নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে খুঁজতে তুমি কোথায় যেতে চাও? আমি বৃষ্টির মাঠে নগ্ন একা ভিজি ....

ফয়সাল হিমু

আমাকে খুঁজতে তুমি কোথায় যেতে চাও? আমি বৃষ্টির মাঠে নগ্ন একা ভিজি....

ফয়সাল হিমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেরা ...

০৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:২৯

..... শেষ বিকেলের নরম আলো ঝিকমিক করছিল ক্যাপ্টেন টনি স্যামুয়েলসেনের ব্যাজ এ। ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার ২৫০ মিটার লম্বা বিশাল কমার্শিয়াল ফ্রেইটার এমভি কলম্বাসের ব্রিজে দাঁড়িয়ে কফির মগে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছিলেন তিনি। শক্তপোক্ত নরওয়েজিয়ান লোকটার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, আর কয়েক সপ্তাহ পরই অবসর নিচ্ছেন। এটাই ক্যাপ্টেন হিসেবে স্যামুয়েলসেনের শেষ ভয়েজ। নাবিক হিসেবে বর্ণাঢ্য জীবন কাটিয়েছেন। ডেক ক্যাডেট হিসেবে জীবন শুরু করে ধাপে ধাপে ক্যাপ্টেন হয়েছেন। জীবনের মহামুল্যবান ত্রিশটি বছর সাগরে কেটে গেছে। পোড় খাওয়া লোক, দেখলেই বোঝা যায়।

সাগরের এক ধরনের নেশা আছে। যৌবনে এই নেশায় আকৃষ্ট হয়েই জাহাজে চাকরি নিয়েছিলেন। ইদানিং তার খুব ক্লান্ত লাগে। বন্দরে বন্দরে ঘুরতে মন টানে না। নরওয়ের দক্ষিণে ছোট্ট শহর গ্রিমস্টাডে ফেলে আসা পরিবারের কথা মনে পরে। স্ত্রী লিন্ডি, একমাত্র মেয়ে লিনা আর মাত্র হাঁটতে শেখা নাতনী এমিলি - তার শেষ জীবনের ভালবাসা।

- তোমাকে ভালবেসে আমি কিছুই দিতে পারিনি লিন্ডি ...। শেষবার ছুটিতে যখন বাড়ি গিয়েছিলেন, বলেছিলেন স্যামুয়েলসেন।
- পঁচিশ বছরের বিবাহিত জীবনের বেশিরভাগটাই তুমি আমাকে মিস করে কাটিয়েছ টনি। আমার কাছে এটা কম কিছু নয়। হেসে বলেছিল লিন্ডি।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ফার্স্ট মেট তার দায়িত্ব বুঝে নিতে এসেছে।
- হ্যালো রবিন, স্টারবোর্ডে কি অবস্থা? হেসে ফার্স্ট মেটকে বললেন স্যামুয়েলসেন।
- হ্যালো স্যার! ওদিকটাতে সব গোছানো আছে। কয়েকজন এশিয়ান ডেক ক্যাডেট গিটার বাজিয়ে এরই মধ্যে হেরে গলায় গান জুড়েছে। সারাদিন পর ওরা এতো এনার্জি কোত্থেকে পায় ঈশ্বর জানেন।
- ওরা তরুন, রবিন। ওদের রক্তই আলাদা। ওরা আমাদের মত বুড়িয়ে যায়নি। দেখি আজ একবার ওদিকে যাব।
- আমি কি আসব স্যার?
- না না। আমি শুধু একটু ঘুরে আসব।

মেইন ডেক থেকে স্টারবোর্ড প্রায় দুশো মিটার। ইদানিং অনেকটা দূর মনে হয়। ধীরে ধীরে যাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন। হঠাৎ টানা টানা সুরের একটি গান তাঁকে থামিয়ে দিল। গানের কথা বোঝা যাচ্ছেনা, গায়কের গলাও আহামরি ভাল না, কিন্তু কি ভীষণ আকুতি ঝরে পরছে সুর থেকে! আহা! কি অনির্বচনীয় বিষাদ! যেকোনো মহান সঙ্গীতের কি ভীষণ আকৃষ্ট করার ক্ষমতা!

