![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
সতর্কতা
লেখাটা প্রাপ্তবয়স্কসম্ভবা। শিরোনামে ইচ্ছে করেই ‘আঠার যোগ’ লেখা হয় নি, পাছে কেউ ভুল ভেবে বসেন অধিক হিটের উদ্দেশে এ চালাকি। তবে পড়তে পড়তে ‘আঠার যোগ’ সুলভ কোনো রশদ না পাওয়া গেলে সেটা পাঠকের উদারতা ভেবে নেব।
অহেতুক বাগাড়ম্বর
আমার পড়া জীবনের প্রথম উপন্যাস একটা প্রাপ্তবয়স্ক উপন্যাস ছিল। গদাধর, যে কথা বলতে মানা। লেখিকার নাম লেখা ছিল রাজিয়া সুলতানা বা কাছাকাছি কিছু। প্রিন্টার্স স্লাইডে কলকাতার কোনো এক প্রকাশনীর নাম লেখা ছিল। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। ১৯৭৬ বা ৭৭ সনের দিকে। আজ থেকে প্রায় ৩৫-৩৭ বছর আগেকার কথা।
আমার পড়ালেখায় হাতেখড়ি হয়েছিল প্রতিবেশী খোরশেদ কাকার হাতে। তিনি বিনা বেতনে খুব আনন্দের সাথে আমাদের ৬-৭ ঘরের ছেলেমেয়েদের পড়াতেন। স্কুলে তিনি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েন। একই স্কুলে আমরা নতুন ভর্তি হয়েছি। ঐ বয়সে কাকাকে অনেক সম্মানিত এবং গুরু শ্রেণীর তীব্র ব্যক্তিত্ববান মনে হতো; মনে হতো কাকার বয়স ও স্থান বাবার সমপর্যায়ের। কাকা আমাদের পড়ান, আর আমার পড়ার গতি দেখে তিনি চমৎকৃত হোন। সবার মধ্যে আমিই সেরা ছাত্র, কাকা তা প্রতিষ্ঠিত করলেন।
ঐ বয়সে দিনের বেলা স্কুলে যাওয়া, স্কুল থেকে ফিরে ডাংগুলি, হাডুডু, জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলা, এবং রাতের বেলা কাকার কাছে মহোৎসাহে পড়তে বসা আমাদের রুটিন ছিল। পড়ার প্রতি তখন আমার এতো উৎসাহ যে সামনে যা পাই তা-ই পড়ি। বাজার থেকে কাগজের মোড়কে যেসব সওদা আনা হতো, আমি তড়িঘড়ি মোড়ক খুলে সওদা সরিয়ে পড়তে বসতাম। বেশিরভাগ পাওয়া যেতো পরীক্ষার খাতা। ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই’, অথবা ‘দাদখানি চাল মসুরির ডাল...’ ইত্যাদি লেখা থাকতো। মনোযোগ দিয়ে পড়তে পড়তে দেখতাম কাগজ ছেঁড়া, লেখার বাকি অংশ নেই। আফসোস হতো বাকি অংশ পড়তে পারতাম না বলে।
আবার পথের ধারে বালুর উপর অ, আ, ক, খ, বা নতুন শেখা ছোটো ছোটো শব্দ লিখতাম; খাল বা পুকুর কাটা হলে পুকুরের মাটি-কাটা দেয়ালেও লিখতাম। 'বি' থেকে প্রথম শ্রেণীতে উঠবার পর বাড়ির পাশের খালে মাটি কাটা হয়। ওখানে আমরা অনেক লাফালাফি করে খেলাধূলা করেছি। দেয়ালে লিখে হাত পাকা করেছি। একবার একটা ছেলে সেই দেয়ালে খুব সুন্দর করে দুই অক্ষরের একটা বাংলা শব্দ লিখেছিল, যা নারীদেহের একটা গোপনাঙ্গ। তার দেখাদেখি আমি তার চেয়েও বেশি সংখ্যক বার, অধিক সুন্দর করে ঐ শব্দটা লিখেছিলাম। সবাই আমার পারদর্শিতায় অবাক হয়ে আমাকে অনেক বাহবা দিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন সকালে গ্রামের মাদবর এসে আমার মায়ের কাছে এ ব্যাপারে নালিশ পেশ করলে মা আমাকে একটা পাট-শলাকা দিয়ে পিঠে কয়েক ঘা আঘাত করেছিল। এ জন্য আমি ব্যথা পেয়েছিলাম খুব কমই। কিন্তু এতো সুন্দর করে ঐ শব্দটা লিখবার জন্য বাহবা না দিয়ে মা কেন আমাকে মেরেছিল তা বুঝতে আমার আরো কয়েক বছর সময় লেগেছিল।
খোরশেদ কাকা আমাকে প্রচুর পড়াতেন। অল্প কয়েকদিনেই খোরশেদ কাকার অবৈতনিক পাঠশালায় আমার প্রথম শ্রেণীর বই পড়া শেষ হয়ে গেলে কাকা আমাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর বই পড়ানো শুরু করলেন। দ্বিতীয় শ্রেণীতে কাকার কাছে আমার পারদর্শিতা তুঙ্গে। কিন্তু প্রথম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার কিছুদিন আগে স্কুলের ক্লাসে আবিষ্কার করলাম আমি প্রথম শ্রেণীর পড়া কিছুই পারি না। ঐ সময়ে কাকাদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারে ঝগড়া হয়েছিল, যার ফলে কাকার কাছে পড়তে যাওয়া বন্ধ ছিল। খুব টেনেটুনে আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠি।
এভাবে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে উঠবার সম্মান অর্জন করি। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার কাকাদের সাথে আমাদের ঝগড়া হয়েছে, যথারীতি আমার পড়া বন্ধ থেকেছে ততদিন। তবে কাকা যেহেতু আমাকে পড়ান, এবং ক্লাসে তিনি বরাবরই ফার্স্ট হয়ে থাকেন (ততদিনে কাকা হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন), আমার মা-বাবা তাঁকে খুব ভালোবাসেন, এবং তাঁর সাথে আমাদের পরিবারের অনেক ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। এখন আমাকে আর কাকার বাসায় পড়তে যেতে হয় না। তবে তিনি নিয়মিত আমাদের ঘরে এসে বসেন, আমার মেধা নিয়ে মা-বাবার সাথে সপ্রসংশ আলোচনা করেন, দীর্ঘ সময় ধরে আড্ডা দেন। আমাকে মারেন, কাটেন, বেত্রাঘাত করেন। শাসন করেন। আমাকে পড়ান। মাঝে মাঝে এমনও মনে হতে থাকে, খোরশেদ কাকা বোধ হয় আমার মা-বাবারও বয়োকনিষ্ঠ শিক্ষক।
মূল পর্ব
দুই পরিবারে ঝগড়ার কারণে গত প্রায় বছর খানেক ধরে কাকার কাছে আমার পড়া হয় নি। আমি একা একা পড়ি। একা একা পড়েই চতুর্থ শ্রেণীর প্রথম সাময়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করলাম।
চতুর্থ শ্রেণীর প্রথম সাময়িক পরীক্ষার অংক খাতা দিয়েছিল সেদিন। আমি হাইয়েস্ট পেয়েছি। ৮৫। অংকে নিকট অতীতে এতো নম্বর কেউ পায় নি, ক্লাসে এ নিয়ে হেডস্যার প্রশংসায় আমাকে মাথায় তুলে নিলেন। ক্লাস ছুটি হলে আমি একদৌড়ে খোরশেদ কাকার কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে তাঁকে অংক খাতা দেখাই- ‘আমি হাইয়েস্ট পাইছি কাকা!’ কাকা খাতা হাতে নিয়ে উলটে-পালটে দেখতে থাকেন। আমাদের গ্রামে খোরশেদ কাকার মতো ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র নেই। সেই খোরশেদ কাকাও কোনোদিন অংকে ৮৫ পান নি। কিন্তু আমার খাতা দেখে কাকা খুব একটা খুশি না হয়ে বরং মৃদু তিরস্কার করলেন। খুব সহজ দুটি অংক কাটা গেছে। কাটা না গেলে আমি একশোতে একশো পেয়ে কয়েক তল্লাটে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারতাম। আমাকে নিয়ে তাঁর অনেক আশা-ভরসা। আমাকে কঠোর অধ্যবসায়ী হতে হবে। মাকে ডেকে এনে তার সাথে আমার লেখাপড়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করলেন। কাকা একটা চেয়ারে বসেছেন, মা চৌকিতে পা দুলিয়ে বসা। আমি মায়ের পাশে গিয়ে তার গায়ে ঠেস দিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ মা আর কাকা ঝগড়ার বিষয়াদি নিয়ে কথা বললেন। আমি হাতের বইখাতা চৌকির একপাশে রেখে আবোল-তাবোল কিছু একটা করছিলাম। হঠাৎ দাঁড়িয়ে বুকশেল্ফ থেকে কাকার কিছু বই নামালাম। অষ্টম শ্রেণীর বই। ‘সবুজ সাথী’ হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উলটাচ্ছি। ওটা রেখে আরেকটা। আরেকটা রেখে কিছুক্ষণ চৌকি থেকে মাটিতে লাফিয়ে পড়ি; আবার বই নাড়াচাড়া করি। এর মধ্যেই পেয়ে যাই একটা বই, যেটার ওরিজিন্যাল মলাট নেই, বাঁশ-কাগজ দিয়ে পাতলা মলাট লাগানো। পুরোনো। পাতা উলটাই। গদাধর। যে কথা বলতে মানা। আমি কাকাকে জিজ্ঞাসা করি- ‘কাকা, এইডা কোন্ ক্লাসের বই?’ কাকা আমার দিকে একনজর তাকিয়েই কোনো জবাব না দিয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে থাকলেন। আমি পাতা উলটাতে থাকি। অনেক দীর্ঘ লেখা। ক্লাসের বইয়ে এতো বড় লেখা নেই। আমি পড়তে শুরু করি। কথাগুলো হুবহু মনে নেই, এতো বছর পর।
...................
