![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তির ১ পথ খিলাফত খিলাফত খিলাফতের দাবিতে নামতে হবে রাজপথে খলিফা বারবার সৈন্য প্রেরন করবেন। আমার Facebook User Name:- shafiur2012
বাদশাহ জাহাঙ্গীর শৈশবেই নূরজাহানের উপর আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। নূরজাহানও ছিল তখন কিশোরী। ঘটনাটি নিম্নরূপঃ শাহজাদা জাহাঙ্গীর কোন এক মেলায় যান। নূরজাহানও সেই মেলায় গিয়েছিল। শাহজাদার কাছে ২ টি কবুতর ছিল। কোন এক কারণে শাহজাদা জাহাঙ্গীর অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তখন ঘটনাক্রমে নূরজাহানের হাতে কবুতর ২ টি দিয়ে বলে কিছুক্ষনের জন্য রাখতে। কাজ শেষ করে জাহাঙ্গীর দেখতে পেলেন ১ টি কবুতর নেই। তখন নূরজাহান কে জিজ্ঞাস করলেন আরেকটি কবুতর কোথায় গেল ? তখন নূরজাহান বলে কবুতরটি উড়ে গেছে। শাহজাদা জাহাঙ্গীর রাগত স্বরে বলে উড়ে গেল কিভাবে ? উত্তরে নূরজাহান হাতের কবুতরটিও ছেড়ে দিয়ে বলে এভাবে। এই ঘটনা দ্বারাই বাদশাহ জাহাঙ্গীর নূরজাহানের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। আসলে ভালবাসা সৃষ্টি হওয়ার পিছনে বিশেষ কোন নিয়ম নেই। অনেক সময় মানুষের মন এমন সূত্রেও কার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, যা মূলত আসক্তির যোগ্য নয়। আর প্রেম যখন আসে তখন সারা শরীর ভেঙ্গে আসে।
২| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:৫৮
মাহমুদুল হাসান (সুমন)। বলেছেন: প্রেম পবিএ...
৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:১৪
নগর বালক বলেছেন: প্রেম যখন আসে সারা শরীর ভেঙ্গে আসে |
৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:২৫
রাজদ্রোহী বলেছেন: কইস্যা মাইনাচ।বেগানা পুস্ট শরীয়তে পীরিতি নিষিদ্ধ।ব্যাটা ভন্ড
৫| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:২৬
ইকরাম উল্যাহ বলেছেন: ভাঙ্গিয়া চুরিয়া চুরমার করিয়া ফালায়... খান খান করিয়া ফালায়
৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:২৭
এম আশ্রাফ মামুন বলেছেন: আর প্রেম যখন আসে তখন সারা শরীর ভেঙ্গে আসে
যথার্থ।
৭| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:৩১
লেখাজোকা শামীম বলেছেন: মুঘলে আজম সিনেমাটি তৈরি হয়েছে আনারকলি ও সেলিমের প্রেম কাহিনী থেকে। এই সেলিম তো বাদশাহ জাহাঙ্গীর, তাই না ? আর আনারকলি ছিল সম্রাট আকবরের রক্ষিতার মেয়ে।
নূরজাহানের কি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিয়ের আগে আরেকটা বিয়ে হয়েছিল। সেই স্বামীর নামটা ভুলে গেছি। সেনাপতি ছিল। তবে তাকে কৌশলে হত্যা করে জাহাঙ্গীর।
আমি কি ঘটনাগুলো সঠিক বলছি ? অনেক আগে পড়েছিলাম, ভুলও হতে পারে।
৮| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:৪২
সাবু ছেেল বলেছেন: লেখাজোকা শামীম বলেছেন: আর আনারকলি ছিল সম্রাট আকবরের রক্ষিতার মেয়ে।
Bastard ছিলেন আনারকলি,শামীম সাহেব ঠিক বলেছেন।এক হিসাবে সেলিম তাঁর নিজের "বোনকে"ভালবেসেছিলেন;যদিও না জেনে,না বুঝে।কারণ লম্পট আকবর যেই পতিতাকে ভোগ করতেন;অন্য কেউ সেই পতিতাকে ভোগ করতে পারতোনা।
সেই হিসাবে বাস্টার্ড আনারকলি যুবরাজ সেলিমের সৎ বোন ছিলেন!!
৯| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৪১
আরজু পনি বলেছেন:
হুমম, এমনও হয়!
বেগম নুর জাহান। বেগম নূর জাহান ছিলেন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরের খুবই পছন্দের। সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন নূর জাহানের দ্বিতীয় স্বামী। এই যুগলের একে অন্যের প্রতি মোহ এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক কিংবদন্তির (প্রশ্ন সাপেক্ষ) জন্ম দিয়েছে। নুরজাহান ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের একজন সেনাপতির কন্যা। নূর জাহানের প্রকৃত নাম মেহের-উন-নেছা। সম্রাট জাহাঙ্গীর তার রূপগুনে মুগ্ধ হয়ে নাম রাখেন নুর জাহান, যার অথ দুনিয়ার আলো।
তাঁর সন্তান- নিছার বেগম, খসরু, পারভেজ, বাহার বানু বেগম, শাহ জাহান (পরবর্তী সম্রাট), শাহরিয়ার, জাহানদার।
সূত্র::
http://prothom-aloblog.com/posts/81/169056/
১০| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৪২
মেহেরুন বলেছেন: @ শামিম ভাইয়াঃ নুরজাহানের আগের স্বামীর নাম ছিল শের খান। যাকে হত্যা করে জাহাঙ্গীর নুরজাহান কে বিয়ে করেন।
১১| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:৪৫
লেখাজোকা শামীম বলেছেন: এখানে তার পুরো জীবনী পেলাম ............
সাহাদত হোসেন খান: মোগল ভারতে যে ক’জন নারীকে এক নামে সবাই চেনে তাদের একজন হলেন নূরজাহান। নূরজাহান ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের ২০তম স্ত্রী। প্রথম জীবনে নূরজাহানের নাম ছিল মেহেরুন্নিসা। জাহাঙ্গীরই তাকে নূরজাহান নামটি দিয়েছিলেন। নূরজাহান মানে হলো দুনিয়ার আলো। জাহাঙ্গীর ও নূরজাহান একে অন্যকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। স্বামীর প্রতি নূরজাহানের ভালোবাসার সঙ্গে শাহজাহানের প্রতি মমতাজের ভালোবাসা ছাড়া আর কারো তুলনা হয় না। মেহেরুন্নিসার সঙ্গে সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিয়ে হওয়ার এক বছর পর শাহজাহানের সঙ্গে তার ভাইজি আর্জুমান্দ বানু বেগমের বিয়ে হয়েছিল। শাহজাহান আর্জুমান্দ বানু বেগমের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য তৈরি করেছিলেন অমর তাজমহল। জাহাঙ্গীর মেহেরুন্নিসার জন্য তেমন কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেননি। তবে তিনি তার জন্য কিছুই করেননি তা ঠিক নয়। তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। নূরজাহান ছিলেন তার মনের রানী। জাহাঙ্গীরের শেষ জীবনে নূরজাহান ছিলেন কার্যত মোগল সম্রাট। তিনি শুধু জাহাঙ্গীরের হৃদয় শাসন করতেন তাই নয়, সাম্রাজ্যও শাসন করতেন। এজন্য তাকে সম্রাজ্ঞী বলা হয়। তিনিই ছিলেন একমাত্র সম্রাজ্ঞী যার আগমনকালে মোগল দরবারে নওবত বেজে উঠতো।
নূরজাহান ছিলেন শের আফগানের বিধবা স্ত্রী। জাহাঙ্গীর তার বহুমুখী গুণে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। নূরজাহান তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় দখল করে আছেন। ঐতিহাসিক বিদ্যাধর মহাজনের মতে, নূরজাহান ছিলেন অসাধারণ বুুদ্ধিমতী ও উন্নত রুচিবোধের অধিকারী। তিনি শুধু অসাধারণ বুদ্ধিমতী ছিলেন তাই নয়, শারীরিক শক্তি ও সাহসেও ছিলেন অতুলনীয়। তিনি স্বামী সম্রাট জাহাঙ্গীরের সঙ্গে শিকারে বের হতেন। একাধিক বার তিনি কয়েকটি হিংস্র বাঘ হত্যা করেন। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরের প্রতি অনুরক্ত। জাহাঙ্গীর তার রূপ ও গুণে এত মুগ্ধ হয়ে পড়েন যে, তিনি পৃথিবীর সবকিছু ভুলে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, জাহাঙ্গীর তার হাতে সাম্রাজ্য পরিচালনার পুরো দায়িত্বও তুলে দিয়েছিলেন।
