![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফয়সাল ভূঞা সুমন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
❶
============বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু==================
----সালাউদ্দিন আহমেদ সালমান
বাংলা মায়ের কাঁচা রক্ত ,চুষে খাচ্ছে পাকিস্তান
তাই দেখিয়া শোকে পোড়া বাংলার বুকে জন্ম নিলো শেখ মুজিবুর রাহমান ।
মুক্তির সংগ্রাম অপশক্তিতে নয়, প্রমান করেছে বাঙ্গালী রক্তের বন্যায় ,
পাকবাহিনীর নাপাকি হাত ভেঙ্গে ,বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছে স্বাধীনতার সূর্য বাংলায় ।
অবাক বিস্ময়ে নির্বাক পৃথিবী অপলক তাকিয়ে রয় , যেদিন শেখ মুজিবুরের সংগ্রামী ডাকে বাংলাদেশ পেয়েছিল স্বাধীনতার বিজয় ।
চোখে স্বপ্ন মনে বিতৃষ্ণা হাতে নিয়ে প্রাণ বাংলাদেশ কে বাঁচাতে হলে হঠাও পাকিস্তান ,
জন্মভুমির জীবনটাকে করে সম্মান শেখ মুজিব-ই গেয়েছিল স্বাধীনতার গান ।
নির্যাতিত বাঙ্গালীর দুঃখ কষ্ট করলে অবসান স্বদেশ গড়ার নকীব তুমি শেখ মুজিবুর রহমান ।
শহর নগর গ্রাম গঞ্জে ওমর শিল্পীর গান স্বাধীনতার স্বপ্ন পুরুষ তুমি শেখ মুজিবুর রহমান ।
গাছেতে ফল নদীতে জল থাকবে যতকাল রাত্রি -দিন বাংলাদেশ ভুলবেনা কখনও শেখ মুজিবের ঋণ ।
পিতার পড়নে মুজিবকোট চোখে প্রশ্নের জল তোরা আজো কেন করলিনা নিপাত রাজাকারের দল '
শস্য শামল সোনার বাংলায় দেখো পাখিরা গান গায়, এ দেশটাকে স্বাধীন করতে বাঙ্গালী অকাতরে দিয়েছে ৩০ লক্ষ মানুষের বলিদান ।
❷
'বাঙালি, একটি ফিনিক্সপাখি'
-আখতারুজ্জামান আজাদ
আমরা বাহান্নতে মরেছি দলে দলে,
আমরা একাত্তরে মরেছি ঝাঁকে ঝাঁকে,
আমরা পঁচাত্তরে মরেছি সপরিবারে।
প্রতিটি মৃত্যুর পর আমরা আবার জেগে উঠেছি,
যেভাবে জেগে ওঠে একটি ফিনিক্সপাখি, অগ্নিদগ্ধ ভস্ম থেকে।
জাতির স্বপ্ন দেখার ভার যখন স্বপ্নভঙ্গের হাতে,
বিপ্লবের ধ্বজা যখন ধ্বজভঙ্গের হাতে,
তখন স্বপ্ন আর বিপ্লবের ধ্বংসাবশেষের ওপর দাঁড়িয়ে
বিপ্লবীদের বিধ্বস্ত করাই বাঙালির বিপ্লব!
যেসব বিপ্লবী জাতিকে পিতৃহীন করার বিপ্লবে নেমেছিল পঁচাত্তরে,
আজ পিতৃহীন হয়েছে তাদের সন্তানেরা,
আর কেউ কেউ প্রহর গুনছে মৃত্যুর অপেক্ষমাণ তালিকায়!
পরাজিত শক্তি যখন হেঁটে বেড়ায় বিজয়ীর বেশে,
যখন ফুলেরা কাঁদে, হায়েনারা হাসে;
যখন মানুষ ঘুমায়, পশুরা জাগে;
তখন আমার ঠিকানায় আসে সেই পুরনো পত্র,
তখন আমার কানে ভাসে সেই পুরনো ছত্র --
"এ বা রে র সংগ্রাম আমাদের মু ক্তি র সংগ্রাম!
