নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
ছন্দ নিরীক্ষণে রবীন্দ্রনাথ নিজের কবিতাকে বিভিন্ন ভাবে ভাঙতেন, সাজাতেন, এবং একই চরণকে বিচিত্র রূপে পঙ্ক্তিতে ভাগ করতেন। কীভাবে? চলুন, কিছু আলোচনা করি।
নীচের কবিতাটি আমার, যা গত বছরের জুলাইয়ে লিখেছিলাম। এর ভিন্নরূপটি শুরুতেই দেখা যাক।
***
সে এক ক্ষণজন্মা পাখি, প্রতিটা গোপন সাঁঝে অরূপ পাথারে নেমে এসে অলৌকিক সুর তোলে গানে। তারপর রাত্রি শেষে ফিরে যায়, পেছনে রেখে যায় একগুচ্ছ পদছাপ, ও কয়েকটা পালক। মাটিতে করুণ দাগ কেটে একধ্যানে চেয়ে থাকে বিবাগী বালক।
***
উপরে কবিতাটিকে খাঁটি গদ্যাকারে সাজানো হয়েছে। এরূপ টানা গদ্যের কবিতাকে ‘ফ্রি ভার্স’ বলা হয়। ফ্রি-ভার্সের বাংলা অর্থ ‘অমিত্রাক্ষর’ , যাকে অধুনা ব্লগে কেউ কেউ ‘মুক্তগদ্য’ হিসাবে নতুনভাবে নামকরণ করছেন।
‘ফ্রি ভার্স’ হলো এক প্রকার ছন্দের নাম, অন্য কিছু না। অক্ষরবৃত্ত, স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত বা এদের সংমিশ্রণের প্রভাব থেকে ছুটে আসার প্রবণতা থেকে ধীরে ধীরে ‘ফ্রি ভার্স’ সৃষ্টি হয়েছে। এটা গদ্য নয়- (ভার্স অর্থ কবিতা, বা ছড়া, বা কবিতার লাইন)। অবয়বে গদ্যের মতো, গদ্যের সাথে সাদৃশ্য এটুকুই। উন্মুক্ত কবিতা, বা মুক্ত কবিতা, বা মুক্তচ্ছন্দ। কবিতা লেখার ক্ষেত্রে ‘ফ্রি ভার্স’-এর চেয়ে সহজতর ও অধিক উপযুক্ত কোনো উপায় নেই। এখানে আপনার উন্মুক্ত ভাবনাকে উন্মুক্তভাবেই প্রকাশ করার স্বাধীনতা পাচ্ছেন।
নীচে আরও দুটি ফ্রি-ভার্স দেখুন।
***
আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ। এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি- তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি, মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে- (ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)
আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়ির ছেলে সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক। ঘামে ছিল না এমন গন্ধক যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পারি। নিখিলেশ, তুই একে কী বলবি? আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেরেকে বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কিনা; আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না। আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম, আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। নিখিলেশ, আমি এই-রকমভাবে বেঁচে আছি, তোর সঙ্গে জীবন বদল করে কোনো লাভ হলো না আমার -একই নদীর তরঙ্গে ছেলেবেলার মতো ডুবসাঁতার?- অথবা চশমা বদলের মতো কয়েক মিনিট আলোড়ন? অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা? কেননা সময় নেই, আমার ঘরের দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়। মৃত গাছটির পাশে উত্তরের হাওয়ায় কিছুটা মায়া লেগে ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে দেখি উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল, তবুও অক্লেশে হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি। আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার একটি মুহূর্ত চেয়েছিলাম, একটি …, ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার; ইচ্ছে ছিল না জানাবার এই বিশেষ কথাটা তোকে। তবু ক্রমশই বেশি করে আসে শীত, রাত্রে এ-রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না, রোজ অন্ধকার হাতড়ে টের পাই তিনটে ইঁদুর না মূষিক? তা হলে কি প্রতীক্ষায় আছে অদূরেই সংস্কৃত শ্লোক? পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এই অবেলায় কিছুই মনে পড়ে না। আমার পূজা ও নারী-হত্যার ভিতরে বেজে ওঠে সাইরেন। নিজের দু’হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের। আজকাল আমার নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। এরকম সত্য পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।।
***
প্রমোদ-উদ্যানে কাঁদে দানব-নন্দিনী প্রমীলা, পতি-বিরহে-কাতরা যুবতী। অশ্রুআঁখি বিধুমুখী ভ্রমে ফুলবনে কভু, ব্রজ-কুঞ্জ-বনে, হায় রে যেমনি ব্রজবালা, নাহি হেরি কদম্বের মূলে পীতধড়া পীতাম্বরে, অধরে মুরলী। কভু বা মন্দিরে পশি, বাহিরায় পুনঃ বিরহিণী, শূন্য নীড়ে কপোতী যেমতি বিবশা! কভু বা উঠি উচ্চ-গৃহ-চূড়ে, এক-দৃষ্টে চাহে বামা দূর লঙ্কা পানে, অবিরল চক্ষুঃজল পুঁছিয়া আঁচলে!— নীরব বাঁশরী, বীণা, মুরজ, মন্দিরা, গীত-ধ্বনি। চারি দিকে সখী-দল যত, বিরস-বদন, মরি, সুন্দরীর শোকে! কে না জানে ফুলকুল বিরস-বদনা, মধুর বিরহে যবে তাপে বনস্থলী?
উতরিলা নিশা-দেবী প্রমোদ-উদ্যানে। শিহরি প্রমীলা সতী, মৃদু কল-স্বরে, বাসন্তী নামেতে সখী বসন্ত-সৌরভা, তার গলা ধরি কাঁদি কহিতে লাগিলা,— “ওই দেখ, আইল লো তিমির যামিনী কাল-ভুজঙ্গিনী-রূপে দংশিতে আমারে, বাসন্তি! কোথায়, সখি, রক্ষঃ-কুল-পতি, অরিন্দম ইন্দ্রজিৎ, এ বিপত্তি কালে? এখনি আসিব বলি গেলা চলি বলী; কি কাজে এ ব্যাজ আমি বুঝিতে না পারি। তুমি যদি পার, সই, কহ লো আমারে।”
কহিলা বাসন্তী সখী, বসন্তে যেমতি কুহরে বসন্তসখা,— “কেমনে কহিব কেন প্রাণনাথ তব বিলম্বেন আজি? কিন্তু চিন্তা দূর তুমি কর, সীমন্তিনি! ত্বরায় আসিবে শূর নাশিয়া রাঘবে। কি ভয় তোমার সখি? সুরাসুর-শরে অভেদ্য শরীর যাঁর, কে তাঁরে আঁটিবে
বিগ্রহে? আইস মোরা যাই কুঞ্জ-বনে। সরস কুসুম তুলি, চিকণিয়া গাঁথি ফুলমালা। দোলাইও হাসি প্রিয়গলে সে দামে, বিজয়ী রথ-চূড়ায় যেমতি বিজয়পতাকা লোক উড়ায় কৌতুকে।”
***
‘ফ্রি ভার্স’-কে দুই প্যাটার্নে লেখা যায় :
১) কোনোরূপ অন্ত্যমিল না রেখে, এবং
২) পুরোটাই একটা গদ্যের মতো করে লিখে।
Free Verse-এর উপর আমেরিকান সমালোচক জন লিভিংস্টোনের একটি পর্যবেক্ষণলব্ধ মন্তব্য দেখুন, যা তিনি ১৯১৬ সালে বলেছিলেনঃ
“চমৎকার গদ্যে আপনি একটি অনবদ্য কবিতা লিখে ফেলতে পারেন; কবিতার ভাষায়ও একটা উৎকৃষ্ট গদ্য লিখে ফেলা সম্ভব।”
তাহলে গদ্য আর কবিতার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
জন লিভিংস্টোনের কথাটি ফেইসবুকে স্টেটাস আকারে প্রকাশ করা হলে এর উপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমেন্ট পাওয়া যায়। নীচে দেখুন।
কবি মজনু শাহ : হয়ত পার্থক্য তেমন কিছু নাই। আবার আছেও। গদ্য একটা যুক্তিকাঠামো চায়, তা হয়ে উঠতে চায় পরিণতিময়। সুনির্দিষ্ট অর্থ আরোপ করতে চায় সে। কবিতা প্রায়শ এই যুক্তিশৃঙ্খলা পেরিয়ে গিয়ে চায় শব্দাতীত কোনো অনুভব। বা নৈঃশব্দ্য। এই জন্যে ভালো কবিতাগুলো অনন্ত অর্থময়, দৃশ্যত গদ্য তা নয়, গদ্য তেমন হয়ে উঠলে তা তার উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে এগোয়।
ত্রিশোনকু মল্লিক : শব্দ চয়নে আর ভাবের গভীরতায়।
Maximus Millius : নিদ্রা আর তন্দ্রায় যে পার্থক্য- আমার কাছে কাব্য নিদ আর গদ্য ঘোর।
John Livingston Lowes-এর কথাটা আমি সামান্য ঘুরিয়ে বলেছি। ঐ সময়ে যেসব Free Verse রচিত হতো তা দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘Free verse may be written as very beautiful prose; prose may be written as very beautiful free verse.’ টি এস এলিয়ট বলেছেন, ‘No verse is free for the man who wants to do a good job’.
