নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চূড়ান্ত রকম ফাঁকিবাজ একজন মানুষ আমি!

ফয়সাল রকি

Know thyself.

ফয়সাল রকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: প্রপঞ্চিত জীবন (শেষ পর্ব-৪/৪)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪৭



এক | দুই | তিন

চার

চমৎকার একটা সন্ধ্যা কাটিয়েও রাতে ফোনেও কথা হলো শুভর সঙ্গে। ঘুমাতে যেতে একটু দেরি হয়ে গেল সিতিমার। ফলাফল অনেকক্ষণ ছটফট করল বিছানায়। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ওর আর ঘুম আসে না। পরের দিন শুক্রবার থাকায় ক্লাশ নিয়ে তেমন একটা ভাবলো না। জেগেই কাটিয়ে দিলো প্রায় সারারাত। তিনটার দিকে শুভকে শেষ একটা মেসেজ পাঠালো যেটার রিপ্লাই এলো না, তারমানে ও ঘুমিয়ে পড়েছে।

ভোররাতের দিকে সিতিমা ঘুমালো। উদ্ভট একটা স্বপ্নও দেখলো সকালে ঘুম ভেঙে যেটা নিয়ে ওর চিন্তিত হবার কথা। কিন্তু চিন্তিত হবার সুযোগ পেল না। কারণ পাশের রুমে থাকা ক্লাশমেট আসমার ডাকে যখন ওর ঘুম ভাঙলো তখন আসমাকে খুব উত্তেজিত দেখাচ্ছিল, ঘড়িতে তখন নয়টা পেরিয়েছে মাত্র! উত্তেজিত আসমার কাছে সে যা জানতে পারে তাতে সে নিজেও উত্তেজিত হয়ে পড়ল। জানলো, গতরাতে শুভ সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে! একসাথে অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে।

এমন কিছু ঘটতে পারে সিতিমা সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না। বিশেষ করে গতকাল চমৎকার একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছে ওরা, শেষ কয়েকদিনে সম্পর্কের যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল তা গতরাতে একেবারে ধুয়ে মুছে গেছে বলা যায়। তাহলে কী এমন হতে পারে যে সে সুইসাইড করতে হবে! পারিবারিক কোনো সমস্যা? নাকি ওর বান্ধবী মায়া সংক্রান্ত? তাছাড়া ওর শারীরিক অবস্থাই বা কেমন? সিতিমা দিশেহারা হয়ে পড়ে। জিজ্ঞেস করে, ‘এখন শুভ কোথায়? কেমন আছে?’
আসমার কাছে হালনাগাদ খবর নেই। ওকে জানিয়েছে শুভর হলের আরেক বন্ধু। সে সিতিমাকে দ্রুত তৈরি হতে তাগাদা দেয়। তারপর দুজন রিক্শা চেপে ভার্সিটির মেডিকেল সেন্টারে যায়। সেখানে শুভকে ইমার্জেন্সিতে শুইয়ে রাখা হয়েছে। ঘুমের ঘোরে আছে, গভীর ঘুম। অবস্থা বিশেষ বোঝা যাচ্ছে না। ছুটির দিন হওয়ায় ডাক্তার পাওয়া যায়নি এখনো, তবে এম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে খবর দেওয়া হয়েছে। সে এলেই ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হবে ওকে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শুভর এক রুমমেট দেখে ওর টেবিলে চার/পাঁচটা ওষুধের খালি পাতা। সন্দেহ হয়। শুভকে ডাকাডাকি করে, শরীর ধরে ঝাঁকি দেয়, চোখে মুখে পানি ছিটায় কিন্তু ওর ঘুম ভাঙে না। তারপর কয়েকজন মিলে ওকে এনেছে মেডিকেল সেন্টারে। সিতিমা জিজ্ঞেস করে, ‘কে আগে দেখেছে? ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেটা?’
শুভর রুমমেটরা একে অন্যের দিকে তাকায়। একজন বলে, ‘আমরা তো তিনজনই থাকি, ফার্স্ট ইয়ারের কেউ তো নেই!’
সিতিমা অবাক হয়। শুভ তো নিজেই বলেছে যে ওদের রুমে নতুন একটা ছেলে উঠেছে। ঐ ছেলেটার গল্পও করেছে। কী যেন নাম বলেছিল সিতিমা মনে করতে পারে না।
এম্বুলেন্সের ড্রাইভার চলে আসে। ওরা ক’জন শুভকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল রওয়ানা হয়। শুভর রুমমেটরা বাসায় খবর দিয়েছে। মেডিকাল গেটে ওর বোন সুতপার থাকার কথা। বয়সে দুই বছরের বড়ো। হোস্টেলে থাকে। সিতিমা নাম শুনেছে, গল্প শুনেছে কিন্তু দেখা হয়নি। বিষয়টা নিয়ে সে খুব একটা চিন্তিত না, ওর এখন একমাত্র চিন্তা শুভর সুস্থতা নিয়ে। কোনোভাবেই সে শুভকে হারাতে চায় না।