নূরজাহানের জন্ম
মোগল সাম্রাজ্যের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক নূরজাহানের জন্ম ১৫৭৭ সালে কান্দাহারে। তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে তার মা আজমত বেগমকে সঙ্গে নিয়ে জন্মভূমি পারস্য ত্যাগ করেন। মির্জা গিয়াস বেগের সঙ্গে ছিল নূরজাহানের আরো দু’ভাই মোহাম্মদ শরীফ ও আবুল হাসান এবং এক বোন। তাদের গন্তব্যস্থল ছিল সম্রাট আকবরের দরবার ফতেহপুর সিক্রি। ইতিপূর্বে গিয়াস বেগের আরো কয়েকজন আত্মীয় তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল। গিয়াস বেগও ভাগ্য পরিবর্তনে ভারতে রওনা দেন। তিনি ছিলেন মূলত তেহরানের সন্তান। তার পিতা খাজা মোহাম্মদ শরীফ ছিলেন একজন কবি। পিতার ইন্তেকালের পর মোহাম্মদ খাজা শরীফ খোরাসানে যান। সেখানে তিনি তাতার সুলতানের উজির পদে নিযুক্তি লাভ করেন। তাতারের সুলতান ছিলেন তখন গভর্নর। গিয়াস বেগের পিতা গভর্নরের মন জয় করেন এবং দায়িত্ব পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করেন। তাতারের সুলতানের মৃত্যু হলে তার পুত্র কাজাখ খান মোহাম্মদ খাজা শরীফকে উজির পদে বহাল রাখেন। তার মৃত্যু হলে শাহ তাহমাস্প সাফাভি তাকে ইয়াজদের উজির পদে নিযুক্ত করেন। ৭ বছর পর তাকে শাহ তাহমাস্পের সভাসদ এবং একইসঙ্গে ইস্পাহানের গভর্নর পদে নিযুক্তি দেয়া হয়। ১৫৭৫ সালে শাহ তাহমাস্পের মৃত্যু হয়। সেসময় মোহাম্মদ খাজা শরীফ ছিলেন দু’পুত্রের পিতা। জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম মোহাম্মদ জহির এবং কনিষ্ঠ পুত্রের নাম মোহাম্মদ গিয়াস বেগ। পিতার মৃত্যুর পর গিয়াস বেগ অবিলম্বে পারস্য ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। অজ্ঞাত কারণে তার পরিবার দুর্ভোগে পতিত হয়। সম্রাট আকবরের দরবারের সুখ্যাতির কথা তিনি শুনেছিলেন। তার দরবারে পার্সীদের কদর করা হতো। গিয়াস বেগ ও তার স্ত্রী আজমত বেগম দু’জনই ছিলেন অভিজাত পরিবারের সন্তান। আজমত বেগমের পিতা ছিলেন মির্জা আলাউদ্দিন। আলাউদ্দিন ছিলেন আকা মোল্লার পুত্র। গিয়াস বেগ মালিক মাসুদ নামে এক সম্ভ্রান্ত বণিকের নেতৃত্বে একটি কাফেলায় যোগদান করেন। পারস্য ভূখন্ডে তাদের কাফেলা ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাতরা তাদের সবর্স্ব লুট করে নিয়ে যায়। গিয়াস বেগ কান্দাহারে পৌঁছার পর আজমত বেগম তার চতুর্থ সন্তানের জন্ম দেন। এ কন্যার নাম রাখেন মেহেরুন্নিসা (মহিলাদের সূর্য)। ডাকাতরা সর্বস্ব লুট করে নেয়ায় মেহেরুন্নিসাকে লালন পালন করার সামর্থ্য তারা হারিয়ে ফেলেন।
জন্ম পরবর্তী অদ্ভূত ঘটনা
জন্মের পর মেহেরুন্নিসার ভাগ্যে কী ঘটেছিল সে ব্যাপারে দু’রকম ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনার দেড় শ’ বছর পর কাফি খান তখনকার একটি বর্ণনা দিয়েছেন। তার বর্ণানুযায়ী গিয়াস বেগ দম্পত্তি কপর্দকহীন হয়ে পড়ায় তারা তাদের সন্তানকে লতাপাতায় পেঁচিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছের নিচে ফেলে যেতে বাধ্য হন। একটু পরে কাফেলার নেতা মালিক মাসুদ সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি লতাপাতায় জড়ানো একটি পুঁটলি দেখতে পান। আলতো করে তিনি পুঁটলিটি তুলে দেন। তাতে একটি ফুটফুটে বাচ্চা দেখে তিনি অবাক হন। সদ্যোজাত শিশুর লাবণ্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে লালন পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। বাচ্চা কোলে নিয়ে তিনি তাঁবুতে ফিরে আসেন। তবে এত ছোট বাচ্চাকে তিনি লালন পালন করবেন কিভাবে সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেন। তিনি একজন দাইমা খুঁজছিলেন। যথাসময়ে তিনি দাইমা পেয়ে যান। নবজাতকের দাইমা হিসাবে তিনি যাকে খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি ছিলেন বাচ্চার প্রকৃত মা আজমত বেগম।
অন্যদিকে আলেঙান্ডার ডাউয়ের ভাষ্য অনুযায়ী মেহেরুন্নিসার জন্মের পর রাতের অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসায় পিতা মাতা উভয়ে ভীত হয়ে পড়েন। তারা জানতেন যে, এক্ষুণি বন্য পশুরা খাবারের অনু্সন্ধানে বের হয়ে আসবে। গিয়াস বেগ ছিলেন খবুই ক্লান্ত। তার মনে মানবতা ও বাস্তবতার মধ্যে লড়াই শুরু হয়। অবশেষে বাস্তবতা বিজয়ী হয়। তারা শিশুকে লতাপতায় পেঁচিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছের নিচে পরিত্যাগ করেন। সান্ত্বনাহীন পিতা মাতা অশ্রুভরা চোখে সামনে এগিয়ে যান। এক মাইল এগিয়ে যাবার পর যে গাছটির নিচে শিশুকে রেখে এসেছিলেন সেই গাছটি আজমত বেগমের দৃষ্টিসীমানা থেকে আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে থাকে। অজোর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে ঘোড়া থেকে নেমে পড়েন। আমার সন্তান, আমার সন্তান বলে চিৎকার করছিলেন। তিনি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দাঁড়ানোর মতো শক্তি তার ছিল না। গিয়াস বেগের হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছিল। স্ত্রীকে তিনি সান্ত্বনা দেন। তিনি তার সন্তানকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। গিয়াস বেগ স্ত্রীকে অপেক্ষায় রেখে মেহেরুন্নিসাকে যেখানে রেখে এসেছিলেন সেখানে ছুুটে যান। শিশুটির দিকে তাকানোর পর ভয়ে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। একটি বিষধর সাপ তার মেয়ের পুঁটলি ঘিরে কুন্ডুলি পাকিয়ে বসে আছে। যেন সাপটি তার মেয়েকে গিলে খাবে। গিয়াস বেগের চেঁচামেচিতে ভীত হয়ে সাপটি আস্তে করে গাছে উঠে যায়।
ভারতে আগমন
