নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব - ১
পর্ব - ২
পর্ব - ৩
পর্ব - ৪
পর্ব - ৫
ছয়
বেলা বারোটার বাজার পর থেকে আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। সূর্যের তীব্রতা কমলেও ভ্যাপসা গরমটা কমছে না কিছুতেই। মাঠে যাদের বোরোধান এখনো কাটা হয়নি তারা খানিকটা দুঃশ্চিন্তা বোধ করে। চৈত্রমাস শেষ না হলেও কালবৈশাখীর হানা হতে পারে। আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ বাড়তে থাকলে কৃষকদের দুঃশ্চিন্তাও বাড়তে থাকে।
রূপকথা বারান্দায় বসে ছিল। মেঘেদের আনাগোণার বিষয়টা এখনো ধরতে পারেনি। রাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে। সেটা নিয়েই খানিকটা চিন্তাগ্রস্থ। একান্তই ব্যক্তিগত একটা স্বপ্ন তাই কারো সাথে আলোচনাও করতে পারছে না। এমনকি চুপকথার সঙ্গেও না।
স্বপ্নের শুরুতে বেশ সুখী সুখী একটা ভাব ছিল। রূপকথার বিয়ে। কার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে সে নিশ্চিত না। বেনারসী শাড়ি পড়ে বাসর ঘরে অপেক্ষা করছে। অনেক রাত হয়ে গেছে অথচ বর আসছে না। অপেক্ষা করতে করতে বেশ ঝিমুনির মতো চলে এসেছে, এমন সময় দরজা বন্ধ করার শব্দ পেল। লম্বা ঘোমটা টেনে দেবার ফলে কে এলো সেটা ঠিক দেখতে পেল না। মানুষটা কাছে আসতেই আঁশটে গন্ধ পেল সে। মানুষটা যতই কাছে আসছে গন্ধের তীব্রতা ততই বাড়ছে। খুব অস্বস্ত্বিবোধ হতে লাগলো ওর। ঘোমটা সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো বড়ো কাতল মাছের মাথাওয়ালা একটা মানুষ, যার হাত-পা সবই মানুষের মতো- মাথাটাই শুরু মাছের মতো। আশ্চর্য ব্যাপার হলো মাছটা হুবহু মানুষের একটা চশমা পড়ে আছে। মোটা ফ্রেমের চশমা। রূপকথা ঘোমটা সরিয়ে মানুষটার দিকে তাকাতেই ওর দম বন্ধ হয়ে গেল, চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল আর মানুষটাও “ঘোৎ” জাতীয় একটা শব্দ করলো। এরপর আর কিছু মনে নেই। সম্ভবত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল কিংবা স্বপ্ন ভেঙ্গে গিয়েছিল। বাকী রাতটা সে আর ঘুমাতে পারেনি।
এ জাতীয় আজগুবি স্বপ্নের নিশ্চয় কোনো ব্যাখ্যা নেই। মোটা ফ্রেমের চশমার ব্যাপারটা কি মারুফের থেকে এসেছে কিনা সেটাও ভাবছে। কিন্তু মারুফের গা থেকে তো কোনো আশটে গন্ধ আসে না তাহলে মাছের মাথার সাথে এর সম্পর্ক কী? নাকি নিছক ভীতি থেকেই এরকম একটা স্বপ্ন দেখলো সে? তাছাড়া স্বপ্নে তো গন্ধ পাবার কথা নয়।
স্বপ্নের বিষয়টা কারো সাথে আলোচনা করা যাচ্ছে না। চুপকথা শুনলে নিশ্চয় খুব হেসে নেবে এক চোট। তাছাড়া এই কয়দিনেই ও মারুফের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। কাজেই ওকে কিছুই বলতে ইচ্ছা করছে না রূপকথার। এছাড়া বাকী থাকে- মা। মা’কে বলা যেতে পারে তবে সামান্য সংশোধন করে, যেমন- মোটা ফ্রেমের চশমার কথা বাদ দিয়ে।
হোস্টেলে থাকলে অবশ্য রুমমেট বৈশাখীকে বলা যেতে। বৈশাখীর কথা মনে হতেই মনটা ভালো হয়ে গেল। এখনি একটা ফোন করতে যেতে পারে। বৈশাখী কি এখন ক্লাশ করছে? করুক ক্লাশ তারপরও সে কল করবে।
বৈশাখী আজ ক্লাশে যায়নি। নিজের রুমেই ছিল। মাসুদ রানা পড়ছিল। রিংটোন বাজতেই ছবিসহ রূপকথার নাম ভেসে উঠলো। বেশ ক’দিন হলো বাড়ি গিয়েছে অথচ একবারই জন্যও ফোন করেনি। খানিকটা সময় নিয়ে কলটা রিসিভ করলো সে। ওপাশ থেকে ভেসে এলো, কিরে কেমন আছিস?
