![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালওবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম
তবু কথা রাখে নি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী!
কেউ কথা রাখে নি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখে না!
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এ কবিতাংশ শুধু আমার লেখালেখিতেই নয়, পুরোটা জীবন জুড়েই ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তিনি আমার প্রিয়তম কবিদের একজন। কবি শহিদুল ইসলামের একটি পোস্টে ২৩ অক্টোবর তারিখে সকাল ১০টার দিকে সুনীলের তিরোধানের খবরটি প্রথম জানতে পারি। সাথে সাথে টিভি অন করতেই টেলপে নিউজটা দেখতে পেলাম। বাস্তবিকই আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। খুবই।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু কবিতা আমি ব্লগে বিভিন্ন সময়ে পোস্ট করেছি, এবং রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ করেছি। বর্তমান সংকলনে আমার নিজের পোস্ট করা কবিতার পাশাপাশি অন্যান্য ব্লগারের পোস্ট থেকেও প্রচুর কবিতা সুংযুক্ত করেছি, এবং বলাই বাহুল্য যে অন্যান্যদের কবিতার সংখ্যাই সর্বাধিক, যাঁদের মধ্যে ব্লগার ফারজুল আরেফিন ও গাব্রিয়েল সুমনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া কবি রেজা ঘটকের সাম্প্রতিক পোস্ট থেকে ৩টি কবিতা, এবং চতুর্মাত্রিক ব্লগের আকাশ অম্বর (যিনি এ ব্লগেরও একজন বিশিষ্ট ব্লগার)-এর একটা পোস্ট থেকে কিছু কবিতা নেয়া হয়েছে। সংকলিত কবিতাগুলোর নিচে মূল পোস্টের লিংক দেয়া হয়েছে, যেগুলোর দেয়া নেই ওগুলো আমার নিজ পোস্টের অন্তর্গত। যাঁদের পোস্ট থেকে কবিতা নেয়া হয়েছে তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
তুমি
(একা এবং কয়েকজন)
আমার যৌবনে তুমি স্পর্ধা এনে দিলে
তোমার দু'চোখে তবু ভীরুতার হিম।
রাত্রিময় আকাশের মিলনান্ত নীলে
ছোট এই পৃথিবীকে করেছো অসীম।
বেদনা মাধুর্যে গড়া তোমার শরীর
অনুভবে মনে হয় এখনও চিনি না
তুমিই প্রতীক বুঝি এই পৃথিবীর
আবার কখনও ভাবি অপার্থিবা কিনা।
সারাদিন পৃথিবীকে সূর্যের মতন
দুপুরদগ্ধ পায়ে করি পরিক্রমা,
তারপর সায়াহ্নের মতো বিস্মরণ-
জীবনকে স্থির জানি করে দেবে ক্ষমা।
তোমার শরীরে তুমি গেঁথে রাখো গান
রাত্রিকে করেছো তাই ঝঙ্কারমুখর
তোমার সান্নিধ্যের অপরূপ ঘ্রাণ
অজান্তে জীবনে রাখে জয়ের স্বাক্ষর।
যা কিছু বলেছি আমি মধুর অস্ফুটে
অস্থির অবগাহনে তোমারি আলোকে
দিয়েছো উত্তর তার নব পত্রপুটে
বুদ্ধের মূর্তির মতো শান্ত দুই চোখে।
*এটি সুনীলের ৪র্থ কবিতা; ১৯৫৩ সালে 'কবিতা' ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল
হঠাৎ নীরার জন্য
(আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি)
বাসস্টপে দেখা হলো তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ
দেখেছি ছুরির মতো বিঁধে থাকতে সিন্ধুপারে- দিকচিহ্নহীন-
বাহান্ন তীর্থের মতো এক শরীর, হাওয়ার ভিতরে
তোমাকে দেখেছি কাল স্বপ্নে, ওষধি স্বপ্নের
নীল দুঃসময়ে।
দক্ষিণ সমুদ্রদ্বারে গিয়েছিলে কবে, কার সঙ্গে? তুমি
আজই কি ফিরেছো?
স্বপ্নের সমুদ্র সে কী ভয়ঙ্কর, ঢেউহীন, শব্দহীন, যেন
তিনদিন পরেই আত্মঘাতী হবে, হারানো আঙতির মতো দূরে
তোমার দিগন্ত, দুই ঊরু ডুবে গেছে নীল জলে
তোমাকে হঠাৎ মনে হলো কোনো জুয়াড়ীর সঙ্গিনীর মতো,
অথচ একলা ছিলে, ঘোরতর স্বপ্নের ভিতরে তুমি একা।
এক বছর ঘুমোবো না, স্বপ্ন দেখে কপালের ঘাম
ভোরে মুছে নিতে বড় মূর্খের মতন মনে হয়
বরং বিস্মৃতি ভালো, পোশাকের মধ্যে ঢেকে রাখা
নগ্ন শরীরের মতো লজ্জাহীন, আমি
এক বছর ঘুমোবো না, এক বছর স্বপ্নহীন জেগে
বাহান্ন তীর্থের মতো তোমার ও-শরীর ভ্রমণে
পুণ্যবান হবো।
বাসের জানলার পাশে তোমার সহাস্য মুখ, ‘আজ যাই, বাড়িতে আসবেন।’
রৌদ্রের চিৎকারে সব শব্দ ডুবে গেল।
‘একটু দাঁড়াও‘, কিংবা ‘চলো লাইব্রেরীর মাঠে‘, বকের ভেতরে
কেউ এই কথা বলেছিল, আমি মনে পড়া চোখে
সহসা হাতঘড়ি দেখে লাফিয়ে উঠেছি, রাস্তা, বাস, ট্রাম, রিকশা, লোকজন
ডিগবাজির মতো পার হয়ে, যেন ওরাং উটাং, চার হাত-পায়ে ছুতে।
পৌঁছে গেছি অফিসের লিফটের দরজায়।
বাস স্টপে তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ।
শুধু কবিতার জন্য
(আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি)
শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম, শুধু কবিতার
জন্য কিছু খেলা, শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা
ভুবন পেরিয়ে আসা, শুধু কবিতার জন্য
অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক;
শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী, শুধু
কবিতার জন্য এতো রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত
শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা, শুধু
কবিতার জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।
আমার খানিকটা দেরি হয়ে যায়
(আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি)
যে পান্থনিবাসে যাই দ্বার বন্ধ, বলে, ‘ঐ যে রুগ্ন ফুলগুলি
বাগানে রয়েছে শুধু, এখন বসবেন?’ কেউ মুমূর্ষু অঙ্গুলি
আপন উরসে রেখে হেসে ওঠে, পাতা ঝরানোর হাসি, 'এই অবেলায়
কেন এসেছেন আপনি, কী আছে এখন? গত বসন্তমেলায়
সব ফুরিয়েছে, আর আলো নেই, দেখুন না তার ছিঁড়ে গেছে, সব ঘরে
ধুলো, তালা খুলবে না এ জন্মে; পরিচারিকার হাতে কুষ্ঠ!' ভগ্ন কণ্ঠস্বরে
নেবানো চুল্লীর জন্য কারো খেদ, কেউ আসবাববিহীন
বুকের শীতের মধ্যে শুয়ে আছে, মৃত্যু বহুদূর জেনে, চৈত্র রুক্ষ দিন
চিবুক ত্রিভাঁজ করে, প্রতিটি সরাইখানা উচ্ছিষ্ট পাঁজর ও রক্তে ক্লিন্ন হয়ে আছে
বাগানে কুসুমগুলি মৃত, গন্ধহীন, ওরা বাতাসে প্রেতের মতো নাচে।
আমার আগের যাত্রী রূপচোর, তাতার দস্যুর মতো বেপরোয়া, কব্জি শক্তিধর
অমোঘ মৃত্যুর চেয়ে কিছু ছোটো, জীবনের প্রশাখার মতো ভয়ঙ্কর
সেই গুপ্তচর পান্থ আগে এসে ছেঁচে নিল শেষ রূপ রস-
ক্ষণিক সরাইগুলি, হায়! এখন গ্রীবায় ছিন্ন ইতিহাস, ওষ্ঠে, চোখে, মসীলিপ্ত পুঁথির বয়স।
আমার খানিকটা দেরি হয়ে যায়, জুতোয় পেরেক ছিল, পথে বড় কষ্ট, তবু ছুটে
এসেও পারি না ধরতে, ততক্ষণে লুট শেষ, দাঁড়িয়ে রয়েছে সব ম্লান ওষ্ঠপুটে।
নীরা তোমার কাছে
(আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি)
সিঁড়ির মুখে কারা অমন শান্তভাবে কথা বললো?
বেরিয়ে গেল দরজা ভেজিয়ে, তবু তুমি দাঁড়িয়ে রইলে সিঁড়িতে
রেলিং-এ দুই হাত ও থুত্নি, তোমায় দেখে বলবে না কেউ থির বিজুরি
তোমার রঙ একটু ময়লা, পদ্মপাতার থেকে যেন একটু চুরি,
দাঁড়িয়ে রইলে
নীরা, তোমায় দেখে হঠাৎ নীরার কথা মনে পড়লো।
নীরা, তোমায় দেখি আমি সারা বছর মাত্র দু’দিন
দোল ও সরস্বতী পূজোয়–দুটোই খুব রঙের মধ্যে
রঙের মধ্যে ফুলের মধ্যে সারা বছর মাত্র দু’দিন–
ও দুটো দিন তুমি আলাদা, ও দুটো দিন তুমি যেন অন্য নীরা
বাকি তিনশো তেষট্টি বার তোমায় ঘিরে থাকে অন্য প্রহরীরা।
তুমি আমার মুখ দেখোনি একলা ঘরে, আমি আমার দস্যুতা
তোমার কাছে লুকিয়ে আছি, আমরা কেউ বুকের কাছে কখনো
কথা বলিনি পরস্পর, চোখের গন্ধে করিনি চোখ প্রদক্ষিণ–
আমি আমার দস্যুতা
তোমার কাছে লুকিয়ে আছি, নীরা তোমায় দেখা আমার মাত্র দু’দিন।
নীরা, তোমায় দেখে হঠাৎ নীরার কথা মনে পড়লো।
আমি তোমায় লোভ করিনি, আমি তোমায় টান মারিনি সুতোয়
আমি তোমার মন্দিরের মতো শরীরে ঢুকিনি ছল ছুতোয়
রক্তমাখা হাতে তোমায় অবলীলায় নাশ করিনি;
দোল ও সরস্বতী পূজোয় তোমার সঙ্গে দেখা আমার–সিঁড়ির কাছে
আজকে এমন দাঁড়িয়ে রইলে
নীরা, তোমার কাছে আমি নীরার জন্য রয়ে গেলাম চিরঋণী।
*সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা বিষয়ক কবিতা : গাব্রিয়েল সুমন
আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি
(আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি)
আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ।
এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ
পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা
আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা
করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে
থাকি- তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে
হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,
মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি
অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-
(ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)
আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়ির ছেলে
সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক
ঘামে ছিল না এমন গন্ধক
যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পারি। নিখিলেশ, তুই একে
কী বলবি? আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেরেকে
বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কি না;
আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না।
আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম,
আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
নিখিলেশ, আমি এই-রকমভাবে বেঁচে আছি, তোর সঙ্গে
জীবন বদল করে কোনো লাভ হলো না আমার -একই নদীর তরঙ্গে
ছেলেবেলার মতো ডুবসাঁতার?- অথবা চশমা বদলের মতো
কয়েক মিনিট আলোড়ন? অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত
দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা? কেননা সময় নেই, আমার ঘরের
দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়। মৃত গাছটির পাশে উত্তরের
হাওয়ায় কিছুটা মায়া লেগে ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে
দেখি উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল, তবুও অক্লেশে
হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি। আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার
একটি মুহূর্ত চেয়েছিলাম, একটি …, ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার;
ইচ্ছে ছিল না জানাবার
এই বিশেষ কথাটা তোকে। তবু ক্রমশই বেশি করে আসে শীত, রাত্রে
এ-রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না, রোজ অন্ধকার হাতড়ে
টের পাই তিনটে ইঁদুর না মূষিক? তা হলে কি প্রতীক্ষায়
আছে অদূরেই সংস্কৃত শ্লোক? পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এই অবেলায়
কিছুই মনে পড়ে না। আমার পূজা ও নারী-হত্যার ভিতরে
বেজে ওঠে সাইরেন। নিজের দু’হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে
তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের। আজকাল আমার
নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। এরকম সত্য
পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।।
***
আমার খানিকটা দেরি হয়ে যায় এবং আমী কীরকম ভাবে বেঁচে আছি কবিতা দুটি সমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত ছন্দের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। দেখুন, পঙ্ক্তিগুলো সমান নয়, এবং অন্ত্যমিলযুক্ত। এই কবিতায় কোনোরূপ অন্ত্যমিল না থাকলে এটিকে বলা হতো 'অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত' বা ফ্রি ভার্স। এই কবিতাটিকে দুই প্যাটার্নে 'ফ্রি ভার্স' আকারে লেখা যায়: ১) উপরের কবিতায় কোনোরূপ অন্ত্যমিল না রেখে এবং ২) পুরোটাই একটা গদ্যের মতো করে লিখে। পরীক্ষামূলকভাবে আমি একবার তা করেছিলাম। নিচে দেখুন।
'ফ্রি ভার্স' কী সে-সম্পর্কে টি. এস. এলিয়ট বলেছেন, ১) এর কোনো প্যাটার্ন বা রূপকল্প থাকবে না, অর্থাৎ এটি হবে মুক্তকল্প। ২) এতে কোনো অন্ত্যমিল থাকবে না, অর্থাৎ এটি হবে মুক্ত মিল। ৩) এতে কোনো ছন্দ থাকবে না, অর্থাৎ এটি হবে মুক্ত ছন্দ। আমার পুনর্লিখিত কবিতাটি এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। অর্থাৎ, এটি হবে একটি খাঁটি গদ্যের মতো। প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে গদ্য আর কবিতার মধ্যে পার্থক্য কী? পার্থক্য অবশ্যই আছে- কবিতার ভাষাই বলে দেবে এটি দেখতে গদ্যের মতো হলেও এটি একটি কবিতা। বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ গ্রন্থের ২য় পর্বে অধ্যাপক পবিত্র সরকারের একটি প্রবন্ধ সংযুক্ত হয়েছে এ শিরোনামে- 'কাব্যভাষার ব্যাকরণ'। সেটি পড়লে গদ্য ও কবিতার ভাষা যে এক নয় তার কিছু ব্যাখ্যা মেলে।
মেঘনাদ বধ-এ কোনো অন্ত্যমিল নেই, এটা কি ফ্রি ভার্স? মেঘনাদ বধ মূলত ১৪ অক্ষরের পয়ারে রচিত, অমিত্রাক্ষর পয়ার এর নাম। কিন্তু বাক্যগঠন এমন যে সাধারণ পয়ারের মতো সর্বত্রই এক পঙ্ক্তিতে একটি বাক্য গঠিত হয় নি, অর্থৎ, পঙ্ক্তির মাঝখানে 'দাঁড়ি', সেমি-কোলন দেখা যায়, এবং আবৃত্তির সময় এটিকে অবিকল গদ্যের মতোও পাঠ করা যায়। সেই হিসাবে এটি খাঁটি অমিত্রাক্ষর পয়ার নয়, এটিও ফ্রি-ভার্স-এর বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।
***
আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ। এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি- তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি, মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে- (ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)
আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়ির ছেলে সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক। ঘামে ছিল না এমন গন্ধক যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পারি। নিখিলেশ, তুই একে কী বলবি? আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেরেকে বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কিনা; আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না। আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম, আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। নিখিলেশ, আমি এই-রকমভাবে বেঁচে আছি, তোর সঙ্গে জীবন বদল করে কোনো লাভ হলো না আমার -একই নদীর তরঙ্গে ছেলেবেলার মতো ডুবসাঁতার?- অথবা চশমা বদলের মতো কয়েক মিনিট আলোড়ন? অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা? কেননা সময় নেই, আমার ঘরের দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়। মৃত গাছটির পাশে উত্তরের হাওয়ায় কিছুটা মায়া লেগে ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে দেখি উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল, তবুও অক্লেশে হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি। আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার একটি মুহূর্ত চেয়েছিলাম, একটি …, ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার; ইচ্ছে ছিল না জানাবার এই বিশেষ কথাটা তোকে। তবু ক্রমশই বেশি করে আসে শীত, রাত্রে এ-রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না, রোজ অন্ধকার হাতড়ে টের পাই তিনটে ইঁদুর না মূষিক? তা হলে কি প্রতীক্ষায় আছে অদূরেই সংস্কৃত শ্লোক? পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এই অবেলায় কিছুই মনে পড়ে না। আমার পূজা ও নারী-হত্যার ভিতরে বেজে ওঠে সাইরেন। নিজের দু’হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের। আজকাল আমার নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। এরকম সত্য পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।।
***
নীরার জন্য কবিতার ভূমিকা
এই কবিতার জন্য আর কেউ নেই, শুধু তুমি ,নীরা
এ-কবিতা মধ্যরাতে তোমার নিভৃত মুখ লক্ষ্য করে
ঘুমের ভেতরে তুমি আচমকা জেগে উঠে টিপয়ের
জল খেতে গিয়ে জিভ কামড়ে এক মুহহূর্ত ভাববে
কে তোমার কথা মনে করছে এত রাত্রে- তখন আমার
এই কবিতার প্রতিটি লাইন শব্দ অক্ষর কমা ড্যাস রেফ্
ও রয়ের ফুটকি সমেত ছুটে যাচ্ছে তোমার দিকে, তোমার
অধোঘুমন্ত নরম মুখের চারপাশে এলোমেলো চুলে ও
বিছানায় আমার নিশ্বাসের মতো নিঃশব্দ এই শব্দগুলি
এই কবিতার প্রত্যেকটি অক্ষর গুণিনের বানের মতো শুধু
তোমার জন্য, এরা শুধু তোমাকে বিদ্ধ করতে জানে
তুমি ভয় পেয়ো না, তুমি ঘুমোও, আমি বহু দূরে আছি
আমার ভয়ঙ্কর হাত তোমাকে ছোঁবে না, এই মধ্যরাত্রে
আমার অসম্ভব যেগে ওঠা, উষ্ণতা, তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও
চাপা আর্তরব তোমাকে ভয় দেখাবে না- আমার সম্পূর্ণ আবেগ
শুধু মোমবাতির আলোর মতো ভদ্র হিম, শব্দ ও অক্ষরের কবিতায়
তোমার শিয়রের কাছে যাবে- এরা তোমাকে চুম্বন করলে
তুমি টের পাবে না, ওরা তোমার সঙ্গে সারারাত শুয়ে থাকবে
এক বিছানায়- তুমি জেগে উঠবে না, সকালবেলা তোমার পায়ের
কাছে মরা প্রজাপতির মতো এরা লুটোবে। এদের আত্মা মিশে
থাকবে তোমার শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে, চিরজীবনের মতো
বহুদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলে ঝর্নার জলের মতো
হেসে উঠবে, কিছুই না জেনে। নীরা, আমি তোমার অমন
সুন্দর মুখে আঁকা টিপের দিকে চেয়ে থাকবো। আমি অন্য কথা
বলার সময় তোমার প্রস্ফুটিত মুখখানি আদর করবো মনে মনে
ঘরভর্তি লোকের মধ্যেও আমি তোমার দিকে নিজস্ব চোখে তাকাবো।
তুমি জানতে পারবে না- তোমার সম্পূর্ণ শরীরে মিশে আছে
একটি অতি ব্যক্তিগত কবিতার প্রতিটি শব্দের আত্মা।
নীরার অসুখ
(বন্দী, জেগে আছো)
নীরার অসুখ হলে কলকাতার সবাই বড় দুঃখে থাকে
সূর্য নিভে গেলে পর, নিয়নের বাতিগুলি হঠাৎ জ্বলার আগে জেনে নেয়
নীরা আজ ভালো আছে?
