নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো অন্ধকারে যাই

সময়টা কি করে দেবে সেটা তার অধিকারী জানে, চাইলে পোকায় ধরে নষ্ট কাল ভেসে যাবে যমুনার বানে

স্বদেশ হাসনাইন

ছোট একটা ফার্মে কাজ করছি । সৌখিন লেখক । ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি । পকেটে পয়সা থাকলে এদিক ঘুরে খরচ করে ফেলি । সুনীলের লেখার ভক্ত, শামসুর রাহমানের কবিতা পড়ি। বিদেশী লেখকের মধ্যে ড্যানিয়েল স্টীলের লেখা ভাল লাগে । সবচেয়ে ঘৃণা করি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে । একাত্তর আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। ইমেইল: [email protected]

স্বদেশ হাসনাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তৃণলতায় ঊষের রঙ

১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:২৮

শ্যামবাজারের সেই বাড়ির ছাদে এখন আর বিয়ের অনুষ্ঠান করা যাবে না, গত বছরই একটা বাড়ি ধ্বসে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভয় বেড়েছে আমাদের। বেশি ভয় বাউন্ডারী দেয়াল নিয়ে। বাড়ির পশ্চিম দিকটাতে কম যাওয়া হয় । ফাটল ধরা বাউন্ডারী পাচিল ধ্বংশ হয়ে যতে পারে। তবুও এক ঐতিহ্য লেগে আছে ইটের অন্তরালে। প্রতিবেশীর বাড়ির ছাদে আশঙ্কার তোয়াক্কা না করে গায়ে হলুদের পার্টি হয়।

ছাদটা বেশ বড় । উপর দিয়ে হাওয়া বসে যায়। চৈত্র মাসের গরমেও বাতাসের কমতি থাকে না। পুরনো ঢাকায় বংশপরম্পরায় বাস। এই উন্নত সভ্য দিনে এখানে বিজলী বাতি থাকে না। পানি থাকে না। গ্যাসের লাইন থাকতেও মা বাড়ির পাশে কয়লা দিয়ে রান্না করে। বাড়ির ছাদটাকে বলি ফুসফুস। দুটো ফুসফুসের মত বাঁকা ছাদটা দুটো ভাগে ভাগ হয়ে আছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে উত্তরে গেলে নির্জন ছাদ মিলবে। কয়েকটা আম গাছ বয়সের ভারে ঝুঁকে আছে। বাড়ির ছাদের পাঁজরের হাড়ের মত মৃতপ্রায় কড়ই গাছে দাঁড়িয়ে আছে। সময়ের সাথে সাথে লোনা ধরে, ইট খুলে ভারী দেয়াল কখন যে ইস্রাফিলের শিঙ্গা বাজিয়ে দেয়! বুক সমান উঁচু পাচিল রক্ষণশীলতার পরিচয়। আম্মা চাচী রাতে এসে গল্প করে, রৌদ্রকরোজ্জল দিনে স্নান সেরে চুল শুকাতে আসে। বড় দুই ভাবী, একই ঘরের বোন। সংসারে ঝড় বয়ে গেছে তাদের নিয়ে। রক্ষণশীল পরিবারের ছবিটা আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঝাপসা হলেও দেয়াল রয়ে গেছে প্রাচীন স্মৃতিছবি।

বাড়িটার সাথে আমার মায়ের অনেক মিল। বাড়িটা ছেড়ে যেতে কখনো ইচ্ছে হয়নি। আজ পর্যন্ত জীবনে এতগুলো বছর কাটিয়ে গেছি মনেই হয় নি অন্য কোন ফ্ল্যাটে যাবো। মায়ের বুকে ব্যাথা হয়েছিল। ফুসফুসের ব্যাধি। এই বাড়ির ছাদের একটা অংশ ঝড়ের পর ধ্বসে গেল। ঝড় থামার পর দুর্ঘটনায় আহত মানুষ দেখার মত ভিজ করলাম সবাই। পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া অংশে নতুন করে নির্মান না করবো কিনা ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে এসে পরীক্ষা করানো হলো। তারা বললো ঐ অংশটা ঠিক করার মানে নেই। তবে বাকি ছাদ সহ বাড়ি বছর দশেক চলবে। ছাদের ওপাশটা একদিন খসে গেল। মা মরে গেল দু'দিন পর দুপুর বেলা। খেতে এসেছি। মা শুয়ে বললেন বাবারে ভাত বাড়া আছে টেবিলে। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে মা ভাত বেড়ে শুয়েছিলেন? খেয়ে ফিরে যাবার সময় আমাকে ডাকলেন, খোকা আমার খারাপ লাগছে। বুকে ব্যথা। আমি দৌড়ে শর্ষের তেল আনলাম। বাড়িতে খালা ও নেই। বউও নেই। সন্তান সম্ভবা এক চাচাতো বোনকে দেখতে মিডফোর্ড গেছে। আম্মা বললেন, পুতুটা কে শেষ বারের মত দেখার ইচ্ছা ছিল। ওর মায়ের দিকে খেয়াল করিস। ওর আর কেউ নাই। বাপ মা মরা মেয়েটার কোন কষ্ট না হয়। আম্মার হাত ধরে থাকলাম। চুপ হয়ে গেল ছবিটা।

