![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার জীবনে যত শিক্ষক পেয়েছি তাদের মাঝে কয়েকজনের গল্প বলব ।
প্রথমেই আসি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা । ছোট বেলায় শিক্ষকদের আমরা ছাত্রছাত্রীরা খুব ভয় করতাম ,ভয় না করে উপায় ছিলনা । পড়া না পারলেই ঠাস ঠাস বেতের বাড়ি মাফ ছিলনা । তবে অল্প কয়েকদিনের জন্য এক ম্যাডামকে পেয়ছিলাম । ম্যাডামের নামটা ঠিক মনে নাই । গ্রামের সরকারি স্কুলে পড়তাম । ম্যাডাম কিছুদিনের জন্য এসেছিলেন ,পরে বদলি হয়ে চলে গেছেন ।২-৩ মাসের মত ছিল । তার ব্যবহার , পড়ানোর স্টাইল ছিল ইউনিক । তিনি কখনই বেত দিয়ে মারতেন না ।পড়া না পারলে কাছে ডেকে আদর করে বুঝাতেন,তখন লজ্জায় পরে সবাই পড়া পরে আসত । ম্যাডামকে আজ লিখতে গিয়ে হঠাৎ করে মনে পড়ল ,ভুলেই গিয়েছিলাম ।
আমাদের স্কুলের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং মারমুখী স্যার ছিলেন কার্তিক স্যার । তিনি ম্যাট্রিক পাস ছিলেন , কিন্তু গনিতে অনেক দক্ষ ছিলেন ,ভাল করে বুঝাতে পারতেন । কিন্তু প্রচুর মারতেন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের । সবার কাছে তিনি ছিলেন বিভীষিকা ।আশেপাশে থাকলেই ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলেটাও শান্ত হয়ে যেত ।মজার ব্যাপার হল , স্যার হিন্দু হলেও মাঝে মাঝে স্যার না থাকলে আমাদের ইসলাম শিক্ষা পড়াতেন । তিনি কয়েকটা সূরা মুগস্থও বলতে পারতেন ।
সবসময় তিনি বেত নিয়ে ঘুরতেন । তবে তার কাঠিন্যের ভিতরও একটা কোমল হৃদয় ছিল । খুব মজাও করতে পারতেন ।
সবসময় ছাত্রছাত্রীদের ভাল চাইতেন । মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে আসত সরকারি কাজে ।তখন মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহ করতেন । তখন তাকে মহামানুষ মনে হত । এখন তিনি আর স্কুলে পড়ান না , অবসর নিয়েছেন । গ্রামের বাড়িতে গেলে বাজারে তাকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে দেখা যায় ,দেখেই মনটা ছোক ছোক করে ।তার হাতে বাজারের ব্যাগ মানায় না । চক ডাস্টার আর বেতই ভাল মানাত । এখন শুনেছি স্কুলে বেত দিয়ে মারা নিষেধ ।
পরে যে স্যারের কথা বলব ,তিনি ছিলেন গ্রামের ছেলেপেলেদের গৃহশিক্ষক । তার নামও ছিল অন্য রকম । এলাকায় ভক্কা স্যার নামে পরিচিত ছিল । তার কাছেই আমার হাতেখড়ি হয়েছিল । কাকডাকা ভোরে এসে আমাদের বাড়িতে হাজির হত , হাতে থাকত বেত । তখন আজানের সময়ে উঠে বাথরুম সেরে পড়ার টেবিলে বসে থাকা লাগত ,এসে যদি তিনি পড়ার টেবিলে না পেতেন তাহলে বেতের বাড়ি নিশ্চিত । তিনি ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের কাছে ত্রাস । তাকে সবাই ভয় পেত । যদিও তিনি মেট্রিক পাসও করতে পারেন নি । তবে ক্লাস
৫ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাইভেট পড়াতেন । অনেক ভালই পড়াতেন । আমি ক্লাস থ্রি পর্যন্ত তার কাছে পড়ছিলাম ,পরে কি এক কারনে আমাদের বাড়িতে পড়ানো ছেড়ে দিয়েছিলেন । তিনি ছিলেন আমাদের ফ্যামিলি মেম্বারের মত , আমাদের সাথে মাঝে মাঝে ভাল খাবার হলে খেতে আসত । একসাথে শুক্রবার বাংলা ছবিও দেখত ।