‘ও-কাজে গদাধরের প্রথম হাতেখড়ি হয়েছিল লুকোচুরি খেলার মধ্য দিয়ে।
সন্ধ্যাবেলায় এ বাড়িতে লুকোচুরি খেলার ধুম পড়ে যায়। প্রতিদিনকার মতো আজও। বাড়ির শেষ মাথায় যে টিনের ঘরটা আছে, তার দরজায় তালা দেয়া। পাটাতনের নিচে অনেক ধুলোবালি জমে আছে, মাকড়সার বাসায় গা জড়িয়ে যায়। হেলেনা আর গদাধর হুড়োহুড়ি করে পাটাতনের নিচে গিয়ে লুকালো। চারপাশে পাটখড়ি, কাঠ, ফেলনা আসবাব, তার মাঝখানে খুব ছোট্ট, খুব ঘিঞ্জি জায়গাটুকুতে খুব চাপাচাপি করে দুজন বসেছে।
হেলেনা বলে, ‘ধুর, জায়গা হচ্ছে না। এক কাজ কর। আমি শুয়ে পড়ছি। তুই আমার বুকের উপর এসে শুয়ে পড়। জায়গা হয়ে যাবে।’ গদাধর তাই করে। একটু পর সে গদাধরকে বুক থেকে নামিয়ে দিয়ে বলে, ‘খুব গরম! চল, আমরা গায়ের জামা খুলে ফেলি।’ হেলেনা তার ফ্রক আর পাজামা খুলে ফেললো। ওর দেখাদেখি আহাম্মক গদাধরও গায়ের জামা খুলে ফেলে। এবার হেলেনা বলে, ‘দেখবি?’ ‘কী?’ ‘এই দেখ!’......এরপর শুরু হয় রগরগে বর্ণনা....আদি রসাত্মক কাহিনি....... ঠিক এই মুহূর্তে আমি খোরশেদ কাকার ভয়ে খুব শঙ্কিত হয়ে পড়ি- বড্ড ভুল বই হাতে তুলে নিয়েছি। কাকার চোখে ধরা পড়লে আর রক্ষা নেই। আমার শরীর কাঁপতে শুরু করেছে। অতি সন্তর্পণে দাঁড়িয়ে তাকের উপর আগের জায়গায় বইটি রেখে দিলাম। তারপর খুব নিগূঢ়ভাবে মা আর খোরশেদ কাকার কথাবার্তা শুনতে লাগলাম।
আমার মা যদ্দিন বেঁচে ছিল, আমার সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত, অন্যান্য মহিলাদের সাথে আমার ব্যাপারে আলাপ করতে শুনতাম- ‘আমার পুলাডা খুব সরল সুজা। কিচ্ছু বুজে না।’ মা এ কথা দ্বারা বোঝাতে চাইত নারীদেহ ঘটিত ব্যাপার-স্যাপারগুলো আমি একদমই বুঝি না। অথচ আমার আজও মনে হয়, আমার আজকের বয়সে আমি যতটুকু পাকা, ঐ বয়সে আমার ইঁচড় এর চেয়ে কিছু কম পাকা ছিল না! নুরু নামের যে ছেলেটি আমার সহপাঠী ছিল, সে-ই আমাকে প্রথম জানিয়েছিল মেয়েদের বুকের স্তন বাচ্চাদের জন্য স্তন্য সরবরাহের চেয়ে আরো অনেক মজার কাজে ব্যবহৃত হয়। নুরু আমার চেয়ে বছর দুয়েক বড় ছিল। সে প্রায়ই একটা ছড়া কাটতো- ডালের মজা তলে যদি ডাল গলে- আর মেয়েদের মজা গালে। আমি অবশ্য এসব বুঝতে বেশ কিছু সময় নিয়েছিলাম।
আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি, কখন খোরশেদ কাকা বাড়ি থেকে বাইরে বের হোন। ঠিক ঐ সময়ে বইটি নিয়ে আসবো। সুযোগটা জুটে গেলো এর কয়েকদিন পর। খোরশেদ কাকা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। আশেপাশের কোনো গ্রামে তিনি নেই। এই ফাঁকেই বইটি কব্জাগত করে ফেলি।
এই বইয়ের রসঘন বর্ণনা থেকে আমি সর্বপ্রথম প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের গভীর যৌবন-রহস্য সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ করি।
পুরো বই পড়ে শেষ করতে আমাকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত যেতে হয়। পড়তে হয় লুকিয়ে লুকিয়ে। অল্প অল্প করে। এর মধ্যে খোরশেদ কাকা বাড়ি ফিরে এসেছেন। বইটি তিনি খুঁজেছেন কিনা তাও জানি না। খুঁজে না পেলে তিনি নির্ঘাত আমাকেই সন্দেহ করবেন। তখন আমার মরণ ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকবে না। তবে খোরশেদ কাকাকে এড়িয়ে চলি। তাঁর কাছে পড়তে বসতে হয় না এটাই সবচেয়ে বড় স্বস্তি। লেখাপড়া বাদ দিয়ে তিনি এখন খালি বখাটেপনা করেন মা-বাবা-ভাইদের সাথে। বেকার মানুষ। তাঁর বাবা লঞ্চের সারেং। সারেংয়ের তখন অনেক দাম ও কদর। কাকাকে লঞ্চে একটা চাকরি-বাকরি ধরবার জন্যও চাপ দেয়া হচ্ছিল। আমার খুব ইচ্ছে হতো- খোরশেদ কাকা যেন খুব শীঘ্র চাকরির জন্য বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যান। তার সাথে এতো লুকোচুরি আর ভালো লাগে না।
খুব শীঘ্রই মনের আশা পূরণ হলো। দুই পরিবারের মধ্যে আবার ঝগড়া। এবার দীর্ঘ সময়ের জন্য। প্রায় দুই বছর, বা আরো বেশি। এই সময়ে আমি, নুরু, হাইস্কুলের বন্ধুরা এক জায়গায় জড়ো হয়ে এ বইটি পড়তাম। বইটির মালিক তো আমিই, আর এটা আমিই বেশি সংখ্যক বার পড়েছি, কাজেই গোলাকার আড্ডায় আমি মাঝখানে বসে বইটি পড়ি, মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ লাইন বা প্যারাগ্রাফ ব্যাখ্যা করি, বাকিরা প্রাণ ভরে সেই রস উপভোগ করে!
ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠবার পর হলো কী, বইটি পালা করে একেক দিন একেক জনকে পড়তে দেবার সিদ্ধান্ত হলো। ব্যস। 'গদাধর' চক্রাকারে ঘুরতে থাকলো এক হাত থেকে আরেক হাতে। সপ্তম শ্রেণী পার হলো। বই তখনো ফেরত আসে নি। অষ্টম শ্রেণীতে উঠবার পর বইটি উধাও হয়ে গেলো- কার কাছে আছে কেউ স্বীকার যায় না। বইটি হারিয়ে গেলো! আমার খুব কষ্ট হতে লাগলো বইটির জন্য। এমনকি কাঁদতেও ইচ্ছে করেছিল।
খুব সম্ভবত নবম শ্রেণীতে উঠে গেছি, অথবা অষ্টম শ্রেণীর শেষের দিকে। খোরশেদ কাকাদের সাথে সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক, তবে কোনো দহরম-মহরম নেই। একদিন খোরশেদ কাকাদের সেই বাংলা ঘরে গিয়ে বসলাম। কী মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে তাকের উপর হাত বাড়ালাম। একটা বই- যেটি স্কুলে আমাদের বন্ধুদেরকে পালাক্রমে পড়তে দিয়েছিলাম, যেটি হারিয়ে গিয়েছিল বলে খুব আফসোস হয়েছিল। বইটি অনেক জীর্ণ ও মলিন হয়ে গেছে। খুব মায়া হলো। বইটির পাতাগুলো খসে যাচ্ছে- কতো টর্চার হয়েছে এ বইটার উপর! আমি আলগোছে ‘গদাধর’ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
এরপর কবে, কীভাবে ‘গদাধর’ কোথা থেকে কী হয়ে গেলো তা আর মনে নেই।
পরের উপন্যাস
‘গদাধর’ পড়বার সমসাময়িক কালে আমি আরো কয়েকটা উপন্যাস পড়েছিলাম। ‘সিমি রাণীর গোপন কথা।’ এটি পাশের বাড়ির মনেরা আমাকে পড়তে দিয়েছিল, যখন আমি পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। এ বইটি মনেরাকে পড়তে দিয়েছিল আমার চাচাত ভাই জামাল। জামাল ওর সাথে প্রেম করবার জন্য পাগল ছিল। বইয়ের কাহিনি পড়ে যদি মনেরার মন গলে, জামালের উদ্দেশ্য ছিল এটা! আর মনেরা কেন এটা আমাকে পড়তে দিল? মেলা থেকে বেশ দামি একটা আংটি কিনেছিলাম। সাধারণ আংটির দাম চার আনা থেকে আট আনা। পাশের গাঁয়ের মৌলভ বাড়ির মেলা খাওয়ার জন্য মা আমাকে দেড় টাকা দিয়েছিল। খুব সম্ভবত আমার আংটিটার দাম ছিল এক টাকা বা পাঁচ-সিকা (একটাকা চার আনা)। মেলা থেকে ফেরার পর সবাই একে অপরের জিনিস দেখায়। মনেরাকে আমার দামি আংটিটা দেখালাম। ও খুব আহ্লাদি স্বরে আবদার করে বসলো মাত্র একদিনের জন্য ওকে আংটিটা পরতে দেয়ার জন্য। মেয়েদের আবদার রাখতে পারা যে ভাগ্যের ব্যাপার তা অবশ্য ঢের আগেই বুঝে গিয়েছিলাম! কিন্তু একদিন যায়, দুইদিন, তিনদিন- সাতদিন- মেয়ে তো আংটি ফেরত দেয় না! আংটির জন্য মনেরার পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করি। মাঝে মাঝে মা জিজ্ঞাসা করে, 'তর আংটি কই?' আমার জবাব নাই। একদিন সন্ধ্যার একটু পর, দু ঘরের মাঝখানে আবছা অন্ধকারে উলটো দিক থেকে মনেরা আসছিল। খপ করে ওর হাত চেপে ধরে আংটি-পরা আঙ্গুলে জোরে চাপ দিই। 'উহহহ' বলে মনেরা কুকড়ে ওঠে। হাত ঝাড়তে ঝাড়তে আমার চোখের দিকে তাকায়। আবছা অন্ধকারে মনে হয় ওর গভীর চোখ আমাকে গিলে ফেলছে ক্ষুধায়। ও আমাদের চেয়ে দু বছরের বড়। আমার চেয়ে এক বা দু ক্লাস নিচে পড়তো। খুব সুন্দরী ছিল। কথা বলতো শুদ্ধ করে। আমরা বলতাম 'আইছিল', 'আছিল'। মনেরা বলতো 'এসেছিল', 'ছিল।' ওর এ শুদ্ধ ভাষা আমাদের কাছে বড্ড বিরক্তিকর মনে হতো। দল বেঁধে এ নিয়ে মনেরাকে ভেঙাতাম। মনেরা ভুবন-মোহিনী হাসিতে জগৎ ভুলিয়ে দিত। ব্যথার্ত স্বরে মনেরা বললো, 'কেউ যদি দেখে ফেলতো!' 'কী দেখত?' 'জানি না' বলে একটা ঝামটা দিয়ে মনেরা উলটো পথে ফিরে গেলো। আমি দু ঘরের মাঝ দিয়ে অন্য উঠোনে যেতেই দেখি মনেরা এসে হাজির। আমার হাতে একটা বই দিয়ে বলে, 'এটা পড়। তোমাকে উপহার দিলাম।' এই বই পরের দিন জামালকে দেখালে সে আমার উপর ভীষণ ক্ষেপে যায়।
এবার প্রেমোৎপাদক বা প্রেম-সহায়ক বইটির কাহিনি কিছুটা জানা যাক।
গভীর রাতে সিমি রাণী এক বোতল বিষ হাতে নিয়ে বসে আছে। অন্য এক গাঁয়ে তার প্রেমিকও বিষের শিশি হাতে রাত একটা বাজবার অপেক্ষায় সময় গুনছে। একটার সময় দুজন একযোগে বিষপান করে এ ধরাধাম থেকে চিরবিদায় নেবে। তার শিয়রের কাছে পড়ে আছে একটা ডায়েরি- সিমি রাণীর জীবনের করুণ ঘটনাপ্রবাহ।
ডায়েরিটাই হলো সিমি রাণীর গোপন কথা। কী সেই গোপন কথা?