গীর্জার বয়স্ক ঘড়ি, দোকানের রক্তিম লাবণ্য–ওরা জানে
নীরা আজ ভালো আছে!
অফিস সিনেমা পার্কে লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে মুখে রটে যায়
নীরার খবর
বকুলমালার তীব্র গন্ধ এসে বলে দেয়, নীরা আজ খুশি
হঠাৎ উদাস হাওয়া এলোমেলো পাগ্লা ঘন্টি বাজিয়ে আকাশ জুড়ে
খেলা শুরু করলে
কলকাতার সব লোক মৃদু হাস্যে জেনে নেয়, নীরা আজ বেড়াতে গিয়েছে।
আকাশে যখন মেঘ, ছায়াচ্ছন্ন গুমোট নগরে খুব দুঃখ বোধ।
হঠাৎ ট্রামের পেটে ট্যাক্সি ঢুকে নিরানন্দ জ্যাম চৌরাস্তায়
রেস্তোরাঁয় পথে পথে মানুষের মুখ কালো, বিরক্ত মুখোস
সমস্ত কলকাতা জুড়ে ক্রোধ আর ধর্মঘট, শুরু হবে লণ্ডভণ্ড
টেলিফোন পোস্টাফিসে আগুন জ্বালিয়ে
যে-যার নিজস্ব হৃৎস্পন্দনেও হরতাল জানাবে–
আমি ভয়ে কেঁপে উঠি, আমি জানি, আমি তৎক্ষণাৎ ছুটে যাই, গিয়ে বলি,
নীরা, তুমি মন খারাপ করে আছো?
লক্ষ্মী মেয়ে, একবার চোখে দাও, আয়না দেখার মতো দেখাও ও-মুখের মঞ্জরী
নবীন জনের মতো কলহাস্যে একবার বলো দেখি ধাঁধার উত্তর!
অমনি আড়াল সরে, বৃষ্টি নামে, মানুষেরা সিনেমা ও খেলা দেখতে
চলে যায় স্বস্তিময় মুখে
ট্রাফিকের গিঁট খোলে, সাইকেলের সঙ্গে টেম্পো, মোটরের সঙ্গে রিক্সা
মিলেমিশে বাড়ি ফেরে যা-যার রাস্তায়
সিগারেট ঠোঁটে চেপে কেউ কেউ বলে ওঠে, বেঁচে থাকা নেহাৎ মন্দ না!
*সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা বিষয়ক কবিতা : গাব্রিয়েল সুমন
কেউ কথা রাখে নি
(বন্দী, জেগে আছো)
কেউ কথা রাখে নি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখে নি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমি তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা এসে চলে গেল, কিন্তু সেই বোষ্টুমি আর এলো না
পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি।
মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলি বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এই ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারি নি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্কর বাড়ির ছেলেরা
ভিখারির মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভেতরে রাস উৎসব
অবিরল রঙ্গের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ-পরা ফর্সা রমণীরা
কতরকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায় নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন আমরাও...
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয় নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবে না!
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালওবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম
তবু কথা রাখে নি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী!
কেউ কথা রাখে নি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখে না!
নীরার হাসি ও অশ্রু
(বন্দী, জেগে আছো)
নীরার চোখের জল অনেক চোখের অনেক
নীচে
টল্মল্
নীরার মুখের হাসি মুখের আড়াল থেকে
বুক, বাহু, আঙুলে
ছড়ায়
শাড়ির আঁচলে হাসি, ভিজে চুলে, হেলানো সন্ধ্যায় নীরা
আমাকে বাড়িয়ে দেয়, হাস্যময় হাত
আমার হাতের মধ্যে চৌরাস্তায় খেলা করে নীরার কৌতুক
তার ছদ্মবেশ থেকে ভেসে আসে সামুদ্রিক ঘ্রাণ
সে আমার দিকে চায়, নীরার গোধূলি মাখা ঠোঁট থেকে
ঝরে পড়ে লীলা লোধ্র
আমি তাকে প্রচ্ছন্ন আদর করি, গুপ্ত চোখে বলি :
নীরা, তুমি শান্ত হও
অমন মোহিনী হাস্যে আমার বিভ্রম হয় না, আমি সব জানি
পৃথিবী তোলপাড় করা প্লাবনের শব্দ শুনে টের পাই
তোমার মুখের পাশে উষ্ণ হাওয়া
নীরা, তুমি শান্ত হও!
নীরার সহাস্য বুকে আঁচলের পাখিগুলি
খেলা করে
কোমর ও শ্রোণী থেকে স্রোত উঠে ঘুরে যায় এক পলক
সংসারের সারাৎসার ঝলমলিয়ে সে তার দাঁতের আলো
সায়াহ্নের দিকে তুলে ধরে
নাগকেশরের মতো ওষ্ঠাধরে আঙুল ঠেকিয়ে বলে,
চুপ!
আমি জানি
নীরার চোখের জল চোখের অনেক নিচে টল্মল্।।
*সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা বিষয়ক কবিতা : গাব্রিয়েল সুমন
উত্তরাধিকার
(বন্দী, জেগে আছো)
নবীন কিশোর, তোমাকে দিলাম ভুবনডাঙার মেঘলা আকাশ
তোমাকে দিলাম বোতামবিহীন ছেঁড়া শার্ট আর
ফুসফুস ভরা হাসি
দুপুররৌদ্রে পায়ে পায়ে ঘোরা, রাত্রির মাঠে চিৎ হ'য়ে শুয়ে থাকা
এ-সব এখন তোমারই, তোমার হাত ভ'রে নাও আমার অবেলা
আমার দু:খবিহীন দু:খ ক্রোধ শিহরন
নবীন কিশোর, তোমাকে দিলাম আমার যা-কিছু ছিল আভরণ
জ্বলন্ত বুকে কফির চুমুক, সিগারেট চুরি, জানালার পাশে
বালিকার প্রতি বারবার ভুল
পুরুষ বাক্য, কবিতার কাছে হাঁটু মুড়ে বসা, ছুরির ঝলক
অভিমানে মানুষ কিংবা মানুষের মত আর যা-কিছুর
বুক চিরে দেখা
আত্মহনন, শহরের পিঠ তোলপাড় করা অহংকারের দ্রুত পদপাত
একখানা নদী, দু'তিনটে দেশ, কয়েকটি নারী -
এ-সবই আমার পুরোনো পোশাক, বড় প্রিয় ছিল, এখন শরীরে
আঁট হয়ে বসে, মানায় না আর
তোমাকে দিলাম, নবীন কিশোর, ইচ্ছে হয় তো অঙ্গে জড়াও
অথবা ঘৃণায় দূরে ফেলে দাও, যা খুশি তোমার
তোমাকে আমার তোমার বয়সী সব কিছু দিতে বড় সাধ হয়।
ব্লগার আকাশ অম্বর-এর 'কেন লিখি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।' পোস্টে ব্লগার আবদুর রাজ্জাক শিপন-এর কমেন্ট থেকে সংকলিত
নীরার পাশে তিনটি ছায়া
(বন্দী, জেগে আছো)
নীরা এবং নীরার পাশে তিনটি ছায়া
আমি ধনুকে তীর জুড়েছি, ছায়া তবুও এত বেহায়া
পাশ ছাড়ে না
এবার ছিলা সমুদ্যত, হানবো তীর ঝড়ের মতো–
নীরা দু’হাত তুলে বললো, ‘মা নিষাদ!
ওরা আমার বিষম চেনা!’
ঘূর্ণি ধুলোর সঙ্গে ওড়ে আমার বুক চাপা বিষাদ–
লঘু প্রকোপে হাসলো নীরা, সঙ্গে ছায়া-অভিমানীরা
ফেরানো তীর দৃষ্টি ছুঁয়ে মিলিয়ে গেল
নীরা জানে না!
*সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা বিষয়ক কবিতা : গাব্রিয়েল সুমন
আরও নিচে
(বন্দী, জেগে আছো)
সিংহাসন থেকে একটু নিচে নেমে, পাথরের
সিঁড়ির উপর বসে থাকি
একা, চিবুক নির্ভরশীল
চোখ লোকচক্ষু থেকে দূরে।
‘সম্রাটের চেয়ে কিছু কম সম্রাটত্ব’ থেকে ছুটি নিয়ে আজ
হলুদ দিনাবসানে পরিকীর্ণ শব্দটির মোহে
মাটির মানুষ হতে সাধ হয়। এক-একদিন একরকম হয়।
আমার চোখের নীচে কালো দাগ
ব্যান্ডেজের মধ্যে একটা পোকা ঢুকলে যে-রকম জাদুদন্ডসম কোনো
মহিলার মতো
নিয়তি বদল করে, আলো-ছায়া-আলো ঘোরে নিভৃত সানুদেশে
দপ করে জ্বলে ওঠে হৃদয়ের পুরনো বারুদ
তেমনিই দিনাবসান
তেমনিই মোহের থেকে মুক্ত নিচু চাঁদ-
সিংহাসন থেকে নেমে, হাত ভরা পশমের মতো
রোমশ স্তব্ধতা।
পাথরের মতো মসৃণ বেদির নিচে রুক্ষ মাটি, একটু দূরে পায়ে চলা পথ।
সম্রাটের শেষ বৃত্য চিরতরে যেখানে শয়ান
তার চেয়ে দূরে, সীমার যেখানে শেষ
সেখানে উদ্ভিদ, জল মেতে আছে পাংশু ঈর্ষায়
যেখানে বিশীর্ণ হাত কাদার ভেতর খোঁজ বলির ফসল
তার চেয়ে দূরে
যেখানে শামুক তার খাদ্য পায়, নিজেও সে খাদ্য হয়
ভেসে যায় সাপের খোলস, সেখানেও
আমার অতৃপ্তি বড় দীর্ঘশ্বাস বিষদৃষ্টি নিয়ে জেগে রয়-
মুকুট খোলার পর আমি আরও বহুদূরে নেমে যেতে চাই।
ব্লগার আকাশ অম্বর-এর 'কেন লিখি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।' পোস্টে তাঁর নিজস্ব কমেন্ট থেকে সংকলিত
যদি নির্বাসন দাও
(আমার স্বপ্ন)
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!
বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!
ধানক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত
এইখানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম
এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রণাম
এখনো নদীর বুকে
মোচার খোলায় ঘোরে
লুঠেরা, ফেরারি!
শহরে বন্দরে এত অগ্নি-বৃষ্টি
বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক একটি অপরূপ ভোর,
বাজারে ক্রূরতা, গ্রামে রণহিংসা
বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা
বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরুষতার মেলা
বুলেট ও বিস্ফোরণ
শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ
রাত্রির শিশিরে কাঁপে ঘাস ফুল–
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!
কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে
নিথর দিঘির পারে বসে আছে বক
আমি কি ভুলেছি সব
স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক?
আমি কি দেখি নি কোনো মন্থর বিকেলে
শিমুল তুলার ওড়াউড়ি?
মোষের ঘাড়ের মতো পরিশ্রমী মানুষের পাশে
শিউলি ফুলের মতো বালিকার হাসি
নিই নি কি খেজুর রসের ঘ্রাণ
শুনি নি কি দুপুরে চিলের
তীক্ষ্ণ স্বর?
বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ…
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো।।
* 'ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর নেই' : রেজা ঘটক (কমেন্ট)
নীরার দুঃখকে ছোঁয়া
(আমার স্বপ্ন)
কতটুকু দূরত্ব? সহস্র আলোকবর্ষ চকিতে পার হয়ে
আমি তোমার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসি
তোমার নগ্ন কোমরের কাছে উষ্ণ নিশ্বাস ফেলার আগে
অলঙ্কৃত পাড় দিতে ঢাকা অদৃশ্য পায়ের পাতা দুটি
বুকের কাছে এনে
চুম্বন ও অশ্রুজলে ভেজাতে চাই
আমার সাঁইত্রিশ বছরের বুক কাঁপে
আমার সাঁইত্রিশ বছরের বাইরের জীবন মিথ্যে হয়ে যায়
বহুকাল পর অশ্রু বিস্মৃত শব্দটি
অসম্ভব মায়াময় মনে হয়
ইচ্ছে করে তোমার দুঃখের সঙ্গে
আমার দুঃখ মিশিয়ে আদর করি
সামাজিক কাঁথা সেলাই করা ব্যবহার তছনছ করে
স্ফুরিত হয় একটি মুহূর্ত
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে তোমার পায়ের কাছে…
বাইরে বড় চ্যাঁচামেচি, আবহাওয়া যখন তখন নিম্নচাপ
ধ্বংস ও সৃষ্টির বীজ ও ফসলে ধারাবাহিক কৌতুক
অজস্র মানুষের মাথা নিজস্ব নিয়মে ঘামে
সেই তো শ্রেষ্ঠ সময় যখন এ-সবকিছুই তুচ্ছ
যখন মানুষ ফিরে আসে তার ব্যক্তিগত স্বর্গের
অতৃপ্ত সিঁড়িতে
যখন শরীরের মধ্যে বন্দী ভ্রমরের মনে পড়ে যায়
এলাচ গন্ধের মতো বাল্যস্মৃতি
তোমার অলোকসামান্য মুখের দিকে আমার স্থির দৃষ্টি
তোমার রেজী অভিমানের কাছে প্রতিহত হয়
দ্যুলোক-সীমানা
প্রতীক্ষা করি ত্রিকাল দুলিয়ে দেওয়া গ্রীবাভঙ্গির
আমার বুক কাঁপে,
কথা বলি না
বুকে বুক রেখে যদি স্পর্শ করা যায় ব্যথাসরিৎসাগর
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে আসি অসম্ভব দূরত্ব পেরিয়ে
চোখ শুকনো, তবু পদচুম্বনের আগে
অশ্রুপাতের জন্য মন কেমন করে!
* সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা বিষয়ক কবিতা : গাব্রিয়েল সুমন
সত্যবদ্ধ অভিমান
(আমার স্বপ্ন)
এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ
আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি?
শেষ বিকেলের সেই ঝুল বারান্দায়
তার মুখে পড়েছিল দুর্দান্ত সাহসী এক আলো
যেন এক টেলিগ্রাম, মুহূর্তে উন্মুক্ত করে
নারীর সুষমা
চোখে ও ভূরুতে মেশা হাসি, নাকি অভ্রবিন্দু?
তখন সে যুবতীকে খুকি বলে ডাকতে ইচ্ছে হয়-
আমি ডান হাত তুলি, পুরুষ পাঞ্জার দিকে
মনে মনে বলি,
যোগ্য হও, যোগ্য হয়ে ওঠো-
ছুঁয়ে দিই নীরার চিবুক
এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ
আমি কি এ হাতে আর কোনোদিন
পাপ করতে পারি?
এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে , ভালোবাসি-
এই ওষ্ঠে আর কোনো মিথ্যে কি মানায়?
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে পড়ে ভীষণ জরুরি
কথাটাই বলা হয় নি
লঘু মরালির মতো নারীটিকে নিয়ে যাবে বিদেশি বাতাস
আকস্মিক ভূমিকম্পে ভেঙ্গে যাবে সবগুলো সিঁড়ি
থমকে দাঁড়িয়ে আমি নীরার চোখের দিকে...
ভালোবাসা এক তীব্র অঙ্গীকার, যেন মায়াপাশ
সত্যবদ্ধ অভিমান- চোখ জ্বালা করে ওঠে,
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে, ভালোবাসি-
এই ওষ্ঠে আর কোনো মিথ্যে কি মানায়?
* সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা বিষয়ক কবিতা : গাব্রিয়েল সুমন
মন ভালো নেই
(মন ভালো নেই)
মন ভালো নেই মন ভালো নেই মন ভালো নেই
কেউ তা বোঝে না সকলি গোপন মুখে ছায়া নেই
চোখ খোলা তবু চোখ বুজে আছি কেউ তা দেখে নি
প্রতিদিন কাটে দিন কেটে যায় আশায় আশায়
আশায় আশায় আশায় আশায়
এখন আমার ওষ্ঠে লাগে না কোনো প্রিয় স্বাদ
এমনকি নারী এমনকি নারী এমনকি নারী
এমনকি সুরা এমনকি ভাষা
মন ভালো নেই মন ভালো নেই মন ভালো নেই
বিকেল বেলায় একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে
একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে পথে ঘুরে ঘুরে
কিছুই খুঁজি না কোথাও যাই না কারুকে চাই নি
কিছুই খুঁজি না কোথাও যাই না
আমিও মানুষ আমার কী আছে অথবা কী ছিল
আমার কী আছে অথবা কী ছিল
ফুলের ভিতরে বীজের ভিতরে ঘুণের ভিতরে
যেমন আগুন আগুন আগুন আগুন আগুন
মন ভালো নেই মন ভালো নেই মন ভালো নেই
তবু দিন কাটে দিন কেটে যায় আশায় আশায়
আশায় আশায় আশায় আশায়...
