নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়সাল হিমু

ফয়সাল হিমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরবি-বাংলা দ্বন্দ্ব

০৫ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:১৯

ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় আমাদের ওপর জোর করে একটা নতুন সাবজেক্ট চালু করে দেওয়া হলো।
পবিত্র আরবি ভাষা শিক্ষা।

আমি জীবনে প্রথম পরীক্ষায় নকল করি ওই বছর। এবং ওই পবিত্র সাবজেক্টে।
শুধু আমি না, ক্লাসের ফাস্ট বয় থেকে শুরু করে লাস্ট বয় তখন নকল করতে বাধ্য হয়েছিলো।
যে গুটিকয়েকজন নকল করেনি, তারা হয় ফেল্টু মেরেছিলো অথবা কোনোরকম টেনেটুনে পাশ করে গিয়েছলো।

আরবি কবিতা, শব্দার্থ, সুরা মুখস্থ করার চেয়ে নকলের উপরেই সবার আস্থা ছিলো বেশি। ক্লাসে কেউ পড়া পারেনা, কিন্তু পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়ার রহস্যটা স্যারদের মাথাতেও নাড়া দিল। তদন্ত কমিটি গঠন করে ছাত্রদের আটকানোর চেষ্টা করা হল।

কিন্তু ছাত্ররা তো নাছোড়বান্দা, স্যারদের চেয়ে ২ ডিগ্রি এগিয়ে। টয়লেটে গিয়ে আরবি বইয়ের টুকরো কাগজ নিয়ে এসে টুকলি চালাতো অবিরত। তাছাড়া টেবিলে, দেয়ালে পেন্সিল দিয়ে আরবি লিখে লিখে স্কুলের ক্লাসরুমগুলো ভরে গিয়েছিলো। স্যাররা কঠোরভাবে আরবি শিখাতে চাইলেও আমাদের মনযোগের অভাবে আরবি বইটা তেমন মার্কেট পাচ্ছিলো না।

ক্লাস সেভেনেও সেই বইয়ের আরেকটা ভার্সন চালু রাখা হলো।
স্যাররা আরও কঠোরতর হলেও আমরা পড়লাম মহা বিপাকে। সন্দেহ হলেই সিট চেঞ্জ করে দেয়, পকেট চেক করে। এক ছেলে তাই আন্ডারওয়ারের ভিতরে নকল নিয়ে আসতো।

মাদ্রাসার দিকে তাকানো যাক। তারাতো ছেলেবেলা থেকেই আরবি পড়ে আসছে। তবু সেখানকার পোলাপানও আরবিকে পবিত্র ভাষা বলে একদমই ছাড় দেয়না। তারাও কমবেশি নকল করে। পাঞ্জাবিওয়ালাও করে, বুরকাওয়ালিও করে।

বাংলা ভাষা তার স্বাভাবিক নিয়মেই চলে। যখনই জোর করা হয়েছে, বাংলা তার নিস্তেজ ভাব থেকে জেগে উঠেছে।
উর্দু যখন চাপিয়ে দিলো, তখন ভাষা আন্দোলন তার চূড়ান্ত প্রতিফলন নিয়ে এলো একুশে ফেব্রুয়ারিতে।
১৯৯৯ সালেও বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেলো, আর সেই পবিত্র ভাষা স্কুলে ফ্লপ খেলো। সাবজেক্টটা বাতিল করে দেওয়া হলো।
এখন আবার সেই পুরাতন গোষ্ঠীর নতুন প্রতিনিধিরা ভিনদেশি ভাষার উত্থানের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
৫২ বা ৯৯ এর মতো জাগরণের একটা জোয়ার না এলে বাংলা ভাষায় ভাটার টান পড়বে। কারণ, যারা ৫২ আর ৯৯ এ বাংলার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছিল, আজকে তারাই অন্য ভাষাকে প্রতিষ্ঠার আয়োজন করছে।

বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে নতুন একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে আরবি ভাষায় হাবিজাবি কিছু একটা লিখে রাখলে, অন্তত পবিত্র ভাষা ভেবে পুরুষরা সেখানে প্রসাব করবেনা।
দারুন আইডিয়া! তাইনা?
বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে বাংলা শব্দের পরিবর্তে বিদেশি ভাষায় এমন একটা কিছু লেখা থাকবে, যা আমরা বেশিরভাগ মানুষ পড়তেই পারিনা, বোঝাতো অনেক পরের কথা। এজন্যই তো আমাদের পূর্বপুরুষেরা নিজের জীবন দিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গিয়েছিলো।
তাইনা?

নিজের মাতৃভাষায় কিছু লেখা থাকলে, যে সম্মান করতে জানেনা বা মানেনা, সে একটা বিদেশি ভাষা, যা সে বুঝেই না, সেটাকে সম্মানে নুয়ে পড়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

আরবিতে কী খারাপ শব্দ নেই? গালাগালি নেই?
অহরহ চটিগল্প আর নোংড়ামি নেই?
আরবি লেখা টাকায় কী ঘুষ আদানপ্রদান হয়না?
হয়।
ভাষার তো কোনো দোষ নাই।
আরবি তার আরবদেশে চলুক।
বাংলা তার বাংলাদেশে চলুক।
সরকারিভাবে কেনো তাকে আমদানির এই ঘৃণ্য প্রক্রিয়া?

আর যদি চালু করতেই হয়, তাহলে ভালোভাবেই শুরু করা হোক।
আসুন বাংলা ভাষার সাথে সাথে আরবিতে সবকিছু লেখা হোক।
ঘরের দরজায় আরবি লেখা থাকলে চুরি হবে না।
টাকায় আরবি লেখার প্রচলন শুরু হলে, সেই টাকায় আর কোনো দুর্নীতি বা খারাপ কাজ হবে না।
মেয়েদের জামায় বা গায়ে আরবি দুয়েকটা শব্দ লিখে চলাফেরা করলে রেপ তো দূরের কথা, তাদের গায়ে কেউ হাতও দিবে না।

রাস্তাঘাটে প্রসাব বন্ধের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছোট্ট একটা কাজ দিয়ে আরবির প্রচারণা শুরু হোক। ধীরে ধীরে আরবির বিস্তার বাড়বে, বাংলা বিলুপ্ত হবে।
ভাষার বিবর্তন তো এভাবেই হয়।
তাইনা?

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:৫৭

মৈত্রী বলেছেন: আল আদাবুল হালী


২| ০৫ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০

রাউল।। বলেছেন: হিন্দু সনাতনপন্থীদের ধর্মীয় ভাষা সংস্কৃত

৩| ০৬ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:১০

ফয়সাল হিমু বলেছেন: ধর্ম হোক যথাতথা, কর্ম হোক ভালো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.