মা-বাবা-হারা সিমি তার বোনের সাথে দুলাভাইয়ের সংসারে বসবাস করে। এক যুবকের সাথে তার প্রেমও হয়। .....গল্প মনে করার চেষ্টা করছি। মনে পড়ে তো পড়ে না। মনে হয় এই তো ধরে ফেলেছি। নাহ্, গল্প মনে নেই। ভাসা ভাসা কিছু মনে পড়ে- তার বোনের একটা অবৈধ সন্তান হয়, যখন তার দুলাভাই থাকে প্রবাসে। দুলাভাই বাড়ি ফিরে এলে বুদ্ধিশুদ্ধিহীন বোন খুব চালাকি করে ঘটনাটা চাপিয়ে দেয় সিমির উপর- বলে বাচ্চাটা সিমির। বিয়ের আগেই প্রেম করে বাচ্চা বানিয়েছে। সিমি সমস্ত দোষ নীরবে মাথায় চেপে নেয়। ....এরপর ঘটনার সাসপেন্স বা সংঘাত কী ছিল, কিছুতেই মনে করতে পারছি না! তবে বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় সিমির এমন একটা কথা লেখা ছিল- 'বিদায় পৃথিবী।'
বইটা পড়ে আমার কষ্ট হয়েছিল। তবে মনেরার সাথে আমার কিছু হতে পারে নি। মনেরা বড়দের প্রেমের সামগ্রী ছিল। শাড়ি পরে হেঁটে গেলে ওকে একটা রঙিন রাজহংসীর মতো দেখাতো। অল্প দিনেই ওর বিয়ে হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবতাম, 'ধুর, মনেরা কোনো সুন্দরী হইলো?' আঙুরফল টক, জানেন তো!
অন্য একটি বই আমার মনে খুব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল- ‘দুর্ধ্বর্ষ দস্যু বনহুর’। এ বইটি খোরশেদ কাকার ঘর থেকে এনেছিলাম। ‘গদাধর’-এর সাথেই হয়তো কোনো এক ফাঁকে এই বইটাও নিয়ে এসেছিলাম। তবে ‘সিমি রাণীর গোপন কথা’ আগে পড়েছি, নাকি ‘দুর্ধ্বর্ষ দস্যু বনহুর’, সেটা নিশ্চিৎ করে বলতে পারছি না। যদি আমাকে বলা হয় আমি কোন্ বইটি পড়ে সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছি? আমার একটুও দ্বিধা নেই বলতে যে সে বইটি হলো রোমেনা আফাজের 'দুর্ধ্বর্ষ দস্যু বনহুর।' নির্জন রাতে গহীন অরণ্যের বুক চিরে দ্রুতবেগে ছুটে চলেছে এক অশ্বারোহী। সর্বমহলে সে একজন কুখ্যাত দুর্বৃত্ত। অথচ গরীবেরা সাহায্যের জন্য তার কাছেই ছুটে আসে। নির্যাতিতরা নির্যাতনের শিকার থেকে নিষ্কৃতি পেতে বনহুরের শরণাপন্ন হয়। এক গভীর ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বনহুর। ঐদিকে তার প্রেমের অপেক্ষায় প্রহর গোনে এক আত্মোৎসর্গীকৃত প্রণয়িনী- মনিরা। ...গল্প নিশ্চয়ই মনে নেই। এরই মধ্যে হয়তো অন্য কোনো সিরিজের গল্প এর সাথে মিলিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এ বইয়ের প্রতিটা অনুচ্ছেদ উত্তেজনায় ভরপুর ছিল। কোথায় যাচ্ছে বনহুর? পারবে তো নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে? আমার সেই বয়সে যদি ফিরে যেতে পারতাম- হায়, খুলে বসতাম সমগ্র রোমেনা আফাজ।
এ মুহূর্তে আরেকটি বইয়ের কথা মনে পড়লো- ‘আমি দালাল বলছি।’ এমনও হতে পারে যে, এ বইটি আমি ‘গদাধরের’ও আগে পড়ে্ছিলাম। মনে পড়লো- এটা একটা ছোটোগল্পের বই ছিল। একটা গল্পের নাম ছিল 'আমি দালাল বলছি।' মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার উপর লিখিত। মেহেদী হাসানের বাবা সিলেটের ছাতুগঞ্জে চাকরি করতেন। তাঁর একটা পারিবারিক লাইব্রেরি ছিল। রিটায়ার করার পর গ্রামের বাড়ি ফিরে এলেন। বইগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলেন ঘরের কাড়ে। মেহেদী হাসানের মা মাঝে মাঝেই আমাকে ডেকে নিয়ে তাঁদের কাড় থেকে জিনিসপত্র নামাতেন। জিনিসপত্রের সাথে আমি বইও নামাতাম। একটা বইয়ের কথাই মনে পড়লো- 'আমি দালাল বলছি।' একজন সৎ, সাহসী মুক্তিযোদ্ধা নিজেকে দালাল বলছিলেন। বিভিন্ন অসংগতি তাঁকে আহত করছিল খুব। ... মনে পড়ছে না। যা বললাম মূলভাব ঠিক এটাই ছিল কিনা তাও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। শেষের লাইনটা খুব সম্ভবত এরকম ছিল- 'কারণ, আমি একজন দালাল।'
তিন সাগর কন্যাকে নিয়ে আরেকটা উপন্যাস ছিল- তারা তিন বোন। উপন্যাসের নাম মনে নেই। সপ্তম থেকে নবম শ্রেণী- এর মাঝখানে কোনো এক সময়ে জাহিদ আমাকে ‘শেষের কবিতা’ পড়তে দিয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে ‘ব্যথার দান’ও পড়েছিলাম লঞ্চে বসে। এবার আরো কিছু বইয়ের কথা মনে পড়ছে- ‘চিতা বহ্নিমান’- ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের বই। খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু বইটির নামের অর্থ বুঝি নি তখন। এক অহঙ্কারী ধনীর দুলালীর বিয়ে হয়েছে একজন আপাত-মূর্খ, আনস্মার্ট যুবকের সাথে। বিভিন্ন ভাবে জামাইকে অপমান ও অপদস্ত করে সে মেয়ে। জামাই অবশ্য নিজের ব্যক্তিত্ত্ব বজায় রাখে। সে খুব কনফিডেন্ট, একদিন তার বউ নিজের ভুল বুঝতে পারবে। এ জামাই যে কতো শিক্ষিত, মার্জিত রুচিবোধ সম্পন্ন, জ্ঞানী লোক, তা অবশ্য মেয়ের কোনো এক বান্ধবী তাকে দেখা মাত্রই বুঝতে পারে। স্ত্রীও শেষ পর্যন্ত স্বামীকে চিনতে পারে। কতো বন্ধু-বান্ধবের সামনে তাকে 'অশিক্ষিত' ও বর্বর বলে তিরস্কার করা হয়েছে- আজ দেখে তার সেই বন্ধুরা তার জামাইয়ের নখেরও তুল্য নয়। অনুশোচনার আগুন জ্বলতে থাকে স্ত্রীর বুকে। বহ্নিমান অর্থ হলো যা জ্বলছে, বা জ্বলমান, জ্বাজ্জল্যমান। যে চিতায় অবিরাম আগুন জ্বলছে। জ্বলমান চিতা।
পড়েছিলাম ‘লালুভুলু।’ বিমল মিত্র ও নীহার রঞ্জন গুপ্তের অনেক বই পড়েছি- যেগুলোর নাম মনে নেই। ‘বমি’ নামে উপন্যাসটা- আবু রুশদ, আবু ইসহাক, শওকত ওসমান- কার লেখা জানি না- ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণীতে থাকবার সময়ে পড়ি।