‘ফ্রি ভার্স’ কী সে-সম্পর্কে টি. এস. এলিয়ট বলেছেন :
১) এর কোনো প্যাটার্ন বা রূপকল্প থাকবে না, অর্থাৎ এটি হবে মুক্তকল্প।
২) এতে কোনো অন্ত্যমিল থাকবে না, অর্থাৎ এটি হবে মুক্ত মিল।
৩) এতে কোনো ছন্দ থাকবে না, অর্থাৎ এটি হবে মুক্ত ছন্দ।
শুরুতে আমার নিজের কবিতাটিসহ অন্য যে দুটি কবিতা উদ্ধৃত করেছি, সেটি টি. এস. এলিয়টের বেঁধে দেয়া বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। অর্থাৎ, এটি হবে একটি খাঁটি গদ্যের মতো। খাঁটি গদ্য আর কবিতার মধ্যে কি তাহলে কোনো পার্থক্য নেই? পার্থক্য অবশ্যই আছে- কবিতার ভাষাই বলে দেবে এটি দেখতে গদ্যের মতো হলেও এটি একটি কবিতা। বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ গ্রন্থের ২য় পর্বে অধ্যাপক পবিত্র সরকারের একটি প্রবন্ধ সংযুক্ত হয়েছে এ শিরোনামে- ‘কাব্যভাষার ব্যাকরণ’। সেটি পড়লে গদ্য ও কবিতার ভাষা যে এক নয় তার কিছু ব্যাখ্যা মেলে।
‘মেঘনাদ বধ’ -এ কোনো অন্ত্যমিল নেই, এটা ফ্রি ভার্স, যা মূলত ১৪ অক্ষরের পয়ারে রচিত; অমিত্রাক্ষর পয়ার এর নাম। কিন্তু বাক্যগঠন এমন যে সাধারণ পয়ারের মতো সর্বত্রই এক পঙ্ক্তিতে একটি বাক্য গঠিত হয় নি, অর্থৎ, পঙ্ক্তির মাঝখানে ‘দাঁড়ি’, সেমি-কোলন দেখা যায়, এবং আবৃত্তির সময় এটিকে অবিকল গদ্যের মতোও পাঠ করা যায়। সেই হিসাবে এটি খাঁটি অমিত্রাক্ষর পয়ার নয়, এটিও ফ্রি-ভার্স-এর বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। পয়ারে ৮+৬ অক্ষরের দুটি পর্ব থাকে, যা ১ম পর্বে অর্ধ বিরতি, ২য় পর্ব শেষে পূর্ণ বিরতি লাভ করে থাকে।
আমাদের ছোটো নদী | চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার | হাঁটুজল থাকে
এখানে একটা পঙ্ক্তিতে বাক্য সম্পন্ন হচ্ছে।
কিন্তু অন্যত্র দেখুনঃ
“এই কি সেই আগ্রা, হায় আকবর যাহারে
সাজায়েছে দিবানিশি?” (আগ্রা – কায়কোবাদ)
কিংবা,
“কি ভয় তোমার সখি? সুরাসুর-শরে
অভেদ্য শরীর যাঁর, কে তাঁরে আঁটিবে
বিগ্রহে?” (মেঘনাদ বধ – মধুসূদন)
আগ্রা বা মেঘনাদ বধ থেকে উদ্ধৃত অংশে পঙ্ক্তি শেষে বাক্য শেষ হচ্ছে না, প্রলম্বিত হয়ে পরের পঙ্ক্তিতে যাচ্ছে।
***
রবীন্দ্রনাথ ছন্দের প্রয়োজনে একই কবিতা এভাবে ভেঙে ভেঙে দেখিয়েছেন যে, এভাবে ভাঙবার ফলে আবৃত্তির ঢংটাই পালটে যায়।
ইংরেজিতে যেটাকে ‘ফ্রি-ভার্স’ বলা হয়, আমি তার সাথে পরিচিত বেশ আগে থেকেই, এবং আমি নিজের অজান্তেই ‘ফ্রি-ভার্স’-এর প্রতি ঝুঁকে পড়ি মূলত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে। ব্লগে কোনো এক সময় কবিতার প্রচলিত ফরম্যাট উপেক্ষা করে আপনা-আপনিই ‘ফ্রি-ভার্স’ লিখতে থাকি। ‘ফ্রি-ভার্স’ লিখতে লিখতেই খেয়াল করি- এটা গল্প নয়, কিন্তু গল্পের মতো, কবিতা নয়, তবে কবিতা বলে ভ্রম হতে পারে, এবং প্রবন্ধ বা রম্যও নয়। তখন আমি নিশ্চিত হই যে, আমি আদতে ‘ফ্রি-ভার্স’ লিখছি না, লিখছি এমন কিছু যার কোনো সঠিক ক্যাটাগরি নেই।
মূলত ‘মুক্তগদ্য’ বা ‘ফ্রি-ভার্স’ বাংলা সাহিত্যে নতুন কিছু নয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন মধ্যগগনে, তখন থেকেই তিনি এই অবয়বের কবিতা লিখতে শুরু করেন, এবং প্রচুর লিখেছেন। কবি আবিদ আজাদের ‘মুখবন্ধ’, ‘বৃষ্টির ফোঁটা ও পাতাবাহার গাছ নিয়ে’, ‘ভোরবেলা’, ‘৪ঠা অক্টোবর’, ‘১৯৮৭’, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’, ‘পারা না-পারা’, ‘তারা ও মানুষ’, ‘স্ক্রু’, ‘২৭-১১-৯০-এর ৪-৩০ মিনিটে লেখা’, ‘তোমার ছবির সামনে’, ‘নন্দনতত্ত্ব’, ‘ভূত ও পেতনিদের নিয়ে আরো একটি কবিতা’, ‘জাদু এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বপ্ন’, ইত্যাদি কবিতাগুলো সার্থক ‘ফ্রি-ভার্সের’ উদাহরণ।
শামসুর রাহমান শেষের দিকে দীর্ঘকায় ‘ফ্রি-ভার্স’ লিখেছেন। ‘মেঘলোকে মনোজ নিবাস’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘রাত আড়াইটার পঙ্ক্তিমালা’, ‘স্বপ্ন জাগরণের সীমানায়’, ‘সারা জীবনই গোধূলি আকাশ’, ‘ডাকহরকরা বিলি করলেও’, ‘পাস্তারনাকের কাব্যগ্রন্থের নিচে’, ইত্যাদি বৃহদাকার কবিতাগুলো উল্লেখযোগ্য।
আমি যতদূর পাঠ করেছি, বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ কবিদের মধ্যে সৈয়দ আলী আহসান হলেন এরূপ কবিতার পথিকৃৎ। এগুলোর বাহ্যিক অবয়ব দেখলে গদ্য বলে ভ্রম হবে। কিন্তু পাঠ করলেই ধীরে ধীরে আপনি এক নতুন জগতে প্রবেশ করবেন। সৈয়দ আলী আহসানের ‘সহসা সচকিত’ কাব্যগ্রন্থের সিকোয়েল নম্বর ৯, ১০, ১১, ১২, ১৫, ১৬, ১৮, ২০, ২১, ৩২, ৩৩, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৯, ৪২, ৪৩, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫৩, ৬০, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৮৩, ‘সমুদ্রেই যাব’ কাব্যগ্রন্থের ‘জানালায় সমুদ্র’, ‘সৌরভ’, ইত্যাদি কবিতাগুলোও অনুরূপ ‘মুক্তগদ্য’ অথবা ‘ফ্রি ভার্স’।
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও ‘ফ্রি-ভার্স’ ছিল। ফ্রি ভার্স আদতে গদ্য নয়, কবিতা বা কবিতার মতো। ছন্দ সমীক্ষণে যেটাকে মুক্তক অক্ষরবৃত্ত বা গদ্যছন্দ বলা হয়, ফ্রি-ভার্স বা মুক্তগদ্যে তা থেকে ভিন্ন কিছু দেখা যায় না। মুক্তগদ্যকে ‘অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত’ ছন্দের কবিতা বলাই উত্তম। ‘অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত’ কী? এই যে আমি এই আর্টিকেলটি লিখছি, এর যে-কোনো টানা গদ্যের অনুচ্ছেদ বা অনুচ্ছেদসমগ্রই হলো ‘অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত’। কিন্তু গদ্যাকারে লিখলেই সেটা কবিতা হয় না, তা নতুন কোনো কথা নয়। লেখা পাঠের পর যে উপলব্ধি, তা থেকেই বুঝবো- হয় কবিতা পড়লাম, অথবা নিছক গদ্য।
কবি মুজিব মেহদী সামহোয়্যারইন ব্লগে ‘উভলিঙ্গ’ অভিধায় প্রচুর পোস্ট লিখেছেন, যা আমার কাছে উৎকৃষ্ট মানের কবিতা মনে হয়েছে। এগুলো ‘অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত’ বা ‘ফ্রি-ভার্স’ বা ‘মুক্তগদ্য’ থেকে ভিন্নতর কিছু নয়- কেবল নামকরণটাই ভিন্ন মনে হয়েছে আমার কাছে। কবি মুক্তি মণ্ডল, দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু, টোকন ঠাকুর, ইমরান মাঝি, গেওর্গে আব্বাস, লাবণ্যপ্রভা, অক্ষর, (খুব সম্ভবত মাহবুব লীলেন ও ছন্নহারার পেনসিলও), নির্ঝর নৈঃশব্দ্য এই আঙ্গিকে কবিতা লিখেছেন। আরেকজন ব্লগারের নাম আমি ভুলে গেছি, মৃন্ময় আহমেদ কিংবা কাছাকাছি কেউ- যাঁকে সর্বপ্রথম ব্লগে এ আঙ্গিকে কবিতা লিখতে দেখেছি। কিন্তু তিনি এগুলোকে হয় গল্প অথবা কবিতা নামে ট্যাগ করতেন বলে আমার মনে পড়ে। অনেক দিন আগের কথা- কিছু তথ্য ভুলও হতে পারে। আমি ব্লগে এ আঙ্গিকের প্রচুর পোস্ট লিখেছি- কিন্তু আমি স্বীকার করছি (উপরে একবার উদ্ধৃত করেছি), ওগুলো হয়তো কবিতা হয় নি, বা গদ্যও নয়, কিন্তু এগুলো লিখবার জন্য আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। উৎসাহী বন্ধুরা সময় পেলে পোস্টগুলো ঘুরে আসতে পারেন। এগুলো কিছুই না হোক, কবিতার প্যাটার্ন হিসাবে এটাই আমার স্বকীয়তা।
এ শহর ছেড়ে তোর চলে যাবার কথা শুনে
আমরা ভাগ হয়ে যাচ্ছি; ভেঙে যাচ্ছি
কনফারেন্স টেবিলের উলটো পাশে মেয়েটি বসে ছিল
আমরা মেয়েদের কথা মনে রাখি, মেয়েরা ভুলে গেছে
শৈশবের দুঃখগুলো
প্রিয় বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেলে
বিতণ্ডা অথবা তোর অভিমান; আমি কোনোটাই মেনে নিই নি
আটলান্টিকা
একটা কবিতার গোড়াপত্তন ও এর অর্থবোধকতার পর্যায় সমূহ
কী কী কারণে বউ বা প্রেমিকাকে ভালোবাসেন!!
