নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একলা চলতে হয়

মানুষ আমার সাধন গুরু. সেই মোকামে যাত্রা শুরু

ক্ষয়রোগ

আমি এখন ভিন্ন মানুষ অন্যভাবে কথা বলি কথার ভেতর অনেক কথা লুকিয়ে ফেলি, কথার সাথে আমার এখন তুমুল খেলা...

ক্ষয়রোগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাবিশ্ব সৃষ্টি : বিগ ব্যাং বনাম ধর্মীয় মতবাদ

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৩





' বিজ্ঞান আর ধর্ম ' - এই দুই উপাদান মিলিয়েই আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু প্রায়ই নান বিষয়ে ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে লেগে যায় ঠোকাঠুকি। বিজ্ঞান বিশ্বাস করতে গেলে ধর্ম থাকে না, আবার ধর্মীয় মতবাদ মানতে চাইলে হতে হয় পশ্চাদগামী।



মহাবিশ্বে সৃষ্টি নিয়ে বৈজ্ঞানিক মতবাদ ‌'বিগ ব্যাং', এটা মানতে চাইলে বাদ সাঁধে ধর্মীয় মতবাদ। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বলে এককথা আর আর বিভিন্ন ধর্মে আছে নানা কথা।







মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে বৈজ্ঞানিক মতবাদ ‌আর ধমীয় মতবাদগুলোর প্রতি চোখ রাখা যাক -



বিগব্যাং



মহাবিশ্ব সৃষ্টির আধুনিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হলো বিগ ব্যাং । এই তত্ত্ব অনুসারে ১৫০০ কোটি বৎসর আগের কোন এক সময় একটি বিশাল বস্তুপিণ্ডের বিস্ফোরণের ফলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯২৭ সালে বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী জর্জ লেমিটর (Georges Lemaitre) এই তত্ত্ব প্রথম প্রকাশ করেন। তাঁর মতে সৃষ্টির আদিতে মহাবিশ্বের সকল বস্তু আন্তঃআকর্ষণে পুঞ্জীভূত হয় এবং একটি বৃহৎ পরমাণুতে পরিণত হয়। এই পরমাণুটি পরে বিস্ফোরিত হয়ে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়। এই মতবাদকে সমর্থন ও ব্যাখ্যা করেন এডুইন হাবল (Edwin Hubble)। হাবল পর্যবেক্ষণ দ্বারা প্রমাণ পান যে— মহাকাশের গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর থেকে ক্রমান্বয়ে নির্দিষ্ট গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে। তাঁর মতে, আদিতে মহাবিস্ফোরণের ফলে গ্যালাক্সিগুলো সৃষ্টি হয়েছিল এবং এগুলোর দূরে সরে যাওয়ার আচরণ বিগ-ব্যাংকেই সমর্থন করে।



এই ভাবে বিস্ফোরণের ফলে যে বিকিরণের (radiation) সৃষ্টি হওয়ার কথা, তার অস্তিত্ব প্রথম দিকে প্রমাণ করা যায় নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়। ১৯৬৪ সালে Arno Penzias এবং Robert Wilson নামক দুজন বিজ্ঞানী বিকিরণের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। ফলে বিগব্যাং-এর ধারণা আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মহাবিশ্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এই তত্ত্বকেই সত্য বলে বিবেচনা করা হয়।



বিগব্যাং মতবাদ অনুসারে মহাবিশ্ব সৃষ্টি রহস্য




আদিতে মহাকাশের বস্তুপুঞ্জ বিক্ষিপ্তাকারে ছড়ানো ছিল। অবশ্য এই আদি বস্তুপুঞ্জ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এগুলোর বিন্যাস কিরূপ ছিল, তার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা দিতে পারেন নি। বিগব্যাং তত্ত্ব অনুসারে— প্রায় ১৫০০ কোটি বৎসর আগে এই সকল বিক্ষিপ্ত বস্তুগুলো আন্ত-আকর্ষণের কারণে পরস্পরের কাছে আসতে থাকে এবং ধীরে ধীরে একটি ডিমের আকার ধারণ করে। বিজ্ঞানীরা একে নামকরণ করেছেন মহাপরমাণু (Supper Atom)। উল্লেখ্য এই সময় কোন স্থান ও কালের অস্তিত্ব ছিল না। অসীম ঘনত্বের এই মহাপরমাণুর ভিতরে বস্তুপুঞ্জের ঘন সন্নিবেশের ফলে এর তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছিল- যে কোন পরিমাপ স্কেলের বিচারে ১০১৮ ডিগ্রী। বিগ ব্যাং-এর পরের ১ সেকেন্ডে যে ঘটনাগুলি ঘটেছিল, তা কালানুক্রমে নিচে তুলে ধরা হলো-

১ থেকে ১০-৪৩ সেকেণ্ড : কোয়ান্টাম সূত্রানুসারে বিগব্যাং-এর ১০-৪৩ সেকেন্ডের [এই সময়কে প্লাঙ্ক-অন্তঃযুগ (Planck epoch) বলা হয়] ভিতর চারটি প্রাকৃতিক বলের (force) সমন্বয় ঘটেছিল। এই বলগুলো হলো- সবল নিউক্লীয় বল, দুর্বল নিউক্লীয় বল, বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বল ও মহাকর্ষীয় বল। সবগুলো মিলে একটি অতি বৃহৎ বলের (super force) সৃষ্টি হয়েছিল।

প্লাঙ্ক-অন্তঃযুগ থেকে ১০-৩৫ সেকেণ্ড : প্লাঙ্কের সময় অতিবাহিত হওয়ার কিছু পরে মহাকর্ষীয় বল, অন্য তিনটি বল থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। ফলে মাধ্যাকর্ষণজনিত শক্তির কারণে, মহাপিণ্ডটি সর্বোচ্চ সংকোচন মাত্রায় পৌঁছেছিল। তখন ঘনত্বের বিচারে মহাপরমাণুর প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে বস্তু ছিল ৫১০+৯৩ গ্রাম। এই সময় এর তাপমাত্রা ছিল ১০৩২ কেলভিন। ১০-৩৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে এই তাপমাত্রা এসে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১০২৭ কেলভিন। এই সময় কোয়ার্ক ও লেপ্টন কণার সৃষ্টি হয়েছিল। একই সাথে তৈরি হয়েছিল— কিছু বস্তু এবং প্রতিবস্তুসমূহ (antiparticles)। পরে বস্তু ও তার প্রতিবস্তুর মধ্যে সংঘর্ষ হলে উভয় ধরনের বস্তুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে শুধু কোয়ার্ক ও লেপ্টন রয়ে যায়।