এভাবে কাগজের ঠোঙ্গা থেকে ছেঁড়াটোটা যেখানে যা পেয়েছি পড়েছি। ক্লাসের পাঠ্যবই ছিল সবচেয়ে বড় বিনোদনের বই। তখন কোনো পত্রিকা পড়ি নি আমরা, কারণ আমাদের ওখানে তা ছিল না। সংবাদপত্রের অস্তিত্ত্ব শুধু ক্লাসের বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ‘সংবাদপত্র’ নামক রচনা-লিখনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যদ্দূর মনে পড়ে, সপ্তম শ্রেণীতে উঠবার পর যেবার ঢাকা গিয়েছিলাম, সেবার লঞ্চে সর্বপ্রথম এক ভদ্রলোকের হাতে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ নামক সংবাদপত্রটি দেখেছিলাম। আমি তাঁর পাশে বসা ছিলাম। ইত্তেফাক তাঁর হাতে; আমি ঘাড় বাঁকা করে ঈষৎ ঝুঁকে পড়ে তাঁর হাতে রাখা ইত্তেফাকে চোখ ঘুরাচ্ছিলাম। ভদ্রলোক খুব অবাক এবং বিরক্ত হয়েছিলেন, এখন বোধ করি। তাঁর পড়া শেষ হলে ওটা আমার হাতে দিয়ে ‘তুমি পড়তে পারো?’ বা এ ধরনের কিছু কথা বলেছিলেন। আমার ধারনা, তাঁর বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, এতো ছোটো অক্ষরের লেখাগুলো আমার মতো ছোটো চোখঅলা এক কিশোরের পক্ষে পড়া সম্ভব। আমি খুব মনোযোগ সহকারে জীবনে প্রথমবারের মতো সংবাদপত্র পড়ছিলাম। ঐ সময়ে আমাদের দোহারে ‘জয়পাড়া সিনেমা হলে’ প্রচুর ছবি দেখতাম। মেহেদী হাসানদের ঘরে বসে ওদের রেডিওতে, বা প্রতিবেশী সহচর আবুলের রেডিওতে ‘হ্যাঁ ভাই, আসিতেছে’ সিনেমার বিজ্ঞাপন খুব মজা করে ছোটো-বড় সবাই একত্রে সমবেত হয়ে শুনতাম। ইত্তেফাকের মাঝের পাতায় এরকম বেশ কিছু সিনেমার বিজ্ঞাপন দেখে আমি যারপরনাই উত্তেজনা বোধ করি। বিজ্ঞাপনের নিচে যে-সব সিনেমা হলের নাম লেখা ছিল, ওগুলো পড়তে পড়তে মুখস্থ হয়ে যায়।
জয়পাড়া যেদিন হাঁট বসতো, হাঁটে যাওয়াও আমার জন্য বড় আনন্দের ও বিনোদনের ছিল। রাস্তার ধারে বইয়ের দোকান বসতো- তাতে বিভিন্ন ধরনের ধাঁধার বই, গানের বই, যাত্রাপালার বই, নামজ শিক্ষা, কী করিলে কী হয়, রাশিনামা, আব্দুল করিমের কবিতা (গানে গানে সাম্প্রতিক কাহিনি), উপন্যাস থাকতো; দোকানের পাশে টাঙানো থাকতো নানা ধরনের পোস্টার বা ছবি- কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মায়ের কোলে শিশু, ইত্যাদি। বাবা হাঁটে বেচাকেনা করতো, রসগোল্লা বা চানাচুর খাওয়ার জন্য চার আনা, আট আনা করে পয়সা দিত। ঐ পয়সা দিয়ে বই কিনতাম। ছায়াছবির গান, রাশিনামা, ধাঁধা, এগুলোই বেশি কিনতাম। এ অভ্যাসটা অবশ্য খুব ছোটোবেলা থেকেই ছিল। একটু বড় হবার পর কিনতে শুরু করলাম যাত্রাপালার বই। গ্রামে যেসব যাত্রাপাল মঞ্চস্থ হতো, সেগুলোর বই এখানে কিনতে পেরে আমি খুব পুলকিত এবং গর্বিত বোধ করতাম। যাত্রাপালা দেখতে গিয়ে কোন্ সিকোয়েন্সের পর কী ঘটতে যাচ্ছে তা আগোভাগেই বলে দিয়ে পাশে বসা মানুষদের তাক লাগিয়ে দিতাম; কেউ কেউ আবার ধমকও দিত আগে আগে কাহিনি বলে দেয়ার জন্য। আমি এ ফুটপাতের দোকান থেকেই আরেকটা উপন্যাস কিনেছিলাম- ‘দুই দিনের সংসার।’ এটা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর মাঝামাঝি কোনো এক সময় পড়েছিলাম। এ বইটি পড়বার আগে ছাপার অক্ষরে যা পড়তাম, তাই মনে হতো নিখুঁত- এটি পড়েই সর্বপ্রথম আমি বইয়ের কাহিনি ভালো বা মন্দ ইত্যাদি ‘সমালোচনা’ করতে শিখি। এ বইটির প্রথম অধ্যায়ের কাহিনির সাথে পরের কাহিনির কোনো মিল ছিল না। আমি পড়তে পড়তে মনে মনে বলেছিলাম, ঐ অংশ না লিখলেও চলতো। হয়তো এমনও হতে পারে, পুরো কাহিনিটি আমি বুঝতেও পারি নি। এক গৃহবধূ। সুন্দরী রূপসী। এক প্রতিবেশী ভাসুরের সাথে তার প্রেম হয়ে যায়। নিজের সংসার ছেড়ে ভাসুরের সাথে ঘর বাঁধে। কিন্তু নতুন সংসার মাত্র কয়েক দিন স্থায়ী হয়। গল্পের শেষ লাইন আমার মনে এখনও অবিকল ভাসে- ‘তাইতো তার মনে দুদিনের সংসার।’ কিন্তু শেষ কথাটার সাথে অনুচ্ছেদের আগের কথাগুলো কেমন যেন আওগোছালো ছিল, তা আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম।
ক্লাসপাঠ্য বইয়ের বাইরে পড়ার সুযোগ এর চেয়ে বেশি ছিল না। তদুপরি, যে বইগুলো পড়তে পেরেছি ঐ ইঁচড়ে পাকা বয়সে, পরবর্তীতে তা থেকেই বই পড়ার প্রতি কিছু নেশার জন্ম হয় আমার মধ্যে।
ম্যান ইজ মর্টাল। মানুষ মাত্রই বই পড়ে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সে। লিটারেচার ইজ নোবডিজ বেবি। বয়স দ্বারা বুদ্ধি বিচার হয় না। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র হয়েও সেজন্য গদাধর নামক বিখ্যাত বইটি পড়তে সক্ষম হয়েছিলাম। আমি আমার সেই কৈশোরকে কুর্নিশ করি।
১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১০:৩৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ভাবছি। ধন্যবাদ মূল্যবান পরামর্শের জন্য।
১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:২৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার কমেন্ট আমাকে খুব ভাবিয়েছিল। ঐ অংশটুকু পরিমার্জিত করা হয়েছে। সম্ভব হলে বলুন, এখন ঠিক আছে কিনা।
পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
২| ১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১০:১৪
সুস্ময় পাল বলেছেন: তখন ইন্টারনেট বলে কিছু ছিল না, তাই ছোট ছেলেরা প্রাপ্তবয়ষ্ক জিনিসগুলো জানত এই চটি পড়েই। এরকম কাহিনী অনেক লেখকের বইতে উঠে এসেছে, যেমনটা আসল আপনার এখানেও।
পোষ্টের নেগেটিভ দিক হচ্ছে গধাদরের কাহিনীর একটা আদি রসাত্মক কাহিনী বর্ণনা। ওটা চাইলে লেখক সামান্য কথায় শেষ করতে পারতেন।
আর বেশ কিছু পজেটিভ দিকের মধ্যে একটা হচ্ছে, হেডলাইনে ১৮+ ট্যাগ না দেওয়া। হিটের সহজ এই উপায় লেখক হেলায় ছেড়েছেন দেখে সত্যিই ভাল লাগল।
১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১০:৩৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: নেগেটিভ দিকের সমালোচনা গ্রহণ করলাম। একটু ভাবছি। অশেষ ধন্যবাদ মূল্যবান মতামতের জন্য।
১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:২৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার প্রতিও অনেক কৃতজ্ঞতা। গদাধরের কাহিনি পরিমার্জন করা হয়েছে। এখন কি ঠিক আছে?