খাইবার গিরিপথের মধ্য দিয়ে গিয়াস বেগের সঙ্গী কাফেলা লাহোর হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। মেহেরুন্নিসার জন্মের ৬ মাস পর ১৫৭৮ সালে কাফেলা ফতেহপুর সিক্রিতে পৌঁছে। সে সময় এমন একটি নিয়ম ছিল যে, সম্রাটের সঙ্গে নবাগত কারো সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রয়োজন হতো। মালিক মাসুদই ছিলেন তেমন ব্যক্তি। তার উল্লেখ করার মতো পরিচিতি ছিল। সেই সূত্রে কয়েক সপ্তাহ পর আকবরের দৈনন্দিন দরবারে তিনি গিয়াস বেগকে সঙ্গে নিয়ে যান। ফতেহপুর সিক্রিতে গিয়াস বেগের এটাই ছিল প্রথম আগমন। সম্রাট আকবরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচিত হতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। কয়েকটি মোগল প্রদেশে গিয়াস বেগের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় চাকরি করতেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আজমত বেগমের চাচা মির্জা গিয়াসউদ্দিন আলী আসফ খান, গিয়াস বেগের আপন চাচাতো ভাই আসফ খান জাফর বেগ এবং আকা মোল্লার নাতি দাবাতদার কাজবিনী। গিয়াস বেগ সম্রাট আকবরের সুদৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। ১৫৭৭ সালে ৩০০ সৈন্যের মনসবদার হিসাবে নিযুক্তি লাভের মধ্য দিয়ে ভারতে তার কর্মজীবন শুরু হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি কাবুলের দিওয়ান হিসাবে নিযুক্তি লাভ করেন। একজন প্রাদেশিক কর্মকর্তা হিসাবে কাবুলে নিযুক্তি পাওয়া ছিল গিয়াস বেগের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। কতদিন তিনি কাবুলে অবস্থান করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়। ১৫৯৬ সালে তাকে ৭০০ সৈন্যের মনসবদার এবং দিওয়ান-ই-বুয়ুতাত পদে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে তিনি ওয়াকিল-ই-কুল বা প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্তি লাভ করেন। তাকে পতাকা ও দামামা দেয়া হয়। রাজদরবারে তার প্রবেশের সময় নহবত বেজে উঠতো। গিয়াস বেগ ছাড়া আর কেউ অনুরূপ সম্মান ভোগ করেননি। সম্রাট শাহজাহানের প্রিয়তম পত্মী মমতাজ মহল ছিলেন মির্জা গিয়াস বেগের নাতনি। শাহজাহান তাকে ইয়ানূদ্দৌলা ও খান-ই-খানান সিপাহসালার খেতাব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ৯ হাজার সৈন্যের কমান্ডার। ৯ হাজার সৈন্যের কমান্ডার হিসাবে তার বেতন ছিল ৪০ কোটি ৫০ লাখ রুপি। জায়গীর থেকে তার আয় হতো আরো ৫০ লাখ রুপি। শুধু কন্যা মেহেরুন্নিসার ভাগ্য নয়, গিয়াস বেগের নিজের গুণও ছিল। তিনি ছিলেন বেশ মেধাবী, বিচক্ষণ ও শিক্ষিত। কবিতার প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রবল। অবসর সময়ে তিনি কবিতা পাঠ করতেন। শিকাস্তা নামে একটি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন। দীন দুঃখীরা কখনো তার দান থেকে বঞ্চিত হতো না। নূরজাহানের অধিকাংশ আত্মীয় রাজদরবারে উঁচু পদে নিযুক্তি লাভ করেন। তার ভাই আবুল হাসানও প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্তি পেয়েছিলেন। তাকে ইতিকাদ খান খেতাব প্রদান করা হয়েছিল। আবুল হাসান আসফ খান নামে পরিচিতি লাভ করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর তাকে সম্মানসূচক সার-আন্দাজ তরবারি প্রদান করেছিলেন। আবুল হাসান আসফ খানের পুত্র শায়েস্তা খান বঙ্গদেশের গভর্নর পদে দায়িত্ব পালন করেন। নূরজাহানের আরেক ভাই মোহাম্মদ শরীফ বিহারের গভর্নর পদে নিযুক্তি লাভ করেছিলেন। নূরজাহানের বোন খাদিজা বেগমের স্বামী হাকিম বেগকে হাকিম খান খেতাব প্রদান করা হয়। তার আরেক বোন মঞ্জিলার স্বামী কাসিম খান জুবাইনি ছিলেন আগ্রার গভর্নর।
জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ
জাহাঙ্গীরের জীবনে নূরজাহানই একমাত্র নারী ছিলেন তা নয়, তার জীবনটাইর্ ছিল নারীময়। তবে সব নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল শারীরিক। কেউ তার মনের নাগাল পায়নি। কিন্তু প্রথম সাক্ষাতেই মেহেরুন্নিসা তার হৃদয় কেড়ে নেন। আগ্রা কিংবা লাহোরে তিনি প্রথম তাকে দেখতে পান। আজমত বেগম প্রায়ই মেয়ে মেহেরুন্নিসাকে নিয়ে আকবরের প্রাসাদে যেতেন। প্রাসাদে প্রবেশ করা মাত্র শাহজাদা সেলিম তাদের পিছু নিতেন। একদিন তিনি মেহেরুন্নিসাকে একা পেয়ে যান। একা দেখা মাত্র তিনি তাকে জড়িয়ে ধরেন। মেহেরুন্নিসা এমন ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি মা আজমত বেগমের কাছে ঘটনা খুলে বলেন। আজমত বেগম সরাসরি সম্রাট আকবরের কাছে নালিশ করেন। কেলেঙ্কারি চাপা দিতে আকবর তৎক্ষণাৎ মেহেরুন্নিসার বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
শের আফগানের সঙ্গে বিয়ে
১৫৯৪ সালে ১৭ বছর বয়সে মেহেরুন্নিসাকে শের আফগান আলী কুলি আসতাজলুর কাছে বিয়ে দেয়া হয়। আলী কুলি ছিলেন ইরান থেকে ভারতে অভিবাসী। তিনি ছিলেন খান-ই-খানান আবদুর রহমানের অধঃস্তন। শ্বশুর গিয়াস বেগের সুপারিশে তাকে শাহী ফৌজে চাকরি দেয়া হয়। ১৫৯৮-৯৯ সাল পর্যন্ত আলী কুলি ছিলেন শাহজাদা সেলিমের ব্যক্তিগত কর্মচারি। সম্রাট আকবর সেলিমকে মেবার অভিযানে পাঠান। মেবার অভিযানকালে আলী কুলি শাহজাদা সেলিমকে একটি সিংহের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন। তিনি একা আক্রমণকারী সিংহটি হত্যা করেন। এ বীরত্বের জন্য সেলিম তাকে শের খেতাব দেন। সিংহাসনে আরোহণ করে সম্রাট জাহাঙ্গীর শের আফগানকে বর্ধমান জেলার ফৌজদার হিসাবে নিয়োগ দেন। একই সময় মানসিং বঙ্গদেশের সুবাদার হিসাবে নিয়োগ পান।
বর্ধমানে শের আফগানের সঙ্গে মেহেরুন্নিসার দাম্পত্য জীবন ভালোই কাটছিল। ১৬০৫ সালে তিনি মেয়ের মা হন। নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে তার নাম রাখেন মেহেরুন্নিসা। মেহেরুন্নিসাই ছিল তার একমাত্র সন্তান। তার কপালে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। শের আফগানের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠে। সম্রাট আকবরের সঙ্গে বিরোধে শের আফগান শাহজাদা সেলিমকে সমর্থন দেননি। তাতে শাহজাদা ছিলেন তার প্রতি অসন্তুষ্ট। এ অসন্তুষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয় শাহজাদা খসরুর অনাকাঙ্খিত বিদ্রোহে নতুন করে ভুল বুঝাবুঝি। খসরুর বিদ্রোহে ইন্ধন যোগানোর জন্য সম্রাট জাহাঙ্গীর যাদের সন্দেহ করছিলেন শের আফগান ছিলেন তাদের অন্যতম। ইতিমধ্যে বঙ্গদেশে সুবাদার পদে রদবদল ঘটে। ১৬০৬ সালে মানসিংকে বঙ্গদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে তার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় সম্রাট জাহাঙ্গীরের পালিত ভাই কুতুবউদ্দিন কোকাকে। জাহাঙ্গীর শের আফগানকে তার কার্যকলাপের জবাবদিহি করার জন্য তাকে দরবারে তলব করেন। শের আফগান শাহী হুকুম অমান্য করায় তাকে রাজধানীতে পাঠানোর জন্য বঙ্গদেশের সুবাদার কুতুবউদ্দিন কোকাকে নির্র্দেশ দেয়া হয়। কুতুবউদ্দিন কোকা তাকে ডেকে পাঠান। শের আফগান তার নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানান। এ পরিস্থিতিতে কুতুবউদ্দিন কোকা বর্ধমানের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তার আগে তিনি শের আফগানকে শান্ত করতে এবং তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দরবারে নিয়ে আসতে তার ভাতিজা গিয়াসকে পাঠিয়েছিলেন।