গান গাইছিল ডেক ক্যাডেট আনিস। বাংলাদেশের ছেলে। ওকে রিক্রুট করার একমাত্র কারন ওই দেশের মানুষ পিপড়াদের মত কর্মঠ। এও ব্যাতিক্রম নয়। সন্ধ্যায় সমবয়েসি আরও কয়েকজন ক্যাডেটকে নিয়ে ওই গান গায়। মাঝে মাঝে রাম খেয়ে পাগলামি করে। নাবিকদের জীবনে এসব স্বাভাবিক। ডিউটির পর জুনিয়রদের পাগলামি বানিজ্যিক জাহাজে প্রশ্রয়ের চোখেই দেখা হয়। এরা যে অমানুষিক পরিশ্রম করে তাতে এটুকু প্রশ্রয় না দিয়ে চলে না।

- হ্যালো ক্যাডেট! কি গান গাচ্ছিলে?
পেছনে স্বয়ং ক্যাপ্টেনকে দেখে ধরমর করে উঠে দাঁড়ায় আনিস।
- সরি স্যার। এই এমনিতেই। আর গাইবো না স্যার। কোনমতে জবাব দেয় সে।
- না না, ভাল গান।
- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আপনার ভাল লেগেছে?
- সুরটা চমৎকার, কিন্তু কথা গুলো বুঝিনি। একটু বুঝিয়ে বলবে, সান?
- আসলে স্যার এটা নাবিকদেরই গান। একজন সেইলর নীল সাগরকে ডেকে বলছে তাকে মুক্তি দিতে। তার বন্দরে বন্দরে ঘুরতে মন টানছে না। বাড়ির কথা মনে পরছে। একলা বাড়িতে তার স্ত্রী তার পথ চেয়ে আছে। টিপিক্যাল সেইলর'স সং, স্যার।
- ও, তাই? বাহ বেশ বেশ। ক্যারি অন।
- ইয়েস স্যার। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।

সন্ধ্যা মিলিয়েছে। পোর্ট সাইড হয়ে মেইন ডেকে ফিরে যাচ্ছেন স্যামুয়েলসেন। অনেকদিন আগে শোনা একটা গান মনে পরছে তার। কি যেন নাম গানটার? Jamaica Farewell ! নাকি Kingston Town? বয়স হয়েছে। স্মৃতি আজকাল লুকোচুরি খেলতে পছন্দ করে।

- বয়স টনি, বয়স। বয়স আমাদের কাছে আনবে। দেখে নিও। বলেছিল লিন্ডি।

গানের কথা গুলো মনে পরেছে। কি আশ্চর্য মিল গান দুটোর মাঝে। দূর দেশের দুই মানুষ একই আবেগ নিয়ে একই রকম দুটো গান লিখে ফেলেছে। কি অদ্ভুত। ভালবাসার প্রকাশে বোধ হয় সবাই এক হয়ে যায় ...

গুন গুন করে গান গাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন টনি স্যামুয়েলসেন। -

...... I'm sad to say I'm on my way
Won't be back for many a day
My heart is down
My head is turning around
I had to leave a little girl in Kingston town......

তোমাকে ভালবাসি লিন্ডি। আমি আসছি।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৩৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ওরে নীল দরিয়া
আমায় দেরে দে ছাড়িয়া
..............

দারুন লেখা। আচ্ছন্ন করে দেয়া :)

++++++++++++

০৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৪১

ফয়সাল হিমু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ। :D

২| ০৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৩৯

ইর-ফান ভাই বলেছেন: অসাধারন একটি লেখা!!! চমৎকার+

০৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৪৩

ফয়সাল হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই :)

৩| ০৫ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৫:৪৫

ঈশান আহম্মেদ বলেছেন: চমৎকার একটা লেখা।গানটা আরো ভালো লাগলো।ক্যারি অন ভাইয়া। গানটা ডাঈনলোডাইলাম।

০৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬

ফয়সাল হিমু বলেছেন: মূল গান Harry Belafonte এর। Don Williams এর ভার্সনটাও ভাল।

৪| ০৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩

কালনী নদী বলেছেন: ...... I'm sad to say I'm on my way
Won't be back for many a day
My heart is down
My head is turning around
I had to leave a little girl in Kingston town......