ইমার্জেন্সির ডাক্তাররা পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন। জানালেন, ভয়ের তেমন কিছু নেই, ঘুমের ওষুধগুলো লো-পাওয়ারের ছিল। তাছাড়া সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ায় পেশেন্টের ওপর খুব বেশি হয়নি। যা প্রভাব আছে তা কাটতে কিছু সময় তো লাগবেই।
ইতোমধ্যে সুতপা এসে পড়েছে। সে জিজ্ঞেস করল, ‘পেট ওয়াশ করা দরকার আছে কি?’
ডাক্তার জানালেন, ওষুধ রক্তের সাথে মিশে গিয়েছে কাজেই ওয়াশ করে খুব একটা লাভ হবে না। বরং কয়েকঘণ্টা অবজার্ভেশনে থাক, ঘুম না ভাঙা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উত্তম। দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
সিতিমার বুকের ওপর থেকে পাথর নেমে গেল। যাক এ যাত্রায় বেঁচে ফিরুক তারপর মোকাবিলা করবে সে। এভাবে খেয়াল খুশি মতো যা খুশি তাই করবে? আর ঐ মেয়েটার সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করিয়ে ছাড়বে।
সুতপা শুভর রুমমেটদের কাছে থেকে সকালের ঘটনা শুনে। সিতিমা বা আসমার দিকে খুব একটা নজর দেয় না। রুমমেটদের জেরা করতে শুরু করল, শুভ কি নিয়মিত ওষুধ খেতো?
ওর রুমমেটরা আমতা আমতা করে, সম্ভবত নিয়মিত ওষুধ খাওয়া বা না খাওয়ার ব্যাপারটা ওরা খেয়াল করেনি। তাছাড়া একজন মানুষ তো সবসময় অন্যদের দেখিয়ে ওষুধ খাবে না।
সুতপা কিছু একটা আন্দাজ করে নেয়। তারপর সিতিমা-আসমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘অস্বাভাবিক কিছু কি বলতো?’
অস্বাভাবিক বলতে কী বোঝায় তা বুঝতে না পেরে ওরা সুতপার দিকে তাকিয়ে থাকে। সুতপা বলল, ‘এমন কোনো ঘটনা যা আসলে কখনো ঘটেনি? কিংবা এমন কেউ যাকে কেবল সেই দেখেছে?’
সিতিমা বলল, ‘এরকম একটা ঘটনা আছে। আমাকে বলেছিল ওদের রুমে নাকি ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলে উঠেছে কিন্তু আজ জানলাম এরকম কেউ নাকি রুমে উঠেনি।’
- তারমানে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। কবিতা লিখতো নাকি?
সিতিমা অবাক হলো, বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ ইদানীং কয়েক মাস ধরে কবিতা লেখা শুরু করেছিল।’
সুতপা মাথা নাড়লো, বলল, ‘আচ্ছা, আরেকটা কথা বলতো, ওর কোনো বাল্যবন্ধুর কথা বলতো? মায়া!’
সিতিমা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো। সে বুঝতে পারছে না, সুইসাইডের সাথে এসবের সম্পর্ক কী? তবে মায়ার একটা ভূমিকা অবশ্য থাকতে পারে। বলল, ‘মায়ার সাথে নিয়মিত ফোনে কথা বলতো। সম্ভবত চিঠিও চালাচালি করত!’
- আমার উচিত ছিল মনিটরিং করা!
- আপু ঐ মেয়েটার সাথে কি কিছু হয়েছে?
- না, কিছু হবার সম্ভাবনা নেই। মায়া বলে আসলে কেউ নেই। সবই ওর কল্পনা!
সবাই সুতপার দিকে তাকিয়ে রইলো। হয়তো আরো কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করছে।
সুতপা বলল, শুভর একটা অসুখ আছে, মানসিক। এজন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। না হলে ওর অসুখটা বেড়ে যায়। তখন সে কাল্পনায় নিজের মতো করে কিছু চরিত্র তৈরি করে, তারপর ওদের সাথে কথা বলে, বাস্তব জীবনে ওদের নিয়ে আসে। যে কেউ ভাবতে বাধ্য হবে যে সেই মানুষগুলো আছে। ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেটা, মায়া, এরা ওর কাল্পনিক চরিত্র। ওর স্কুলে মায়া নামের কোনো বন্ধু কখনোই ছিল না। ও যাতে ফাঁকিবাজি না করে তাই আমি নিয়মিত ওষুধ পাঠাই। সম্ভবত কয়েক মাস ওষুধগুলো খাচ্ছে না। আর দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে খেতে হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে সুইসাইডের প্রবণতা তৈরি হয়। আগেও একবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।
কেউ কোনো কথা বলছে না। কেউ আসলে কিছু বিশ্বাস করতে পারছে না। সাদাসিধে একটা মানুষের মধ্যে এমন জটিল একটা রোগ থাকতে পারে ভাবাই যায় না।
সুতপা বলেই চলেছে, ‘রোগটার নাম সিজোফ্রেনিয়া! আমার উচিত ছিল তোমাদের আগেই জানানো।’
রুমমেট একজন বলল, ‘কিন্তু ওর নামে তো নিয়মিত চিঠি আসে সরকারি ডাকে। আমি নিজেই কয়েকটা রিসিভ করেছি।’
- হতে পারে শুভ নিজেই পাঠিয়েছে। যে চিঠিগুলো ও মায়াকে লিখতো সেগুলোই হয়তো নিজের ঠিকানায় পোষ্ট করেছে।
শুভর শরীরটা সামান্য নড়ে উঠলো মনে হলো। সবাই ওর জেগে ওঠার অপেক্ষায় তাকিয়ে রইলো।