ক্ষণজন্মা-২০
ক্ষণজন্মা- ১৮
মৃত সরোবর
শাপলাশালুকডাহুকের শৈশব
স্বাক্ষর
অহনাঃ সাকারে; নিরাকারে
পশ্চিম বাংলার কবিরা এ আঙ্গিকের কবিতাকে অনেক আগে থেকেই ‘নতুন কবিতা’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছিলেন। এটার আবিষ্কারক কবি বারীণ ঘোষাল। তবে কবিতার প্রচলিত ফরম্যাট ও গদ্য ফরম্যাট দুটোতেই ‘নতুন কবিতা’ লিখতে দেখেছি। ঐ ‘নতুন কবিতা’র দেখাদেখি বাংলাদেশে ‘নতুন ধারা’ শুরু হতে দেখেছিলাম কোনো একটা ওয়েব্লগে। পশ্চিম বাংলার কবিরা বর্তমানে ‘নতুন ধারা’ থেকে সরে এসে ‘মুক্তগদ্য’ লিখছেন কিনা তা আমি জানি না। হতে পারে যে তাঁরা ‘নতুন কবিতা’ ও ‘মুক্তগদ্য’ দুটোই লিখছেন। তবে ২০০২-২০০৭ সালে কবিতা-মুক্তমঞ্চে এ নিয়ে অনেক আলোচনা-বিতর্ক করেছি, যার কিছু অংশ পরে সামহোয়্যারইন ব্লগে শেয়ার করেছিলাম।
কোনো লেখা সাবলীল নাকি জটিল, একটানে পড়ে শেষ করা যায় নাকি বোরিং- তা হলো লেখকের দক্ষতার ব্যাপার। আপনার কবিতা একনিশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, আপনার গদ্য গতিশীল। আমার গদ্য গতিশীল না, তাই একনিশ্বাসে শেষ করা যাবে সেটা আশা করা যায় না।
নতুন যে-কোনো কিছুর প্রতিই মানুষের আগ্রহ খুব বেশি হয়ে থাকে। ‘মুক্তগদ্য’ নামটা খুব জুতসই ও শ্রুতিমধুর। কিন্তু নামটা নতুন ও আকর্ষণীয় মনে হলেও ‘মুক্তগদ্য’র ভিতরে আমি এ যাবত যা দেখেছি, তা হলো আমার পূর্ব-পরিচিত গদ্য-আঙ্গিকের কবিতামাত্র। এগুলো আমাদের পূর্বসূরিরা লিখে আমাদের পথ প্রশস্ত করে দিয়ে গেছেন।
কবিতার এতসব ফরম্যাট দেখে বিচলিত হয়ে একবার লিখলাম ‘৪০০০ সালের কবিতা।’
***
আমার কবিতাটিতে অন্ত্যানুপ্রাসের ব্যবহার রয়েছে, এবং এটা মূলত সমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্তে রচিত। সমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্তের স্টাইলে আমার কবিতাটিকে সাজালে এর আঙ্গিক কীরূপ হয়, দেখুন নীচে :
সে এক ক্ষণজন্মা পাখি, প্রতিটা গোপন সাঁঝে অরূপ পাথারে নেমে এসে
অলৌকিক সুর তোলে গানে। তারপর রাত্রি শেষে
ফিরে যায়, পেছনে রেখে যায় একগুচ্ছ পদছাপ, ও কয়েকটা পালক
মাটিতে করুণ দাগ কেটে একধ্যানে চেয়ে থাকে বিবাগী বালক
আমার কবিতাটির মূল স্ট্রাকচার ওটাই। ওটাকে অন্যভাবেও সাজানো যায়, যেমন :
সে এক ক্ষণজন্মা পাখি, প্রতিটা গোপন সাঁঝে
অরূপ পাথারে নেমে এসে অলৌকিক সুর তোলে গানে।
তারপর রাত্রি শেষে ফিরে যায়, পেছনে রেখে যায়
একগুচ্ছ পদছাপ, ও কয়েকটা পালক। মাটিতে করুণ
দাগ কেটে একধ্যানে চেয়ে থাকে বিবাগী বালক
***
এবার উপরে উদ্ধৃত বাকি গদ্য দুটোকে আমরা কবিতার মতো সাজাই। দেখুন এর প্রকৃত রূপ কেমন হয়।
***
আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ।
এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ
পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা
আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা
করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে
থাকি- তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে
হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,
মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি
অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-
(ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)
আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়ির ছেলে
সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক
ঘামে ছিল না এমন গন্ধক
যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পারি। নিখিলেশ, তুই একে
কী বলবি? আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেরেকে
বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কি না;
আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না।
আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম,
আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
নিখিলেশ, আমি এই-রকমভাবে বেঁচে আছি, তোর সঙ্গে
জীবন বদল করে কোনো লাভ হলো না আমার -একই নদীর তরঙ্গে
ছেলেবেলার মতো ডুবসাঁতার?- অথবা চশমা বদলের মতো
কয়েক মিনিট আলোড়ন? অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত
দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা? কেননা সময় নেই, আমার ঘরের
দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়। মৃত গাছটির পাশে উত্তরের
হাওয়ায় কিছুটা মায়া লেগে ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে
দেখি উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল, তবুও অক্লেশে
হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি। আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার
একটি মুহূর্ত চেয়েছিলাম, একটি …, ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার;
ইচ্ছে ছিল না জানাবার
এই বিশেষ কথাটা তোকে। তবু ক্রমশই বেশি করে আসে শীত, রাত্রে
এ-রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না, রোজ অন্ধকার হাতড়ে
টের পাই তিনটে ইঁদুর না মূষিক? তা হলে কি প্রতীক্ষায়
আছে অদূরেই সংস্কৃত শ্লোক? পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এই অবেলায়
কিছুই মনে পড়ে না। আমার পূজা ও নারী-হত্যার ভিতরে
বেজে ওঠে সাইরেন। নিজের দু’হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে
তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের। আজকাল আমার
নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। এরকম সত্য
পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।।
***
প্রমোদ-উদ্যানে কাঁদে দানব-নন্দিনী
প্রমীলা, পতি-বিরহে-কাতরা যুবতী।
অশ্রুআঁখি বিধুমুখী ভ্রমে ফুলবনে
কভু, ব্রজ-কুঞ্জ-বনে, হায় রে যেমনি
ব্রজবালা, নাহি হেরি কদম্বের মূলে
পীতধড়া পীতাম্বরে, অধরে মুরলী।
কভু বা মন্দিরে পশি, বাহিরায় পুনঃ
বিরহিণী, শূন্য নীড়ে কপোতী যেমতি
বিবশা! কভু বা উঠি উচ্চ-গৃহ-চূড়ে,
এক-দৃষ্টে চাহে বামা দূর লঙ্কা পানে,
অবিরল চক্ষুঃজল পুঁছিয়া আঁচলে!—
নীরব বাঁশরী, বীণা, মুরজ, মন্দিরা,
গীত-ধ্বনি। চারি দিকে সখী-দল যত,
বিরস-বদন, মরি, সুন্দরীর শোকে!
কে না জানে ফুলকুল বিরস-বদনা,
মধুর বিরহে যবে তাপে বনস্থলী?
উতরিলা নিশা-দেবী প্রমোদ-উদ্যানে।
শিহরি প্রমীলা সতী, মৃদু কল-স্বরে,
বাসন্তী নামেতে সখী বসন্ত-সৌরভা,
তার গলা ধরি কাঁদি কহিতে লাগিলা,—
“ওই দেখ, আইল লো তিমির যামিনী
কাল-ভুজঙ্গিনী-রূপে দংশিতে আমারে,
বাসন্তি! কোথায়, সখি, রক্ষঃ-কুল-পতি,
অরিন্দম ইন্দ্রজিৎ, এ বিপত্তি কালে?
