নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। আমার মূল্যায়ন হবে আমার লেখায় আর তা করবে আমার চারপাশের মানুষ

৭ ১ নিশান

দেখি আমি অন্ধ চোখে জগতটাকে

৭ ১ নিশান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাস খেলা ও তুমুল কান্ড

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫১

সকাল আট টা ক্যাম্পাসে সবাই খুব ব্যস্ত চা খাবার সময় ও যেন কারো নেই। ব্যস্ত হবারই কথা কারন নতুন সেশন এর রেজিট্রেশন চলছে । সূর্য ও তার বন্ধুরা সবাই মিলে ক্যাফেতে বসে আছে, ওরা অত ঝামেলার মধ্যে নেই কে বাবা যাবে পাড়াপাড়ি ঠেলাঠেলি করে টাকা জমা দিয়ে রেজিট্রেশন করতে। ওরা সবাই মানে জ্ঞানী, হয়রান আলী, ইমন, তনু, সাদি সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার সবাই লেট ফি দিয়ে রেজিট্রেশন করবে, এই হল ওদের ছুটে চলা জীবনের অংশ। এবার ওরা ২য় বর্ষের ২য় সেশন এ ভর্তি হবে। যা হোক ওরা সবাই বসে তুমুল আড্ডা জমিয়ে ফেলেছে ক্যাফের মধ্যে। সাধারনত ওরা ক্যাফেতে খুব একটা আসে না আজ এসেছে শখ করে মানে ওদের শখ হয়েছে ক্যাফেতে বসে চা বিড়ি খাবে আর তাস খেলবে। সূর্য সেই কখন থেকে যেন কার সাথে ফোনে পুটুর পুটুর করে যাচ্ছে। জ্ঞানী চেচিয়ে বলল বাবা ওকে বাসে করে আসতে দে তারপর না হয় কথা বলিস। সূর্য হেসে বলল মামা তিথির সাথে কথা না বলে যে থাকতে পারছিনা । যা হোক সূর্য তিথির সাথে কথা বলে আসলে সবাই মিলে তাস নিয়ে বসে পড়ল। সুমন ভাই মানে ক্যাফের ম্যানেজার বলল ভাই তাইলে আজ সব বিল আপনাদের সূর্য হেসে বলল ঠিক আছে । অবাক হবার কিছু নেই যেদিন সূর্য ও তার বন্ধুরা দল বেধে আসত সেদিন আর কেউ কোন সুযোগ পেত না । সূর্য তাস খেলার ফাকে ফাকে বলে যাচ্ছে আজ কিন্তু তিথি আসছে আর তিথির সাথে করা পরিকল্পনা গুলো। সাদি এসব কথা শুনতে শুনতে বলে উঠল বুঝেছি বাবা আজ বিকালে হাওয়া হবা ঠিক আছে তা এত বলার কি আছে । এই শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল । খেলার মাঝে জ্ঞানী তার স্বভাব মত নানা থিওরি দিয়ে যাচ্ছে এবং দারুন সব ব্যাখ্যা ও দিচ্ছে তা শুনলে মরা মানুষ ও হাসবে। স্থির সময়ে সম্পর্কের গভীরতা আলোর ব্যস্তানুপাতিক এই থিওরি দিয়ে জ্ঞানী নিজেকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায় আর এর ব্যাখ্যা দিয়ে সূর্য প্রায় নোবেল পাওয়ার মত কাজ করে ফেলেছিল। সাদি আর সূর্য এক দলে আর জ্ঞানী আর হয়রান অন্য দলে একগাদা বন্ধু বান্ধব বসে আছে ওদের পাশে তারা মন দিয়ে দেখছে কে কিভাবে চুরি করে চলেছে খেলার মাঝে । যা হোক তুমুল আক্রমন-প্রতিআক্রমনের মধ্য দিয়ে খেলা এগিয়ে চলেছে সূর্য ও সাদি লাল সেট খাবার জন্য প্রায় তৈরি হয়ে বসে আছে। এর মাঝে তিথির ফোন, সাদি চিৎকার করে বলে উঠল একটা গাড়ল কে নিয়ে বসে আছি খানিক খানিক পর কেবল হ্যালো হ্যালো ......... যা হোক সূর্য আস্তে আস্তে বলল দোস্ত আজ অনেকদিন পর তিথি আসবে ওকে বাস স্টপেজে যেয়ে নিয়ে আসতে হবে। যা হোক বেলা ১১ টার দিকে ওরা ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে চা বিড়ি পানীয় খেতে লাগল। এদিকে ৩ ঘন্টা হাওয়া হয়ে গেছে ওদের কোন খেয়াল নেই। ওরা আবার খেলায় ফিরে আসল। ও বলে নেওয়া দরকার তা হল সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের আড্ডার প্রধান জায়গা হচ্ছে ক্যাফে ।

