![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখতে ইচ্ছা হয় তাই লিখি । তবে চরম পর্যায়ের অলসতা আমার খুব কাছের বন্ধু ।
মানুষ সামাজিক জীব । আমরা সমাজে বসবাস করি । সেই হিসাবে আমরা সবাই মানুষ । মাঝের থেকে কিছু ব্যক্তি এই ' মানুষ ' শব্দটির পুর্বে অ উপসর্গ বসিয়ে দেয় ।
যা হোক । একটা গল্প বলি । সুমন নামের এক মেধাবী ছাত্রের গল্প । ছোট থেকেই সে মেধাবী । ক্লাসে সব সময়ই ১ম অথবা ২য় হয় । পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পায় । ষষ্ঠ শ্রেণীতে সে ক্যাডেটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় । এতটুকু বয়সে এত সাফল্যে সে ভীত হয়ে ওঠে । তার পরিবার তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে । সে কি পারবে তা পুরণ করতে ! সামান্য ব্যর্থতায় সে খুবই বিমর্ষ হয়ে যেত । ধীরে ধীরে ব্যর্থতা তাকে গ্রাস করে ফেলল । তার পরিবার তাকে ব্যর্থতার দলে ফেলে দিল । সে হতাশ হয়ে পড়ল । যে ছেলেটা কখনো মেয়েদের সামনে দিয়ে হাটার সাহস পেত না সেই ছেলে সিগারেট খেয়ে রীতিমত মেয়েদের সাথে অশ্লীল আচরণ করা শুরু করল । সমাজ তাকে উপাধি দিল " অমানুষ "
ফালতু একটা গল্প বললাম । ধুর ! আচ্ছা ঠিক আছে । এবার ভাল গল্প বলতেছি ।
ধরি রাজু নামের একটা ছেলে । নেশাগ্রস্থ । সিগারেটের নেশা নয় । কম্পিউটারের নেশা । যেখানে সে তার বইয়ের কভার পেজের ছবি মনে রাখতে পারে না সেখানে সে প্রোগ্রামিংয়ের ভাষায় সুদক্ষ । বোঝাই যাচ্ছে তার রেজাল্ট খুবই জঘন্য । ফলাফল : কম্পিউটার বন্ধ । ভাত খেতে বসে বাবার কিছু বকা । মায়ের কমতি আদর । সব মিলে কিছু রাগ , অভিমান । তারপর পরীক্ষার খাতায় তার উদগীরণ । তারপর মানসিক অত্যাচার । ছেলের রাত করে ঘরে ফেরা , বন্ধু , আড্ডা , সিগারেট , অমানুষ . . . . . . . . . . .
আরে আজব তো ! আচ্ছা বাদ দিন । আমি ভাল গল্প বলতে পারি না । আরেকটা বলার চেষ্টা করি । এটাই শেষ ।
ধরি সুপ্তি নামের একটা মেয়ে । দেখতে খুবই সুন্দরী । যে একবার দেখে সে না চেয়েও দ্বিতীয়বার তাকায় । কলেজে উঠল । নতুন জায়গা নতুন বন্ধু । বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেল । বিশ্বাসের ভারে নুয়ে পড়ল দেহ । কিছু মুহুর্ত পাগল করে দিল । তারপর ঘটনা আবছা প্রকাশ । পরিবার থেকে চাপ । সম্পর্কে বিচ্ছেদ । হুমকি । ফটোশপের সত্ ব্যবহার এবং কিছু স্থিরচিত্রের প্রচারণা । তারপর ? গৃহবন্দী । বাবা মায়ের বুক ছিড়ে ফেলা সাহিত্যচর্চা । জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এবং চিরনিদ্রা , কলঙ্ক , অমানুষ . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