এটা সম্ভবত জ্যামেইকানদের প্রচলিত একটি সেইলার সং!
সুন্দর গল্প হয়েছে ভাই।

০৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩৮

ফয়সাল হিমু বলেছেন: এটা Harry Belafonte এর গাওয়া গান Jamaica farewell। Kingston town নামেও পরিচিত। :)

৫| ০৫ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৫৩

পুলহ বলেছেন: এতো স্বল্প পরিসরে এতো হৃদয় ছুয়ে যাওয়া লেখা লিখতে পারাটা বড় মাপের লেখকদের পক্ষেই সম্ভব...
"পঁচিশ বছরের বিবাহিত জীবনের বেশিরভাগটাই তুমি আমাকে মিস করে কাটিয়েছ টনি। আমার কাছে এটা কম কিছু নয়।"-- কি দারুণ উপলব্ধি!
এই লেখার আচ্ছন্ন করে দেয়ার গুণ এতোটাই তীব্র যে- গল্পের ক্যাপ্টেনের ক্লান্তি- পাঠককেও কিছুটা ক্লান্ত করে যেনো।
অসাধারণ! সত্যি খুব ভালো লাগলো!

০৫ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬

ফয়সাল হিমু বলেছেন: আমার লেখা সার্থক।

৬| ০৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:০৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ভাষার ভিন্নতা থাকলেও, হৃদয়ের ভাষা অভিন্ন। তারই সার্থক রূপায়ন ফেরা-বেলা শেষে, জীবন সায়াহ্নে, ঘরে ফেরা।

তাই তো দেখি, নরওয়ের ক্যাপ্টেন টনি আর বাংলাদেশের ক্যাডেট আনিস, ইংরেজী আর বাংলা গানে একই আকুতির কথা বলছে-ফেলা আসা প্রিয়জনের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য দু'জনই ব্যাকুল।

ক্যাপটেনের কথায় তারই প্রকাশঃ

//গানের কথা গুলো মনে পরেছে। কি আশ্চর্য মিল গান দুটোর মাঝে। দূর দেশের দুই মানুষ একই আবেগ নিয়ে একই রকম দুটো গান লিখে ফেলেছে। কি অদ্ভুত। ভালবাসার প্রকাশে বোধ হয় সবাই এক হয়ে যায় ...//

ভাল থাকুন। সবসময়।

০৫ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:১৫

ফয়সাল হিমু বলেছেন: আপনার জন্য নিরন্তর শুভকামনা।

৭| ০৬ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৬:১১

সিকদার বাড়ীর পোলা বলেছেন: ভালো লাগা :)
+++++++++++++++++

০৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪০

ফয়সাল হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৮| ০৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:১৮

উল্টা দূরবীন বলেছেন: ভালো লাগা।

কম পরিসরের লেখা অথচ দারুণভাবে আবেগের প্রকাশ হয়েছে।

০৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৪১

ফয়সাল হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ভাই :)

৯| ০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:৫০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অনেক সুন্দর লেখাটা। অনুসরণে নিলাম।

০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:০৬

ফয়সাল হিমু বলেছেন: ভাই এই লেখাটায় সম্ভবত ঝড়ে বক মরে গেছে। পরবর্তীতে নিরাশ করতে পারি কিন্তু। :)

১০| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:৩৫

নাসের গ্যাং ০০৭ বলেছেন: অসাধারন একটি লেখা!!! চমৎকার+

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২

ফয়সাল হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ।

১১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৮

শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন: বেশ ভালো

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২

ফয়সাল হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ।

১২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০২

রাকিব সামছ বলেছেন: ভাই এক কথায় অসাধারন। দারুন ভাল লেগেছে।

২৬ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৪৬

ফয়সাল হিমু বলেছেন: থ্যাংকস ভাই।

১৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৪৪

বাংলার ডিলান বলেছেন: প্রথমে মনে করেছিলাম কোন অনুবাদ গল্প।পরক্ষণেই ভুল ভাঙল।অসাধারণ।বেশ ভালো লাগল।

২৬ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৪৬

ফয়সাল হিমু বলেছেন: থ্যাংক ইউ ভাই।

১৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৪৮

ফারিয়া আলম বলেছেন: এক কথায় অসাধারণ ভাইয়া। সকাল বেলায় পড়ে মনটা ভাল হয়ে গেল।

২৬ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭

ফয়সাল হিমু বলেছেন: থ্যাংকস আপু।

১৫| ২৬ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৪৩

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: এতো স্বল্প পরিসরে এতো হৃদয় ছুয়ে যাওয়া লেখা লিখতে পারাটা বড় মাপের লেখকদের পক্ষেই সম্ভব...
অসাধারণ! সত্যি খুব ভালো লাগলো!

১৬| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.