তুমি জেনেছিলে
(মন ভালো নেই)
তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে
হাত ছুঁয়ে বলে বন্ধু
তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে
মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়
হাসি বিনিময় করে চলে যায়
উত্তরে দক্ষিণে
তুমি যেই এসে দাঁড়ালে-
কেউ চিনলো না কেউ দেখলে না
সবাই সবার অচেনা!
* নির্বাচিত কবিতা সমগ্র-২ : ফারজুল আরেফিন
নীরা তুমি
নীরা, তুমি নিরন্নকে মুষ্টিভিক্ষা দিলে এইমাত্র
আমাকে দেবে না?
শ্মশানে ঘুমিয়ে থাকি, ছাই-ভস্ম খাই, গায়ে মাখি
নদী-সহবাসে কাটে দিন
এই নদী গৌতম বুদ্ধকে দেখেছিল
পরবর্তী বারুদের আস্তরণও গায়ে মেখেছিল
এই নদী তুমি!
বড় দেরি হয়ে গেল, আকাশে পোশাক হতে বেশি বাকি নেই
শতাব্দীর বাঁশবনে সাংঘাতিক ফুটেছে মুকুল
শোনোনি কি ঘোর দ্রিমি দ্রিমি?
জলের ভিতর থেকে সমুত্থিত জল কথা বলে
মরুভূমি মেরুভূমি পরস্পর ইশারায় ডাকে
শোনো, বুকের অলিন্দে গিয়ে শোনো
হে নিবিড় মায়াবিনী, ঝলমলে আঙুল তুলে দাও।
কাব্যে নয়, নদীর শরীরে নয়, নীরা
চশমা-খোলা মুখখানি বৃষ্টিজলে ধুয়ে
কাছাকাছি আনো
নীরা, তুমি নীরা হয়ে এসো!
* সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা বিষয়ক কবিতা : গাব্রিয়েল সুমন
নীরা ও জীরো আওয়ার
এখন অসুখ নেই, এখন অসুখ থেকে সেরে উঠে
পরবর্তী অসুখের জন্য বসে থাকা। এখন মাথার কাছে
জানলা নেই, বুক ভরা দুই জানলা, শুধু শুকনো চোখ
দেয়ালে বিশ্রাম করে, কপালে জলপট্টির মতো
ঠাণ্ডা হাত দূরে সরে গেছে, আজ এই বিষম সকালবেলা
আমার উত্থান নেই, আমি শুয়ে থাকি, সাড়ে দশটা বেজে যায়।
প্রবন্ধ ও রম্যরচনা, অনুবাদ, পাঁচ বছর আগের
শুরু করা উপন্যাস, সংবাদপত্রের জন্য জল-মেশানো
গদ্য থেকে আজ এই সাড়ে দশটায় আমি সব ভেঙেচুরে
উঠে দাঁড়াতে চাই–অন্ধ চোখ, ছোট চুল–ইস্ত্রিকরা পোশাক ও
হাতের শৃঙ্খল ছিঁড়ে ফেলে আমি এখন তোমার
বাড়ির সামনে, নীরা থুক্ করে মাটিতে থুতু ছিটিয়ে
বলি : এই প্রাসাদ একদিন আমি ভেঙে ফেলবো! এই প্রাসাদে
এক ভারতবর্ষব্যাপী অন্যায়। এখান থেকে পুনরায় রাজতন্ত্রের
উৎস। আমি
ব্রীজের নিচে বসে গম্ভীর আওয়াজ শুনেছি, একদিন
আমূলভাবে উপড়ে নিতে হবে অপবিত্র সফলতা।
কবিতায় ছোট দুঃখ, ফিরে গিয়ে দেখেছি বহুবার
আমার নতুন কবিতা এই রকম ভাবে শুরু হয় :
নীরা, তোমায় একটি রঙিন
সাবান উপহার
দিয়েছি শেষবার;
আমার সাবান ঘুরবে তোমার সারা দেশে।
বুক পেরিয়ে নাভির কাছে মায়া স্নেহে
আদর করবে, রহস্যময় হাসির শব্দে
ক্ষয়ে যাবে, বলবে তোমার শরীর যেন
অমর না হয়…
অসহ্য! কলম ছুঁড়ে বেরিয়ে আমি বহুদূর সমুদ্রে
চলে যাই, অন্ধকারে স্নান করি হাঙর-শিশুদের সঙ্গে
ফিরে এসে ঘুম চোখ, টেবিলের ওপাশে দুই বালিকার
মতো নারী, আমি নীল-লোভী তাতার বা কালো ঈশ্বর-খোঁজা
নিগ্রোদের মতো অভিমান করি, অভিমানের স্পষ্ট
শব্দ, আমার চা-মেশানো ভদ্রতা হলুদ হয়!
এখন, আমি বন্ধুর সঙ্গে সাহাবাবুদের দোকানে, এখন
বন্ধুর শরীরে ইঞ্জেকশন ফুঁড়লে আমার কষ্ট, এখন
আমি প্রবীণ কবির সুন্দর মুখ থেকে লোমশ ভ্রুকুটি
জানু পেতে ভিক্ষা করি, আমার ক্রোধ ও হাহাকার ঘরের
সিলিং ছুঁয়ে আবার মাটিতে ফিরে আসে, এখন সাহেব বাড়ীর
পার্টিতে আমি ফরিদপুরের ছেলে, ভালো পোষাক পরার লোভ
সমেত কাদা মাখা পায়ে কুৎসিত শ্বেতাঙ্গিনীকে দু’পাটি
দাঁত খুলে আমার আলজিভ দেখাই, এখানে কেউ আমার
নিম্নশরীরের যন্ত্রনার কথা জানে না। ডিনারের আগে
১৪ মিনিটের ছবিতে হোয়াইট ও ম্যাকডেভিড মহাশূন্যে
উড়ে যায়, উন্মাদ! উন্মাদ! এক স্লাইস পৃথিবী দূরে,
সোনার রজ্জুতে
বাঁধা একজন ত্রিশঙ্কু। কিন্তু আমি প্রধান কবিতা
পেয়ে গেছি প্রথমেই, ৯, ৮, ৭, ৬, ৫…থেকে ক্রমশ শূন্যে
এসে স্তব্ধ অসময়, উলটোদিকে ফিরে গিয়ে এই সেই মহাশূন্য,
সহস্র সূর্যের বিস্ফোরণের সামনে দাঁড়িয়ে ওপেনহাইমার
প্রথম এই বিপরীত অঙ্ক গুনেছিল ভগবৎ গীতা আউড়িয়ে?
কেউ শূন্যে ওঠে কেউ শূন্যে নামে, এই প্রথম আমার মৃত্যু
ও অমরত্বের ভয় কেটে যায়, আমি হেসে বন্দনা করি :
ওঁ শান্তি! হে বিপরীত সাম্প্রতিক গণিতের বীজ
তুমি ধন্য, তুমি ইয়ার্কি, অজ্ঞান হবার আগে তুমি সশব্দ
অভ্যুত্থান, তুমি নেশা, তুমি নীরা, তুমিই আমার ব্যক্তিগত
পাপমুক্তি। আমি আজ পৃথিবীর উদ্ধারের যোগ্য
* সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা বিষয়ক কবিতা : গাব্রিয়েল সুমন
নীরা তুমি কালের মন্দিরে
চাঁদের নীলাভ রং, ওইখানে লেগে আছে নীরার বিষাদ
ও এমন কিছু নয়, ফুঁ দিলেই চাঁদ উড়ে যাবে
যে রকম সমুদ্রের মৌসুমিতা, যে রকম
প্রবাসের চিঠি
অরণ্যের এক প্রান্তে হাত রেখে নীরা কাকে বিদায় জানালো
আঁচলে বৃষ্টির শব্দ, ভুরুর বিভঙ্গে লতা পাতা
ও যে বহুদূর,
পীত অন্ধকারে ডোবে হরিৎ প্রান্তর
ওখানে কী করে যাবো, কী করে নীরাকে
খুঁজে পাবো?
অক্ষরবৃত্তের মধ্যে তুমি থাকো, তোমাকে মানায়
মন্দাক্রান্তা, মুক্ত ছন্দ, এমনকি চাও শ্বাসাঘাত
দিতে পারি, অনেক সহজ
কলমের যে-টুকু পরিধি তুমি তাও তুচ্ছ করে
যদি যাও, নীরা, তুমি কালের মন্দিরে
ঘন্টধ্বনি হয়ে খেলা করো, তুমি সহাস্য নদীর
জলের সবুজে মিশে থাকো, সে যে দূরত্বের চেয়ে বহুদূর
তোমার নাভির কাছে জাদুদণ্ড, এ কেমন খেলা
জাদুকরী, জাদুকরী, এখন আমাকে নিয়ে কোন রঙ্গ
নিয়ে এলি চোখ-বাঁধা গোলকের ধাঁধায়!
* সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরা বিষয়ক কবিতা : গাব্রিয়েল সুমন
ব্যর্থ প্রেম
(দেখা হলো ভালোবাসা বেদনায়)
প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমই আমাকে নতুন অহঙ্কার দেয়
আমি মানুষ হিসেবে একটু লম্বা হয়ে উঠি
দুঃখ আমার মাথার চুল থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত
ছড়িয়ে যায়
আমি সমস্ত মানুষের থেকে আলাদা হয়ে এক
অচেনা রাস্তা দিয়ে ধীরে পায়ে
হেঁটে যাই
সার্থক মানুষদের আরো-চাই মুখ আমার সহ্য হয় না
আমি পথের কুকুরকে বিস্কুট কিনে দিই
রিক্সাওয়ালাকে দিই সিগারেট
অন্ধ মানুষের শাদা লাঠি আমার পায়ের কাছে
খসে পড়ে
আমার দু’হাত ভর্তি অঢেল দয়া, আমাকে কেউ
ফিরিয়ে দিয়েছে বলে গোটা দুনিয়াটাকে
মনে হয় খুব আপন
আমি বাড়ি থেকে বেরুই নতুন কাচা
প্যান্ট শার্ট পরে
আমার সদ্য দাড়ি কামানো নরম মুখখানিকে
আমি নিজেই আদর করি
খুব গোপনে
আমি একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ
আমার সর্বাঙ্গে কোথাও
একটুও ময়লা নেই
অহঙ্কারের প্রতিভা জ্যোতির্বলয় হয়ে থাকে আমার
মাথার পেছনে
আর কেউ দেখুক বা না দেখুক
আমি ঠিক টের পাই
অভিমান আমার ওষ্ঠে এনে দেয় স্মিত হাস্য
আমি এমনভাবে পা ফেলি যেন মাটির বুকেও
আঘাত না লাগে
আমার তো কারুকে দুঃখ দেবার কথা নয়।
* রেজা ঘটকের পূর্বোল্লেখিত পোস্ট থেকে সংকলিত
চোখ নিয়ে চলে গেছে
(দেখা হলো ভালোবাসা বেদনায়)
এই যে বাইরে হু হু ঝড়, এর চেয়ে বেশি
বুকের মধ্যে আছে
কৈশোর জুড়ে বৃষ্টি বিশাল, আকাশে থাকুক যত মেঘ,
যত ক্ষণিকা
মেঘ উড়ে যায়
আকাশ ওড়ে না
আকাশের দিকে
উড়ছে নতুন সিঁড়ি
আমার দু বাহু একলা মাঠের জারুলের ডালপালা
কাচ ফেলা নদী যেন ভালোবাসা
ভালোবাসার মতো ভালোবাসা
দু'দিকের পার ভেঙে
নারীরা সবাই ফুলের মতন, বাতাসে ওড়ায়
যখন তখন
রঙিন পাঁপড়ি
বাতাস তা জানে, নারীকে উড়াল দেয়ে নিয়ে যায়
তাই আমি আর প্রকৃতি দেখি না,
প্রকৃতি আমার চোখ নিয়ে চলে গেছে!
(ব্লগ থেকে সংকলিত। ব্লগারের নাম ভুলে যাওয়ায় দুঃখিত)
চায়ের দোকানে
লণ্ডনে আছে লাস্ট বেঞ্চির ভীরু পরিমল,
রথীন এখন সাহিত্যে এক পরমহংস
দীপু তো শুনেছি খুলেছে বিরাট কাগজের কল
এবং পাঁচটা চায়ের বাগানে দশআনি অংশ
তদুপরি অবসর পেলে হয় স্বদেশসেবক;
আড়াই ডজন আরশোলা ছেড়ে ক্লাস ভেঙেছিল পাগলা অমল
সে আজ হয়েছে মস্ত অধ্যাপক!
কি ভয়ংকর উজ্জ্বল ছিল সত্যশরণ
সে কেন নিজের কণ্ঠ কাটলো ঝকঝকে ক্ষুরে -
এখনো ছবিটি চোখে ভাসলেই জাগে শিহরণ
দূরে চলে যাবে জানতাম, তবু এতখানি দূরে ?
গলির চায়ের দোকানে এখন আর কেউ নেই
একদা এখানে সকলে আমরা স্বপ্নে জেগেছিলাম
এক বালিকার প্রণয়ে ডুবেছি এক সাথে মিলে পঞ্চজনেই
আজ এমনকি মনে নেই সেই মেয়েটিরও নাম।
* রেজা ঘটকের পূর্বোল্লেখিত পোস্ট থেকে সংকলিত
‘অর্ধেক জীবন’ গ্রন্থের মুখবন্ধ থেকে
জুলপি দুটো দেখতে দেখতে শাদা হয়ে গেল!
আমাকে তরুণ কবি বলে কেউ ভুলেও ভাববে না
পরবর্তী অগণন তরুণেরা এসেছে সুন্দর ক্রুদ্ধ মুখে
তাদের পৃথিবী তারা নিজস্ব নিয়মে নিয়ে নিক!
আমি আর কফি হাউস থেকে হেঁটে হেঁটে হেঁটে
নিরুদ্দিষ্ট কখনো হবো না
আমি আর পকেটে কবিতা নিয়ে ভোরবেলা
বন্ধুবান্ধবের বাড়ি যাবো না কখনো
হসন্তকে এক মাত্রা ধরা হবে কিনা এর তর্কে আর
ফাটাবো না চায়ের টেবিল
এখন ক্রমশ আমি চলে যাবো তুমি’-র জগৎ ছেড়ে
আপনি’-র জগতে
কিছু প্রতিরোধ করে, হার মেনে, লিখে দেব
দুটি একটি বইয়ের ভূমিকা
অকস্মাৎ উৎসব-বাড়িতে পূর্ব প্রেমিকার সঙ্গে দেখা হলে
তার হৃষ্টপুষ্ট স্বামীটির সঙ্গে হবে
রাজনীতি নিয়ে আলোচনা
দিন যাবে, এরকমভাবে দিন যাবে!
অথচ একলা দিনে, কেউ নেই, শুয়ে আমি আমি আর
বুকের ওপরে প্রিয় বই
ঠিক যেন কৈশোরে পেরিয়ে আসা রক্তমাখা মরূদ্যান
খেলা করে মাথার ভিতরে
জঙ্গলের সিংহ এক ভাঙা প্রাসাদের কোণে
ল্যাজ আছড়িয়ে তোলে গম্ভীর গর্জন
নদীর প্রাঙ্গণে ওই স্নিগ্ধ ছায়ামূর্তিখানি কার?
ধড়ফড় করে উঠে বসি
কবিতার খাতা খুলে চুপে চাপে লিখে রাখি
গতকালপরশুর কিছু পাগলামি!
* 'কেন লিখি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।' : আকাশ অম্বর (চতুর্মাত্রিক ব্লগ)
কথা আছে
বহুক্ষণ মুখোমুখি চুপচাপ, একবার চোখ তুলে সেতু
আবার আলাদা দৃষ্টি, টেবিলে রয়েছে শুয়ে
পুরোনো পত্রিকা
প্যান্টের নিচে চটি, ওপাশে শাড়ির পাড়ে
দুটি পা-ই ঢাকা
এপাশে বোতাম খোলা বুক, একদিন না-কামানো দাড়ি
ওপাশে এলো খোঁপা, ব্লাউজের নীচে কিছু
মসৃণ নগ্নতা
বাইরে পায়ের শব্দ, দূরে কাছে কারা যায়
কারা ফিরে আসে
বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে।
আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী
দু‘খানি চেয়ারে স্তব্ধ, একজন জ্বলে সিগারেট
অন্যজন ঠোঁটে থেকে হাসিটুকু মুছেও মোছে না
আঙুলে চিকচিকে আংটি, চুলের কিনারে একটু ঘুম
ফের চোখ তুলে কিছু স্তব্ধতার বিনিময়,
সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে
অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে।
* নির্বাচিট কবিতা সমগ্র-৩ : ফারজুল আরেফিন
নিজের আড়ালে
সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে
মানুষ দেখে না
সে খোঁজে ভ্রমর বিংবা
দিগন্তের মেঘের সংসার
আবার বিরক্ত হয়
কতকাল দেখে না আকাশ
কতকাল নদী বা ঝরনায় আর
দেখে না নিজের মুখ
আবর্জনা, আসবাবে বন্দী হয়ে যায়
সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে
রমনীর কাছে গিয়ে
বারবার হয়েছে কাঙাল
যেমন বাতাসে থাকে সুগন্ধের ঋণ
বহু বছরের স্মৃতি আবার কখন মুছে যায়
অসম্ভব অভিমান খুন করে পরমা নারীকে
অথবা সে অস্ত্র তোলে নিজেরই বুকের দিকে
ঠিক যেন জন্মান্ধ তখন
সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে।।
* নির্বাচিট কবিতা সমগ্র-৩ : ফারজুল আরেফিন
যে আমায়
যে আমায় চেনে আমি তাকেই চিনেছি
যে আমায় ভুলে যায়, আমি তার ভুল
গোপন সিন্দুকে খুব যত্নে তুলে রাখি
পুকুরের মরা ঝাঁঝি হাতে নিয়ে বলি,
মনে আছে, জলের সংসার মনে আছে?
যে আমায় চেনে আমি তাকেই চিনেছি!
যে আমায় বলেছিল, একলা থেকো না
আমি তার একাকিত্ব অরণ্যে খুঁজেছি
যে আমায় বলেছিল, অত্যাগসহন
আমি তার ত্রাগ নিয়ে বানিয়েছি শ্লোক
যে আমার বলেছিল, পশুকে মেরো না
আমার পশুত্ব তাকে দিয়েছে পাহারা!