সুবাদার কুতুবউদ্দিন কোকার সঙ্গে দেখা করতে যাবার আগে শাশুড়ি আজমত বেগম শের আফগানের মাথায় শিরস্ত্রাণ পরিয়ে দেন এবং তাকে চুমো দিয়ে বিদায় জানান। ১৬০৭ সালের ৩০ মে শের আফগান দু’জন সঙ্গী নিয়ে কুতুবউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে যান। এসময় কুতুবউদ্দিন তার লোকজনকে তাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। বিশ্বাসঘাতকতা টের পেয়ে শের আফগান কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে কুতুবউদ্দিনকে আক্রমণ করেন। শের আফগানের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। কুতুবউদ্দিনের লোকজন তৎক্ষণাৎ শের আফগানকে ঘেরাও করে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে। আহত কুতুবউদ্দিন সেদিন রাতে মারা যান। বঙ্গদেশের গভর্নর কুতুবউদ্দিন শুধু সম্রাট জাহাঙ্গীরের পালিত ভাই ছিলেন তাই নয়, তিনি ছিলেন মশহুর সূফি সাধক শেখ সেলিম চিশতির নাতি। শের আফগানের হত্যাকান্ডে সম্রাট জাহাঙ্গীরের হাত ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু তার আত্মজীবনীর একটি বর্ণনা থেকে মনে হয় তার হাত ছিল। তুযুক-ই-জাহাঙ্গীরীতে শের আফগানের মৃত্যুতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন,, the blackfaced wretch will for ever remain in hell.. অর্থাৎ ঐ কুৎসিত বদমাশ চিরদিন জাহান্নামে অবস্থান করবে।
অধিকাংশ ঐতিহাসিক বিশ্বাস করছেন যে, শাহজাদা সেলিমের সঙ্গে বিয়ের আগে মেহেরুন্নিসার প্রেম ছিল এবং তিনি তার স্বামী শের আফগানের হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। মুন্সী লাল মন্তব্য করেছেন, Akbar proclaimed that never again shall a Mughal King ask a husband to divorce his wife in his favour. Jahangir respected his father’s wish. He did not ask Sher Afghan to divorce Mehrun-Nisa. He killed him. অর্থাৎ আকবর ঘোষণা করছিলেন যে, ভবিষ্যতে কোনো মোগল সম্রাট তার অনুকূলে কাউকে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বলতে পারবেন না। জাহাঙ্গীর তার পিতার ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। তিনি মেহেরুন্নিসাকে তালাক দিতে শের আফগানকে নির্দেশ দেননি। তিনি তাকে হত্যা করেন।
অন্যদিকে ঐতিহাসিক ড. বেনী প্রসাদ যাদব বলেছেন, শাহজাদা সেলিম ১৬১১ সালের আগে কখনো মেহেরুন্নিসাকে দেখেননি। তিনি আরো বলেছেন, সমসাময়িক পার্সী কোনো সূত্র এ অভিমত সমর্থন করছে না যে, শাহজাদা হিসাবে সেলিম মেহেরুন্নিসাকে বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলেন অথবা সম্রাট জাহাঙ্গীর কোনোভাবে শের আফগানের হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। অন্যদিকে ভি. ডি. মহাজনের মতে, নূরজাহানের মতো প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মহিলা কখনো তার স্বামীর হত্যাকারীকে বিয়ে করতে রাজি হতেন না।
শের আফগানের মৃত্যুর পর কন্যাসহ মেহেরুন্নিসাকে আগ্রায় জাহাঙ্গীরের হেরেমে পাঠানো হয়। হেরেমে মেহেরুন্নিসা জাহাঙ্গীরের সৎ মা সেলিমা সুলতান বেগমের সঙ্গিনী হিসাবে নিযুক্ত হন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের হেরেমে আসার পর মেয়ে মেহেরুন্নিসার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় লাডলি বেগম। চার বছর তিনি জাহাঙ্গীরের হেরেমে অবস্থান করেন। এসময় তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মহিলা। তার মধ্যে বিখ্যাত ও প্রভাবশালী হয়ে উঠার কোনো লক্ষ্নণ প্রকাশ পায়নি। প্রকৃতি তাকে অঢেল রূপ ও সৌন্দর্য দান করেছিল। তাকে দেখলে মনে হতো যেন পারস্যের ফুটন্ত গোলাপ। অথবা আকাশ থেকে পূর্ণিমার চাঁদ যেন মাটিতে নেমে এসেছে। তার মুখমন্ডল ছিল গোলাকার, ঠোঁট ছিল ধনুকের মতো বাঁকা, কপাল ছিল প্রশস্ত এবং চোখ ছিল নীল।
জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিয়ে
১৬১১ সালের মার্চে নববর্ষের উৎসব নওরোজ উপলক্ষে আয়োজিত মিনাবাজারে মেহেরুন্নিসাকে সেলিম দেখতে পান। এ দেখাতেই তাকে তার ভালো লেগে যায়। সেখানেই তাদের প্রেম অঙ্কুরিত হয়। মিনাবাজারে দেখা হওয়ার কিছুদিন পর সেলিমা সুলতান বেগমের প্রাসাদে উভয়ের পুনরায় দেখা হয়। সাধারণ সাদা পোশাক পরিহিত মেহেরুন্নিসা শাহজাদা সেলিমকে অভ্যর্থনা জানাতে হল রুমে উপস্থিত ছিলেন। তাকে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যান মেহেরুন্নিসা। তার বুক দুরু দুরু করে কাঁপছিল। শাহজাদা সেলিম তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মেহেরুন্নিসা মাথা নিচু করে সম্মতি দেন। ১৬১১ সালের ২৫ মে তাদের বিয়ে হয়। তখন মেহেরুন্নিসার বয়স ছিল ৩৪ বছর। বিয়ের পর নূরজাহান দ্রুত জাহাঙ্গীরের প্রিয়তম সহধর্মিনী এবং তার সঙ্গিনীতে পরিণত হন। মেহেরুন্নিসাকে প্রথম দেয়া হয়েছিল নূরমহল (প্রাসাদের আলো) খেতাব। ১৬১৬ সালে তাকে দেয়া হয় নূরজাহান (বিশ্বের আলো) খেতাব। মেহেরুন্নিসা নূরজাহান নামেই ইতিহাসে পরিচিত।
নূরজাহানের ক্ষমতা ও প্রভাব
নূরজাহানের প্রভাব এত বৃদ্ধি পায় যে, তিনি নিজের নামে মুদ্রা চালু করেন। তার চালু করা মোহরে উৎকীর্ণ করা হয়েছিল:
বি-হুকুম-ই-শাহ জাহাঙ্গীর ইয়াফত সাদ যিভার বি-নাম-ই নূরজাহান পাদশাহ বেগম জার।
অর্থাৎ বাদশাহ জাহাঙ্গীরের নির্দেশে ফার্স্ট লেডি নূরজাহানের নাম বাদশাহ হিসাবে যুক্ত হওয়ায় স্বর্ণের ঔজ্জ্বল্য এক শো ভাগ বেড়ে গেছে। নূরজাহান নিজের নামে হুকুম বা ফরমান জারি করতেন। তার হুকুমে লিখা থাকতো হুকুম-ই-ইউলিআই আলিয়া মাহদি ইউলিয়া নূরজাহান পাদশাহ বেগম। তিনি নিজের নামে রাজকীয় সীলমোহর ব্যবহার করতেন। মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে নূরজাহান ছাড়া আর কোনো মহিলা এত ব্যাপক রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না। নূরজাহান বিদেশি বণিকদের সঙ্গে ব্যবসা করতেন। রাজদরবারে বিদেশি বণিকদের প্রবেশের অনুমতি দিতেন। তিনি সরকারি কর্মচারিদের পদোন্নতি ও পদাবনতি এবং দরবারের ব্যয় বহন করতেন। তার জায়গীরে তাকে ৩০ হাজার সৈন্যের কমান্ডার হিসাবে সম্বোধন করা হতো। জাহাঙ্গীরের হৃদয় দখলে সক্ষম হলেও নূরজাহান তাকে কোনো সন্তান উপহার দিতে পারেননি। সম্রাট জাহাঙ্গীর মদ ও আফিমে আসক্ত হওয়ায় নূরজাহান ও তার সহযোগীরা সরকার ও সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। জাহাঙ্গীর নেশায় এত আসক্ত ছিলেন যে, প্রতিদিন তার ৬ পেয়ালা মদ এবং দু’ডোজ আফিমের প্রয়োজন হতো। শাহজাহানের কন্যা জাহানারা বেগম দাবি করেছেন যে, ডাক্তারদের পরামর্শ উপেক্ষা করে নূরজাহান তাকে অতিরিক্ত ডোজ দিতেন। নূরজাহান তার পিতা গিয়াস বেগ, ভাই আবুল হাসান এবং শাহজাদা খুররমকে নিয়ে একটি চক্র গঠন করেছিলেন। জাহাঙ্গীরের উপপত্মীর পুত্র শাহরিয়ারের কাছে লাডলি বেগমকে বিয়ে দেয়া হয়। নূরজাহান লাডলিকে প্রথমে জাহাঙ্গীরের জ্যেষ্ঠ পুত্র খসরুর কাছে এবং পরে খুররমের কাছে বিয়ে দেয়ার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের কেউ তাকে বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলেন না। অভ্যন্তরীণ গোলযোগের মধ্য দিয়ে সম্রাট ও সরকারের ওপর তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়। তার কর্তৃত্ব প্রয়োগের মাঝপথে তার সৎপুত্র শাহজাহান প্রকাশ্য বিদ্রোহ করেন। মেয়ে জামাই হওয়ায় নূরজাহান শাহরিয়ারকে জাহাঙ্গীরের উত্তরাধিকারী হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর কিছুদিন আগে কুষ্ঠরোগ ধরা পড়ায় সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে শাহরিয়ারের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। পিতার মৃত্যুর পর তিনি নিজেকে লাহোরের সম্রাট হিসাবে ঘোষণা করেন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে নূরজাহানের ভাই আবুল হাসান আসফ খান তাকে বন্দি করেন এবং তার নির্দেশে তাকে অন্ধ করে দেয়া হয়। তার কিছুদিন পর বিদ্রোহী বাহিনীর কমান্ডার হিসাবে শাহজাহান দাক্ষিণাত্য থেকে আগ্রায় এগিয়ে এসে শাহরিয়ার, শাহরিয়ারের দু’পুত্র এবং দানিয়েলের আরো দু’পুত্রকে হত্যা করার জন্য আসফ খানের কাছে একটি বার্তা পাঠান। তার নির্দেশ পালন করা হয়। আসফ খান ছিলেন শাহজাহানের শ্বশুর। মেয়ে জামাই বিদ্রোহ করলে তিনি তাকে গোপনে সহায়তা করতেন।
নূরজাহানের প্রতিভা
নূরজাহান নিজেকে মোগল আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। স্টাইল ও ফ্যাশনে তিনি ছিলেন একজন মডেল। উন্নত রুচিবোধের জন্য তিনি মোগল হেরেমে আধিপত্য বিস্তার করেন। পোশাকের ডিজাইনে তার খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। নূরজাহান অত্যন্ত উদ্ভাবনী স্টাইলে পোশাকের ডিজাইন করতেন। তিনি ছিলেন তার সময়ে ফ্যাশনের রানী। লোকজন পরম আগ্রহে তার ডিজাইন গ্রহণ করতো। নূরজাহান বিভিন্ন ধরনের ব্রোকেড, ফিতা ও গাউন চালু করেন। এছাড়া তিনি দোদামি, নূরমহলি, পাঞ্জাতোলিয়া, বাঁধা, কিনারি ইত্যাদি নামে হাল্কা পোশাকও চালু করেছিলেন। তার উদ্ভাবিত ফারসি চান্দানি নামে পরিচিত মেঝের সাদা চাদর এখনো ভারত ও পাকিস্তানে জনপ্রিয়। তার মা আজমত বেগমও ছিলেন উদ্ভাবনী প্রতিভাসম্পন্ন এক মহিলা। তিনি ইতার-ই-গুলাব নামে গোলপের একটি প্রসাধনী উদ্ভাবন করেছিলেন। তার এ আবিষ্কারকে নূরজাহানের আবিষ্কার হিসাবে উল্লেখ করা হতো। নূরজাহান অত্যন্ত বুদ্ধিমতি ও উচ্চশিক্ষিতা ছিলেন। তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল। তার ব্যক্তিগত সখের মধ্যে ছিল শিকার। তিনি কখনো কখনো স্বামীর সঙ্গে শিকার অভিযানে শামিল হতেন। মোগল হেরেমে তিনিই একমাত্র মহিলা যিনি বাঘ ও সিংহ গুলি করে হত্যা করেছেন। মোগল হেরেমের মহিলারা প্রাসাদের চার দেয়ালের অভ্যন্তরে আবদ্ধ থাকতেন। কঠোর পর্দা করতেন। নূরজাহান এ অচলায়তন ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। তিনি তার সময়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। পর্দা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তিনি বাইরে গিয়ে খেলাধূলায় অংশগ্রহণ করতেন। তার যুগে মুসলিম মহিলা হিসাবে পর্দা উপেক্ষা করা ছিল রীতিমতো দুঃসাধ্য। জাহাঙ্গীরকে বিদ্রোহী সেনাপতি মহব্বত খান বন্দি করলে নূরজাহান তাকে উদ্ধারে সৈন্যবাহিনী গঠন করেছিলেন। তিনি নিজে হাওদায় চড়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শত্রুর প্রতি অবিরাম তীর নিক্ষেপ করেন। নির্ভুল নিশানায় তাকে তীর নিক্ষেপ করতে দেখে বাঘা বাঘা মোগল সেনাপতিরা তাজ্জব হয়ে যান। নূরজাহান ছিলেন স্থাপত্যের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক। তিনি বহু মসজিদ, বাগান ও চোখ ধাঁধানো প্রাসাদ তৈরি করেন। বাগান তৈরিতে সম্রাট বাবর ছাড়া নূরজাহানের সঙ্গে আর কারো তুলনা হয় না। তিনি আগ্রা ও কাশ্মীরে বহু বাগান তৈরি করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর তার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসাবে নিশাত ও শালিমার বাগান তৈরি করেছিলেন। নূরজাহানের মন ছিল খুব কোমল। এতিম ও বিধবাদের তিনি ছিলেন আশ্রয়। দু’হাতে দান করতেন। অসহায় গরীব ঘরের মেয়েদের বিয়ের যাবতীয় ব্যয় বহন করতেন। কোথাও কেউ ঠাঁই না পেলে নূরজাহানের কাছে ঠাঁই পাওয়া যেতো। মায়ের মন দিয়ে তিনি মানুষকে ভালোবেসেছেন।
নূরজাহান ১৬২২ সালের জানুয়ারিতে আগ্রায় যমুনা নদীর পূর্ব তীরে পিতা ইতিমাদউদৌলার (মির্জা গিয়াস বেগ) মাজার নির্মাণ করেন। তার মাজারে প্রথম শ্বেত মার্বেল ব্যবহার করা হয়। তাজমহল নির্মাণে এ মাজারে ব্যবহৃত শ্বেত মার্বেলের কৌশল গ্রহণ করা হয়। ইতিমাদউদৌলার মাজার নির্মাণে সময় লেগেছিল ৬ বছর এবং ব্যয় হয়েছিল ১০ লাখ ৩৫ হাজার রুপি। ইতিমাদউদৌলার মাজারকে মিনি তাজমহল হিসাবে অ্যাখ্যা দেয়া হয়। নূরজাহান মাখফি ছদ্মনামে ফারসি কবিতা লিখতেন। পূর্ণিমার রাতে হেরেমের মহিলাদের সঙ্গে বসে গান গাইতেন।
একবার জাহাঙ্গীর জানতে পারেন যে, একটি বাঘ এসেছে। এ খবর শুনতে পেয়ে তিনি শিকারি দল ও হেরেমের মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। জাহাঙ্গীর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি জীবনে কোনো জীবিত প্রাণী হত্যা করবেন না। এ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে গিয়ে তিনি সম্রাজ্ঞী নূরজাহানকে গুলি চালাতে বলেন। মির্জা রুস্তম ছিলেন জাহাঙ্গীরের পেছনে একটি হাতির পিঠে। তিনি নূরজাহানের আগে বাঘ লক্ষ্য করে পরপর তিন চারটি গুলি ছুঁড়েন। কিন্তু তার সব ক’টি গুলি ব্যর্থ হয়। তিনি ব্যর্থ হওয়ায় নূরজাহান গুলি ছুঁড়েন। ৬টি গুলিতে তিনি চারটি বাঘ হত্যা করেন।
মৃত্যু
এ দম্পতি মাসের পর মাস কাশ্মীরে অবস্থান করতে থাকায় তার ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙ্গন ধরে। ১৬২৭ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যু এবং মেয়ে জামাই শাহরিয়ার বন্দি হলে নূরজাহানের প্রভাব নিঃশেষ হয়ে যায়। শাহজাহান সিংহাসন লাভ করেই তাকে লাহোরে একটি প্রাসাদে বন্দি করেন। বাদবাকি জীবন তিনি সেখানেই কাটান। নির্বাসিত জীবনে একমাত্র বিধবা কন্যা লাডলি ছিল তার সঙ্গিনী। শাহজাহান তাকে বার্ষিক ২ লাখ রুপি ভাতা প্রদান করতেন। তিনি ১৬৪৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ৬৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাকে লাহোরের শাহদারা বাগে স্বামী জাহাঙ্গীরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। এ সমাধি তিনি নিজে তৈরি করেছিলেন। তার ভাই আসফ খানের মাজারও সেখানে।
Click This Link
১২| ২২ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:২২
লেখাজোকা শামীম বলেছেন: একই জায়গায় আনার কলি সম্পকে আরেকটা লেখা .......