আম্মা বলতেন আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বিয়ে ভাল না। সুজিত মামা মায়ের চাচাতো ভাই। আমি জানতাম আম্মার স্বভাব। রক্ষণশীল মহিলা। দোকানে গেলে ঘুরে ফিরে একশটা শাড়ী দেখবে। দাম দর করবে। কিন্তু প্রথম যাকে দেখে এসেছে তাকে নিয়ে ফিরবে। আমার মোহরাকে পছন্দ ছিল না। আম্মা আমার পছন্দকে বুঝতে চাবে না এটাই স্বাভাবিক। শুনেছি আম্মার অমতে কিছু করি নি। এটাকে পুরুষের দুর্বলতা বলে না সঠিক পুরুষ সেটা আপনারাই বলবেন। এত দূরের সম্পর্ককে ভাঙতে মায়ের কেন ইচ্ছে হবে না। বেশ কয়েক বছর আগে যখন আম্মা টাইফয়েডে ভুগেছিল। আমি ভার্সিটির ছাত্র। মেয়েটি দিন নেই রাত নেই এসে সেবা করেছে। আমার বড় ভাই কাছেই থাকেন। ভাবীকে দেখেছি ঝামেলা দেখলে দূরে থাকতেন। প্রেগনেন্ট যেন আর কেউ হয় না? প্রথম দিন থেকেই পালঙ্কে উঠে বসেছিলেন। শিয়রে আঙুর বেদনা ঝুলিয়ে পুরো সময় সানন্দা পড়ে সময় কাটিয়েছেন। সেঁজু পুরো বাড়ির সব সামলেছে । মেয়েটি হয়তো আমার মায়ের মধ্যে নিজে মাকে পেত। মা শুচিবাইগ্রস্ত বলে সবার হাতের খাবার খেতেন না। খাবার পানির জন্য একটা ছোট টিউবঅয়েল ছিল। ওটাতে ছয় মাস পানি থাকতো। জরিকে দিয়ে থাল ধুয়ে আনার পর আবারো নিজে ধুয়ে নিতেন সাবান দিয়ে। পুরনো বাড়ি। কখনো যদি ভাতে পিপড়ে থাকতো সেই দিন অনাহারে কাটিয়ে দিতেন।

অসুস্থ থাকার সময়ই একদিন একজন মহিলা এলেন। বোরকাবৃতা। এসেই আমাকে ডাকলেন।

সেঁজু হাসলো, বিবাহের বিষয়, তোমার খবর আছে দাদা।

সালাম দিলাম। আম্মা পালঙ্কে শুয়ে। উনি ভারী সেগুন কাঠের চেয়ারে। আমি অবাক হয়েছিলাম উনি আমাকে বলছেন, বুজি আপনে পছন্দ করেন নাই। আমি জানি, জুলেফা দেখতে সুন্দরী। আপনার ছেলে তাকে পছন্দ হবেই । কি বাবা ছবিটা দেখেই বলো। আমি দেখলাম এতো ঝুমকার ছোট বোন। ঘটক মহিলা সামনে ছবির এলবাম থেকে একটার পর একটা দেখায়। আম্মা বলেন, এগুলো পছন্দের না।

সেঁজুতি টবে পানি দিতো। বকুল ফুলের গাছের তলায় ফুল নিয়ে মালা গেঁথে আয়নায় জুলানো। বাড়ি ফিরতাম। দেখি সে বসে আছে শ্যাওলা ধরা সিঁড়িতে। মগরেবের অক্তে নামাজ পড়তো। আমি বিসিএসের জন্য পড়তাম। একদিন আমি বসে বসে দাবা খেলেছি মুজাফ্ফরের সাথে। বেশ কয়েক দান জেতার পর মন ফুর ফুরে। সেঁজুতি কাপড় শুকাতে এসে থামলো। বললো, দাদা, আমি হয়তো থাকতে পারব না। ফুফুকে ভাল কোন ডাক্তার দেখানো দরকার।

কেন?

