![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি আমি অন্ধ চোখে জগতটাকে
রাত দুইটা বেজে পনের মিনিট রুমে পিনপতন নীরবতা জ্ঞানী মুখ বুজে হাজার পাতার এক বিকট দর্শন বই নিয়ে বসে আছে। রুমে কোন ছিটকিনি নেই বলে রাতে যে কোন সময় যে ইচ্ছা আসতে পারে। এ রুম যদি সারাদিন খোলাও থাকে তারপরও কোন চোরের সাহস হবেনা একটা দেশলাইয়ের কাঠি নিয়ে যাওয়ার। অনেক্ষন ছাদে বসে থাকার পর সূর্য রুমের দিকে রওনা হল, ওর গায়ে একটা অভারঅল চোখে কালো রোদ চশমা আর পিঠে একটা বইয়ের ব্যাগ। রাতে রোদ চশমা পরে ঘুরে বেড়ানো ওর একটা স্বভাব এটা মোটামুটি সবাই জানে। জীবনে যত টাকার চশমা কিনেছে সে টাকা দিয়ে অনায়াসে একটা ফ্যাক্টরি দেওয়া যেত।
রুমে ফিরেই কোন দিক না তাকিয়ে সোজা বারান্দায় চলে এল এসে দেখল কয়লা গুইগুই করে কান্নাকাটি করছে। সূর্য অনেক চেষ্টায় ও কোন কথা বের করতে না পেরে ওর পাশে দাড়িয়ে থাকল। কিছুক্ষণ পর জ্ঞানী বলল রোমান্স ইমোশন যোগ বিয়োগের কান্না। মানুষ হচ্ছে সব থেকে বোকা ইমোশোনাল প্রানী যারা কিছু না বুঝেই হাসে আবার কিছু না হলেও কেঁদে অস্থির হয়। অদ্ভুত মানুষ জ্ঞানী, এ কথা বলেই আবার নিজের কাজে মন দিল। সূর্য যা বোঝার বুঝে নিয়ে কয়লার মাথায় হাত রেখে বলল দেখ " পুরুষের মন বলে কিছু থাকতে নেই, সেখানে কান্না তো মহাপাপ, একান্তই কাদতেঁ ইচ্ছা হলে হাউমাউ করে কিছুক্ষণ কেদে জগতে মন দে " এ কথা শেষ করেই কয়লাকে ছাদে নিয়ে আসল। কয়লাকে বলল আমি কিছু জানতে চাই না, শুনতে চাই না আমি শুধু বলব তুই কিছুটা সময় চাদের দিকে চেয়ে থাক ভাল লাগবে। সূর্য ছাদের এক প্রান্তে বসে বসে ব্যাগ থেকে নোট বের করে লিখতে বসল।
প্রায় আধাঘন্টা পর কয়লা সূর্য কে ডেকে বলল আমার খুব কাদতে ইচ্ছা করছে, সূর্য বলল এখনো বসে আছিস কেন? হাউমাউ করে কেঁদে ফেল কোন লজ্জা নেই কেঁদে ফেল। সারাদিন যে চাপা কষ্ট মনের মধ্যে নিয়ে বসেছিল তা এবার কান্নায় তা দূর হবে এই ভেবে সূর্য মনে মনে শান্তি পেল। সূর্যের অনেক অভিযানের সাথী কয়লা তাই ওর বিপদে আপদে সূর্য সব সময় পাশে এসে দাড়ায়। সূর্য বলল দেখ আকাশের প্রতিটি তারার একটা নাম আছে আর যাদের নাম নেই তারা অপেক্ষা করে কেউ একজন তাদের একটা নাম দিবে এবং মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকে দেখবে। কয়লা কান্নার দমক বন্ধ করে বলল তুই কি একটা পাগল নিকষকালো আকাশে তারা কই আর তুই তারা দেখছিসই বা কি করে। সূর্য হেসে বলল চোখ বন্ধ করে মনের চোখ দিয়ে আকাশের দিকে তাকালেই তারা দেখতে পাবি। বাইরের দুচোখ দিয়ে সব দেখা যায় না ওর সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু মনের চোখের কোন সীমাবদ্ধতা নেই, যেমন নেই আকাশের, মনকে আকাশের মত বড় কর দেখবি সব জ্বালা যন্ত্রনা দূর হয়ে গেছে। কয়লা সূর্য কে বলল তা তোর তারা কোনটা সূর্য বলল ওই যে এন্ড্রোমিডার পাশ দিয়ে হালকা বায়ে সরে কালপুরুষের পিছনে যে তারা ওটাই আমার ওর নাম সপ্তর্ষী, আমি খুব ছোট বেলা থেকেই ওকে চিনি, গল্প করি কথা বলি।
