![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি আমি অন্ধ চোখে জগতটাকে
মানুষের জীবনে নানা ঘটনা ঘটে চলে যা আসলে বলে বোঝানো খুবই কঠিন তারপরও কিছু জিনিস রহস্যের আড়ালে পড়ে থাকে আজীবন। জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা সারাজীবন হয়ত পড়ে থাকে প্রশ্নের নিচে। আজ সে রকম একটা ছোট গল্পের অবতারনা করব। গল্পের নায়ক বা নায়িকা বলে এখানে কেউ নেই। ইউনিভার্সিটির কিছু ১ম বর্ষের ছেলেরা মিলে থাকে নিরালা নামক এলাকায়। মেস মেম্বারদের কোন ঠিক ঠিকানা নেই আজ এ আসে তো কাল ও চলে যায়। কিছু মানুষ ৪৭০ নাম্বার বাসায় স্থায়ী আসন গেড়ে বসে আছে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সূর্য, কবি যে এক কলম কবিতা না লিখেই কবি উপাধি ধারন করে বসে আছে, রাশু, জ্ঞানী, আর আশ্লীল কলু। সুর্যদের বাসায় মালিক থাকেনা বলে ওরা নিজেদের মত থাকে মেসে। এখানে না আছে কোন নিয়ম না আছে কোন ব্যবস্থা রাতে এসে থাকতে পারলেই ওরা খুশি। সারাদিন ক্যাম্পাসে ছোটাছুটি আর নানাবিধ ব্যস্ত সময় পার করে ওরা এসে যে যার যার রুমে বসে নিজেদের কাজ অকাজে মেতে ওঠে। কবি বসে যায় তার গেমসে, রাশু ফোনে, জ্ঞানী বই পড়ায় আর সূর্য ,যার আড্ডা না দিলে প্রান বের হয়ে যায় সে নিজের রুমে নানা ডিসিপ্লিনের মানুষ নিয়ে বসে থাকে।
একদিন কেউ একজন সূর্যকে জিজ্ঞাসা করেছিল কেন সে অনান্য ডিসিপ্লিনের মানুষদের সাথে বেশী মিশে সূর্য বলেছিল “চার/পাচ বছরে না চাইলেও নিজের ডিসিপ্লিনের সবার সাথে পরিচয় হয়ে যাবে যদি পরিচিত হতে হয় তাহলে বাইরের মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া কি ভাল না”
সূর্যরা নিজেদের বাসায় একটা রেওয়াজ চালু করেছিল তা হল রাত ১১ টা পর্যন্ত সবাই আড্ডাবাজি করবে এর পরে সময় পেলে পড়বে। এই হল ওদের অবস্থা, ওরা এই নিয়মে চলছিল। ওদের বাসায় কেউ ঢুকলে কোনকিছু শুনতে পেত না কারন ৪টা রুম থেকে হাজার প্রকার শব্দ আসত। এভাবে প্রায় ৪ মাস কেটে গেল সূর্যদের মেসের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল সবখানে কেননা এটা ছিল সব ভাল খারাপ কাজের তীর্থ স্থান ও র্যা গের আস্তানা।
সূর্য হল মেস এর অন্যতম কাণ্ডারী বাড়ি ভাড়া নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা ছিল না সব থেকে বড় ব্যাপার কোন মালিক নেই এটাই ওদের কাজ কর্মের মূল উৎসাহ।
ক্যম্পাসে নতুন একটা ব্যাচ এসে হাজির আর সূর্যদের প্লান রেডি। ওরা বলাবলি করে বেড়াতে লাগল যাক এবার কিছু মুরগি আনা যাবে অনেক দিন মাংস খাই না। সূর্যদের বন্ধুদের মাঝে কবি ও রাশু আশেপাশের সব জায়গা তন্ন তন্ন করে খুজে আবিষ্কার করেছে যে এই বাসার ত্রিসীমানয় কোন উঠতি বয়সের মেয়ে নেই। যা আছে তা হল কাকী, আন্টি, ও খলাম্মা ধরনের। এই কথা মেসে এসে প্রচার করা মাত্রই সবার মাঝে এক হতাশা নেমে এল। একু কেউ বলল তাহলে মেয়ে পূর্ন এলাকায় চল টাকা দিয়ে যখন থাকব তখন একটু ভাল এলাকায় যায়।