দিন গেছে, দিন যায় যমজ চিন্তায়
যে আমায় চেনে আমি তাকেই চিনেছি!
* নির্বাচিট কবিতা সমগ্র-৩ : ফারজুল আরেফিন
স্পর্শটুকু নাও
স্পর্শটুকু নাও আর বাকি সব চুপ
ছেঁড়া পৃষ্ঠা উড়ে যায়, না-লেখা পৃষ্ঠাও কিছু ওড়ে
হিমাদ্রি-শিখর থেকে ঝুঁকে-জড়া জলাপ্রপাতের সবই আছে
শুধু যেন শব্দরাশি নেই
স্পর্শটুকু নাও আর বাকি সব চুপ
ভোর আনে শালিকেরা, কোকিল ঘুমন্ত, আর
জেগে আছে দেবদারু বন
নীলিমার হিম থেকে খসে যায় রূপের কিরীট
স্পর্শটুকু নাও আর বাকি সব চুপ
বেলা গেল, শোনোনি কি ছেলেমানুষীরা কোনো
ভুল করা ডাক?
এপারে মৃত্যুর হাতছাছি আর অন্য পারে
অমরত্ব কঠিন নীরব
‘মনে পড়ে?’ এই ডাক কতকাল, কত শতাব্দীর
জলে ধুয়ে যায় স্মৃতি, কার জল কোন জল
কবেকার উষ্ণ প্রস্রবণ
স্পর্শটুকু নাও আর বাকি সব চুপ।
* নির্বাচিট কবিতা সমগ্র-৩ : ফারজুল আরেফিন
রূপালি মানবী
রূপালি মানবী, সন্ধ্যায় আজ শ্রাবণ ধারায়
ভিজিও না মুখ, রূপালী চক্ষু, বরং বারান্দায় উঠে এসো
ঘরের ভিতরে বেতের চেয়ার, জানলা বন্ধ দরজা বন্ধ
রূপালী মানবী, তালা খুলে নাও, দেয়ালে বোতাম আলো জ্বেলে নাও,
অথবা অন্ধকারেই বসবে, কাচের শার্সি থাকুক বন্ধ
দূর থেকে আজ বৃষ্টি দেখবে, ঘরের ভিতরে বেতের চেয়ার, তালা খুলে
নাও।
চাবি নেই, একি! ভালো করে দ্যাখো হাতব্যাগ, মন
অথবা পায়ের নিচে কার্পেট, কোণ উঁচু করে উঁকি মেরে নাও
চিঠির বাক্সে দ্যাখো একবার, রূপালী মানবী, এত দেরি কেন?
বইরে বৃষ্টি, বিষম বৃষ্টি, ঝড়ের ঝাপটা তোমাকে জড়ায়
তোমার রূপালী চুল খুলে দেয়, চাবি খুঁজে নও-
তোমার রূপালী অসহায় মুখ আমাকে করেছে আরও উৎসুক-
ধাক্ক-মারো না! আপনি হয়তো দরজা খুলবে, পলকা ও তালা
অমন উতলা রূপালী মানবী তোমাকে এখন হওয়া মানায় না
অথবা একলা রয়েছে-বলেই বৃষ্টি তোমাকে কোনো ছলে বলে
ছুঁতে পারবে না, ফিরতে না তুমি বাইরে বিপুল লেলিহান ঝড়ে-
তালা খুলে নাও।
রূপালী মানবী, আজ তুমি ঐ জানলার পাশে বেতের চেয়ারে
একলা এসব আঁধারে অথবা গেয়ালে বোতাম আলো জ্বেলে নাও
ঠান্ডা কাঁচের শার্সিতে রাখো ও রূপালী মুখ, দুই উৎসুক চোখ মেলে দাও।
বাইরে বৃষ্টি, বিষম বৃষ্টি, আজ তুমি ঐ রূপালী শরীরে
বৃষ্টি দেখবে প্রান্তরময়, আকাশ মুচড়ে বৃষ্টির ধারা…
আমি দূরে এক বৃষ্টির নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছি, একলা রয়েছি,
ভিজেছে আমার সর্ব শরীর, লোহার শরীর, ভিজুক আজকে
বাজ বিদ্যুৎ একলা দাঁড়িয়ে মানি না, সকাল বিকেল
খরচোখে আমি চেয়ে আছি ঐ জানলার দিকে, কাচের এপাশে
যতই বতাস আঘাত করুক, তবুও তোমার রূপালী চক্ষু-
আজ আমি একা বৃষ্টিতে ভিজে, রূপালী মানবী, দেখবো তোমার
বৃষ্টি না-ভেজা একা বসে থাকা।।
* নির্বাচিট কবিতা সমগ্র-৩ : ফারজুল আরেফিন
এই দৃশ্য
হাঁটুর ওপরে থতনি, তুমি বসে আছো
নীল ডুরে শাড়ী, স্বপ্নে পিঠের ওপরে চুল খোলা
বাতাসে অসংখ্য প্রজাপতি কিংবা সবই অভ্রফুল?
হাঁটুর ওপরে থুতনি, তুমি বসে আছো
চোখ দুটি বিখ্যাত সুদূর, পায়ের আঙুলে লাল আভা।
ডান হতে, তর্জনিতে সামান্য কালির দাগ
একটু আগেই লিখছিলে
বাতাসে সুগন্ধ, কোথা যেন শুরু হলো সন্ধ্যারতি
অন্যদেশ থেকে আসে রাত্রি, আজ কিছু দেরি হবে
হাঁটুর ওপরে থুথনি, তুমি বসে আছো
শিল্পের শিরায় আসে উত্তেজনা, শিল্পের দু’চোখে
পোড়ে বাজি
মোহময় মিথ্যেগুলি চঞ্চল দৃষ্টির মতো, জোনাকির মতো উড়ে যায়
কোনোদিন দুঃখ ছিল, সেই কথা মনেও পড়ে না
হাঁটুর ওপরে থুতনি, তুমি বসে আছো
সময় থামে না জানি, একদিন তুমি আমি সময়ে জড়াবো
সময় থামে না, একদিন মৃত্যু এসে নিয়ে যাবে
দিগন্ত পেরিয়ে-
নতুন মানুষ এসে গড়ে দেবে নতুন সমাজ
নতুন বাতাস এসে মুছে দেবে পুরোনো নি:শ্বাস,
তবু আজ
হাঁটুর ওপরে থুতনি,তুমি বসে আছো
এই বসে থাকা, এই পেঠের ওপরে খোলা চুল,
আঙুলে কালির দাগ
এই দৃশ্য চিরকাল, এর সঙ্গে অমরতা সখ্য করে নেবে
হাঁটুর ওপরে থুতনি, তুমি বসে আছো..,.
*নির্বাচিট কবিতা সমগ্র-৩ : ফারজুল আরেফিন
ইচ্ছে
কাচের চুড়ি ভাঙার মতন মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে
দুটো চারটে নিয়ম কানুন ভেঙে ফেলি
পায়ের তলায় আছড়ে ফেলি মাথার মুকুট
যাদের পায়ের তলায় আছি, তাদের মাথায় চড়ে বসি
কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতই ইচ্ছে করে অবহেলায়
ধর্মতলায় দিন দুপুরে পথের মধ্যে হিসি করি।
ইচ্ছে করে দুপুর রোদে ব্লাক আউটের হুকুম দেবার
ইচ্ছে করে বিবৃতি দিই ভাঁওতা মেলে জনসেবার
ইচ্ছে করে ভাঁওতাবাজ নেতার মুখে চুনকালি দিই।
ইচ্ছে করে অফিস যাবার নাম করে যাই বেলুড় মঠে
ইচ্ছে করে ধর্মাধর্ম নিলাম করি মুর্গীহাটায়
বেলুন কিনি বেলুন ফাটাই, কাঁচের চুড়ি দেখলে ভাঙি
ইচ্ছে করে লণ্ডভণ্ড করি এবার পৃথিবীটাকে
মনুমেন্টের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে বলি
আমার কিছু ভাল্লাগে না।।
*নির্বাচিট কবিতা সমগ্র-৩ : ফারজুল আরেফিন
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:২৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার গল্প-অবলম্বনে তৈরি আপনার প্রথম পাপেট নাটকের জন্য অভিনন্দন। অবশ্যই দেখার ইচ্ছে থাকলো। পোস্ট প্রিয়তে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৫৯
সালমাহ্যাপী বলেছেন: বিশাল পরিশ্রম করেছেন দেখছি!!এত কষ্ট কিভাবে যে করেন!! আপনার ধৈর্য আছে বলতে হয়
ওহ মাশাল্লাহ বলেছি কিন্তু
সুন্দর পোস্টে ভালো লাগা।
সাথে প্রিয়তে রাখলাম
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। পোস্ট প্রিয়তে নেয়ার জন্যও ধন্যবাদ জানবেন।
৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:০৪
সায়েম মুন বলেছেন:
আমার প্রিয় কবি চলে গেলেন। কালকে খবরটা শোনার পর থেকে মনে হচ্ছে কি জানি নেই। কোথাও একটা কিছু ঘাটতি হয়েছে। উনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
গ্যাব্রিয়েল সুমনের পোস্টটা আমার প্রিয়তে রয়েছে।
আপনার পোস্টটা প্রিয়তে রেখে দিলাম। যখন তখন পড়া যাবে।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ কবি সায়েম মুন। ভালো থাকুন।
৪| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:১৩
শোশমিতা বলেছেন: অনেক সুন্দর পোষ্ট!
প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:২৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।
৫| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:১৮
মাহী ফ্লোরা বলেছেন: এত দারুন পোষ্ট সাথে করে নিয়ে যেতে হয় তাই নিয়ে যাই।
অনেক ধন্যবাদ।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:২৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকুন।
৬| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:২০
হাসি .. বলেছেন: অনেক বড় পোষ্ট
++++++++++++++
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ হাসি আপু। আজ আমি আর আমার মেয়ে মিলে রান্না করলুম। ইন ফ্যাক্ট আমিই রান্না করতে চাইছিলাম, কিন্তু মেয়ের উৎসাহ ছিল বেশি। আমার মেয়ে কিচেন-লক্ষ্মী হয়ে উঠবে, এটা আমি কখনোই চাই না। সন্ধ্যায় দেখি সে স্যুপ বানিয়েছে, তা-ও কী দিয়ে জানেন? চিকেন সসেস দিয়ে ওর মধুর শখ হলো আমাকে কফি, কোল্ড কফি বানিয়ে খাওয়ানো; ও নিজেও খুব কফি খায়। ওর আম্মু আর দু ভাই ঈদ কাটাতে দেশের বাড়ি গেছে। আমরা বাসায় বসে রান্নার মহড়া দিচ্ছি, যদিও বুয়া এসে মাঝে মাঝে রান্না করে দিয়ে যায়।
আপনাকে দেখলেই মনে পড়ে ভাত পুড়িয়ে কালো করে ফেলেছিলেন, সেই ভাত আপনার আব্বুর কাছে কুরিয়ার করার হুমকি দিয়েছিলেন আপনার আম্মু তাতে আবার আপনি ভয়ও পেলেন
আপনি কতো চালাক
শুভ কামনা।
৭| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:২২
আমি বাঁধনহারা বলেছেন:
খুব ভালো লাগল।শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন
মনে রাখবেন!!!
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ বাঁধনহারা।
৮| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩২
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: চমৎকার!
অনেক পরিশ্রমী পোষ্ট যা আমাদের সবার পরিশ্রম লাঘব করবে। লেখক আর লেখার সুদীর্ঘ জীবন কামনা করছি।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
৯| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৪১
বোরহান উদদীন বলেছেন:
সুন্দর পোস্ট +++++++++++++
নীচের পোস্টে একটা সমস্যার কথা বলছিলাম যদি কারো জানা থাকে সমাধান দেন.........।
Click This Link
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: 'সুন্দর পোস্ট'-এর জন্য ধন্যবাদ বোরহান ভাই।
আপনার পোস্ট দেখে এলাম। সমস্যাটা মাঝে মাঝে খুব বড় আকার ধারণ করে। ওটা ফেইসবুকের একটা 'বাগ' বা অন্য কোনো টেকনিক্যাল এররের জন্য হয়ে থাকতে পারে। ব্রাউজারের হিস্ট্রি ক্লিয়ার করুন। অথবা কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাই করুন। আমিও এ সমস্যায় পড়ি মাঝে মাঝেই।
১০| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৪২
রেজওয়ান তানিম বলেছেন: কাল রাতে তিনটার দিকে কম্পিউটার বন্ধ করে ঘুমুতে যাবার আগে কি মনে করে যেন হাতে নিলাম সুনীলের নির্বাচিত কবিতার বই খানি। হঠাৎ মনে হতে লাগল নীরার কবিতাগুলো পড়ি। আশ্চর্য এক ভাললাগায় ছেয়ে গেল মন। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে সেই নীরার আজকে চিরঅবসান, নীরার দেহধারী স্রষ্টা আজ দেহত্যাগ করলেন। বাংলা সাহিত্যের বহুমাত্রিক সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গো্পাধ্যায় মূলত আমার কাছে একজন কবি। যা চেয়েছি যা পাবোনা, কেউ কথা রাখেনি, নীরা বিষয়ক কবিতা, চে'র মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়, কবির মৃত্যু: লোরকা স্মরণে প্রভৃতি কবিতা আমার কাছে কবি হিসেবে সুনীলদাকে নমস্য করে রাখবেন আরো দীর্ঘকাল।
বাংলাসাহিত্যে রবিঠাকুরের পরে সর্বাধিক সংখ্যক আবৃত্তি উপযোগী কবিতার জন্ম দেয়ায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আবৃত্তিকারদের কাছে খুব প্রিয় নাম। তারাও বোধ করি কবিতায় এক বড় স্বজনকে হারাল। যার যায় আসলে সেই জানে হারানোর মর্ম কোথায়। চন্দ্রালোকে ভাল থাকুক নীরার জন্মদাতা। বিদায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ তানিম ভাই বিশ্লেষণমূলক মন্তব্যের জন্য।
আবৃত্তি-উপযোগী কবিতা অবশ্য তুলনামূলক ভাবে নজরুলের সর্বাধিক, এরপর জীবনানন্দ, প্রেমেন্দ্র, পূর্ণেন্দু, জসীমউদ্দীন, সুনীল, শামসুর রাহমানের নাম বলা যায়। এনি ওয়ে, ব্যাপারটা ব্যক্তিক ও আপেক্ষিক অনেকাংশেই।
ভালো থাকুন তানিম ভাই।
১১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৪৩
আরজু পনি বলেছেন:
সংগ্রহের উৎস উল্লেখসহ বিশাল পোস্ট! ভালো সংগ্রহ।
শেয়ার নিলাম।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।
১২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫০
জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: নির্বাক...
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সত্যিই নির্বাক।
১৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫১
শহিদুল ইসলাম বলেছেন: চমৎকার একটা কাজ করেছেন
চমৎকার পোস্ট
প্রিয়তে
খুব কষ্টে ছিলাম এবং আছি , সুনীলের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকে !
খুব কষ্ট লাগছে ...
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ কবি শহিদুল ভাই। ভালো থাকুন।
১৪| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:০১
চেয়ারম্যান০০৭ বলেছেন: ১ম ২ টা পড়লাম।বাকিগুলোও পড়বো ধীরে সুস্থে।++
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ চেয়ারম্যান সাহেব ঈদের শুভেচ্ছা নেবেন।
১৫| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:০৪
মামুন রশিদ বলেছেন: চমৎকার কিছু কবিতা পেলাম, সাথে তাদের অপূর্ব কাব্যিক বিশ্লেষন ।
নব্বইয়ের শুরুতে আমাদের প্রজন্মের সামনে হাজির হন সুনীল, একগুচ্ছ কবিতা আর কথাসাহিত্যের স্বপ্নডালা নিয়ে । এর রেশটুকু হয়ত আমরা বয়ে চলব আমৃত্যু প্রজন্মান্তরে । কারন একজন কবি'র তো কখনই মৃত্যু হয়না ।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: একজন কবির কখনোই মৃত্যু হয় না- শাশ্বত সত্য।
ধন্যবাদ মামুন ভাই। ঈদের শুভেচ্ছা নেবেন।
১৬| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:০৮
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ৯ম ভালোলাগা এবং সরাসরি প্রিয়তে
ভালো থাকবেন ভাই
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ অপূর্ন ভাই। ঈদের শুভেচ্ছা নেবেন।
১৭| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:০৯
রোমান সৈনিক বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ রোমান সৈনিক। ঈদের শুভেচ্ছা নেবেন।
১৮| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:২১
ইমরান মাঝি বলেছেন: অসাধারণ পোষ্ট। প্রিয়তে নিলাম। ভালো থাকবেন।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ ইমরান ভাই। কেমন আছেন। ঈদের শুভেচ্ছা নেবেন।
১৯| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:২৬
সোনালী ডানার চিল বলেছেন: কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন সবসময়।
তার কবিতার খুব উল্লেখযোগ্য সংকলন হলো এটা (বোনাস: আপনার কাব্য বিশ্লেষনটুকু); আপনার পরিশ্রমকে স্যালুট।
পোষ্টে ++++++ এবং প্রিয়তে..............
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ সোনালী ডানার চিল। হায় চিল!!!!
ঈদের শুভেচ্ছা নেবেন।
২০| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৩৮
তুষার আহাসান বলেছেন: সরাসরি প্রি য় তে + সহ
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ তুষার ভাই। কেমন আছেন? ঈদের শুভেচ্ছা নেবেন।
২১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৫০
কয়েস সামী বলেছেন: প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ কয়েস ভাই। ঈদের শুভেচ্ছা নেবেন।
২২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৫৮
শামা বলেছেন: ভালো লাগলো...!!পরে সব পড়বো,,,!
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:০০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ শামা আপু। ঈদের শুভেচ্ছা থাকলো।
২৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৩৭
সোমহেপি বলেছেন: ami aj sara din was with sunil.i can't write in bangla in this keyboard.
ki soro holo sob salara mora soro korlo!we should arrange procession against death anarchy .
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:০৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এ মৃত্যুর বিরুদ্ধে মিছিল। এ চলে যাওয়ার বিরুদ্ধে অনশন। এভাবে আমাদের ফেলে চলে যান তাঁরা, আমরা কি ছিলাম না তাঁদের আত্মার স্বজন?
