নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো অন্ধকারে যাই

সময়টা কি করে দেবে সেটা তার অধিকারী জানে, চাইলে পোকায় ধরে নষ্ট কাল ভেসে যাবে যমুনার বানে

স্বদেশ হাসনাইন

ছোট একটা ফার্মে কাজ করছি । সৌখিন লেখক । ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি । পকেটে পয়সা থাকলে এদিক ঘুরে খরচ করে ফেলি । সুনীলের লেখার ভক্ত, শামসুর রাহমানের কবিতা পড়ি। বিদেশী লেখকের মধ্যে ড্যানিয়েল স্টীলের লেখা ভাল লাগে । সবচেয়ে ঘৃণা করি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে । একাত্তর আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। ইমেইল: [email protected]

স্বদেশ হাসনাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রস্তরনামা

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১১

জহুরুল চাচার মৃত্যুকাহিনী শুনে ব্যথিত হয়েছিলাম। শেষ দিনগুলো তিনি তার নিজের কামরায় একাই কাটাতেন। দেখা শোনার মেয়েটা অন্যত্র চলে গিয়েছিল।আমি তিন চারবার ঢাকা এলেও টাঙ্গাইলে যেতে পারি নি। গত বছর মে মাসে দাফন হয়েছে এটা জানলাম আজকে। কি অবাক যে আমাকে কেউ তার কথা বলল না।

আমাদের বাড়ি কালিহাতীর মুহুরিপাড়া গ্রামে। দেশ ভাগের পর দাদা হিন্দুবাড়ি কিনে সপরিবারে টাঙ্গাইল উঠে এসেছিলেন। আব্বা ঢাকা থেকে সিলেট গেলেন। বদলী হয়ে যাবার সময় আমাদের টাঙ্গাইল রেখে গেলেন। শহরের স্মৃতিতে টাঙ্গাইল আমাকে ঘিরে আছে। সে জন্যই মেঘ-বৃষ্টির স্মৃতিতে টিনশেড বাড়ি দেখতে পাই। চাচাকে দেখতে পাই। লোকটার বয়স আব্বার বয়সী বেশি কিন্তু তাকে কম বয়সী যুবার মত দেখাতো। চওড়া সিনা, পেশীবহুল কব্জি। আমাদের তিন চাচাই গৌরি বর্ণ। শুধু জহুর চাচার গায়ের রঙ গাঢ় বাদামী ছিল, আর তিনি ছিলেন অন্তর্মূখী মানুষ। দাদা মরে যাবার সময় তার অনেক সম্পত্তি থেকে তার জন্য তাকে একটা দোকান দিয়ে গিয়েছিল। একটা ফলের বাগানও তার অংশে ছিল। সেই বাগানের সব পরিচর্যা নিজে করতেন। পরবর্তীতে আমরা চলে এলে আমাদের বাড়ির কেয়ারটকার ছিলেন এই চাচা।

আমি আর পলি আপা দুজনই ছিলাম চাচার ন্যাওটা। তবে কোন কারণে চাচা আমাকেই আদর বেশি দিতেন। আজকে দুবাইতে আমার ছেলেমেয়েরা যখন জিজ্ঞেস করেআমি বলি কি দারুণ শৈশব ছিল আমাদের। চাচার সঙ্গে মুলাপাড়া চরকির উৎসবে গেছি। ষাড়ের নাড়াই দেখতে গেছি। চাচার একটা সখ ছিল। তিনি নিজের হাতে দোতরা বানাতে পারতেন। সেটা দিয়ে গান করতে দেখি নি, তবে আর একটা সখ অন্য কোথাও দেখি নি। পোড়ামাটির ফলক বানানো। এটা ছিল তার সখ।

