![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখন মধ্যরাত। দরজায় দমাদম শব্দ হচ্ছে। কি করবে রহিমা বিবি, কোথায় লুকাবে এখন তার এই কিশোর ছেলেকে। ছেলে যে মুক্তিবাহিনীর চর! সবাই যে জেনে গেছে এটা। একমাত্র ছেলে সাদেককে পুরো শরীরটা দিয়ে আড়াল করে ঢেকে রেখেছে সে। চেয়ে আছে বিস্ফোরিত নয়নে দরজাটার দিকে। ১৩ বছরের সাদেকের মুখ সাদা হয়ে গেছে আতঙ্কে! ওদিকে দরজার বাইরে থেকে ভেসে আসছে হায়েনার চিৎকার।
হঠাৎ করেই দড়াম করে ভেঙে গেল দরজা! ঘরের মাঝে হুড়মুড় ঢুকে পড়ল ১০/১২ জন মানুষ। এই মানুষগুলোর মধ্যে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালোমতন একজন, নাম তার কাদের। কাদের মোল্লা। এলাকায় সে জবাই করে ছাড়া মানুষ মারে না। আড়ালে আবডালে লোকে তারে ডাকে কসাই কাদের!
কাদের হাত দিয়ে ইশারা করলেই তিনজন ধরে নিয়ে গেল সাদেককে। মা শরীরের সবশক্তি দিয়ে আটকাতে চেয়েছিল, পারেনি। কাদের শক্ত করে ধরে রেখেছে দুই হাত।
"বাবারে, আমার পোলাডারে ছাইড়া দে বাবা", হাউমাউ করে ওঠে রহিমা।
"ওই হারামির পুতরে শোয়া"। কাদেরের হুমুম পেয়ে সাদেককে জোর করে চারজন মিলে চেপে ধরে। রহিমাকে আরেকজনের হাতে দিয়ে সাদেকের দিকে এগিয়ে যায় কাদের মোল্লা। হাতে তার প্রিয় কাটারি। সব চেয়ে বেশী মানুষ এটা দিয়েই কেটেছে সে।
তখনো রহিমা বিবি চিৎকার করে প্রানভিক্ষা চাইছিল সন্তানের। কাদের মোল্লার কাটারির টানে যখন সাদেকের গলা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছিল তখনো রহিমা বিবি চিৎকার করছে। কিছুক্ষন ছটফট করেই থেমে গেল সাদেকের শরীরটা, সাথে মা রহিমাও। যেন একসাথে মরে গেল দুজন। প্রানহীন চোখে নিজের সন্তানের দিকে চেয়ে আছে রহিমা।
কাদের বেরিয়ে যাচ্ছিল। রহিমা শুধু বিড়বিড় করে বলল, "তুইও মরবি কাদের, তুইও মরবি। তোর মরন হইবো এর থেইকা ভয়ংকর!"
আবছাভাবে কথাটা কানে এল কাদেরের। কর্ণপাত করেনি সে। দেশদ্রোহীর মা কি বলল তাতে মাথা ঘামানোর কোন মানে হয় না।
এরপর কেটে গেল ৪২ বছর। সেদিনও মধ্যরাত। কাদের কিছু দেখতে পাচ্ছেনা। মুখ তার কালো কাপড়ে ঢাকা। গলায় পরানো হয়েছে রশি। এলাকার মানুষ যে কসাই কাদেরের নামে কাঁপত সে এখন থরথর করে কাঁপছে । যে তখন মুহূর্তের কোপে মানুষ কেটেছে এখন তার মৃত্যু হবে দড়িতে ঝুলে, ছটফট করতে করতে। হঠাৎ তার মনে পড়ল ৪২ বছর আগের রহিমা বিবির বিড়বিড় করে বলা সেই কথা, "তুইও মরবি কাদের, তুইও মরবি। তোর মরন হইবো এর থেইকা ভয়ংকর!"
একজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, পুরো দেশের মানুষ তাতে খুশি হচ্ছে। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর মৃত্যু হয়?
হাতলটা ধরে টান দিল জল্লাদ, কাদেরের পায়ের নিচ থেকে সরে গেল কাঠের পাটাতন, দড়িতে ঝুলন্ত কাদের পড়ে গেল এক কালো আধারে। এমনই আঁধার যে আঁধারে একটি জাতির কলঙ্কের কালিমা কিছুটা হলেও মুছে যায়।
ঘটনাটা কাল্পনিক। তবে এটা সত্য যে, এরকম শত শত মা বিড়বিড় করে তখন অভিশাপ দিয়েছিল কাদেরকে। এতো মায়ের অভিশাপ বিফলে যায় না রে কাদের, এতো মায়ের অভিশাপ বিফলে যায় না।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৮
আরজু পনি বলেছেন:
এতো মায়ের অভিশাপ বিফলে যায় না রে কাদের, এতো মায়ের অভিশাপ বিফলে যায় না।