নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীলকান্তমণি

যে আমাকে চিনে,তার কাছে আমি অনেক কিছু, যে আমাকে চিনে না,তার কাছে আমি কিছুই না।

নীলকান্তমণি › বিস্তারিত পোস্টঃ

“আমার স্কুলজীবন” (১মপর্ব)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০২

আমার বয়স যখন ৫ কি ৬ তখন স্কুলজীবনের সূচনা। বাসার কাছেই স্কুল। হেঁটে গেলে ৫ মিনিট লাগতো। স্কুলের নাম ‘রোকাইয়া কিনডার গারটেন’। আব্বুর সাথে প্রথম দিন ভর্তির জন্য গেলাম। প্রিন্সিপাল এর রুমে ঢুকলাম আব্বুর সাথে। সম্ভবত ভয় পাইছিলাম অনেক। কি না কি করে!আমার ভাই পড়তো তখন ঐ স্কুলেই ক্লাস ফাইভ এ। সেই সুবাদে আব্বুর সাথে প্রিন্সিপাল এর ভালোই পরিচয় ছিল।কি কথা বার্তা হইছিল কিছুই মনে নাই। প্রিন্সিপাল এর নাম রোকাইয়া। তার নামেই স্কুলের নাম। এইটা অবশ্য আরও অনেক পরে বুঝছিলাম। সেদিন আর ক্লাস করি নাই। যেহেতু ভাইয়া পড়তো তখন ঐ স্কুলে, তো আমাকে নিয়ে যাওয়া আবার ছুটির পর নিয়ে আসা ভাইয়ার উপর পড়লো। আমি তো ভয়েই অস্থির। স্কুলের নাম শুনলেই আমার চোখ জলে ভরপুর। স্কুলে না গেলে কি হয়?

স্কুল ছিল নার্সারি টু ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত। নার্সারি,কেজি আর ক্লাস ওয়ান এর ক্লাস হতো নীচতলায়,বাকি গুলা হতো দুই তিন তলায়। ক্লাসে যাওয়ার আগে একবার কানতাম আবার টিফিনের ব্রেক দিলে ভাইয়া যখন দেখা করতে আসতো তখন আবার কানতাম। বড় ভাইয়ের জন্য এখন মায়াই লাগে! ভাই পারতো না বুঝায়া আমার কান্দা বন্ধ করতে,পারতো না মাইর দিতে। আমার ক্লাসের বাকিসব ছেলেমেয়ে তাকায়া আমার তামাশা দেখত। নার্সারির ইংলিশ ক্লাস নিত বাবলি ম্যাডাম। বরই রসকষহীন টিচার। উনি আবার প্রিন্সিপাল এর ছোট বোন। উনার বিশেষত্ব পড়া না পারলে কান ধইরা দাঁড় করায় রাখানো,পুরা ক্লাস। যতদূর মনে পরে ক্লাসে অন্যমনস্ক হওয়ার কারণে একবার কান ধইরা দাঁড়ায় ছিলাম। বরই লজ্জাজনক ব্যাপার। এতগুলা অপরিচিত ছেলেমেয়ের সামনে কান ধইরা দাঁড়ায় থাকা- যার একদম লজ্জা নাই সেও মাটির সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করবে। যাই হোক- পুরা একবছর কান্না কাটি করিয়া, বড় ভাইরে পরিপূর্ণ ভাবে জ্বালাতন করিয়া ক্লাস নার্সারি সাফল্লের সাথে অতিক্রম করিলাম। বন্ধু বান্ধবীর সংখ্যা ০। বিদ্যালাভ এর ঘরও ০। নার্সারির পড়া আর কি... এ বি সি ডি ... অ আ ক খ... ১ ২ ৩ ৪ এর নামতা। বি এ টি= ব্যাট, সি এ টি=ক্যাট। উহা আমি অনেক আগেই শিক্ষালাভ করিয়াছিলাম।

কেজি তে ক্লাস যথারীতি শুরু করলাম।ভালো দিকের মধ্যে কান্নার পরিমান কিছু হ্রাস পাইলো। খারাপ দিক বলতে বড় ভাই প্রাইমারী পাশ দিয়া হাই স্কুল এ গেলো। আমি একা। প্রথম প্রথম ভাইয়াই ক্লাসে নিয়ে যাইতো।যারা ক্লাস নিত তারা ভাইয়ার চিনা পরিচিত। ভাইয়া একটু পরিচয় করায় দিলো ম্যাডাম দের সাথে। খাতির যত্ন ভালোই পাইলাম। প্রায়ই দেখা যাইত ম্যাডাম যে পড়া লিখতে দিতো,আমি তা সবার আগে লিখে ফেলতাম। এরপর আমার আর কাজ নাই,শুরু করতাম বাসায় যাওয়ার জন্য কান্না।এই জন্য ভাইয়া আমাকে ক্লাসে নিয়ে যাইত আর নিজে ক্লাসের বাইরে অপেক্ষা করতো।আধা ঘণ্টা-এক ঘণ্টার মধ্যে আমার পড়া-লিখা শেষ। সবাই পড়তো কিন্তু আমার ছুটি। আমি ভাইয়ার সাথে আইসা পড়তাম। মায়া নামে এক ম্যাডাম ছিল। আসলেই তার ব্যাপক মায়া।খুব সুন্দর পড়া বুঝাইতো।