পাঠক মাফ করবেন । সমাজের প্রতি আমি খুবই শঙ্কিত । এখানে সমাজ এমন একটি ওয়াশিং মেশিন যেখানে নোংরা কাপড় দিলে পরিস্কার হয় আর পরিস্কার কাপড় দিলে তাতে দাগ লেগে যায় ।
সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর অনেক পরিবারকে দেখেছি নিস্তবদ্ধ হয়ে থাকতে । যেন তারা মৃত । আমার জানামতে এটা দুর্বল ঈমানের পরিচয় । অন্য কেউ সন্তানের রেজাল্টের কথা জিজ্ঞেস করলে তাদের বক্তব্য এরুপ যে ভাগ্যে লেখা ছিল । আর ভেতরে ভেতরে তারা ভাবছিল একটু যদি শাসন করতে পারতাম তো রেজাল্ট ভাল হত । বলা বাহুল্য এখানে শাসন মানে গায়ে হাত তোলা অথবা কারাগার ।
মজার ব্যাপার হল অনেককে বুঝিয়েছি যে এই রেজাল্ট নিয়ে কি তুমি কবরে যাবে নাকি ? ফেরেশতারা জিগাবে যে রেজাল্ট কি ? ৪ পয়েন্ট পাইছ তুমি ! জাহান্নামে যাও ।
এসবের যদি কিছুই না হয় তবে কেন এই ৩ টাকার কাগজের লেখা নিয়ে কাউকে বিচার করা হয় ? পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারাটাই কি মেধা ? যদি তাই হয় তবে আমি বিয়ের পর সন্তান নিব না । আমি সব সহ্য করতে পারব কিন্তু নিজের ৫ বছর বয়সি ছেলের হাতে বই নামক অত্যাচার তুলে দিতে পারব না ।
২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১৬
নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: বাহ! এইভাবে অবশ্য পড়ালেখার প্রতি প্র্যাকটিকাল পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে চিন্তা করে দেখিনি।
আহমেদ জী এস ভাইয়ের মন্তব্যও যথেষ্ট চিন্তার দাবি করে বিশেষত তার "জ্ঞান মাত্রই তখোন ই বন্ধ্যা যখোন তা উপলব্ধির স্তরে উন্নীত না হয় । " - এই কথাটা।
লেখকের অসমাপ্ত গল্প পড়ে নিজের শিক্ষা জীবনের দুর্বিষহ কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
আমি ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলাম। ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। ছোটবেলা থেকেই খুব ভারি পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করতাম বলে ক্যাডেটে ভর্তি পরীক্ষায় মেডিকেলে বাদ পড়ে যাই। ক্লাস এইটেও আমি বৃত্তি পেয়েছিলাম। বাসার সবার একটাই ইচ্ছা ছিল আমি যেন ম্যাট্ট্রিকে স্ট্যান্ড করি।
স্ট্যান্ড করার জন্য কি ধরণের পড়ালেখা করতে হয় সেটা আমার মনে হয় না কাউকে বুঝিয়ে দেয়ার দরকার আছে। আমার নিজেরও মনে মনে সেটা নিয়ে একটা স্বপ্ন ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বাসার সবাই ব্যাপারটা নিয়ে প্রেশার দিতে লাগলো। এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই আমার মনে হতে লাগলো - জীবনে আমি কোন কিছুতে ব্যার্থ হইনি। কিন্তু এবার বোধহয় সেই সময়টা এসে গেল!