ছোটবেলায় সঠিক গাইড লাইন দিত পারত ভাল ।স্যার এখন আর প্রাইভেট পড়ান না । আগে মাইকের ব্যাবসা ছিল ,এখন একটা নসিমন আছে ।সেটা তদারকি করেন । মজার ব্যাপার , তিনি এখনো বিয়ে করেন নি ,আর করবেনও না । ক্লাস নাইন না জানি টেনে থাকতে তার মা মারা যান , বাড়িতে সৎ ভাই ছিল ।বের করে দেয় বাড়ি থেকে তাকে ।বাবা আগেই মারা গেছিল তার । পরে ছেলে মেয়েদের টিউশনি করিয়ে জীবন যাপন করেছেন ।স্যার একজন প্রকৃত সংগ্রামী লোক ।তাকে দেখলেও এখনো কষ্ট লাগে । সারাজীবন কষ্ট করেই গেলেন ,অথচ অনেকেরই জীবন ছোটবেলায় গড়ে দিয়েছেন ।
পরের যে স্যারের কথা বলব ,তিনি এখন আমাদের পাশের এলাকায় একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এখন । তার একটা ব্যাপার কখনো ভুলবনা । ক্লাসে এসেই তিনি সবাইকে লিখতে দিয়ে চেয়ারে বসে আরাম করে নাক ডেকে ঘুমাতেন । আমরা সবাই লেখা শেষ করে জমা দিতাম । ঘুমের ভিতরো তিনি খাতা দেখতেন । খাতায় সাইন দিতে গিয়ে পৃষ্ঠা চিঁড়েও ফেলতেন ।
তিনি গোমরা টাইপের ছিলেন । মাঝে মাঝে খুব বেত দিয়ে মারতেন । তাকে কেন জানি আমার খুব বিরক্তিকর লাগত ।
নাজমুল নামে এক তরুন শিক্ষক ছিলেন । আমাদের বিজ্ঞান ক্লাস নিত । খুব ভাল করে পড়াতেন । মাঝে মাঝে খুব সুন্দর সুন্দর গল্প বলতেন । আমাদের কুইজ টেস্ট নিতেন । পড়া না পারলে মাইরও দিতেন ।একদিন তালপাতার হাত পাখা দিয়ে মারছিলেন ,পরে পাখাটা ভেংগে গিয়েছিল । স্যারকে আমার খুব ভাল লাগত । রোজার সময়ে ,বাসা থকে টিফিন দিয়ে দিয়েছিল । লেইজার টাইমে খাওয়া হয়নি । লেইজারের পরের টাইমে স্যারের ক্লাস থাকত । স্যারের ক্লাসে আমি চুপিচুপি পরাটা খাচ্ছিলাম , স্যার দেখে ফেলেছিলেন এবং খুব সরম দিয়েছিলেন ।স্যার আমাদের সবাইকে নিয়ে একটা বিশেষ গান গাইতেন ,গানটা ভুলে গেছি ।
এখন যে স্যারের কথা বলব ,তিনি ছিলেন ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পাওয়ানো স্পেশালিস্ট স্যার । নাম খোকন স্যার । যমের অরুচি ছিলেন যাকে বলে । শুধুমাত্র ক্লাস ফাইভে ক্লাস নিতেন ,মাঝে মাঝে টিচার না থাকলে ফোরেও নিতেন ,খুব কম । স্যারের একটা ব্যপার কখনো ভুলবনা । স্যার ক্লাসে ঢুকেই ময়লার ঝুলিতে কালো কালো পিক ফেলত । হাতে থাকত জোড়া বেত । খুব ভয়ংকর দৃশ্য ছিল তখন । স্যার যারা যারা বৃত্তি দিবে মানে ক্লাসের ভাল ছাত্র ছাত্রীদের প্রাইভেটও পড়াতেন ।প্রাইভেটেও পড়া না পারলে বেত দিয়ে মারতেন ।
একবার স্যারের জোড়া বেতের মার খেয়েছিলাম ,প্যাণ্ট খুলে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল । একদিন খুব মজার ঘটনা ঘটছিল । স্যার ইংরেজী ক্লাসে বানর এবং টুপির একটা গল্প পড়া দিয়েছিলেন ,পরদিন ঐ গল্প থেকে ট্রান্সলেশন লিখতে দিবেন ।বাংলায় বলবেন ,ইংরেজীতে লিখতে হবে । মানে পুরো গল্পটা আরকি মুখস্থ করতে হবে আরকি । তো পরদিন কারো পড়া হয়নি ।সবাই ভয়ে আতস্থ ।
স্যার ক্লাসে আসলেন । আমরা তো রীতিমত সবাই ভয়ে কাঁপতেছি । দোয়া দুরুদও পড়তেছি ।স্যার বইটা খুলে লিখতে দিবেন ,ঠিক তখনই এক লোক আসল ,স্যারকে কিছু বলল ।স্যার সাথে সাথে চলে গেল । অন্য একজন স্যার এসে ক্লাস নিয়েছিল এবং ঐদিন কেউ মাইর খায়নায় ।