এ বা রে র সংগ্রাম স্বা ধী ন তা র সংগ্রাম!
জ য় বাং লা!"
❸
সেই রাত্রির কল্পকাহিনী
---------নির্মলেন্দু গুণ
তোমার ছেলেরা মরে গেছে প্রতিরোধের প্রথম পর্যায়ে,
তারপর গেছে তোমার পুত্রবধূদের হাতের মেহেদী রঙ,
তারপর তোমার জন্মসহোদর, ভাই শেখ নাসের
তারপর গেছেন তোমার প্রিয়তমা বাল্যবিবাহিতা পত্নী,
আমাদের নির্যাতিতা মা।
এরই ফাঁকে একসময় ঝরে গেছে তোমার বাড়ির
সেই গরবিনী কাজের মেয়েটি, বকুল।
এরই ফাঁকে একসময় প্রতিবাদে দেয়াল থেকে
খসে পড়েছে রবীন্দ্রনাথের দরবেশ মার্কা ছবি।
এরই ফাঁকে একসময় সংবিধানের পাতা থেকে
মুছে গেছে দু’টি স্তম্ভ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।
এরই ফাঁকে একসময় তোমার গৃহের প্রহরীদের মধ্যে
মরেছে দু’জন প্রতিবাদী, কর্ণেল জামিল ও নাম না-জানা
এক তরুণ, যাঁর জীবনের বিনিময়ে তোমাকে বাঁচাতে চেয়েছিলো।
তুমি কামান আর মৃত্যুর গর্জনে উঠে বসেছো বিছানায়,
তোমার সেই কালো ফ্রেমের চশমা পরেছো চোখে,
লুঙ্গির উপর সাদা ফিনফিনে ৭ই মার্চের পাঞ্জাবী,
মুখে কালো পাইপ, তারপর হেঁটে গেছো বিভিন্ন কোঠায়।
সারি সারি মৃতদেহগুলি তোমার কি তখন খুব অচেনা ঠেকেছিলো?
তোমার রাসেল? তোমার প্রিয়তম পত্নীর সেই গুলিবিদ্ধ গ্রীবা?
তোমার মেহেদীমাখা পুত্রবধুদের মুজিবাশ্রিত করতল?
রবীন্দ্রনাথের ভূলুন্ঠিত ছবি?
তোমার সোনার বাংলা?
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামবার আগে তুমি শেষবারের মতো
পাপস্পর্শহীন সংবিধানের পাতা উল্টিয়েছো,
বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে এক মুঠো মাটি তুলে নিয়ে
মেখেছো কপালে, ঐ তো তোমার কপালে আমাদের হয়ে
পৃথিবীর দেয়া মাটির ফোঁটার শেষ-তিলক, হায়!
তোমার পা একবারও টেলে উঠলো না, চোখ কাঁপলো না।
তোমার বুক প্রসারিত হলো অভ্যুত্থানের গুলির অপচয়
বন্ধ করতে, কেননা তুমি তো জানো, এক-একটি গুলির মূল্য
একজন কৃষকের এক বেলার অন্নের চেয়ে বেশি।
কেননা তুমি তো জানো, এক-একটি গুলির মূল্য একজন
শ্রমিকের এক বেলার সিনেমা দেখার আনন্দের চেয়ে বেশি।
মূল্যহীন শুধু তোমার জীবন, শুধু তোমার জীবন, পিতা।
তুমি হাত উঁচু করে দাঁড়ালে, বুক প্রসারিত করে কী আশ্চর্য
আহবান জানালে আমাদের। আর আমরা তখন?