ধন্যবাদ ইমন ভাই। ঈদ মুবারক। ভালো থাকুন।
২৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৪৬
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
দারুন পোস্ট।
অনেক দিন আগে প্রিয় কবির কিছু কবিতা নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম।
প্রিয় কবিতা জড়ায়ে রাখে আমায় (সুনীল পর্ব)
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:০৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আশরাফ ভাই। আপনার পোস্টের
অসুখের ছড়া এ সংকলনে নেই। ওটি এখানে পেস্ট করে দিলাম। ভালো থাকুন। ঈদ মুবারক। ভালো থাকুন।
***
অসুখের ছড়া
একলা ঘরে শুয়ে রইলে কারুর মুখ মনে পড়ে না
মনে পড়ে না মনে পড়ে না মনে পড়ে না মনে পড়ে না
চিঠি লিখবো কোথায়, কোন মুন্ডহীন নারীর কাছে?
প্রতিশ্রুতি মনে পড়ে না চোখের আলো মনে পড়ে না
ব্লেকের মতো জানলা খুলে মুখ দেখবো ঈশ্বরের?
বৃষ্টি ছিল রৌদ্র ছায়ায়, বাতাস ছিল বিখ্যাত
করমচার সবুজ ঝোপে পূর্বকালের গন্ধ ছিল
কত পাখির ডাক থামেনি, কত চাঁদের ঢেউ থামেনি
আলিঙ্গনের মতো শব্দ চোখ ছাড়েনি বুক ছাড়েনি
একলা ছিলুম বিকেলবেলা, বিকেল তবু একা ছিল না
একটা মুখ মনে পড়ে না মনে পড়ে না মনে পড়ে না।
এত মানুষ ঘুমোয় তবু আমার ঘুমে স্বপ্ন নেই
স্বপ্ন না হয় স্মৃতি না হয় লোভ কিংবা প্রতিহিংসা
যেমন ফুল প্রতিশোধের স্পৃহায় আনে বুকের গন্ধ
রমণী তার বুক দেখায়, ভালোবাসায় বুক ভর না
শরীর নাকি শরীর চায়, আমার কিছু মনে পড়ে না
মনে পড়ে না মনে পড়ে না- মেঘলা মতো বিস্মরণ
যেমন পথ মুখ লূকিয়ে ভিখারিণীর কোলে ঘুমোয়।
বৃক্ষ তোমার মুখ দেখাও, দেখি আকাশ তোমার মুখ
এসো আমার গতজন্ম তোমায় চেনা যায় কিনা
কোথাও নেই মুখচ্ছবি এ কী অসম্ভব দৈন্য-
আমার জানলা বন্ধ ছিল উঠেও ছিটকিনি খুলিনি
জানলা ভেঙে ঢোকার বুদ্ধি ঈশ্বরেরও মনে এলো না?
আমায় কেউ মনে রাখেনি, না ঈশ্বর না প্রতিমা…….
২৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:০৮
হিবিজিবি বলেছেন: অনেক গুলো প্রিয় কবিতার সমাবেশ ঘটেছে এই পোস্টে। সুনীলের কবিতা অনেক ভালো লাগে।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:০৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ হিবিজিবি ভাই। ভালো থাকবেন। ঈদ মুবারক।
২৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:২৭
নিশাচর ভবঘুরে বলেছেন: সুনীল মানেই মাদকতাময় কবিতা। প্রিয়তে নিলাম।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:০৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ নিশাচর ভবঘুরে ভাই। ভালো থাকুন। ঈদ মুবারক।
২৭| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:৩৫
কাউসার রুশো বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:০৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ কাউসার ভাই। ভালো থাকবেন। ঈদ মুবারক।
২৮| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৩:৪৪
অনাহূত বলেছেন:
একগুচ্ছ সুনীল ... ।
প্রিয় কবি, প্রিয় লেখক। প্রিয়তেই থাকবেন আজীবন।
কেমন কাটছে সময় খলিল ভাইয়া?
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:১০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সময় বেশ ব্যস্তই কাটছে অনাহূত ভাই। আপনি কেমন আছেন? ভালো থাকুন। ঈদের শুভেচ্ছা থাকলো।
২৯| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:২৫
মেহেরুন বলেছেন: চমৎকার একটা পোস্ট ভাইয়া। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। প্রিয় তে নিলাম। আর ১৬ তম ভালো লাগা রইলো।
ঈদ এর শুভেচ্ছা রইলো আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য।
ভালো থাকবেন।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:১৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। আপনার বাল্যকালের মতোই বর্তমান সময়টা খুব অনুসন্ধিৎসাময় ও মধুর ত্যাঁদড়ামিপূর্ণ হোক ভালো থাকুন। ঈদ মুবারক।
৩০| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:০৪
তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রনে বলেছেন:
চমৎকার একটা পোষ্ট ++++
ভাইয়া আপনাকে অফ টপিকে আমার একটা সবিনয় জিজ্ঞাসা ছিল -- আপনার এই পোষ্টটা
নবীন লেখকলেখিকাদের জন্য :: কীভাবে বই বের করবেন
আমি পড়েছি , এখন আমি যা জানতে চাই তা হচ্ছে--- আপনি যে এইখানে খরচ টা দেখিয়েছেন এইটা কি নীচের সব গুলো ধাপ মিলিয়ে ? নাকি শুধু ছাপানোর খরচ ????
ক। প্রচ্ছদ
খ। কম্পোজ বা টাইপ করা ও ট্রেসিং বের করা -- (এই টা হয়তো আমি
নিজে করার চেষ্টা করবো)
গ। পেস্টিং, প্লেট ও মেকিং
ঘ। কাগজ
ঙ। ছাপা
চ। বই বাঁধাই
মনে করি আমি যদি ৪২ টার মতো কবিতা নিয়ে একটা বই বের করতে যাই - তাহলে সর্বমোট তিন ফর্মার মতো হবে , অপসেট পেপারে ২০০ কপি মতো ছাপলে খরচের পরিমাণ ঠিক কত হতে পারে ??? আর মার্কেটিং এর বিষয় টা , একেবারেই বুঝিনা ---মানে দুইশ’র মধ্যে আমি একশ বই কাউকে দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যাবো –বাকী একশ বই যদি প্রকাশকের স্টলে থাকে ওই বই কত বিক্রি হয়েছে না হয়েছে আমি কি ভাবে জানবো ---জানতে পারলে ভালো হতো
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৫০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপু ধন্যবাদ এ পোস্টে পদার্পণের জন্য।
এবার প্রশ্নোত্তর:
১। ঐ পোস্টে উল্লেখিত খরচে টাইপ করার খরচ ধরা হয় নি। আপনি সবকিছু রেডি করে দিলে ঐ হারে খরচ পড়বে।
২। নিজে টাইপ করবেন ভালো পরিকল্পনা, তবে ট্রেসিং বের করার সময় সতর্ক থাকবেন যেন মিরর প্রিন্ট হয়। মিরর প্রিন্ট হলো অক্ষরগুলো ট্রেসং পেপারে উলটো হয়ে প্রিন্ট হবে। আমাদের অফিসের প্রিন্টারে সচরাচর এ প্রিন্ট অপশন দেখি না। কাজেই ভেবে চিন্তে ট্রেসিং বের করবেন।
৩। ৪২ টা কবিতার জন্য কতো পৃষ্ঠা হবে? ১ কবিতায় ১ কবিতার বেশি দেয়া অনুচিত। আপনার বইটি ৩ ফর্মার হবে, যাতে পৃষ্ঠাসংখ্যা হবে ৪৮। প্রিন্টার্স স্লাইডের জন্য ২ পৃষ্ঠা, উৎসর্গপত্রের জন্য ২ পৃষ্ঠা, সূচিপত্রের জন্য ২ পৃষ্ঠা, কভার পেইজের পরে দেয়া হয় সাদা পাতা কেবল বই ও লেখকের নাম সহ। এভাবে ৬-১০ পৃষ্ঠা চলে যেতে পারে। ৩ ফর্মা সাইজের বইয়ের ২০০ কপি ছাপতে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ পড়তে পারে। সর্বশেষ খরচের পরিমাণ জানতে চাইলে উক্ত পোস্টে যে-কয়েকজন প্রকাশকের নাম দেয়া আছে, আপনি সরাসরি তাঁদের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
৪। মার্কেটিং। অতি গুরুত্বপূর্ণ। তসলিমা নাসরিনের 'ক বকুলি ক' থেকে জানা যায় যে তাঁর প্রথম বইটি বইমেলায় মাত্র ১ কপি বিক্রি হয়েছিল তিনি প্রতিদিন বইমেলায় যেতেন; আগেরদিন স্টলের যে জায়গায় তাঁর বইটি দেখেছিলেন, সেখানে তিনি তাকাতে সাহস পেতেন না, যদি দেখতে পান সেই বইটি ওভাবেই ওখানে পড়ে আছে, তা তাঁকে খুব বেদনা দেবে।
এ ব্যাপারে কিছু ফান করি। নবীন লেখক বই লিখে নিজের টাকায় ছাপবেন। নিজের টাকায় সেই বই কুরিয়ার করে দেশ-বিদেশের বন্ধুদের কাছে পাঠাবেন; তাঁরা যেন বইটি ফেলে না রাখেন সেজন্য তাঁদের জন্য বই পড়ার পারিশ্রমিক বাবদ টাকা পাঠাবেন আর প্রকাশকের বিক্রি করার ব্যাপারটা? তাঁকে মাঝে মধ্যে, ধরুন ৩-৪ মাস পর পর ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে, তাঁর স্টলে এসে কেউ আপনার বইটি নাড়াচাড়া করেন কিনা, করলে তাঁদেরকে 'বিনা মূল্যেই' পড়তে দেবেন
বাংলা বাজার বা আজিজ মার্কেটে এসে তাঁদের সাথে আড্ডা দিন, চা-নাস্তা খাওয়ান, মোগলাই খাওয়ান, ইত্যাদি। আপনি নবীন লেখক তো, কোনো বই বিক্রি হলে প্রকাশক আপনাকে জানাবেনই, বি শিউর। তবে বইয়ের দাম নবীন লেখকরা নিতে আসেন না
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ আমাকে বই বিক্রির টাকা সাধতো, কিন্তু আমার বই বিক্রি হচ্ছে এই খুশিতেই উলটো তাঁদেরকে 'বকশিস' দিতে ইচ্ছে হতো
যাই হোক আপু, এভাবে একদিন দেখবেন আপনার পাঠক বেড়ে গেছে, বই বিক্রি হচ্ছে, প্রকাশক আপনাকে বই বিক্রির টাকাও দিচ্ছেন। তবে ব্যাপারটা সময় সাপেক্ষ, এই আর কী। সময় পেলে দেখুন এক নবীন লেখকের প্রথম বই ছাপা হবার 'সকরুণ' ইতিহাস : খ্যাতির লাগিয়া
বইয়ে যে জিনিসটা এভয়েড করবেন : ১) আপনার বইয়ের ফ্ল্যাপে বিখ্যাত কোনো সাহিত্যিকের মন্তব্য (লেখক মাত্রই জানেন ওটা সচরাচর লেখকের নিজের লেখা, যা ধরনা দিয়ে আদায় করতে হয়) ২) বিস্তারিত জীবন বৃত্তান্ত ৩) অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে আপনার কৃতিত্ব। আপনার নিজের একটা ছবি, জন্মতারিখ/সাল, বাবা-মায়ের নাম, জন্মস্থান, নিজ পেশা- ২/৩ লাইনে লিখে শেষ করাই সর্বোত্তম। বইটিকে বইটির নিজ গুণে দাঁড়িয়ে উঠতে দিন, আর ওটাই আপনার নিজস্ব কৃতিত্ব।
বইয়ের বানানের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া আমার কাছে অতি জরুরি মনে হয়।
আর কোনো কিছু আপু? বইয়ের জন্য শুভ কামনা। ভালো থাকুন আপু।
৩১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪২
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ পোষ্টটির জন্য
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ শুকনো পাতা।
৩২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:০৬
রঙ তুলি ক্যানভাস বলেছেন: এত সুন্দর একটা পোস্ট প্রিয়তে না নিয়ে উপায় নেই,তাই সরাসরি প্রিয়তে।
হাতেগোনা কয়েকটা বাদে অধিকাংশই পড়া আছে,ভাল লাগল কবিতার সাথে আরো কিছু ব্যাখ্যাগুলো।
অ.ট.আমিতো আপনার অনেক ছোট,নাম ধরে তুমি করে বললে সমস্যা নেইতো ভাইয়া।
"সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে
মানুষ দেখে না
সে খোঁজে ভ্রমর বিংবা
দিগন্তের মেঘের সংসার
আবার বিরক্ত হয়
কতকাল দেখে না আকাশ
কতকাল নদী বা ঝরনায় আর
দেখে না নিজের মুখ
আবর্জনা, আসবাবে বন্দী হয়ে যায়..." এরকম আরো কত কত যে প্রিয় লাইন আছে!!
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: রঙতুলি আপু, নাম ধরে ডাকতে অসুবিধা হবে কেন? কোনো অসুবিধাই নেই। নাম ধরে ডাকলাম তো- রঙতুলি ক্যানভাস আপু রঙতুলি আপু
তুলি ক্যানভাস আপু
ক্যানভাস আপু
না থাকু, তুলি আপু, কেমন বড় আপু!
'কেউ কথা রাখে নি' শুনেছিলাম ১৯৮৪ সনে কলেজ ফার্স্ট ইয়ারে এক বাংলা শিক্ষকের মুখে (নিজের ঢাকা কলেজ বন্ধ দিয়ে কিছুদিন স্থানীয় জয়পাড়া কলেজে ক্লাস করেছিলাম)। স্যারের মুখে কবিতা শুনে মেয়েদের চেয়ে আমিসহ আমরা কয়েকজন ছেলে বেশি পাগল হয়ে গেলাম। এ দেখি হুবহু আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কথা বলে। এরপর আমার জীবনেও টারময়েল নেমে আসে। 'কেউ কথা রাখে নি' আমার ভেতর থেকে নতুন সংস্করণে বের হয়ে আসে;
*****
অন্বেষা
'তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখে নি।'..........সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
একদা কৈশোরে
বাবার হাত ধরে পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিলাম পণ্ডিতজির কাছে,
যিনি তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য আর গাম্ভীর্য দিয়ে
গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন আমাদের দুঃখী পিতার সুখোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
জীর্ণ কুঁড়েঘরে মলিন খেজুর পাতার পাটিতে শুয়ে শুয়ে
আমার পিতা স্বপ্ন দেখতেন সপ্ততলা অট্টালিকার।
পাঠশালায় পড়া শেষ হলো,
কৈশোর পেরিয়ে গেছে কবে,
স্কুল, কলেজ, অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারও পেরিয়ে এলাম;
আমাদের কুঁড়েঘর আজও দালান হয় নি,
এখনো সেখানে উঁকি দেয় দ্বিতীয়ার চাঁদ।
তবু সেই শীর্ণদেহী বৃদ্ধ পিতার স্বপ্ন এখনো ভাঙ্গে নি,
কোটরগত দুটি চোখে আশ্চর্য উজ্জ্বলতা তাঁর।
একদিন সন্ধ্যায় কোত্থেকে
ছাদের ওপর দিয়ে উড়ে এলো ফুটফুটে হলুদ পাখি,
তারপর একেবারে
আরো নিচে নেমে এসে আমার মায়ের মাথাখানি ছুঁয়ে গেলো।
কী আশ্চর্য দেখুন, অবুঝ বালিকার মতো
আমার সরলা জননী পাখিটার দিকে দু হাত বাড়িয়ে বললেন :
আমাকে ঐ হলুদ পাখিটা এনে দাও।
আমি আকুল হয়ে বন থেকে বনান্তর খুঁজে ফিরি হলুদ পাখির জন্য।
একদিন হয়তো পাখি ধরা দেবে,
আমার মা আর কোনোদিন সেই পাখিটাকে চাইবেন না, কেননা
এখন তিনি নিজেই হলুদ পাখিটার মতো কোথায় হারিয়ে গেছেন।
আধডোবা চাঁদের মতন মলিন মুখখানি তুলে একদিন
প্রমীলা বলেছিল, তোমার ঘরে আমাকে তুলবে কবে?
অনেক সোহাগে
মাথায় বুলিয়ে হাত বলেছিলাম, যেদিন বসন্তে
শজনে শাখায় ডাকবে সবুজ টিয়ে পাখি, তোমাকে বঁধু সেদিন ঘরে নেবো।
তারপর অনেক বসন্ত চলে গেছে, প্রমীলাকে ঘরে তোলা হয় নি।
নিগূঢ় অন্তর্চোখে আগামীর ছবি ভাসে :
অনিকেতের এ সংসারে এলো যেই অবাঞ্ছিতা নারী
অরসিকা হৃদয়হীনার মতো সে শুধু পৃথিবীর জৈবিক সুখই খোঁজে।
* ১৯৮৯
৩৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:১৯
রাতুল_শাহ বলেছেন: প্রিয়তে রাখতে চাই,
আপনার অনুমতির দরকার নাই।
রাগ করলে করেন রাগ,
রাতুল তুই এইবার ভাগ।
যাহোক আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
অনুমতি দিলাম না
আপনার 'প্রিয়'তে নিয়ে নিন
কপিরাইট ভঙ্গের দায়ে
আপনাকে পুরস্কৃত করবো কোনো একদিন
শুভ কামনা রাতুল ভাই।
৩৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৩৬
রোমেন রুমি বলেছেন: ++++++++++
প্রিয় তে নিলাম।
ভালো থাকবেন।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ রোমেন রুমি ভাই। ভালো থাকুন।
৩৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০৩
মুনসী১৬১২ বলেছেন: ঈদ মুবারক
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ঈদ মুবারক মুনসী ভাই। ভালো থাকুন।
৩৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৬
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: পারমিশন না নিয়ে আপনার লেখা থেকে কবিতাটি নিয়ে আমি রেজা ঘটক এর লেখা ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর নেই ।। ...তে যে কমেন্ট করেছি সেটা এখানে তুলে দিলাম...
