নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নৈঃশব্দতা...

নভো নীল দীপ্তি

নভো নীল দীপ্তি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাইন্ড দ্য গ্যাপ...

২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৩৯





সকালের চা'টা আজকে বেশ দেরীতেই খেতে হল।।দিনের নাগাল পেতে চাইলে আগে অবশ্যই সকালের নাগাল পেতে হয়। না হলে দিনের শেষ তো হবে,কিন্তু আপনি দিনের শুরু'টাই ধরতে পারবেন না।।

চা'টা পাশে নিয়ে ফেসবুক'টা স্কল করতে লাগলাম..আজ যে চা'টা ঠান্ডা হবে, সে ব্যাপার'টা নিশ্চিত। কিন্তু তবুও গত কয়েকদিনের ব্যস্ত'তার পর এই অবসর'টা হাতছাড়া করতে মন চাইলো না!!



ফেসবুক মেমরিতে গত বছর এই দিনে ঘুরতে যাওয়ার ছবিগুলো দেখে বেশ ভালোই লাগলো.. সাথে একটু মন খারাপও হলো আজ গৃহবন্দি সময় কাটাতে হচ্ছে বলে।

নস্টালজিয়ায় ভুগতে ভুগতে নিচের 'গট ম্যারিড' খবর'টার ওপর চোখ'টা পরতেই মুর্হূতে আনন্দে মনটা ভরে গেলো..অস্ফুট স্বরে আনমনেই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, 'বাহহহ..'।।

ব্যক্তি জীবন থেকে সামাজিক জীবনের সব জায়গাতেই ফেবুর অযাচিত হস্তক্ষেপের পরও ফেসবুক'কে যে কারণে অত্যাবশ্যকীয় মনে হয় তা হল 'বন্ধুত্বের' ক্ষেত্রে।।

হয়তো স্কুল জীবনের সেই প্রথম বান্ধুবী যাকে কি না সময়ের স্রোতে কোথায় যেনো হারিয়ে ফেলেছিলাম..তাকে আবারো এই ফেসবুকেই খুজে পাওয়া যায়..ঠিক যেনো বাংলা সিনেমার মেলায় হারিয়ে যাওয়া কোন বন্ধুকে আবার খুঁজে পাওয়ার মতো!!

৩.

রায়হানের সাথে আমার দেখা চবি (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ঠিক 'কাটা পাহাড়ের' মোড়'টায়..সে বার রাস্তার জ্যামের কারণে আসতে বেশ দেরিই হয়ে গিয়েছিলো...তাই রাত ন'টার ট্রেনে ভার্সিটিতে এসে পৌছোলাম।

রিক্সার জন্য দাড়াতে দাড়াতে বিরক্ত হয়ে ঠিক যে মুহূর্তে হাটতে শুরু করবো ঠিক তখনই রায়হান সামনে এসে দাড়ালো।।

ছোটবেলার চেনা মুখগুলো সম্ভবত কখনো ভুলা যায় না..তাই অনেকদিন পর হলেও রায়হানকে চিনতে কয়েক মুহুর্তের বেশি সময় লাগলো না। রায়হান আমার ছোটবেলার বন্ধু.. আমরা একই স্কুলে পড়তাম।।
দু'জনই বেশ অবাক হলাম হঠাত এই অযাচিত দেখা-সাক্ষাতে।গত চার বছর ধরে আমরা দু'জনই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ছি অথচ আমরা কেউই তা জানি না ভেবে বেশ অবাক হয়েছিলাম।।

বলতে গেলে রায়হান আমার ছোটবেলার খেলার সাথীও..রায়হানের ছোট বোনের সাথে যখন আমি খেলতে যেতাম তখন রায়হানও মাঝে মাঝে আমাদের সাথে খেলতে বসতো।।

একটু বড় হবার পর আমাদের বাসায় আসতেই বেশ লজ্জাই পেতো..স্কুল মিস করলে পড়াগুলো জানার জন্য আমাদের বাসার বাহিরে দাড়িয়ে থেকে ভেতরে ওর ছোট বোনকে পাঠাতো পড়ার ডায়েরি'টা উদ্ধার করার জন্য!!