কিন্তু আজ বিধিবাম আজ তো সূর্যের দখলে পুরো ক্যাফে। সমাজ বিজ্ঞানের এক ছেলে বয়সে সূর্যদের সিনিয়র হবে সে এসে সাদিকে বলে গেছে ৫ মিনিটে ক্যাফে খালি করতে। সূর্য আসলে সাদি বলল দোস্ত এক সোশ্যাল এসে ৫ মিনিট দিয়ে গেছে কি করবি? সূর্য বলল আসতে দে দেখি কি রকম মাল। এর পর শিপু মানে সোশ্যাল এসে বলতে শুরু করল আরকি দুনিয়ায় জায়গা নেই? এখানেই তাস খেলতে হবে ? সব শালারা বজ্জাতের বাচ্চা তা না হলে কেউ ক্যাম্পাসে তাস খেলে নাকি? এসব শুনে সূর্য বলল ভাইয়া তা আপনি কি করতে এসেছেন ক্যাম্পাসে ললিপপ খেতে না লুডু খেলতে? এর মাঝে সূর্য আর শিপুর হাত একে অপরকে স্পর্শ করল। জ্ঞানী ওদের থামাতে ব্যস্ত হয়ে গেল, ওদের থামানোর পর শিপু চিৎকার করে বলল দাড়া আমি আসতেছি বলে ছুটে চলে গেল। এই ঘটনা দেখছিল হামজা ভাই আর লিলি ভাই। ওরা সূর্যকে ডেকে বলল কিরে তেজ কমে গেছে নাকি ছেড়ে দিলি যে? সূর্য বলল ভাই দেখছি কি করা যায়। এর পর শিপু প্রায় ওদের চতুর্থ বর্ষের সবাইকে নিয়ে হাজির হয়ে নায়কের মত বুকের জামা ছিড়ে বলল আয় কেউ আছিস নাকি বাপের বেটা। বলেছে আর কই যাই সূর্য আর সাদি ধর বলে লাফ দিয়ে পড়ল শিপুর গায়ের উপর পড়েই কিল ঘুশি মারতে শুরু করল । এদিকে জ্ঞানী ফোনে ঘটনা জায়গা মত পৌঁছে দিয়েছে এক মিনিটের মধ্যে জনা পঞ্চাশ বন্ধু হাজির সবাই মিলে সোশ্যাল গুলোকে ধোলাই করে তাড়িয়ে দিল। এদিকে সারা ক্যাম্পাসে ১৪৪ ধারার মত থমথমে অবস্থা। যে ক্যাপাসে পিপড়া মারলে তার হিসাব দেওয়া লাগে সেখানে দিনে দুপুরে জুনিয়ররা মিলে সিনিয়রদের পিটাইছে তাও আবার তাস খেলা নিয়ে কি ভয়াবহ অবস্থা। যা হোক এই ঝামেলার মাঝে তিথির ফোন আর মেসেজে সূর্যের ফোন ক্লান্ত হয়ে উঠেছে। সূর্য ছুটতে বলে চলল থিতি সরি আজ চলে আস আমি মারামারিতে ব্যস্ত পরে কথা হবে। অথচ ওই দিন ছিল তিথির জন্য বিশেষ দিন, অন্তত তিথি ভেবেছিল আজ সূর্য লাল গোলাপ নিয়ে মুখে এক গাল হাসি নিয়ে বলবে এত দেরি যে বাসে কষ্ট হয়নি তো। যা হোক তিথি খুব মন খারাপ করে ফোন অফ করে দিল। সূর্য ভাবল কপালই খারাপ তা না হলে সারাদিন বসে যার জন্য অপেক্ষা তাকেই আনতে যাবার আগে এই ব্যাপার। এদিকে সূর্য ও তার বন্ধুরা মারামারিতে ব্যস্ত আর ওদের স্যাররা ব্যস্ত ওদের নিয়ে। সূর্যের ফোনে একটা ফোন এল ওপাশ থেকে ভারী গলা সূর্য এখনই হেড স্যারের রুমে আস। সূর্য, জ্ঞানী , হয়রান মিলে চলে এল স্যারের রুমে । হেড স্যার প্রচন্ড ধমকে বলল কি ব্যাপার আমাদের কি কোন মান সন্মান নেই যেখানে সেখানে মার খাচ্ছ কেন? সূর্য ইনিয়ে বিনিয়ে কি যেন বলতে যাচ্ছিল কিন্তু এক ম্যাডাম ওকে থামিয়ে বলল মারামারি করেছো কিন্তু গেঞ্জি ঠিক আছে কিভাবে ? সূর্য এবার নন স্টপ বলে চলল ম্যাডাম আমরা মার খাইনি মার দিছি , আমরা দিছি আমরা মার খাইনি। ওদের এই অবস্থা দেখে সিধু স্যার বলল এই যে স্যার দেখেন ছেলেরা কি করে এসেছে এখন কিভাবে ওদের বাঁচাবেন সেটা আপনার ব্যাপার।

