নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চূড়ান্ত রকম ফাঁকিবাজ একজন মানুষ আমি!

ফয়সাল রকি

Know thyself.

ফয়সাল রকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: আয়না (শেষ খন্ড)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৭



আয়না - প্রথম খন্ড
তিন
ধিরে ধিরে যোগাযোগ বাড়াতে লাগলো মাজেদ। প্রথম মাসে সপ্তাহে একদিন দেখা করতে যেতো, তারপর প্রতিদিন। ডাক্তার বলেছিল, একমাত্র মাজেদই রেবাকে দেখতে আসে আর তার সাথেই রেবা কথা বলে। কাজেই যতবেশি সময় মাজেদ দিতে পারবে তত তাড়াতাড়ি রেবা সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। মাজেদও নিজের দোষ মেনে নিয়ে মেয়েটির প্রতি এক ধরনের মায়া অনুভব করতে থাকে।

তিন চার মাস পরে রেবাকে সুস্থ ঘোষণা করে করলো। মাজেদকে দায়িত্ব দিতে চাইলো রেবাকে নিয়ে যাবার। কিন্তু মাজেদ রেবাকে কোথায় নিয়ে যাবে জানে না। রেবা তার আগের মেসে যেতে চায় না। মেসের মেয়েরা একদিন ওকে দেখতে এসে বলেছিল, রেবা যদি মেসে ফিরে যেতে চায় তাহলে বাড়িওয়ালা ওদের কাউকেই বাসায় থাকতে দেবে না। শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার সংগঠনটি তাদের ভাড়া করা একটি হোস্টেলে রেবার থাকার ব্যবস্থা করে দিল। পাশাপাশি একটি এনজিওতে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরির ব্যবস্থাও করে দিল। এতে করে রেবার ব্যস্ততা দিন দিন বাড়তেই থাকলো, আর মাজেদের সাথে তার দেখা সাক্ষাতের সুযোগ কমতেই থাকলো। তবে তারা এক অপরের খুব ভালো বন্ধু হয়ে রইলো। রেবা যেমন সুযোগ পেলেই মাজেদকে ডাকতো তেমনি মাজেদও ছুটে যেতো রেবার কাছে।

ধিরে ধিরে রেবার প্রতি মাজেদের দূর্বলতা বাড়তে লাগলো। এর আগে কখনোই কোনো মেয়েকে এতো কাছে থেকে দেখেনি সে, এতো কথা বলেনি, এতো সময় একসঙ্গে কাটায়নি। রেবার জীবনে যে একটা কালো অধ্যায় আছে সেটা প্রায় ভুলেই গেছে। ঐ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কখনো কোনো কথা যেমন হয় না তেমনি সে রাতের পর থেকে রাস্তার মোড়ে ঐ বখাটে ছেলেগুলোকে আর কখনো দেখেনি মাজেদ।

ইদানিং রেবা এতো ব্যস্ত হয়ে উঠেছে যে সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও মাজেদকে সময় দিতে পারছে না। হঠাৎ মাজেদ একদিন সিদ্ধান্ত নিলো, রেবাকে বিয়ে করবে। রেবার ব্যস্ততা ওর মধ্যে এক ধরনের শূণ্যতা তৈরি করেছে। রেবাকে দেখার, কথা বলার কিংবা পাশাপাশি বসে থাকার এক দুর্বার আকাক্সক্ষা ওর মধ্যে জেগে উঠছে। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না রেবাকে কিভাবে একথা জানাবে কিংবা রেবা এধরনের কিছু ভাবছে কি না। তাই কোন এক ছুটির দিন রেবাকে তার আটতলার চিলেকোঠার ঘরে প্রথমবারের মতো নিয়ে যাবার চিন্তা করলো। মাঠে ঘাটে রেষ্টুরেন্টে অন্য কোনো মানুষের সামনে সে রেবাকে এসব কথা বলতে পারবে না, সাহসে কুলোয় না কিংবা লজ্জা বোধটা একটু বেশি।