৩| ১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১০:১৭
সাইফুলহাসানসিপাত বলেছেন: হা হা হা । মজার স্মৃতিচারন । গদাধর উপন্যাসটা পড়া দরকার । আমার পড়া প্রথম উপন্যাস আট কুঠুরী নয় দরজা । একবারই পড়েছি । ঝাপসা ঝাপসা মনে আছে , এখন আর পড়িনা ভয় হয় ছেলে বেলার ভালো লাগাটা যদি চলে যায় ।
১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১০:৪১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: রুদ্ধশ্বাসে পড়েছিলাম 'দুর্ধ্বর্ষ দস্যু বনহুর'। এরপর বড় হয়ে হন্যে হয়ে খুঁজেছি রোমেনা আফাজের ১৬তম বনহুর সিরিজ। ২০০৩ বা ২০০৪ এর একুশে বইমেলা থেকে ১৬ উপন্যাসের বনহুর সমগ্র কিনি। এবার আমার উৎসাহ ছিল চরমে। কিন্তু হায়, কৈশোরের সেই উত্তেজনা, এ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ কিছুই পেলাম না- মনে হলো আগাগোড়া গোজামিল দিয়ে লেখা একটা বই। বইটা ২য় বার পড়ে আমি সত্যই ভুল করেছিলাম। তাই আমারও মতামত, আট কুঠরি নয় দরজা আর না পড়াই উত্তম।
৪| ১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১০:৩৪
গেমার বয় বলেছেন:
১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১১:০০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
৫| ১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১০:৪২
আজমান আন্দালিব বলেছেন: অনেক কিছু মনে করিয়ে দিলেন। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন একদিন মায়ের ট্রাংক খুঁজে একটি বই পাই। আনোয়ারা উপন্যাস। লুকিয়ে লুকিয়ে উপন্যাসটি পুরোটাই পড়েছিলাম।
প্রাপ্তবয়স্কদের বই কখন হাতে এসেছিল তা মনে নেই...তবে সে কাহিনী বলতে গেলে আরেকটি উপন্যাস হয়ে যাবে। ক্লাস সিক্সে থাকতে মাসুদ রানার সিরিজ ধ্বংস পাহাড় লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে কি যেনো এক অজানা আকর্ষণে পড়ে গিয়েছিলাম। বইগুলোতে 'প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য' লেখা থাকলেও অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেই পড়ে শেষ করে ফেলেছিলাম। এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে নানান ভেট দিয়ে বইগুলো সংগ্রহ করতে হতো।
খুব ভালো লেগেছে আপনার স্মৃতিচারণ।
১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১:০৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণও ভালো লাগলো খুব। 'আনোয়ারা' পড়েছি বলে মনে পড়ে না। মাসুদ রানা অবশ্য আমার খুব কমই পড়া হয়েছে- বড় জোর গোটা ১২। কম পড়ার কারণ হলো এগুলোতে আমি খুব কম আকর্ষণ বোধ করেছি। অল্প বয়সে বনহুর পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম। মাসুদ রানা ঠিক সেরকম টানে নি কোনোদিনই। এখনো টানে না! মনে হয়, আরে এটা না জেমস বন্ডের ঐ মুভিটা! ইত্যাদি।
৬| ১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১১:২৮
মাহমুদা সোনিয়া বলেছেন: মজা পেলাম স্মৃতি কথনে।
১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১:০৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মজা পেয়েছেন জেনে ভালো লাগলো আপু।
৭| ১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১২:২৫
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১:১০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
৮| ১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১:১৫
প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার বলেছেন: প্রথম উপন্যাস কি ছিলো মনে করতে পারতেছিনা
সম্ভবত শীর্ষেন্দুর দূরবীন ছিলো। সিউর না :-&
১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১:৪১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: দূরবীন পড়েছি এই সেদিন- ৯৫-৯৭ সনের মধ্যে। খুব ভালো লেগেছিল। ভৃত্যার সাথে প্রেম, পরবর্তীতে বিয়ে- অথবা ভৃত্যার খুব অনুগত ও বাধ্যগত থাকা- আগের উপন্যাসগুলোতে প্রায়ই এমনটা দেখা যেতো। কিন্তু এটা নগণ্য- ২য় পুরুষের যে চরিত্র- খুব শক্তিশালীভাবে সেটি ফুটে উঠেছে দূরবীনে।
৯| ১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১:২০
রবিন মিলফোর্ড বলেছেন:
মজাদার স্মৃতিকথন ভাল লাগল ।
++++++
১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১:৪২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ রবিন মিলফোর্ড এ লেখাটা পড়বার জন্য, এবং কিছু প্লাস দেওয়ার জন্য।
১০| ১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১:২৮
বেঈমান আমি বলেছেন: মজা পেলুম
১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১:৪৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মজা পেয়েছেন জেনে নিজেকে কৃতার্থ মনে করলুম।
১১| ১৮ ই মে, ২০১২ রাত ২:৩৪
মুনসী১৬১২ বলেছেন: একদম আমার মতো মিলে গেল.............আমি গোগ্রাসে বই গিলতাম। হাতের কাছে যাই পেতাম তাতেই চলত। বাজারের ঠোঙার বিষয়টাও..এমন কি বাসায় মেহমান এসেছে আমি কিছু আনতে গেছি। বিস্কুট চানাচুরের ঠোঙা পড়তে পড়তে আসতাম। অনেক সময় দেখা যেত মেহমান চলে গেছে।
মাসুদ রানা তিন গোয়েন্দা কুয়াশা. দস্য বনহুর...সুনীল সমরেশ শরৎ রবীন্দ্র নাথ স্কুল জীবনেই মেষ করেছি। এমনো হয়েছে কোথাও বেড়াতে গিয়েছি...বই পেলে ফেরা পিছিয়ে যেত। আমি যৌথ পরিবারে মানুষ ফুপুরা প্রচুর গিফট পেত, বান্ধবীদের কাছ থেকে আনত। বাবার গোয়েন্দা সেবার বড় একটা কালেকশন ছিল। সবই পড়া হতো।
প্রাপ্ত বয়স্ক..যৌন বর্ণনা ভরপুর ছোঠদের রুপকথা কিছুই বাদ যেত না। সবচেয়ে মজা পেয়েছি সমরেশ বসুর প্রজাপতি পড়ে। তখন অষ্টম শ্রেণীতে।
এখনো বই পেলেই আমি নেই। যদিও ব্লগের কারণে একটু কমেছে। আমার ২/৩ সেলফ ভর্তি বই আছে। পাবলিক লাইব্রেরীতে পড়তে যেতাম কিন্তু গল্প উপন্যাসের ঠেলায় পাঠ্য পুস্তক দৌড় দিত।
একবার তো কলেজ জীবনে সমরেশের গর্ভধারিণী টানা ১০/১১ ঘণ্টা পড়ে শেষ করেছি।
বই নিয়ে কাটিয়ে দিতে চাই বাকি জীবন
১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:১২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
শৈশবটা বোধ হয় সবারই এমনই হয়, তাই সবটা মিলে যেতে থাকে। আমাদের ছোটোবেলায় কোনো সংবাদপত্র ছিল না। সংবাদপত্রের অস্তিত্ত্ব শুধু ক্লাসের বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ‘সংবাদপত্র’ নামক রচনা-লিখনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যদ্দূর মনে পড়ে, সপ্তম শ্রেণীতে উঠবার পর যেবার ঢাকা গিয়েছিলাম, সেবার লঞ্চে সর্বপ্রথম এক ভদ্রলোকের হাতে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ নামক সংবাদপত্রটি দেখেছিলাম। আমি তাঁর পাশে বসা ছিলাম। ইত্তেফাক তাঁর হাতে; আমি ঘাড় বাঁকা করে ঈষৎ ঝুঁকে পড়ে তাঁর হাতে রাখা ইত্তেফাকে চোখ ঘুরাচ্ছিলাম। ভদ্রলোক খুব অবাক এবং বিরক্ত হয়েছিলেন, এখন বোধ করি। তাঁর পড়া শেষ হলে ওটা আমার হাতে দিয়ে ‘তুমি পড়তে পারো?’ বা এ ধরনের কিছু কথা বলেছিলেন। আমার ধারনা, তাঁর বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, এতো ছোটো অক্ষরের লেখাগুলো আমার মতো ছোটো চোখঅলা এক কিশোরের পক্ষে পড়া সম্ভব। আমি খুব মনোযোগ সহকারে জীবনে প্রথমবারের মতো সংবাদপত্র পড়ছিলাম। ঐ সময়ে আমাদের দোহারে ‘জয়পাড়া সিনেমা হলে’ প্রচুর ছবি দেখতাম। মেহেদী হাসানদের ঘরে বসে ওদের রেডিওতে, বা প্রতিবেশী সহচর আবুলের রেডিওতে ‘হ্যাঁ ভাই, আসিতেছে’ সিনেমার বিজ্ঞাপন খুব মজা করে ছোটো-বড় সবাই একত্রে সমবেত হয়ে শুনতাম। ইত্তেফাকের মাঝের পাতায় এরকম বেশ কিছু সিনেমার বিজ্ঞাপন দেখে আমি যারপরনাই উত্তেজনা বোধ করি। বিজ্ঞাপনের নিচে যে-সব সিনেমা হলের নাম লেখা ছিল, ওগুলো পড়তে পড়তে মুখস্থ হয়ে যায়।
জয়পাড়া যেদিন হাঁট বসতো, হাঁটে যাওয়াও আমার জন্য বড় আনন্দের ও বিনোদনের ছিল। রাস্তার ধারে বইয়ের দোকান বসতো- তাতে বিভিন্ন ধরনের ধাঁধার বই, গানের বই, যাত্রাপালার বই, নামজ শিক্ষা, কী করিলে কী হয়, রাশিনামা, আব্দুল করিমের কবিতা (গানে গানে সাম্প্রতিক কাহিনি), উপন্যাস থাকতো; দোকানের পাশে টাঙানো থাকতো নানা ধরনের পোস্টার বা ছবি- কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মায়ের কোলে শিশু, ইত্যাদি। বাবা হাঁটে বেচাকেনা করতো, রসগোল্লা বা চানাচুর খাওয়ার জন্য চার আনা, আট আনা করে পয়সা দিত। ঐ পয়সা দিয়ে বই কিনতাম। ছায়াছবির গান, রাশিনামা, ধাঁধা, এগুলোই বেশি কিনতাম। এ অভ্যাসটা অবশ্য খুব ছোটোবেলা থেকেই ছিল। একটু বড় হবার পর কিনতে শুরু করলাম যাত্রাপালার বই। গ্রামে যেসব যাত্রাপাল মঞ্চস্থ হতো, সেগুলোর বই এখানে কিনতে পেরে আমি খুব পুলকিত এবং গর্বিত বোধ করতাম। যাত্রাপালা দেখতে গিয়ে কোন্ সিকোয়েন্সের পর কী ঘটতে যাচ্ছে তা আগোভাগেই বলে দিয়ে পাশে বসা মানুষদের তাক লাগিয়ে দিতাম; কেউ কেউ আবার ধমকও দিত আগে আগে কাহিনি বলে দেয়ার জন্য। আমি এ ফুটপাতের দোকান থেকেই আরেকটা উপন্যাস কিনেছিলাম- ‘দুই দিনের সংসার।’ এটা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর মাঝামাঝি কোনো এক সময় পড়েছিলাম। এ বইটি পড়বার আগে ছাপার অক্ষরে যা পড়তাম, তাই মনে হতো নিখুঁত- এটি পড়েই সর্বপ্রথম আমি বইয়ের কাহিনি ভালো বা মন্দ ইত্যাদি ‘সমালোচনা’ করতে শিখি। এ বইটির প্রথম অধ্যায়ের কাহিনির সাথে পরের কাহিনির কোনো মিল ছিল না। আমি পড়তে পড়তে মনে মনে বলেছিলাম, ঐ অংশ না লিখলেও চলতো। হয়তো এমনও হতে পারে, পুরো কাহিনিটি আমি বুঝতেও পারি নি। এক গৃহবধূ। সুন্দরী রূপসী। এক প্রতিবেশী ভাসুরের সাথে তার প্রেম হয়ে যায়। নিজের সংসার ছেড়ে ভাসুরের সাথে ঘর বাঁধে। কিন্তু নতুন সংসার মাত্র কয়েক দিন স্থায়ী হয়। গল্পের শেষ লাইন আমার মনে এখনও অবিকল ভাসে- ‘তাইতো তার মনে দুদিনের সংসার।’ কিন্তু শেষ কথাটার সাথে অনুচ্ছেদের আগের কথাগুলো কেমন যেন আওগোছালো ছিল, তা আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম।