- উম... ভালো।
- তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ?
- না এমনি। শুয়ে আছি।
- ফাঁকিবাজি? আমি নেই এই সুযোগে ক্লাশ কামাই!
- মাঝে মাঝে ফাঁকিবাজি দরকার আছে। কিন্তু তোরও তো কাণ্ডজ্ঞান নেই, বাড়ি যাবার পর একটা কলও দিলি না! মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছিস আর এদিকে হোস্টেলের ডাল-ভাত খেতে খেতে আমাদের পেটের বারোটা বেজে যাচ্ছে। আন্টি কেমন আছে রে? চুপকথা?
- আছে, ভালো আছে।
- তুই কবে আসবি? সবাই তোর কথা জিজ্ঞেস করে।
- জিজ্ঞেস করার দরকার কী? একটা কল করলেই তো পারে। আদিখ্যেতা! আচ্ছা, তোরা কি ক্লাশ বাদ দিয়ে খুব আড্ডা মারছিস?
- না রে তেমন কিছু না। তোকে কিন্তু সবাই মিস করছি।
- একটা বিশেষ আলাপ আছে তোর সাথে। খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখলাম রাতে।
- কী স্বপ্ন? ভয় পেয়েছিস?
- না ঠিক ভয় না, তবে খুব বাজে। দেখলাম- আমার বিয়ে হচ্ছে।
- তাহলে খুশির খবর! ভয় পাচ্ছিস কেন?
- আহ, পুরোটা আগে শোন। দেখলাম একটা মাছের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। মাছের সাথে ঠিক না, যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে পুরোপুরি মানুষ কিন্তু মাথাটা হলো মাছের!
- মৎস্য মানব! আর কী দেখলি?
- আর গা থেকে বিশ্রী আঁশটে গন্ধ বের হচ্ছিল।
- মাছের গা থেকে তো আঁশটে গন্ধই বের হবে, আতরে গন্ধ আসবে নাকি?
- ফাজলামো করিস আমার সাথে?
- ফাজলামো করবো কেন? তোর কি বাসায় বিয়ে কথাবার্তা চলছে? হুট করে এরকম একটা স্বপ্ন দেখলি কেন?
- জানি না। তবে মানুষটা একটা মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে ছিল! মারুফ ভাইয়ের মতো।
- কার মতো?
- মারুফ ভাই। আমাদের অতিথি। ঢাকা থেকে এসেছেন, কী সব জরিপ-টরিপ করছেন।
- দেখতে কেমন?
- মোটামুটি। বেশি ভালো না।
- কালো?
- না কালো না। তবে ধবধবে সাদাও না।
- মারুফ ভাই’র গা থেকে আঁশটে গন্ধ বের হয়?
- মোটেও না। মারুফ ভাই খুব টিপটপ মানুষ।
- বুঝেছি।
- কী বুঝলি? মোটেও খারাপ ইঙ্গিত করবি না।
- আচ্ছা করবো না। শুধু একটা কথা বল। স্বপ্নটা কি গভীর রাতে দেখেছিস না ভোর রাতে?
- মনে হয় ভোর রাতে। ঘুম ভাঙ্গার পর মটকা মেরে পড়েছিলাম, কিছুক্ষণ পর আযান দিল।
- তাহলে হয়ে গেছে।
- কী?
