![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর। ভেঙে গেল বঙ্গভঙ্গ। সেই বঙ্গভঙ্গ যার ফলে শিক্ষার এক গনজোয়ার তৈরী হয়েছিল পূর্ব বাংলায়, অর্থাৎ বাংলাদেশে। বাংলার তৎকালীন কিছু নবাব যেমন স্যার সলিমুল্লাহ, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক তখনকার ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে পূর্ব বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার এই প্রসার ধরে রাখার জন্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোর দাবি জানালেন।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত সমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়ে ফেললো। তারা ভেবে দেখল, যদি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় তাহলে তাদের ওখানে অর্থের বরাদ্দ এবং শিক্ষক এই দুই জায়গায়ই সংকট দেখা দিতে পারে। বড় বড় শিক্ষাবিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেল লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন না করার জন্যে জোরালো দাবি জানাতে থাকেন। কিছু ইতিহাসবিদ অবশ্য পরে এখানে হিন্দু মুসলিম বিভেদ টেনেছেন যেমন হিন্দুরা এই বিশ্ববিদ্যালয় চায়নি, চেয়েছিল শুধু মুসলমানরা। আসলে এমনটি নয়। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু মুসলিম কেউই চায়নি এখানে একটি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হোক। এমনকি পূর্ববাংলার কিছু বড় বড় হিন্দু-মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করে তার বদলে বিভিন্ন জায়গায় স্কুল-মাদ্রাসা নির্মানের পরামর্শ দিতে থাকেন। কারন তখনকার সময়ে প্রতি হাজারে হয়তো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্য হয়ে উঠতে পারতেন।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে অটল থাকেন জনাব নওয়াব আলী চৌধুরী এবং শেরে বাংলা। অন্যদিকে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রতিনিয়ত এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা এবং জনমত তৈরীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। লর্ড হার্ডিঞ্জ ব্যাক্তিগতভাবে উপাচার্য আশুতোষকে খুব পছন্দ করতেন। তিনি কোন ভাবেই তার বিরুদ্ধে কিছু করতে চাচ্ছিলেন না আবার ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্যেও অনেক আন্তরিক ছিলেন।
উপায়ান্তর না দেখে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেবেন? আশুতোষ মুখোপাধ্যায় অনেক ভেবে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে চারটি নতুন প্রোফেসরের পদ তৈরী করালেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে সরকারী ফান্ডে থাকা পঞ্চাশ লক্ষ টাকা থেকে একটি বড় অঙ্কের টাকা কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে বরাদ্দ করান।
চরম অর্থসঙ্কটে ভুগতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডকে সামনে এগিয়ে নিতে এগিয়ে আসেন নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সহ আরো অনেকে। তাদের একান্ত প্রচেষ্টায় ভারতীয় আইনসভায় ১৯২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আইনটি চূড়ান্ত ভাবে গৃহিত ও পাস হয়। অল্প কিছু শিক্ষক এবং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের অর্ধেক বেতনে ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড উপাধি পাওয়া আমাদের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।
যে বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টিই হয়েছে এমন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে তো সংগ্রাম জড়িয়ে থাকবেই। দেশের মাতৃভাষা রক্ষা, দেশের স্বাধীনতা লাভ সহ স্বাধীনতা উত্তর অনেক বড় বড় আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আজ আমি সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ে করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে অন্যতম বড় ভূমিকা রাখা মানুষ একে ফজলুল হকের নামে সৃষ্টি হওয়া ফজলুল হক মুসলিম হলের একটি ঘরের এক কোনায় বসে লেখাটি লিখছি। সৃষ্টিকর্তা বুঝি অনেক বেশী ভাগ্য দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন আমাকে।
কারন, অনেকেই আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঐতিহাসিক বলে। কিন্তু আমি জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক জলজ্যান্ত ইতিহাস!
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫৪
লোডশেডিং বলেছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠায় যদি হিন্দুদের দান খয়রাত না থাকে তবে জগন্নাথ হলের সম্পত্তি আসলো কোনো মুসলমানের সম্পত্তি হতে। আজ রোকেয়া হল ও শামসুননাহার হলের কিছু অংশ ওই জগন্নাথ থেকেই ধার নেওয়া সম্পত্তি। তাই দয়া করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মুসলমানি করাবেন না্। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে যে দুজন বিজ্ঞানী বিখ্যাত করেছেন তার মধ্যে অধ্যাপক সত্যন বস ও আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ছিল অন্যতম। দর্শনে গোবিন্দ চন্দ্র বসু বহু পরিচিতি করিয়েছেন। যদি পশ্চিম বঙ্গের এলার্জী থাকতো শিক্ষা প্রসারে তাহলে সত্যন বোসের মত ঘটি কলকাতা ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়তে আসতেন না পড়াতে। তাছাড়া এদেশের বেশির ভাগ নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে গেছেন এদেশের হিন্দুরা। অত্যন্ত দু:খের বিষয় মুসলমান ধনীরা সে সময় বিয়ানি পোলাও ও চার পাচ বউ নিয়ে মোজ ফুর্তি করতো। সত্য ইতিহাস পুড়ান জানুন।