![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাজেদ সাহেব বাজারে যেতে পারছেন না। তার মনে হচ্ছে বাজারে গেলেই কেউ তাকে মিনমিন কন্ঠে পেছন থেকে ডাকছে, "এই কুত্তা! এই কুত্তা!" প্রথমে তিনি মনে করেছিলেন এটা তাকে নয়, অন্য কাউকে বলা হচ্ছে। বাজারে তো কতো মানুষই থাকে। কিন্তু গত পরশু যখন তার বাজারে যাওয়ার ৫ম দিনও তিনি শুনতে পেলেন এই ডাক তখন নিশ্চিত হলেন যে এটা তাকে ডাকা হচ্ছে। আজ তো তিনি বাজার থেকে প্রায় ছুটে বাসায় চলে এসেছেন!
মাজেদ সাহেব বিদ্যুতে চাকরি করেন। এখন পোস্টিং সূত্রে তিনি আছেন খুলনায়। খুলনা জায়গাটা তার বরাবরই অপছন্দ! পানিও নোনতা, মানুষও বোকা। কিন্তু তার অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে খুলনায় পোস্টিং দেয়া হয়েছে। মাজেদ সাহেবের দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলেও ছেলেটা হয়েছে যাচ্ছেতাই! সারাদিন কাদের নিয়ে যেন আড্ডা দেয়! এই সেদিনও কাকে মেরে যেন কেস খেয়েছে একটা। পুলিস কে দশ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ছাড়াতে হয়েছে।
কিন্তু মাজেদ সাহেবের কাছে যে জিনিসটা পরিস্কার হচ্ছে না অদৃশ্য কেউ তাকে কিভাবে "কুত্তা কুত্তা" বলে ডাকবে। এখন যে জায়গায় বাজারটা এখানে আছে এখানে অবশ্য আগে বাজার ছিল না। সে অনেক আগের কথা। মাজেদ সাহেব তখন ছাত্র! খুলনাতেই লেখাপড়া করতেন তখন। চারিদিকে যুদ্ধ চলছে। তিনি যে মেসে থাকতেন তার পাশেই ছিল আর্মি ক্যাম্প। এলাকায় ধার্মিক হিসেবে যেহেতু তার ভালো নামডাক ছিল তাই শান্তি কমিটির দুই একটা বড় ভাই ধরে বেশ ভালোই ছিলেন। না তিনি কোন বাজে কাজে যেতেন না। তবে শুধু তাদের সাথে থাকার কারনে আয় ইনকাম ওই বয়সে খুব একটা খারাপ হত না।
বাজারের জায়গায় তখন ছিল পরিতোষ বাবুর বাড়ি। পরে অবশ্য পরিত্যাক্ত ছিল তাই সরকার সেখানে বাড়ি ভেঙে বাজার বানিয়েছে। পরিতোষ বাবু ছিলেন মাজেদ সাহেবের কলেজের স্যার। পর্বতসম মমতাময় একজন মানুষ। দেশের প্রতি ভালোবাসার কারনে দেশের ওই মুহূর্তেও তিনি দেশ ছাড়েননি। মাজেদ সাহেবকে ফ্রি পড়াতেন তিনি। রাতে কখনো না খাইয়ে বাসা থেকে আসতে দিতেন না। পরিতোষ বাবুর ছিল পরীর মতো দেখতে দুই মেয়ে। অপলা আর চপলা। চপলা তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। চপলার কথা আজও ভুলতে পারেন না মাজেদ সাহেব। আহারে! কি চেহারাই না ছিল।
তখন একদিন ঘটনাচক্রে ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মাজেদ সাহেবকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তার ডেকে পাঠানোর মূল বিষয় ছিল তিনি কোথাও থেকে জানতে পেরেছেন মাজেদ সাহেব পাকিস্তানের সেবায় কিছু না করে শুধু শুধুই সুবিধা পাচ্ছেন। এখন তাকে জবাবদিহি করতে হবে। নিশ্চয়ই কোন শয়তান অভিযোগ করেছে। মাজেদ সাহেব দরদর করে ঘামছিলেন! তখন মেজর তাকে বললেন, "আজ হামারা পেয়ার কারনেকা বাড়া মুড হ্যায়! কেয়া তুমহারে পাস কই পেয়ার কারনেওয়ালি হ্যায়?"