বি.দ্র.: গল্পটি ইংরেজি সিনেমা- A Beautiful Mind দ্বারা অনুপ্রাণিত।
ফটো: গুগল/শাটারস্টক।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৪৪

তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: শেষটা ভালো ছিলো ।
নতুন লেখার অপেক্ষায় ।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪০

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ তানীম ভাই।
ভালো থাকবেন।

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: কি কাকতালীয় ব্যাপার। গত পরশু এ বিউটিফুল মাইন্ড মুভিটা দেখলাম।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪৭

ফয়সাল রকি বলেছেন: বাহ, ভালো তো। একটা রিভিউ দিয়ে দেন।

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:০৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: যেহেতু গল্পটা শুরু থেকে পড়েছি, ফলে শেষ পর্বে এসে মনে হলো হুট করেই ব্যাখ্যামূলক একটা প্লট দাঁড়ালো যা আগের পর্বগুলোর সাথে কোন সামঞ্জস্য খুঁজে পেলাম না। হয়তো সিনেমাটির আলোকে গল্পটা লিখেছেন, কিন্তু প্রথম পর্ব থেকে কিছুটা ভিন্নতর আবহ যা কিঞ্চিৎ হলেও শেষের অংশের গল্পের হিন্টস দিয়ে যাবে, তা পাঠক হিসেবে পাই নাই। ফলে শেষের অংশটা হুট করেই আরোপিত মনে হলো পাঠক হিসেবে।

ভালো থাকবেন।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:১১

ফয়সাল রকি বলেছেন: চমৎকার গঠনমূলক মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।
ব্যাখ্যামূলক হিসেবে যে পর্বটা দেখছেন সেটাকে আগের গুলোর সাথে সম্পর্কিত না করতে পারাটা আমার ব্যর্থতা। ভেবেছিলাম, পাঠকরা ব্যাপারটা ধরতে পারবে সহজেই কিন্তু আরো কিছু কাজ করা দরকার ছিল বোধহয়।
তবে চারটা পর্ব না করে একসাথে পোষ্ট করলে হয়তো পড়ে একটু আরাম হতো।

ভালো থাকবেন।

৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৩৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দারুণ গল্প।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:০৭

ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.