সেদিন ছিল ছুটির দিন।
দুই তিন বার বিরতির পর রেবা আটতলার চিলেকোঠার ঘরে যখন উঠলো মাজেদ তখন এক গ্লাস পানি হাতে সামনে দাঁড়িয়ে। এর আগে কখনো রেবা মাজেদের বাসায় আসেনি, তাই কৌতুহলী চোখ জোড়া অনেকক্ষণ ধরে ঘুরে বেড়ালো ঘরের চারপাশ জুড়ে, দেয়ালে, আলমারীতে, এক কোণে পড়ে থাকা কাঠের টেবিল চেয়ারে কিংবা সদ্য নতুন চাদর বিছানো সেমি-ডাবল খাটে।
রেবাকে বিছানায় বসিয়ে একটি জিরিয়ে নেবার সুযোগ দিল মাজেদ। তারপর বললো, তোমাকে আজ একটা বিশেষ কারণে বাসায় এনেছি।
- বিশেষ কারণ? তোমার জন্মদিন?
- না না, জন্মদিন না। আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
- কি কথা?
- চলো আমরা বিয়ে করি।
- মজা করছো আমার সাথে?
- মোটেই না। সত্যি বলছি, চলো আমরা বিয়ে করি।
- কেনো? আমাকে বিয়ে করবে কেনো?
- আমি মনে হয় তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
- মনে হয়? তুমি তো আমার অতীত জানো। আমি একটা ধর্ষিতা জেনেও তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও?
- আহ রেবা! আমি তো সবই জানি, নতুন করে বলার দরকার নেই। তোমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়গুলো আমি দেখেছি। জানি তোমার অনেক কষ্ট, ওসব বাদ দাও না এখন।
- কেনো বাদ দিব? আমাকে বাঁচিয়েছো বলে তোমাকে দোষ দিয়েছিলাম তার প্রতিদান দিতে চাচ্ছো? আমার প্রতি এতো করুণা তোমার?
- এটা করুণা না রেবা। তোমাকে আমি কখনোই বোঝাতে পারবো না, তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি।
- বোঝাতে হবে না। তুমি যদি আমাকে বলতে আটতলা থেকে লাফ দিয়ে মরে যেতে তাহলেও আমার এতো খারাপ লাগতো না, যতটা খারাপ এখন লাগছে। তুমি আমার প্রতি এতো করুণা করো? আমি কি কখনো তোমাকে বলেছি যে তোমাকে ভালবাসি কিংবা আমাকে বিয়ে করো?
রেবার চোখ ভিজে যাচ্ছে পানিতে। রাগ হচ্ছে না মন খারাপ হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। বিয়ে কিংবা কোনো পুরুষের কাছাকাছি যাবার মতো মানসিক অবস্থা ওর নেই, আর কোনোদিন হবে বলেও সে মনে করে না। এক রাতের অত্যাচার, নির্যাতন সে কোনোভাবেই ভুলতে পারে না। মাজেদকে সে অনেক পছন্দ করে কিন্তু বিয়ে পর যদি এই মানুষটা যদি বদলে যায় কিংবা নিজেই যদি মানুষটাকে ভয় পায় তাহলে কি হবে? আর তাছাড়া মাজেদ কেনো কলংকিত একটা মেয়েকে বিয়ে করবে; সে তো অনেক ভালো, সন্দর, কলংকবিহীন একটা পাত্রী পাবে বলেই রেবার বিশ্বাস। বললো, আমি এখন চলে যাবো। তোমার বাসায় আসাটা ঠিক হয়নি।
- প্লিজ রেবা, কাঁদবে না। ঠিক আছে, আমার ভুল হয়েছে। তোমাকে বাসায় নিয়ে আসাটা ঠিক হয়নি। কিন্তু আমি তোমাকে এখনো বিয়ে করতে চাই। আমি কখনোই তোমার কালো অধ্যায় নিয়ে ভাবি না, শুধু ভেবেছি, তুমি একটা মানুষ যার জীবনে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আর কিছু না।
রেবার চোখ বেয়ে পানি ঝরতে শুরু করেছে। মাজেদকে এই অশ্রু সে দেখাতে চায় না। ওর চোখ জোড়া খুব দ্রুতই বাথরুমের দরজাটা খুঁজে নিলো। তারপর এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে শাওয়ারটা ছেড়ে দিল যাতে কান্নার শব্দ বাথরুমের বাইরে না যায়। খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে তার, কিন্তু গলায় যেনো কান্না আটকে গেছে চিৎকার করে কাঁদতেও পারছে না। কেনো তার সাথে এমন হয়েছে, সে তো কোনো দোষ করেনি। ঐ রাতে একা যে কেনো বাসায় ফিরছিলো তা সব সময় ভাবে! ভাবে, ঐ রাতে যদি ওর সাথে কেউ থাকতো তাহলে হয়তো দুর্ঘটনাটা ঘটতো না কিংবা যদি এক দৌড়ে পালাতে পারতো কিংবা রাস্তার একটা মানুষও যদি এগিয়ে আসতো! ঐ রাতে তাকে নিয়ে ছেলেগুলো যা খুশি তাই করেছে, নিজেকে খুব নোংরা মনে হতে লাগলো রেবার। গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। যদি ঐ রাতটা তার জীবনে না আসতো তাহলে কত ভালো হতো! হাসি খুশি একটা জীবন তো ভালই চলে যাচ্ছিলো। তাহলে হয়তো আজ মাজেদকে বিয়ে করতে তার কোনো কিছুতেই আটকাতো না। কিন্তু মাজেদকে যেমন সে ঠকাতে চায় না তেমনি মাজেদের কাছে যাবার সাহসও পাচ্ছে না। কি অদ্ভুত একটা জীবন!
হঠাৎ রেবার মনে হলো বেসিনের ওপরের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বটা একটু যেনো নড়ে উঠলো। তারপর ধিরে ধিরে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো, কেমন আছো রেবা?
রেবা প্রচন্ড ভয় পেয়ে চিৎকার করতে চাইলো কিন্তু গলা থেকে কোনো আওয়াজ বের হলো না। দৌড় দিয়ে বের হতে চাইলো বাথরুম থেকে কিন্তু হাত-পা জমে শক্ত হয়ে গেছে। আয়নার প্রতিবিম্ব বললো, ভয় পাবার মতো কিছু হয়নি। আমি তোমারি প্রতিবিম্ব। তুমি অনেক বুদ্ধিমতি একটা মেয়ে রেবা। আর তুমি সবচেয়ে বড় বুদ্ধির পরিচয়টা দেবে যদি কাল সকালে মাজেদকে এসে বলো, চলো তাহলে বিয়েটা করি!