- মাছের সাথে তোর বিয়ে কনফার্ম। ভোর রাতের স্বপ্ন মিথ্যা হয় না।
- আবার ইয়ার্কি?
- মাছের জায়গায় মারুফ ভাইকে বসিয়ে নে।
- হুম, তারপর বিয়েতে ওর মাথাটা রেঁধে সবাইকে খাওয়াই! তোর সাথে কথা বলাই বৃথা। ছাড়ছি।
- শোন শোন শোন। রাখিস না। মারুফ ভাই’র একটা ছবি পাঠিয়ে দে মেসেঞ্জারে।
- পারবো না।
- দিস প্লিজ।
- দেখা যাক।
রূপকথা ফোনটা রাখলো।
বৈশাখীর সাথে কথা বলে নিজেকে খানিকটা হালকা মনে হলো ওর। কিন্তু যা ভাবছে তা কেন ভাবছে? মারুফ কি শুধু সার্ভে করার জন্য গ্রামে এসেছে নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? তাছাড়া সেরকম কোনো উদ্দেশ্য থাকলে মা নিশ্চয়ই একবার হলেও ওকে বলতো। নাকি সে মারুফকে পছন্দ করতে শুরু করেছে? এতো কম সময়ে কি কাউকে পছন্দ করা যায়?
রূপকথা যখন এসব সাত-পাঁচ ভাবছিল তখন চুপকথাকে দেখলো দুইটা মগ নিয়ে ওর দিকে আসছে। ওর সামনে টেবিলে মগ দুটো নামিয়ে রেখে বললো, আপু কফি খাবা?
- তুই জানিস না, আমি কফি পছন্দ করি না?
- মারুফ ভাই পছন্দ করে। উনার জন্য বানাতে গিয়ে ভাবলাম তোমার জন্যও বানাই।
- তোর মারুফ ভাই যা পছন্দ করে তা কি আমাকেও পছন্দ করতে হবে?
- তোমার ইচ্ছা। দুই মগ এনেছি, একটা তোমার আর একটা মারুফ ভাই’র।
- তোর মারুফ ভাই আজ ঘুরতে যায়নি?
- আকাশ খারাপ দেখে ঘরেই বসে আছে। আর বারবার ‘তোর মারুফ ভাই’ বলছো কেন? তোমার কী হয়?
- আমার আবার কী হবে? পাকামো করিস আমার সাথে?
চুপকথা বোনের কপট রাগ দেখে হাসলো। বললো, এখন যাও তো মারুফ ভাইকে কফিটা দিয়ে আসো।
রূপকথা খানিকটা বিরক্ত নিয়ে বললো, আমি যাবো কেন? উনি কি আমার কাছে কফি খেতে চেয়েছেন?
- আমার কাছেও তো চায়নি। তবুও মনে হলো এমন মেঘলা দিনে কফি খেতে খেতে কত রকম গল্প করা যেতে পারে।
- তোর গল্প করতে ইচ্ছে হলে তুই যা, আমাকে এসবে ডাকবি না একদম।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
চুপকথা একটা কফির মগ তুলে নিয়ে রওয়ানা দিল। দু’চার কদম যেতেই রূপকথা ডাকলো, এই গাধা দাঁড়া।
চুপকথা দাঁড়িয়ে পড়লো।
- দে আমাকে দে। খুব জ্বালাস তুই।
কিছুক্ষণ পর দুই মগ কফি নিয়ে অতিথিশালার সামনে দাঁড়ালো রূপকথা। দুই হাতে মগ ধরে থাকায় দরজায় নক করতে পারলো না। খুক খুক করে কাশি দিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। বেশ কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হলেও ভেতর থেকে দরজা খুললো না দেখে সে আবারো কাশি দিল। পা দিয়ে সামান্য ধাক্কা দিতেই দরজার খুলে গেল। বুক ভরে শ্বাস নিল একবার যেন আঁশটে গন্ধ শোঁকার ব্যর্থ চেষ্টা। ভেতরে উঁকি দিল। মারুফ বিছানায় আধশোয়া হয়ে কিছু একটা পড়ছে, ওর উপস্থিতি বুঝতে পারেনি। রূপকথা বললো, এই যে, দরজাটা একটু খুলবেন? ভেতরে আসতে চাই।
হুরমুর করে উঠে বসলো মারুফ। রূপকথা ততক্ষণে ভেতরে ঢুকে গেছে। বললো, কফি চলবে?
