মনে কয়েকটা খিস্তি আউড়ে নিলো। নিজের উদ্দেশ্যে না বঙ্কুর উদ্দেশ্যে—কার উদ্দেশ্যে বোঝা মুস্কিল। এখন তাকে আবার অনেকটা পথ ডিঙিয়ে মালিকের অফিসে যেতে হবে।(ক্রমশঃ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.