পরিশিষ্ট
হুট করে রেবাকে বিয়ে করেছে মাজেদ। তবে মাজেদ বিয়ে করেছে না বলে বরং রেবা বিয়ে করেছে বললে ব্যাপারটা বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে রেবা দরজায় দাঁড়িয়ে। তারপর রেবাকে নিয়ে সকালের নাস্তার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে মাত্র তখন রেবা জানালো, সে এখনই মাজেদকে বিয়ে করতে চায়।

কাজী অফিস থেকে সরাসরি নিজের চিলেকোঠার বাসায় ফিরেছে রেবাকে নিয়ে। কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা যেমন হয়নি তেমনি কোনো রকম সাজসজ্জার সুযোগ ছিল না। ভরদুপুরে গনগনে রোদে ফেরার সময় দুই প্যাকেট কাচ্চি বিরিয়ানী কিনে এনেছে। ঘরে ঢুকেই নতুন বউকে বললো, তোমার সংসার বুঝে নাও।
রেবা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো, খাবারগুলো এখনো গরম আছে।

বাথরুমে ঢুকে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকালো একবার। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলো কামানো হয়নি, বিশ্রী দেখাচ্ছে। তারপর দু’হাতে কলের পানি ধরলো, মুখে ঝাপটা দিল কয়েকবার। হঠাৎ মনে হলো, আয়নার প্রতিবিম্বটা আবারো নড়ে উঠলো। কিন্তু আজ তো মাজেদ নেশা করেনি, তাহলে উল্টোপাল্টা দেখছে কেনো? মাজেদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো আয়নায়, কিন্তু প্রতিবিম্বটা হাসছে। চমকে গিয়ে এক পা পিছিয়ে গেলো মাজেদ। এমন তো হবার কথা নয়। এতদিন যা কিছু হয়েছে তা কেবল নেশার ঘোরে হয়েছে, কিন্তু এখন তো সে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। মাজেদ আয়না থেকে চোখ নামিয়ে ফেললো।
প্রতিবিম্ব হঠাৎ বললো, মাজেদ, আমার দিকে তাকাও। তোমার মোটেও হেলুসিনেশন হচ্ছে না। এতদিন যা হয়েছে সেটাও হেলুসিনেশন নয়। তুমি ভুল দেখছো না।
মাজেদ আয়নার দিকে তাকালো। একটু আগেই তার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে মুখ ভর্তি ছিলো, এখনো তা উধাও। সদ্য দাঁড়ি কামানো নিজের মুখ দেখলো। একটু সময় নিচ্ছে ধাতস্থ হবার জন্য। বললো, তাহলে এখন কি ঘটছে? আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?
- না তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছো না।
- আমার আয়নায় তাহলে তুমি কে?
- আমিও মাজেদ।
- তুমি কি জ্বীন-ভূত জাতীয় কিছু?
- না, তেমন কিছু না। আমি ব্যাখ্যা দিচ্ছি। প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা আছে?
- না।
- ঠিক আছে। আমি সহজ করে বলছি। তোমার পৃথিবীর মতো, সৌরজগতের মতো আরো অনেক পৃথিবী-সৌরজগত সমান্তরালভাবে চলছে। রেললাইনের মতো পাশাপাশি কিন্তু কারো সাথে কারো দেখা হয় না। প্রত্যেক পৃথিবীতেই তোমার একটি প্রতিরূপ আছে। অর্থাৎ প্রত্যেক পৃথিবীতেই মাজেদ নামে একজন ব্যক্তি আছে যার আজ রেবা নামের একজন নারীর সাথে বিয়ে!