তিনি অবশ্য মাটি পোড়ানোর জন্য কুমার বাড়িতে যেতেন। আমি এত স্নেহ পেয়েছি, এত ভালবাসা। এই কালো মানুষটি ছিল আমাদের ছোট বেলার হিরো। আমি কখনোই তাকে দেখিনি খালি গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কখনো দেখি নি হাতা কাটা গেঞ্জি পরে আছেন। এমন কি বাড়ির সামনের জমিতে শরীরে মাটি কোপানোর সময়ও ফুলহাতা একটা জামা পড়ে থাকতেন। এত শালীনতা এত নিচ গলায় কথা। তবে তার খারাপ গুন একটা ছিল ধূমপান। মাত্রায় একটু বেশীই। একটা দশহাত রুমে ভোরে উঠে তিনি মাটি নিয়ে কাজ করতেন। গোটা কুড়ি মাটির ফলক, নানান বানী লেখা। সবগুলো মনেও নেই। আমি এখনো দেখতে পাই জহুর চাচা কাচা মাটিতে লিখে যাচ্ছেন আর পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটু পর পর বিড়ি বের করে আগুন ধরাচ্ছেন।

দাদা বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন, আম্মার কাছে শুনেছিলাম দাদার পালিত পুত্র তিনি। তবু সেই ছিল আমার আপন চাচা।

আম্মা কোরানশরীফ নিয়ে বসতেন সন্ধ্যা বেলা। কোন কোন বিকেলে বাইরে থেকে বাড়ি এলে আমরা যেতাম। ঘরে ঢুকে উঁকি দিতেই দেখতাম কাচা রোদে মাটি শুকিয়ে ঘরে তুলেছেন। বরাক গাছের কঞ্চির কলমে লেখা। উপদেশবানী ছিল অনেকগুলোতে। মানুষের খুব বিচিত্র সখ থাকে। এই গ্রামের মানুষটির কেনই বা এই সখ হতো, কেনই বা কাগজে না লিখে পোড়ামাটিতে এসব লিখে যেত আমি জানি না।

আমাদের বাড়ির সব কাজই জহুর চাচা করতেন। আব্বার অবর্তমানে বাজার সওদা, জমির হিসাবপত্র, খাজনা, ইস্কুলে আনা নেয়া এসব চাচা করতেন। হয়তো অবিবাহিত বলেই এটা সম্ভব ছিল। চাচা কেন বিয়ে করলেন না এটা সে সময় মাথায় আসে নি। কিছু মানুষ অন্যের উপকারেই সারাজীবন ক্ষয় করে।রবিঠাকুরের ব্রজেশ্বরের গল্প পড়েছিলাম, ব্রজেশ্বরের সঙ্গে এই মানুষটার মিল পেতাম। কিন্তু জহুরুল চাচা তো ভৃত্য না। আমরা তাকে আপনি ভেবেছি।

আম্মা কে বোনজি ডাকতেন জহুরুল চাচা।

জহুরুল ইসলাম লোকটির এত গুণ, এত পরিশ্রম করতে পারে তবুও তাকে একা থাকতে হয়েছে। দাদা বেঁচে থাকতে কারো সাহস হয় নি, কিন্তু দাদার মৃত্যুর পরদিনই চাচাকে বের করে দেয়া হয় বাসা থেকে। চাচার চোখে এই ছেলে হলো বিশ্বাসঘাতক। দুধকলা দিয়ে সাপ পুষেছেন তার বাবা। অথচ বাসার দেয়ালে যে ছবি সেখানে আব্বা ও দুই চাচা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে জহুর চাচা। মনে হয় না তারা এত দূরের। বড় চাচা অতিমাত্রায় বৈষয়িক। জমি জমায় জহুর চাচার অংশিদারিত্ব তার সহ্য হয় নি। এজন্যই রমিজা ফুফুর সঙ্গে জহুর চাচার ঘনিষ্টতা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে নি। সম্পত্তি নিয়ে মানুষ বড় কঠোর হতে পারে। জহুর চাচার বিরুদ্ধে দলিল জালিয়াতির মামলা করেছিল চাচা। আর সেই ষড়যন্ত্রে অর্ধেকের বেশি জমি হারিয়ে ফেলেন।

আমি কখনোই দেখি নি কোন উৎসবপার্বনে জহুরুল চাচা এসেছেন। চাচাতো বোনের বিয়ের সময় আমি আম্মাকে বলতাম, জহুর চাচা যেন যায়। মেজ চাচাও জহুর চাচাকে জহু পাগল বলে সম্বোধন করতেন। আর যখন তার প্রসঙ্গ আসতো মনে হতো সমস্ত ঘৃণা তার মুখ থেকে ঝরে পড়ছে। রমিজা ফুফু রূপবতী মেয়ে ছিল। তার জন্য নানান প্রস্তাব এসেছিল। আমি আম্মার কাছে শুনেছি তিনি কাউকেই পছন্দ করতেন না। এটা মিথও হতে পারে, সত্যিও হতে পারে। কিন্তু একজন পালক মানুষের সঙ্গে বাড়ির মেয়ের সম্পর্কটা কেউ মেনে নেবে না।

