নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০

রাজা সরকার

আমি একজন সামান্য লেখক।

রাজা সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প দা তি ক

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:১৩

লিংক---
পদাতিক/২৬



২৭
চিঠিটা পরদিন ভোরবেলা বালিগঞ্জ স্টেশনের কাছে একটি ডাকবাক্সে ফেলা হলো। স্বাভাবিক নিয়মে পরের দু’দিন বঙ্কু ঠিকাদার আর শিবু মিত্তিরের অফিসের বড়বাবুর মধ্যে কথা-কাটাকাটি হল। বঙ্কু ঠিকাদারের বক্তব্য হলো আমি জয়দেবের হাতে দশ হাজার টাকা গুনে দিয়েছি। সে আপনার অফিসে টাকা জমা না দিলে আমি কী করতে পারি। বড়বাবুর বক্তব্য হলো জয়দেব টাকা পেলে তা নিয়ে অফিসে নিয়ে আসবে এবং জমা করবে। এটাই নিয়ম। বাড়ি নিয়ে যাবে না। বঙ্কু ঠিকাদারের কথা, জয়দেব কোথায়। বড়বাবুর কথা, জয়দেব অফিসে আসছে না। ধরুন ছুটিতে আছে। এই সব কথোপকথনে বঙ্কু ঠিকাদারের মাথা সাধারণ নিয়মে ঠিক থাকার কথা নয়। তার মনে তাই ব্যাপক ক্রোধের জন্ম হয়ে যায়।। সে তখন আর দেরি না করে তার কয়েকজন গুণ্ডাকে কাজে লাগায়। মনে মনে বলে—খানকির ছেলে, আমার উপর বাটপারি ! দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা।

তৃতীয় দিনে যে ঘটনা ঘটলো তার জন্য রেল লাইনের ধারের বস্তি একদম প্রস্তুত ছিল না। সন্ধের দিকে চার পাঁচ জন তাগড়া লোক জয়দেবের ঘর কোন-টা খোঁজ করে। বস্তির-ই কেউ দেখিয়ে থাকবে হয়তো। তারা জয়দেবের ঘরের সামনে এসে ডাকতে লাগলো—জয়দেব, এই জয়দেব, শালা শুয়োরের বাচ্চা, বাইরে আয়। সমস্বরে এই জাতীয় আরো কিছু বিশেষণ প্রয়োগে জয়দেবকে ডাকা হচ্ছে শুনে বস্তির অনেকেই বাইরে বেরিয়ে এলো। যারা বাইরে এলো তাদের কাউকে কাউকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল যে দু’তিন দিন আগে তারা জয়দেব আর তার বউকে দেখেছে। তারপর থেকে আর দেখতে পাচ্ছে না। হয়তো কোথাও বেড়াতে বা কাজে গিয়ে থাকবে। আরো শোনা গেল যে টাকা মেরে দেওয়ার মত খারাপ মানুষ জয়দেবকে দেখে তাদের মনে হয়নি। কিন্তু তাতে আগন্তুক তাগড়া লোকেরা তাদের বিশেষণ প্রয়োগ থামায় নি। তারা একসময় ঘরের দরজা ফাঁকা করে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে। পেছন থেকে তখন একজন বললো—শুনেছি ঘরে মেয়েছেলে আছে বে—থাকলে তুলে নিয়ে চল্‌। কিন্তু ঘরে কিছুই নেই, একটা বড় চৌকি আর একটা খাটিয়া ছাড়া। একজন সঙ্গে সঙ্গে ঘরে টর্চের আলো ফেললো। একজন বললো—শ্‌-শালা ফক্কা ! একজন বললো—পালিয়েছে,চিড়িয়া পালিয়েছে বে--। এরপর আর অপেক্ষা না করে তারা সবাই মূলী বাঁশের দরজা সরিয়ে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লো। কেউ ঘরে মেঝেতে দলা করে থুথু ফেললো, কেউ মাটির হাড়ি লাথি মেরে ভেঙে দিল, একজন বললো ধুস্‌ শালা মজাটাই কেচে গেল মাইরি—এসব বঙ্কু ঠিকাদারের ইয়ার্কি নয়তো? আমাদের মালটা দেবে-তো—মানে টাকাটা? একজন বললো—চল চল দেবে না-তো কী—ওর বাপ দেবে---এরকম বলতে বলতে দলটা বস্তি ছেড়ে চলে গেল। বস্তির লোকেরা জয়দেব আর তার বউকে নিয়ে গভীর চিন্তায় পড়ে গেল।

সেদিন বঙ্কু ঠিকাদার অন্যবারের মতোই জয়দেবের হাত দিয়ে তার মালিকের জন্য পেমেন্ট পাঠিয়েছিল। সেদিন জয়দেবের মালিক শিবু মিত্তির পেমেন্টের খবর পেয়ে রাত এগারটা পর্যন্ত অফিসে অপেক্ষা করে জয়দেবকে না পেয়ে বেশ চিন্তিত হয়েই বাড়ি ফিরেছিল। তা ছাড়া পরদিনই জয়দেবের আবার শিলিগুড়ি যাওয়ার কথা। তাই পরদিন সকালে লোক পাঠিয়ে শিবু মিত্তির জেনে যায় জয়দেব ঘরে নেই। ঘর ছেড়ে চলে গেছে।

বঙ্কু ঠিকাদার সহজে ছাড়ার পাত্র নয়। কিন্তু লোক লাগিয়ে সে হতাশ হয়। অবশ্য পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করেছে যে মাল তারা ধরে দেবে। তবে একটু মাল খসাতেও হবে। একটা চুরির কেস দায়ের করার অপেক্ষা।

চার দিন পর শিবু মিত্তির চিঠিটা পড়ল। অতঃপর বালিগঞ্জ পোস্ট অফিসের অস্পষ্ট সিল দেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো । একসময় বঙ্কু ঠিকাদারকে ফোন করে বললো—টাকাটা পেয়েছি। উত্তরে বঙ্কু কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু—এ বিষয়ে আর কোন কথা নয়—বলে শিবু মিত্তির ফোন নামিয়ে রেখে দিয়েছিল।(ক্রমশঃ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.