কয়লা অবাক হয়ে বলল তাহলে সপ্তর্ষী কোণ মেয়ের নাম না? সূর্য বলল নারে এটা কোন মেয়ের নাম না যদি এই নামে কোন মেয়ে থেকেও থাকে তাহলে তার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলা ভীষন অন্যায় হবে। কয়লা বলল মানুষ অনেক খারাপ কেবল কষ্ট দেয় আজ সারাদিন কেউ জানতে চাইনি কেন আমার মন খারাপ কেবল তুই ছাড়া। সূর্য বলল আমিও জানতে চাইনি, আমার জানার ও কোন দরকার নেই। কয়লা আরো অবাক হয়ে বলল তাহলে আমাকে ছাদে নিয়ে এলি কেন? সূর্য বলল দেখ তুই যদি এমন কাউকে ভালবাসিস তাহলে তাহলে কেবল সুখ না কষ্ট কেও মেনে নিতে হবে জীবন অনেক জটিল আমরা কেবল সুখের পিছনে ছুটছি কিন্তু ভুলে যাচ্ছি দুঃখ ও আছে যা আসবেই। সূর্যের কথাগুলো কয়লা মন দিয়ে শুনছে ও এখন অনেকটা স্বাভাবিক। সূর্য বলে চলল জীবন যেখানে দুঃখ লিখেছে সেখানে সুখ ও আছে সেটা খুজে নিতে হয় মানুষের দোষ ত্রুটিকে ক্ষমা করতে শিখতে হয়, কথা কম বলতে জানতে হয়, মানুষের অন্তরকে স্পর্শ করে দেখতে হয় বাইরে নয়। কয়লা বলল মানুষের মন কেন খারাপ হয় মনের উপর কি নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত ছিল না মানুষের? সূর্য ওর দিকে তাকিয়ে বলল সব কিছুতে নিয়ন্ত্রন থাকতে নেই বা সব সময় নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দিতে নেই। মনের উপর নিয়ন্ত্রন দিয়ে দিলে আজ জগতে ভালবাসা, আদর, মমতা বা স্নেহ বলে কিছুই থাকত না রে। হ্যা অবচেতন মন নিজেই সময়ের প্রয়োজনে সময়ের সাথে চেতন মনের উপর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেয়। এই যেমন তুই যখন কাউকে মন থেকে ভালবাসতে যাবি তখন মনের উপর কোন নিয়ন্ত্রন থাকবেনা, শত চেষ্টায়ও নিয়ন্ত্রণ আসবেনা আর সেটা আসাও ঠিক না। আবার যখন তুই কারো সাথে ভালবাসায় থাকবি, কারো হাতে হাত রাখব্ বা কারো সাথে একসাথে চলবি তখন দেখবি তার অগোচরেও তুই তার বিশ্বাস নষ্ট করতে পারবিনা। এটাই হল মনের অনিয়ন্ত্রন ও নিয়ন্ত্রণ। কয়লা সূর্যের কথা শুনে বুঝল গত কদিনে সে অনেকগুলো ভুল করেছে, সে সূর্যকে কিছু বলতে যাচ্ছিল সূর্য ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল আমি আগেই বলেছি আমি কিছু জানতে বা শুনতে চাই না, আমি খুশি তুই বুঝে গেছিস এখন তোর কি করা উচিত। মুহূর্তের নীরবতা ভেঙ্গে কয়লা বলল আমি কি এখন তাহসিনাকে একটা ফোন দিব? সূর্য হেসে বলল এতক্ষনে বুঝেছিস আচ্ছা তুই কথা বলে নিচে আয় আমি গেলাম।
কয়লা তাহসিনার সাথে কথা বলে চলেছে সূর্য খুশী মনে চেয়ে দেখল বন্ধুর মুখের হাসি। রাতের প্রায় শেষ প্রহর চলছে দুই একটা পাখি জানান দিচ্ছে নতুন একটা দিন আসত চলেছে। সূর্য ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে হালকা একটা হাসি দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল তুমি সব থেকে রহস্যময়
আকাশের বুকে এক সূর্যের আগমনে অন্য সূর্য প্রস্থান করে চলে গেল গন্তব্যহীন পথের দিকে।
©somewhere in net ltd.