নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নৈঃশব্দতা...

নভো নীল দীপ্তি

নভো নীল দীপ্তি › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক ফালি রোদের প্রতীক্ষায়....

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২২






বাসটা ছাড়তেই মৃদু ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা'টা মুখে এসে লাগলো যাহরার।শীতটা সম্ভবত এসেই গেলো।চির গরমের এই ঢাকা শহরেরর লোকাল বাসে এই হালকা শীতের অনিভূতি পাওয়াটা বেশ বিরল।তাই একটু ভালো লাগা যেনো না চাইতেও মনটাকে ঘিরে ধরলো।।

চাকরির দরখাস্তটা আজকেই জমা দেয়ার শেষ দিন।কিন্তু বাসায় এটাস্টেট করা কোন ছবিই নেই।তাই, মতিঝিলের এক অফিসে উচ্চ পদস্থ প্রথম শ্রেণীর কর্মকতা আত্মীয়ের কাছে যাচ্ছে সে।।

জীবনকে কি আজ হাতড়ে ফেরা গোলক ধাধার সমাধানের পিছনে ছুটন্ত কোন অনুসঙ্গ বলা যেতে পারে....???তবে,জীবনটা আজ তাই!!



রঙ্গিন প্লাস্টিকে মোড়া স্বপ্নগুলো এই হালকা নীলচে আভার বিষন্নতায় বারবার ম্লান হয়ে ধরা দিচ্ছে ইফতির চোখে!!

কিন্তু,ঐ যে জীবনের সব পলাতক পংক্তিমালাগুলোকে ধরার অদম্য ইচ্ছেটা অকারণ বায়না হয়ে সামনে এসে দাড়ায়।।

জীবন কি তবে বুক পকেটের ফাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে হঠাতই আবিষ্কার করা বহুল আকাঙ্খিত সেই আধুলি..???

সাধারণ দিনের চেয়ে বাসে আজকে ভিড়টা একটু বেশিই। সম্ভবত আজকে বিশেষ কোন পরীক্ষা -টরীক্ষা থাকতে পারে।।

তাই বাসটা এসে দাড়াতেই বাকি সবার মতো হুমড়ি খেয়ে বাসটায় ওঠে পরলো ইফতি। ইফতি এই বারই এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় এসেছে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করার জন্য।বহুকষ্টে কোচিংয়ে ভর্তির টাকাটা জোগাড় করেছে কিন্তু বাকি মাসটা আর মেসের ভাড়াটা কিভাবে জোগাড় করবে সে তা জানে না।তাই আজ ধানমন্ডিতে কোন এক বড়লোক আত্মীয়ের বাসার খোজে বেরিয়েছে।



বহুকষ্টে বাসটাতে উঠেই সামনে বসা মধ্যবয়স্ক লোকটার ছেড়ে দেয়া সিটটায় বসে বেশ স্বস্তি অনুভব করছে হুমায়রা। বহুদিন পর আকাশটা দেখার চেষ্টা করলো।হালকা কুয়াশাটায় খুব কাছের জিনিসটাও ঝাপসা হয়ে ধরা দিচ্ছে চোখটায়।হাতের টিফিন ক্যারিয়ারটা পায়ে কাছে রেখে সোজা হয়ে বসলো।।

গত কয়েকদিনের সময়টা দেখা হয় নি হুমায়রার।গত সপ্তাহে হঠাতই মাঝ রাতে বাবা স্টোক করে বসে। তার পর থেকে হসপিটালের দৌড়াদৌড়িতে সময়টা যেনো আটকে গেছে দেয়ালের ঘড়িতে।

ছোটবোনটাকে বাবার কাছে রেখে রাতে ফিরেছিল বাসায়।আর এই ভোর সকালে রান্না-বান্না নিয়ে আবারো রওনা দিয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্য।।

জীবন সম্ভবত এখানটায় সেই পরম আশ্রয়ের আরাধ্য সেই ভালবাসার ছায়াটা!! প্রিয় মুখের জ্যমিতিতে যে কি না ভাসিয়ে নিয়ে যায় জীবনের অতলান্ত স্মৃতির মেলায়।।

