নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের পাঠশালা

সঙ্গে সাহিত্যের সুবাস ...

ফাহমিদুল হক

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াই। ফিকশন ও নন-ফিকশন দুই ধরনের লেখাই লিখি। গল্প লিখি, প্রবন্ধ লিখি, অনুবাদ করি। 'যোগাযোগ' নামের একটি একাডেমিক পত্রিকা সম্পাদনা করি। আপাতত চলচ্চিত্র-অধ্যয়ন এলাকায় উচ্চতর গবেষণা করছি।

ফাহমিদুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা: অসম্পূর্ণ স্পেক্টেকল

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:৫৩

চার বছরে পাঁচটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে এম এ জলিল অনন্ত মৃতপ্রায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কারখানায় কিছুটা প্রাণসঞ্চার করেছেন। পাঁচটি চলচ্চিত্রেই তিনি প্রধান অভিনেতা বা নায়কের চরিত্রটি নিজের কাছেই রেখেছেন। কাহিনির আন্তর্জাতিক চেহারা, বিগ বাজেট, স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহার, মনোরম লোকেশন বাছাই ইত্যাদি কারণে তাঁর চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আবার আন্তর্জাতিক চেহারা দেওয়ার জন্য ইংরেজির প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, কাহিনির উদ্ভটত্ব বা তাঁর জড় অভিনয়রীতি অথবা নিজের কাজ নিয়ে মিডিয়ায় তাঁর বেপরোয়া আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ ইত্যাদি বিষয় কিছু মিশ্র আলোচনার জন্ম দেয় দর্শকদের মধ্যে। সর্বশেষ চলচ্চিত্র নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় তিনি কাহিনিকার ও পরিচালক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।



এই চলচ্চিত্রটির কাহিনিতে মূল চরিত্রের নামও অনন্ত, যে দেশের একজন সুপারস্টার ও ব্যবসায়ী। চলচ্চিত্রের কাহিনিতে অনন্তের শৈশব থেকে বর্তমান পর্যন্ত যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা তার নিজের জীবনের সঙ্গে প্রায় মিলে যায়। তাঁর নায়িকা মেঘলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন বর্ষা, যে মফস্বল থেকে রাজধানীতে এসেছে শোবিজে ক্যারিয়ার গড়তে, অনন্তর সাহায্য নিয়ে সে রকম একটি ক্যারিয়ার গড়তে সমর্থ হয়। বাস্তব জীবনেও অনন্ত প্রযোজিত খোঁজ: দি সার্চ চলচ্চিত্র দিয়েই বর্ষা নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং চলচ্চিত্রে বর্ষার চরিত্রটির নাম মূল নামের কাছাকাছি, মেঘলা। ফলে কোথাও উল্লেখ না থাকলেও, চলচ্চিত্রের কাহিনির মূল ভিত্তিটি তাঁদের দুজনের জন্য আত্মজৈবনিক। তবে কাহিনির মূল মোচড় আছে অনন্তর তথাকথিত নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও উচ্চাভিলাষী মেঘলার বারবার অনন্তকে ছেড়ে অন্য পুরুষের কাছে চলে যাওয়ার বৈপরীত্যের মধ্যে। অনন্তর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মেঘলাকে শোবিজে ব্রেক দেওয়া, ফ্ল্যাট-গাড়ি কিনে দেওয়া, মেঘলার দুই বোনকে ঢাকায় নিয়ে এসে স্কুল-কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়া, মেঘলার বাবা-মায়ের জন্য গ্রামেও একটি বাড়ি করে দেওয়া এবং সর্বোপরি মেঘলা বারবার তাকে ছেড়ে গেলেও, মেঘলা বিপদগ্রস্ত হলে তাকে উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়া। অন্যদিকে মফস্বল থেকে শোবিজ ক্যারিয়ারের জন্য রাজধানীতে এসে পদে পদে ঠকার পর মেঘলাকে অনন্তই প্রতিষ্ঠিত করে দেয়, আবাসন ও বিলাসব্যসনের ব্যবস্থা করে দেন, অথচ প্রতিষ্ঠিত হওয়ামাত্র মেঘলা অন্য পুরুষের সঙ্গে প্রেম শুরু করে, অধিক প্রচার ও খ্যাতির জন্য যে কারও ডাকে যেকোনো পার্টিতে হাজির হয় এবং মদ্যপান করে মাতলামি করে। যদিও ঠকার পরে মেঘলা অনন্তর কাছেই ফিরে আসে, কিন্তু তার আগে তাকে উপেক্ষা করে, অপমান করে। এই ছবির কাহিনিতে আগাগোড়া কোনো ভিলেন নেই, ভিলেন যদি কেউ থাকে তবে তা নায়িকা মেঘলাই।



