নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক
দুই
তিন.
ক্লাশ শেষ করে সরাসরি ক্যান্টিন থেকে দুপুরের খাবারটা খেয়ে রুমে ফেরে শুভ। কোনো কোনো দিন ক্যান্টিনে সিতিমা সঙ্গে থাকে। সাধারণত এ রুটিনটাই বেশি চলে। তবে আজ ক্ষুধামন্দা একটা ভাব এসেছে। হয়তো দেরিতে সকালের নাস্তা করার ফলে এমনটা হচ্ছে। ক্যান্টিনে না গিয়ে সরাসরি রুমে ফিরলো। সিতিমাও ক্যান্টিনে যাবার জন্য ডাকেনি। গত কয়েকদিন ধরেই সিতিমা ওকে সামান্য এড়িয়ে চলছে কি? হতে পারে।
এতদিন চারজনের রুমে তিনজন থাকতো ওরা। নতুন ব্যাচ ক্যাম্পাসে আসার পর হলে সিটের কিঞ্চিত সংকট তৈরি হওয়ায় ওর রুমে ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে তুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। নিজের টেবিলে বইখাতা রাখে শুভ। টেবিলের ওপর একটা প্যাকেট আর একটা হলুদ খাম পড়ে থাকতে দেখে। ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেটা রুমেই ছিল। সে বলল, ভাইয়া আপনার পার্সেল এসেছে।
- হু।
- আমি রিসিভ করে রেখেছি। আমাকে দিতে চাইছিল না। বারবার আপনাকে খুঁজছিল।
শুভ প্যাকেটটা হাতে নিল। প্রতি মাসেই এরকম একটা প্যাকেট আসে। বলল, আমার বাসা থেকে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ওষুধ থাকে তো তাই কুরিয়ার কোম্পানিকে ইন্সট্রাকশন দেওয়া থাকে যাতে প্রাপকের হাতেই দেয়।
- ও, আমি আসলে বুঝতে পারিনি।
- ঠিক আছে, অসুবিধা নেই। আসলে তুমি নতুন তো, তাই ডেলিভারিম্যান ঝামেলা করেছে।
প্যাকেটটা নিয়ে ট্রাংকে রাখলো তালাবন্দি করে। কয়েকমাস হলো শুভ আর ওষুধগুলো খাচ্ছে না। কিছুদিন অনিয়মিতভাবে খাবার পরে ওর মনে হলো, ওষুধ না খেলেও সমস্যা হবে না। ওষুধ বন্ধ করে দেবার পর তেমন একটা অসুবিধা হয়নি, রাতে ঘুমাতেও খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।
- কীসের ওষুধ ভাইয়া?
ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেটা জিজ্ঞেস করতেই ওর দিকে ফিরলো শুভ। বলল, ‘জন্মগত কিছু শারীরিক সমস্যা আছে আমার। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়।’
- ও, আশেপাশে পাওয়া যায় না ওষুধগুলো?
- যায়, আবার যায় না। পুরো মাসেরটা একবারে কিনে পাঠিয়ে দেয়।
অসুস্থতার আসল কারণটা বললো না সে। কাউকেই বলে না, এমনকি সিতিমাকেও বলেনি। ছেলেটা আর কিছু জিজ্ঞেস না করায় স্বস্তিবোধ করল। হলুদ খামটার প্রতি নজর পড়ল ওর। মায়া পাঠিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে একটা দুইটা করে চিঠি দেয়। সে নিজেও নিয়মিত চিঠির উত্তর দেয়। একবার তো সিতিমার সামনে পড়ে গিয়েছিল। সেদিন মায়ার চিঠির প্রতি-উত্তর লিখে কবিতার খাতার ভেতর রেখেছিল। কী মনে করে সিতিমাও সেদিনই খাতাটা হাতে নেয়। লুকিয়ে লুকিয়ে চিঠিটা পড়ে ফেলে সে, তারপর শুরু করে জেরা! ক্রমান্বয়ে মনোমালিন্য তৈরি হয়, যদিও বেশিদূর গড়ায়নি সে ঘটনা। তার আগেই শুভ মিটমাট করার ব্যবস্থা নেয়। এরপর থেকে চিঠির ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে সে। খামটা একপাশে ছিঁড়ে ফেলল, সামান্য ঝাঁকি দিতেই চিঠিটা টুপ করে বেরিয়ে পড়ল। বেশ মোটা মনে হলো ওর। ভাঁজটা খুলতেই কয়েকটা শুকনো গোলাপের পাতা পেল যেগুলো কাগজের সাথে আটকে গিয়েছে। সামান্য সৌরভ কি ছড়াচ্ছে? শুভ নাকের কাছে নিল চিঠিটা। হয়তো খানিকটা গন্ধ পেল পাপড়ি থেকে। বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চিঠিটা পড়তে শুরু করল। বেশ বড়ো চিঠি, প্রায় তিন পাতার।