কয়েকজন অবশ্য রাজি ও হয়ে গেল। বাধ সাধল সূর্য ও কলু ওরা নাছোড় বান্দা ওদের এক কথা এই সুবিধা কোথাও পাব না। কলুর সমস্যা সে রুমের ভিতর আধা ন্যাংটা হয়ে থাকে যা ভদ্র এলাকায় সম্ভব না। অনেক কথার পর সূর্য বলে দিল যে আসবে মেয়ে আসবে, এখানেই আসবে । জ্ঞানী বলে উঠল তুমি কি ভবিষ্যত বলার ম্যানেজার যে আগাম খবর তোমার কাছে চলে আসে। রাশু বলল কিভাবে আসবে শুনি? যা হোক ওদের আলোচনা কোন অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হল। পরদিন রাতে ওরা একগাদা ছেলেপুলে নিয়ে র্যাবগ দিতে বসে গেল। রুমের মধ্যে বিকট শব্দে গান চলতে লাগল আর সেই সাথে হা হা হি হি আর নাচানাচি চিৎকার চেচামেচি আর নানাখান কান্ড। ওদের মেসের শব্দ গাড় অন্ধকার ভেদ করে রাতের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে খান খান করে দিতে প্রতিদিন।
সেদিন ছিল আমাবশ্যার রাত, ঘড়িতে ১২ টা বেজে চলেছে কারো কোন খেয়াল নেই কত রাত হল। চারিদিকে নিশব্দতা জেকে বসেছে, এত অন্ধকার যে এক ফুট দূরে দেখা যেন স্বপ্নের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। র্যাতগের মাঝে বিরতি দিয়ে ওরা কলুকে বলল মামা যাও পোলাপান এর জন্য কিছু মশলা নিয়ে এস। কলু চলে গেল কোন কথা না বলে। এর মাঝে সবাই পিসি অফ করে সময়টাকে উপভোগ করতে ব্যস্ত কেননা ১৫ মিনিট পর আবার দোজখ নাজিল হবে রুমের মধ্যে। যা হোক এই ফাকে সূর্য নিজের সংগ্রহ থেকে একটা সিডি বের করে পিসিতে ঢুকিয়ে দিল। এটা ছিল ওর ২০০৩ এ কেনা একটা মিক্সড। সিডি অন হবা মাত্রি সবাই যেন মায়ার জগতে চলে গেল। নারী কন্ঠের সুললিত আওয়াজে রুমটা ভরে গেল। অসম্ভব রকমের সুন্দর একটা গান চলছে। “ তুমি চলে যাবে জানি তার পরও তোমাকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা আমার “ কখন যে সময় পার হয়ে যচ্ছিল কেউ বুঝতেই পারছিল না। রাতের গভীরতা এখন সর্বচ্চো অবস্থায়। ঝি ঝি পোকারাও যেন ডাকতে ভুলে গেছে। এমন সময় ওদের সবার নিস্তব্ধতাকে খান খান করে দিয়ে এক অচেনা নারী কণ্ঠের আওয়াজ ভেসে এল “ অসম্ভব সুন্দর রকমের সংগীত আমি কি পেতে পারি গানের কপি এখন” এই সাথে চুড়ির আওয়াজ যেন পরিবেশটাকে ভারী করে তুলল। কেউ কিছু বলে ওঠার আগেই সে নারী কন্ঠ বলে উঠল আমি রাত তিনটার দিকে বাসার নিচে থাকব। সবাই নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল আর ফিস ফিস করে আলোচনা করতে লাগল কে এই মেয়ে। জ্ঞানী বলে উঠল খুব আস্তে সূর্য বলেছিল মেয়ে আসবে তাহলে কি? ছোট ছেলেরা ভয় পেয়ে গেল কেননা আজ আমাবশ্যার রাত আর ওদের মাঝে কেউ একজন একদিন বলেছিল এক অচেনা নারী প্রায়ই দেখা যায়।
যা হোক সূর্য ভয় পেলেও বুঝতে দিল না। সে ঘড়িতে দেখল আর মাত্র ১৪ মিনিট আছে রাত তিনটা বাজতে। ও রাশুকে নিয়ে যাবে বলে ঠিক করেছে। এর মাঝে অন্য একজনকে বলল যাবার জন্য কিন্তু কেউ রাজি হল না। কবি বলল সে যাবে কিন্তু সিডি দিতে পারবে না। অগ্যত সূর্য রাজি হল। সেই চুড়ির আওয়াজ আবার রিনি ঝিনি করে বেজে উঠল। সুর্য তড়িঘড়ি করে সিডি বের করে নিল, ব্যস্ততার মাঝে সে কপি করে রাখতে পারলনা। যা হোক ওরা তিনজন নিচে নেমে চল। অদ্ভুত ব্যাপার বাইরে কন কনে শীত পড়তে শুরু করল যা ওদের কল্পনায় ছিল না। চারপাশের আবহাওয়া কেমন যেন বদলে যেতে শুরু করল শিয়ালগুলো যেন কান্নার সুর তুলে ডাকতে লাগল। কবি দোয়া দুরুত পড়ে চলেছে সমানে ঠান্ডা বাতাস আর ঝড়ো হাওয়া সব মিলে ওদের নাকাল আবহাওয়া। যা হোক সুর্য সেই অদেখা সুন্দরীকে