- এলোমেলো কথা বলবে না। আমি নেশা করিনি।
- আমি এলোমেলো কথা বলছি না। তুমি পুরো বিষয়টা শোনো, তারপর তোমার কোনো প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞেস করবে। ঠিক আছে?
মাজেদ কিছু বললো না। প্রতিবিম্ব বললো, সকল পৃথিবীর মাজেদ যে একই কাজ করবে বা একইভাবে বেড়ে উঠবে তা নয়। কোনো পৃথিবীর মাজেদ শিক্ষক, আবার কোনো পৃথিবীর মাজেদ খেলোয়ার। আমি হলাম বিজ্ঞান গবেষণাগারের স্পোকসম্যান, তুমি হলে মেকানিক।
- আমার কাছে তুমি কি চাও।
- বলছি। তার আগে বলে নিই, তোমার পৃথিবীর চেয়ে আমাদের পৃথিবী বিজ্ঞান চর্চায় অনেক এগিয়ে গেছে। ফলে, আমরা অনেক কিছুই করতে পারি যা তোমরা পারো না। যেমন, তোমার সঙ্গে যোগাযোগটা আমরা স্থাপন করেছি, এটা কাকতালীয় ঘটনা নয়।
- কিন্তু কেনো? আমি সামান্য একজন মানুষ, আমাকে নিয়ে তোমাদের এতো আগ্রহ কেনো?
- সেটাই তো বলছি। মাজেদ ও রেবার জেনেটিক্যাল বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, তাদের ঘরে জন্ম নেয়া দ্বিতীয় সন্তান হবে অসম্ভব রকমের বুদ্ধিমান। ধারণা করা হচ্ছে যে, ফিফথ ডাইমেনশন ইকুয়েশন সমাধান করবে সে। কিন্তু সমস্যা হলো, যদি কোনো একটি পৃথিবীতেও মাজেদ ও রেবার সন্তান না হয়, তাহলে আমাদের পৃথিবীতেও তাদের সন্তান জন্ম নেবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কাজেই আমরা প্যারালাল ইউনিভার্সের বিভিন্ন স্থানে ঢু মারতে থাকলাম। মোটামুটি সবখানেই দেখলাম, মাজেদ ও রেবা একে অপরকে চেনে এবং তারা একে অপরের কাছে আসার চেষ্টা করছে বা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কিন্তু কেবল তোমার ক্ষেত্রেই দেখরাম বিপরীত ঘটনা। তোমরা একে অপরকে সামনা সামনি দেখলেও কখনো কথা বলোনি, কাছাকাছি যাবার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে যখন দেখলাম, তোমার চোখের সমানে দিয়ে ছেলেগুলো রেবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তুমি কিচুই বললে না বরং মদ খেয়ে নিজের অপরগতাকে চাপা দেবার চেষ্টা করলে তখনি আমরা তোমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। তারপর কি হয়েছে তুমি তো জানোই।
- তারমানে বলতে চাইছো, রেবাকে বাঁচাতে যাওয়াতে তোমাদের হাত ছিল? আমি আমার বিবেকের তাড়নায় সেদিন যাইনি?
- অনেকটা তাই।
- আমি মানি না।
- কেনো মানবে না? তোমার বিবেকের তাড়নায় রেবাকে বাঁচাতে চাইলে তো অনেক আগেই বাঁচাতে পারতে। তোমার সামনেই তো ওরা রেবাকে ধরে নিয়ে গেলো। তখন কিছু না বলে বরং আকন্ঠ মদ গিলে ঘরে ফিরলে। শোনো, আমরা তোমার বিবেকের কাছে জবাব চাইনি। আমরা তোমাকে সাহায্য করতে চেয়েছি, আমরা আমাদের নিজেদেরকে সাহায্য করতে চেয়েছি।