সন্ধ্যার দিকে বাতি নিভিয়ে ঘরে শুয়েছিল শুভ। রুমমেটটা যে যার মতো বেরিয়ে গেছে। ওর বের হতে ইচ্ছে করছিল না। মনে মনে একটা কবিতা ভাঁজছিল। মায়ার চিঠিটার উত্তর লেখা দরকার, এবারের চিঠিটা কবিতার ছন্দে হলে নিশ্চয় মন্দ হয় না। কেমন যেন একটা উত্তেজনা বোধ করল ও। বাতি জ্বেলে কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়ল। টানা কয়েকটা লাইন লিখেও ফেলল। তারপর চলল বিরতি। মায়ার চিঠিটা বের করে আরেকবার পড়ল। টানা টানা চোখ, প্রতিমার মতো একটা চেহারা ফুটে উঠলো ওর মানস চোখে। ধর্মটা আলাদা বলেই কি মায়ার সাথে ওর দূরত্ব? নাকি অন্য কিছু? সে কি সত্যিই সিতিমাকে ভালোবাসে? মায়া তো শুধুই ওর বন্ধু, বাল্যবন্ধু। কিন্তু মাঝে মাঝে মায়া এমন অদ্ভুত আচরণ করে যেন শুভর ওপর ওর চিরকারের দাবি! ঠিক বুঝতে পারে না শুভ। মায়ার সঙ্গ, কথোপকথন ওরও ভালো লাগে।
কবিতাটা শেষ করে মায়াকে ফোন করল শুভ। রিং হবার সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ করে ওপাশ থেকে মায়া বলল, যাক সারাদিনে একবার অন্তত সময় হলো মহাশয়ের!
- হলো তো। তোমার তো সে সময়টাও হলো না।
- আমি তো অপেক্ষা করি।
- আচ্ছা, চিঠিতে গোলাপের পাপড়ি না দিলে হয় না?
- কেন, কী সমস্যা?
- কাগজের সাথে আটকে যায়। খুব বিরক্ত লাগে। আর গোলাপ দিলে সাদা গোলাপের পাতা দিবা, লাল গোলাপ কেন দাও? আমি কি তোমার প্রেমিক নাকি?
- আমি কি ইচ্ছা করে দিই নাকি, হাতের কাছে যা পাই তাই তো দিই।
শুভ কিছু বলল না।
মায়া বলল, ‘কেন তুমি রাগ করো?’
- রাগ করা না করাটা বড়ো বিষয় না, বড়ো বিষয় হলো, তুমি আমাদের সম্পর্কটাকে কীভাবে দেখো?
- যেভাবে আগে দেখতাম সেভাবেই দেখি।
- কথা ঘুরাবে না। তুমি আমার বন্ধু। ব্যাস, এইটুকুই।
ওপাশে মায়া নীরব।
- পছন্দ হলো না মনে হয়?
- পছন্দ হবে না কেন? তোমার সবকিছুই তো আমার পছন্দ হয়। এত পছন্দ যে মাঝে মাঝে নিজেকেই ভুলে যাই। কী ভাবো তুমি নিজেকে? সবার সেরা? সুপার হিউম্যান?
- তুমি কিন্তু রেগে যাচ্ছ!
- রেগে যাচ্ছি বেশ করছি।
- শোনো তোমাকে একটা কথা স্পষ্ট বলে দিই। তুমি যতই ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে কথা বলো না কেন আমি তোমার প্রতি মোটেই দুর্বল না। হ্যাঁ, তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই।
- তোমার সাথে কথা বলতে আমার মোটেই ভালো লাগে না।
- তা তো আমি জানি। ভালো লাগে না বলেই তো রোজ রোজ কথা বলো, ক’দিন পরপর চিঠি লেখো, লাল গোলাপের পাপড়ি পাঠাও!
- তুমি আসলে কী বলতে চাও?
- কিছু না। একটা কবিতা লিখলাম। ভাবলাম, তোমাকে শোনাই।
- শোনাও।
- না থাক। আরেকদিন।
শুভ লাইনটা কেটে দিলো। কয়েক সেকেন্ড পরে ফোনটা বেজে উঠলো। মায়া কল করেছে। শুভ রিসিভ করল না। কেটে দিলো। কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। আবার মায়ার কল এলো। এবার সে ফোনটা সাইলেন্ট করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলো। স্বয়ংক্রিয়ভাবে কলটা কেটে যাবার সাথে সাথেই সে সিতিমার নম্বর ডায়াল করল। ভাবার চেষ্টা করল সিতিমা এখন কী করছে? পড়ছে নাকি টিভি দেখছে নাকি আড্ডা দিচ্ছে!