১০-৩৫ থেকে ১০-১০ সেকেণ্ড : পরবর্তী ১০-১০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা নেমে আসে ১০১৬ কেলভিনে। এই তাপমাত্রা পরে আরও কমে গেলে দুর্বল নিউক্লীয় বল ও বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বল পৃথক হয়ে যায়। এই সময় কোয়ার্কসমূহ সবল বলের প্রভাবে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করে ফোটন, প্রোটন এবং নিউট্রন।

১ সেকেন্ড পরে : ১ সেকেন্ড পরে তাপমাত্রা নেমে আসে ১০১০ কেলভিনে। কিন্তু এই তাপমাত্রায় পরমাণু সৃষ্টি অসম্ভব ছিল।

ধারণা করা হয় বিগব্যাং-এর ৩ সেকেণ্ড থেকে ১০০,০০০ বৎসরের মধ্যে সৃষ্ট কণাগুলো শীতল হয়ে উঠে। এই অবস্থায় বস্তুপুঞ্জে বিরাজমান ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন মিলিত হয়ে তৈরি হয় হাইড্রোজন ও হিলিয়াম পরমাণু। এ ছাড়া এই দুটি পদার্থের সাথে ছিল প্রচুর ইলেক্ট্রন প্লাজমা। সব মিলিয়ে যে বিপুল বস্তুকণার সমাবেশ ঘটেছিল, সেগুলো প্রচণ্ড গতিতে বিগ ব্যাং-এর কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। এই সময় এই সকল কণিকাও ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। ক্রমে ক্রমে এগুলো শীতল হতে থাকলো এবং এদের ভিতরের আন্তঃআকর্ষণের কারণে- কাছাকাছি চলে এসেছিল। ফলে বিপুল পরিমাণ বস্তুপুঞ্জ পৃথক পৃথক দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই পৃথক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পত্তন ঘটেছিল গ্যালাক্সি'র (Galaxy)। আমাদের সৌরজগতও এরূপ একটি গ্যালাক্সির ভিতরে অবস্থান করছে। এই গ্যালাক্সির নাম ছায়াপথ (Milky Way)।



গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে সৃষ্টি তত্ত্ব


প্রাচীন গ্রীক পুরাণ মতে- অন্ধকার থেকে ক্যায়োস দেবতার জন্ম হয়। পরে ক্যাওস থেকে জন্ম নেন ইউরোনোমে । এই কারণে একে বলা হয় ক্যায়োস কন্যা। জন্মের পর সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ইনি পা রাখার কোন জায়গা পেলেন না। কারণ তখন আকাশ ও সাগর একত্রে ছিল। সে কারণে ইনি আকাশ থেকে সাগর পৃথক করলেন। আদি পুরাণ মতে এই সাগর ছিল একটি জলধারার মতো। এর দেবতা ছিলেন ওসিনাস। এরপর সাগরের তরঙ্গে উপর ইনি একাকী নৃত্য করতে লাগলেন। ইতোমধ্যে ক্যায়োস অন্ধকারের সাথে মিলিত হয়ে উৎপন্ন করলেন– রাত্রি, দিন, অন্ধকার ও বাতাস। তাই ইউরিনোমে যখন নাচতে নাচতে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হলেন, তখন এর অনুগামী হলো বাতাস। এরপর ইনি বাতাসের গতিকে নির্ধারণ করে দিলেন। এরপর ইনি উত্তরের বাতাস ধরলেন এবং দুই হাতের ভিতর উক্ত বাতাসকে ঘসলেন। এরপর ইনি ক্যায়োস থেকে উৎপন্ন ওফিয়োন নামক একটি বিরাট সাপ দেখতে পেলেন। ইউরিনোমে এরপর বিশাল অঞ্চল জুড়ে নাচতে থাকলেন। ধীরে ধীরে এই নাচের সাথে সাথে ওফিয়োন কামাশক্ত হয়ে পড়লেন। সে তার কুণ্ডলী দিয়ে ইউরিনোমেকে আকর্ষণ করলেন। এরপর ইউরিনোমে একটি ঘুঘুর রূপ ধরে ডিম প্রসব করলেন, আর ওফিয়োন সাতটি পাকে কুণ্ডলি তৈরি করে উক্ত ডিমকে তা দিতে থাকলেন। অবশেষে এই ডিম দুটি ভাগে বিভক্ত হলো এবং সেখান থেকে তৈরি হলো সূর্য, চন্দ্রসহ অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্র। একই সাথে ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর পাহাড়, নদী সাগর ইত্যাদি দ্বারা সুসজ্জিত হলো। সৃষ্টি হলো বিভিন্ন গাছপালা ও প্রাণীকুল।



আদি গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীতে- ক্যায়োস স্বয়ম্ভু হিসাবে বিবেচনা হয়েছে। আর ইউরোনোমের সৃষ্টি হয়েছিল সেই স্বয়ম্ভু ক্যায়োস থেকে। কিন্তু ইউরিনোমের ছিলেন সর্বত্র । রূপকতার আড়াল থেকে ইউরোনামকে বের করে আনলে- সুবিস্তৃত বস্তুরাশির কথাই মনে হয়। সে কারণেই আকাশ ও পৃথিবীকে একত্রিত অবস্থানে ছিল। ইউরোনাম আকাশকে সাগর থেকে পৃথক করলেন। এই ধারণা বিজ্ঞানের সাথে মেলে না। কিন্তু ইউরিনোমের নৃত্যকে বস্তুপুঞ্জের অস্থিরতা ধরা যেতে পারে। সেই অস্থিরতা থেকে বস্তু যখন আন্তঃআর্কষণে কেন্দ্রীভূত হতে থাকলো- তখন ঘূর্ণায়মান গতির সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে তৈরি হয়েছিল বিশালকারে গতিময় কুণ্ডলিত অবয়ব। যাকে হয়তো গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীতে অফিয়ন নামক একটি বিরাট সাপের কুণ্ডল হিসাবে কল্পনা করা হয়েছে। উভয়ের মিলনে যে অণ্ডের সৃষ্টি হয়- তাই ছিল বিগব্যাং-এর পূর্ববর্তী সুপার এটম। গ্রিক পুরাণের সেই আদি অণ্ড ফেটে গিয়ে মহাকাশ ও এর অন্যান্য উপকরণ (সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র ইত্যাদি) তৈরি হয়েছিল।