এরপর ক্লাস ওয়ান।তখন একটু বড়,সব বুঝতে পারি।ভাইয়া ছাড়াও থাকা যায়,কান্না কাটির প্রয়োজন হয় না। বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধব হইলো ঐ সময়।তেমন কিছু মনে নাই ক্লাস ওয়ানের কথা।যতোটুক মনে আছে, একবার পরীক্ষার সময় বেশ মজার কাজ করছিলাম।কি পরীক্ষা ছিল মনে নাই। এক মেয়ের সিট পরছে আমার পাশে। ঐ মেয়ে একটা জিনিস পারতো না,আমার কাছে জিজ্ঞেস করছে,আমি বলছি। এরপর আমি একটা কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম,মেয়েটা নিজে লিখলেও আমাকে দেখায় নাই।তো একটু পর মেয়েটা আবার জিজ্ঞেস করছে কিছু একটা,আমি জিনিসটা পারতাম কিন্তু লিখি নাই তখনো।মেয়েকে বলছি-আমি লিখতেছি আমার খাতা দেখে লিখো। এরপর আমি জিনিসটা লিখলাম ঠিকই এবং মেয়েকেও দেখে লিখতে দিলাম।কিন্তু পুরাটাই ভুল। মেয়ে আর কিছু বুঝে নাই,পরীক্ষা দিয়ে চলে গেছে। আমার পরীক্ষা শেষ করে আমি আবার ঐ উত্তর ঠিক করে লিখছিলাম। রাবার-পেন্সিল ব্যাবহারের কত্ত সুবিধা ! এই গল্পটা আম্মুর কাছে করছিলাম। আম্মু ছেলের বুদ্ধিতে এতটাই অভিভূত হইছিল যে তৎকালীন যারে পাইছে তারেই এই গল্প শুনাইছে।

তারপর ক্লাস টু।নার্সারি,কেজি,ওয়ান এ রোল কত ছিল তা মনে নাই।এক থেকে দশের মধ্যে যে ছিলাম না,তা নিশ্চিত।ক্লাসে টু তে রোল হল তিন। ওয়ান এর বার্ষিক পরীক্ষা মনে হয় ভালোই দিছিলাম,যার ফলশ্রুতিতে রোল নম্বরের এই অগ্রগতি।ক্লাসে যা পড়তাম তাই,বাসায় আব্বু একটু দেখাইত,আম্মুও অনেক হেল্প করতো পড়ায়। আব্বুর কাছে ভয়ে পড়তে বসতাম না।আব্বুর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছেলেরে অঙ্কে ১০০ তে ১০০ পাওয়াবে।আব্বুর কাছে গেলে যে আমার কি করুন দশা হইতো তা আর নাই বা বললাম। তারপরও যাইতে হইত, পরীক্ষার আগে আগে। সেই অঙ্কের জন্য। বাকি সব বিষয়ের জন্য আম্মু একাই একশো তে দুইশো। সেই সময় থেকেই মনে হয় আমার মাথায় খুব ভালভাবে সেটআপ দেওয়া হইছিল সকল পরীক্ষায় প্রথম হইতে হবে।

ক্লাস থ্রি।আমার রোল নং এর এক ডিগ্রী অবনতি। রোল ৪।বেশ কিছু ভালো বন্ধু বান্ধব পাইলাম। এক সাথে বেশ ভালো সময় কাটাইতাম। এক বেঞ্চে বসা যাইত ৩ থেকে ৪ জন। যে আগে ক্লাসে যাইতাম সে বাকিদের জন্য একই বেঞ্চে জায়গা রাখতাম। প্রেম ভালবাসা কি জিনিস তখন মোটামুটি বুঝতাম। টিভি থাকলে আর ডিশ থাকলে যে কেওই বুঝবে। ক্লাসে অনিলা নামে এক মেয়ে ছিল, তারে বেশ ভালো লাগতো। এক শব্দের ডেফিনিশন কিউট। তার রোল ছিল ২। ভালো ছাত্রী হিসেবে সুনাম ছিল। ক্লাসমেট হিসেবে যতোটুক কথা বার্তা বলা দরকার অতোটুক হইত। বেশিও না, কমও না।