এই কথা শুনে সূর্য যা বোঝার বুঝে গেল । ও ব্যস্ত হয়ে পড়ল তিথির খোজে । বিকালে সারাটা সময় ছাত্রী হলের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিল যদি তিথি বের হয়। তিথি ৫ মিনিটের জন্য বাইরে এসেছে আর যাবে কই সূর্য ঠাস করে সামনে গিয়ে বলল এই যে ঘাস ফুল তুমি আমারে ধন্য কর হে প্রিয়দর্শীনি। তিথি হেসে বলল থাক আর রঙ করা লাগবে না চল চা খাব। সূর্য হাসতে হাসতে বলল তা কই ক্যাফে না বাইরে? তিথি বলে যেখানে তাস খেলা শিখাবা সেখানে। এদিকে জ্ঞানী সাদিকে নিয়ে অন্য এক দোকানে বসে বলে চলেছে ও পারেও কিভাবে এত প্রেশার নিয়ে হাসিমুখে তিথিকে সংগ দিয়ে চলেছে। তিথির সাথে সুর্যের কোন প্রেম না তবে প্রেমের চেয়ে অনেক বেশী মানে সূর্য তিথির বিপদের বন্ধু। কেবল তিথির জন্য ওর দিন রাত নেই। সূর্যের কথা হল তিথির এখন একজন বন্ধু দরকার আর ওকে হাসিতে রাখার জন্য ও সব কিছু করতে পারে।

যা হোক এর পর যথারীতি সূর্যদের কানে নানা কথা আসতে লাগল ওরা সবাই নাকি বহিষ্কার হতে যাচ্ছে, ওদের বিরুদ্ধে কেস করা হচ্ছে কত কি? যা হোক এরপর ক্যাম্পাসে ওদের চলাচল কমে গেল। কখন কি হয় সেই জন্য আগাম সতর্কতা। এদিকে হলে চলছে নানা মিটিং কিভাবে জুনিয়র সিনিয়র মারে। এর মাঝে এক জন বলল রাম ভোদাই সিনিয়র হলে তো মার খাবেই । যা হোক সিনিয়রা ওদের রাজি করিয়ে রাতের অন্ধকারে নিয়ে গেল মাফ চাওয়াতে । সূর্য জ্ঞানী সহ জনা কুড়ি গেল শিপুর কাছে মাফ চাইতে । শিপু ওদের দেখে ক্ষেপে গেল পরে সবাই ওর প্রায় পায়ে ধরে মাফ চাওয়ার অবস্থা এদিকে সূর্য আর হয়রান আলী হেসে উঠল তাতে শিপু ক্ষপে গিয়ে বলল তোদের সবার বহিষ্কার করাবো দূর হ শয়তানের বাচ্চারা। সূর্য ও জ্ঞানী বলল তোরে যেখানে পাব সেখানে মারব দেখি কি করিস।

