নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে ফিতনা সৃষ্টি করতে যেন একদল মানুষ পারমানেন্ট চাকরি নিয়েছেন। শা’বানে ফেরেশতারা যখন শয়তানকে বেড়ি বাঁধার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখন ফিতনা সৃষ্টি করতে একদল মানুষ পূর্ণশক্তি নিয়ে নামেন।
প্রথমে লাইলাতুল বারাআত নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে ইবাদত-বঞ্চিত করার চেষ্টা করেন। অতঃপর “যা-ই তাহাজ্জুদ তা-ই তারাবিহ”- বলে কাউকে তারাবিহ থেকে আর কাউকে তাহাজ্জুদ থেকে বঞ্চিত করার প্রচেষ্টা করে যান।
যখন এই পর্ব শেষ হয়, রামাযান শেষের দিকে ধাবিত হয়, পরবর্তী ফিতনা নিয়ে আগত আবির্ভূত হয়। এটা খুবই মারাত্মক। কারণ, অন্যান্য সব “হাক্কুল্লাহ” তথা আল্লাহর হক হলেও এই বিষয়টা “হাক্কুল্লাহ ইবাদ” তথা বান্দার হক- যা বিনষ্ট করলে বিনষ্টকারীকে যতক্ষণ না বান্দা ক্ষমা করবে, আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
ক’বছর থেকে বলা হচ্ছে- “সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা মুদ্রা দিয়ে দিলে হবে না। খাদ্যশস্য দিয়েই দিতে হবে।” খাদ্যশস্য নাকি মুদ্রা উত্তম- এই উত্তমতা নিয়ে মতানক্য থাকলেও বৈধতা নিয়ে কেউ কখনো কথা বলেননি। এবিষয়ে হঠাত করে বাংলাভাষী কিছু আলেম তল্পিতল্পা নিয়ে নেমেছেন! কেন?
যদি ধরে নিই, হাদিসের উপর সরাসরি আমল করতে হবে, এখানে মুজতাহিদগণের গবেষণা গ্রহণযোগ্য নয়। তাহলে প্রথমেই দুটো প্রশ্ন আসে ।
(ক) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি ধান/চাল দিয়ে ফিতরা দিয়েছেন বা দিতে বলেছেন?
(খ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিংবা সাহাবায়ে কিরাম কি কখনো খাদ্যশস্য খরিদ করে ফিতরা আদায় করেছেন?
দুটোতেই না বোধক উত্তর আসবে। কারণ, হাদিসে তো স্রেফ গম, খেজুর, পনির এবং কিসমিসের কথা বলা হয়েছে। তাহলে ধান/চাল দেয়ার বৈধতা এলো কোত্থেকে? নিশ্চয়ই ইজতিহাদ করা হয়েছে। এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিংবা সাহাবায়ে কিরাম তো খরিদ করে জব/ পনির/ খেজুর/ কিসমিস দেননি, তাহলে এখন যাদের কাছে এসব নেই, তারা কী করবে?
বিশেষত প্রবাসে বসবাসরত মুসলিমরা কী করবেন? এখানে কাকে দেবেন? স্বাভাবিকভাবে তারা দেশে টাকা পাঠাবে, কেউ টাকাটা নিয়ে খাদ্যশস্য কিনে অতঃপর গরীবের মধ্যে বন্টন করবে। এটা কি খাদ্যশস্য দেয়া হল, নাকি শস্যমূল্য?
অতএব, সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে বুঝাই যায়, হাদিসের সরল অনুবাদ করে “খাদ্যশস্য দিয়ে ফিতরা দিতেই হবে” এমন ফাতওয়া আসলেই বাস্তবতা বিবর্জিত।
এখানে খাদ্যশস্যের মূল্যমান মুদ্রা দিয়ে ফিতরা দেয়ার বৈধতায় কিছু দলিল দেয়া হলঃ
(1) হযরত যোহাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু ইসহাক থেকে শুনেছি, তিনি (আবু ইসহাক) বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরামকে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তাঁরা রামাযানে সাদকাতুল ফিতরা (ফিতরা) খাবারের মূল্যমান দিরহাম দিয়ে আদায় করতেন। (সনদ সহিহ)
[ইবনে আবি শায়বা, 2য় খন্ড, 398 পৃ: হাদিস নং 10371]
(2) বিখ্যাত তাবেঈ হাসান বসরি থেকে একটি "আসার"(آثار)উল্লেখ আছে। ওয়াকি' বর্ণনা করেন সুফইয়ান থেকে, তিনি হিশাম থেকে, হিশাম হযরত হাসান বসরি থেকে।
তিনি বলেন- "মুদ্রা দিয়ে ফিতরা দেয়াতে কোনো সমস্যা নেই"। [ইবনে আবি শায়বা, 2য় খন্ড, 398 পৃ: হাদিস নং 10370]
(3)ইসলামের পঞ্চম খলিফা খ্যাত উমর ইবনে আবদুল আজিজের একটি চিঠির কথাওয়াকি' বর্ণনা করেন কোররা থেকে। তিনি বলেন- আমাদের কাছে উমর ইবনে আবদুল আজিজের এই মর্মে একটি চিঠি আসলো যে, "প্রত্যেক মানুষের থেকে (ফিতরা) আধা সা' (খাদ্য) অথবা তার সমপরিমাণ মূল্য অর্ধেক দিরহাম"।[ইবনে আবি শায়বা, 2য় খন্ড, 398 পৃ: হাদিস নং 10369]
(4) এছাড়াও "মুদ্রা বা শস্যমূল্য দিয়ে ফিতরা দেয়া যাবে”- বিষয়ে দেখা যেতে পারে
•ফাতওয়ায়ে শামি 2/366পৃ:।
•আল জাওহারাতুন নাযিয়াহ195 পৃ:।
•বাদইয়ুস সানাঈ 2/969 পৃ:।
•আল মাবসুত লিসসারাখসি 3/113পৃ:।
আল্লাহ যেন আমাদেরকে নতুন-পুরাতন সকল ফিতনা থেকে হিফাযাত করেন।
©somewhere in net ltd.