খুজতে শুরু করল। কিন্তু সে তার টিকিটিও পেল না , হঠাত ওকে অবাক করে দিয়ে বাতাসের একটা স্তর ওর গা ঘেষে চলে গেল সামনে এত অন্ধকার যে ও রাশুকে খুজতে শুরু করল। হঠাত একটু দূরে সেই রিনি ঝিনি শব্দ শুনতে পেল রাশু সূর্যকে বলল এদিকে মামা। সুর্য সেই রিনি ঝিনি শব্দের দিকে হাটতে লাগল, দুই মিনিট হেটে সে একটা বাড়ির সামনে এসে দাড়াল,ঘুট ঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না দূরে একটা লাইট টিমটিম করে জ্বলছে যা অন্ধকারকে আর ঝাঝিয়ে তুলছে। যা হোক বাড়ির সামনের দিকে তাকাতেই নারী কন্ঠ বলে উঠল কই এসো উপরে। সূর্য বলল আপনার নাম কি ? আর এত রাতে আপনি কিভাবেই বা এসেছেন? আর আপনি সামনেই বা আসছেন না কেন? মেয়েটি বলল আমি পুরুষ মানুষের সামনে আসি না, আর আপনি সিডি আওনলে দিয়ে যান এত কথার জবাব আমি দিব না বলেই সে খিল খিল করে হেসে উঠল, সে মায়বী হাসি সুর্যের বুক কেপে উঠল রাশু ওর পাশে দঁড়িয়ে আছে ওর শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে যেন ভুতের সাথে কথা বলছে। যা হোক সূর্য সাহস করে সিড়ির সামনে এসে হাত বাড়িয়ে সিডি দিতে প্রস্তুত হল। মেয়েটি বলল দেরী করছ কেন দাও আমার অনেক কাজ আছে । সূর্য চোখ বন্ধ করে হাত বাড়িয়ে সিডি দিয়ে দিল , দেবার সময় সে নিজের অজান্তেই বলে উঠল তুমি কে কে কে এ এ এ...? কিছু না বলেই চুড়ির ঝংকার রাতের সকল নিশব্দতাকে ভেঙে দিয়ে বেজে যেতে লাগল। রাশু থর থর করে কাপতে লাগল, সূর্য ওকে ধরে কোন ক্রমে বাসার দিকে দৌড়ে চলে এল, এসে দেখে কবি বসে কি কি বিড় বিড় করছে। কোন মতে তিনজন বাসার দরজায় এসে পড়ে গেল।
রাশু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে কবি ও নিজেকে ফিরে পাচ্ছে না , ওদের দুজনের গা পুড়িয়ে জ্বর আসল। রাশুর জ্ঞান ফিরল ৪ ঘণ্টা পর ততক্ষনে আকাশ ফর্শা হতে শুরু করেছে সুর্য সারা রাত ঘুমুতে পারেনি। ওদিকে র্যা গ শেষে জুনিয়ররা নিজেদের মেসে ফিরতে শুরু করেছে। পরদিন সকালে রাশুর মুখ থেকে সুর্য ও তার বন্ধুরা যা বলল তা হল। “ চুড়ির শব্দে সে যখন এগিয়ে গেল তখন এক অপূর্ব সুন্দরী এক মেয়ে বয়স ১৮ কি ২২ হবে। এর পর সুর্য যখন সিডি দেয় তখন চাদের আলোর সে মুখে রক্ত দেখেছিল এর পর সে কিছুই জানে না। সূর্য নিজের মনে মনে বলল মেয়েটির হাতে এত পশম ছিল কে?
সূর্য এক হুজুরের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বলার পর হুজুর বলেছিল যা কিছু ঘটে তার সব কিছুর ব্যাখ্যা নেই আর তা খুজতে যাওয়া বোকামি। সূর্য বুঝতে পারল অভ্যাস বসত কখন সিগারেট ধরিয়েছিল তা ওর মনে ছিল না। অজীবনে অনেকবার বোঝার চেষ্টা করেছে কেন বা কি জন্য এমন ঘটেছিল বা কে এই মেয়ে ? আশ্চার্যের বিষয় সূর্য ওই গান গুলো আজো মনে করতে পারেনি ।
২| ৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫১
বেনিইয়ামিন সিয়াম বলেছেন: ভালো লিখেছেন
৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫৭
৭ ১ নিশান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামত প্রদানের জন্য
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:৪৩
৭ ১ নিশান বলেছেন: পাঠকগনের উদ্দেশ্যে বলতে চাই গল্প ভাল বা খারাপ যায় লাগুক মন্তব্য দিবেন