নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো অন্ধকারে যাই

সময়টা কি করে দেবে সেটা তার অধিকারী জানে, চাইলে পোকায় ধরে নষ্ট কাল ভেসে যাবে যমুনার বানে

স্বদেশ হাসনাইন

ছোট একটা ফার্মে কাজ করছি । সৌখিন লেখক । ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি । পকেটে পয়সা থাকলে এদিক ঘুরে খরচ করে ফেলি । সুনীলের লেখার ভক্ত, শামসুর রাহমানের কবিতা পড়ি। বিদেশী লেখকের মধ্যে ড্যানিয়েল স্টীলের লেখা ভাল লাগে । সবচেয়ে ঘৃণা করি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে । একাত্তর আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। ইমেইল: [email protected]

স্বদেশ হাসনাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেহেদির ফুলছবি

০৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৪৯

কথাপ্রসঙ্গে ইমা তার হাতটা মেলে ধরলো, "দ্যাখো, মেহেদি দিয়েছি।

ইমা, নিরপেক্ষভাবে বলি, তোমার ছবি আঁকার মতই হেনার কাজ অ'সাম। তুমি ফাইন আর্টসে পড়ো নি কেন?

সে গর্বিত হয়ে তার হাত ঘুরিয়ে দেখালো। সুদক্ষ আঁকিয়ের মত গাঢ় লাল মেহেদিতে আঁকা কল্পিত লতা, তাতে আবার চিরল পাতার আল্পনা। বিখ্যাত কোন চিত্রকলা দেখার মত করে কৌতূহল নিয়ে আমি বললাম, আমার দিকে ঘুরাও দেখি।

মেয়েরা প্রশংসা পেলে খুশি হয়। ইমা খুশি খুশি ভাবটা চেপে রাখলো। কপট প্রতিবাদ করে বলল, ধুত্তোরি, ডিজাইন নিয়ে বলো । এটা আমার লাস্ট বারের মত মেহেদি। এ জন্যই ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে দেখাচ্ছি।

হঠাৎ লাস্ট লাস্ট বলার কারণ বোধগম্য হলো না। ৯০% সম্ভাবনা এটা ছলনা । সে দাম বাড়াচ্ছে। কাল মেহেদি দিয়ে আবারও দেখাবে। মার্কেটিং এর পরিভাষায় এটা ক্রিয়েটিং ডিমান্ড বাই ক্রাইসিস। খেয়াল করে দেখেছি অনেক লোক কথায় কথায় মৃত্যুর ভয় দেখায়। সে মরতে চায় না। কিন্তু মৃত্যুর দুঃখ মনে করিয়ে সে নিজের প্রতি মায়া জন্মাতে চায়।

আমি ইমাকে ছোট করলাম না। বললাম, "লাস্ট বার কেনো? তোমার বর ডিসলাইক করে?"

"হু .... ক্যামন করে ধরলে? "

"কি জন্য করে?" আমি পাল্টা প্রশ্ন করি।

"সে বলেছে, হাতের মেহেদি ভাল না। বাঙালি মেয়েরা নিজের হাতে তাদের প্রেমিকের নাম লেখে। যেমনটা গ্রাম দেশে এখনো নকশী কাঁথার স্টিচে প্রেমের কিচ্ছা লিখে রাখে। যাকে পায় নি তার জন্য হাহুতাশ। বাঙালি নারী দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাতে ওস্তাদ।"

আমি হেসে ফেললাম। রহমান ভাই ভাগ্যিস কবি হন নাই। কি বিশ্রী উপমা দিলেন! কোথায় নকশি কাঁথা আর কোথায় ঘোল?

ইমা তখন বলল, "রহমান আমাকে সে প্রশ্ন করেছে, তিনটা S কেন? S মানে কি? সনি ভাই, সাইফুল নাকি আমার কাজিন শফি? সে কিন্তু জানে সনি ভাইকে আমি কত রেসপেক্ট করতাম। খেলাঘরে থাকার সময় আমরা তাকে দেখলে ভয়ই করতাম। সাইফুল ও আমার ক্লোজ কেউ ছিল না...তুমি বলো সুনীল, লতানো পাতানো নকশায় যে কোন অক্ষরের মিলই থাকে। থাকে না? কেন যে আমি তাকে দেখালাম!"

"রহমান ভাই এত সন্দেহপ্রবণ!"

"হ্যা, এখানে শেষ না। ডিনারের পর, আবারও আমার হাত দেখতে চাইলো। কি রকম লজ্জা আর অপমানের তুমি বলো। আমাকে সরাসরি বললো, MU লেখার কি কারণ? মুরাদ ইঞ্জিনিয়ারের কথা তুমি ভুলতে পারো নি?"