এই দুশ্চিন্তায় আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল।
আমি আর ম্যাট্রিকে স্ট্যান্ড করতে পারলাম না। ফলে এক তীব্র মানসিক বিষাদ আমাকে ঘিরে ধরল।
নটরডেম কলেজের পড়ালেখার তীব্র চাপে এক সময় পড়ালেখার প্রতিই আমার ঘৃণা জন্মে গেল। ভালো একটা রেজাল্ট করতে হবে এটা মাথায় রেখেই আমি তখন পড়ালেখা করেছি, কিছু জানার জন্য না।
এভাবেই ভালো ছাত্র থেকে আমি নিজের কাছে "নোবডি" হয়ে গেলাম।
যে সময়টুকু চলে গেছে সেটা নিয়ে ইদানিং খুব আফসোস হয়। কিন্তু যে সময় চলে গেছে সেটা নিয়ে আফসোস করে আর লাভ নেই। মূলত খুব কাছের বন্ধুদের অনুপ্রেরণাতেই আর নিজের মেধার জোরেই খারাপ সময়টা পার করে এসেছি। হতাশা আমাকে নষ্ট করে দিতে পারেনি। কিন্তু অমানুষ আমিও হয়ে যেতে পারতাম। কারণ সেই রাস্তার খুব কাছ দিয়ে আমি ঘুরে এসেছি।
আসলে পরিবারের ব্যাকআপ না থাকা বা ভুল বোঝার কারণে অনেকেই ছাত্র বয়সে অনেকেই ভুল পথে যায়। এক্ষেত্রে আমি মনে করি পড়ালেখা চাপিয়ে দিয়ে নয় বরং আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারাটাই উচিৎ।
লেখাটা ভালো লাগলো বলে নিজের অনেক কথা বললাম।
৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২১
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ছেলেমেয়েদেরকে মেরে পড়া মখস্ত করে ভাল রেজাল্ট আদায় করলেই মানুষ হয় না -- মানুষ হওয়ার জন্য তাদেরকে সময় দিতে হবে-- তারা কি চায় তা বুঝতে হবে -- তাদের সাথে গল্প করতে হবে -- গল্পের ছলে ইতিবাচক আচরণগুলো শিক্ষা দিতে হবে ---বিভিন্ন ইনফরমেশন তাদেরকে দিতে হবে -- বিভিন্ন বই উপহার দিন -- এমনভাবে বলুন যেন তারা অবসরে পড়তে উৎসাহী হয় -- তাদেরকে স্বজনদের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যান -- শুধুমাত্র কাড়ি কাড়ি গোল্ডেন এ প্লাস দিয়ে কোন লাভই হবে হবে --
৪| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০৫
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় বলেছেন: আহমেদ জি এস ভাই এবং লাইলি আপুর বক্তব্য খুবই ভাল লাগল । আহমেদ ভাই কিছু সমস্যা বলেছেন । একই সাথে লাইলি আপু কিছু সমাধান দিয়েছেন । আসলে শিক্ষা , জ্ঞান যাই বলি না কেন এটা নাম মাত্রই বোধগম্য বিষয় । এটাকে যখন উপরে যাওয়ার সিড়ি বানানো হয় , তখন ছেলে বুড়ো সবার পায়ের নিচেই পদদলিত হয় । আপনাদের চিন্তা প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ
৫| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০৮
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় বলেছেন: রায়ান ভাই আপনার জীবনের কথা শুনে অনুপ্রাণিত হলাম । ভাল লাগল । আপনাকেও ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:১৬
আহমেদ জী এস বলেছেন: মধ্যপদলোপী কর্মধারয় ,
প্রশ্ন তুলেছেন , কেন ৩ টাকার কাগজের লেখা নিয়ে কাউকে বিচার করা হয় ? পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারাটাই কি মেধা ?