এখনি আসিব বলি গেলা চলি বলী;
কি কাজে এ ব্যাজ আমি বুঝিতে না পারি।
তুমি যদি পার, সই, কহ লো আমারে।”
কহিলা বাসন্তী সখী, বসন্তে যেমতি
কুহরে বসন্তসখা,— “কেমনে কহিব
কেন প্রাণনাথ তব বিলম্বেন আজি?
কিন্তু চিন্তা দূর তুমি কর, সীমন্তিনি!
ত্বরায় আসিবে শূর নাশিয়া রাঘবে।
কি ভয় তোমার সখি? সুরাসুর-শরে
অভেদ্য শরীর যাঁর, কে তাঁরে আঁটিবে
বিগ্রহে? আইস মোরা যাই কুঞ্জ-বনে।
সরস কুসুম তুলি, চিকণিয়া গাঁথি
ফুলমালা। দোলাইও হাসি প্রিয়গলে
সে দামে, বিজয়ী রথ-চূড়ায় যেমতি
বিজয়পতাকা লোক উড়ায় কৌতুকে।”
***
ফ্রি ফার্স বা অমিত্রাক্ষর ছন্দকে অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত বলা যায়। কিন্তু যখন মুক্তক অক্ষরবৃত্তের মধ্যে অন্ত্যানুপ্রাস পাবেন, তখন ওটিকে ‘সমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত’ বলা হবে। উদ্ধৃত কবিতা দুটির প্রথমটি সমিল এবং পরেরটি অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্তের উদাহরণ।
৪-৮ মে ২০১৪ তারিখে আমি ফেইসবুকে নীচের কবিতাংশ উদ্ধৃত করে কবির নাম জানতে চেয়েছিলাম। কেউ বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, কেউ মাইকেল মধুসূদনের নাম বলেছিলেন।
ক্ষণে ক্ষণে তরঙ্গের ’পরে গগনের
স্নিগ্ধ শান্ত আলোখানি বিচ্ছুরিত হয়ে
যেন লাগে; ফুটে ওঠে সোনার কমল
ক্ষণিক সৌরভে তার নিখিলেরে করিয়া
বিহ্বল। সেই পদ্মখানি এনে দেয় মোর
পরিচয় পল্লবসম্পুটে। বিস্ময়ে বিমুগ্ধ
হয়ে পড়ি আমি লিখন তাহার, ‘হে তরুণ,
দস্যু নহো, পশু নহো, নহো তুচ্ছ কীট-
শাপভ্রষ্ট দেব তুমি।’
শাপভ্রষ্ট দেব আমি! আমার নয়ন
তাই বন্দি যুগ-বিহঙ্গের মতো দেহের
বন্ধন ছিড়ি শূন্যতায় উড়ি যেতে চায়
আকণ্ঠ করিতে পান আকাশের উদার
নীলিমা। তাই মোর দুই কর্ণে অরণ্যের
পল্লবমর্মর প্রেমগুঞ্জনের মতো
কী অমৃত ঢালে মর্ম-মাঝে। রবির
গভীর স্নেহে, শিশিরের শীতল প্রণয়ে
শুষ্ক শাখে তাই ফোটে ফুল, দক্ষিণপবন
তারে মৃদু হাস্যে আন্দোলিয়া যায়। রাত্রির
রাজ্ঞীর বেশে পূর্ণচন্দ্র কভু দেয় দেখা,
আঁধারের অশ্রুকণা আঁধারের মাণিক্য
হয়ে জ্বলে ত্রিযামার জাগরণ-তলে।
স্তব্ধ চিত্তে চেয়ে থাকি; অন্তরের নিরুদ্ধ
বেদনা। সযত্নে সাজাই নিত্য উৎসবের
প্রদীপের মতো আনন্দের মন্দির সোপানে।
সুধায় নির্মিত মোর দেহসৌধখানি,
ইন্দ্রিয় তাহার বাতায়ন- মুক্ত করি
রাখি তারে আকাশের অকূল আলোকে
অন্ধকার-অন্তরালে অন্তরের মাঝে
বিনিঃশেষ করি যে গ্রহণ। অক্ষম,
দুর্বল আমি নিঃস্বমূল নীলাম্বর-তলে,
ভঙ্গুর হৃদয়ে মমবিজড়িত সহস্র পঙ্গুতা-
জীবনের দীর্ঘ পথে যাত্রা করেছিনু
কোন স্বর্ণরেখাদীপ্ত ঊষাকালে- আজ
তার নাহিকো আভাস। আজ আমি ক্লান্ত
হয়ে পথপ্রান্তে পড়ে আছি নীরব ব্যথায়
শান্ত মুখে ঝরে-পড়া বকুলের গন্ধস্নিগ্ধ
বিজন বিপিনে। সেই মোর গোধূলীর
সুরভি আঁধারে যার সাথে দেখা, যার
সাথে সঙ্গোপনে প্রণয়গুঞ্জন, যার
স্পর্শে ক্ষণে ক্ষণে হৃদয়ের বেদনার
মেঘে চমকিয়া খেলি যায় হর্ষের বিজলি,-
নেত্রের মুকুরে তার দেখেছি আপন
প্রতিচ্ছবি, দেখিয়াছি দিনে-দিনে, ক্ষণে-ক্ষণে
আপনার ছায়া, দেখিয়াছি কান্তি মম
দেবতার মতো অপরূপ, ভাস্করের
মতো জ্যোতির্ময়,- তখন বুঝেছি প্রাণে,
আমি চিরন্তন পুণ্যচ্ছবি, নিষ্কলঙ্ক রবি।
প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য কারাগারে চিরন্তন
বন্দি করি রচেছো আমায়! নির্মম নির্মাতা মম-
এ কেবল অকারণ আনন্দ তোমার! মনে করি,
মুক্ত হবো; মনে ভাবি রহিতে দিব না মোর তরে
এ-নিখিলে বন্ধনের চিহ্নমাত্র আর।
***
সারাংশ নয়
আপনাদের কারো মনে কোনো সংশয় ছিল না প্রথমোক্ত কবিতা দুটি কার লেখা, কিন্তু পরেরটি কোনো সুপরিচিত কবিতা না, তবে একজন বিখ্যাত কবির কবিতা এটি। এখানে কবিতাটিকে যে আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে, বেসিক স্ট্রাকচার এটা নয়। কারো যদি কবিতাটি আগে পড়া না থাকে, তাহলে এ কবিতার ভাবগাম্ভীর্য, শব্দ-চয়ন, ইত্যাদি থেকে অনুমান করে কবির নাম নির্ণয় করা সুকঠিনই বটে। এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো- কবিতাকে আমরা যে প্যাটার্নেই সাজাই না কেন, কবিতা তার নিজের জায়গাতেই থাকে, শুধু বাহ্যিক রূপটা আমরা বদলাতে থাকি- পয়ার, ফ্রি-ভার্স, উভলিঙ্গ, মুক্তগদ্য, সনেট- ইত্যাদি।
কবিতা যেভাবে গদ্যের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে, তাতে একদিন রবীন্দ্রনাথের অনেক গদ্য বা প্রবন্ধকে কবিতা মনে হবে। আর আমরা অবাক হয়ে দেখবো যে, কাজী নজরুল ইসলামের সব গদ্য কবিতা কিংবা মুক্তগদ্য হয়ে গেছে।
নামে আর কী যায় আসে- এ কথাটা আমার মুদ্রাদোষ। যা লেখা হলো, যা পাঠ হলো- তা যদি নিজের গুণ ও গুরুত্বে কালের পাতায় ঠাঁই করে নিতে পারে- তাহলে সেটাই হবে উৎকৃষ্ট কবিতা, মুক্তগদ্য বা ফ্রি-ভার্স।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অভিনন্দন লেখোয়াড় ভাই প্রথম হওয়ার জন্য
২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৬
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: +++++++
ভালো থাকবেন, এমন লেখা আরো লিখবেন
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: গুনে গুনে সাত-সাতটি প্লাস দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপু। এমন লেখা আরও লিখবার জন্য অবশ্যই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
শুভেচ্ছা।
৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২৭
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: বেশ কিছু জিনিস জানলাম ভাইয়া !
পোষ্টের মূল বক্তব্যে সহমত না জানানোর উপায় নেই , এমন পোষ্ট আপনার কাছ থেকেই প্রত্যাশা করি !