হিন্দু ধর্মমতে সৃষ্টি তত্ত্ব




হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস একক কোন প্রধান ধর্মগ্রন্থের অনুসরণে গড়ে উঠে নি। যেমন- ইসলাম ধর্মের কুরআন, খ্রিষ্টান ধর্মের জন্য বাইবেল। হিন্দু ধর্ম হলো একাধিক প্রাচীন ঋষিদের রচিত গ্রন্থের সমন্বিত দর্শন। এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে বিভিন্ন পৌরাণিক উপাখ্যান।



হিন্দু ধর্মের যে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা, তার নাম হলো ব্রহ্ম। ঈশ উপনিষদের ব্রহ্মের প্রকৃতি হিসাবে বলা হয়েছে-

ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাত্ পূর্ণমুদচ্যতে।

পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে



সরলার্থ : উহা (পরব্রহ্ম) পূর্ণ, ইহা (নামরূপে স্থিত ব্রহ্ম) পূর্ণ; এই সকল সূক্ষ্ম ও স্থূল পদার্থ পরিপূর্ণ ব্রহ্ম হইতে উদগত বা অভিব্যক্ত হইয়াছে। আর সেই পূর্ণস্বভাব ব্রহ্ম হইতে পূর্ণত্ব গ্রহণ করিলেও পূর্ণই অর্থাৎ পরব্রহ্মই অবশিষ্ট থাকেন। ত্রিবিধ বিঘ্নের (আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক) শান্তি হোক। ঈশ উপনিষদ। শান্তিপাঠ। [অতুলচন্দ্র সেন, সীতানাথ তত্ত্বভূষণ, মহেশচন্দ্র কর্তৃক অনূদিত ও সম্পাদিত- উপনিষদের অখণ্ড সংস্করণ থেকে উদ্ধৃত করা হলো।]



উপনিষদে বর্ণিত ব্রহ্ম অদ্বিতীয় সত্তা। ইনি সূক্ষ্ম ও স্থূল সকল কিছূরই উত্স। এই উত্স থেকে জগতের বিভিন্ন উপকরণের সৃষ্টি হয়। এর সমর্থন পাওয়া যায় অন্যান্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থে। যেমন- মার্কেণ্ডয় পুরাণে আছে-



যা অব্যক্ত এবং ঋষিরা যাকে প্রকৃতি বলে থাকেন, যা ক্ষয় বা জীর্ণ হয় না, রূপ রস গন্ধ শব্দ ও স্পর্শহীন, যার আদি অন্ত নেই, যেখান থেকে জগতের উদ্ভব হয়েছে, যা চিরকাল আছে এবং যার বিনাশ নেই, যার স্বরূপ জানা যায় না, সেই ব্রহ্ম সবার আগে বিরাজমান থাকেন। মার্কেণ্ডয় পুরাণ/শ্রীসুবোধকুমার চক্রবর্তৗ।



উপনিষদ ও মার্কেণ্ডয় পুরাণ অনুসারে- দেখা যাচ্ছে, সৃষ্টির আদিতে পরমব্রহ্ম বিরাজ করেন। এবং সেই পরমব্রহ্ম থেকেই জগতের সব কিছু সৃষ্টি হয়। এই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার স্তরগুলো সম্পর্কে মার্কেণ্ডয় পুরাণে যা বিবৃত হয়েছে, তা হলো-



সত্ত্ব (প্রকৃতি) রজ (যার প্রভাবে অহংকারসহ অন্যান্য মন্দগুণের জন্ম হয়) ও তম (অন্ধকার) এই তিন গুণ তাঁর মধ্যে পরস্পরের অনুকূলে ও অব্যাঘাতে অধিষ্ঠিত আছে। সৃষ্টির সময়ে তিনি (ব্রহ্ম) এই গুণের সাহায্যে সৃষ্টিক্রিয়ায় প্রবৃত্ত হলে প্রধান তত্ত্ব প্রাদুর্ভূত হয়ে মহত্তত্ত্বকে (মহৎ নামক তত্ত্ব) আবৃত করে। এই মহত্তত্ত্ব তিনগুণের ভেদে তিন প্রকার। এর থেকে তিন প্রকার ত্রিবিধ অহঙ্কার প্রাদুর্ভূত হয়। এই অহঙ্কারও মহত্তত্ত্বে আবৃত ও তার প্রভাবে বিকৃত হয়ে শব্দতন্মাত্রের সৃষ্টি করে। তা থেকেই শব্দ লক্ষণ আকাশের জন্ম। অহঙ্কার শব্দমাত্র আকাশকে আবৃত করে এবং তাতেই স্পর্শতন্মাত্রের জন্ম। এতে বলবান বায়ু প্রাদুর্ভূত হয়। স্পর্শই বায়ুর গুণ। শব্দমাত্র আকাশ যখন স্পর্শমাত্রকে আবৃত করে, তখন বায়ু বিকৃত হয়ে রূপমাত্রের সৃষ্টি করে। বায়ু থেকে জ্যোতির উদ্ভব, রূপ ঐ জ্যোতির গুণ। স্পর্শমাত্র বায়ু যখন রূপমাত্রকে আবৃত করে, তখন জ্যোতি বিকৃত হয়ে রসমাত্রের সৃষ্টি করে। তাতেই রসাত্মক জলের উদ্ভব। সেই রসাত্মক জল যখন রূপমাত্রকে আবৃত করে তখন জল বিকৃত হয়ে গন্ধমাত্রের সৃষ্টি করে। তাতেই পৃথিবীর জন্ম হয়। মার্কেণ্ডয় পুরাণ/শ্রীসুবোধকুমার চক্রবর্তৗ।



পুরাণের এই বিবৃত থেকে বুঝা যায় ব্রহ্মা প্রকৃতিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এই বর্ণনা আমাদের কাছে সুষ্পষ্ট বর্ণনার পরিবর্তে এক দুর্বোধ্য কল্পনাকে জাগ্রত করে। আবার বিভিন্ন পণ্ডিতরা যখন এর ব্যাখ্যা নিজেদের মতো করে করতে থাকেন, তখন তা বিভিন্ন অর্থে প্রতীয়মান হতে থাকে।



মহাভারতের আদিপর্বের সৃষ্টিবর্ণন অংশের- সৃষ্টি তত্ত্ব থেকে যে ধারণা পাই তা কিছুটা আধুনিক বিজ্ঞানের সমার্থক বলেই বোধ হয়। আধুনিক বিজ্ঞান বলে- আদিতে বস্তুপুঞ্জ একত্রিত হয়ে একটি পিণ্ডের সৃষ্টি হয়েছিল। উক্ত পিণ্ডের বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে বর্তমান মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল। তবে মহাভারতে এর সাথে ঐশ্বরিক সত্তার মহিমা যুক্ত করার কারণে- এই বর্ণনা ভিন্ন মাত্রায় রূপ পরিগ্রহ করেছে। যেমন-



