নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়সাল হিমু

ফয়সাল হিমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীরার সুনীল, সুনীলের নীরা ♥

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৭

সুনীল, এই একটা মানুষ সম্পর্কে কিছু
লিখতে গেলেই সব অগোছালো
এলোমেলো হয়ে যায়। সে নিজেই তো
আমার আজন্ম কৈশোরের দিনগুলো,
যৌবনের প্রারম্ভকালকে লন্ডভন্ড করে
দিয়েছিল।

সুনীলের জীবনে নারীর প্রভাব কম নয়।
বিবাহপূর্বকালে দুইজন রক্তমাংসের
মানবীর আগমন হয়েছিল তার জীবনে।
এক নাম না জানা বঙ্গীয় কিশোরী।
আর একজন ফরাসী তরুণী মার্গারেট।

প্রথম জন সম্পর্কে সুনীল তেমন কিছুই
বলেনি। কিন্তু মার্গারেট কে নিয়ে
কয়েকটা বই লিখে ফেলেছে। বইয়ের
ভাষ্যের চেয়ে বেশি লেখার সাধ্য
আমার নেই।

স্বাতী কে বিয়ের পর সুনীলের জীবনে
অন্য নারীর আগমন হয়নি, তা কিন্ত নয়।
অথচ, বিয়ের পূর্বেকার নারীদের কথা
যেমন অকপটে স্বীকার করেছ তার
লেখায়, পরবর্তী কারো কথা তার
লেখায় পাওয়া যায়না। হয়তো ইচ্ছে
করেই এড়িয়ে গেছে। কবিতা, গল্প,
উপন্যাসে সুনীল তার নায়িকাদের জন্য
যতটা নিবেদিত, বাস্তবে তেমন না।
নারীদের প্রতি তার অনাকাঙ্ক্ষিত
উচ্ছাস কখনোই প্রকাশ করেনি।
এ যেনো বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করার পর
ব্যর্থ হৃদয়ের দগদগে ঘাঁয়ের মতো, তা
নিয়েই বেচেঁ থাকতে হবে।
দেশভাগের রক্তাক্ত ক্ষত নিয়ে সুনীল
যে উদ্বাস্তু জীবন বেচেঁছিল, তা তাকে
প্রতিনিয়ত বেচেঁ থাকার শক্তি
যুগিয়েছিল নিশ্চিত।
সুনীল বলতো, তিনি নিজের জীবন
কারও জন্য নষ্ট করেননি। জীবন
দুর্মূল্য, এই শিক্ষা নাকি তিনি তাঁর
উদ্বাস্তু জীবন থেকেই পেয়েছিলেন।

কবিতায় সুনীলের একজনই রানী ছিল।
নীরা।
এই নীরা শব্দটা নারী এবং রানী কে
ওলট পালট করে সাজানো।
১৯৬২ সালে মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনে
রানী তো দূরের কথা, নারীর সংস্পর্শে
থাকাটাই বিরল ঘটনা।

সুনীল শুধুমাত্র কবিতার টানে সদ্য
ইউরোপ আমেরিকা ফেরত টগবগে যুবক।
তিরিশের নিচের এক কেরানি তার আবদ্ধ
জীবনের হতাশা, ক্লেদ,
ভালোবাসাহীনতাকে মুছে দিতে চায়
কবিতার আঙিনায়।
ঠিক তখনই এক মন্থর বিকেলে নীরার
সঙ্গে বাসস্টপে দেখা হয়ে গেল।
নীরাকে নিয়ে লেখা প্রথম কবিতা।
'হটাৎ নীরার জন্য'

"বাসস্টপে দেখা হল তিন মিনিট, অথচ
তোমায় কাল স্বপ্নে
বহুক্ষণ দেখেছি ছুরির মতো বিঁধে
থাকতে সিন্ধুপারে--"

নীরা সুনীলের একান্ত প্রেয়সী। তাকে
জোর করে অধিকার করা যায়না। নীরার
অসুখ হলে কোলকাতায় গোলমাল লেগে
যায়। নীরার মন ভালো না থাকলে সমগ্র
আকাশ বিষণ্ণতায় ঢেকে যায়।
নীরা সুনীলকে লোভহীন পুরুষে উন্নীত
করে। সে বলেছে,

‘যেই দরজা খুললে আমি জন্তু
থেকে মানুষ হলাম’।

‘তুমি নীরা,
তুমিই আমার ব্যক্তিগত পাপমুক্তি’।

‘এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ/
আমি কি এ হাতে কোনো পাপ
করতে পারি?... আমি ডান হাত
তুলি, পরুষ পাঞ্জার দিকে/
মনে মনে বলি,/যোগ্য হও, যোগ্য
হয়ে ওঠো।"

নীরার কবিতাগুচ্ছ গুলো এতটাই সহজ
সাবলীল ভাষায় লেখা যেন নির্লোভ
পুরুষের নারীর প্রতি আত্মস্বীকারত্বি।
নীরাকে দেখা যায় সারা বছরে মাত্র
দু'দিন। দোল উৎসবে আর সরস্বতী পূজায়।
তবে সিঁড়িটা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে
চিরকাল।

"নীরা তুমি হেসে ওঠো/
তোমার বিমূর্ত হাসিতে সিঁড়ি হয়ে যায়
জলপ্রপাতের কিনারা"

নীরা হয়তো বনলতার মতো ঐতিহাসিক
না, তবে সুনীল দীর্ঘ ৫০ বছর নীরাকে
সযত্নে আগলে রেখেছিল আমৃত্যুকাল।
নীরাকে দেখার চোখটি সবসময়ই ছিল
তিরিশের সীমানা অনতিক্রম্য সুনীলের।
মৃত্যুর পূর্বে ২০১২ সালেও নীরা উঠে
এসেছে কবিতায়,

"কে যেন নীরার হাতে/ একগুচ্ছ ফুল
দিয়ে গেল...’'

সুনীল যতদিন বেচেঁছিল, নীরার
উপস্থিতি ছিল সগৌরবে উজ্জল। এখন
নীরা স্তিমিত মলিন।
সুনীলের জন্য কি নীরার কষ্ট হয়?
নীরার চোখের জল,
চোখের অনেক নিচে কি করে টলমল?
নীরার হয়তো সুনীলকে খুব বলতে ইচ্ছে
করে,

তোমার দুঃখের সঙ্গে
আমার দুঃখ মিশিয়ে আদর করি...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.