স্যার চলে গেছিলেন কারন স্যারের ছোট বাচ্চা মেয়ের আছাড় খেয়ে দাঁত পড়ে গিয়েছিল । হয়ত ,ঐদিন আমাদের কারো দোয়া কবুল হইছিল । নাহলে সবাইকে ঐদিন জোড়া বেতের মার খেতে হত । অন্য কোন স্যার মারের সময় একটু দয়া মায়া করতেন । বেশি হলে ৭-৮ টা বেতের বাড়ি দিতেন ।কিন্তু এই খোকন স্যার মাইর শুরু করলে হুঁশ থাকতনা ।একসাথে ২০-৩০ টা বেতের বাড়ি মেরে তারপর ছাড়তেন । এজন্য সবাই তাকে খুব ভয় পেত । এখনো স্যার আছেন আমাদের সেই স্কুলে কিন্তু আগের মত আর মারেন না ।
এই লেখাটা যারা পড়ছেন ,তারা মনে মনে খুব বিরক্তি হইছেন মনে হয়েছে । যাইহোক যদি ভাল লাগে তাহলে আরো কিছু গল্প নিয়ে আসব । গল্প হলেও সত্যি কিন্তু যা লিখেছি ।
১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০৩
শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: তার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছিলাম , এখন বলেন ; বিয়ে করার বয়স কি আছে আমার এখন ? হেসে ফেলেন
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৫৭
কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
শিক্ষকদের বাস্তব জীবনের গল্পগুলো শুনে ভাল লাগলো। +++
১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৪৫
শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: ধন্যবাদ কাওসার ভাই
৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৪৫
জাহিদ অনিক বলেছেন:
টিচিং ইজ এ্যা পুয়োর প্রফেশন; আমাদের দেশে শিক্ষকদের উপযুক্ত দাম নাই।
যার নাই কোন গতি সে করে পণ্ডিতি-
শিক্ষকেরা বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে অনশন করেন---
ভালো লাগলো লেখা
১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৪৫
শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: টিচারদের অনেক কষ্ট করতে হয় ।
৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:২৪
যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: আমার ব্লগে বে. শিক্ষক নিয়ে ছড়া কবিতা আছে, দাওয়াত রইলো
১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৪৬
শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: আচ্ছা দেখব ভাই ।।
৫| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো শিক্ষক পাওয়া অনেক বড় নেয়ামত।
১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৪৪
শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: ছোট বেলায় এরকম কিছু শিক্ষক পেয়েছিলাম এরকম ।
৬| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২২
কিশোর মাইনু বলেছেন: ভাবছি আমিও লিখি আমার স্যারদের নিয়ে।
কি বলেন ভাই?!?!?
পড়বেন তো???
১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:৩৫
শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: হ্যা পড়ব ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০১
চাঁদগাজী বলেছেন:
টিউটর শিক্ষকটি বিয়ে করতে না পারায় মনোকষ্ট পেলাম; বাকীরা বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষকের ন্যায়