"নীরার জন্য কবিতার ভূমিকা
এই কবিতার জন্য আর কেউ নেই, শুধু তুমি ,নীরা
এ-কবিতা মধ্যরাতে তোমার নিভৃত মুখ লক্ষ্য করে
ঘুমের ভেতরে তুমি আচমকা জেগে উঠে টিপয়ের
জল খেতে গিয়ে জিভ কামড়ে এক মুহহূর্ত ভাববে
কে তোমার কথা মনে করছে এত রাত্রে- তখন আমার
এই কবিতার প্রতিটি লাইন শব্দ অক্ষর কমা ড্যাস রেফ্
ও রয়ের ফুটকি সমেত ছুটে যাচ্ছে তোমার দিকে, তোমার
অধোঘুমন্ত নরম মুখের চারপাশে এলোমেলো চুলে ও
বিছানায় আমার নিশ্বাসের মতো নিঃশব্দ এই শব্দগুলি
এই কবিতার প্রত্যেকটি অক্ষর গুণিনের বানের মতো শুধু
তোমার জন্য, এরা শুধু তোমাকে বিদ্ধ করতে জানে
তুমি ভয় পেয়ো না, তুমি ঘুমোও, আমি বহু দূরে আছি
আমার ভয়ঙ্কর হাত তোমাকে ছোঁবে না, এই মধ্যরাত্রে
আমার অসম্ভব যেগে ওঠা, উষ্ণতা, তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও
চাপা আর্তরব তোমাকে ভয় দেখাবে না- আমার সম্পূর্ণ আবেগ
শুধু মোমবাতির আলোর মতো ভদ্র হিম, শব্দ ও অক্ষরের কবিতায়
তোমার শিয়রের কাছে যাবে- এরা তোমাকে চুম্বন করলে
তুমি টের পাবে না, ওরা তোমার সঙ্গে সারারাত শুয়ে থাকবে
এক বিছানায়- তুমি জেগে উঠবে না, সকালবেলা তোমার পায়ের
কাছে মরা প্রজাপতির মতো এরা লুটোবে। এদের আত্মা মিশে
থাকবে তোমার শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে, চিরজীবনের মতো
বহুদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলে ঝর্নার জলের মতো
হেসে উঠবে, কিছুই না জেনে। নীরা, আমি তোমার অমন
সুন্দর মুখে আঁকা টিপের দিকে চেয়ে থাকবো। আমি অন্য কথা
বলার সময় তোমার প্রস্ফুটিত মুখখানি আদর করবো মনে মনে
ঘরভর্তি লোকের মধ্যেও আমি তোমার দিকে নিজস্ব চোখে তাকাবো।
তুমি জানতে পারবে না- তোমার সম্পূর্ণ শরীরে মিশে আছে
একটি অতি ব্যক্তিগত কবিতার প্রতিটি শব্দের আত্মা।"
এই কবিতা দিয়েই আমার প্রথম পরিচয় প্রখ্যাত সাহিত্যিক নীরা এবং আমাদের সবার প্রেমিক,আমাদের ফরিদপুরের গর্ব, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে।
কবিতাটি নিয়েছি সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই লেখা থেকে।
যিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা অনেকগুলো প্রিয় কবিতা সংঘবদ্ধ করেছেন।
যে লেখা আমার মতো অনেকেই রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
কষ্ট আছে শান্তনা আছে...
নীরার প্রেমিক কখনো মরে না...
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনাকে এই লিংকের ২৫, ২৭ ও ২৮ নং কমেন্টে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি
***
তুমি
কবিতার সমস্ত শরীর জুড়ে এখন শুধু তুমি, একা
সতত বিরাজমান। কখনো ভুল করেও তোমাকে ভুলে যেতে পারি নি
বিগত বিধ্বস্ত দিনগুলোতে, এমনকি স্বপ্নের ভেতরও
কেবল তোমারই সরব আনাগোনা। আমার অন্য
কোনো ভাবনা, সংসারের খুঁটিনাটি, সুখ-দুঃখ, বিশ্বচিন্তা মাথায় ঢোকে না
এখন কবিতার সর্বাঙ্গ জুড়ে- প্রতিটা অক্ষরের, শব্দের, পঙ্ক্তির ভেতরে
তুমি গেঁথে আছো, অথচ তা তুমি জানো না, কখনো জানবে না। ধরো,
দৈবাৎ জানলেই, সেদিন মুগ্ধ আবেগে বলে উঠবে,
'মাগো, আমাকে নিয়ে এত্তো কবিতা!'
আমি জানি, এসব বিস্ময়াবেগ আর অনুভূতি কিছুই তোমাকে ছোঁবে না
কখনোই, একান্ত সহৃদয় হলে কবির নামটাতে
তোমার দৃষ্টিপাত হবে, তারপর অনিচ্ছায় দু চার পৃষ্ঠা উলটাবে, হয়তোবা পড়লেও
দু-এক ছত্র পড়তে পারো 'তোমার' কবিতা, তোমার
যুগল অধরের ফাঁক গলে একরত্তি অবজ্ঞার হাসি ভেসে উঠবে,
মুখে ফুটবে অস্ফুট স্বর -'বড় স্বপ্ন-বিলাসী বটে!'
একদিন গভীর রাতে তোমার ঘুম ভাঙাবো
একদিন গভীর রাতে তোমার ঘুম ভাঙাবো
তখন তুমি গভীর ঘুমের ভেতর গভীরতম স্বপ্নে আচ্ছন্ন।
তোমার টেলিফোনটি নিশুতি রাতের করুণ কান্নার মতো
অনবরত বাজতে থাকবে, তখন তুমি গভীর সুখে বিভোর, হয়তো
সিঁথানের কাছে অতি যত্নে রেখে দেয়া সেলফোনটি 'আমার সোনার বাংলা'র সুরে
বাজতেই থাকবে, বাজতেই থাকবে- তুমি জাগবে না, তখন তুমি
স্বপ্নের ভেতরে নিমগ্ন। নিদেন পক্ষে
তোমার মোবাইলে একটি বার্তা আমি পাঠাবো, টিং, টিং... পেলব শব্দে
ওটি দু বার তোমাকে ডাকবে... আহা, এতো অনুচ্চ শব্দে তোমার ঘুম ভাঙবে না,
তখন তুমি গভীর স্বপ্নের ভেতর গভীরতম সুখে আচ্ছন্ন।
একদিন গভীর রাতে তোমার ঘুম ভাঙাবো- প্রতিদিন প্রতিটি ক্ষণ
এরূপ গভীর ইচ্ছেয় গভীর রাত্রি জাগি, ল্যান্ডফোন বাজলেই
ত্বরিত রিসিভার তুলি- তুমি নও,
সেলফোনে চিকন রিংটোন বাজে- তুমি নও, অন্য কেউ-
নতুন বার্তা আসার টিং... আওয়াজ পেয়ে খুব দ্রুত খুলে দেখি
বেরসিক মোবাইল সেন্টারের নীরস অটোমেসেজ -শীঘ্রই বিল পরিশোধ করুন...
একদিন গভীর রাতে তোমার ঘুম ভাঙাবো - ইচ্ছে হলেই মনে পড়ে যায়-
মনে পড়ে যায় তোমাকে নিছক ফোন করবার জন্য
আজও কোনো আমন্ত্রণই পাই নি। একদিন গভীর রাতে তাই তোমার ঘুম ভাঙানো
কখনোই হবে না।
***
উপরের কবিতা দুটি অতি প্রভাবিত কবিতা, যা যমজ অনুভূতি ও আবেগ থেকে লেখা হয়েছিল। 'তুমি' ও 'একদিন গভীর রাতে তোমার ঘুম ভাঙাবো' যা থেকে অঙ্কুরিত হয়েছিল, সেই কবিতাটির নাম 'নীরার জন্য কবিতার ভূমিকা'। এটি আমার অনেক ভালো লাগা একটা কবিতা।
কবিতাটি রেজা ঘটকের পোস্টে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
৩৭| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৩
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ।
লিঙ্ক দেয়া থাকলে আমার সুবিধা হয়...
ব্লগে লিঙ্ক, হাইপার লিঙ্ক, প্রিয়তে নেয়া বিষয়গুলোতে বড্ড আনাড়ি মনে হয় নিজেকে...
২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
শরবিদ্ধ চোখে অতৃপ্ত জ্বর, আর জ্বরঘুমে দিবানিশি ফোয়ারাফুল ফোটে
কখনো ঘোর- আসমানের জাহাজ হয়ে আহ্নিক গতিকে
ছুঁতে যাও মঙ্গলের টানে
এ বুঝি অঘটনঘটনসম্ভবকাল! হয়ে গেছে, অথবা হবেই!
এভাবেই কেটে গেলো এগার বছর
যথেচ্ছ সঙ্গম দিলে, সুনির্মল অরগাজ্ম শেষে সকৃতজ্ঞ চোখ;
এগার বছর... আজও তুমি দিলে না প্রেম
লেনাদেনা বুঝি না। অভিমান বুঝি না আমি। আমি শুধু ডানপিটে মনকে এবার
খোয়াড়ে রাখবো সমাগত কাল থেকে ইতিহাস লিখবো বলে
সহসাই
তুমি সাধবে। ওসব উচ্ছিষ্টে আমার তখন বড্ড বিবমিষা। আমি বদলাতে জানি,
আর আমাকে ঢের চিনি। তুমি কিন্তু চেনো না তোমাকে।
* পরিবর্তন, ৪ নভেম্বর ২০০৯
৩৮| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৬
তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রনে বলেছেন:
প্রথমে অনেক ধন্যবাদ এত বড় জবাব টা কষ্ট করে দেওয়ার জন্য ---ট্রেসিং এর কাজটা
যতটা সহজ ভেবেছিলাম ততটা না ---খরচের ব্যাপার টা ঠিকই আছে ---তবে
বাংলা বাজার বা আজিজ মার্কেটে এসে তাঁদের সাথে আড্ডা দিন,---হয়তো
জীবনে ও হবে না ---আমি দেশের বাইরে আছি --৪ বছরে ও একবার যাওয়া হয়না ।
আর মার্কেটিং এর ব্যাপারে বলবো ---একটা কাজ ই আমার দ্ধারা সম্ভব তা হচ্ছে
৫০ টার মতো বই স্টলে রেখে বাকী গুলো বিনা মুল্যে আমার কাছের ফ্রেন্ডদের কে পড়তে
দিয়ে দেওয়া ---
আপনার দেওয়া লিঙ্ক টা পড়লাম ভাইয়া ----এইটা তো বিরাট কর্ম যজ্ঞ
আমি বড়জোর যা করতে পারতাম ---খরচ আর পাণ্ডুলিপিটা আমার ভাইকে দিয়ে
প্রকাশকের কাছে পৌঁছে দেওয়া ---
আবার ও অনেক অনেক ধন্যবাদ ---
২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ১। আড্ডা অবশ্য ডিপেন্ড করে নিজের অবসর, ইত্যাদির উপর। আমি যখন ঢাকায় থাকতাম, বাংলা বাজারে প্রচুর সময় কাটিয়েছি।
২। মার্কেটিংয়ের জন্য এটাই উত্তম হয়
৩। আমার লিংকটা - ওটা ৬ ফর্মা সাইজের একটা বইয়ের ব্লগ ভার্সন
৪। প্রকাশকের কাছে পৌঁছে দেয়া - আজকাল ফেইসবুক, ব্লগ, মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ কতো সহজ হয়ে গেছে। আমিও বিদেশে বসে সবুজ অঙ্গন লিটল ম্যাগের দুটো সংখ্যা বের করেছিলাম
ভালো থাকুন আপু।
৩৯| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৯
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: তুমি কবি তুমি সব পারো কালে অকালে
কলমে আর কাগজের পাতায়; তুমি বেঁচে থাকো
ইতিহাস লেখো
আমি মানুষ; বড্ড অক্ষম কিছুই পারি না আমি
ইতিহাসের পাতার কি কালিতে লেখা হবে
এ কথা নিয়েই আমার বেঁচে থাকা
আর আমার মৃত্যু ...
আগের কবিতাগুলো আর এটাও খুব হৃদয় স্পর্শ করা
গুছিয়ে বলা হয়না কখনই ...
২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমিও গুছিয়ে উত্তর দিতে পারি কোথায়?
পাখিপুরুষরা পুরুষপাখির মতোই কালে কালে পাড়ি দেয় সমুদ্রের আকাশ
পুরুষপাখিরা ডানা ভেঙে উড়াল থেকে ভূমিস্মাৎ হয়েছে শোনা যায় না
পাখিপুরুষরাও মাঝে মাঝে শৌর্য্যবীর্যে নারীদের ছাড়িয়ে যায়; তথাপি
ডালপালাহাড়গোড় ভেঙে পানিগর্ভে মজ্জিত হওয়াই তাদের নিয়তি
* পুরুষ ও পাখি, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বিকাল ৩:৫১
৪০| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৩৬
শিপন মোল্লা বলেছেন: বাংলাদেশীদের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি যে কত উন্নত তা প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক সুনীলের মৃত্যুর পর ফেসবুক আর ব্লগারদের সুনীল সংশ্লিষ্ট স্ট্যাটাসে নিজেদের জাহির করার প্রচেস্টা দেখে আবারো উপলব্ধি করলাম। কিন্ত উপার বাংলা থেকে প্রতিদানে আমরা শুধু ত্রিস্কারই পেয়ে থাকি। খলিল ভাই আপনাকে ধন্যবাদ।
২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার কথার সাথে পুরোপুরি একমত। অন্য কেউ অধম হলেও উত্তম হওয়াই আমার ব্রত - এটাই মানবীয়। ভালো থাকুন আবুশিথি ভাই।
৪১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:০২
নস্টালজিক বলেছেন: সুনীলের কবিতা সমগ্র কিনসিলাম, আমার বোহেমিয়ান সময়ে।
বুঁদ হয়ে ছিলাম সুনীল শব্দচয়নে! একটা মানুষ এত সুন্দর গদ্য লিখতে পারে আর তার হাত ধরেই এত অসাধারণ কবিতা নেমে আসে- বিস্ময়!
প্রিয় সুনীল আমার কাছে বিস্ময়ের আর এক নাম! আনন্দ বিস্ময়!
পোস্ট-টা চমৎকার!
শুভেচ্ছা!
২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
প্রিয় সুনীল আমার কাছে বিস্ময়ের আর এক নাম! আনন্দ বিস্ময়! আমার কাছেও।
ধন্যবাদ নস্টালজিক ভাই। ভালো থাকুন। শুভ কামনা।
৪২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ওরা ৩ ভাইবোন। সবার নিচে পাইলট ও ঐশী। এরপর লাবিব উপরের দিকে বেড়ে উঠছে
২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ওদের ৩ ভাইবোনের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা থাকলো
৪৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৫৮
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা সোনামনিরা...
অনেক অনেক আদর ...
love you all...