চা খেতে খেতে পুরোনো কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে আনমনে হেসে উঠলাম,নিজেই বুঝতে পারলাম না।।

কেনো জানি শুধু "কনগ্রেচুলেশন'স" দিয়েই খবর'টা থেকে চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে না।।

প্রিয় বন্ধুর এত বড় একটা খুশির খবরে তাকে জীবনের এই নতুন মোড়ে দাড়িয়ে সামনের এই কুসুমাস্তীর্ণ কিন্তু পিচ্ছিল পথটা নিয়ে কিছু না কিছু খুব বলতে ইচ্ছে করছে।।



প্রথম দিকে লন্ডনের মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতা বেশ ভালোই ছিল।বেশ মজা পেতাম মেট্রোরেলে চড়তে।বোকা বাঙালিদের আবার নতুন যা কিছু দেখে তার সবই ভালো লাগে..ব্যাপার'টা কিছু'টা ও রকমই আর কি!!

তো বিপত্তি ঘটলো কয়েকদিন পরেই।ট্রেনে এসে দাড়ানো থেকে ছাড়ার আগ পর্যন্ত মাইকে শুধু,"মাইন্ড দ্য গ্যাপ",মাইন্ড দ্য গ্যাপ" বলে এনাউ'স করতেই থাকে... করতেই থাকে!!

তো প্রথম দিকে পাত্তা দিতাম না..কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় বিরক্ত হয়ে পাশে বসা বিশিষ্ট ভদ্রলোক'কে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,"আচ্ছা,এদের সমস্যা কি..?? 'মাইন্ড দ্য গ্যাপ' 'মাইন্ড দ্য গ্যাপ' বলে চিল্লাচ্ছে কেনো..??"

ভদ্রলোক তার বত্রিশ পাটি দন্ত বিকশিত করিয়া হালকা রসিকতার স্বরে বললেন,"এই যে আপনার আর আমার মাঝখানে মধ্যবর্তী দূরন্ত তাহারা সেই বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করিতেছেন.."।।

ভদ্রলোকের এই অযাচিত রসিকতা বিরক্তির মাত্রা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলো।।



পরে অবশ্য এর কারণটা জেনেছিলাম।মেট্রোরেল আর প্লাটর্ফমের সামান্যতম দূরত্বাও মাঝে মাঝে দূর্ঘটনার কারণ হয়ে দাড়ায়।তাই সবসময় তারা সর্তক করতে থাকেন যাত্রীদের।।

কেনো জানি জীবনের সম্পর্কগুলোও কিছুটা সে রকম...সামান্য কিছু বেখেয়ালি আচরণ বা কথার পাকে পরে কত সুন্দর সব সম্পর্কগুলো যে শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায়।।

জোছনা মাখা সম্মোহনী আলোয় নতুন এই পদক্ষেপটা...যেখানে কাকজ্যোৎস্নায় ঠাসবুনুনি গল্পেরা পাখা মেলতে শুরু করে।।
টিনের চালের বৃষ্টিরাশিরা ঝুমঝুমিয়ে নতুন পদ্যের ছন্দ দিয়ে যায় অবারিত।।

ঠিক তখনই কিছু বেয়াড়া শব্দরাশি নতুন পথচলার সেই নিখুত শব্দজালের নকশী কাঁথার মাঠে কাটা হয়ে দাড়ায়।।



আচ্ছা,জীবনের এই সরু গলি পথে পথচলার মূলমন্ত্র'টাই বা কি..??

সেই যে চিলেকোঠা দুপুরের এক চিলতে আবদারগুলোকে বোঝার চেষ্টা করা...অথবা,একইসাথে হৃদ বারান্দায় বসে পাতা কাগুজে সংসার'টাকে ডান অলিন্দে জায়গা দেয়ার তীব্র ইচ্ছে'টা।

আস্থার জায়গাগুলোকে রঙ্গিন প্লাস্টিকে মুড়ে আবৃত্তিযোগ্য পদ্যের সৃষ্টির করা,যাতে সবর্দায় তা অনুশীলতার বিদ্যমান থাকে।।



জীবনের কালো মেঘে ঢাকা মুহূর্তগুলোকে ব্যবচ্ছেদ করলেই দেখা যায় সম্পর্কের শুরুতেই এই অনুশীলনহীনতাই জন্ম দেয় অজস্র বিষয়।।

অনেকেই মনে করে সম্পর্কে প্রথম বছর'টা হল যুগল জীবনের পথ চলার সবচেয়ে সহজ আর সুন্দর সময়..!!

কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে পরিচয় পর্ব থেকে রান্না ঘর সব কিছুই একটা নতুন রূপে সামনে এসে দাড়ায় এই সময়টাতেই। বিষয়গুলোর শুরুর সাবলীল'টা ধরে রাখাতেই এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ!!সাবলীল বিষয়গুলো জটিলতা মুক্ত রাখা'টা সম্ভবত খুব সহজ কোন বিষয় না।।

যদিও সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের আকার আর তার সাথে সাথে প্রকাশভঙ্গিমাও নতুন রূপও নেয়।।

সাকিনা আপার কাছে বিষয়গুলো শুনে বেশ অবাকই হয়েছিলাম..সম্পর্কের শুরুর দিক'টাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই একটা নতুন রূপে আর্বিভূত হলো চোখের সামনে।



ভাবনার সমুদ্র থেকে ওঠে বারান্দায় গাছগুলোর কাছে এসে দাড়ালাম।কয়েকদিনের ব্যস্ততায় গাছগুলোর একদমই যত্ন নেয়া হয় নি..একদিন গাছে পানি দিয়েছি তো আরেকদিন দেই নি..নতুন গাছগুলো একদমই মুষরে পরেছে!!

সম্পর্কগুলোকে কি এই গাছগুলোর সাথে তুলনা করা যায়...??সম্ভবত যায়।।

ঐ যে মুষরে পরা গাছগুলো যারা একটুখানি অযত্নেই গাল ভার করা প্রিয়জনের রূপ নিয়ে হাহাকার করা আকৃতি ধারণ করে।আমার কেনো জানি মনে হয় গাছেরাও যত্নের স্পর্শগুলো অনুভব করতে পারে..প্রতিদিনের যত্নের স্পর্শগুলো অনুভব করেই তারা ফুলে-ফলে ভরে ওঠে!!

মানুষের মত গাছদেরও যে প্রাণ আছে...প্রাণ সর্বস্ব প্রাণী মাত্রই অনুভূতিসর্বস্ব প্রাণী।অনুভূতিশীলতাই যে পথ চলার প্রধান পাথেয়।।

১০

দেখা যায়,যেই না স্পর্শগুলো কমে যায় অথবা থেমে যায় ধীরে ধীরে তারা মুষরে পরতে থাকে।ঠিক যেনো কোন কাছের প্রিয়জন স্পর্শের বাহিরে গিয়ে মুছরে পরার মত ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়া।।

সব সম্পর্কগুলো বাচিয়ে রাখার জন্যই নিয়মিত যোগাযোগ অথবা অন্য কথায় যত্নের প্রয়োজন হয়..তবে, কিছু কিছু সম্পর্কের সম্ভবত একটু বেশিই যত্নের দরকার হয় যেহেতু সম্পর্কগুলোর গভীরতার মাত্রা'টাও সেখান'টায় একটু বেশি!!

১১

সম্পর্কের জটিলতার রূপভেদ করা'টা বেশ কঠিন।তবে,সাধারণ বা স্বাভাবিক বিষয়গুলোতে দ্বিপাক্ষিক ঐক্যমত জারি রাখা'টা যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয় কোন সন্দেহ নেই।।

'মাইন্ড দ্য গ্যাপ' সূত্রের প্রথম আর প্রধান কথা একটাই.... "প্রতিনিয়ত সম্পর্কের ওপর রঙিন রঙের প্রলেপ লাগিয়ে রাখা..যাতে কখনও মরিচা ধরতে না পারে!!"

আমাদের সম্পর্কের এই জায়গা'টায় আরিয়ানকে কম্প্লিমেন্টটা না দিলেই না!!

১২

সেলফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দার চেয়ারটা টেনে বসলাম।।
মন থেকে কারো জন্য শুভ কামনা জানাতে হলে সে কথা খুব মন দিয়ে অনুভব করে নিতে হয়..আর সেই অনুভূতিটাকেই শব্দের ভাঁজে বসিয়ে সাজিয়ে নিতে হয়।।

আপাতত মোবাইলের কী-র্বোডকে শব্দ সাজাতে দেয়ার পালা!!




11/2/18

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:০১

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: প্রতিনিয়ন সম্পর্কের উপর রঙ্গিন প্রলেপ লাগিয়ে রাখা.. যাতে কখনো মরিচা না ধরতে পারে-অসাধারণ বলেছেন।

সুন্দর গল্প... +++

২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:২৭

নভো নীল দীপ্তি বলেছেন: ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য..

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:০০

রাজীব নুর বলেছেন: সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয় পরম মমতায়।

২৮ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫৯

নভো নীল দীপ্তি বলেছেন: গল্পটা পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ!!

৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৪৬

সুমন কর বলেছেন: ভিন্ন রকম। ভালো লাগা রইলো।

২৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:০০

নভো নীল দীপ্তি বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!!

৪| ২৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৪০

রুপ।ই বলেছেন: দারুন

৩১ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:০৬

নভো নীল দীপ্তি বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো!! ধন্যবাদ পড়ার জন্য।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.