- তোমরা আমাকে সাহায্যের নাম করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছিলে। আমি রেবাকে বাঁচালাম সেখানেও আমার দোষ দিচ্ছো। একটু পরে বলবে, রেবাকে আমি ভালবাসি না। কিংবা ভালবাসলেও সেটাও তোমাদের সাহায্যে, তাই তো?
- না না, তা নয়। রেবাকে তুমি সত্যিই ভালবেসেছো। আমরা শুধু চেয়েছি তোমরা একে অপরের কাছে আসো।
- এখন যদি আমি রেবার সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করি, তাহলে তোমরা কি করবে?
- আমার মনে হয় তা তুমি করবে না। গতকালের প্রচন্ড মনোমালিন্যের পরে আজ কিন্তু তুমি অপ্রত্যাশিতভাবে রেবাকে বিয়ে করেছো। আর তাছাড়া রেবাও সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইবে না। আমার মনে হয়, রেবাকে তুমি এতো বেশি ভালবেসে ফেলেছো যে, বাথরুম থেকে বেরিয়ে রেবাকে দেখা মাত্রই সব ভুলে যাবে।
মাজেদ কোনো কথা বললো না। প্রতিবিম্বের দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। তার জীবনকে প্রভাবিত করার প্রতিবিম্ব কে?
প্রতিবিম্ব বললো, বিদায় বন্ধু। তোমার সঙ্গে হয়তো আর কখনো দেখা হবে না।
হঠাৎ মাজেদ বললো, দাঁড়াও। আমার একটা প্রশ্ন ছিল।
- অবশ্যই। বলো।
- রেবা কি তোমার কথা জানে? আয়নার কথা?
- হয়তো জানে, হয়তো জানে না।
- হেঁয়ালী করবে না। আমি রেবাকে সব বলবো এখনি।
- না বলবে না। এই আয়নার মাধ্যমে যে অন্য ইউনিভার্সের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব সেটা তোমার ইউনিভার্সের কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ কোনো প্রমাণ নেই তোমার কাছে। বরং সবাই তোমাকে উন্মাদ ভাববে, এমনকি তোমার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী রেবাও ভাববে।
মাজেদ পরাজিত সৈনিকের মতো মাথা নিচু করে রইলো। সত্যিই তো, তার হাতে তো কোনো প্রমাণ নেই। তাছাড়া এতদিন প্রতিবিম্বের কথা নিজেই বিশ্বাস করেনি। ভেবেছে, মদ খেয়ে মাতাল হয়ে উল্টোপাল্টা দেখেছে, নিজের সাথেই কথা বলেছে।
প্রতিবিম্ব আবার বললো, বিদায় বন্ধু, ভালো থেকো।
মাজেদ আয়নার দিকে তাকাতেই নিজের প্রতিবিম্ব দেখলো। ডানে-বামে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো নিজেকেই দেখছে কিনা। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে নিজেকেই দেখলো মাজেদ।
খানিকক্ষণ বাথরুম থেকে বের হলো। বিরক্তিতে এখনো তার ভ্রু কুঁচকে আছে। রেবা একনজর তাকিয়েই বললো, শরীর খারাপ লাগছে? বিরিয়ানী খেয়ে শুয়ে একটু রেষ্ট নাও, আমি মাথা টিপে দেবো।