এই চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যে দুর্বলতা রয়েছে, দুর্বলতা আছে সংলাপেও। আত্মজৈবনিকতার ছোঁয়া থাকলে কাহিনি যেমন বিশ্বস্ত হওয়ার কথা, তেমনটি হয়ে ওঠেনি। চরিত্রগুলো ঠিকমতো বিকশিত হয়নি। প্রথম পর্যায়ে যে মেঘলা অনন্তর প্রতি এতটা কৃতজ্ঞ-বিশ্বস্ত, পরবর্তী পর্যায়ে সে কী কারণে অনন্তকে বারবার ছেড়ে যায়, তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। একবার কেবল মেঘলা বলে যে তুমি তোমার কাজ নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাক, তাই আমি নানাজনের সঙ্গে সময় কাটাই। অন্যদিকে অনন্ত চরিত্রটির মধ্যে রয়েছে অজস্র গুণাবলি ও সদ্গুণের অসহ্য সমাবেশ। সে দেশের সেরা ১০ ধনীর একজন, দেশের শীর্ষস্থানীয় তারকা, মদ খায় না ও পার্টি করে না, অনেক নারীর আহ্বানে সাড়া দেয় না, মৃত বাবার উপদেশ ভুলে যায় না, গরিব-এতিম-অসহায় মানুষদের জন্য চ্যারিটি করে, সর্বোপরি প্রেমিকার কাছে বারবার প্রতারিত হওয়ার পর তাকেই সে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে আত্মহত্যায় উদ্যোগী হয়। অবশ্য আত্মহত্যার মুহূর্তে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের রূপধারী স্মাগলার বশির খানের ফোন পেয়ে তার হাত থেকে মেঘলাকে উদ্ধার করতে তাকে ব্যাংককে রওনা দিতে হয়। নিজের চরিত্রকে এ রকম মহামানবরূপে নির্মাণ করার লোভ সামলাতে না পারাটা খেয়াল করার মতো।



কাহিনিকার অনন্ত গতানুগতিক ও জনপ্রিয় সব অনুষঙ্গ ব্যবহার করে দর্শক ধরার চেষ্টা করেছেন। ফলে আলগা একটা আধুনিকতার ভঙ্গি থাকলেও, মতাদর্শিক দিক থেকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা একটি গতানুগতিক ছবি। এই গতানুগতিকতার মধ্যে রয়েছে আরোপিত মাতৃ-পিতৃভক্তি, মদ্যপানকে প্রচলিত নৈতিকতার বিচারে গর্হিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা, আল্লাহকে বারবার সাক্ষী মানা এবং নারীর অধস্তনতাকে সুনিশ্চিত করা। মেঘলাকে স্বাধীন একজন পেশাজীবী হিসেবে নির্মাণ করার পরিবর্তে লোভী-স্বেচ্ছাচারী হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে, যে বারবার ভুল করে অনন্তর কাছেই ফিরে আসে। বিপথগামী নায়িকা তার ভুলের জন্য নায়কের পা ধরে ক্ষমা চাইছে, ঢাকার চলচ্চিত্রের এ রকম গতানুগতিক ইমেজ এই ছবিতেও ব্যবহার করা হয়েছে।



এই ছবির চিত্রগ্রাহকের দায়িত্বে ছিলেন দেশের নামী সিনেমাটোগ্রাফার মাহফুজুর রহমান খান। ফলে ক্যামেরার মুভমেন্ট স্বাভাবিক ছিল, ঢাকাই ছবিতে যেমন থাকে, তেমন পীড়ন চোখে পড়ে না। এখানে ব্যবহূত গানগুলো মৌলিক, থ্রিলিং দৃশ্যগুলোসহ আবহ সংগীত উতরে যায়। জমজমাট ছবির জন্য ক্ষণে ক্ষণে ব্যবহূত সাউন্ড ইফেক্টকেও মানা যায়। পোস্ট-প্রডাকশন পর্যায়ে চেন্নাইয়ের স্টুডিওকে ভালোভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা লক্ষণীয়। '‘বুঝলি না তুই ...’' ত্রিমাত্রিক গানটিতে চিত্রায়িত বিধ্বস্ত এক নগরের পরিবেশটি ঢাকার চলচ্চিত্রে অভিনব। তবে বুক খামচে হূদয় বের করে আনার স্পেশাল ইফেক্টটিকে বাড়াবাড়ি বলতে হবে। পাত্র-পাত্রী নির্বাচন যথাযথ হয়েছে —রাজ্জাক, বর্ষা, মিশা সওদাগর, কাবিলা চরিত্রানুযায়ী যথাযথ ছিলেন। মেঘলার বোন ও প্রেমিক রাহুলের চরিত্রে দুজন সবচেয়ে স্বাভাবিক অভিনয় করেছেন। কাহিনির বিন্যাস অবিশ্বস্ত হলেও, ছোট ছোট চরিত্রের (যেমন, অনন্তর ভক্তরা) নির্বাচনও যথাযথ ছিল। অভিনয়ে কম নম্বর পাবেন অনন্ত নিজে। মারামারির বা উচ্চকিত অভিনয়ের দৃশ্যগুলোতে এক রকম মানিয়ে গেলেও, স্বাভাবিক বা রোমান্টিক দৃশ্যগুলোতে তাঁর এক্সপ্রেশনে জড়তা রয়েছে। প্রথম জীবনে হলিউডের শোয়ার্জনিগার যেমন সব পরিস্থিতিতে একই এক্সপ্রেশন দিতেন, অনন্তর একই সমস্যা থেকে গেছে। তাঁর কর্কশ কণ্ঠ নিয়েও অনেক কাজ করতে হবে।