সাহাদত হোসেন খান: আনারকলি মোগল ইতিহাসে একটি আলোচিত নাম। তার প্রকৃত নাম নাদিরা বেগম। তিনি ছিলেন সম্রাট আকবরের হেরেমের একজন কানিজ এবং লাহোরের এক কিংবদন্তী তুর্কি নর্তকী কন্যা। আনারকলি শুধু নাচ নয়, কাব্য, সাহিত্য ও সঙ্গীতেও ছিলেন পারদর্শী। তার গায়ের রং ছিল ডালিমের দানার মতো লাল টসটসে। ধারণা করা হয় শাহজাদা সেলিমের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক থাকায় সম্রাট আকবরের নির্দেশে তাকে দু’টি প্রাচীরের মধ্যে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছিল। সাক্ষ্য প্রমাণের ঘাটতি থাকায় আনারকলির উপাখ্যান হয়তো বিকৃত নয়তো অতিরঞ্জিত হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরঞ্জন সত্ত্বেও তার উপাখ্যান নিয়ে বহু সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে।
আনারকলির সঙ্গে আসলে সম্পর্ক ছিল কার, পিতা আকবরের নাকি পুত্র সেলিমের তা নিয়ে বিস্তর মতপার্থক্য বিদ্যমান। লাহোরে গোটা মোগল দরবার জানতো যে, নাদিরা হলেন সম্রাটের অতিঘনিষ্ঠ। সম্রাট দাক্ষিণাত্যে অবস্থান করার সময় রহস্যজনকভাবে নাদিরার মৃত্যু ঘটে। একটি ভাষ্যে বলা হয়, শাহজাদা সেলিমের নির্দেশে একজন শাহী কর্মকর্তা নাদিরাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করেন। আরেকটি ভাষ্যে বলা হয়, তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সম্রাট দাক্ষিণাত্য থেকে লাহোরে ফিরে আসার আগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তৃতীয় ভাষ্যটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এতে বলা হয়, সম্রাটের অনুপস্থিতির সময় শাহজাদা সেলিমের সঙ্গে নাদিরার ঘনিষ্ঠতা জন্ম নেয়। একথা জানতে পেরে সম্রাট নাদিরাকে জীবন্ত কবর দেয়ার নির্দেশ দেন। পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, সম্রাট আকবর যখন রাজধানী লাহোর থেকে দূরে অবস্থান করছিলেন সে সময় নাদিরা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তিনি লাহোরে ফিরে আসার আগে নাদিরা মারা যান। সম্রাটকে নাদিরার মৃত্যু সংবাদ জানানো হলে তিনি তার জন্য একটি মাজার এবং মাজার বেষ্টনকারী একটি বাগান তৈরি করার নির্দেশ দেন।
আরেকটি জনপ্রিয় ভাষ্যে বলা হয়, শাহজাদা সেলিম শৈশব থেকেই বেপরোয়া আচরণ করতেন। এজন্য আকবর সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা লাভে তাকে ১৪ বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে পাঠিয়েছিলেন। তারপর তিনি সেলিমকে লাহোরের প্রধান প্রাসাদে ফিরে আসার অনুমতি দেন। দিনটি স্মরণীয় হওয়ায় আকবরের হেরেমের মহিলারা একটি বিরাট মাজরার (নাচের অনুষ্ঠান) আয়োজন করেন। এ মাজরায় নূর খান আরগুনের অসামান্য সুন্দরী কন্যা নাদিরা নাচ পরিবেশন করে। প্রস্ফূটিত গোলাপের মতো অসাধারণ সুন্দরী হওয়ায় আকবর তাকে আনারকলি (ডালিম দানা) নাম দেন। লাহোরে নাদিরার প্রথম নাচের আসরে শাহজাদা সেলিম তার গভীর প্রেমে পড়ে যান। পরবর্তীতে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, আনারকলিও তার প্রেমে মজেছিলেন। তারা অভিসারে যেতেন। তবে তাদের মধ্যকার দেখা সাক্ষৎ গোপন রাখা হতো। তাদের রোমাণ্টিক সম্পর্কের সময় আনারকলির বয়স ছিল চল্লিশের কোঠায় কিংবা তার চেয়ে বেশি। শাহজাদা সেলিমের বয়স ছিল ত্রিশের কোঠায়। তিনি ছিলেন তখন অন্তত তিনটি পুত্র সন্তানের পিতা।
একবার আকবর সেলিমকে লক্ষ্য করে আনারকলিকে হাসি দিতে দেখতে পেলে তার মনে সন্দেহ জাগে। পিতা পুত্রের ব্যাপার বলে তিনি আপাতত চেপে যান। কিছুদিন যেতে না যেতেই শাহজাদা সেলিম পিতা আকবরের কাছে আনারকলিকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিখ্যাত নর্তকী হলেও আনারকলি দাসী হওয়ায় আকবর অমত করেন। আকবরের মা হামিদা বানু একজন সাধারণ ঘরের মেয়ে হওয়ায় মোগল পরিবারকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি আনারকলির সঙ্গে দেখা করতে সেলিমকে বারণ করেন। এ নিয়ে সেলিম তীব্র বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হলে সম্রাট আকবর আনারকলিকে বন্দি করে লাহোরের অন্ধ কুঠুরিতে আবদ্ধ করে রাখার নির্দেশ দেন। আনারকলির বিরহে সেলিম অকণ্ঠ মদ পান করতেন। প্রলাপ বকতেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেন, কে জানি আমার নাটকের শেষ অঙ্কটা নষ্ট করে দিয়েছে। বহু চেষ্টার পর সেলিম ও তার এক বন্ধু আনারকলিকে অন্ধ কুঠুরি থেকে পালিয়ে লাহোরের উপকণ্ঠে আত্মগোপন করে থাকতে সহায়তা করেন। শাহজাদা সেলিম একটি সৈন্যবাহিনী গঠন করে শহরে আক্রমণ চালান। সম্রাট আকবর দ্রুত সেলিমের বিদ্রোহ দমন করেন। আকবর তার পুত্রকে দু’টি প্রস্তাব দেন। হয়তো আনারকলিকে তার হাতে সমর্পণ করতে হবে। নয়তো তাকে মৃৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে। আনারকলির প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা থেকে শাহজাদা সেলিম মৃত্যুদণ্ড মেনে নেন। আনারকলি শাহজাদা সেলিমের মৃত্যুদণ্ড মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি আত্মগোপন অবস্থা থেকে বের হয়ে সম্রাট আকবরের মুখোমুখি হন। তিনি তার কাছে জানতে চান শাহজাদা সেলিমের জীবন রক্ষায় তিনি তার নিজের জীবন দিতে পারেন কিনা। আকবর রাজি হন। আনারকলি তার শেষ ইচ্ছা হিসাবে শাহজাদার সঙ্গে একরাত কাটানোর অনুমতি প্রার্থনা করেন। তাকে অনুমতি দেয়া হয়।
সেলিমের সঙ্গে রাত কাটানোর পর আনারকলি বিষাক্ত ফুলের গন্ধ শুকিয়ে তাকে অচেতন করে ফেলেন। অশ্রুসজল চোখে আনারকলি অচেতন সেলিমের কাছ থেকে প্রহরীদের সঙ্গে প্রাসাদ ত্যাগ করেন। তাকে লাহোরে বর্তমান আনারকলি বাজারের কাছে একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে জীবন্ত কবর দেয়ার জন্য একটি বিরাট গর্ত খোড়া হয়েছিল। তাকে কাঠের একটি বোর্ডে ঢুকিয়ে গর্তে ফেলে দেয়া হয়। সৈন্যরা ইটের দেয়াল তুলে গর্তটি ঢেকে দেয়।
উপাখ্যানের আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়, সম্রাট আকবর ভূগর্ভস্থ কয়েকটি সুড়ঙ্গের সাহায্যে গর্ত থেকে আনারকলিকে পালাতে সহায়তা করেছিলেন। তবে শর্ত ছিল যে, আনারকলি আর কখনো মোগল সাম্রাজ্যে প্রবেশ করবেন না। তাতে বুঝা যাচ্ছে না আনারকলি জীবিত ছিলেন নাকি মারা গেছেন। আরেকটি জনশ্রুতিতে বলা হয়, আনারকলিকে একটি দেয়ালের ভেতর জীবন্ত চাপা দেয়া হয়। এ উপাখ্যান সত্যি মিথ্যা যাই হোক, লাহোরে পাঞ্জাব সচিবালয় প্রাঙ্গনে মল রোডের পাশে একটি বিরাট সৌধ। ধারণা করা হয় যে, ১৬১৫ সালে প্রেমাসক্ত শাহজাদা সেলিম তাজমহলের পূর্বগামী হিসাবে এ সৌধ নির্মাণ করেন। সৌধটি জনসাধারণের জন্য উন্মু্ক্ত। বর্তমানে ভবনটি একটি মোহাফেজখানা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে বর্তমানে পাঞ্জাবের রেকর্ড অফিস। ব্রিটিশ আমলে জায়গাটি একটি গীর্জায় রূপান্তরিত করা হয়েছিল। মল রোডের নিকটবর্তী একটি বাজারের নাম আনারকলি। আনারকলির নামানুসারে এ বাজারের নামকরণ করা হয়। পাকিস্তানে এটি হচ্ছে প্রায় ২ শো বছর আগের সবচেয়ে পুরনো বাজার। সৌধটি অষ্টাভুজাকৃতির। মাঝখানে একটি বিশাল ছাদ। ৮টি অষ্টভুজাকৃতির গম্বুজ। গম্বুজগুলো স্তম্ভের ওপর নির্মিত। একসময় সৌধের চারপাশে ছিল একটি বাগান। একটি স্তম্ভে আল্লাহর ৯৯টি নাম এবং দুই পংক্তির একটি ফারসি কবিতা:
تا قیامت شکر گویم کردگار خویش را
آہ گر من باز بینم روئ یار خویش را
তা কিয়ামাত শুকর গুইয়াম কারদিগারি কিশ রা
আহ, গার মান বাজ বিনাম রু ইয়ার-ই-খুশ রা
আমি রোজ কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করবো
আহ, আমি কি একবার আমার প্রিয়তমার মুখ দেখতে পারবো?