প্রথমতঃ এই বিশ্বসংসার কেবল ঘোরতর অন্ধকারে আবৃত ছিল। অনন্তর সমস্ত বস্তুর বীজভূত এক অণ্ড প্রসূত হইল। ঐ অণ্ডে অনাদি, অনন্ত, অচিন্তনীয়, অনির্বচনীয়, সত্যস্বরূপ নিরাকার, নির্বিকার, জ্যোতির্ময় ব্রহ্ম প্রবিষ্ট হইলেন। অনন্তর ঐ অণ্ডে ভগবান্ প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং জন্ম পরিগ্রহ করিলেন। তত্পরে স্থাণু, স্বায়ম্ভু মনু দশ প্রচেতা, দক্ষ, দক্ষের সপ্ত পুত্র, সপ্তর্ষি, চতুর্দশ মনু জন্মলাভ করিলেন। মহর্ষিগণ একতানমনে যাঁর গুণকীর্তন করিয়া থাকেন, সেই অপ্রমেয় পুরুষ, দশ বিশ্বদেব, দ্বাদশ আদিত্য, অষ্টবসু, যমজ অশ্বিনীকুমার, যক্ষ, সাধুগণ, পিশাচ, গুহ্যক এবং পিতৃগণ উত্পন্ন হইলেন। তত্পরে জল, পৃথিবী, বায়ু, আকাশ, দশ দিক্, সংবত্সর, ঋতু, মাস, পক্ষ, রাত্রি ও অন্যান্য বস্ত ক্রমশঃ সঞ্চাত হইল। (কালীপ্রসন্নসিংহ কর্তৃক অনূদিত সংস্করণ থেকে।)



হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতে সৃষ্টি-তত্ত্বের রূপ মোটামুটি এই ভাবেই বিবৃত হয়েছে। এই সকল বর্ণনা অনুসারে যে সার কথা পাওয়া যায় তা হলো- আদিতে ব্রহ্ম নামক পরম সত্তা ছিল। উক্ত সত্তা প্রকৃতিকে একটি বিশাল অণ্ডে রূপান্তরিত করলেন। উক্ত অণ্ড থেকে সৃষ্টি হয়েছিল বিশ্ব-চরাচর এবং দেবতাসহ অন্যান্য সকল প্রাণী। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- সৃষ্টির আদিতে যে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছিল, তাকে সমর্থন করা গেলেও- পৃথিবী সৃষ্টির আগে জলের অস্তিত্বের কথা বলে- বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। যদি হিন্দু দর্শন আরও সুবিস্তৃত। তারপরেও বলা যায় গ্রীক পুরাণের সাথে হিন্দু দর্শনের মূল কথা একই রকম।



বাইবেলের মতে- সৃষ্টিতত্ত্ব



বাইবেলের পুরাতন নিয়মের আদিপুস্তক অধ্যায় শুরু হয়েছে জগত্সৃষ্টির বিবরণের মাধ্যমে। এই বিবরণটি নিম্নরূপ-



১ আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন।

২ পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল, এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপর অবস্থিতি

৩ করিতেছিলেন। পরে ঈশ্বর কহিলেন, দীপ্তি হউক, তাহাতে দীপ্তি হইল।

৪ তখন ঈশ্বর দীপ্তি উত্তম দেখিলেন, এবং ঈশ্বর অন্ধকার হইতে দীপ্তি পৃথক

৫ করিলেন। আর ঈশ্বর দীপ্তির নাম দিবস ও অন্ধকারের নাম রাত্রি রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে প্রথম দিবস হইল।

৬ পরে ঈশ্বর কহিলেন, জলের মধ্যে বিতান হউক, ও জলকে দুই ভাগে

৭ পৃথক করুক। ঈশ্বর এইরূপে বিতান করিয়া বিতানের উদ্ধস্থিত জল হইতে বিতানের অধঃস্থিত জল পৃথক করিলেন;

৮ তাহাতে সেইরূপ হইল। পরে ঈশ্বর বিতানের নাম আকাশমণ্ডল রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে দ্বিতীয় দিবস হইল।

৯ পরে ঈশ্বর কহিলেন, আকাশমণ্ডলের নীচস্থ সমস্ত জল এক স্থানে সংগৃহীত হউক ও স্থল সপ্রকাশ হউক, তাহাতে

১০ সেইরূপ হইল। তখন ঈশ্বর স্থলের নাম ভূমি, ও জলরাশির নাম সমুদ্র রাখিলেন; আর ঈশ্বর দেখিলেন যে,

১১ তাহা উত্তম। পরে ঈশ্বর কহিলেন, ভূমি তৃণ, বীজোত্পাদক ওষধি, ও সবীজ স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী ফলের উত্পাদক ফলবৃক্ষ, ভূমির উপরে উত্পন্ন করুক;

১২ তাহাতে সেইরূপ হইল। ফলতঃ ভূমি তৃণ, স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী বীজোত্পাদক ওষধি, ও স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী সবীজ ফলের উত্পাদক বৃক্ষ, উত্পন্ন করিল; আর ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল

১৩ উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে তৃতীয় দিবস হইল।

১৪ পরে ঈশ্বর কহিলেন, রাত্রি হইতে দিবসকে বিভিন্ন করণার্থে আকাশমণ্ডলের বিতানে জ্যোতির্গণ হউক; সে সমস্ত চিহ্নের জন্য, ঋতুর জন্য এবং দিবসের ও

১৫ বত্সরের জন্য হউক; এবং পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য দীপ বলিয়া আকাশ-মণ্ডলের বিতান থাকুক; তাহাতে সেই

১৬ রূপ হইল। ফলতঃ ঈশ্বর দিনের উপর কর্ত্তৃত্ব করিতে এক মহাজ্যোতিঃ, ও রাত্রির উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতে তদপেক্ষা এক জ্যোতিঃ, এই দুই বৃহৎ জ্যোতিঃ, এবং নক্ষত্রসমূহ নির্ম্মাণ করিলেন।

১৭ আর পৃথিবীতে দীপ্ত দিবার জন্য, এবং দিবস ও রাত্রির উপরে কর্ত্তৃত্ব

১৮ করণার্থে, এবং দীপ্তি হইতে অন্ধকার বিভিন্ন করণার্থে ঈশ্বর ঐ জ্যোতিঃসমূহকে আকাশমণ্ডলের বিতানে স্থাপন করিলেন, এবং ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে

১৯ সকল উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে চতুর্থ দিবস হইল।

পবিত্র বাইবেল /পুরাতন ও নূতন নিয়ম/বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ঢাকা



