নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চূড়ান্ত রকম ফাঁকিবাজ একজন মানুষ আমি!

ফয়সাল রকি

Know thyself.

ফয়সাল রকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু ও পাঠ প্রতিক্রিয়া

১৬ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৪১



বইয়ের নাম: আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু
লেখক: শহীদুল জহির
প্রথম প্রকাশ: নিপুণ, ৮ জুন, ১৯৯১
বর্তমান সংস্করণে প্রকাশক: মাওলা ব্রাদার্স
পৃষ্ঠা: ৬৪
মু্দ্রিত মূল্য: একশত টাকা মাত্র।

আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু উপন্যাসের প্রথম পৃষ্টায় আমরা নিশ্চিত হই যে সে মারা গিয়েছে আর তার বিধবা পৃথুলা স্ত্রী মমতা তার কথা স্মরণ করতে থাকে, যদিও তাদের বিবাহিত জীবন খুব একটা সুখী দেখা যায় না। প্রায়ই কথাবার্তা রূপ নিত বচসায়। মাঝে মাঝে অবশ্য ভালোবাসার দেখা পাওয়া যেত। দুই সন্তান বিন্দু ও শুভকে নিয়ে এগিয়ে চলে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। যে গল্পে কন্যা বিন্দুর প্রতি পিতার ভালোবাসা কিংবা ভাইবোনের নিত্যদিনের খুনশুটি যেমন চলতে থাকে তেমনি দেখা যায় কাজের প্রতি মনোযোগী একজন আবু ইব্রাহীমের পরিবারকে যথাযথ সময় না দেয়া। কাজের মেয়ে কাজলি একদিন পঁচা মাছ কিনে আনলে মমতা তা ফেলে দেয় এবং ডাল আর পটল ভাজি রান্না করে। বাজারে সময় দিতে না পারা আবু ইব্রাহীম সেই খাবার খেয়ে বলে- ভালোই খেলাম! তখনি মমতা ক্ষেপে যায় আর বলে- ভালোই খাইলা! এভাবেই হয়তো নিত্য কথাবার্তা প্রায়ই বচসার দিকে রূপ নেয় কিংবা থেমে যায়। তবে মাঝে মাঝে আমরা দেখি, আবু ইব্রাহীম পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেইলি রোডের কলোনীর বাইরে হাঁটতে বের হয়। জোছনা রাতের চাঁদ দেখে। এতে তারা এক ধরনের আনন্দ পায়।

উপন্যাসে মূলত আবু ইব্রাহীম চরিত্রই আলোচনা করা হয়েছে। সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা কিংবা বন্ধু-সহকর্মী সিদ্দিক হোসেনের প্রতি দায়, কখনো কখনো স্ত্রীর প্রতি তার মায়া কিংবা বান্ধবী হেলেন যাকে সে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ভালোবাসতো তার প্রতি ঝুঁকে পড়া, অথবা হেলেনকে নির্জন কক্ষে ডেকে খানিকটা একান্ত সময় অতিবাহিত সুযোগ আসলে এক ধরনের দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, যদিও সে ঐ একান্ত সময়ে উপস্থিত হয় না; আবার অন্যদিকে বন্ধু সিদ্দিক হোসেনের সাথে তার কথোপকথন যেখানে সিদ্দিক হোসেন তাকে জিজ্ঞেস করে- তুমি কি নিজেকে দেবতা মনে কর? দীর্ঘ সময় নিয়ে এপ্রশ্নের উত্তরে আবু ইব্রাহীম বলে সে কোনো দেবতা নয়। অথচ ওর মৃত্যুর পর জানাজার কাতারে দাঁড়িয়ে সিদ্দিক হোসেনের মনে হয়- আবু ইব্রাহীম সঠিক ছিল না! এরপরও আমরা সহজে একই সিদ্ধান্তে আসতে পারিনা, বারবার বিভ্রান্ত হই। পুরো উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত আমাদের পড়তে হয় শুধুমাত্র এরকম কিছু বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পেতে। গল্পের এক পর্যায়ে ব্যবসায়ী খালেদ জামিল চরিত্রের আগমন ঘটে যে সৎ জীবন যাপণ করা আবু ইব্রাহীমের বন্ধু হতে চায়। সেসময় রূপনগর প্রকল্পে চল্লিশ হাজার টাকা মূল্যের আড়াই কাঠার একটি প্লটের জন্য আবেদন করার সময় পাঁচ হাজার টাকা ধার নিতে সিদ্দিক হোসেনের কাছে থেকে যদিও ওর শ্বশুর টাকা দেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে কিন্তু সে তা নেয় না। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন মূল্যের টেন্ডার পাশের জন্য খালেদ জামিল যখন কমিশন বাবদ ত্রিশ হাজার টাকা দিতে চায় তখন এক শঙ্কটময় পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যেখানে আমরা অন্য এক আবু ইব্রাহীমকে দেখি যা আমাদের আরো বেশি বিভ্রান্ত করে। একটা সিদ্ধান্ত কত সহজে একটা জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে কিংবা একটা পরিবারের সব চরিত্রগুলোর আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে তা আমরা দেখি আবু ইব্রাহীমের মৃত্যুর দুই বছর পরে যখন যুবতী বিধবা মমতার দ্বিতীয় বিয়ে দেয়া হয় এবং যখন সে বিন্দু ও শুভকে সাথে নিয়ে নতুন স্বামীর কর্মস্থল খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়!