ক্লাসপাঠ্য বইয়ের বাইরে পড়ার সুযোগ এর চেয়ে বেশি ছিল না।
১৮ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার কমেন্টের জবাবে যা লিখলাম, মূল টেক্সটে তা জুড়ে দিলাম। এ কথাগুলো শুরুতেই লিখবার কথা ছিল, কিন্তু লেখা পোস্ট করবার কালে এটি হয়ে ওঠে নি। কৃতজ্ঞতা।
১২| ১৮ ই মে, ২০১২ দুপুর ১২:১১
এস এম শাখওয়াত আহমেদ বলেছেন: +++++
১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:১৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ এস এম শাখওয়াত আহমেদ।
১৩| ১৮ ই মে, ২০১২ দুপুর ১:৩৯
সায়েম মুন বলেছেন: জানা হলো পূর্বস্মৃতি। ভাল লাগলো।
১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:১৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ভালো লাগলো জেনে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ কবি সায়েম মুন।
১৪| ১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৩:১৬
ভাম_বেড়াল বলেছেন: গ্রেট!!! এমন লেখা ব্লগে কমই পড়েছি।
গদাধরের বর্ণনাটা নিয়ে অহেতুক চুলকানির কারণ দেখিনা। ওটা পড়ে কি কোনও পাঠকের মনে উত্তেজনা জাগতেছে নাকি? আমার ত চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে এলো ওই বর্ণনাটা পড়ে! সেই ছোট্টবেলায় পৃথিবীটা কত রহস্যময় ছিল, এধরণের বই নিয়ে কত লুকোচুরি ছিল, এখন সেসব কিছুই নেই। আমরা বড় বেশী জেনে গেছি। পৃথিবীটা আর ততটা আশ্চর্যজনক নেই, তত সহজে আর আমরা অবাক হইনা! ওই বর্ণনাটা আমার ত্রিশ বছর আগে ফেলে আসা ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দিলো
১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এমনভাবে প্রশংসা করবার জন্য। তবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আগে-ভাগেই। প্রথম দু ব্যক্তির কমেন্টের পর ব্যাপারটা নিয়ে আমি বেশ ভেবেছি। মেসেঞ্জারেও পরামর্শ নিলাম কোনো এক জনের। সবকিছু বিচার করে গদাধরের কাহিনিটা পুনর্মার্জন করা হয়েছে। আপত্তিকর অংশটুকু ছেঁটে ফেলা হয়েছে। আপনার কমেন্ট পড়ে এতোখানি স্বস্তি বোধ করা যায় যে, লেখাটা প্রথমাবস্থার চেয়ে এখন অনেক মার্জিত রূপ পেয়েছে।
আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
১৫| ১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৪:২৪
ইশতিয়াক আহমেদ চয়ন বলেছেন: আমার পড়া ১ম উপন্যাস হুমায়ূণ আহমেদের +++++
১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ- এ মহান নামের সাথে প্রথম পরিচয় বিটিভিতে প্রচারিত 'এইসব দিনরাত্রি' ধারাবাহিকের মাধ্যমে। ঢাকা কলেজ, নর্থ হোস্টেলে তখন থাকি। প্রতিদিন রাত ৮-১০টা টিভি খোলা থাকতো। মাসিক বাংলা সিনেমার দিন বিশেষ বিবেচনায় পুরো সিনেমা দেখার অনুমতি থাকতো। পরীক্ষা চলাকালে টিভি পুরোপুরি বন্ধ। হুমায়ূন আহমেদের বই পড়া শুরু হয়েছে আমার অনেক পরে। প্রথম কোন্ বইটি পড়েছিলাম মনে পড়ছে না কিছুতেই। তবে, তাঁর যতো বই- তা গোগ্রাসে গিলতে থাকি ১৯৯০-১৯৯৭ সময়ের মধ্যে। হুমায়ূন আহমেদ আমার নেশায় পরিণত হয় ১৯৯৯ সালে। এরকম নেশা ছিল কোনো এক সময়ে শরৎচন্দ্রের বই।
এ লেখাটি পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
১৬| ১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৪:২৬
জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন:
১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:৩৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: নির্মল হাসির জন্য ধন্যবাদ।
১৭| ১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৪:৩১
রাতুল_শাহ বলেছেন: আমার জীবনের প্রথম উপন্যাস "বিষাদ সিন্ধু" অনেকবার পড়েছি।
তারপর দিপু নাম্বার টু, হাজার বছর ধরে............
১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:৫০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
বিষাদ-সিন্ধু পড়েছিলাম ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময়ে। কলেজে ভর্তি হবার পর ঢাকার কালিগঞ্জে আমার এক মামার সাথে ছিলাম বেশ কিছুদিন। মামা এবং এক হুজুর এক সাথে সে বাসায় থাকতেন। সেই হুজুরের অনেকগুলো বইয়ের মধ্যে বিষাদ-সিন্ধু ছিল একটি। এ বইটির নাম প্রথম জানতে পারি নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্য বইয়ের অন্তর্ভুক্ত সীমারের হাতে হোসেনের খুন হওয়ার কাহিনি অংশ থেকে, যা বিষাদ-সিন্ধু থেকে সংকলিত। নবম-দশম শ্রেণীতে থাকা কালেই এইচএসসির বাংলা সাহিত্য সংকলন পড়ি, যেখানে বিষাদ-সিন্ধুর আরেকটি অংশ ছিল। দুটি অংশের পুরো নামই এ মুহূর্তে ভুলে গিয়েছি। বিষাদ-সিন্দু হাতে নিয়ে প্রথমেই আমি খুঁজতে থাকি আমাদের পাঠ্যতালিকার অংশটুকু। এ বিশাল বই থেকে তা খুঁজে বের করতে সময় লেগেছিল। তবে, বিষাদ-সিন্ধু সম্পূর্ণ পড়া হয় নি। শেষের দিকে অন্তত ৮০ পৃষ্ঠার মতো পড়া অবশিষ্ট ছিল। বিষাদ-সিন্ধু এখনো আমার অসম্পূর্ণ পাঠ। দিপু নাম্বার টু পড়ি নি, যদিও ছবিটা দেখা হয়েছে বেশ কয়েক বার। হাজার বছর ধরে পড়ি সম্ভব কলেজ লাইব্রেরি থেকে ইস্যু করে, ১০৯৮৫-৮৬ সনের দিকে।
ভালো লাগলো আপনার পড়া প্রথম উপন্যাসের কথা জানতে পেরে।
১৮| ১৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:৩৪
ম্যাভেরিক বলেছেন: প্রথম উপন্যাস ঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবতঃ সত্যজিত রায়ের বাদশাহী আংটি, তৃতীয়/চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময়। এর পর সংশপ্তক উপন্যাসটি মগ্ন করে রেখেছিল বছরের পর বছর, সে এক বিশাল কাহিনি, যদিও বহু বছর বইটির নামই জানতে পারিনি, কারণ সুবিশাল বইটির পৃষ্ঠা মাঝেমাঝে ছেঁড়া ছিল।
দস্যু বনহুরের সঙ্গে আরও দুটি ধারাবাহিক মগ্ন করে রাখত, সুন্দরবনের "দস্যু বাহরাম" আর কোলকাতার "ডাক্তার কিউ"।
আপনার লেখাটি ভালো লাগল খুব।
১৮ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার প্রথম দিকের পড়া উপন্যাসের কথা জেনে ভালো লাগলো ম্যাভেরিক ভাই। অনেক আগে একুশে বইমেলা থেকে কেনা চমৎকার প্রচ্ছদের এবং ছাপার 'সংসপ্তক' এখনো আমার পারিবারিক পাঠাগারে জ্বলজ্বল করে। মাঝে মাঝে মেয়ের রুমে দেখা যায়, পড়ে কিনা জানি না। তবে, আমি এখনো পড়ি নি। বিটিভিতে 'সংসপ্তক' ধারাবাহিক খুব ভালো লেগেছিল। কাহিনিটা অলরেডি জানা, এজন্য বইটি পড়ার প্রতি তেমন আগ্রহ পাই না। তবে, সেরা বইগুলো এর সাহিত্যরস আস্বাদনের জন্যই পড়া উচিত। আমিও পড়বো ভবিষ্যতে কোনো একদিন, পর্যাপ্ত সময় পেলেই। দস্যু বাহরাম আমার পড়া হয় নি। সত্যজিৎ রায়ের অনেক বই পড়েছি, তবে বাদশাহী আংটি পড়েছি বলে মনে পড়ছে না।
আমার এ জিনিসটা খুব ভালো লাগে, কষ্ট এবং আফসোসও- কাগজের মোড়কে একটা লেখা পড়ছি, যার আগের ও পরের অনেক কিছুই জানি না, কে এর লেখক, কাহিনিরই বা কী নাম- হঠাৎ লেখাটা শুরু, একটা ভগ্ন বাক্য দিয়ে, শেষও সেভাবে। আপনার 'সংসপ্তক' পড়ার অভিজ্ঞতা খুব ভালো লাগলো। আমিও এরকম একটা বই পড়েছিলাম, যার মলাট, উৎসর্গ পাতা, কিছুই ছিল না। প্রথম অধ্যায়ের প্রথম পাতাই মলাট। উপন্যাসের নাম, লেখকের নাম আর জানা যায় নি।
আপনার শেয়ারিং ভালো লাগলো।
১৯| ১৮ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০২
ইলুসন বলেছেন: প্রথম কোন উপন্যাস পড়েছি তা মনে নেই। মনে হয় সত্যজিত রায়ের ফেলুদা। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আমার আন্টির এক বন্ধু চাকরি করত। সেখান থেকেও অনেক বই পড়েছি। আমার ফুপাত ভাই হুমায়ূন আহমেদ বলতে পাগল ছিল, তার অনেক অনেক বই ছিল। সেখান থেকে হুমায়ূন আহমেদ পড়া শুরু। তারপরে তিন গোয়েন্দা ধরলাম, আর সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ আর কিশোর ক্লাসিক। কি এক অদ্ভুত কারণে জাফর ইকবালের বই পড়া ধরি অনেক পরে, যদিও এখন তার সব বই পড়া হয়ে গেছে। বই পড়তে পড়তে দিন কেটে যেত। মাঝে মাঝে এত আফসোস লাগত যে দিনটা এত তাড়াতাড়ি শেষ হচ্ছে কেন, আর কিছুক্ষণ সময় পেলেই তো অমুক বইটা পড়ে শেষ করতে পারতাম!