বাবার নামের সেই পরম আশ্রয়টুকু হারানোর অতটুকু চিন্তাও বেদনার বর্ণহীনতায় ছেয়ে দিচ্ছে মনের গহীন বনটাকে।।



জীবন এখানটায় প্রতিটি দিন প্রতীক্ষার রূপ বদলানো গগণ আর ক্লান্তিগুলো যেখানটায় ভস্ম সুখের নহর।।

পিছনের সারির প্রথম সিটটায় বসে আছে আল-আমিন।চকবাজারের হোলসেলের এক দোকানে গত দশ বছর ধরে কাজ করে সে। সকালে মেসের পাশের হোটেলটা থেকে চা-পরটা খেয়ে বাসের জন্য প্রায় আধা ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে বাসটায় উঠতে পেরেছে সে। পরিবারের ভার বহন করতে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে মাত্র ষোল বছর বয়সে এই শহরে পা দিয়েছিল আল-আমিন।।

আল-আমিনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ।মা-বা,পরিবারের সবাই ওখানেই থাকে।। জীবন এখানটায় প্রতিটি দিন প্রতীক্ষার রূপ বদলানো গগণ আর ক্লান্তিগুলো যেখানটায় ভস্ম সুখের নহর।।



আল আমিনের পাশেই দাড়িয়ে আছে রাকিব।রাকিব ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এলাকার এক বড়ভাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বড় নেতা।ইদানীং তার পেছনেই সারাদিন ঘুরঘুর করে। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই আসন্ন হল কমিটিতে একটা পদ পেয়েই যাবে।।
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকর জীবনের সব অচিন গলিগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকারে পথ চলতে চলতে জীবনের ভিন্ন মানে খুজে নিয়েছে আল-আমিন।।

সুখ-সকালের ঘাসের আবেশে অচিন সেই উড়ন্ত প্রজাপতি নেশায় ছুটন্ত এই মানুষগুলো কি জানি কখনো জীবনের মানেটা খুজে পায় কি না..???



অধরা সব গল্পগুলো সাথে নিয়ে সহস্র স্বপ্নের সূচের আঘাতগুলো সাথে নিয়ে নিত্য চলমান সময়ের কাঁটা'টাতে সম্মুখে এই অবারিত পথচলা..এরই নামই কি জীবন..??

সময়মত চাকরিতে পৌছতে বেশ বেগই পেতে হয় আকবরকে। মোটামোটি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্নাস-মাস্টার্স শেষ করার পরও চাকরি কোন গতিই হচ্ছিলো না তার। গেল মাসে একটা মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরিয়ানের চাকরিটা পেয়ে গেল সে। যদিও চাকরিটি তার মোটেও পছন্দ হয় নি,তবুও "নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো" সূত্রানুসারে চাকরিটা শুরু করেই দিলো।।
ফিকে জীবনে ভুলস্রোতগুলো গুণে গুণে যে আগাম চলার সুরগুলো যে সে নিজেই কেটে যাচ্ছে, ইদানীং সে নিজেই তা ভালো বুঝতে পারে।।

জীবন সম্ভবত এখানটায় মেঘলা কালো ক্ষণগুলোকে মুক্ত আকাশের এলেবেলে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে মেঘের ফাকে লুকিয়ে থাকা সূর্যটাকে খুজে নেয়া।।

৭.

আবিরের সাথে হাফসার দেখা হয় না বহুদিন।এই অচেনা শহরটার সেই প্রথম দিকের দিনগুলো যখন সে একদমই একা তখনই কোথা থেকে যেন মানুষটা এসে তার পাশে এসে দাড়ালো। এক দুঃখিনী বিকেলে ঝাপসা আলোয় দেখা হতে শুরু করে ধীরে ধীরো সন্ধ্য বধুর মধুর তিথি!!কি ছিল না তাদের জীবনে।।

হাফসার সাথে আবিরের শেষ কথা হয় গত মাসের শেষ শুক্রবারের সোনালী ব্যাংকের পরীক্ষার দিন। প্রশ্নফাঁসের এই রীতি মত জোয়ারে কিছু স্বপ্নের নিঃশ্বাসের গতিও যে ফুরিয়ে যায়,এই জগত যদি তার ভার বহন করতে সক্ষম হত...??