মাজেদ সাহেব কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। ক্যাপ্টেন জামশেদ খুলনার নামকরা পাকিস্তানি মিলিটারির অফিসার। তার উদ্দেশ্যও পরিস্কার। নিজের জীবনের তাগিদেই হোক আর তাকে খুশি করার জন্যেই হোক মাজেদ সাহেব সেই রাতে তাদের নিয়ে গিয়েছিলেন পরিতোষ বাবুর বাড়ি।
বাড়িতে কয়েকটি গুলির শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যায়নি। সৈন্য সহ ক্যাপ্টেন জামশেদ তার বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে প্রথমেই তার হাতের পিস্তল দিয়ে পরিতোষ বাবুকে আর তার স্ত্রীকে গুলি করেন। এটা ঘটলো মাজেদ সাহেবের সামনেই! পরিতোষ বাবু লুটিয়ে পড়েছিলেন মাজেদ সাহেবের পায়ের কাছে। মাজেদ সাহেব বলা চলে কাপছিলেন তখন। পাশের দরজা ভেঙে প্রথমে অপলাকে টেনে বের করা হলো। হাউমাউ করে কাদছিল মেয়েটা। তাকে ১০/১২ জন সৈন্যের সাথে পাঠিয়ে দেয়া হলো পাশের ঘরে। সেখানে চলতে লাগলো অপলার আর্তচিৎকার!
পাশেই দাঁড়িয়ে চপলা ঠকঠক করে কাঁপছিল। মাজেদ সাহেবকে সাথে নিয়ে ক্যাপ্টেন জামশেদ ঢুকলেন পাশের রুমে। মাজেদ সাহেবের হাতে পিস্তল দিয়ে তিনি ঝাপিয়ে পড়লেন চপলার উপর। কয়েক মুহূর্তেই জামা কাপড় টেনে ছিড়ে বুনো পশুর মতো ধর্ষণ করলেন চপলাকে। ঠায় পাথরের মতন দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য মাজেদ সাহেব দেখলেন। যখন জামশেদ উঠলেন তখন রক্তাক্ত চপলা অচেতনের মতন পড়ে রয়েছে বিছানায়। উঠে মাজেদ সাহেবের হাত থেকে পিস্তল নিয়ে তিনি ফিসফিস করে মাজেদ সাহেবের কানে কানে বললেন, "আব তুমহারি বারি হ্যায়। যাও, মাজা লুটো।"
মাজেদ সাহেবের কোন হিতাহিত জ্ঞান তখন ছিল না। রোবোটের মতন তিনি হেটে গেলেন বিছানার দিকে। হিংস্র শ্বাপদের মতন তিনি ঝাপিয়ে পড়লেন চপলার রক্তাক্ত কিশোরী দেহের উপর। জামশেদ দাঁত বের করে হাসছিল পাশে দাঁড়িয়ে। মাজেদ সাহেবের বুনো উন্মত্ততার মধ্যেও হালকা যন্ত্রনার গোঙানি বের হচ্ছিলো চপলার মুখ থেকে। হঠাৎ ক্যাপ্টেন জামশেদের পিস্তল গরজে ওঠে। মাজেদ সাহেবের মুখে এসে লাগে চপলার ফুটো হয়ে যাওয়া কপাল থেকে ছিটে আসা রক্তের ঝাপটা।
গুলি হবার আগে চপলা শুধু মাজেদ সাহেবের কানের কাছে মুখ এনে মিনমিন একটি কথাই বলেছিল, "কুত্তা! কুত্তা!"
২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩০
বি, এম, ইমন বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৪
বাকতাড়ুয়া বলেছেন: ভালো লেগেছে