পরে আপনার জন্যে উৎকন্ঠা বোধ করার মতো কিছু বলেছেন । আপনার অসমাপ্ত গল্পের পিঠাপিঠি আমিও এটা গল্প শোনাই -
আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় রহিম নামের ছেলেটিকে "শেখানো" হয়েছে মাত্র । জ্ঞান খুব একটা দেয়া হয়নি । কেন হয়নি তা একটা মাল্টি ফ্যাক্টরাল ব্যাপার । যা শেখা হয় তা-ই শিক্ষা । আর যা জানা যায় তা কে বলি "জ্ঞান" । আর যা বোঝা যায় তা হলো "প্রজ্ঞা" বা "বোধ"। তাই শেখা , জানা আর বোঝা সমার্থক নয় মোটেও ।
রহিম তার ছোট্টবেলায় মুখস্ত করে করে কিছু শিখেছে । একটু বড় হলে তার এই শেখার বিস্তৃতি ঘটেছে মাত্র । শেখার পরের স্তর হলো " জানা" । রহিমকে এই শেখানো কথাগুলি জানিয়ে , বুঝিয়ে দেয়ার কথা যাদের তারা সে বোঝানোর দায় এড়িয়ে গেছেন, শিক্ষাকে বেচাকেনার পণ্য বানানোর কারনে । তাই যারা জানবেন বা বুঝবেন তাদের সে আগ্রহ হারিয়ে যায় । রহিমও তাদের একজন । তারও আগ্রহ শুধু একখানা প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট যোগাড় করা । তাও আবার পারিবারিক চাপে পড়ে । সে এটা জানে যে , এই ৩ টাকার কাগজটি তার দখলে না থাকলে তাকে গর্দভ, অমানুষ আখ্যা পেতে হবে ।
অথচ রহিম নিজে নিজে দেখে, শিখে, বুঝে নিজের ভেতরে যে একটা আলাদা বোধের জগত তৈরী করে নিয়েছে তার কোনও মূল্য দেবেনা এই সমাজ । বইয়ের লেখাই তার বাইবেল, এটা না পড়লে তার নির্ঘাৎ নরকবাস ।
এই প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটাই কী প্রয়োজন আমাদের ?
এই সার্টিফিকেটধারীদের কোন জ্ঞানটি আমরা ব্যবহার করবো ?
এই আপাতঃ বোকা বোকা প্রশ্নটি খুব জোর বিশ্লেষনের দাবী রাখে । যেখানে আপনার হতাশার উত্তর পেয়ে যেতে পারেন ।
জ্ঞান মাত্রই তখোন ই বন্ধ্যা যখোন তা উপলব্ধির স্তরে উন্নীত না হয় । আমরা তথাকথিত শিক্ষিত বা অশিক্ষিত অভিভাবকেরা , মায় পাড়া-প্রতিবেশী সবাই শুধু ৩ টাকার কাগজের ওজন দেখি , কারো প্রজ্ঞা বা মেধার ওজন করিনা । সমস্যাটি এখানেই । যাকে নিয়ে এই টানাটানি সে নিজেও বুঝে উঠতে পারেনা, তার অক্ষমতাটি কোথায় ! তার ভতরের প্রতিভাটি নিয়ে সে কার কাছে যাবে ! যেহেতু রহিমের কোনও না কোনও গুন বা আগ্রহের প্রতি আমাদের উপলব্ধির ঘাটতি আছে যথেষ্ট মাত্রায় তাই রহিমকে আপাততঃ নির্বাসনে যেতেই হবে ।
অপরের থেকে জেনে, শিখে ; ব্যক্তিগত ভাব-চিন্তা-কর্ম- আচরন এইসবের মধ্যে দিয়ে আমরা যা জানতে পারি, বুঝি তাই-ই হলো আমাদের অভিজ্ঞতা । এই অভিজ্ঞতাই মূলত আমাদের কে পূর্ণজ্ঞান দিয়ে থাকে যা বোধি বা প্রজ্ঞায় পরিনত হয় । কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা তো অতি ধূর্ততা দেখে দেখে গড়া , প্রতিটি স্তরে পচে-গলে যাওয়া মানসিকতা থেকে শিখে শিখে তারই আদলে তৈরী । শুদ্ধতা, বোধি, ধীমানতা এখান কই ? তাই এই সমাজে রহিমের অভিভাবকেরাও চিরকাল অনভিজ্ঞ থেকেই যাবেন ।
এইসব রহিমদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভেবে আপনি আমি আক্ষেপ করেই যাবো এমনি করে দিনের পর দিন ।