কবরের উত্তর মাথায় নিচে উল্লেখিত এ শব্দ ক’টি উৎকীর্ণ:
مجنون سلیم اکبر
মজনু সেলিম আকবর।
সবকিছু মিথ্যা হলেও উপরে উল্লেখিত উৎকীর্ণ কথাগুলো তো মিথ্যা নয়। উৎকীর্ণ লিপির ভাষা হচ্ছে কারো হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়ার যন্ত্রণা। সেলিমের নাম লেখা থাকায় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ভুক্তভোগী শাহজাদা সেলিম ছাড়া আর কেউ নন।
সৌধে সংখ্যা এবং কথায় দু’টি তারিখ। পূর্ব পাশে ১০০৮ হিজরি (১৫৯৯-১৬০০ সাল) এবং পশ্চিম পাশে ১০২৪ হিজরি (১৬১৫-১৬ সাল)। বিশেষজ্ঞ আহসান কোরেশি সৌধে আরেকটি ফারসি পংক্তি উৎকীর্ণ করে রাখার কথা উল্লেখ করেছেন। এ উৎকীর্ণ লিপিটি শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালে ফরাসি ভাড়াটিয়া জেনারেল ভান্তুরা ধ্বংস করেছেন। জেনারেল ভান্তুরা সৌধটিকে তার বাসস্থান হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। ফরাসি জেনারেল ভান্তুরা সচিবালয় এবং শিখ সৈন্যদের জন্য ফৌজি-ই-খাস ব্যারাক নির্মাণ করলে আনারকলির মাজারের বাগান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। শিখ মহারাজা রনজিৎ সিং আনারকলির মাজার থেকে আল্লাহর ৯৯টি নাম সম্বলিত উৎকীর্ণলিপি অপসারণের নির্দেশ দেন। তিনি অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে ব্যবহারের জন্য এ মাজার থেকে শ্বেত পাথর সরিয়ে নেন। বিলুপ্ত ফারসি পংক্তিটি অনুবাদ করলে হয় এরকম:
যে নির্দোষ মানুষটিকে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং যাকে অবর্ণনীয় যন্ত্রণা নিয়ে মরতে হয়েছে সে শহীদ। আল্লাহ তাকে একজন শহীদ হিসাবে কবুল করুন।
সৌধের কোথাও আনারকলির নাম উল্লেখ না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা এসব উৎকীর্ণ লিপির আলোকে বলছেন, যাকে সৌধে সমাহিত করা হয়েছে তিনি আনারকলি ছাড়া আর কেউ নন। প্রথম তারিখটি হচ্ছে আনারকলিকে মৃত্যুদণ্ড দানের এবং দ্বিতীয়টি সৌধ নির্মাণের। সম্রাট আকবর ১০০৮ হিজরিতে লাহোরে অবস্থান না করায় এই অনুমান সত্যি হিসাবে মেনে নেয়া যায় না। তিনি ১০০৭ হিজরিতে (১৫৯৮ সালের নভেম্বরে) আগ্রার উদ্দেশে লাহোর ত্যাগ করেছিলেন। অতএব আকবরের নির্দেশে আনারকলিকে জীবন্ত কবর দেয়ার উপাখ্যান সঠিক হতে পারে না।
যেসব লেখক প্রাথমিকভাবে সেলিম ও আনারকলির প্রেম উপাখ্যান বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন উইলিয়াম ফিঞ্চ এবং আরেকজন হলেন এডওয়ার্ড টেরি। ব্রিটিশ পর্যটক ফিঞ্চ আনারকলির মৃত্যুর ১১ বছর পর ১৬১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে পৌঁছান। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে বায়ানা থেকে ক্রীত তার নীল বিক্রি করতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে তিনি তার ভ্রমণ কাহিনীতে লিখেছেন:
শহরের উপকণ্ঠে শাহজাদা দানিয়েল এবং তার মায়ের (আকবরের অন্যতম স্ত্রী) একটি মনোরম সৌধ। এ মহিলার সঙ্গে শাহজাদা সেলিমের মন দেয়া নেয়ার সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের কথা জানতে পেরে সম্রাট আকবর তার প্রাসাদের অভ্যন্তরে এ মহিলাকে বন্দি করেন। সেখানে তার মৃত্যু হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর তার প্রেমের প্রতীক হিসাবে প্রাচীর পরিবেষ্টিত একটি বাগানের মাঝখানে একটি জাঁকজমকপূর্ণ সৌধ নির্মাণের নির্দেশ দেন। সৌধের এ মৃতদেহকে সম্রাট সোনার অক্ষরে অমর করতে রাখতে চেয়েছেন।
উইলিয়াম ফিঞ্চের কয়েক বছর পর এডওয়ার্ড টেরি লাহোরে যান। তিনি লিখেছেন: আকবর তার প্রিয়তম স্ত্রী আনারকলির সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় জাহাঙ্গীরকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দেন। কিন্তু মৃত্যুশয্যায় আকবর তার হুমকি প্রত্যাহার করেন।
এ দুই ব্রিটিশ পর্যটকের বর্ণনার ভিত্তিতে দ্য লাস্ট সিপ্রং: দ্য লাইভস এন্ড টাইমস অব দ্য গ্রেট মোগলস শিরোনামে গ্রন্থের লেখক আব্রাহাম ইরেলি বলেছেন, আকবর ও সেলিমের মধ্যে একটি অপ্রকাশিত দ্বন্দ্ব ছিল। সম্ভবত এ দ্বন্দ্ব ছিল আনারকলিকে নিয়ে। অতএব কিংবদন্তীর আনারকলি দানিয়েলের মা ছাড়া অন্য কেউ নন। ইরেলি তার অনুমানের সমর্থনে আকবরের দরবারের ঐতিহাসিক আবুল ফজলের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন। আবুল ফজল লিখেছেন, আকবরের হেরেমের প্রহরীরা এক সন্ধ্যায় সেলিমকে প্রহার করে। প্রহরীদের অসতর্কতায় এক পাগল আকবরের হেরেমে ঢুকে পড়ে। সেলিম পাগলকে ধরে ফেলেন। কিন্তু ভুলক্রমে সেলিমকে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে সাব্যস্থ করা হয়। সম্রাট ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান। তিনি তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করতে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি সেলিমকে চিনতে পারেন। সম্ভবত এ অনুপ্রবেশকারী সেলিম ছাড়া অন্য কেউ নন। শাহজাদা সেলিমের লাম্পট্য আড়াল করতে পাগলের একটি গল্প ফাঁদা হয়েছিল।
তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায় যে, শাহজাদা দানিয়েলের মা ১৫৯৬ সালে মারা যান। এ তারিখের সঙ্গে আনারকলির সৌধে উৎকীর্ণ তারিখের কোনো মিল নেই। তাতে দুই ব্রিটিশ পর্যটকের বর্ণনা এবং লেখক আব্রাহাম ইরেলির অনুমান মিথ্যা হয়ে যায়। লাহোর পাস্ট এন্ড প্রেজেন্ট’র লেখক মোহাম্মদ বাকিরের মতে, আনারকলি হচ্ছে যেখানে সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে সেই বাগানের নাম। কিন্তু কালক্রমে সৌধটির নামও আনারকলি হয়ে যায়। জাহাঙ্গীরের নাতি দারা শিকো তার গ্রন্থ সাকিনাত-আল-আউলিয়ায় বাগানটির কথা উল্লেখ করেছেন। সূফি সাধক হযরত মিয়া মীর প্রায়ই এ বাগানে বিশ্রাম করতেন। দারা বাগানে একটি সৌধের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে আনারকলির নাম উল্লেখ করেননি।
