![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"আচ্ছা শোন, আমার বাবুটার নাম কিন্তু রাখবো না তুমি না আসলে!"
"আচ্ছা রেখো না। আমি আসবো আরো ৩ বছর পর। ততদিনে নাম রেখে কিভাবে পারবে আমিও দেখবো।"
"আমি কিন্তু পারি। দেখিয়ে দেবো তোমাকে।"
বারবার এই কথাগুলো আসিফের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। আসিফ জাপানে পিএইচডি করতে এসেছে সাত মাসের মত। তার স্ত্রী যে সন্তানের মা হতে চলেছে এই কথা সে জানতে পারে যখন সে এয়ারপোর্টে তখন। তার স্ত্রী রাইসার যুক্তি ছিল যদি যাওয়ার আগে আগে জানায় তাহলে অবশ্যই আসিফ তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
এখন আসিফ বসে আছে প্লেনের মধ্যে। সারপ্রাইজ যদি রাইসা তাকে দিতে পারে তাহলে সেও পারে। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে রাইসা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে তাকে বলেছে, "আমি মরে গেলে তুমি আবার বিয়ে করবে না তো?"
আসিফ অবলীলায় বলেছে, "হ্যা অবশ্যই। বউ ছাড়া আজীবন থাকবো নাকি? আশ্চর্য!"
"প্লিজ দেখো তুমি বিয়ে করো না। তুমি বিয়ে করলে কিন্তু আমি ভুত হয়ে যাব। তারপর তোমার ওই বউকে মারবো।"
বলেই সে ভ্যা করে কেঁদে ফেলেছে। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তারপর তাকে অপারেশন থিয়েটারে পাঠানো হয়েছে। সেই কতোদিনের প্রেমের বিয়ে তাদের। কতো টুকরো টুকরো স্মৃতি! সব কেন যেন বারবার চোখ ভিজিয়ে দিচ্ছে আসিফের। আসিফ যে একটি ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছে এটা সে জানতে পেরেছে প্লেনে ওঠার ঠিক আগে আগে। ঠিক যেমনি দেশ ছেড়ে আসার আগে জানতে পেরেছিল ঠিক তেমনি। আসিফের ইচ্ছা ছেলের নাম রাখবে আরাফ। আসিফের 'আ' এবং রাইসার 'রা' একসাথে রেখে 'আরাফ'! ইচ্ছা করেই রাইসার সাথে কথা বলেনি তখন। একবারে সামনে যেয়ে মোক্ষম একটা সারপ্রাইজ দেবে এজন্যে!
আসিফের প্লেন কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঢাকা পৌছুলো। যখন সে পৌছায় তখন দুপুর। প্লেন থেকে নেমে হসপিটালেই যাচ্ছিল কিন্তু জানতে পারলো ওরা এখন বাসায়।
সরাসরি বাসায় আসলো আসিফ। সমস্ত আত্মীয় সজন ভীড় করে আছে বাসায়। আসিফ ঢুকতেই সবাই তাকিয়ে পড়লো আসিফের দিকে। আসিফের মা হেটে এলেন একটি দেবশিশুকে কোলে নিয়ে। আসিফের ঠোট থরথর করে কাঁপছিল! চোখে পানি আটকে রাখার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল সে। ওইটুকু বাচ্চা যদি দেখে তার বাবা কাঁদছে তাহলে কি একটা লজ্জার ব্যাপার হবে! কোনমতে আসিফ কোলে নিল তার সন্তানকে। তাকে কোলে নিয়েই এগোলো তাদের ঘরের দিকে।
ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কেমন যেন লজ্জা লজ্জা করছিল তার। কতোদিন রাইসাকে দেখে না সে! লজ্জা কেন করছে আল্লাই জানে। বিয়ের দিনও তার এমন লজ্জা করেছিল। সেদিনের মত আজও পরদা সরিয়ে ঘরে ঢুকল সে। না, আজ রাইসা বধূবেশে তার জন্য অপেক্ষা করছিল না।
ঘরের মধ্যে সাদা কাপড়ে পেচানো লম্বা মতন কিছু একটা ছিল। পেছনে তাকিয়ে আসিফ দেখে সমস্ত আত্মীয়রা ভীড় করেছে তার পেছনে। মা তার কোল থেকে বাবুকে নিলেন। আসিফ এগোচ্ছে সাদা কাপড়ে পেচানো কারো দিকে। জিনিসটার সামনে বসে ধীরে ধীরে আসিফ কাপড়টির গিট খুলতে শুরু করলো।
আচ্ছা এর মধ্যে রাইসা নেই তো? না, রাইসা থাকতে পারে না। কিছুতেই না।
কাপড়ের গিট খুলে ফেলল আসিফ...
©somewhere in net ltd.