এর পর দিন ক্যাম্পাসে গিয়ে সুর্য সবার প্রথমে যে জিনিস্টা পেল তা হল একটা নোটিশ আর তা হল ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর এর বিলি করা। নোটিশের ভাষা “ সূর্য, জ্ঞানী, সাদি, হয়রান, লিলি, ও অজ্ঞাত নামা কিছু ছেলে মিলে শিপুকে ৪০০ কিল ঘুসি দিয়ে আহত করেছে আর তাই উল্লেখিত ছেলেদের কে ৩ দিনের মধ্যে কারন দর্শাতে বলা হল”
সূর্য জ্ঞানীকে নিয়ে বসে গেল বিড়ি টানতে এদিকে লিলি ভাই ছুটতে ছুটতে এসে বলল তোরা যা পারিস কর আমি একবার বহিষ্কার হওয়া মানুষ এবার আর পারব না। সূর্য প্রায় রেগে বলল আরে যান আপনি কিছু হবে না। সূর্য কষে একটা বিড়ি টেনে বলল চল যাই ঘুরে আসি । জ্ঞানী বুঝে গেছে এবার হবে। দুজনে মিলে ছাত্র-বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে যেয়ে বলল স্যার আপনারা যখন কারো নামে অভিযোগ নেন তখন কি কিছু দেখার প্রয়োজন মনে করেন না? স্যার অবাক চোখে তাকিয়ে বলল কেন কি হয়েছে? সূর্য খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল স্যার ৪০০ কিল ঘুসি দিলে কি কেউ বাঁচে? স্যার বলল এটা কি কথা হাতাহাতির ঘটনার জায়গায় কিভাবে ৪০০ ঘুসি হয়? স্যার বলল এত মার দিলে তো মানুষের মুখ তুবড়ে যায়। স্যার চেচিয়ে বলল নিমাই নিমাই এই স্টেট্মেন্ট কি দিয়েছে তাকে এখনই ডেকে আনো। সূর্য বলল স্যার আপনি যা বলেন সেটা আমরা করি, আপনি আমাদের মা –বাপ এবার যেতে দেন আর হবে না। স্যার বলল যাও তবে ৪০০ কিল যেন আর না হয়।

এর পর শিপু আসলে তাকে মিথ্যা স্টেটমেণ্ট দেবার জন্য দায়ী করে উল্টো কারন দর্শাতে বলা হল আর তা না হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কত কি বলে হাইকোর্ট দেখিয়ে দিল স্যার। সমাজ ডিসিপ্লিনের এক স্যার ফোন করে ছাত্র বিষয়ক স্যার কে বলল স্যার বিচার এর কি হল? স্যার সাফ জানিয়ে দিল হাতাহাতির আবার বিচার হয় নাকি। এটা গল্লামারি কিন্টারগার্ড়েন না জব্বর সাহেব এটা বিশ্ববিদ্যালয়।

সূর্য আর জ্ঞানী হাসতে হাসতে বের হল আর দুজনে মিলে ক্যাফেতে গিয়ে আয়েশ করে চা খেতে লাগল হঠাত ওরা আবিষ্কার করল টেবিলে কালো মার্কার দিয়ে বড় করে লেখা তাস খেলা ও তুমুল কান্ড প্রযত্নে .....................আমি জানি তুমি দুর্দান্ত তাই বলে এতটা ............মিস ইউ ডারলিং।। জ্ঞানী বলল মাম্মা ব্যাপারটা কি ? সূর্য বলল আজ কোনদিক দিয়ে উঠলাম পূর্ব না পশ্চিম............হ্যালো তিথি হ্যালো তিথি হ্যালো তুই কি একটা ...আমি আসছি দাড়া.........তোর কিচ্ছু হবেনা .........আমি আসি কাকা বলে সূর্য চলে গেল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.