২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৩৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সবাইকে আদর পৌঁছে দেয়া হলো। ধন্যবাদ। ঈদ মুবারক।
৪৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০৪
নীলঞ্জন বলেছেন: অতৃপ্ত আত্মারা এভাবেই চলে যায় নিভৃতে নিরালায়।
সুনীলের চনমনে ঝরঝরে কবিতা জীবনানন্দের পরে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিলো বাংলা সাহিত্যে। আমার মতে - ফ্রি ভার্স এ লেখা অনেক বেশী সহজ। তবে, এসব গ্রামার আমার ভালো লাগে না খলিল ভাই। ইউনিভার্সিটিতে আমি বরাবরই এর বিরোধীতা করেছি। তিরস্কৃত হয়েছি বেশ। আবার বলিষ্ঠ বিরোধীতা উপস্থাপনের জন্য দু'জন - অসীম কুমার দাস আর আব্দুল্লাহ আল মামুন (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজীর অধ্যাপকদ্বয়) এর কাছে নন্দিত ও হয়েছি।
আমার কাছে মেসেজ সম্বলিত সুন্দর প্রকাশ ও তার ভঙ্গী অনেক বেশী আদৃত। গ্রামার নিয়ে ভাবতে গিয়ে মানুষের ভাব বাধাগ্রস্ত হয়; সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে শব্দ ভান্ডার। সাহিত্যে গ্রামার থাকাই উচিত না। কবিতার জন্ম আগে; গ্রামার তাকে ছাঁচে ধরার ফেলার একটা উপাদান মাত্র যেটা নিয়ে যত কম ভাবা যায় ততই মঙ্গল।
জীবনের সীমাবদ্ধতা এভাবেই মানুষকে তার একান্ত বলয়ে আবৃত করে ফেলে। কবি খুঁজে নিক তাঁর আপন নীলয় ইচ্ছানুযায়ী।
শুভ কামনা ও ঈদ শুভেচ্ছা। ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হোক প্রতিটি মূহুর্ত।
২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: গ্রামার নতুন কিছু না; গ্রামার হলো সেই ধারা বা নীতি যে ধারায় পূর্বসূরিরা লিখে ব্যুৎপত্তি লাভ করেছেন। পূর্বসূরিদের লেখাগুলোকে বিশ্লেষণ করলে তাতে কিছু নিয়ম-নীতি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে- সেটাই হলো গ্রামার, বা কবিতার গ্রামার (যদি আদৌ এ নামে কিছু থেকে থাকে)। ভাষার গ্রামারও এভাবেই নির্ণিত হয়ে থাকে- যুগ যুগ ধরে কথিত, প্রচলিত, লিখিত ভাষার রূপটাকে বিশ্লেষণ করে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য রূপটাই যে-কোনো ভাষার গ্রামার। কবিতার ক্ষেত্রেও তাই। প্রত্যেক কবিই তাঁর প্রতিটা কবিতায় নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করেন, নিয়ম ভাঙার মধ্য দিয়েই তিনি নতুন আরেকটা নিয়মের জন্ম দিয়ে থাকেন। তাঁর এই নিয়ম ভাঙার প্রণোদনা, আমার মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, কবির অজ্ঞাতসারে ঘটে থাকে। যিনি জোর করে, বা বলে-কয়ে এ কাজটা করে থাকেন, তিনি সবচেয়ে আর্টিফিশিয়াল বস্তুর জন্ম দিয়ে থাকেন, আমার মতে। একজন কবি তাঁর প্রথম কবিতার সাথে সদ্যলিখিত কবিতার তুলনা করলে প্রায় ক্ষেত্রেই তিনি তাঁর প্রথমতম কবিতার উপর বিরক্ত হয়ে উঠতে পারেন, লজ্জিত বা ক্ষুব্ধ হতে পারেন, কেননা, দেখা যায় যে তাঁর সেই প্রথম দিককার কবিতাগুলোর মান তাঁর নিজের কাছেই বেজায় অপরিণত বা সাদাসিধে মনে হচ্ছে। কারণ কী? তাঁর সুদীর্ঘ কবিতার পথে এতো চড়াই-উৎরাই পার হয়ে এতো ভাঙা-গড়ার খেলা খেলেছেন যে তাঁর সদ্যপ্রসূত লেখাটা তাঁর নিজের নয়, এমন ভ্রমও ঘটে যেতে পারে, উলটোভাবে, তাঁর প্রথম দিকের কবিতাগুলো অন্যের কবিতা বলে ভ্রম হওয়া সম্ভব।
এই গ্রামার যে মানতে হবে, এরকম কোনো নিয়ম কাউকে বেঁধে দেয়া হয় নি। কিন্তু তবু কেন আমাদেরকে কিছু সুগ্রন্থিত নিয়ম রপ্ত করতে হয়? কারণ, নজরুল কোন্ রীতিতে লিখেছেন, বুদ্ধদেব বসু, মোহিতলাল মজুমদার, জীবনানন্দ, সুকান্ত, জসীমউদ্দীন কোন্ ধারায় লিখতেন তা যদি আমি না-ই জানি তাহলে তাঁদের অনুসৃত ধারা থেকে বের হয়ে আসবার পথটাই আমরা জানবো না। মোটের উপর, কবিতা নিজেই একটা গ্রামার। এই গ্রামার থেকে তো অদ্যাবধি কোনো পণ্ডিত বের হয়ে আসতে পারেন নি! কবিতার ধারায় আমরা যদি কোনো পরিবর্তন দেখে থাকি, তাতে কবিতার প্যাটার্নের চেয়ে ভাষার পরিবর্তনটাই মুখ্য। নিয়ম ভাঙার বুলি আওড়াতে আওড়াতে কেউ যদি রবীন্দ্রনাথের 'কাবুলিওয়ালা', 'ছুটি', 'পোস্টমাস্টার'-কে 'কবিতা' বলে অভিহিত করেন, আর জসীমউদ্দীনের 'সোজন বাদিয়ার ঘাট', 'নকশী কাঁথার মাঠ', ইত্যাদিকে ছোটোগল্প বা উপন্যাস উপাধি দিয়ে তিনি এমত ধারায় গল্পকবিতা লিখে নিয়ম ভাঙার বাহাদুরি দেখান, সেটা খুব হাস্যকর হবে। তখন তাঁকে 'পণ্ডিত' উপাধি দেয়া ছাড়া গতি থাকবে না। কবিতা আদিতে কবিতাই ছিল।
কবিতা লিখতে চাইলে কবিতার প্রতিষ্ঠিত ধারায়ই শুরু করতে হবে। প্রতিষ্ঠিত ধারাটি নিজের আয়ত্তে চলে এলে নিজের সহজাত প্রতিভা থেকেই নিয়ম ভাঙার তাগিত অনুভূত হবে।
সর্বোপরি, নিয়ম ভাঙার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। কৃতিত্ব হলো একটা কবিতা সৃষ্টি করার মধ্যে। কবিতা কী বস্তু তা যদি আমি বুঝি, তবেই আমি একটা কবিতা সৃষ্টি করতে পারবো। আমার সেই কবিতাটি সকল নিয়মের মধ্যে থেকেও হয়ে উঠবে অনন্য, যুগপৎ, সকল নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেটি হয়ে উঠতে পারে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অপূর্ব সৃষ্টি।
'ফ্রি ভার্স' হলো এক প্রকার ছন্দের নাম, অন্য কিছু না। অক্ষরবৃত্ত, স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত বা এদের সংমিশ্রণের প্রভাব থেকে ছুটে আসার প্রবণতা থেকে ধীরে ধীরে 'ফ্রি ভার্স' সৃষ্টি হয়েছে। এটা কিন্তু গদ্য না (ভার্স অর্থ কবিতা, বা ছড়া, বা কবিতার লাইন)। অবয়বে গদ্যের মতো, গদ্যের সাথে সাদৃশ্য এটুকুই। উন্মুক্ত কবিতা, বা মুক্ত কবিতা, বা মুক্তচ্ছন্দ। কবিতা লেখার ক্ষেত্রে 'ফ্রি ভার্স'-এর চেয়ে সহজতর ও অধিক উপযুক্ত কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। এখানে আপনার উন্মুক্ত ভাবনাকে উন্মুক্তভাবেই প্রকাশ করার স্বাধীনতা পাচ্ছেন।
ধন্যবাদ নীলঞ্জন ভাই। আশা করি বোঝাতে পেরেছি। ভালো থাকুন। ঈদের শুভেচ্ছা থাকলো।
৪৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩১
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
অনেক সুন্দর পোষ্ট। সবগুলো কবিতা পড়ব আস্তে আস্তে। প্রিয়তে নিলাম।
ঈদ মুবারাক, আপনাকে ও আপনার পরিবারকে।
২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:২৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। প্রবাসে আপনার ঈদ সবাই নিয়ে খুব আনন্দময় হোক, এই প্রার্থনা থাকলো।
৪৬| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫৮
রঙ তুলি ক্যানভাস বলেছেন: ঈদ মোবারক ধুলো ভাইয়া
২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:২৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: চমৎকার একটা গ্রিটিং কার্ডের জন্য অনেক ধন্যবাদ রঙতুলি আপু। ভালো থাকুন। প্রবাসে ঈদ উদযাপন ভালো হোক, এই দোয়া থাকলো।
৪৭| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:২১
শাপলা নেফারতিথী বলেছেন: এত বেশি ভাল লাগল যে কিছু বলার আগেই প্রিয়তে নিয়ে নিলাম...
২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন শাপলা নেফারতিথী আপু (নাম থেকে অনুমান করে আপু সম্বোধন করলাম। ভুল হলে আশা করে ভুল শোধরে দিবেন)। ভালো থাকুন। ঈদের শুভেচ্ছা থাকলো।
৪৮| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:২৬
তিথির অনুভূতি বলেছেন: ভালো লাগা রেখে গেলাম
ঈদ মোবারক!!
২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৩৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। আপনার প্রতিও ঈদের শুভেচ্ছা থাকলো।
৪৯| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:২১
নীলঞ্জন বলেছেন: নানা মুনির নানা মত থাকতেই পারে খলিল ভাই।
অবশ্যই গ্রামারের জন্ম আগে হয়নি। পরে হয়েছে। গবেষণা করার ক্ষেত্রে, স্টাডি করার ক্ষেত্রে গ্রামারের প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি। তবে, সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে স্বভাবজাতদের গ্রামারের প্রয়োজন হয় না। প্রথমে সৃষ্টি হয়; অত:পর তার নামাকরণ হয়।
যাক, এ ব্যাপারে খুব বেশী কিছু আর বলতে চাই না। আপনি যা বলেছেন, তা আমি অনেক আগে থেকেই জানি খলিল ভাই। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বা গণিতের ক্ষেত্রে সূত্র মানতে সবাই বাধ্য; কিন্তু সাহিত্যের ক্ষেত্রে এগুলো মানতে খুব একটা ভালো লাগে না। কেন জানি, কিছু মানুষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পাণ্ডিত্য ফলানোর জন্য এগুলো বড় বেশী মূল্যায়ণ করে, ধারণ করে ও প্রচার করে।
আমার কাছে সাহিত্য হলো এমন একটা ভাবাবেগের বহি:প্রকাশ যা বাস্তবের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে কোন বিষয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের ছায়াছবির আবহ তৈরী করে অনেকের ভাবাবেগের আশ্রয় হয়ে। এখানে শব্দ ও যতি চিহ্ণের প্রভাব অনেক বেশী কাজ করে। মানুষের মনে যে আবহ তৈরী করে তার পুরো কৃতিত্ব শব্দ ও বাক্যের। আমার তাই মনে হয়। আগে যাঁরা যা কিছু তৈরী করে গেছেন তা যেমন অবজ্ঞা করার কোন মানে হয় না; তেমনি তা নিত্যতার মাপকাঠিতে মেপে মেনে চলতে হবে, তারও কোন মানে হয় না।
যার কাছে যেটা যেমন ভালো লাগে, সেটার বন্দনা সে করবেই - এটাই স্বাভাবিক।
এগুলো নিয়ে অযথা আমরা কথা বলছি। কোন মানে হয় না। আমার সবময়ই মনে হয়েছে - মেসেজ সম্বলিত সুন্দর প্রকাশ ও তার ভঙ্গী সাহিত্যে অনেক বেশী আদৃত। গ্রামার নিয়ে ভাবতে গিয়ে মানুষের ভাব বাধাগ্রস্ত হয়; সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে শব্দ ভান্ডার।
আবারো শুভ ঈদ। ত্যাগই হোক ঈদের সত্যিকারের তাৎপর্য।
২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:০৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: নীলঞ্জন ভাই, বিশদ লিখবার জন্য ধন্যবাদ। তবে আপনি যা বলেছেন তা কিন্তু আমার কথারই প্রতিধ্বনি, আমি যা বলেছি তা থেকে নতুন কিছু নয়। গ্রামারের জন্ম যে আগে হয় নি সেটি আমার উত্তরের শুরুতে যা বলেছি তা থেকেই বোঝা যায়, আর কবিতার গ্রামার বলতে আদৌ কিছু আছে কিনা তা নিয়ে একটা সন্দেহের কথাও বলেছি। সময় পেলে আমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে আবার পড়ে দেখার অনুরোধ থাকলো।
কবিতার নিয়ম নীতি ভাঙা 'ল অব দ্য ল্যান্ড' বা সিম্পল 'ট্র্যাফিক আইন' ভঙ্গ করার মতো নয় যে এ আইন ভাঙলে কবিকে সাজা পেতে হবে। একজন কবি তাঁর সৃজনশীলতার তাগিদেই এ নিয়ম ভঙ্গ করে থাকেন। আর এ নিয়মগুলো কী? আমার উত্তরের ১ম লাইনটা আবারও দেখুন
কেউ যদি বলেন, আমি নিয়ম ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ নতুন নিয়মের একটা কবিতা লিখেছি, সেই কবিতা বিশ্লেষণ করে দেখানো সম্ভব যে তিনি নতুন কিছুই সৃষ্টি করতে পারেন নি, সবই শিকেয় তুলে রাখা পুরোনো ঘি নিয়ম ভাঙার ইচ্ছেটাই মুখ্য নয়। তাহলে মুখ্য কী? আমার আগের রিপ্লাইয়ে নিচ থেকে উপরের দিকে ৩ নং প্যারায় তা বলেছি
কবিতা লিখবার কালে কেউ গ্রামার নিয়ে ভাবেন এমনটা ভাবা ঠিক না। অন্তত আমি কোনোদিন এসব ভাবি নি। কবিতা, বা গদ্য কোনোটার ব্যাপারেই না। তাহলে আমি কবিতা বা গল্প লিখলাম কীভাবে? এটা দীর্ঘ দিনের পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে লিখা সম্ভব হয়েছে। যেসব বাউল গান বাঁধেন ও গেয়ে থাকেন, তাঁরা কি জানেন কাকে পয়ার, বা কাকে স্বরবৃত্ত বলে? নিশ্চয়ই জানেন না। অথচ তাঁদের গীতিকবিতাগুলো বিশ্লেষণ করলে চিরায়ত কবিতার খাঁজে তা মিলে যায়। এটা কীভাবে সম্ভব? পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই জন্মগত ভাবে কবি। আবেগ প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো কবিতা, এজন্য একজন অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষও সময়ে সময়ে কবিতার কলি বলে ওঠেন। কবিতা আর ছন্দ হলো একে অপরের প্রাণ। আমরা যে ৩ প্রকারের ছন্দের কথা জানি, এটা জাস্ট আপনা-আপনিই তৈরি হয় নি। এর সাথে কথা বলার স্টাইল, একসঙ্গে মানুষ কতোখানি কথা বলতে পারে, কতোটুকু কথার জন্য কতোটুকু সময়ের প্রয়োজন, ইত্যাদি ফ্যাক্টরগুলো জড়িত। মানুষ সচরাচর প্রতি ৩/৪ সেকেন্ডে শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়ে, এর সাথে বিভিন্ন যতিচিহ্নের সংযোগ। মানুষ এখন দম বন্ধ করে ৪০-৫০ সেকেন্ড রাখতে পারে। যদি পৃথিবীর জৈবিক ও অন্যান্য পরিবর্তনের ফলে এ সময়টা বেড়ে ৪০০-৫০০ সেকেন্ড হয়ে যায়, তখন বর্তমানের সব ধরনের ছন্দই অচল হয়ে যেতে পারে। আবার এ সময় কমে যদি ৫-১০ মিনিটে আসে, তখনও একই অবস্থা ঘটে যেতে পারে। মানুষের এই শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত কারণে সৃষ্ট ছন্দোবদ্ধ কথাগুলো আদিকাল থেকে এ পর্যন্ত যা পাওয়া যায়, তা-ই বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে মৌলিক ছন্দ মাত্র ৩ প্রকার
এসব আলোচনার সত্যই কোনো অন্ত নেই, তবে এসব যে একেবারে অর্থহীন তাও নয়; আলোচনা থেকে নতুন কোনো তত্ত্বের সন্ধান অসম্ভব নয়।
ভালো থাকুন।
৫০| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৬
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: “সাহিত্যে গ্রামার থাকাই উচিত না”... “এগুলো নিয়ে অযথা আমরা কথা বলছি। কোন মানে হয় না। আমার সবময়ই মনে হয়েছে - মেসেজ সম্বলিত সুন্দর প্রকাশ ও তার ভঙ্গী সাহিত্যে অনেক বেশী আদৃত। গ্রামার নিয়ে ভাবতে গিয়ে মানুষের ভাব বাধাগ্রস্ত হয়; সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে শব্দ ভান্ডার...”
সাহিত্যের গ্রামার নিয়ে আপনাদের আলোচনা পড়লাম নিজের গরজে নীলঞ্জন।
কোনো আলোচনাই আমার কাছে অযথা মনে হয় নাই।
আমি কবি নই বিজ্ঞানে পড়াশুনা করেছি সারাজীবন।
থিমেটিক ছাড়া কিছু লিখতেই পারি না।
বাংলায় জ্ঞান কম।
অষ্টম শ্রেণীর পরে ঠিক সেই ভাবে বাংলা ব্যাকরণ পড়া হয় নাই। একটা কথা আজও ভুলি নাই-
‘‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখিও তাই মিলিলেও মিলিতে পারে অমূল্য রতন’’...
সময় পেলেই জ্ঞানী ব্যক্তিদের আলোচনা পড়তে ভালো লাগে। মাঝে মাঝে কিছু কবির লেখা একটা কবিতা বোঝার জন্য অভিধানে দশটা শব্দের অর্থ খোঁজা বিরক্তিকর।
আসলে বিরক্তির চেয়ে সময়ের স্বল্পতাই মুখ্য।
‘সাহিত্যে গ্রামার থাকাই উচিৎ নয়’ ...
এই টারমিনোলজির সাথে আপনার লেখা থেকেই প্রথম পরিচয়। একটু খটকা লাগলো।
আমার মনে হয় লেখক ও পাঠকের ক্ষেত্রে গ্রামারের চেয়ে শব্দের সমস্যাই বেশী।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে কোন লেখা একবার লিখে একাধিক বার পড়তেই হয় যে সময় গ্রামার ঠিক করা তেমন সমস্যা মনে হয় না।
গ্রামার নিয়ে ভাবনা লেখার পরে আসে আগে নয়।
এইজন্য হাতে লিখে স্কেলিটন করে পরে টাইপ করি তাতে থিম ঠিক থাকে।
আমার ভাবনাকে বাঁধাগ্রস্ত করে মাথায় থিম সামনে কি-বোর্ড। সবার ক্ষেত্রে এরকম নাও হতে পারে।
মন ও ভাবনা দুজনেই স্বাধীন তারপরেও কিছু কথা থেকে যায়। সোনাবীজ আর আপনার আলোচনা ভালো লাগলো।
দুজনকেই আন্তরিক ধন্যবাদ।
ঈদের শুভেচ্ছা নীলঞ্জন।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:১০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনি যদি পণ করেন যে, আপনি নিয়ম ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে একটা কবিতা লিখতে যাচ্ছেন, তাহলে খুব কম ক্ষেত্রেই ওটা খুব একটা ভালো কোনো বস্তু হবে কবিতা যতোটা না অনুশীলনের বিষয়, তার চেয়ে অধিক হলো অন্তর্গত সহজাত প্রতিভার বিকাশ। লিখবার কালে যদি ভাবেন, এই আপনি অমুক নিয়মটা ভাঙলেন, তাহলে এই নিয়মই আপনাকে একটা 'অনিয়মের' মধ্যে শৃঙ্খলিত করে রাখবে। কারণ, যতোটুকুই আপনি লিখুন না কেন, আপনার মাথায় ক্রমাগত শঙ্কা ভর করবে, এই বুঝি আপনি 'পুরাতন' ধারাটাকেই ফলো করে বসলেন। ফলত হবে কী, একটা ন্যাচারাল কবিতার গতিপথ থেকে আপনি বিচ্যুত হবেন। যেটি পয়দা হবে, সেটি আর্টিফিশিয়াল হওয়াটাই সম্ভব। এটা কোনো বাহাদুরি না যে আপনি নিয়ম ভেঙে কিছু পয়দা করলেন, আপনার কৃতিত্ব হলো সেখানে যেখানে আপনি একটা 'কবিতা' সৃষ্টি করতে পেরেছেন। কবিতা কী জিনিস তা কবিদের জানা আছে। সৃষ্টির তাগিদ এমন যে, তা যখন আপনার মগজ-তন্তুতে ঝড়োগতিতে এসে হাজির হয়, তা সৃষ্টি না করা অব্দি মন শান্ত হয় না। আপনার কাজ শুধু লিখে যাওয়া; ওটা গ্রামার মোতাবেক হয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব আপনার নয়। এটা যদি প্রকৃত সাহিত্য হয়ে থাকে, কালের পাখায় আপনিও থাকবেন
শুভ কামনা।
৫১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৩
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: “পাখিপুরুষরা পুরুষপাখির মতোই কালে কালে পাড়ি দেয় সমুদ্রের আকাশ
পুরুষপাখিরা ডানা ভেঙে উড়াল থেকে ভূমিস্মাৎ হয়েছে শোনা যায় না
পাখিপুরুষরাও মাঝে মাঝে শৌর্য্যবীর্যে নারীদের ছাড়িয়ে যায়; তথাপি
ডালপালাহাড়গোড় ভেঙে পানিগর্ভে মজ্জিত হওয়াই তাদের নিয়তি...”