বিগ বাজেটের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র মানেই একটা ‘স্পেক্ট্যাকল’— --জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনী। অনন্ত জলিলের চলচ্চিত্রে তার একটা ভঙ্গি বা প্রচেষ্টা আছে। কিন্তু মুক্তি দেওয়ার আগে তাঁর চলচ্চিত্রের থিম, কাহিনিবিন্যাস ও চিত্রায়ণের ক্ষেত্রে আরও পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে।



প্রথম প্রকাশ: আনন্দ, প্রথম আলো, ২২ আগস্ট, ২০১৩

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:০৫

রাহুল বলেছেন: সমালোচনা ভালো লাগলো।যদিও দেখিনাই তার পরো ডিপজল টাইপ থেকে কিছুটা ভিন্ন টাইপ বলে অনন্তকে একটু হলেও বাহবা দেয়া উচিত।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৩৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনার রিভিয়্যু ভালো লাগলো ।তবে শেষের দিকে আরনল্ডের সাথে জ্বলন্ত দুঃখিত অনন্ত জলিলের যে মিল দেখালেন-তা একেবারেই বেমানান মনে হলো ।
আমি ইউটিউবে নায়ক জলিলের কিছু ভিডিও ক্লিপ দেখেছি। দেখে মনে হলো-উনি বাংলা ছবিকে রীতিমতো বলাৎকারই করে চলেছেন।
সবচেয়ে খারাপ লাগে নিজের ভুলভাল ইংরেজীকে উনি নিজেই শুদ্ধ বলে স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা করেন।

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: তিনি তো নিজে টম ক্রুজের কথা বারবার বলেন। কিন্তু আমি শোয়ার্জনিগারের কথা বলেছি তিনি অত বড় স্টার হয়ে গেছেন, সেটা মনে করে নয়, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তার এক্সপ্রেশন ঠিকঠাক ফুটে ওঠে না, এটা বোঝাতে চেয়েছি। সব এক্সপ্রেশন একইরকম লাগে। এই সমস্যা শোয়ার্জনিগারের ছিল।

৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৪৩

মুনীর উদ্দীন শামীম বলেছেন: সামুতে বলদে গেলে লগইন করাই হয় না। মাঝে মাঝে ঢু মারি। সেটা করতে গিয়েই আপনার লেখাটি চোখে পড়লো। সে টানেই লগইন করা। অনেক দিন পর আপনার ব্লগ পড়লাম। ছবিটি দেখা হয় নি। ফলে সে আলোচনায় গেলাম না। তবে আপনার রিভিউ থেকে ধারণা করি নির্মাণের প্রযুক্তিগত বিষয়টি বাদ দিলে কাহিনী বাংলা চলচ্চিত্রের পুরনো কাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
ধন্যবাদ রিভিউর জন্য। অন্তত আপনার রিভিউর সুবাদে একটা আইডিয়া পা্ওয়া গেল।

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:২০

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আমারও কম আসা হয় এখানে।

৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৩২

আমিনুর রহমান বলেছেন:



চমৎকার গঠনমূলক সমালোচনা +++

৫| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৪

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :) :) :)

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: আত্নপ্রচারই যেন তার ব্রত! মুভির কাহিনীতেও আত্নপ্রচারই শুধু মোক্ষ !

হাস্যকর। পিকিউলিয়ার।

৭| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯

বাংলার হাসান বলেছেন: চমৎকার গঠনমূলক সমালোচনা +++

৮| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪৫

রুপ।ই বলেছেন: আমার কিন্তু মজা লেগেছে ।

৯| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩৯

ফাহমিদুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে মন্তব্যের জন্য।

১০| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৮

আম্মানসুরা বলেছেন: ভেবেছিলাম ছবিটি দেখব তবে এখন আর ইচ্ছা করছে না

১১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২৪

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: আসলে মানুষের জীবনে ভালবাসা আসে , এবং তা নিস্বার্থ ভালবাসা হয়েই আসে। কিন্তু কেন যে মেয়েরা তা বুঝে না? গল্পের মেয়েটির মত বাস্তব জীবনেও কি এমন?

১২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৬

ফারহান ফারদিন বলেছেন: প্রথম আলোর আনন্দ পাতে থেকে কপি পেস্ট পোস্ট।

১৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৬

ফারহান ফারদিন বলেছেন: প্রথম আলোর আনন্দ পাতা থেকে কপি পেস্ট পোস্ট।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৪১

ফাহমিদুল হক বলেছেন: এতো আমারই লেখা। কপি পেস্টে অসুবিধা কোথায়?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.