আমি ইমার মুখে ব্যথার ছায়া দেখলাম।

"সুনীল, সে আমাকে কেন কত নিচ ভাবে। বলে, বিয়ের প্রস্তাব আসছে আর তাতেই তার কথা মনে গিঁথে গেছে। W কেন? W মানে কি সেই ওয়াহিদ স্যার? রাতে ঘুমানোর আগে রহমান বিদ্রুপ করে বলেছে লেখো লেখো, হাতের মধ্যে যাবতীয় প্রেমের কাহিনী লেখো।"

ইমা যখ কথা বলছে আমি তার হাতে নিজের নামের প্রথম অক্ষর S আছে জেনে আনন্দিত হয়েছিলাম। সেরকম সম্ভাবনা নেই যে সে আমাকে লিখবে। কিন্তু হলামও। পুরুষদের আনন্দ যে কোথায় কোথায় হয় সেটা পুরুষই জানে।

"তা, রহমান ভাই কিন্তু এমন ছিলেন না। মিডলাইফ ক্রাইসিসে মানুষ চেঞ্জ হয়। তুমি মেহেদি দেয়ার দিয়ে যেও। তাকে না দেখালেই হয়।" এটা বলার জন্যই বললাম। মোবাইল, ফেইসবুক এসব লুকানোর কারণ আছে, কিস্তু তাই বলে একজন বউ তার মেহেদিও লুকিয়ে রাখবে!

ইমা কনজারভেটিভ। আটদশজন বাঙালি মেয়ের মত বিশ্বস্ত। কিন্তু আমার দ্বিতীয় মন বললো, ইমা অসুন্দর মেয়ে না। রহমান ভাইয়ের কথা ভুল নাও হতে পারে।

বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। ইমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত হলো। বললো, সুনীল, আমি উঠছি, মিমির স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। রহমান বাসায় ফিরেছে । লেট হলে অনেক এক্সকিউজ দিতে হবে"

ইমাকে কিছু দূর এগিয়ে দিলাম। গাড়ির ড্রাইভার গাড়িতে ঢুকে হেডলাইড জ্বালালো। আমি হঠাৎ এক ঝলক মেহেদির হাতটা দেখলাম । দূর থেকে মেহেদির কারুকার্য বোঝা যায় না, শুধু বোঝা যায় হাতের তালুতে নকশাগুলো ঝাপসা হয়ে একটা বড় ত্রিভূজ হয়ে গেছে। ত্রিভূজ দিয়ে ইমা কি "ব" বোঝাতে চেয়েছে? ব এর উপর একটা মেহেদির ফোঁটা আছে। তবে কি সেটা "র"? "র" রহমান ভাইয়ের নামের প্রথম অক্ষর। মিলটা ইচ্ছেকৃত না কাকতালীয় কে জানে?



--

ড্রাফট ১.৩

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:৪৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:









২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪

সায়েম মুন বলেছেন: মেহেদী দিয়েও বাদ রাখলেন না। আপনার আইডিয়ার প্রশংসা আর না করি। এই ঈদের দিনে গল্পটা বেশ ভাল লাগলো।

ঈদ মোবারক প্রিয় ব্লগার। :)

৩| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪

আমিনুর রহমান বলেছেন:




ঈদ মোবারক কবি !

৪| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৭

আদনান০৫০৫ বলেছেন: ভালো লাগছে গল্পটা।

৫| ১০ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৪৪

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: ড্রাফট নম্বর ১.৩ ভালো লাগলো ভাই:)

আমাদের সমাজের মেয়েরা এখনও স্বামীকেই ভালো বাসে, ঘৃণা করেও ভালোই বাসে। লাইলি-মজনুর প্রেম করেও তারা নতুন পরিচিত স্বামীকেই মেনে নেয়। দেরি হতে পারে, এই যা। দু’একটি ব্যতিক্রম তো থাকেই।

৬| ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:০৫

ব্যান্ড পার্টি বলেছেন: মিলটা ইচ্ছাকৃত হলেও খারাপ হয়না.....

৭| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: জ্বলজ্যান্ত একজন মানুষ দিবা-নিশি সমস্তটা ক্ষণ পাশে ঘিরে থাকলে কেমন করে কেউ অন্য কারো নাম লিখতে পারে! বোকা পুরুষগুলো বোঝে না।

খুব সুন্দর লিখেছেন স্বদেশ ভাইয়া।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ...এত সুক্ষ্ম ব্যাপারটা বুঝতে পারার জন্য। নতুন অতিথি নিয়ে সংসার ভাল আছে নিশ্চয়ই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.