সিতিমা ক্যান্টিনে ছিল। নাস্তা পরবর্তী চা চক্র চলছিল। এসময় বেজে উঠলো ফোনটা। ট্রাউজার পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে ভাবছিল অসময়ে কে হতে পারে। শুভর নম্বর দেখে খানিকটা বিস্মিত হলো। রিসিভ করে শীতল কণ্ঠে বলল, ‘হ্যালো।’
- কী করো?
- কিছু না। চা খাই।
- চা আবার কেউ খায় নাকি? চা তো পান করে।
- খায়। কেউ কেউ খায়।
- বের হবা?
- মানে? তুমি কোথায়?
- আমি আমার জায়গাতেই আছি। বের হবা নাকি? আসবো?
- কেন?
- তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।
- ইর্য়াকি করবা না একদম। তোমার বান্ধবীর সাথে দেখা করো গিয়ে। সে তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
- সে তো আর এই শহরে নেই, অন্য শহরে থাকে। এখানে থাকলে তো কখনই চলে যেতাম।
- সেই যাও। দৌড়ে, লাফিয়ে, উড়ে চলে যাও ওর কাছে।
- শোনো না, একটা কবিতা লিখেছি তোমার জন্য। শুনবে?
- তোমার বান্ধবীকে শোনাও।
- তোমার জন্য লেখা কবিতা তো ওকে শোনানো যাবে না। আমি আসছি। তুমি রেডি হও। হার্ডলি পনেরো মিনিট।
- আসবে না, আমি বেরও হবো না।
- সে তোমার ব্যাপার। আমি আসছি।
লাইনটা কেটে গেল। খানিকক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো সিতিমা। আজব একটা মানুষের সাথে প্রেম ওর, কখন কী করে না করে কিছুই অনুমান করা যায় না।
পনেরো মিনিট পরে শুভ হলের গেটে হাজির। সিতিমাই বরং কয়েক মিনিট দেরিতে বের হলো। তারপর রিক্শায় করে ঘুরলো অনেকক্ষণ। কবিতা শুনলো, গল্প করল, পাশাপাশি হাঁটলো। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল সে। কয়েকদিন ধরে জমিয়ে রাখা অভিমান এক সন্ধ্যায়ই কেটে গেল সিতিমার।
(চলবে)
ফটো: গুগল/শাটারস্টক।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৫৭
ফয়সাল রকি বলেছেন: শেষ পর্বে সব বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে আশা করছি।
আপনার সুন্দর মন্ত্যব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ডিকশনারী ঘাটতে গিয়ে সিতিমা নামটা পেলাম। ভালো লেগেছে আমারো।
২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: বই আকারে যখন এটা প্রকাশ করবেন- শিরোনামটা বদলে দিবেন।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৩৩
ফয়সাল রকি বলেছেন: এটা একক বই আকারে প্রকাশ করার মতো বড়ো না, তবে আশা করছি আমার আগামী গল্পগ্রন্থে থাকবে।
ধন্যবাদ রাজীব ভাই।
৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:০২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পর্বগুলোতে যেখানে শেষ করছেন, তারপর কন্টিনিউইটি থাকলে আরেকটু ভালো লাগতো। আগের পর্বে সিতিমা টিভি দেখছিলো, তখন শুভ তার হলের গেটে আসে; এখানে শেষ হয়েছিলো। এরপর এই পর্ব আবার শুরু হলো শুভ'র ক্যান্টিন থেকে হলে ফেরা দিয়ে। প্রতিটি পর্ব যদি আলাদা একটা গল্প হতো তাহলে অন্য কথা, কিন্তু এখানে যেহেতু গল্পটি চার পর্বে ধারাবাহিক, তাই এই কন্টিনিউইটি ছুটে যাওয়াটা পাঠক হিসেবে একটু খচখচ অনুভূতি যাগ্রত করে। যদিও আমি পাঠক হিসেবে খুব উচ্চমানের নই।
ভালো থাকবেন, লেখালেখি চলতে থাকুক। শুভকামনা জানবেন।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২২
ফয়সাল রকি বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।
এখানে একটু ব্যাখ্যা দেয়া দরকার। পর্ব চারটা এক গল্পর হলেও সময় ভিন্ন, একই সময়ের কন্টিনিউশন নয়। এজন্যই আলাদা পর্বে ভাগ করা হয়েছে। না হলে টানা একসাথেই চলতে পারতো।
আমিও লেখক হিসেবে খুব আনাড়ি।
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৩২
আখেনাটেন বলেছেন: তিন পর্বই পড়লাম....শুভকে মনে হচ্ছে ক্রনিক কোনো সিরিয়াস ডিজিজে ভুগছে...এবং ওর পরিণতিতেই মায়া-সিতিমা অধ্যায় তথা গল্পের সমাপ্তি....দেখি সমানে....
সিতিমা নামটা সুন্দর রেখেছেন....।