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এসব বিষয়ে আপনার মধ্যেও আমি প্রবল আগ্রহ লক্ষ করেছি। খুব ভালো লাগে আমার।
ধন্যবাদ অভি ভাই।
৪| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩
আমি ময়ূরাক্ষী বলেছেন: খুব ভালো লাগলো। মুক্তগদ্য বা ফ্রি ভার্স সম্পর্কে অনেকেরই জানার আগ্রহ আছে নিশ্চয়। দরকারী ওঔপকারী লেখাটির জন্য কৃতজ্ঞতা।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ ময়ূরাক্ষী। শুভেচ্ছা।
৫| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৭
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: দারুন একটা পোস্ট ভ্রাতা । ২য় ভালোলাগা +
অনেক কিছু জানা হল । Maximus Millius : নিদ্রা আর তন্দ্রায় যে পার্থক্য- আমার কাছে কাব্য নিদ আর গদ্য ঘোর। ওনার ব্যাখ্যাটা ভালো লেগেছে খুব ।
ভালো থাকবেন সবসময়
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ রায়হান ভাই। আমার আইকন দেখেই আপনাকে চেনা চেনা লাগছিল, এজন্য মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে আপনিই ‘অপূর্ন’ থেকে ‘অপূর্ণ রায়হান’ নাম ধারণ করেছেন।
আমি কথাটার সাথে একটু দ্বিমত পোষণ করি। যে লেখায় ঘোর সৃষ্টি হয়, সে লেখাটিই কবিতা। মোহময়তা, তন্ময়তা, ঘোরগ্রস্ততা সৃষ্টি করা হলো কবিতার অনিবার্য বৈশিষ্ট্য। আপনার লেখার দৈর্ঘ্য বা চেহারা বা আঙ্গিক যাই হোক না কেন, ঘোরের আবহ থাকলে সেটা কবিতা না হয়ে পারে না। আর গদ্যের যে ভাষা (কবিতা নয়), তা কবিতার ভাষা (তা গদ্যের আঙ্গিকেই হোক, বা কবিতার প্রচলিত আঙ্গিকেই হোক) থেকে পৃথক হতে বাধ্য।
ভালো থাকবেন রায়হান ভাই।
৬| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৮
মামুন রশিদ বলেছেন: চমৎকার পোস্ট । অনেক কিছু জানলাম ।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই। ভালো থাকবেন।
৭| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৯
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
আবোল-তাবোল-যাচ্ছেতাই লেখালেখিও কবিতা হয়। ওইটা এমনই কিসের আবার মুক্তগদ্য ভালো লেখা, সোনাবীজ।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ অন্ধবিন্দু।
কবিতাকে ভেঙেচুরে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন মাত্রায় বা মাত্রাহীনতায় পুনর্বিন্যাস করার খেলাটা আমার কাছে খুব মজার লাগে। সেই মজার কেচ্ছাই এ পোস্টে বলতে চেয়েছিনু
ভালো থাকবেন।
৮| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৮
স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
কবিতা নিয়ে আপনার গবেষণা
ছন্দ কিংবা শব্দের চাষাবাদ দেখে সমীহ জাগে !
‘মুক্তগদ্য’ বা ‘ফ্রি-ভার্স’ চমৎকার একটি বিষয়,
অচিরেই আমার এ রকম লেখা পাবেন আশা করি !
ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে দেখি
উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল !
খুব প্রিয় কবিতা উপমায় দিয়েছেন ভ্রাতা ।
আরও সময় নিয়ে লেখাটি পড়তে হবে ।
অনেক ভালো থাকুন প্রিয় সোনাবীজ ! +++
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ স্বপ্নচারী গ্রানমা। আপনার পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম।
ভালো থাকবেন।
৯| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৭
জুন বলেছেন: কবিতায় এমন স্বিকৃত মুক্তগদ্য স্টাইল না থাকলে আমি কি জীবনে কবিতা লেখার দুঃসাহস করতাম ছাই ভাই
বরাবরের মত জ্ঞ্যনগর্ভ একটি লেখা আপনার ।
+
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কোনো এক জায়গায় একটা গল্প বলেছিলাম
আমরা তখন কোন্ ক্লাসে পড়ি ঠিক মনে নেই, কিন্তু প্রচুর কবিতা লিখি। লিখি আর মনে মনে ভাবি আমি নজরুলকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি অচিরেই। কিন্তু কবিতার ভাব ও ভাষা বা শব্দগুলো আবার নজরুলের কবিতা থেকে নেয়া।
সেই সময়ের ঘটনা।
এস এস সি পরীক্ষার্থীদের বিদায়ী অনুষ্ঠান। বক্তব্য, গান, কবিতা হচ্ছে। উপস্থাপক ঘোষণা করলেন, এবার আমাদের সদ্য স্কুলে যোগ দেয়া শিক্ষক তাঁর নিজের লেখা গান গেয়ে শোনাবেন। আমরা নড়েচড়ে বসলাম, এবং অধীর আগ্রহে গান শোনার জন্য অপেক্ষা করছি।
নবীন শিক্ষক সুদর্শন ছিলেন। তিনি হাস্যমুখে স্টেজে উঠে আসলেন। বললেন, আমি আসলে কবিতা লিখেছি, কিন্তু ওটাতে কোনো সুর দেয়া হয় নি এখনো। তারপর তিনি কবিতা পাঠ শুরু করলেন। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছিলাম। কারণ তার কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’ কিংবা নজরুলের ‘সিন্ধু’, জসীমউদ্দীনের ‘কবর’, বন্দে আলী মিয়ার ‘কলমিলতা’, ইত্যাদি কোনোটার মতোই ছিল না। মনে হচ্ছিল স্যার যেভাবে সবার সাথে কথা বলেন, তেমনি একটা কাগজ দেখে দেখে কথা বলছেন।
পরে অন্যান্য স্যারদের কাছ থেকে জানলাম- এর নাম গদ্য কবিতা। এ কবিতায় কোনো ছন্দ লাগে না।
ছন্দ ছাড়া কবিতা হয়? আমি লাফ দিয়ে উঠে বললাম, তাহলে এত কষ্ট করে ছন্দ মিলাবার জন্য মরে যাচ্ছি কেন?
ব্যস, আমি ‘গদ্যকবিতা’র সন্ধান পেয়ে গেলাম। এরপর হাতে পেলাম ‘সুকান্ত সমগ্র।’ আমার সামনে নতুন পৃথিবী।
গদ্য লেখার চেয়ে কবিতা লেখা অনেক বেশি কষ্টকর। কবিতামাত্রই তাতে ছন্দ থাকে (এমনকি গদ্যেও), কিন্তু কবিতায় পঙ্ক্তির শেষে মিল সৃষ্টি করতে গেলে কষ্টের মাত্রা বহুগুণ যে বেড়ে যায়, তা বলাই বাহুল্য।
এজন্য বলি, গদ্যকবিতার জন্ম না হলে আমিও কবিতা লিখতে পারতাম না
ধন্যবাদ আপু।
১০| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৩
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
ভাল একটা পোস্ট। অনেক কিছু জানলাম। +++++++
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। শুভেচ্ছা জানবেন।
১১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৫
আহমেদ জী এস বলেছেন: সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই ,
খুব কাজের পোষ্ট । আধেকটা দেখেছি বা্কিটুকু দেখবো বলে তুলে রাখলুম । এ জাতীয় লেখা একশ্বাসে পড়ার নয় বলেই ।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুন্দর একটা মূল্যায়ন করেছেন, যা দেখে প্রাণ ভরে গেলো- এ জাতীয় লেখা একশ্বাসে পড়ার নয়।
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি।
ভালো থাকবেন।
১২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৮
সুমন কর বলেছেন: কবি, বিশাল পোস্ট। অনেক কিছু জানার অাছে। কিছুটা পড়ে, সাথে করে নিয়ে গেলাম। সময় করে পড়তে হবে।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় সুমন ভাই। সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরেকবার ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
১৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪০
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক চিন্তার খোরাক দিলেন খলিল ভাই। ধন্যবাদ। আপনি যে নামগুলো ব্যবহার করেছেন সে বিষয়ে আমার কিছু ভিন্ন পর্যবেক্ষণ আছে। সবিনয়ে তা তুলে ধরছি:
বাংলা কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক হিসাবে সবাই মাইকেল মধুসূদন দত্তকেই স্বীকার করেন। তিনি পয়ারের মাত্রা সংখ্যা স্বীকার করে অন্ত্যমিল বর্জন করেন এবং পর্ব বিভাগে ভিন্নতা এনেছেন। অন্ত্যমিল না থাকা্র জন্যই এর নাম অমিত্রাক্ষর। এর সাথে ইংরেজি যে ছন্দের মিল আছে তার নাম ব্ল্যাংক ভার্স (Blank verse is poetry written in regular metrical but unrhymed lines, almost always iambic pentameters. It has been described as "probably the most common and influential form that English poetry has taken since the 16th century" and Paul Fussell has estimated that "about three-quarters of all English poetry is in blank verse.")
ফ্রি ভার্স একটু ভিন্নধর্মী কবিতা (Free verse is an open form of poetry. It does not use consistent meter patterns, rhyme, or any other musical pattern. It thus tends to follow the rhythm of natural speech.)