মোগল সম্রাটগণ ব্যক্তিগত জীবনে বহুগামী হলেও তারা ধর্মীয় নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘন করেননি। শাহজাদারাও সীমা লঙ্ঘন করতেন না। আনারকলি সত্যি সত্যি সম্রাট আকবরের স্ত্রী হয়ে থাকলে পুত্র সেলিম কখনো মাতৃস্থানীয় মহিলার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়তে যেতেন না। এ যুক্তিতে ধরে নেয়া যায় যে, আনারকলি হয়তো ছিলেন আকবরের উপপত্নী অথবা দাসী।
লেখক মোহাম্মদ বাকির বিশ্বাস করছেন, আনারকলির তথাকথিত সৌধ আসলে সেলিমের আরেক স্ত্রী এবং শাহজাদার দ্বিতীয় পুত্র সুলতান পারভেজের মা সাহিব-ই-জামালের। সাহিব-ই-জামাল হলেন সভাসদ জৈন খান কোকার মেয়ে। মোহাম্মদ বাকিরের অভিমত পুরোপুরি ক্রটিমুক্ত নয়। সুলতান পারভেজের মা জৈন খান কোকার মেয়ে ছিলেন না। তিনি ছিলেন জৈন খান কোকার মামা খাজা হাসানের মেয়ে। অবশ্য ১৫৯৬ সালের ১৮ জুন সেলিমের সঙ্গে জৈন খান কোকার মেয়েরও বিয়ে হয়েছিল। আকবরনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, জাহাঙ্গীর জৈন খান কোকার মেয়ের প্রেমে ভয়ানকভাবে আসক্ত ছিলেন। আকবর তাতে চরম অসন্তুষ্ট হন। তবে তিনি সেলিমকে গভীরভাবে আসক্ত দেখতে পেয়ে বিয়েতে সম্মতি প্রদান করেন।
আকবরনামার অনুবাদক এইচ. বেভারিজ অভিমত দিয়েছেন যে, জৈন খান কোকার কন্যার সঙ্গে শাহজাদার ইতিমধ্যে বাগদান হয়ে যাওয়ায় আকবর এ বিয়েতে আপত্তি জানিয়েছিলেন (আসলে তিনি ছিলেন জৈন খান কোকার মামার কন্যা এবং তার মামাতো বোন)। আকবর আত্মীয়দের মধ্যে বিয়েতে অমত করেছিলেন। তবে আমরা জাহাঙ্গীরের দু’জন স্ত্রীর কারো মৃত্যুর তারিখ জানি না।
খ্যাতনামা ঐতিহাসিক আর. নাথ বলেছেন, আনারকলি নামে জাহাঙ্গীরের কোনো স্ত্রী থাকার প্রমাণ নেই যার জন্য সম্রাট মজনু প্রত্যয় এঁটে দিয়ে একটি সৌধ নির্মাণ করতে পারেন। তিনি এ উপাখ্যানকে পুরোপুরি অসম্ভব বলে বিবেচনা করে বলছেন, এ মহান মোগল সম্রাট তার বিবাহিত স্ত্রীর জন্য নিজেকে মজনু নামে অভিহিত এবং তাকে পুনরায় দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন না। তিনি কি তার স্ত্রীকে পর্যাপ্ত দেখেননি? দৃশ্যত তিনি তার বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন না। কেবলমাত্র তার প্রেমিকা ছিলেন। তার সঙ্গে ছিল তার রোমাণ্টিক সম্পর্ক। তাতে মনে হয় এটি ব্যর্থ প্রেমের একটি উপাখ্যান। শাহজাদা তাকে রক্ষা করতে পারেননি।
প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, সেলিম তার পিতার প্রতি এত অসন্তুষ্ট ছিলেন যে, ১৫৯৯ সালে তিনি তার হুকুম অমান্য করে বিদ্রোহ করেন। স্মরণ করা যেতে পারে যে, একই বছর শের আফগানের সঙ্গে মেহেরুন্নিসার (পরবর্তীতে নূরজাহান) বিয়ে হয়েছিল। দুই দু’টি রোমাঞ্চ ব্যর্থ হওয়ায় এবং তার প্রেমের অপমৃত্যু ঘটায় তিনি এত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন যে, পিতাকে অমান্য করতে বাধ্য হন।
আনারকলির মৃত্যু সম্পর্কে বহু অভিমত খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো: (১) সম্রাট আকবর আনারকলি বা শরীফুন্নিসার মা জিলো বাঈকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি তার জীবনের একটি ইচ্ছা পূরণ করবেন। এই জিলো বাঈ সম্রাট আকবরকে তার পুত্র সেলিমের জন্মের সংবাদ দিয়েছিলেন। আনন্দ্যের আতিশয্যে আকবর তার হাতের একটি আংটি খুলে জিলো বাঈকে উপহার দিয়ে জানতে চান তিনি আর কি চান। জিলো বাঈ তৎক্ষণাৎ আর কিছু চাননি। তবে বলেছিলেন সময় হলে তিনি চেয়ে নেবেন। আকবর তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জিলো বাঈ সম্রাটকে তার প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দেন এবং তার দেয়া আংটি তাকে দেখান। সঙ্গে সঙ্গে আকবরের পেছনের স্মৃতি মনে পড়ে। তিনি আনারকলিকে মুক্তি দেন। মুক্তি পেয়ে আনারকলি দিল্লির উপকণ্ঠে একটি গোপন রাস্তা দিয়ে পালিয়ে লাহোরে চলে যান। লাহোরে তিনি আমৃত্যু বসবাস করেছেন। (২) দ্বিতীয় অভিমত হচ্ছে আকবরের মৃত্যুর পর সেলিম আনারকলিকে ডেকে আনেন এবং তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তার নতুন নাম দেন নূরজাহান।
আনারকলিকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯২৮ সালে লাভস অব অ্যা মোগল প্রিন্স নামে প্রথম একটি ছবি নির্মাণ করা হয়। ১৯৫৩ সালে ভারতে আনারকলি নামে আরেকটি ছবি নির্মাণ করা হয়। ছবিতে আনারকলি চরিত্রে অভিনয় করেন বীনা রায়। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে আনারকলি নামে আরেকটি ছবি মুক্তি পায়। নূরজাহান হলেন ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে কে. আসিফ পরিচালিত মোগল-ই-আজম মুক্তি পায়। এ ছবিতে আনারকলি চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেত্রী মধুবালা। ছবিটির কিছু অংশ ছিল রঙ্গীন। ২০০৪ সালে পুরোপুরি রঙ্গীন ছবি হিসাবে মোগল-ই-আজম মুক্তি পায়। ২০০৩ সালে শোয়েব মনসূরের স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক মিউজিক ভিডিও ইশকে ইমান আলী আনারকলি চরিত্রে অভিনয় করেন।
Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:৪৭
মেহেরুন বলেছেন: নুরজাহানকে নিয়ে আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম দেখতে পারেন। View this link