![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুনীলকে আমার অনেক কথা বলার ছিলো। বলা হয়নি, তাই তাকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু লিখতে বসলে শব্দ থেমে যায়। কিছুই লিখতে পারিনা।
অথচ সুনীলের প্রকাশিত প্রায় সব লেখাই পড়া হয়ে গেছে অনেক আগে। কত দিন রাত্রি, কত একাকী মুহূর্ত সুনীল ছিলো আমার একান্ত সঙ্গী। কতবার তার লেখার সমুদ্রে ডুবেছি-ভেসেছি অপূর্ব আনন্দ-বেদনায়, সুখ-দুঃখে, উচ্ছলতায়-অশ্রুতে তার হিসাবও তো রাখিনি। তার লেখায় এক সহজবোধ্য সরলতা আছে, যা সহজেই আপন করে নেয়। তাছাড়া লেখার ভেতর হটাৎ কিছু লাইন থাকে, যা সহজেই মনে গেঁথে যায়।
শক্তি একটা কথা প্রায়ই বলতেন, "তা’ও রক্ষে, সুনীল মোটে একবেলা লেখে, দু’বেলা লিখলে সে যে কী দাঁড়াত!"
তা শুনে সুনীল ওঁর ট্রেডমার্ক মার্কা হাসিটা হেসে বলতো, "তা হলে মদটা খাওয়া হত কখন?"
সুনীল তার লেখার যে বিশাল সম্ভার রেখে গেছে, তা অনেক আগেই আয়তনে ছাপিয়ে গিয়েছে রবীন্দ্র রচনাবলীকেও।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “সবাই তো জানে, সে কত বড় মাপের সাহিত্যিক ছিল। কিন্তু কত বড় মাপের মানুষ সে ছিল তা তো সবাই জানবে না। এত কোমল, এত আবেগপ্রবণ মানুষ, এতো নম্র ভদ্রলোক সচরাচর দেখা যায় না। ও যে কতজনকে গোপনে সাহায্য করেছিল, তা আমি জানি।”
সুনীলের বিভিন্ন লেখায় তার নিজের জীবনের ছাপ পাওয়া যায়। তবু সবটা কী আর পাওয়া যায়? "অর্ধেক জীবন" তার আত্মজীবনীর মধ্যবয়সে এসে থেমে গেলেও, অনেক ফাঁক থেকে গেছে। তাই তো সে শুরুতেই হ্যামলেটের লাইন জুড়ে দিয়েছে,
"throw away worser part of it and live the purer with the other half."
সুনীল লেখক শ্রীপান্থর কাছে বলেছিলো, এত প্রেমের দৃশ্য এঁকেছি, কিন্তু শরীরের সম্পর্ক দেখাতে গেলে কলম আটকে যায়। কেন? না, নিজের শরীরটাই কীরকম অস্থির হয়ে ওঠে। ওটা সাহেবরাই পারে। যেটা আড়ালের দিক সেটা আড়ালে রাখাটাই তো ভাল।”
তার খুবই প্রিয় ছিল বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘অটোবায়োগ্রফি’, কিন্তু স্বীকার করত, জীবনের সব ভাললাগা, মন্দলাগা, জয়-পরাজয়, প্রেম-ঘৃণা, উচ্চতা-নীচতা, দোষ-গুণ, মহত্ত্ব-ক্ষুদ্রতা, ওভাবে বলা অসম্ভব কঠিন, প্রায় অসম্ভব।
সুনীলের ইচ্ছা ছিলো, মানিকবাবুর ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র মতো একটা উপন্যাস লিখে ফেলতে পারলে সব লেখা বন্ধ করে দিবে।
কত উপন্যাস লেখা হয়ে গেলো তবু আক্ষেপ তার গেলোনা, সেই মনের মতন উপন্যাসটা না লেখাই থেকে গেলো!
সুনীলের প্রথম প্রেম ছিলো কবিতা।
সুনীল একজীবনে এতো এতো কবিতা লিখেছে শুধু একটা কবিতা লেখার জন্যই। সেই কবিতাটা লেখা হয়েছিলো কী না, তা আর জানা গেলো না!