ছবি: গুগল মামা

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২০

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: এক পর্ব পড়েই মন্তব্য করলাম!:)


পরিশিষ্টটা ভালো লেগেছে বিশেষত ওখানকার প্যারালাল ওয়ার্ল্ড সম্পর্কিত ব্যাপার গুলো!:)


গল্পে ওভারঅল +

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২২

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ।
দুইটা খন্ড করা মনে হয় ঠিক হয়নি।
একটু বড় হলেও একবারেই দেয়া উচিত ছিল.. কি বলেন?

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৬

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: দুই পর্ব করাটা আমার কাছে তেমন কোন সমস্যা বলে মনে হয়নি!


শেষ পর্ব পড়েই আমি আগের পর্বটা অন্দাজ করতে পেরেছি! আমার মনে হয় অন্যান্য পাঠকরাও পারবেন!:)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: তাহলে শেষ পর্বটা আগে পড়েছেন বলেছেন!
তবে প্রথম পর্বটা আগে পড়লে পরিশিষ্টটা আন্দাজ করা একটু কষ্টকর হতো মনে হয়।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বেশ অন্য রকম লেগেছে গল্প ।
শুভ কামনা ।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৩৮

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ মনিরা সুলতানা আপু।
ভাল থাকবেন।

৪| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৪

ওমেরা বলেছেন: Fantastic !!

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৪

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ ওমেরা।

৫| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৪

কালীদাস বলেছেন: দুই পার্ট মিলিয়ে জোড়া লাগালাম আবার! ভাল হয়েছে গল্পটা। চমৎকার হয়েছে বলা উচিত এক্সপেরিমেন্টের জন্য, কারণ ইজিলি জীন ভুত নিয়ে টানাটানির সুযোগ ছিল আপনার হাতে ;)

সময় পেলে মিররস মুভিটা দেখে ফেলুন :)

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি আসলে গল্পের শুরুর কিছু অংশ ও পরিশিষ্টটা আগে লিখেছিলাম, তারপর মাঝের অংশগুলো যোগ করেছি :)
সময় করে দেখতে হবে মুভিটা।

৬| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৮

জাহিদ অনিক বলেছেন:


দুইটা পর্বই পড়লাম।

প্রথমে ভেবেছিলাম আয়না মানে নিজের বিবেক। ২য় পর্বেও সেটাই ভাবাছিলাম।

আপনি দেখি ফিকশনকে সাইন্স ফিকশন বানিয়ে ফেললেন !