রমিজা ফুফুকে আঠারো বছর বয়সে দূরবর্তী পৌষখালিতে ধনাঢ্য এক বাড়িতে বিয়ে দেয়া হয়। গ্রামের নিয়ম অনুয়ায়ী ফুফু বাড়ির জমির ওয়ারিশ পায় নি।

আমার বড় হয়ে জানতে ইচ্ছে করেছিল সত্যিই কি এক ভালবাসার জন্য এই পুরুষটি সারাজীবন একা থেকে গেলেন। সেই কাহিনী জানার তো উপায়ই থাকলো না। শুনে খারাপ লেগেছে যে চাচারা অসুস্থ জেনেও তার চিকিৎসা করা নি। কয় কাঠা সম্পত্তির লোভ এভাবেই মানবিকতাকে গ্রাস করে ফেলে।

একটা কথা শুনেছি যেটা না বললেই নয়। জহুর চাচাকে জানাজায় গোসল করানোর সময় নামানো হয় তার বুকের বামপাশে বিড়িতে পোড়ানো একটা লেখা আবিষ্কৃত হয় - রমিজা।

আমি দিব্যচোখে দেখতে পাই চাচার ভুতুড়ে বাড়িটা, বিড়ির ধোঁয়া উড়ে আসছে, দেয়ালে একটা দোতরা ঝুলছে, স্তুপ করা আছে অনেকগুলো পোড়ামাটির ফলক। কোন এক অবহেলিত মানব নিভৃতে রমিজা নামের একটা না পাওয়া ক্ষত বুকে বয়ে চলেছে।



--

ড্রাফট ২.০



ড্রাফট ১.০ Click This Link

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৯

জাকারিয়া মুবিন বলেছেন:
সত‍্যি নাকি গল্প!!?

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২১

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: গল্পটা সত্যি ঘটনা থেকেই লেখা।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৮

সায়েম মুন বলেছেন: শেষে এসে একটা দীর্ঘশ্বাস!

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২১

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেকটা বদলে দিলাম..

জানি না ঠিক হলো কিনা

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫৫

আসফি আজাদ বলেছেন: jana ojanai ekhon ki ba ase jai; if at the end of the day the bachelor dies like a dog :(
+++

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২২

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ...........ব্যাচেলর ডাইস লাইক এ ডগ

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৫

লেজকাটা বান্দর বলেছেন: গল্পটা শেষ করলে কি এইটাই রাখবেন নাকি নতুন পোস্ট দিবেন??

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২২

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: এটা বদলে দিলাম কিছুটা

৫| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: মোটামুটি লাগলো। এক জায়গায় ছোট্ট টাইপো আছে-কোরান শরীর-শরীফ।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৩

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন:
কথা হচ্ছিল এক বন্ধুকে নিয়ে। এটা তার ঘটনা। শুনে মনে হলো থাকুক ড্রামা লিখে দেই।


২.০ ড্রাফট রাখলাম।
টাইপোগুলো কিছুটা ঠিক করলাম।

৬| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
কাহিনী সত্য নাকি ?

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৩

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: হ্যা সত্য

৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৬

একজনা বলেছেন: কেমন যেন মন খারাপ জাগানিয়া গল্প। এমন কত ভালোবাসাই যে অগোচরে অবহেলিত হয়ে রয়ে যায় কেই বা তার খোঁজ রাখে!

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৩

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: থ্যাংকস একজনা

৮| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৬

স্বপনবাজ বলেছেন: সত্য হোক আর গল্প হোক অনেক ভালো লিখেছেন !

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৩

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ স্বপনবাজ

৯| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৭

shfikul বলেছেন: +++

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৪

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ

১০| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৭

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
গল্পই হোক।।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৪

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেক বদলেছি
...আবার পড়তে পারেন, দূর্জয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.