রবীন্দ্রনাথ প্রবর্তিত মুক্তক ছন্দ কিছুটা ফ্রি ভার্স আর কিছুটা ব্ল্যাংক ভার্সের আদলে।
বেশ কিছুদিন থেকে ব্লগে এবং কিছু লিটল ম্যাগাজিনে মুক্তগদ্য নামে যে লেখাগুলো দেখছি তার সাথে ফ্রি ভার্সের কিছু সাদৃশ্য আছে। তবে মুক্তগদ্যের রচনা শৈলী নিয়ে কোন লেখা আমার চোখে পড়েনি।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রিয় মোস্তফা কামাল ভাই, আপনিও আপনার মন্তব্যের দ্বারা চিন্তার অনেক খোরাক দিলেন। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়েই বিনয়ের সাথে শুরু করছি।
পোস্টের শিরোনাম- কবিতা ভাঙবার মজা, বা খেলা কবিতাকে ভেঙেচুরে সাজানোর বিষয়টা আমার কাছে খুব মজার মনে হয়েছে। এটা যে আমারই বেসিক আইডিয়া তা নয়। রবীন্দ্রনাথের ছন্দ-সম্পর্কিত কিছু প্রবন্ধে দেখা গেছে যে, একটা পঙ্ক্তিকে ভেঙে ফেললে ছন্দ বদলে যায়। তিনি আবার ভেঙে ফেলা পঙ্ক্তিতে কিছু ধ্বনি বা অক্ষর যোগ-বিয়োগ করে মাত্রাসংখ্যা বাড়িয়েছেন বা কমিয়েছেন। আমি দেখেছি, এর ফলে সবচেয়ে বড় যে কাজটি হয় তা হলো আবৃত্তির ঢংটাই বদলে যাওয়া।
মূলত, ছন্দের প্রয়োজন হলো আবৃত্তির জন্য, বা পাঠের জন্য। আমার এই অল্প বয়সেই আবৃত্তিকারদের মধ্যে কবিতা নির্বাচনে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করছি। আশির দশকে রেডিওতে যেসব কবিতা আবৃত্তি করা হতো, বা কবিতার যেসব ক্যাসেট দেখা যেতো, তাতে বেশিরভাগই থাকতো অন্ত্যমিল সম্পন্ন স্বরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা। এরপর এখন দেখুন। এরূপ অন্ত্যমিল সম্পন্ন কবিতা আজকাল খুব কম আবৃত্তিকারগণই আবৃত্তির জন্য বেছে থাকেন।
ব্ল্যাংক ভার্স বা অমিত্রাক্ষর পয়ারে নির্দিষ্ট মাত্রার দুটি পর্ব থাকে, কিন্তু কোনো অন্ত্যমিল থাকে না। কিন্তু দয়া করে আমার পোস্টের শিরোনাম আবারও দেখুন- কবিতার পঙ্ক্তি ভেঙেচুরে আমি এই পর্ববিন্যাসকে উধাও করে দিয়েছি পয়ারকে সাজিয়ে দিয়েছি নিছক গদ্যের প্যাটার্নে। মেঘনাদ বধ-এর পুনর্বিন্যস্ত অনুচ্ছেদে কোনো পর্ব-যতি বা বিরতি বলে কিছু নেই। It thus tends to follow the rhythm of natural speech.
আমি কবিতার প্যাটার্নের ব্যাপারে এটাই বলতে চেয়েছিলাম।
যতক্ষণ পর্যন্ত অন্ত্যমিল না রেখে বাংলায় ১৪ অক্ষর এবং ইংরেজিতে ১০ সিলেবল আকারে লেখা হবে, ওটা যথাক্রমে অমিত্রাক্ষর পয়ার বা ব্ল্যাংক ভার্সই থাকবে। কিন্তু মূলে যে এরা অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত বা ফ্রি ভার্স ছাড়া আর কিছু নয়, সে জিনিসটাই আমি সুনীল আর মধুসূদনের দুটি কবিতা পুনর্বিন্যাস করে দেখানোর চেষ্টা করেছি। আর বিভিন্ন যায়গায় মুক্তগদ্য বা মুজিব মেহদী ভাইয়ের ‘উভলিঙ্গ’ রচনা আকারে আমরা যা দেখি, তাও যে অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত বা ফ্রি-ভার্স ছাড়া অন্য কিছু নয়, এবং খোদ সৈয়দ আলী আহসান থেকে শুরু করে শামসুর রাহমান পর্যন্ত সবাই ফ্রি ভার্স লিখে গেছেন- আমি এটা বলতে চেয়েছি মাত্র। গদ্য মূলত মুক্ত বস্তু। তার আগে ‘মুক্ত’ বিশেষণ যোগ করা নিষ্প্রয়োজন।
আর ছন্দ সমীক্ষণ ব্যাপারটা এমন যে, অনেক বিষয়েই পণ্ডিতদের মধ্যে দ্বিমত ছিল। আমি সামান্য পাঠক। আমার বোঝ ও বোধ দুটোই যে খুব সামান্য, তা বিবেচনায় আনলেই বুঝতে সক্ষম হবেন যে আপনার আর আমার মধ্যেও সামান্য মতানৈক্য থাকা সম্ভব। তবে, এই মতানৈক্য পজিটিভলি নিলে নতুন করে ভাববার ও গবেষণা করার প্রবৃত্তি সৃষ্টি হবে।
ধন্যবাদ মোস্তফা কামাল ভাই, মূল্যবান কমেন্টের জন্য।
১৪| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৪
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ফ্রি ভার্সের সাথে নাট্যকার গিরিশ চন্দ্র প্রবর্তিত গৈরিশ ছন্দের প্রচুর মিল।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
Free Verse by Robert Graves :
I now delight
In spite
Of the might
And the right
Of classic tradition,
In writing
And reciting
Straight ahead,
Without let or omission,
Just any little rhyme
In any little time
That runs in my head;
Because, I’ve said,
My rhymes no longer shall stand arrayed
Like Prussian soldiers on parade
That march,
Stiff as starch,
Foot to foot,
Boot to boot,
Blade to blade,
Button to button,
Cheeks and chops and chins like mutton.
No! No!
My rhymes must go
Turn ’ee, twist ’ee,
Twinkling, frosty,
Will-o’-the-wisp-like, misty;
এটাকে বাংলার সাথে তুলনা করা হলে এটি হবে ‘সমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত’, যেমন সুনীলের ‘আমার দেরি হয়ে যায়’ বা ‘আমী কীরকম ভাবে বেঁচে আছি’।
Kipling’s The Law of the Jungle :
“Wash daily from nose-tip to tail-tip; drink deeply, but never too deep;And remember the night is for hunting, and forget not the day is for sleep.The Jackal may follow the Tiger, but, Cub, when thy whiskers are grown,Remember the Wolf is a Hunter -- go forth and get food of thine own.Keep peace withe Lords of the Jungle -- the Tiger, the Panther, and Bear.And trouble not Hathi the Silent, and mock not the Boar in his lair.”
এটা বাংলায় ‘অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত’র সাথে তুলনীয়, সুনীল আর মধুসূদনের কবিতাকে গদ্যাকারে সাজালে যেরূপ হয়।
আবারও অনেক ধন্যবাদ মোস্তফা কামাল ভাই।
১৫| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৭
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
কবিতা ও শব্দ নিয়ে আপনার গবেষণাকর্মখানি দেখিলাম...
মুগ্ধ হইবার দ্বিতীয় সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞতা........
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার মুগ্ধ হইবার প্রথম সুযোগটা আমি মিস করে ফেলেছি প্রিয় মাঈনউদ্দিন ভাই। আপনার উপস্থিতি বিপুল আনন্দদায়ক আমার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। শুভেচ্ছা জানবেন ।
১৬| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৮
জাফরুল মবীন বলেছেন: চিন্তার খোরাক যোগাবে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানলাম।
ইদানীং কবিতা লিখতে খুব ইচ্ছে করে
ধন্যবাদ অাপনাকে।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কোথায় যেন দেখলাম আপনাকে ‘জাম’ ভাই বলে সম্বোধন করা হয়েছে। প্রথমে একটু উষ্মা হলেও পরে এর গূঢ়ার্থ ধরতে পেরে এ নামের প্রবর্তকের সৃষ্টিশীলতায় আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম
আপনার কবিতা পড়ার জন্য খুব আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে ‘জাম’ ভাই।
অনেক ধন্যবাদ পোস্টে আসার জন্য।
ভালো থাকবেন।
১৭| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৮
ডার্ক ম্যান বলেছেন: এত বিশাল তথ্য নির্ভর উপকারী পোস্টের জন্য আপনার ধৈর্য্যের প্রশংসা করতে হয়। আপনার জন্য রইলো ৪৮+।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ৪৮+ এর জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ডার্ক ম্যান। আরও ধৈর্যের অধিকারী যেন হতে পারি সে দোয়া করবেন।
শুভেচ্ছা।
১৮| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৩
আবু শাকিল বলেছেন: দামি পোষ্ট ।
‘ফ্রি ভার্স’ সম্পর্কে জানলাম।
প্রিয়তে নিলাম এবং পোষ্টে লাইক।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রিয়তে নেয়া এবং লাইক-এর জন্য অনেক ধন্যবাদ আবু শাকিল ভাই। ভালো থাকবেন।
১৯| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৮
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
দুঃখিত এত সুগভীর একটি লেখায় আমার মন্তব্যটি খুবই ছোট হয়ে গেছে। এটি রীতিমতো অবমূল্যায়নের পর্যায়ে পড়ে। পরে আবার আসছি, সোনাবীজ ভাই।
প্রথম পর্বটি অন্যত্র পড়েছি। তারপরও দ্বিতীয় বললে ভুল হবে.... কারণ পূর্বে অনেকবার মুগ্ধ হয়েছি।
শুভ রাত্রি!
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার ফিরতি কমেন্টে অনেক অনেক অনুপ্রেরণা পেলাম। বলা নিষ্প্রয়োজন যে, কমেন্ট ছোটো বা বড় কোনো ব্যাপার না, আপনি এসে একটা মূল্যবান কথা বলে গেলেন, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
আবারও ধন্যবাদ মাঈনউদ্দিন ভাই।
২০| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪২
কলমের কালি শেষ বলেছেন: দারুন গবেষনাধর্মী লেখা । কষ্টকর পোষ্টে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা । আলমিরাতে তুলে রাখলাম আর আলমিরার ড্রয়ার থেকে পিলাচ দিলাম +++++++....
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি কলমের কালি। ভালো থাকবেন।
২১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৩
হামিদ আহসান বলেছেন: প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য ..............
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ হামিদ আহসান ভাই। অনেক ভালো থাকবেন।
২২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:১৭
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম লেখা , আস্তে আস্তে পড়বো।
বিশাল পোস্ট ।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নাজমুল ভাই। ভালো থাকবেন।
২৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৪৮
ডট কম ০০৯ বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম। শিখলাম ও বটে।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আরমান ভাই কেমন আছেন?
২৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৪
আহসান জামান বলেছেন:
অনেক অনেক ভালো পোষ্ট, প্রিয়তে।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ জামান ভাই। দেখে ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা।
২৫| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২১
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
অনেক অজানা বিষয় জানলাম।
ধন্যবাদ ভাই।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায়। অনেকদিন পর দেখা হলো। আশা করি ভালো ছিলেন।
শুভেচ্ছা।
২৬| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৬
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
শুধু কবিতাকেই ভাঙেন নি, ছন্দ এবং ভাষারীতিকেও ভেঙ্গে সরল করে দিয়েছেন। একটি অনবদ্য পোস্ট। নতুন পুরাতন সকলের জন্যই পথনির্দেশক হবে।
যাদের লেখায় ভাবার মতো কিছু পাই, আপনি তাদের মধ্যে অন্যতম। এই কথাটিই বলতে না পেরে অতৃপ্তি প্রকাশ করেছি পূর্বের মন্তব্যে। দীর্ঘ বা নাতিদীর্ঘ নিয়ে আমার নিজেরও কোন মাথাব্যথা নেই।
শুভেচ্ছা জানবেন, প্রিয় সোনাবীজ ভাই.........
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এত বড় কমপ্লিমেন্ট আপনার কাছ থেকে পেলাম, আমার সৌভাগ্য। অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা, প্রিয় মাঈনউদ্দিন ভাই।
শুভেচ্ছা।
২৭| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪০
তুষার কাব্য বলেছেন: অনেক সময় নিয়ে পড়লাম..মুক্তগদ্য অথবা ফ্রি ভার্স সম্পর্কে যে বিশদ আলোচনা করেছেন আপনি তাতে অনেক কিছু জানা হলো...ভালো থাকুন অনেক...
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ তুষার কাব্য। অনেকদিন পর আপনাকে দেখে আহ্লাদিত বোধ করছি।
ভালো থাকবেন।
২৮| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০১
নস্টালজিক বলেছেন: ঠিক এ এরকম একটা লেখা মনে মনে খুঁজছিলাম, খলিল ভাই। আপনি অন্তর্জামী।
প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম। বিশদ লেখার ইচ্ছে রইলো।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: খুব গর্ব হচ্ছে এটা জেনে যে আমি আপনার অন্তর্যামী
অনেক ধন্যবাদ রানা ভাই। আপনার বিশদ লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
শুভেচ্ছা।
২৯| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৪৬
অচিন্ত্য বলেছেন: খুব সুন্দর পরিশ্রমী লেখা। আমার যতদূর মনে পড়ে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর 'শ্যামলী' কাব্যগ্রন্থের প্রায় সবগুলো কবিতাই এ ধরণের। ভাল লেগেছে।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অচিন্ত্য। আপনার গান লেখা, সুর করা আর গাওয়া কেমন চলছে?
***
‘শ্যামলী’র কবিতাগুলো অমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্তে লেখা। ওগুলোকে গদ্যের অনুচ্ছেদ আকারে সাজালে কী রকম হয়, নীচে নমুনা দেখুন
***
রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি কোনোদিন সম্ভব হবে।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
লালরঙের শাড়িতে
ডালিম ফুলের মতো রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে
মাথায় আঁচল তুলেছে।
মনে হলো, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
নিজের চারদিকে ঘনিয়ে নিয়েছে,
যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।
সমস্ত মন থমকে গেলো;
চেনা লোককে দেখলাম অচেনার গাম্ভীর্যে।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে নমস্কার করলো।
খুলে গেলো সমাজবিধির পথ,
আলাপ শুরু করলাম—
কেমন আছো, কেমন চলছে সংসার, ইত্যাদি।
সে জানলার বাইরের দিকে চেয়ে রইলো
কাছের দিনের ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব দিল,
কোনোটা বা দিলই না।
হাতের অস্থিরতায় বুঝিয়ে দিল—
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা।
আমি ওর সাথিদের সঙ্গে
অন্য বেঞ্চিতে ছিলাম
এক সময়ে আঙুল নেড়ে কাছে আসতে বললো।
মনে হলো কম সাহস নয়;
ওর এক-বেঞ্চিতে বসলাম।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
মৃদুস্বরে বললো,
'কিছু মনে করো না,
সময় কোথায় সময় নষ্ট করবার?
পরের স্টেশনেই আমাকে নামতে হবে;
তুমি দূরে যাবে,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতোকাল থেমে আছে,
তোমার মুখে শুনবো।
সত্য করে বলবে তো?'
আমি বললাম , 'বলবো।'
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই বললো,
'আমাদের যে দিন চলে গেছে
একেবারেই কি গেছে,
কিছুই কি বাকি নেই?'
একটুকু চুপ করে থাকলাম;
তারপর বললাম,
'রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।'
খটকা লাগলো, কী জানি বানিয়ে বললেম নাকি?
সে বললো, 'থাক্ , এখন ওদিকে যাও।'
সবাই পরের স্টেশনে নেমে গেলো;
আমি চললাম একা।
***
হঠাৎ রেলগাড়ির কামরায় দেখা- এ সম্ভব হবে কোনোদিন ভাবি নি। আগে ওকে বহুবার লাল রঙের শাড়িতে দেখেছি- ডালিম-ফুলের মতো রাঙা; আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়, দোলন-চাঁপার মতো চিকন-গৌর মুখটি ঘিরে মাথায় আঁচল তুলেছে। মনে হলো, নিজের চারদিকে কালো রঙের একটা গভীর দূরত্ব ঘনিয়ে নিয়েছে, সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায় শালবনের নীলাঞ্জনে যে-দূরত্ব। আমার সমস্ত মন থমকে গেলো : চেনা লোককে অচেনার গাম্ভীর্যে দেখলাম।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে আমাকে নমস্কার করলো। সমাজবিধির পথ খুলে গেলো। আমরা আলাপ শুরু করলাম- ‘কেমন আছো’, ‘কেমন চলছে সংসার?’ ইত্যাদি।
কাছেরদিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে সে জানালার বাইরের দিকে চেয়ে রইল। অত্যন্ত ছোটো দু-একটা জবাব দিল, কোনোটা বা দিলই না। হাতের অস্থিরতায় বুঝিয়ে দিল- কেন এ-সব কথা, এর চেয়ে চুপ করে থাকা অনেক ভালো।
আমি অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে ছিলাম। এক সময়ে আঙুল নেড়ে কাছে আসতে বললো। অবাক হলাম- সাহস তো কম নয়! তবে উঠে গিয়ে ওর বেঞ্চিতেই বসলাম। গাড়ির আওয়াজের আড়ালে মৃদুস্বরে বললো, ‘কিছু মনে করো না, সময় নষ্ট করবার সময় কোথায়! আমাকে পরের স্টেশনেই নামতে হবে; তুমি দূরে যাবে, তাই, যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে, সেটি আজ তোমার মুখে শুনবো। সত্য করে বলবে তো?’
আমি বললাম, ‘বলবো।’
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই সে বললো, ‘আমাদের যে-দিন গেছে, একেবারেই কি গেছে- কিছুই কি বাকি নেই?’
একটু চুপ করে রইলাম; তারপর বললাম, ‘রাতের সব তারাই দিনের আলোর গভীরে লুকিয়ে আছে।’
খটকা লাগল- বানিয়ে বললাম নাকি!
ও বললো, ‘থাক, এখন যাও ওদিকে।’
সবাই পরের স্টেশনে নেমে গেলো। আমি চললাম একা...
৩০| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৮
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: অনবদ্য একটা লেখা । প্রিয়তে । আরো চাই এমন ।
আপনার কাছে কবিতার সংজ্ঞা কি ?
ভাল থাকুন প্রিয় ছাই ভাই ।
শুভকামনা রইল ।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
কবিতা কী?