১৮ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ব্লগিং জগৎ শুরু হবার পর মনে হচ্ছে দিনের আয়ু কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা হওয়া উচিত। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর পারিবারিক কাজগুলো করতে যেয়ে দেখা যায় ব্লগিংয়ের জন্য সময় নেই। খুব তাড়াতাড়ি রাত দুটো বেজে যায়। পরের দিন সকালে অফিসে যেতে হবে, এ তাড়নায় সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ার তাগিদ।
আপনার উপন্যাস পড়ার অভিজ্ঞতা জানতে পেরে ভালো লাগলো।
২০| ১৯ শে মে, ২০১২ রাত ২:১২
অনাহূত বলেছেন:
খুব ভাল লাগল আপনার স্মৃতিচারণ।
তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় আমার হাতেও প্রাপ্তবয়স্ক বই আসে। ছোট কাকার বই। খাটের নীচের এক কোনায় বড় একটা ট্র্যান্ক ছিল। ট্র্যান্কের পিছনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গায় শুয়ে থাকলে খাটের নীচে কেউ তাকালেও দেখতে পেত না। ওই ফাঁকা জায়গায় শুয়ে শুয়ে এইসব প্রাপ্তবয়স্ক বই পড়তাম। ম্যাগাজিনও পড়েছি অনেক।
'হুমায়ুন আহমেদ', 'মাসুদ রানা', 'জাফর ইকবাল', কাকার কালেকশন আর 'সৈয়দ মুজতবা আলী', 'রবীন্দ্র', 'নজরুল' ... এসব বাবার কালেকশন। যাদুবিদ্যার প্রতি প্রবল আগ্রহ আমার। এই নিয়েও ৭ম - ৮ম শ্রেণীতে থাকাকালীন অনেক বই পড়েছি। তারপর হস্তরেখা, পাথর, রাশিশাস্ত্র নিয়েও অনেক বই পড়েছি।
আর কত বলব। ছোটকাকা প্রচুর ম্যাগাজিন পড়তেন। সেই সুবাদে অনেক ম্যাগাজিন পড়েছি।
ভাল থাকুন।
১৯ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:৪৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণও অনেক ভালো লাগলো। আচ্ছা, আপনি আরো দু-তিনটি বইয়ের কথা মনে করিয়ে দিলেন। জয়পাড়া হাটে ফুটপাতের দোকান থেকে আরো কিনতাম 'মুখ দেখিলে যায় চেনা'। রাশিফলের বইতে হস্তরেখা বিষয়ক তথ্য থাকলেও হস্তরেখার উপরও আলাদা বই কিনতাম, আর কিনেছিলাম সহজ যাদু শিক্ষার বই। যাদু শিক্ষার বই কিনে হতাশ হতাম খুব। প্রথমে বর্ণনা থাকতো স্টেজে একটি যাদু দেখানো হচ্ছে তার উপর। এরপরই লেখা থাকতো কীভাবে ওটি দেখানো হলো। কৌশল পড়বার পর মনে হতো পুরাই ফালতু- এভাবে কি যাদু দেখানো সম্ভব? অথবা স্টেজ বানানোর এমন কৌশল বর্ণনা করা হতো যা কোনোদিনই আমার পক্ষে সম্ভব না। '৫২ কার্ডে ৫৩ যাদু' নামেও বই কিনেছিলাম, যা থেকে বেশ কিছু যাদু শিখেছিলাম।
সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় আমাদের এক ইংলিশ টিচার ডেল কার্নেগির বইয়ের খুব আলোচনা করতেন। তিনি বলেছিলেন 'হতাশ হবার কারণ নেই' নামক একটি বইয়ের কথা। ওটিও ঐ ফুটপাতের দোকান থেকে কিনে পড়েছিললাম।
হাইস্কুলে ৩ বছর পার করার পর নবম শ্রেণীতে উঠবার পর জানতে পেরেছিলাম আমাদের স্কুলে একটি গ্রন্থাগার আছে। সহকারী প্রধান শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো। কথা প্রসঙ্গে এটি যেদিন তিনি বললেন, সেদিনই স্যারের সাথে আমি গ্রন্থাগারে ঢুকি। ওখানেই আমি সর্বপ্রথম একটা বৃহৎ বইয়ের ভুবন দেখি, যদিও প্রকৃত বিচারে তাতে আমার পারিবারিক পাঠাগারের চেয়েও কম বই ছিল। ওখান থেকে সুকান্ত সমগ্র সংগ্রহ করি। সেখান থেকে সুকান্ত প্রতিভার সাথে আমার পরিচয় শুরু।
কথায় কথায় তো দেখি অনেক কথাই বলা হয়ে গেলো।
ভালো থাকুন সব সময়।
২১| ১৯ শে মে, ২০১২ রাত ২:৩৬
শেখ আমিনুল ইসলাম বলেছেন: আমার পড়া প্রথম দিকের উপন্যাসগুলো হল শেষের কবিতা, গৃহদাহ, নৌকাডুবি, বড়দিদি, চোখের বালি। অনেক ভালো লাগল পোস্টটা। শুভেচ্ছা।
১৯ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:৫৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: রবীন্দ্রনাথের যে উপন্যাসটা আমি সর্বপ্রথম পড়েছিলাম সেটি শেষের কবিতা। এ লিংকে তার একটা বিশদ বর্ণনা দেয়া আছে। 'গৃহদাহ' পড়া শুরু করি খুব সম্ভবত ২০০০ সনের দিকে, কিন্তু মাত্র কয়েক পর্ব বা পৃষ্ঠা। উত্তম কুমার, প্রতিপ কুমার আর সুচিত্রা সেনের ছবি 'গৃহদাহ' দেখেছিলাম ১৯৯১ সালে। এটি আমার দেখা সেরা ছবির একটি। ছবিটি দেখা হয়ে গিয়েছিল বলে আর বইটি পড়তে তত উৎসাহ পাই নি। নৌকাডুবি ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮- এর মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়েছি। 'বড়দিদি' পড়েছি কিনা ঠিক মনে পড়ছে না। 'চোখের বালি' পড়লাম এই সেদিন- ২০০৭ বা ২০০৮-এর দিকে হবে হয়তো।
২২| ১৯ শে মে, ২০১২ সকাল ৯:০৬
রমিত বলেছেন: একেবাসরে প্রথম বড় বই পড়েছিলাম জীবনি, 'টমাস আলভা এডিসনের' তখন আমি দ্বীতিয় শ্রেণীর ছাত্র। প্রথম উপন্যাস ঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবতঃ সত্যজিত রায়ের বাদশাহী আংটি অথবা বাক্স রহস্য, চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময়। এর পর পড়েছিলাম শ্রীকান্ত। এই উপন্যাসটি আমি তিন বয়সে তিনবার পড়েছি, তিনবার তিন রকম অনুভূতি হয়েছে। তারপর পড়েছিলাম মার্ক টোয়েনের, 'হাকলবেরি ফিন-এর দুঃসাহসিক অভিযান'। গভীর দাগ কেটেছিল মনে।
আপনার লেখাটি ভালো হয়েছে। আপনাকে ধন্যবাদ।
১৯ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রথম দিকের পড়ার মধ্যে 'শ্রীকান্ত' ছাড়া আপনার সাথে আর কোনোটির মিল হলো না আমার। তবে, বইয়ের জগতে আপনার এ্যাকসেস ছিল খুব বেশি, তা অনুমান করছি।
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
২৩| ২০ শে মে, ২০১২ সকাল ১০:৩৪
ডেভিড বলেছেন: হা..হা..আপনার শৈশবের সাথে আমার বেশ কিছুটা মিল আছে। কিশোর বয়সে আমার প্রথম পড়া বই হিসেবে ভাগ্যে যা জুটেছে তার জন্য আমি না নিয়তি দায়ী তা বলতে পারছিনা। আমাদের পাড়াতো এক শিক্ষকের বাসায় বিশাল বই এর সংগ্রহ। আমার আচার আচরণে মুগ্ধ হয়ে তিনি তার লাইব্রেরিতে যেমন ইচ্ছে তেমন বই পড়তে দিয়েছিলেন। আর লাইব্রেরীর এত এত বই থাকতে আমি বেছে নিয়েছিলাম সাদত হাসান মান্টোর লেখা বলা যায় যে আধুনিক বাংলাসাহিত্যে রগরগে গল্পের জন্য সাদত হাসান মান্টো বেশ বিখ্যাত ছিলেন, একবার সম্ভবত অশ্লীলতার দায়ে তার বইও নিষিদ্ধ হয়েছিল। প্রতিবার দু'তিনটি বই নিয়ে আসতাম যার মধ্যে থাকতো মান্টোর বই, এভাবে একদিন ধরা খাওয়ার পর তাকে মনে হয়েছিল বিস্ময়ে বজ্রাহত অবস্থা। এরপর আমি যে বইই পড়তে গিয়েছি ঠিকই রগেরগে কাহীনি তার মধ্যে চলে এসেছে
অবসর থেকে বের হওয়া হুমায়ুন আহমেদের দেবী পড়তে ছিলাম সম্ভবত ক্লাস ফাইভে।বেশ ভয় ভয় লাগছে তাই একটু পড়ে আর পড়ব কিনা ভাবছি, হঠাত এক জায়গায় দেখলাম রানু নদীতে গোসল করার সময় একটা মুর্তি তার পরিধেয় বস্ত্র টেনে নিয়ে গেছে, আর আমারে পায় কে
আপনার কৈশোরের বর্ণনা এতটা টানে যা বলার মতো নয়।
২১ শে মে, ২০১২ রাত ৯:১৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার বই পড়ার হাতেখড়ি তো আমার চেয়েও অনেক ইন্টারেস্টিং ছিল পোলাপানের হাতে কীভাবে যে এগুলো আসে
যাই হোক, অনেক বড় একটা বইয়ের জগৎ ছিল ঐ বয়সেই আপনার, এটা একটা অনেক বড় সুযোগ। পোড়া কপাল আমাদের!