প্যারালাল ইউনিভার্স এর কাহিনী বা থিউরি বিজ্ঞানে সব সময়েই আকর্ষনীয় ছিল।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৬

ফয়সাল রকি বলেছেন: প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু গল্পটা যখন শুরু করি তখন অন্য রকম একটা ইচ্ছা ছিল। ভেবেছিলাম, মাজেদ বিবেকের দংশনে (এখানে ব্যক্তিগত আরো কিছু অপ্রাপ্তি যোগ হবার কথা ছিল) আত্মহত্যা করবে! কিন্তু তারপর হঠাৎ করেই গল্পটা বদলে গেলো।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৭| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৮

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: পড়লাম। ভাল লেগেছে। তবে, পর্বগুলো আরও ছোট আকারে পোস্ট করলে ভাল হবে।
আপনার সৃষ্টিশীল কাজের অগ্রযাত্রা কামনা করি।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০০

ফয়সাল রকি বলেছেন: লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছিলো দেখে দুইটা খন্ড করলাম, কিন্তু পরে মনে হলো এক খন্ডে শেষ করলে ভালো হতো... অনেকেই হয়তো শুধু শেষ খন্ডটা পড়েছে, প্রথমটা পড়েনি। এক সাথে পড়লে হয়তো আরো ভালো লাগতো তাদের। যাই হোক, আপনার পরামর্শ মাথায় রাখলাম ভবিষ্যতের জন্য।
ধন্যবাদ বিএম বরকতউল্লাহ ভাই।
দয়া করবেন যেনো লেখালেখির জন্য নিয়মিত সময় বের করতে পারি।

৮| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:২১

আখেনাটেন বলেছেন: গল্প বলার হাত আছে আপনার।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৭

ফয়সাল রকি বলেছেন: গল্প বলার হাত ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেলো না! গল্প বলার মুখ বা গলা অথবা গল্প লেখার হাত হলে মনে হয় ভালো হতো।
ধন্যবাদ আখেনাটেন, ভাল থাকবেন।

৯| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:০৪

জুন বলেছেন: ফয়সাল রকি শেষ দিকে গল্পটিকে একটি অন্য জগতে নিয়ে গেলেন মনে হলো । প্রথম থেকে আমার ধারনা ছিল আয়নার মুখটি তার দ্বিতীয় সত্বা । এখন দেখছি অন্য জগতের লোকজন । সেদিন সিনেপ্লেক্সে একটি ম্যুভি দেখলাম নাম Valerian and the City of a Thousand Planets । রেটিং হাই থাকলেও তেমন ভালোলাগেনি আমার কাছে। বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহে এমন ভঙ্গীতে এমন ধুমধাম করে যাচ্ছে মনে হয় মামার বাড়ী যাচ্ছে মটর সাইকেলে লাফ দিয়ে উঠে। আর সেই মহাকাশ স্টেশনের লোহার জঞ্জাল দেখে মনে হলো আমাদের পরিত্যক্ত পৃথিবীটাই অনেক সুন্দর। অনেক বৈচিত্রময়।
তবে যাই হোক আপনার লেখার মুন্সীয়ানায় ভিন্ন মাত্রা পাওয়া গল্পটির পরিসমাপ্তিটি ভালোই লাগলো । তবে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই এখন মাজেদ মিয়া । চোখের সামনে অন্যায় দেখলেও এগিয়ে আসতে সাহস পায় না ভয়ে। কিন্ত বিবেক তাদের ঠিকই তাড়িয়ে বেড়ায় ।
+