প্রথম কাব্যগ্রন্থ "একা এবং কয়েকজন" লিখলেও সুনীলের বিষণ্ণ সুন্দর কবিতাগুলোর যাত্রা শুরু "আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি" থেকে। "একা এবং কয়েকজন" নামটা সুনীলের মায়ের খুব পছন্দের। এই নামে তার একটা উপন্যাসও আছে এই উপমহাদেশের বিপ্লবীদের নিয়ে। সুনীলের শান্তিনিকেতনের বাড়িটার নামও "একা এবং কয়েকজন"।
কফি হাউসের আড্ডা গানে একজন নিখিলেশ আছে। সুনীলেরও একজন কবিতার বন্ধু আছে নিখিলেশ। তাকে নিয়ে কখনো বলছে,
"আমি ও নিখিলেশ, অর্থাৎ নিখিলেশ ও আমি, অর্থাৎ আমরা চারজন।"
আবার বলছে,
"নিখিলেশ, তোর সঙ্গে জীবন বদল করে কোনো লাভ হলো না আমার।"
নিখিলেশ হয়তো সুনীলের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। আর তার কবিতার একান্ত প্রেয়সী নীরার কথা তো সবাই জানে!
সুনীল নিজে উদ্বাস্তু জীবন কাটিয়েছে। তবু সে সবসময়ই আশাবাদীদদের কাতারে ছিলো। সুনীল তার মৃত্যুর আগের জন্মদিনে একটা কথা বলেছিলো,
“মরে যাওয়ার আগে আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা। পৃথিবীজুড়ে এই হানাহানি, রক্তপাত, কুৎসিত ধ্বংসলীলা বন্ধ হোক।”
আজন্ম রোমান্টিক এই মানুষটার ভালোবাসার জন্য কাঙালপনা আর গেল না!
"তবুও আমার জন্ম কবচ, ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি
আমার কোনো ভয় হয় না
আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না।।"
অবলীলায় লিখতে পারে মনের কথা,
"আমি নাস্তিকের গলায় চিৎকার করে নিজের ছায়াকে ডাকি"
অথবা,
"বিষণ্ণ আলোয় এই বাংলাদেশ
এ আমারই সাড়ে তিন হাত জমি
যদি নির্বাসন দাও,
আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াব
আমি বিষপান করে মরে যাব।"
একবার যে কবিতা ভালোবেসেছে, তার আর নিস্তার নেই। শুধু কবিতার জন্য জীবনযাপন, আদিগন্ত পৃথিবী ভ্রমণ।
"শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।"
আবার বলেছে,
"এক এক সময় মনে হয়, বেঁচে থেকে আর লাভ নেই
এক এক সময় মনে হয়
পৃথিবীটাকে দেখে যাবো শেষ পর্যন্ত...
সন্ধ্যের আকাশ কী অকপট,
বাতাসে কোনো মিথ্যে নেই,
তখন খুব আস্তে, ফিসফিস করে, প্রায়
নিজেরই কানে-কানে বলি,
একটা মানুষ জন্ম পাওয়া গেল, নেহাৎ অ-জটিল কাটলো না!"
(ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ ব্যতীত লেখকদের মন্তব্য ও কবিতার অংশ সংগৃহীত)
২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৩
ফয়সাল হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৯
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লিখেছেন প্রিয় কবিকে নিয়ে| ওর উপন্যাসগুলো তো গিলি একপ্রকার|
অবগাহন আর ডুব একই| দুটো একত্রে ব্যবহার বাহুল্য| অবগাহনে ডুব তাই হবে না|
৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৪
ফয়সাল হিমু বলেছেন: আসলেই তো। ঠিক বলেছেন। তার উপন্যাসের ভাষা একটা স্রোতের মতো। সেখানে অবিরাম ভেসে চলা যায় আনন্দে।
কবিতাগুলোও আত্মকথন। যেনো বলেই চলেছে,,, বলেই চলেছে..
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৮
সাদ্দাম হোসেন বলেছেন: ভালো লাগলো