![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইরফান এইচ সায়েম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে বাৎসরিক ফি ৬গুণ বৃদ্ধি, রুমে গেস্ট রাখতে চাইলে হল প্রশাসনকে ১শ’ টাকা ফি দেয়াসহ ব্যাপক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গত ৯ নভেম্বর হল প্রশাসন স্বাক্ষরিত হলের নোটিশ বোর্ডে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, আগামী এক বছরের জন্য ওই হলের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বাৎসরিক ফি হিসেবে পরিশোধ করতে হবে ৩হাজার ৬শ’ টাকা। যা আগামী মাসের ১০তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে আর ওই সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে হলের সিট ‘অটো’ বাতিল হয়ে যাবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আবাসিক হলগুলোতে এই ফির পরিমাণ ৫শ’ থেকে ৬শ’র মধ্যে বলে জানা গেছে। হলের শিক্ষার্থীরা জানান, অন্যান্য হলের চেয়ে ৬গুণ বেশি ফি দেয়া তাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের দেয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আন্দোলনে যাবেন তারা।
নিয়ম পালনে হল প্রশাসনের কড়াকড়ির মধ্যে রয়েছে-গভীর রাতে বিনা কারণে হলের প্রতিটি রুমে রুমে আবাসিক শিক্ষক দিয়ে তল্লাশি, শিক্ষার্থীরা নিজ রুমে গেস্ট রাখতে চাইলে হল প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে ১শ’ টাকা জমা দিতে হবে, হলের ক্যান্টিনে দামের তুলনায় খাবারের মান কম, তুচ্ছ বিষয়ে শিক্ষার্থী হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা প্রমুখ।
জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল কর্তৃপক্ষ মিলে এই ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর শিক্ষার্থীরা ভর্তির সময় ৩হাজার ৬শ’ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছে এবং প্রতি বছর তা দিতে হবে। এ ধরণের ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
হলের রুমে রুমে তল্লাশির বিষয়ে তিনি বলেন, হলে অনেক ছাত্র মাদক গ্রহণ করেন, অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। তাই হলের ছাত্রদেরই অভিযোগের ভিত্তিতে এ আবাসিক শিক্ষকরা তল্লাশি করেন। হলে গেস্ট রাখলে অনুমতি ও ফি দিতে হয় কারণ বহিরাগতরা হলে রাত কাটানোর নিয়ম নেই।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল হিসেবে সর্বশেষ হল বিজয় একাত্তর। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০তম হল। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় এ হলের। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের মাঝখানে ১১তলা বিশিষ্ট এ হলের দক্ষিণে ও উত্তরে দুটি ভবন রয়েছে। এতে বর্তমানে প্রায় ১৩শ’ শিক্ষার্থীর অবস্থান করছে।
অতিরিক্ত ফি আদায় প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনের যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি প্রগ্রতিশীল ছাত্রসংগঠন। গত বুধবার ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন এবং ছাত্র ফ্রন্ট বর্ধিত এই ফি প্রত্যাহারের দাবিতে হলের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারিং করেছে। এ ফি প্রত্যাহার না হলে আগামীতে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মাসুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রশাসন স্বৈরতান্ত্রিক রূপে আবিভূর্ত হয়েছে। হলে হলে কার্যকর প্রশাসনের বদলে দমনমূলক প্রশাসন দেখা যাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা এক ধরণের চাপের মধ্যে রয়েছে।
বিজয় একাত্তর হলে এ চিত্রটা বেশি দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গভীর রাতে হলের রুমে রুমে গিয়ে ছাত্রদের তল্লাশি, অন্যান্য হলের চেয়ে অনেক গুণ বেশি বাৎসরিক ফি নিধারর্ণ করায় বুঝা যায় কার্যকর প্রশাসনের বদলে দমনমূলক প্রশাসনের চিত্র। বিষয়টি নিয়ে আগামীতে কর্মসূচি তারা কর্মসূচিতে যাবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চলতি বছরের ১৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে সব সম্প্রদায়ের ছাত্রদের বসবাসের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এটি কার্যকর হবে। তবে হলের শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যকোন হলে এই নিয়মটি প্রচলিত নেই। তাছাড়া, মুসলিম ছাড়া অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য জগন্নাথ হল রয়েছে।
হলে সহকারী আবাসিক শিক্ষক রয়েছে ১৬জন। গভীর রাতে বিনা কারণে হলের প্রতিটি রুমে রুমে তারা তল্লাশি করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গভীর রাতে এ ধরণের তল্লাশি অপরাধীদের ধরতেই পুলিশরাই করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে এ ধরণের তল্লাশি বেমানান বলে তারা মনে করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রুমে গেস্ট রাখতে চাইলে হল প্রশাসন থেকে অনুমতি নেয়া যায়, তবে ১শ’ টাকা দেয়াটা তারা হল প্রশাসনকে ‘চাঁদা’ দেয়া হবে বলে মনে করেন। এছাড়া, তুচ্ছ কারণে হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয় শিক্ষার্থীদের। হলের প্রায় ১৩শ’ শিক্ষার্থীর জন্য ক্যান্টিন রয়েছে মাত্র একটি। সেখানে দামের তুলনায় খাবারের মান কম বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
লিংক-http://www.alokitobangladesh.com/online/news/2015/11/12/15830#sthash.vOdetfxU.sPsmFwBy.dpuf
©somewhere in net ltd.