আপনার মন্তব্যে খুব উৎসাহিত বোধ করি। এতো আপন!
২৪| ২১ শে মে, ২০১২ রাত ১:০০
আরজু পনি বলেছেন:
১৮+ না লিখে ভালোই করেছেন। না হলে অনেকেই আপনার লেখা নয় বরং ১৮+ পড়তেই আসতো।
শুরুর দিকে সৈয়দ মুজতবা দিয়ে শুরু। পরে সেবা প্রকাশনী আর এরপর অষ্টম শ্রেণী থেকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ।
আমার ৭ বছরের বাচ্চাও ইদানিং প্রচুর বই পড়ছে।
২১ শে মে, ২০১২ রাত ৯:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: একজন ভালো লেখকের বই দিয়ে পড়ার জীবন শুরু করতে পারা একটা আশীর্বাদ স্বরূপ। সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখার সাথে পরিচয় নবম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ের 'প্রবাস বন্ধু'র মাধ্যমে। এর আগে তাঁর নাম শুনবারও কোনো সুযোগ ছিল বলে মনে পড়ে না। সেবার বই খুব কমই পড়েছি আমি- কোনো মজা পাই নি, সত্যি কথা ঢাকা কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে থাকা অবস্থায় আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদ স্যার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন বলে মনে পড়ে। তিনি ওখানে যেতে সবাইকে উৎসাহিত করতেন, কিন্তু আমার কোনোদিন যাওয়া হয় নি
মন্তব্য ভালো লাগলো। ৭ বছরের বাবুর জন্য আদর।
২৫| ২১ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:১৫
শিশিরের শব্দ বলেছেন: আমার পড়া প্রথম উপন্যাস সম্ভবত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পুতুল নাচের ইতিকথা'।
প্রথমবারে পড়ে বুঝিনি....পরে আরও অনেকবার পড়েছি ।
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের ‘চিতা বহ্নিমান’-বইটাও প্রথমদিকে পড়া উপন্যাসের একটা ।ভাল লেগেছিল অনেক ।
২১ শে মে, ২০১২ রাত ৯:২৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পড়বো পড়বো করে পুতুল নাচের ইতিকথা আমার আজো পড়া হলো না। মানিক বাবু সমগ্র (উপন্যাস) বুকশেলফে হেলেদুলে কাঁদে তবে, এখন ওটা পড়ে কিছু বুঝবো বলে মনে হয় না
কারণ, লাইফ এখন এতো ফাস্ট ও বিজি যে বড় কোনো লেখা পড়বারই তো সময় নাই, বুঝবার প্রশ্ন পরে
ধন্যবাদ শিশিরের শব্দ।
২৬| ২১ শে মে, ২০১২ রাত ১০:০৪
মাহী ফ্লোরা বলেছেন: আমি তো এই ভয়েই বনহুর ভুল করেও হাতে নিইনা। যদি পুরোনো ভাল লাগার কবর হয়ে যায়! চিতা বহ্নিমান আমি কিছুদিন আগে পড়েছি আমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়েছে।
প্রথম কোন উপন্যাস পড়িনি আমি। হুমায়ুনের মজার ভুত দিয়ে লাইব্রেরী থেকে বই আনা শুরু। সেভেন পর্যন্ত শুধু হুমায়ুন পড়েছি। তারপর প্রচন্ড নেশা! আব্বা তার কলেজ লাইব্রেরী থেকে বই না আনলে ভীষণ রাগ করতাম। শ্রীকান্ত দিয়ে শুরু অন্য লেখকের বই পড়া। তার মধ্যে মধ্যে সাধারন পাঠাগার থেকে বই আনি আমি সেটাও হু্আ সমগ্র। সায়েন্স ফিকসন! আর আব্বা আনে অন্য সব লেখকের বাছাই করা বই। আর মধ্যে মধ্যে এক ছোট্ট আংকেলে দস্যু বনহুর! মাসুদ রানা! একই সাথে আমি আনন্দ আর ভাল বই পড়ার স্বাদ দুটোই পেয়েছি। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় দশম শ্রেনী পর্যন্ত! কত বই যে পড়েছি এখন ভাবতেই ভাল লাগে!
২৫ শে মে, ২০১২ রাত ৯:০৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মোটামুটি বইয়ের জগতেই আপনি বড় হয়েছেন আপু, তাই বই পড়বার অনেক সুযোগ আপনার ছিল। এরকম পরিবারে, যেখানে বড়রা বই পড়েন আর বইয়ের যোগান দেন ছোটোদেরকে, সেখানে ছোটোদের বই পড়বার প্রতি যেমন উৎসাহ বাড়ে, তারা ভালো বই পড়বারও সুযোগ পান। তাঁদের মননও ছোটোবেলা থেকেই পরিশীলিত হয়ে উঠতে থাকে।
ধন্যবাদ আপু শেয়ার করবার জন্য।
২৭| ২৫ শে মে, ২০১২ সকাল ৯:৪২
অপরাজিতার কথা বলেছেন: ক্লাস ফাইভ থেকে শুরু হয়েছিল বই পড়া,আজো থামেনি । খুব সুন্দর পোস্ট,আপনার স্মৃতিচারণার সাথে নিজেও ফিরে গেলাম আপন শৈশবে !!
২৫ শে মে, ২০১২ রাত ৯:১২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য। আপনার বইপড়া আজীবন অব্যাহত থাক- এ কামনা করছি।
২৮| ২৫ শে মে, ২০১২ রাত ৯:২২
রেজোওয়ানা বলেছেন: কবে দেখে বইয়ের সাথে সখ্যতা হলো সে কথা ভুলেই গেছি, তবে মনে থাকার বয়সকাল থেকেই প্রতি জন্মদিনে বই উপহার পেয়েছি বাবা-মা আর কাকাদের কাছ থেকে, এমন কি আমার ছোট ভাইও।
একটা বইয়ের কথা খুব মনে আছে, আমার ১৭ তম জন্মদিনে বাবা আমাকে সুনীলের "১৭ বছর বয়সে" বইটা গিফট করেছিলেন!
আগে বই মেলায় ঘুরতাম আর ভাবতাম কবে চাকরী পাব, সেই সময়ে বৃত্তির টাকাটা প্রতিবারই জমিয়ে রাখতাম মেলায় বই কেনার জন্য।
বই, ফুল, গাছ আর পাখি.....আমার চিরদিনের অকৃত্রিম বন্ধু
২৭ শে মে, ২০১২ রাত ১২:৫১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: যাঁদের বই অনেক বেশি পড়েছি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের একজন। কিন্তু ১৭ বছর বয়সে পড়েছি বলে মনে হয় না। এ্যাডভেঞ্চার নাকি? বৃত্তির টাকা জমিয়ে বই কেনার হ্যাবিটের কথা জেনে আনন্দ পেলাম খুব। পড়ার প্রতি ইচ্ছে অদম্য হলে কেউ এভাবে বৃত্তির টাকায় বই কিনতে পারে।
তো, এখন চাকরি পেয়ে অনেক বই কেনা হচ্ছে! গত বইমেলায় আপনার সমৃদ্ধ সংগ্রহের কথা মনে পড়ছে। আমার খুব সমস্যা হয়। কর্মব্যস্ততার সাথে বেড়েছে ব্লগিং ও ফেইসবুকিং আসক্তি। কেনা বই পড়ার সময় খুব কম
২৯| ২৫ শে মে, ২০১২ রাত ৯:২৩
রেজোওয়ানা বলেছেন: *থেকে...শুধু বানান ভুল করি
২৭ শে মে, ২০১২ রাত ১২:৫৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ম্যান ইজ মর্টাল। মানুষ কোনো ফেরেশতা না, তাই বানান ভুল করা আদরণীয় অভ্যাস।
ধন্যবাদ আপু নিজের বইপড়া শেয়ার করার জন্য।
৩০| ২৫ শে মে, ২০১২ রাত ১০:৫২
রোকসানা লেইস বলেছেন: বই পড়ার এবং বুঝতে শিখার গল্প ভালোলাগল।
রোমেনা আফাজের বনহুর খুব প্রিয় সিরিজ, ৫২ টা পড়ে ছিলাম মনে হয়। এখনও ভাবি কি দারুণ চিন্তা শক্তি ছিল উনার।
২৭ শে মে, ২০১২ রাত ১:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমার ইচ্ছে আছে, বনহুর সিরিজের কয়েকটা গল্প আবার পড়বো। তবে, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞায় মনে হয়েছে, মাসুদ রানা, বনহুর, বাহরাম, ইত্যাদি সিরিজগুলো মোটামুটি শেষ করার পর ক্ল্যাসিক লিটারেচার পড়া শুরু করলে দুটোর রসই পাওয়া যায়। আমার ধারনা, এগুলোর জন্য উঠতি বয়সটাই উপযুক্ত। উলটো ভাবে, নজরুল-রবীন্দ্র পড়ার পর এগুলোতে হাত দিলে নিরাশ হবার সম্ভাবনাই বেশি।
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১০:০৪
ঘুমন্ত আমি বলেছেন: গধাধরের কাহিনী না দিলেও পারতেন !