- অবশ্যই চলবে। কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে আমার এখন কফি লাগবে?
রূপকথা মিষ্টি হেসে বললো, আপনার তো কফি পছন্দই না!
রূপকথার হাত থেকে কফি নিয়ে সে বললো, হুম আসলেই পছন্দ না। তবে এনেই যখন ফেলেছো, তখন আর নষ্ট করে লাভ কি?
- বাইরের আবহাওয়া দেখেছেন? চমৎকার না?
- চমৎকার তো মনে হচ্ছে না। ঝড় হতে পারে।
- হ্যাঁ, কালবৈশাখী!
- কালবৈশাখী ঝড় তো শুনেছি বৈশাখ মাসে হয়। কিন্তু এটা তো বৈশাখ মাস না। চৈত্র মাস। এ মাসে কি কালবৈশাখী হতে পারে?
- কেন পারে না? অবশ্যই পারে। তাছাড়া এখন তো ষড়ঋতুর ধারণাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। ভেবে দেখুন তো, এখন কি আক্ষরিক অর্থে ষড়ঋতু আছে?
- হুম চিন্তার বিষয়। আমি তো ভাবছিলাম, বৈশাখ মাসে হয় বলেই ঝড়ের নাম কালবৈশাখী। এই নিয়মে নামকরণ হলে আজকের ঝড়ের নাম হবে- কালচৈত্রী!
- না না, এমন কোনো নিয়ম নেই। আর কালচৈত্রী নামে কোনো ঝড়ও নেই। তবে আজ ঝড় হবে না, শুধু বৃষ্টি হবে। ঝুম বৃষ্টি।
- ঝড় হবে না কেন? বেশ তো বাতাসের শব্দ পাচ্ছি। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা বজ্রপাতও হচ্ছে আশেপাশে।
- আমার মন বলছে, আজ ঝড় হবে না। আমার ইএসপি ক্ষমতা অনেক ভালো। আগে থেকেই অনেক কিছু বুঝতে পারি।
- আর কী কী বুঝতে পারো?
- এই যে, আপনি শুধু গবেষণার কাজে আসেননি, সাথে অন্য একটা উদ্দেশ্যও আছে। আমি এখনো জানি না সেটা কী, তবে জেনে যাবো।
মারুফ চমকে উঠলো কিন্তু বাইরে থেকে বুঝতে দিল না। বললো, হতে পারে আবার নাও হতে পারে।
- সত্যিই যদি আপনার অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আমাকে বলতে পারেন, সাহায্য করতে পারি।
- আপাতত থাক। সময় হলে জানাবো।
- ঠিক আছে। আপাতত তাহলে কফিতে চুমুক দিন, ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। গরম কফির আলাদা একটা মজা আছে।
মারুফ কফিতে চুমুক দিল। বললো, চিনি সামান্য বেশি হয়েছে।
- পরের বার কমিয়ে দেব। আপনার চশমার পাওয়ার কত?
- অনেক পাওয়ার।
- চশমা ছাড়া দেখতে পান?
- পড়তে সামান্য অসুবিধা হয়।
- চশমা ছাড়া আমাকে দেখলে চিনতে পারবেন?
প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মৃদু হাসলো মারুফ। বললো, তোমার ইএসপি ক্ষমতার আরেকটা উদাহরণ দাও। দেখি বিশ্বাসযোগ্য হয় কিনা।
- আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না। চুপকথার হাত দেখার মতো ভাবছেন? সেদিন তো বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা বললেন!
- হাত দেখা একটা বিদ্যা!
- তাহলে আমার হাতটা একবার দেখে দিন। শুধু বলবেন, যার সাথে আমার বিয়ে হবে সে কি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলে নাকি বলে না?