বাইবেলের এই বর্ণনার সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের সৃষ্টি তত্ত্বের বিশাল পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এমন কি- কিছু কিছু ভাষ্য অযৌক্তিক মনে হয়। যেমন-



১। উপরের উদ্ধৃতির ১, ২, ৩ অংশ জুড়ে পাই- আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন। পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল, এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপর অবস্থিতি করিতেছিলেন। পরে ঈশ্বর কহিলেন, দীপ্তি হউক, তাহাতে দীপ্তি হইল।



বিজ্ঞানের মতে পৃথিবী আদিতে ছিল গ্যাসপূর্ণ আগুনে গোলক হিসাবে। সেখানে বাইবেল আদিতেই পানির অস্তিত্বকে তুলে ধরছে। বাইবেলের এই ধারণার সাথে বিজ্ঞানের ধারণা না মিললেও গ্রীক ও হিন্দু ধর্মের সাথে মিলে। হিন্দু ধর্মমতে সমগ্র পৃথিবী জলমগ্ন ছিল- আর তার উপরে বিষ্ণু অনন্ত শয়নে ছিলেন। নার অর্থ জল। নারের উপর বিষ্ণু অবস্থান করছিলেন বলে- তিনি নারায়ণ। কিন্তু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিচার করলে, বিষয়টি ততটা অযৌক্তিক মনে হয় না। এই বিষয়টি নিয়ে তৃতীয় পাঠে আলোকপাত করেছি।



২। বাইবেলের মতে চতুর্থ দিনে ঈশ্বর সুর্য তৈরি করলেন, পৃথিবী সৃষ্টির পরের কথা। বিজ্ঞানের মতে- সূর্য পৃথিবী একই সাথে তৈরি সৃষ্টি হয়েছিল। তা ছাড়া গাছ-পালা জন্মের জন্য সূর্য-কিরণ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। অথচ বাইবেলের মতে সৃষ্টির তৃতীয় দিনেই গাছ-পালা সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। প্রাণী সৃষ্টির যে কালানুক্রমিক ধারা বাইবেলে পাওয়া যায়- তার সাথে প্রাণের ক্রমবিকাশ বা বিবর্তনের ধারা মেলে না।





কুরআনের মতে- সৃষ্টিতত্ত্ব


পূর্বে আলোচিত গ্রীক, হিন্দু পৌরাণিক গ্রন্থসমূহ বা বাইবেলের মতো- কুরআনে কোন তথ্যাবলী উপস্থাপনেই ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় নি। মূলত আল্লাহর স্বরূপ, আল্লাহর প্রতি মানুষের আনুগত্য, সহজ ও সরল পথ অনুসরণে মানুষের জীবন-যাপনের ধারা ইত্যাদি সম্পর্কিত নির্দেশাবলী কুরআনের বিষয়। তাত্ক্ষণিকভাবে উক্ত প্রেরিত বাণী ছিল- তত্কালীন আরববাসীদের জন্য। কিন্তু এই বাণী এমনভাবে পরিবেশন করা হয়েছিল- যাতে করে আগামী দিনের সকল ভূখণ্ডের মানুষও দিক নির্দেশনা পেতে পারে। এই নির্দেশনার অনুসঙ্গ বা উদাহরণ হিসাবে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সহায়ক তথ্যাবলী। এই তথ্যাবলীর ভিতর রয়েছে- পূর্ববর্তী বিভিন্ন নবীদের কার্যকলাপ, প্রাচীন ইতিহাস, প্রকৃতি, মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যাবলী, মানুষের জীবন-যাত্রার পদ্ধতি-সহ আরও বিবিধ প্রাসঙ্গিক বিষয়। বিষয়াবলী এইভাবে উপস্থাপনের কারণে কুরআনের অনেক জায়গাতেই একই উদাহরণ বারবার এসেছে। উদাহরণ প্রয়োগে বা মূল নির্দেশনামাটি কোনো ক্ষেত্রে বিস্তৃতভাবে এসেছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তাকারে এসেছে। সেই কারণে পুরো কুরআন পাঠ না করে- এর অংশ বিশেষের নির্দেশ মেনে কোন বিষয়ের মীমাংশা করাটা অত্যন্ত অবিবেচকের কাজ হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে- আমাদের দেশের তথাকথিত ফতোয়াবাজরা এই কাজটি বেশ নিষ্ঠার সাথে করে থাকেন।



কুরআনে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির ক্ষেত্রেও তথ্যাবলী পাওয়া যায়- সহায়ক উপকরণ হিসাবে। যেহেতু এই সহায়ক বাণীগুলো বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিস্তারিত বা সংক্ষিপ্ত আকারে এসেছে- তাই কোন বিশেষ সুরার বিশেষ আয়াতকে উপস্থাপন করে বিষয়টি বুঝতে গেলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- কুরাআনে মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও পৃথিবী সৃষ্টি প্রসঙ্গে ২ দিন বা ৬ দিনের কথা বলা হয়েছে। কুরআনের সমগ্র পাঠ উপলব্ধি না করলে- বিষয়টি অবশ্যই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। আসুন এই বিভ্রান্তিকর বিষয়টি দিয়েই কুরআনের দৃষ্টিতে সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক।



সূরা আরফ। আয়াত ৫৪

৫৪ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন।....



এখান সমগ্র বিশ্বচরাচর ৬ দিনে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এই হিসাবটি বাইবেলের সাথে মিলে যায়। কিন্তু এই আয়াতে ৬ দিনের সৃষ্টিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। একটি ভাগ নভোমণ্ডল- অর্থাৎ মহাকাশ ও এর সকল উপকরণ (গ্যালাক্সি ও মহাকাশীয় অন্যান্য উপকরণ)। দ্বিতীয় ভাগে সৃষ্টি করছেন ভূমণ্ডল- অর্থাৎ পৃথিবী। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য করুন এখানে অধিকাংশ অনুবাদক দিন শব্দ ব্যবহার করেছেন। সেই কারণে আমিও দিন ব্যবহার করেছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই দিন বলতে কি বুঝানো হয়েছে সেটিও ভাববার বিষয়।