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:১১

ফয়সাল রকি বলেছেন: প্রথম যেটা বলতে চাই সেটা হলো, টানা তিনটা পোস্ট পড়লেন ও মন্তব্য করলেন এই জন্য ধন্যবাদ।
পরিশিস্টটা না থাকলেও গল্পটা পূর্ণতা পেতো তবে সেক্ষেত্রে আয়মার মুখটি তার দ্বিতীয় সত্ত্বাই হতো। একটু পরিবর্তন করেছি। অন্য জগতের লোকজন হলেই যে আমাদের থেকে আলাদা হবে তেমনটাও না, তবে তাদেরকে আমার ভাল লেগেছে। তারা পজিটিভলি সমালোচনা করে।
Valerian and the City of a Thousand Planets মুভিটা দেখিনি, সময় করে দেখতে হবে।
তবে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই এখন মাজেদ মিয়া । চোখের সামনে অন্যায় দেখলেও এগিয়ে আসতে সাহস পায় না ভয়ে। কিন্ত বিবেক তাদের ঠিকই তাড়িয়ে বেড়ায় --- আমারো তাই মনে হয়।

১০| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৪

শায়মা বলেছেন: ঐ ভিন্ন জগতের কারো কথাই জানতে চাইনা!


মাজেদ আর রেবার কথা শুনেই মানে ওদের সাথে এমন আয়নার কথা বলা পড়ে তো আমার কাঁপাকাঁপি অবস্থা।

মনে পড়ে গেলো স্নো হ্যোয়াইটের ম্যাজিক মিররের কথা!

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: মিরর মানেই তো ম্যাজিক... এমন ম্যাজিক যে খুব খারাপ চেহারার মানুষ নিজেকে খুব সুন্দর দেখে, যেমন, আমি.... হে হে হে...
থ্যাংকু শায়মা আপু। আমার একটা ছবি এঁকে দেবার কথা ছিল...

১১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭

শায়মা বলেছেন: খারাপটা আঁকবো নাকি সুন্দরটা !!


মানে ম্যাজিক মিরেরেরটা নাকি সত্যিকারের পঁচুঘঁচু ছবিটাই ! :P

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫০

ফয়সাল রকি বলেছেন: হে হে হে... সেটা আমি একটা পঁচুঘঁচু ছবি দিলাম, তারপর আপনি আপনার ম্যাজিক দিয়ে বাকি কাজটা সেরে ফেলেন. কি বলেন?

১২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৭

শায়মা বলেছেন: হা হা ওকে ওকে বুঝিয়াছি!

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:২৪

ফয়সাল রকি বলেছেন: B-) B-) B-)

১৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


গল্পের শেষাংশ কি টেনেটুনে বড় করা হয়েছে?

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: না না.. ব্যাপারটা এমন না।
আমি আসলে গল্পের শুরুর কিছু অংশ (১. এর প্রথমাংশ) ও পরিশিষ্টটা আগে লিখেছিলাম, তারপর মাঝের অংশগুলো (১. এর কিছু অংশ এবং ২ ও ৩) যোগ করেছি।
সময় করে প্রথম খন্ডটা পড়বেন।
ধন্যবাদ।

১৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৯

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: প্রতিবিম্ব কথা বলে। খুব ভালো লেগেছে।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৩১

ফয়সাল রকি বলেছেন: হুম... প্রতিবিম্ব কথা বলে.... ধন্যবাদ।

১৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৫৫

রাজসোহান বলেছেন: অনেক দেরীতে মন্তব্য করার জন্য দুঃখিত। ভালো লেগেছে। আপনার খুব শীঘ্রই মেইনস্ট্রিমে আসা দরকার!

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:১০

ফয়সাল রকি বলেছেন: আপনার সেন্স অফ হিউমার তো চরম!
দুইটা খন্ডই পড়েছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.