আর আমরা তখন রুটিন মাফিক ট্রিগার টিপলাম।
তোমার বক্ষ বিদীর্ণ করে হাজার হাজার পাখির ঝাঁক
পাখা মেলে উড়ে গেলো বেহেশতের দিকে…।
… তারপর ডেডস্টপ।
তোমার নিষ্প্রাণ দেহখানি সিঁড়ি দিয়ে গড়াতে, গড়াতে, গড়াতে
আমাদের পায়ের তলায় এসে হুমড়ি খেয়ে থামলো।
– কিন্তু তোমার রক্তস্রোত থামলো না।
সিঁড়ি ডিঙিয়ে, বারান্দার মেঝে গড়িয়ে সেই রক্ত,
সেই লাল টকটকে রক্ত বাংলার দূর্বা ছোঁয়ার আগেই
আমাদের কর্ণেল সৈন্যদের ফিরে যাবার বাঁশি বাজালেন।
❹
আপনজন
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
মুজিব স্মৃতি সজিব অতি
মনে রেখো ভাই,
মুছতে পারে এমন স্মৃতি
সাধ্য কারো নাই।
মুজিব বাংলার স্বাধীনতা
সব বাঙালির মিতা
মুজিব সবার আপনজন
মুজিব জাতির পিতা।
মুজিব বাংলার স্বপন গাঁথা
মুজিব বাংলার প্রাণ
মুজিব হল সোনার বাংলার
সোঁদা মাটির ঘ্রাণ।
মুজিব স্মৃতি সজিব অতি
মনে রেখো ভাই,
মুছতে পারে এমন স্মৃতি
সাধ্য কারো নাই।
মুজিব বাংলার রাখাল রাজা
পরশ পাথর প্রাণ
কনক প্রদীপ স্বাধীনতা
বাংলাদেশের গান।
মুজিব আমার মুক্তি আলো
দিবাকরের হাসি
সোনার বাংলার স্বপ্ন পুরুষ
ভালবাসা বাসি।
মুজিব স্মৃতি সজিব অতি
মনে রেখো ভাই,
মুছতে পারে এমন স্মৃতি
সাধ্য কারো নাই।
❺
কফিন কাহিনী
–মহাদেব সাহা
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি কফিন
একজন বললো দেখো ভিতরে রঙিন
রক্তমাখা জামা ছিলো হয়ে গেছে ফুল
চোখ দুটি মেঘে মেঘে ব্যথিত বকুল!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে এক শবদেহ
একজন বললো দেখো ভিতরে সন্দেহ
যেমন মানুষ ছিলো মানুষটি নাই
মাটির মানচিত্র হয়ে ফুটে আছে তাই!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি শরীর
একজন বললো দেখো ভিতরে কী স্থির
মৃত নয়, দেহ নয়, দেশ শুয়ে আছে
সমস্ত নদীর উৎস হৃদয়ের কাছে!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি কফিন
একজন বললো দেখো ভিতরে নবীন
হাতের আঙুলগুলি আরক্ত কবরী
রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি!
❻
স্বাধীনতা - এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
– নির্মলেন্দু গুণ
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে : ‘ কখন আসবে কবি ' ?
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না ,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না ,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না ৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি ?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে , বেঞ্চে, বৃক্ষে , ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি ?
জানি , সেদিনের সব স্মৃতি , মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত ৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি ,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল ,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান ,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ৷
হে অনাগত শিশু , হে আগামী দিনের কবি ,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে ; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প ৷
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর ৷
না পার্ক না ফুলের বাগান — এসবের কিছুই ছিল না ,
শুধু একখণ্ড অখণ্ড আকাশ যেরকম , সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা , সবুজে সবুজময় ৷
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে ৷
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক ,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক ,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক ৷
হাতের মুঠোয় মৃত্যু , চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত ,
নিম্ন মধ্যবিত্ত , করুণ কেরানী , নারী , বৃদ্ধ , বেশ্যা , ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা - কুড়ানীরা দল বেঁধে ৷
একটি কবিতা পড়া হবে , তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের : " কখন আসবে কবি " ? " কখন আসবে কবি " ?
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে ,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন ৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল ,
হৃদয়ে লাগিল দোলা , জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা ৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী ?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর - কবিতা খানি :
" এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম ,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম "৷
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের ৷
©somewhere in net ltd.