এখানে পার্থিব দিনের হিসাব গ্রহণ করা যাবে না। কারণ, সৃষ্টির আদিতে যখন পৃথিবী- সূর্য তৈরি হয় নি তখন-পার্থিব দিনের বিষয়টি আসতে পারে না। আপনার হয়তো অনেকেই জানেন যে- আরবী ইয়াওম শব্দের অর্থ দিন। কিন্তু উক্ত আয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে আইয়াম। উল্লেখ আইয়াম হলো ইয়াওম শব্দের বহুবচন- অর্থাৎ দিবসসমূহ। এখানে আক্ষরিক দিবসসমূহ অর্থ গ্রহণ না করে এর অর্থ গ্রহণ করা উচিৎ কাল, পর্যায়, যুগ ইত্যাদি অর্থে। সে হিসাবে এই আয়াতের অনুবাদ হওয়া উচিত্ ....তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয় কালে (পর্যায়ে বা যুগে) সৃষ্টি করেছেন।



কুরআনে বর্ণিত এই ছয় মহাকালের মধ্যে আল্লাহ কোন পর্যায় কি তৈরি করেছেন, তা পাওয়া যায়- সূরা হা-মীম সেজদাহ-তে।



সূরা হা-মীম সেজদাহ। আয়াত ৯-১১

৯ বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুদিনে এবং তোমরা কি তার সমকক্ষ স্থির কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা।

১০ তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগ অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন- পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্য।

১১ অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ......



এই সুরায় উল্লেখিত দুই দিন নিয়ে অনেক অনূবাদক বা সমালোচক বিভ্রান্তিতে পতিত হন। লক্ষ্য করুন সূরা আরফ-এর ৫৪ আয়াত ছয়টি পর্যায়ে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এখানেই সমগ্র ছয়টি পর্যায়কে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর একটি হলো-নভোমণ্ডল সৃষ্টি কাল অপরটি ভূমণ্ডল সৃষ্টিকাল। এই দুটি পর্যায়ের প্রথমেই নভেমণ্ডল তৈরি করার সময়ই পৃথিবী তৈরি হয়ে গেছে। বিশ্বচরাচরের প্রাথমিক বিন্যাসে আল্লাহ মাত্র দুটি সময়-পর্যায় ব্যয় করেছেন। ফলে ৬টি পর্যায়ের মধ্যে চারটি পর্যায় অবশিষ্ট থেকে যায়। এই কারণে সূরা হা-মীম সেজদাহ ৯ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে -যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুদিনে।



বাকি চারটি পর্যায়ে- আল্লাহ ভূমণ্ডল তৈরিতে মনোনিবেশ করলেন। ফলে পৃথিবীর উপরিভাগে পাহাড় পর্বত স্থাপন করছেন। সূরা হা-মীম সেজদাহ ১০ আয়াতে তার উল্লেখ পাওয়া যায় এই ভাবে- তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগ অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। এর সাথে উক্ত আয়াত থেকেই জানা যায় যে আল্লাহ খাদ্যের উপযোগী পরিবেশ ও উপকরণ সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ নদী, সাগর, প্রাণধারণের উপযোগী বায়ুমণ্ডল, গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণী তৈরির বিষয়টিও এই সময়ে সম্পন্ন হয়েছিল।



বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ১৫০০-১০০০ কোটি বত্সরের মধ্যে গ্যালাক্সিগুলোর বিন্যাস হয়েছিল বটে কিন্তু সুবিন্যাস্ত ছিল না। কিন্তু ৫০০ কোটি বত্সরের মধ্যে যখন সূর্য, পৃথিবী ইত্যাদি তৈরি হয়েছিল, তখন মহাকাশেও তেমনি প্রক্রিয়া চলছিল। এই পর্যায়ে কিছু কিছু নক্ষত্র তৈরির প্রক্রিয়া চলতে থাকলেও তাদের অধিকাংশই তখন গ্যাসীয় অবস্থাতেই ছিল। কুরআনের মতে- মহাকাশের এই পরিবর্তনের সূচনা করলেন আল্লাহ। এবং কুরআনের মতে- আল্লাহ এই ধুম্রকুঞ্জের দিকে নজর দিলেন। অর্থাৎ ধুম্রকুঞ্জকে বিভিন্ন মহাকাশীয় অবজেক্টে পরিণত করলেন। সৃষ্টির এই পর্যায়ে যখন আকাশ মণ্ডলের দিকে আল্লাহ নজর দিলেন- তখন মহাকাশকে সম্প্রাসরণ ও পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। বিষয়টি সূরা আন্-নাযিআত-এ যেভাবে বলা হয়েছে, তা হলো-



সূরা আন্-নাযিআত। আয়াত ২৭-৩০

২৭ তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন?

২৮ তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন।

২৯ তিনি রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যালোক প্রকাশ করেছেন।

৩০ পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।



এই ছয়টি পর্যায়ের ভিতরই মহাকাল সম্প্রসারিত হওয়ার কথা। নাকি মহাজাগতিক বিগব্যাং-এর পরে কিছু সময় এই সম্প্রসারণ স্তিমিত বা থেমে গিয়েছিল কি? এবং পরে এর সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল? এই জাতীয় প্রশ্নটি উঠতেই পারে। কোন একটি বিশাল বিস্ফোরণের পর, কেন্দ্রে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তার প্রতিক্রিয়ায় এই স্থবিরতা নেমে আসতেই পারে।



উপরের ধর্মীয় মতাদর্শগুলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছে মাত্র। এই ইঙ্গিতকে বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করে নিতে হবে- এমন কঠোর নির্দেশই প্রদান করা হয়েছে। এই নির্দেশ মানতে গিয়ে সত্য রক্ষিত হবে কিনা তা বিবেচ্য নয়। যে ক্ষেত্রে ধর্মীয় এই বিশ্বাসের সাথে সত্যানুসন্ধানের ঐক্য হবে- সেখানে ধর্মবাদীরা ধর্মের সত্যনিষ্ঠ শক্তির কথা সগৌরবে প্রচার করেন। কিন্তু যেখানে এই সত্য লঙ্ঘিত হয়- সেখানেই সৃষ্টি হয় সত্যের সাথে ধর্মীয় বিশ্বাসের সংঘাত। যেমন, খ্রীষ্টান-পুরোহিতদের সাথে গ্যালিলিওর মতবাদের সংঘাত।



মূলত ধর্মীয় দর্শনের সাথে সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে বিজ্ঞানের আলোকময় পথে। প্রশ্ন হলো বিজ্ঞান কি সর্বদা অভ্রান্ত। না তেমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে চলে, ত্রুটি সংশোধনের ক্রমধারার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ধর্মীয় বয়ানকে গোড়া থেকে অভ্রান্ত ও চিরন্তন হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। এর কোন অংশ সংশোধন করতে গেলেই- ধর্মের এই চির সত্যের প্রাসাদ ভেঙে পড়ে। তাই বিজ্ঞানীরা যেখানে প্রতিনয়ত নিষ্ঠার সাথে সত্যের কাছে পৌছার জন্য নিজেদের সত্যকেই অগ্রাহ্য করে নূতন সত্যকে উপস্থাপন করে। সেখানে ধর্মীয় পুরোহিতরা মিথ্যা জেনেও পুরানো ধারণাকে নিষ্ঠার সাথে রক্ষা করার চেষ্টা করেন।





মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৮

রিওমারে বলেছেন: বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের কোথাও দন্দ নেই।মানুষ ধর্ম সম্পর্কে যার কাছে যাহা শুনে তাহাই বিশ্বাস করে আর মনে করে এটাই বুঝি ধর্ম।। সুন্দর পোস্ট। পিয়তে নিলাম।।

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩১

ছোট্ট নিথী বলেছেন: অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়লাম!! ভালো লেগেছে। ার তথ্যগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়তে রাখলাম!! :)

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১১

নিশ্চুপ শরিফ বলেছেন: সুত্র কি ইংরেজি উইকিপিডিয়া? আমার মনে হয় এরকম একটা পোস্ট পড়ছিলাম ইংরেজি উইকিতে। ভালো লিকছেন

Click This Link

এটা পড়ে দেখতে পারেন। ভালো থাকবেন।

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪১

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: বাইবেল আর কুর'আনের ভেতরে পৃথিবী সৃষ্টির কাহিনী প্রায় একই। এর একটা কারন হতে পারে যে সেই আমলে ঐ অঞ্চলে প্রচলিত দুনিয়া সৃষ্টীর কাহিনী বলতে এইটাকেই বিশ্বাস করা হত।

যার শুধু ক্কুল বললেই সব হয়ে যায়, তার কেন ছয়দিন ( লেখক যেটাকে কাল বলেছেন ) সময় লাগবে এই সব সৃষ্টী করতে? তার মানে কি ক্কুল বললেই সব হয় না তৈরি?

৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৪৮

বিকারগ্রস্থ মস্তিস্ক বলেছেন: আবার ধর্মীয় মতবাদ মানতে চাইলে হতে হয় পশ্চাদগামী।

আপাতত পুড়ো মন্তব করছি না - পড়ে করবো -- তবে প্রথম প্যাড়ার এই লাইনে তেব্র দ্বিমত !!

যদি গোড়া খোড়া ধর্ম পালন করেন তাইলেই পশ্চাদ গামী হইবেন আর

বিগ ব্যাঙ্গ কি প্রমানিত ? --

৬| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৫৯

ইভা_110 বলেছেন: এমন কি যদি বস্তুবাদীদের মত ধারণাও করি যে মানুষ প্রকৃতির সৃষ্টি। তাহলে আমরা যে প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হব তাহল প্রকৃতিকে কে অস্তিত্ব দান করলো? এ ক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন হচ্ছে সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যগুলো স্রষ্টার মধ্যে অবশ্যই পূর্ণরূপে অবস্থান করতে হবে। অথচ মানুষের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো আছে তার অধিকাংশই প্রকৃতির মধ্যে নেই। প্রকৃতি হল সম্পূর্ণরূপে বস্তুসত্তা আর মানব প্রকৃতিতে বস্তুসত্তা বর্হিভূত অনেক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। প্রকৃতি বা বস্তু অর্থ আধাঁর/ আড়াল তাই বস্তুর বৈশিষ্ট্য হল সে তার নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত নয়। আর এক্ষেত্রে মানুষকে বলা হয় স্বজ্ঞেয় সত্তা যে তার নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত আছে বা জ্ঞান রাখে।
'‌big bang theory' বিরাট বিস্ফোড়নের সূত্রও আরেকটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক কল্পনা বৈ ভিন্ন কিছু নয়। এটা বস্তুবাদী জ্ঞানের চুড়ান্ত ফল হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে। এবিষয়টি এমন একটি তথাকথিত বুদ্ধিমান মানুষদের ধরণা যারা নিজেদেরকে বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারক বলে মনে করেন। তাদের সূত্রের সংক্ষিপ্ত রূপ হল বিশ্বে কোন কিছুই ছিল না হঠাৎ মহা বিস্ফোড়ন ঘটে এই মহা জগতের সৃষ্টি হয়েছে। এধরণের যুক্তিশুন্য কথা রাজার নতুন পোষাকের মত জ্ঞানীদেরও বোকা বানিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্ন হল, মহাশুন্য কথার কোন বাস্তব রূপ আছে কি ? বা মহাশুন্যের কোন অস্তিত্ব আছে কি ? বস্তুজগতে [বস্তুবাদী চিন্তায়] কোন মহাশুন্য কল্পনা করা সম্ভব কি ? আদৌ সম্ভব নয়। কেননা তাদের ধারণা অনুযায়ী বস্তুর বাইরের কোন অস্তিত্ব সমান অনাস্তিত্ব । তাই এধারণা অনুযায়ী 'কিছুই ছিল না' থেকে 'সব কিছু হয়েছে' এটা ঘোড়ার ডিমের মত বিষয় যে, ঘোড়া কখনো ডিম পাড়ে না; কিন্তু একবারই একটা ডিম পেড়েছে।
Click This Link

৭| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:৩০

সজীব আকিব বলেছেন:
আপনাকে ২ টা লিংক দেই
কোরানে বিজ্ঞান খোঁজাঃ এই মানসিক বৈকল্যের হেতু কি?

কুরানে বিগ্যান।

২য় লিংকে ধর্মানুভূতিতে আঘাত পাবার সম্ভাবনা আছে। তাই খেয়াল কৈরা।

৮| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:১৮

গাজী সালাহউদ্দিন বলেছেন: @নিস্কর্মা - বলেছেন-

'যার শুধু ক্কুল বললেই সব হয়ে যায়, তার কেন ছয়দিন ( লেখক যেটাকে কাল বলেছেন ) সময় লাগবে এই সব সৃষ্টী করতে? তার মানে কি ক্কুল বললেই সব হয় না তৈরি?'


