![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভারতের দক্ষিনাংশে মুসলমান অধ্যুষিত এক রাজ্যের নাম হায়দ্রাবাদ। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সুবাদার কামারুদ্দীন খান হায়দ্রাবাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং নিজাম-উল-মূলক উপাধি নিয়ে হায়দ্রাবাদ রাজ্য শাসন করতে থাকেন। মজার ব্যাপার হলো,পার্শ্ববর্তী মহীশূরের সুলতান হায়দার আলী এবং তার পুত্র টিপু সুলতান যখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন,তখন হায়দ্রাবাদের তৎকালীন নিজাম নির্লজ্জভাবে ব্রিটিশের পক্ষাবলম্বন করেন। কিন্তু এই নতজানু নীতি তাদের বাঁচাতে পারেনি।
১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা পাবার পর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভারত হায়দ্রাবাদে নানা রকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করলেও সর্বশেষ নিজাম তা শক্ত হাতে দমন করেন। এরপর ১৯৪৮ সালের জুলাই মাসে জওহরলাল নেহেরু ঘোষণা করলেন,‘যখন প্রয়োজন মনে করবো তখন হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করা হবে।’এক পর্যায়ে ভারত বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে,যার অংশ হিসেবে হায়দ্রাবাদের অভ্যন্তরে কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবকদের সক্রিয় করা হয়,হায়দ্রাবাদের রাজনীতিকে কলুষিত করা হয়। শিক্ষাঙ্গন,সাংস্কৃতিক জগৎ,বুদ্ধিজীবী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনুগত লোক তৈরি করা হয়,সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অনুগত দালাল সৃষ্টি করা হয় এবং হিন্দু মৌলবাদীদের দিয়ে নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উস্কে দেয়া হয়। কংগ্রেসের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু মহাসভা,আরএসএস ও আর্যসমাজ এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তেলেঙ্গনায় কম্যুনিস্ট বিদ্রোহ দমনের অজুহাতে ‘অপারেশন পোলো’ নামে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী হায়দ্রাবাদে আক্রমণ চালায়। সর্বগ্রাসী এ আক্রমণ শুরুর আগেই স্বাধীন হায়দ্রাবাদের সেনাপ্রধান আল ইদরুসকে কিনে নিয়েছিল ভারত। আল ইদরুস দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তগুলো অরক্ষিত রেখেছিল, সেনাবাহিনীকে রেখেছিল অপ্রস্তুত অবস্থায়। এরপর ভারত সেনাপ্রধানের সহায়তায় হায়দ্রাবাদে তার বিপুল সেনাশক্তি,পদাতিক বাহিনী ও বিমান বাহিনী সহকারে শুরু করলো সামরিক আক্রমণ। প্রথমে ট্যাংক এবং এরপর বিমান আক্রমণে বিপর্যস্ত মানুষের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে একাত্ব হয়ে আর্যসমাজ ও অন্যান্য হিন্দু মৌলবাদী সংগঠনগুলো হায়দ্রাবাদে প্রায় দুই লাখ মুসলিমদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ভারতীয় সৈন্যবাহিনী মুসলিম নিরীহ নারী-পুরুষ,শিশুদের হত্যা করেছে,বিমান হামলায় শহর বন্দর গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং মসজিদ,মাদ্রাসা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর একটি মাত্র উদ্দেশ্যে তা হচ্ছে হায়দ্রাবাদের শেষ নিজামকে ক্ষমতাচ্যুত করা। অনেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতীয় বাহিনী রাজধানীর দিকে ধাবিত হয় এবং হায়দ্রাবাদ ভারতের দখলে পরিণত হয়। এরপর হায়দ্রাবাদ ভারতের পদানত রাজ্যে পরিণত হওয়ার পর একে অন্ধ্র,কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্র এই তিন রাজ্যে বিভক্ত করা হয়।
এবিষয়ে লোকসভার হিন্দু সদস্য পণ্ডিত সুন্দরলালের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে অন্য ঘটনা প্রকাশ পায়। এ প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় অভিযানের সময় ভারতীয় বাহিনী নির্বিচার হত্যা,লুণ্ঠন,অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধ করেছে। অভিযানকালে বেসামরিক নাগরিকদের তেমন মৃত্যু হয়নি বলে সরকারীভাবে দাবী করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়,যাদের অনেককেই লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারে ভারতীয় সেনারা। সরকারি ওই তদন্ত প্রতিবেদন কোনোদিন প্রকাশ করা হয়নি। খুব অল্পসংখ্যক ভারতীয় নাগরিকই এ গণহত্যার কথা জানেন।
-সুফি বর্ষণ।
যুক্তরাজ্য থেকে।
©somewhere in net ltd.