‘পুরুষ ও পাখি’ কবিতাটি নিয়ে আমার কিছু কথা ।
২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
তাঁর কোনো পরিচয় নেই; প্রয়োজন নেই ওসব সামাজিক ডামাডোলে; পুরোটা শহর তাঁর নামের শরীরে ভর করে বেঁচে থাকে আর রাতদিন বয়ে চলে বুড়িগঙ্গার ক্ষয়িষ্ণু আয়ুর সাথে পচন ও পতনের দিকে। লোকটা এই শহরেই থাকেন বটে, তাঁর সত্যিকার নামধাম আমরা জানি না; তাঁর আদিবাস কোথায়, কবে তিনি প্রথম এ শহরে রেখেছিলেন পা, কী উদ্দেশে, আমরা জানি না;
কী নাম লোকটার?
* লোকটা এই শহরেই থাকেন... ১৭ মার্চ ২০১০ রাত ১০:৩১
৫২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৪৫
জয়তি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন: আপনার পোস্ট অত্যন্ত ভালো লাগল।শ্রদ্ধা জানাই প্রিয় মানুষোটিকে--যিনি গড়েছেন আমাকে তার রচনা দিয়ে।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। ঈদের শুভেচ্ছা থাকলো।
৫৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৩৫
শাপলা নেফারতিথী বলেছেন: আপনাকেও ঈদ এর শুভেচ্ছা... আপনার অনুমান ঠিক ই আছে। আমার নিক দেখে তো বুঝার ই কথা যে এইটা মেয়েদের নাম। নাকি আপনি মনে করেন শাপলা ছেলেদের নাম?
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:০০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: যাক নিশ্চিত হওয়া গেলো।
ব্লগের নিকগুলো যে নিজের নামই হবে তা কিন্তু নয়। অন্যদিকে নামেও কনফিউশনে থাকতে পারে। কোহিনূর, ফারিহান- এগুলো কি নারী-বাচক, নাকি পুরুষবাচক নাম? কোহিনূর আমার আপন মামার নাম, ফারিহান আমার ছোটো ছেলের নাম আমার এ নিকটি কোনোকালে 'ফারিহান মাহমুদ ছিল', অনেকেই ভুল বশত আমাকে 'আপু' ডাকতেন
'পূর্ণিমা নিত্য' নিকটি কী মনে হয়? হাঃ হাঃ হাঃ
শুভ কামনা আপু। এবং ধন্যবাদও।
৫৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৫৫
নিমা বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই প্রিয় কবি কে.....
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:১১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।
৫৫| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:১৯
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন:
“তাঁর কোনো পরিচয় নেই;
প্রয়োজন নেই ওসব সামাজিক ডামাডোলে;
পুরোটা শহর তাঁর নামের শরীরে ভর করে বেঁচে থাকে…”
চমৎকার প্রকাশ...
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:২৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
১
ল্যাবএইডের উত্তর গেইটের সিঁড়ি, ১ নম্বরের গোলচক্বর
ওভারব্রিজের গোড়ায়, সনি’র দক্ষিণে সংকীর্ণ গলির মুখে
বিগবাজারের নির্মল দরজার ভেতর অস্থির দাঁড়িয়ে
অমনি রিকশার হুড গলে বাতাসে শাড়ির ওড়াউড়ি
আমি এক প্রেমার্ত শিশু। আলাভোলা। পূর্বাপর ভাবি না কোনও কালে।
উড়ে তোর কোল জুড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। অসাবধানে। বেখেয়ালে।
২
দুইশ বত্রিশ কিলোমিটার বাসে চেপে বাড়ির স্টপেজে নামলি। দশ পা ফেললে ঘর।
‘এখনই চলে আয় বুড়ি।’
আকাশে তুমুল তুফান। আহা! ফালি ফালি জ্যোত্স্নারা। আহা! একজোড়া তীর্থের চোখ।
আহা!
‘মোবাইলে কান পেতে আছি। ফিরতি টিকিট কাট্। এখনই।’
দুইশ বত্রিশ কিলোমিটার। আহা! নির্বিবাদ ফিরে আসা তোর। আহা!
‘কী করে চলে গেলি না বলে?’
‘বড্ড উন্মাদ তুই। ছেলেমানুষ।’
‘আজ খুব ধকল গেলো।’
‘ঘরে তুই আগুন দিবি?’
‘আমি কোনও ঘর চিনি না। কী শান্তি সংসারে?’
‘এ আমার কলজেটা নে। খেয়ে তবে নিষ্কৃতি দে।’
* হিরণ্যকথা, ১৬ অক্টোবর ২০০৮। তবে এ লেখাটি কারো কারো কাছে দুর্বোধ্য ঠেকেছে; ফলে এর একটা সহজবোধ্য সংস্করণও রয়েছে। দেখুন : প্রমীলার সাথে আমার সম্পর্ক
৫৬| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৩৩
রেজোওয়ানা বলেছেন: চমৎকার!
আপনার এই কাজ গুলো খুব ভাল লাগে খলিল ভাই...।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। ঈদের শুভেচ্ছা থাকলো।
৫৭| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:১৩
আবু সালেহ বলেছেন: ২৬ তম ভালো লাগা রইলো......
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:০৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আবু সালেহ ভাই। গ্রিটিং কার্ডের জন্যও ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
৫৮| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৪৪
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: “আমি এক প্রেমার্ত শিশু। আলাভোলা। পূর্বাপর ভাবি না কোনও কালে।
উড়ে তোর কোল জুড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। অসাবধানে। বেখেয়ালে…”
চমৎকার...
‘প্রমীলার সাথে আমার সম্পর্ক’…
“প্রমীলাকে বলেছিলাম, ‘ভ্রূ প্লাক করিস না পাখি। এই যে পারলারে যাস, ওখানে কি
ছেলেরাও থাকে না?’ প্রমীলা একটা ভয়ানক কাজ করেছিল- পুরোটা মাথা ন্যাড়া করে
পবিত্র ভিক্ষু’র মতো সামনে এসে দাঁড়ালো- ওর চোখ ছিল বিশ্বস্ত, আত্মবিশ্বাসে
ভরপুর; পুলিশের হাতে ধরা-খাওয়া খুনের আসামির মতো আমি কাঁপছিলাম…”
অসম্ভব সুন্দর প্রকাশ… অনবদ্য !!
৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:০১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা।
৫৯| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৩৩
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
ভাইয়া, সব প্রিয় কবিতা দিয়ে পোষ্ট সাজালেন ! সুপার্ব কাজ করছেন । ভাবছিলাম ঈদের পর সুনীলের কবিতা নিয়ে একটা পোষ্ট দিবো, এখন দেখি আপনি দিয়ে দিলেন । যাক, টাইপ করার কষ্ট থেকে বাঁচলাম !
পোষ্ট প্রিয়তে নিলাম
০১ লা নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:১৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ সরকার ভাই। তবে আপনার কাছে কোনো কবিতা থাকলে এখানে পেস্ট করতে পারেন, জনস্বার্থে
শুভ কামনা।
৬০| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫০
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
পাহাড় চূড়ায়
অনেকদিন থেকেই
আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।
যদি তার দেখা পেতাম, দামের জন্য আটকাতো না।
আমার নিজস্ব একটা নদী আছে,
সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।
কে না জানে পাহাড়ের চেয়ে নদীর দামই বেশি।
পাহাড় স্থানু, নদী বহমান।
তবু আমি নদীর
বদলে পাহাড়ই কিনতাম।
কারণ আমি ঠকতে চাই।
নদীটাও অবশ্য আমি কিনেছিলাম একটা দ্বীপের বদলে।
ছেলেবেলায় আমার বেশ ছোট্টোখাট্টো ছিমছাম একটা দ্বীপ ছিল।
সেখানে অসংখ্য প্রজাপতি।
শৈশবে দ্বীপটি ছিল বড় প্রিয়।
আমার যৌবনে দ্বীপটি আমার কাছে মাপে ছোট লাগলো।
প্রবহমান ছিপছিপে তন্বী নদীটি বেশ পছন্দ হল আমার।
বন্ধুরা বললো, ঐটুকু একটা দ্বীপের বিনিময়ে এতবড় একটা নদী পেয়েছিস?
খুব তো জিতেছিস মাইরি।
তখন জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হতাম।
তখন সত্যিই আমি ভালবাসতাম নদীটিকে।
নদী আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিত।
যেমন, বলো তো, আজ সন্ধেবেলা বৃষ্টি হবে কিনা?
সে বলতো, আজ এখানে দক্ষিণ গরম হাওয়া।
শুধু একটা ছোট্ট দ্বীপে বৃষ্টি, সে কী প্রবল বৃষ্টি, যেন একটা উৎসব।
আমি সেই দ্বীপে আর যেতে পারি না।
সে জানতো। সবাই জানে।
শৈশবে আর ফেরা যায় না।
এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।
সে ই পাহাড়ের পায়ের কাছে থাকবে গহন অরণ্য,
আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাবো,
তারপর শুধু রুক্ষ কঠিন পাহাড়।
একেবারে চূড়ায়, মাথার খুব কাছে আকাশম নিচে বিপুলা পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা।
আমার কষ্ঠস্বর সেখানে কেউ শুনতে পাবে না।
আমি ঈশ্বর মানি না, তিনি আমার মাথার কাছে ঝুঁকে দাঁড়াবেন না।
আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো, প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী,
এখানে আমি একা—এখানে আমার কোনো অহঙ্কার নেই।
এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।
হে দশ দিক, আমি কোনো দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো ক্ষমা করো।
আমার অনেক পছন্দের কবিতা এট
৬১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৭
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
সুন্দরের মন খারাপ
সুন্দরের মন খারাপ , মাধুর্যের জ্বর
অন্ধকারে ফুলকি ওড়ে , বারুদ মাখা ঝড়
চতুর্দিকে এত পাখির ভাঙা কণ্ঠস্বর
সুন্দরের মন খারাপ , মাধুর্যের জ্বর
নদীকে খায় শুকনো পথ , প্লাবনে ভাসে ঘর
মলিন রঙ , লীন রেখা , ক্লিষ্ট অক্ষর
সুন্দরের মন খারাপ , মাধুর্যের জ্বর ......
৬২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৯
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
একটাই তো কবিতা
একটাই তো কবিতা
লিখতে হবে, লিখে যাচ্ছি সারা জীবন ধরে
আকাশে একটা রক্তের দাগ, সে আমার কবিতা নয়
আমার রাগী মুহূর্ত কবিতা থেকে বহুদূরে সরে যায়
একটাই তো কবিতা লিখতে হবে
অথচ শব্দ তাকে দেখায় না সহস্রার পদ্ম
যজ্ঞ চলেছে সাড়স্বরে, কিন্তু যাজ্ঞসেনী অজ্ঞাতবাসে
একটাই কো কবিতা
কখন টলমলে শিশিরের শালুক বনে ঝড় উঠবে তার ঠিক নেই
দরজার পাশে মাঝে মাঝে কে যেন এসে দাঁড়ায় মুখ দেখায় না
ভালোবাসার পাশে শুয়ে থাকে হিংস্র একটা নেকড়ে
নদীর ভেতর থেকে উঠে আসে গরম নিশ্বাস
আকটাই তো কবিতা লিখতে হবে
আগোছাল কাগজপত্রের মধ্য থেকে উকি মারে ব্যর্থতা
অপমান জমতে জমতে পাহাড় হয়, তার ওপর উড়িয়ে দেবার কথা স্বর্গের পতাকা
শজারুর মতন কাঁটা ফুলিয়ে চলঅ-ফেরা করতে হয় মানুলের মধ্যে
রাত্রে সিগারেট ধরিয়ে মনে হয়, এ-এক ভুলমানুষের জীবন
বূল মানুষেরা কবিতা লেখে না, তারা অনেক দূরে, অনেক দূরে
যেন বজ্রকীট উল্টো হয়ে পড়ে আছে, এত অসহায়
নতুন ইতিহাসের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে সম্রাটদের কাঙালপনা
একটাই তো কবিতা, লিখে যাচ্ছি
লিখে যাবো, সারা জীবন ধরে
আবার দেখা হবে, আবার দেখা হবে, আবার দেখা হবে!
পাওয়া
অন্ধকারে তোমার হাত
ছুঁয়ে
যা পেয়েছি, সেইটুকুই তো পাওয়া
যেন হঠাৎ নদীর প্রান্তে
এসে
এক আঁজলা জল মাথায় ছুঁইয়ে যাওয়া।
এই দৃশ্য
হাঁটুর ওপরে থতনি, তুমি বসে আছো
নীল ডুরে শাড়ী, স্বপ্নে পিঠের ওপরে চুল খোলা
বাতাসে অসংখ্য প্রজাপতি কিংবা সবই অভ্রফুল?
হাঁটুর ওপরে থুতনি, তুমি বসে আছো
চোখ দুটি বিখ্যাত সুদূর, পায়ের আঙুলে লাল আভা।
ডান হতে, তর্জনিতে সামান্য কালির দাগ
একটু আগেই লিখছিলে
বাতাসে সুগন্ধ, কোথা যেন শুরু হলো সন্ধ্যারতি
অন্যদেশ থেকে আসে রাত্রি, আজ কিছু দেরি হবে
হাঁটুর ওপরে থুথনি, তুমি বসে আছো
শিল্পের শিরায় আসে উত্তেজনা, শিল্পের দু’চোখে
পোড়ে বাজি
মোহময় মিথ্যেগুলি চঞ্চল দৃষ্টির মতো, জোনাকির মতো উড়ে যায়
কোনোদিন দুঃখ ছিল, সেই কথা মনেও পড়ে না
হাঁটুর ওপরে থুতনি, তুমি বসে আছো
সময় থামে না জানি, একদিন তুমি আমি সময়ে জড়াবো
সময় থামে না, একদিন মৃত্যু এসে নিয়ে যাবে
দিগন্ত পেরিয়ে-
নতুন মানুষ এসে গড়ে দেবে নতুন সমাজ
নতুন বাতাস এসে মুছে দেবে পুরোনো নি:শ্বাস,
তবু আজ
হাঁটুর ওপরে থুতনি,তুমি বসে আছো
এই বসে থাকা, এই পেঠের ওপরে খোলা চুল,
আঙুলে কালির দাগ
এই দৃশ্য চিরকাল, এর সঙ্গে অমরতা সখ্য করে নেবে
হাঁটুর ওপরে থুতনি, তুমি বসে আছো...
কোথায় গেল, কোথায়
যারা বারুদ ঘরে আগুন দিতে গিয়েছিল, তাদের তিনজন
এখন দেয়ালে ঝুলছে, আলাদা মুখ, একই রকম চাহনি
বাকি এগারোজন হারিয়ে গেল, কোথায় গেল, কোথায় ?
আর কিছুদিন পর এই শতাব্দী নিঃশব্দে বিদায় নেবে
অনড় গম্ভীর মহাকুর্মের পিঠে ছেনি হাতুড়ি দিয়ে দিয়ে লেখা
হবে হিসেব
যারা সিংহের মুখে লাগাম পরাতে গিয়েছিল, তাদের দু'জন
শেষ পর্যন্ত পেয়েছে সিংহাসন, গালিচায় রেখেছে পায়ের ছাপ
বাকি সাতজন হারিয়ে গেল, কোথায় গেল, কোথায় ?
আসবে নতুন মানুষ, গড়ে উঠবে নতুন সুখী সমাজ
বড় সমবেদনায় তারা একদিন পেছন ফিরে তাকিয়ে বন্দী
হয়ে পড়বে এক দুরন্ত ধাঁধায়
জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির দিকে সমান তালে নিঃশঙ্ক পা ফেলে
গিয়েছিল যে পাঁচজন
তাদের একজনেরও কোনো নাম বা মুখচ্ছবি নেই, তাহলে
সত্যি কি কেউ যায়নি ?
কিছু কবিতা নেট থেকে কপি পেষ্ট মারলাম আর কিছু টাইপ করা । যদি টাইপো কিছু হয়ে যায় দয়া করে ঠিক করে নিয়েন ।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:০৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আলাউদ্দিন ভাই, এতোগুলো কবিতা সংযোজনের জন্য অনেক ধন্যবাদ। পাহাড় চূড়ায় কবিতাটা খুঁজছিলাম, যেটা আপনি দিয়ে দিয়েছেন।
সবকিছুর জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৬৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১২
মেহবুবা বলেছেন: আর কি ছু বলবার নেই , প্রিয় এক কবিকে তার কবিতার বাহারে মনে করিয়ে দেয়া । ধন্যবাদ ।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:০৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ।ধন্যবাদ আপু।
৬৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:০৮
স্বপ্নবাজ বাউন্ডুলে বলেছেন: পোস্ট প্রিয়তে নিলাম।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:০৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ স্বপ্নবাজ।
৬৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:৩৭
বিবাগী বাউল বলেছেন: আমিও প্রিয়তে নিলাম, খুবি ভাল লাগলো ,
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:১০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ বিবাগী বাউল।
৬৬| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০৪
অহনা অনন্যা বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম, খুবি ভাল লাগলো ,
২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ অহনা অনন্যা।
৬৭| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:০৪
মৌলিক প্রেমিক বলেছেন: যদি কোন দিন দিগন্তের ওপারে মাথা তুলে দাড়াতে পারি আমি তোমাদের সব হিসেব কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিয়ে যাব
অনেক দিন থেকে এই কবিতাটি খুজছি। সংগ্রহে থাকলে পাঠাবেন তো ?
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’য় এটি পেলাম না। ইন্টারনেটেও না। কবিতার নামটা কি মনে আছে?
৬৮| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫৪
মৌলিক প্রেমিক বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ। কবিতাটি কে লিখেছেন তা আমার জানা নেই। ভালো থাকবেন।
২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কবিতার লাইন দুটো আমাকে কামড়ে খেয়েছে বেশ কিছুদিন, এখন আবার সে যন্ত্রণা নতুন করে শুরু হলো। এটি খুঁজবার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলো। আপনি পেলে দয়া করে শেয়ার করবেন। শুভ কামনা।
৬৯| ১০ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০৩
ইখতামিন বলেছেন:
সঠিক লেখাটা পেয়ে ভালো লাগছে..
১০ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ ইখতামিন ভাই।
৭০| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৫৭
একজন সৈকত বলেছেন:
চমৎকার পোস্ট!
অনেক ধন্যবাদ।
০৬ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ একজন সৈকত।
৭১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:১৭
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
চমৎকার আয়োজন।
প্রিয়তে গেল।
৭২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০
তার আর পর নেই… বলেছেন: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কিছু কবিতা খুজছিলাম। সার্চ দিতে এই পোস্ট এলো। প্রিয় তে রাখলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৫৯
সাবরিনা সিরাজী তিতির বলেছেন: সোজা প্রিয়তে ! সময় করে সব পড়বো ।