মৃদুলের শরীর ভাল না। খবর পেলাম তার শরীর ভাল না।

ডিভোর্স হবার সময় না বাচ্চাটাকে তোর সাথে থাকার অনুমতি দিয়েছিল।

না, দেয় নি। তুমি তো শুনেছ মৃদুলের বাবাকে সবাই ভয় পায়। পারিবারিকে মামলা শেষ হয় নি। সে আপোসে আসবে না। তোমাকে তার ছবি দেখাই। বলে সে দৌড়ে ব্যাগ থেকে ছবিটা আনলো।

চার বছরের বাচ্চার ছবি। বলতে বলতে সে চোখ মুছে ফেলে। আমি তাকে অন্য দিকে ব্যস্ত করতে বললাম। সেঁজু বলে দাবা খেলবি?

আমি গুটির নাম জানতাম। এখন ভুলে গেছি।

সব মেয়ের শেখার আগ্রহ থাকে না। সেঁজুতি কবিতার বই পড়ে মাঝে মাঝে। বলে, এমন করে লিখতে পারে মানুষ। মনে হয় নিজেরই কথা।

দাবা খেলায় সে আমার সাথে ভালই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতো। জিততে পারে নি। কিন্তু আমাকে অবাকই করে দিয়েছিলাম।

সে পর্বে সেঁজুতি তখন আর যায় নি। ওর ছেলেটার সাথে দেখা হবার উপায় হয় নি। আমি বাড়িতে বসে আছি। আমার বিদেশে স্কলারশিপের জন্য কথা হচ্ছে। কিন্তু আম্মাকে রেখে আমি কেমন করে যাই। মোহরার বিয়ে হয়ে গেছে। ওর সাথের স্মৃতিগুলো আমি কুচি কুচি করে কেটে ফেলবো কিন্তু ভালবাসা বড় অদ্ভুত। চাইলেও পারা যায় না। আম্মা ডাকলেন। অনেক কথা শুনলাম তার কাছে।



শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলো। আমি ছাদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বৃষ্টিতে হাত পাতলাম। ভিতরে ভিতরে একটা ছবি। আমি ছবিটা ছুঁয়ে দেখবো ভাবতেই পারি না। সেঁজুতি পিছনে এসে নেমে যাচ্ছিল। আমি বললাম সেঁজুতি আমার সাথে ভিজবি।

কি যে বলো দাদা। আমি কি বাচ্চা মেয়েটা আছি। লোকে কি বলবে শুনি।

আমি সেঁজুতির নরম হাত ধরে নামালাম। সে শুকনো গাছের নিচে গিয়ে একলা দাঁড়িয়ে থাকলো। ওর মনে হয় ঠান্ডা লাগছিল কাঁপছিল। আমি জািন বাড়াবাড়ি হয় নি একটুও।

সেঁজুতিকে যাবার আগে বললাম, আম্মা কালকে বলেছে সেঁজুতি মেয়েটার অনেক ধৈর্য, নারে? ওর বাচ্চার মিমাংসা হয়েছে। তুই মৃদুলকে বড় করতে পারবি না?

সংসারে ভাল মানুষ বেশি দেখি না। আমি যখন থাকবো না সে তোকে আমার মত আগলায়ে রাখতে পারবে।

আমি দ্বিতীয় বার ছুটে গিয়ে হাত ধরে টানি,

রান্না বাকি আছে, দাদা।

ধমকে দেই, আয়তো বিয়ের আগে ভিজে নেই বৃষ্টিতে। এরপর বাপ আর ব্যাটা থাকলে তখন দেখবি তোকে আর ডাকবো না।

শুনে সেঁজুতি স্থির হয়ে গেল।

সে লজ্জা পেল।



--

ড্রাফট ১.০

দ্রুত টাইপ করে পোস্ট

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

সুখ দুঃখের স্মৃতি বিজড়িত সুন্দর গল্পে প্লাস রইল +++++

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০

ত্রিনিত্রি বলেছেন: গল্পটা এত মায়াময়, এত আপন।

ভালো লাগা না শুধু, অসম্ভব মায়া লাগলো।

ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮

নেক্সাস বলেছেন: সুন্দর লাগলো আপনার গল্পটা পড়ে

৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:০০

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো পড়তে।

৫| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: অসম্ভব মায়াময় একটা গল্প। মন কেমন ভিজে উঠল পড়ে।

এক টানে লিখে ব্লগে দিয়ে দিয়েছেন। তাই বোধহয় কিছু টাইপো রয়ে গেছে। সময় করে ঠিক করে দিয়েন।

৬| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১২

আফসিন তৃষা বলেছেন: সহজ একটা মায়া মায়া গল্প। ভালো লেগেছে :)

৭| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৭

সায়েম মুন বলেছেন: দ্রুত লিখেছেন বলে বেশ কিছু টাইপো আছে। গল্পে অনেক ভাললাগা রইলো।

৮| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সুন্দর হয়েছে।

৯| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮

শায়মা বলেছেন: +++ আর কিছুই বলার নেই ভাইয়া।:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.