ক্লাস ফোর। রোল নং ৪ থেকে আবার ৩ এ আসলো।তখন একটা জিনিস বুঝতাম, রোল নং যত আগে বাবা-মা থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে তার দাম তত বেশি। রোল কত? এই প্রশ্ন টা যে ঐ সময় কত লক্ষবার শুনছি তার কোন ইয়ত্তা নাই।কি আর করা যাবে? জগতের নিয়মই এই। রোল ১,২,৩ ই ক্লাসের সেরা ছাত্র-ছাত্রী। ১ হইলো সেরাদের সেরা। আমারও সেই সেরাদের সেরা হইতে হবে।ক্লাস ফোর এর ইংরেজি ক্লাস নিত প্রিন্সিপাল ম্যাডাম স্বয়ং। উনার সেই ইংরেজি গ্রামার পড়ানো ভুলার মত না। অনেক ভালো পড়াইতেন। আর সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট হইতাম উনার হাতের লেখার জন্য। প্যাঁচানো হরফের ইংরেজি লেটার গুলা যখন একের পর এক বোর্ডে লিখতেন আমি অবাক বিস্ময়ে তাকায় থাকতাম। আমার লেখা তখন পর্যন্ত বাজেই ছিল। উনার হাতের লেখাতে অনুপ্রাণিত হইলাম, এমন যদি আমিও লিখতে পারতাম।তার উপর আব্বুর হাতের লেখাও প্যাঁচানো।আর আব্বু আমার সব সময় এরই আদর্শ। অবশেষে সে লেখা আয়ত্ত করলাম। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আমার লেখার পরিবর্তন দেখে অভিভূত।সবচেয়ে সুন্দর লেখার সার্টিফিকেট পেয়ে গেলাম উনার কাছে। নিজে বললেল-আমার লেখা নাকি উনার মতই। আমাকে আর পায় কে।আমার হাতের লেখার সবচেয়ে বড় সমালোচক আম্মু।আম্মুও অনেক খুশী। আমি তো আরও আগে খুশী। আর বলাই বাহুল্য সেই প্যাঁচানো লেখা তখন থেকেই আমার অস্থি-মজ্জা তে।

ক্লাস ফাইভে রোল হইলো ২। আফসোস একটুর জন্য সেরাদের সেরা হবার সুযোগ হারাইলাম। ৩-৪ নাম্বারের জন্য সুযোগ মিস।আব্বু আম্মু আরও ভালো করে পড়ার উপদেশ দিলো।ফোর এর বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে মনে হইছিল ফার্স্ট হইলেও হয়ে যাইতে পারি। না হওয়াতে কিছুটা হতাশ।আম্মু আরও বেশি হতাশ। আমাকে নিয়ে যে পরিমান খাটছে তাতে যে কেও বলবে পরীক্ষা বা পড়া আমার না,আম্মুর। ফাইভ এ বৃত্তি পরীক্ষাও আছে।আম্মু নতুন মিশন নিয়ে ঝাঁপায় পড়লো আবার।ফাইভ এ যে রোল ১ ছিল তার নাম তুলি।এই মেয়ের সাথে কেমন জানি একটা অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল।৩-৪ নম্বরের অপমান ভুলার মত না,বরই পেইনদায়ক। আর একটা ব্যাপার আমার খালি মনে হইত এই মেয়ে ফার্স্ট হওয়ার যোগ্য না।অন্য কেও হইলে ভালো হইত।অপমান অপমানের জায়গায় রাখলে মেয়ে খারাপ না। মিশুক,হেল্পফুল।সবচেয়ে যেটা অস্বস্তিকর এই মেয়ের হাসি দেখলে আমার কেমন জানি লাগতো। এই কেমন লাগাকে কি বলে আমি জানি না।ভাললাগা হইতে পারে।যেমন খাতির ছিল আমাদের মধ্যে আবার পরীক্ষায় নাম্বার নিয়ে রেষারেষিও ছিল। আমি একটায় কম পাইলে অন্যটায় বেশি পাইতাম ওরচেয়ে,এমন অবস্থা। আম্মু দেখলেন ছেলে পরীক্ষার আগে সবই পারে,কিন্তু খাতায় কিছু একটা তালগোল পাকায়। তাই আমারে এইবার মেনটাল ট্রিটমেন্ট দিলেন।যেমন – একটা ছেলে হয়ে মেয়ের কাছে পারো না? এইটা কেমন কথা? বাস্তবিকই এইসব কথায় আঘাতপ্রাপ্ত হইলাম। কথা চিরন্তন সত্য।একটা মেয়ে আমার চেয়ে নাম্বার বেশি পাবে,খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার আমার জন্য। ক্লাস ফাইভে যিনি আমার ক্লাসটিচার ছিলেন উনি অতিশয় ভদ্রমহিলা। উনার কথা খুব মনে পরে। অত্যধিক স্নেহ করতেন আমাকে।ক্লাস ফাইভের বার্ষিক পরীক্ষার রেসালট এর কথা খুব ভালো মনে আছে। ডিসেম্বরের সকাল। প্রচুর শীত। আমি আর আম্মু কাঁপতে কাঁপতে রেসালট নিতে গেলাম স্কুল এ। রেসালট বাইরের নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো। রেসালট দেওয়া থাকতো শুধু প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অধিকারকারীদের জন্য। বাকিদের টা ক্লাস টিচার এর কাছে থাকতো।ক্লাস ফাইভ এর রেসালট সবার উপরেই দেওয়া ছিল। নামটা প্রথমেই ছিল ফাইরুজ আহমেদ। নিজের নাম দেখে এত খুশী আমি জীবনেও হই নাই।আমার মায়ের কথা বাদই দিলাম। রোকাইয়া কিনডার গারটেনে আমার স্কুল জীবনের ইতি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.