শহীদুল জহিরের অন্যান্য লেখাগুলোর মতোই একটা ঘোর পাঠককে আচ্ছন্ন করে রাখে, পড়া শেষ করার অনেক পরেও মাথার ভেতর উঁকি দেয় চরিত্রগুলো কিংবা সংলাপগুলো। যেমন, আবু ইব্রাহীম বলে, একটা কথা কই তোমাক।
মমতা আবু ইব্রাহীমের দিকে তাকায়।
বিন্দু আর শুভ বড়ো হওয়া যাইতাছে।
তাতে কী হইছে?
আমরা কিন্তু আর একটা বাচ্চা নিবা পারি।
বাজে কথা কয়ো না।
এতো বড়ো শরীরটা তোমার আর কোন কাজে লাইগব?
মমতা কোনো কথা বলে না।
কিংবা অন্য আরেক সময় হেলেন যখন ওদের বাসায় এসে বিন্দুকে আদর করে চলে যায় তার আরো কিছু সময় পরে মমতা বিন্দুকে পেটাতে শুরু করে, আবু ইব্রাহীম থামাতে গিয়ে হেলেনের বিষয়টা বুঝতে পেরে অসহায় ও বিপন্ন হয়ে পড়ে। সে বলে, হেলেনের সাথে দেখা হইলে কয়া দিমুনি যাতে আমাদের এখানে আর না আসে।
মমতা তখন বলে- আমি আইসপার মানা করি নাই, খালি আমার মেয়েকে নিয়া ঢং দেখানোর লাইগব না! তোমার কাছে আইসপ, তোমার কাছ থেইকা বিদায় হয়া যাইব।

এভাবেই আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু এগিয়ে আসে। একজন স্বামী, পিতা, প্রেমিক কিংবা বন্ধুকে আমরা দেখি। একজন মানুষের নিজের সাথে যুদ্ধ করার সঙ্কটময় সময়টাকে আমরা দেখি। আমরা দেখি একজন শহীদুল জহিরের সার্থক একটি উপন্যাসকে।

লেখক পরিচিত:
শহীদুল জহির (১৯৫৩-২০০৮) এর জন্ম ঢাকার নারিন্দার ভূতের গলিতে। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়।
তিনি ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন ডিসির দি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি এবং কিছুদিন বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেন। পেশায় তিনি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য, মুখের দিকে দেখি, জীবন রাজনৈতিক বাস্তবতা, সে রাতে পূর্ণিমা ছিল প্রভৃতি।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: এই লেখকের কোনো বই আমার পড়া হয় নি।

১৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২০

ফয়সাল রকি বলেছেন: পড়ুন, ভালো লাগবে আশাকরি।

২| ১৬ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:১৮

করুণাধারা বলেছেন: চমৎকার রিভিউ! এটা পড়ে বইটা পড়ার আগ্রহ জাগলো।

৬৪ পৃষ্ঠার উপন্যাসকে খুবই হালকা পাতলা বলে মনে হচ্ছে।

১৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২৪

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ করুণাধারা।
আমি একবার শুরু করে কয়েক পাতা পড়ে থেমে গিয়েছিলাম। খুব একটা আরামদায়ক না, একটু অস্থিরতায় ছিলাম তাই হয়তো এগোতে পারিনি। তবে পরের বার যখন শুরু করলাম তখন কয়েক পাতা পড়ার পরই বইয়ে ঢুকে গেছি।
পড়ে ফেলুন। পিডিএফ কপি পাবেন নেট এ।

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বেশ ভালো

১৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৫

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১৬ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪৪

নীল আকাশ বলেছেন: এই লেখকের কোনো বই আমার পড়া হয় নি। রিভিউ পড়ে বইটা পড়ে দেখার আগ্রহ হচ্ছে।

১৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৩

ফয়সাল রকি বলেছেন: আমিও যে খুব বেশি পড়েছি তা নয়, তবে ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য (গল্প গ্রন্থ) পড়েছি আর এটা পড়লাম। পড়ুন ভালো লাগবে।

৫| ১৬ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৩৬

অগ্নি সারথি বলেছেন: চমতকার রিভিউ! রিভিউ পড়েই পড়বার স্বাধ জাগলো।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:০৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ। পড়ে ফেলুন।

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:০১

অধীতি বলেছেন: অনেকেই পছন্দ করেনা ওনার লেখা,কিন্তু আমার বড্ড লাগে।কি সুন্দর করে একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে নিয়ে যান তিনি।একজন তর্কের সময় বলেছিল ওনার লেখায় কোন দারুণ উক্তি নেই,তখন মিট মিট হাসা ছাড়া উপায় ছিলনা।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৫৩

ফয়সাল রকি বলেছেন: দারুন উক্তি কি ভালো লেখার মানদন্ড? যাইহোক, আমি খুব বেশি লেখা পড়িনি। এটাই প্রথম উপন্যাস, এছাড়া কিছু ছোটগল্প পড়েছি। পড়তে একটু সময় লাগে, তবে পড়ার পর তৃপ্তিও আসে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.