রূপকথা একটা হাত মেলে ধরলো মারুফের সামনে। মারুফের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো কয়েক মুহূর্ত তারপর বললো, তোমার হাত অনেক সুন্দর। চশমা ছাড়াও চিনতে পারবো।
রূপকথা বাড়ানো হাতটা টেনে নিল। বললো, জানতাম, আমার হাত দেখে বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলার রিস্ক আপনি নেবেন না।
- হা হা হা, ঠিকই বলেছো। ইএসপি ক্ষমতা বেশি এমন মানুষের হাত দেখাটা খুবই সাহসের কাজ। কিন্তু ইএসপি ক্ষমতার উদাহরণ তো দিলে না?
- এই যে, একটু পরে ইলেকট্রিসিটি চলে যাবে। তারপর শুরু হবে বৃষ্টি।
- এটা তো সহজেই অনুমান করা যায়। ঝড়-বৃষ্টির সময় গ্রামে গঞ্জে ইলেকট্রিসিটি বন্ধ করে দেয়া হবে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে। তাই না?
রূপকথা কিছু বলার আগেই ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। ঘর প্রায় অন্ধকার, দুজনের অবয়ব বোঝা যাচ্ছে কেবল। কাছে কোথাও বিকট শব্দে বজ্রপাত হলো। শব্দের আগেই এক ঝলক আলো ভাসিয়ে দিয়ে গেল অতিথিশালা। এক পলকের জন্য দেখে নিল একে অপরকে। কেউ কথা বলছে না। রূপকথা হয়তো অপেক্ষা করছে সম্ভাবনাময় কিছুর জন্য। আরো কয়েকটা মুহূর্ত পেরিয়ে গেল। কফি মগে চুমুক দিতেও যেন ভুলে গেছে সে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, এখন কি আপনি আমাকে চিনতে পারছেন? অন্ধকারে?
মারুফ কিছু বললো না।
- আপনি চাইলে আমার সুন্দর হাতটা একবার ধরতে পারেন।
রূপকথা হাত বাড়িয়ে দিল। কিন্তু মারুফের মধ্যে হাত ধরার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। সে উঠে গিয়ে জানলা খুলে দিল। বাইরে ততক্ষণে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। জানলা খোলার সাথে সাথে বৃষ্টির ছাঁট এসে পড়তে লাগলো ঘরের ভেতরে সেই সাথে সুযোগ পেয়ে খানিকটা আলোও অনধিকার প্রবেশ করলো। সে বললো, অবিবাহিত ছেলে মেয়ের এভাবে অন্ধকার ঘরে বসে থাকা উচিত নয়। কেউ দেখে ফেললে মন্দ ভাববে।
রূপকথা ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। নিজের ওপর খুব রাগ হলো ওর। কেন এভাবে নিজেকে ছোট করতে গেল। কী বিশ্রী একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেললো! লজ্জায় মাথা নীচু হয়ে যাচ্ছে, কীভাবে মারুফের সামনে দাঁড়াবে এরপর?
রাগ, লজ্জা নাকি অপমান সঠিক বোঝা গেল না, যেমনটা বোঝা গেল না সে কাঁদছে কিনা। কারণ বৃষ্টির ভেতরে পানি আর অশ্রু আলাদা করা যায় না। তবে রূপকথা বেশ সময় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজলো যতক্ষণ পর্যন্ত না ওর চোখ লাল হয়ে ওঠে।
(চলবে)
ছবি: গুগলমামা।
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫৩
ফয়সাল রকি বলেছেন: কড়কড়ে মন্তব্য!
২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫৮
করুণাধারা বলেছেন: আপনার বর্ণনায় চরিত্রগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রূপকথার মতো বয়সী মেয়েরা এ্যাডভেনচারাস হয়ে এমন হঠকারিতা করে ফেলে। দেখা যাক ঘটনা কোন দিকে রায়...
মারুফের আসার পেছনে আরেকটা গোপন উদ্দেশ্য আছে বোঝা যাচ্ছে। দেখি কতটা প্রকাশ পায়!!
গল্প কোথাও ঝুলে যায়নি। ++++
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:০২
ফয়সাল রকি বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
অন্তত আপনার জন্য হলেও সিরিজটা শেষ করা উচিত। চেষ্টা করবো। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরঝরে লেখা।