আবির কেনো জানি তার সেই বেদনাহত ককর্শ হাতগুলো দিয়ে হাফসার হাতটা ধরার আর সাহস খুজে পায় না।।

একজন না হয় ফলাফলের সমাপ্তির রেশ টেনে হাত গুটিয়ে বসে যেতে পারে..কিন্তু বাকিজনের কি খবর..??
আরেকজন যে এখনও চির অসুখী পৃথিবীটাকে সুখী করে দিতে এখনও স্বপ্ন সাজিয়ে চলে অবারিত!!

জানলাটা পুরোপুরি মেলে দিয়ে জানালার ধারটা দিয়ে কুয়াশার ভিড়ে খেই হারানো শহরটাকে আরো মনযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো হাফসা।।

৮.

আশ-পাশের মানুষগুলো চোখগুলো পড়ার অদ্ভুত এক অভ্যাস আছে আহমাদের।এটাকে ঠিক অভ্যাস নাকি বদভ্যাস বলা যায়,সেটা সে জানে না।।

তার সেই চোখ পড়াশোনা শুরু হয় পাশের জন থেকেই।পাশে বসে থাকা মানুষটার কিছুক্ষণ অঙ্গাভঙ্গি দেখলেই সম্ভবত বোঝা যায় মানুষটি আজকে খুব খুশি,খুব চিন্তিত নাকি তার মতোই উন্নাসিক…??

প্রিয় নিঃসঙ্গতাকে অনুসঙ্গ করে জীবনের এই বেলাভূমিতে পথ চলতেই আনন্দ খুজে পায় আহমেদ।

নিরবতার তানে আকা জীবনের সুরগুলোকে আনমনে গলার সুরে সাজিয়ে গুণগুণিয়ে গাইতে ভালোবাসে সে।।
উন্নাসিক মনটাকে হাতের লাটায়ের সুতোয় বেধে মাঝ আকাশে উড়িয়ে দিয়ে এই শহরের আলো ছায়ার খেলাময় পথে পথ চলতে ভালোবাসে আহমেদ।।

৯.

ফ্রাইওভারটায় ওঠতেই উড়ন্ত বেগে ছুটন্ত শীতের সকালের প্রথম এক পশলা বাতাস এসে ভিজিয়ে দিয়ে গেলো সবার ঝিমিয়ে আসা চোখগুলোকে।।

এই শান্ত বাতাসটায় অনুনয় করে হলেও একটি অপরূপ ঘুম পেতে চায় তারা।। সহজাত চঞ্চলতাগুলো হারিয়ে অনন্তনীল সকালটার অংশ আজ তারা সবাই।।

দক্ষিণ গোলার্ধের পশ্চিম বাতাসে হারিয়ে যেতে যেতে জীবনের সঙ্গ দিয়ে যায় এরা সকলেই অবিরত।।
শিন শিনে শীতটা জেকে ধরেছে এদের সকলের অস্তিত্বগুলোকে।।

তাই একটু দেরীতে হলেও আকাশের এই কুয়াশাচ্ছন্নতা থেকে এরা প্রত্যেকেই মুক্তি চায়...ওরা সকলেই আজ
"এক ফালি রোদের প্রতীক্ষায়"!!



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: আল আমিন, রাকীব আবীর- হুমায়রা।
আমার ছোট দুই ভাইয়ের নাম আবীর আর রাকীব।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০৫

নভো নীল দীপ্তি বলেছেন: বাহহহ..মিলে গেলো!!

(দুঃখিত..উত্তর দিতে দেরী হয়ে গেলো..

২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪২

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: প্রতিটি লেখার সাথে ছবি গুলো একদম মানানসই ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩১

নভো নীল দীপ্তি বলেছেন: কৃতজ্ঞ ও ধন্যবাদ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.