আমি যতটুকু বুঝি -

উনি ক্কুল বললেই সব তৈরী হয়ে যায় । এর মানে হলো ওনার চিন্তা করতে হয় না, ডিজাইন করতে হয় না দিনের পর দিন বা ভেঙে চুরে ভূল হলে আবার শুরু করতে হয় না । উনি শুধু ক্কুল বলেন ।

আর ছয়টি কাল হলো - এই সব সৃষ্টি করতে আল্লাহ একটা নিয়ম অবশ্যই ফলো করেছেন । তিনি নিয়ম তৈরী করেছেন । এটা সব কিছুর ক্ষেত্রেই । যেমন- মানুষ মায়ের পেটে তৈরী হয় ধাপে ধাপে । বীজ থেকে ধীরে ধীরে গাছ হয় । এখানে যার জন্য যে নিয়ম তিনি বানিয়েছেন সেটাই হচ্ছে ।

- আল-কুরআনে কোন অবৈজ্ঞানিক বানী নেই এবং এটা কোন মানুষের তৈরী গ্রন্হ নয় - য্টো আজ স্বীকৃত । অনেকেই এমনকি পাশ্চাত্যের অনেক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকগণ ও স্বীকার করেছেন কুরআন মানুষের তৈরী গ্রন্হ নয় ।

মহানবী (সাঃ) প্রদত্ত এই মোজেজা দ্বারা বর্তমানে অনেক মানুষই মুসলমান হচ্ছে । আল্লাহই এর রক্ষক এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা অক্ষত থাকবে - সারা বিশ্ব থেকে কুরআনের কপি গুলো মুছে দিলেও - মানুষের স্মৃতি থেকে তো আর মুছা যাবেনা । পৃথিবীতে একমাত্র এটাই এরকম গ্রন্হ - যা ধ্বংস করা সম্ভব নয় ।

৯| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৪৪

শার্ক বলেছেন: i think the writer intentionally avoided many scientific ayha from quran. there is no scientific conflict in quran but there is conflict in the scientist. copernikas said one thing and that time it was standard. later galelio said another thing and now this is standad with some fixes. but quran said only one thing and this is standard always all the time. this is challange for all the people and inshallah a minor error can be shown in quran.

১০| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৪৬

শার্ক বলেছেন: no error in quran and if u can show us then we will change our mind.

১১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩০

মূসা আলকাজেম বলেছেন: '‌big bang theory' বিরাট বিস্ফোড়নের সূত্রও আরেকটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক কল্পনা বৈ ভিন্ন কিছু নয়।

ইভা আপুর এ কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। বিগ ব্যাং সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় বলতে গেলে সবই একদল বিশ্ব ধোঁকাবাজ তথাকথিত বিজ্ঞানীর কল্পনা আর আন্দাজ। এইসব গাঁজাখুরী কথা বলে তারা নিজেদের আর তাদের অন্ধ অনুসারীদের মনকে সান্তনা দেয় যে আমাদের কাছেও বিশ্ব সৃষ্টির একটা ব্যাখ্যা আছে। নইলে যে আবার আল্লাহকে মানতে হবে। সেটা মানলে যে আবার নারীদেরকে বিয়ে করা ছাড়া ভোগ করা যাবে না এবং ......... । তাই তারা বিগ ব্যাং, কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন ইত্যাদি কিছু মুখরোচক গাঁজাখুরি থিওরী বানিয়ে নিয়েছে। গাঁজাখুরিতার দিক থেকে এগুলো এখন বিবর্তনের সাথে পাল্লা দিচ্ছে।

এরা বিজ্ঞনী সমাজের কলংক। বিজ্ঞানের মত একটা সত্য খুঁজে পাওয়ার হাতিয়ারকে এরা কাল্পনিক কিচ্ছা কাহিনী দিয়ে একদম নষ্ট করে ফেলেছে।

এইজন্য প্রকৃত বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসতে হবে এইসব ধোঁকাবাজ বিজ্ঞানীদের হাত থেকে বিজ্ঞানকে রক্ষা করার জন্য ।

এখন দেখবেন ঐসব বিজ্ঞানীদের অন্ধ , গোঁড়া অনুসারীরা কিভাবে আমার উপর চেতে।

১২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬

ক্ষয়রোগ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সবাইকে, কষ্ট করে এত বড় একটা পোস্ট পড়ার জন্য। আসলে এখানে মতবাদগুলোই কেবল তুলে ধরা হয়েছে। ভাবনার দায়িত্ব যার যার নিজের।

১৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১৯

মুনতাসীর রোমান বলেছেন: অসম্ভব ভালো পোষ্ট । আশা করি আরও ইনফরম্যাটিভ পোষ্ট পাব । পোষ্ট প্রিয়তে ।

১৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:২০

মুনতাসীর রোমান বলেছেন: বলতে ভুলে গিয়েছিলাম । তথ্যসূত্রগুলো উল্লেখ করলে বেটার ছিল ।

১৫| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:২৮

মি.সিম্পলম্যান বলেছেন: যারা বিগব্যাংকে বিজ্ঞানীদের বানোয়াট গল্প বলছেন তাদের কসমোলজির কোন জ্ঞান নেই বলে মনে হচ্ছে।
বিংব্যাং একটা "থিওরি" ঠিক আছে কিন্তু কসমোলজির সব কিছু বিগব্যাং এর ইঙ্গিত দেয়।
এখন মানা না মানা নিজ নিজ ব্যাপার।

কুরআনে বিগব্যাং এর সত্যায়ন মেলে দেখে আমি এটাকে বিশ্বাস করি।
যেমনি জ্বিন, ফেরেস্তা, জান্নাত, জাহান্নামের অস্তিত্ব বিজ্ঞান প্রমান করুক না করুক আমি বিশ্বাস করি।
কিছু নেই থেকেও যে আল্লাহ সব কিছু তৈরি করতে পারেন সেটাও আমি বিশ্বাস করি।
আর আমাদের এই চিন্তা গুলো যে ভুলনা তা এই ১৪০০ বছরে বিধর্মী বিজ্ঞানীরাই পয়সা খরচ করে প্রমান দিয়ে আসছেন। :) ভবিষ্যতেও আরও দিবেন।
একটা মহাবিস্ফোরণ থেকে মহাবিশ্বে সব তৈরি এটা না মানার পেছনে তাদের যুক্তি হচ্ছে কিছুটা এরকম "কিছুই ছিল না' থেকে 'সব কিছু হয়েছে"
এই কথা বড় বড় আস্তিক নাস্তিক বিজ্ঞানী আজকাল বলছেন যদিও তারাও জানেন কিছু নাই থেকে কিছু হয় না। কিন্তু ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির ব্যখ্যা দিতে গিয়ে তারা এই কথা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর সেটা হচ্ছে মহাবিশ্বে এমন অনেক কিছু আছে যা বিশ্বাস করা ছাড়া প্রমান করা আপাতত সম্ভব না। এখন স্ট্রিং থিয়োরি নিয়ে গবেষণা চলছে.................. বিংব্যাং এখন পুরাতন বিষয়।

দেখা যাক বেঁচে থাকলে ২০২০ সালে জেমস ওয়েব আমাদের জন্য আর কি কি নিয়ে আসে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.