বস্তুত কবিতার কোনো অর্থ হয় না। কবিতার সর্বজন-স্বীকৃত সারমর্মের অনুসন্ধানও যৌক্তিক নয়। কবিতার যদি কোনো অর্থ থেকেও থাকে, তা কেবল পাঠক-কল্পিত অর্থ, যা পাঠক ভেদে বহুবিধ। কবি অনেক সময় খামখেয়ালিভাবে কিছু একটা লিখে ছেড়ে দিতে পারেন; পাঠক সেটিকে রত্ন ভেবে এর বিরাট অর্থ তৈরি করে ফেলতে পারেন, যা পড়ে স্বয়ং কবিও হতবাক হয়ে যেতে পারেন। অনেক সময় কবিতা লিখবার কালে যে প্রেক্ষাপট ছিল, (হয়তো কবি নিজেও তার একটা মর্মার্থ স্থির করেছিলেন), কবিতাটি প্রকাশিত হবার পর ওটির একটি নতুন অর্থ তৈরি করবার প্রয়োজন পড়তে পারে।
আমার এ কথায় হয়তো কেউ একমত হবেন না। হয়তো বলবেন, প্রত্যেকটা কবিতারই একটা থিম থাকে। থিম ছাড়া কি কবিতা লেখা যায়? এ কথাটাই ঠিক যে, প্রত্যেকটা কবিতারই একটা থিম থাকে।..... এ ব্যাপারে আমি দুইশত ভাগ একমত। তবে কবিতার অর্থ, থিম, মূল বক্তব্য, ইত্যাদি নিয়ে কোনো এক সময় মুক্তমঞ্চে অনেক প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য আলোচনা হতো। আমি অনেকের অনেক কবিতা পড়ে খুব ক্ষুব্ধ হতাম ও বিরক্তি প্রকাশ করতাম, ওসবে কোনো মূল বক্তব্য খুঁজে না পাওয়ায়। আমার মতামতকে সাপোর্ট করার জন্য যেমন কেউ কেউ ছিলেন, বিপক্ষে দাঁড়ি্যে অনেকে তলোয়ারেও শান দিয়েছিলেন - কবিতার আবার অর্থ কী? তুমি পড়ে যা বোঝো তা-ই কবিতার অর্থ। কেউ কেউ বলতেন, কবিতার কোনো অর্থ হয় না, কেবল পাঠকের কাছে কবির ভাবটা অনূদিত হয়ে পৌঁছে থাকে। টিএস ইলিয়টের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে- কবিতা হলো সেই বস্তু যা বুঝবার আগেই হৃদয়কে স্পর্শ করে। এ থেকে বোঝা যায় কবিতার অর্থ থাকাটা জরুরি নয়।
কবিতা অনেক সময় সংকেতের মতো কাজ করে। কবিতা শুধু ভাবকে ধারণ করতেই সৃষ্ট, মনে হয় তা আজকাল চলবে না; কবিতা হলো শব্দ ভাঙা-গড়া-সাজানোর খেলা, শব্দের সর্বোত্তম বিন্যাস। পড়তে বা কানে শুনতে অপূর্ব, অর্থ খুঁজতে গেলে হয়তো দেখা যেতে পারে নিরেট মূল্যহীন একগুচ্ছ শব্দমাত্র।
কবিতার সংজ্ঞা এবং গতি-প্রকৃতি সত্যিই বিচিত্র। তাই যে লেখাকে আমি ‘ডাস্ট’ বলে নাক সিটকাই, ওটাই দেখা যায় অনেক পাঠকের কাছে খুব উঁচু মাপের কবিতা হিসাবে গণ্য হচ্ছে, এবং ভাইস-ভার্সা। জীবনানন্দ জীবদ্দশায় কবি-খ্যাতি সেভাবে পান নি, কারণ, তাঁর লেখাকে অনেকেই কবিতা বা ভালো কবিতা হিসাবে গণ্য করেন নি; সেই জীবন কি এখন আমাদের আধুনিক কবিতার প্রধান পুরুষ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে না?
কবিতার সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম; হয়তোবা কবিতার কোনো সংজ্ঞাই হয় না। কিন্তু একটা লেখাকে পড়েই কিন্তু আমরা বলে দিতে পারছি- এটা একটা কবিতা, বা নিছক গদ্য। এই যে বলে দেয়া গেলো- মনে হয় এর দ্বারাই বোঝা যায় কবিতা কীরূপ হওয়া উচিত। তবে যদি কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়, হয়তো দেখা যাবে কোনো সংজ্ঞাই মনের মতো নয়, অথবা সব সংজ্ঞাই আলাদা আলাদাভাবে কবিতাকে বুঝবার জন্য যথেষ্ট।
সূত্র
***
কবির জন্য
রাতভর ঝরে পড়ে গন্ধবকুলের নরম বয়স
এক আঁজল মেঘ গলে গেলে সূর্যের নিপুণ আভাসে ঘুম ভাঙে বিলাসী পাখির
তখন সুরগুলো দূরে মিশে যায়, মরা সারানির বিষণ্ণ স্রোতের মতো
একদিন কলাপাতা এ দেহে কাঁপন তুলেছিল। তোমার শরীরে
তালতমালের ঘ্রাণ ঘুরপাক খেতে খেতে ফুটিয়েছিল কামরাঙা ভ্রূণ
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই কবি হয়ে জন্মায়, প্রতিটি মানুষের মনে
কবিতার বীজ খোসা ছিঁড়ে উঁকি দেয় আশ্চর্য বাদলের গানে
তোমার বহ্নিমান দ্রোহের শরীরে অনাভাষ কবিতারা দুর্মর দুঃখ-দ্রবিণের মতো
আমাকে বাণবিদ্ধ, রক্তাক্ত করে নিজ্ঝুম গোপনে
হে অস্থির, আমার সুন্দর, ঐ শোনো, সংশপ্তক কবিতারা পাষাণ ভেদ করে
তিরবেগে ছুটছে অমর সত্তায়।
এসো; কালের পাখায় আমিও আছি।
৪ এপ্রিল ২০১০
সূত্র
***
কবিতা
ক্রমশ রিয়েলিটি ছেড়ে ফ্যান্টাসির দিকে ধাবিত হচ্ছে কবিতা। একটা সমুদ্র হঠাৎই পাখি হয়ে আকাশে উড়ে যায়, মেঘের বুক ছিঁড়ে গজিয়ে ওঠে অসংখ্য চারাগাছ। একটা পাহাড় নদী হয়ে মহাকাশে ডুবে যায়, একটা নদী মানবীর হাত বাড়িয়ে প্রেমিকা হয়ে ওঠে। উড়ন্ত রোদ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে পড়ে পাখির শাবক, বৃষ্টিতে ঝরে পড়ে থোকা থোকা সুখ এবং অমরাবতীর ফুল। কবিতারা ফ্যান্টাসি- কাল্পনিক সুরম্য ভুবন। শব্দেরা চিত্রকল্প।
শব্দেরা চিত্রকল্প - এসব বাহাস বাতুলতা। শব্দেরা একটা যুদ্ধ। শব্দেরা বোমারু বিমান। শব্দেরা গোলন্দাজ শেল- তোমার বুকের উপর সজোরে ধাক্কা খাবে। তুমি বিধ্বস্ত। শব্দেরা সুবিপুল ভাব। শব্দেরা সুগভীর সিন্ধু। শব্দেরা আপনআপনিই আসবে, তোমার পঙ্ক্তিতে বেছে নেবে যে যার অবস্থান। অভিধান ঘেঁটে শব্দদের জোর করে চাপিয়ে দিও না- এরা অপাঙ্ক্তেয়; এরা কিছুদিন বাদে ঝরে যাবে, মরে যাবে- তোমার কবিতা অবশ্য তার অনেক আগেই মৃত এক ফসিল।
কবিতারা ফ্যান্টাসি নয়, কবিতারা জীবন। তুমি আর আমি রক্তমাংসে কবিতার ভিতর।
১৪ মার্চ ২০১৪
সূত্র
৩১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:১৩
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: লেখাটি যদিও ঘুড়িতে পড়েছি, তারপরও আবার পড়লাম। এ,টি,এম, মোস্তফা কামাল ভাইয়ের সাথে আপনার মন্তব্য প্রতিমন্তব্য পোস্টের জন্য সংযুক্তি মনে হল। বেশ উপভোগ করলাম দু'জনের মন্তব্য বিনিময়। আমার জন্য বিশেষ দরকারি পোস্ট তাই প্রিয়তে নিয়ে নিলাম। ধন্যবাদ সোনাবীজ ভাই।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ওখানে অবশ্য আরও সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। ২য় পাঠে ধন্যবাদ বিদ্রোহী। ভালো থাকবেন।
৩২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০৮
এহসান সাবির বলেছেন: প্রিয়তে না নিলে অন্যায় হয়ে যাবে......!
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সম্মানিত বোধ করলাম এহসান ভাই। ধন্যবাদ।
৩৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৭
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
গদ্য আছে বলেই কখনো দুই এক লাইন লেখার চেষ্টা করতে পারি। না থাকলে আমার কিছুই করা হতো না।
পোষ্ট ভালো লেগেছে।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মনের কথা বলেছেন আলাউদ্দিন ভাই। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৩৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০২
ডি মুন বলেছেন: প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।
+++++++++++
চমৎকার পোস্ট।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ ডি মুন। ভালো থাকবেন।
৩৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২৩
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: অসাধারন একটা লেখা। ধন্যবাদ ।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন।
৩৬| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১০
hasin82 বলেছেন: অসাধারণ!!
আমিও একটু আকটু ফ্রিভার্স লিখার ট্রাই করি।
তাই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম এবং যথারীতি বিমুগ্ধ!!
প্রচুর পরিশ্রমসাধ্য ও গবেষণালব্ধ।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ হাসিন ভাই। ভালো থাকবেন।
৩৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৯
শৌভ বলেছেন: অন্ত্যমিল লুকিয়ে ফেলে সমিল কবিতাকে গদ্য-আকারে উপস্থাপিত করার উদাহরণটি আমাকে, আমারই লেখা, একটি পুরোনো কবিতার কথা মনে পড়িয়ে দিলো। এটি সমিল মাত্রাবৃত্তে লেখা।
জ্বরের ঘোরে মুনিয়া
----------------------
তুমি ব্যথায় সহজ হয়ে ওঠো, মুখের পাশে অসাধারণ ছায়া লক্ষ্য করি। এ-দেশ অংশত তুষারে ঢাকা, অনবরত হাওয়া বইছে। এবং বুঝতে পারি, দূরে শিথিল হয়ে রয়েছে ডাকঘর, ঠিকানাহীন গেরস্থালি ঘুরে চিঠি আসছে। বহুবছর পর, নিরক্ষর বিকেলগুলি ছুঁয়ে স্বাস্থ্য আজ কঠিন হয়ে আসে। আলোকবিম ধাতুর দিকে নুয়ে পড়ে।
যখন তুমিও অনায়াসে যুদ্ধপরিস্থিতির কথা বলো, চাপা গলায়। ঠোঁটের পাশে ব্যাধি ধারণ করো, মেঝেয় ছুঁড়ে ফ্যালো রক্তমাখা তুলো ও ইত্যাদি
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার কবিতাটি ভালো লাগলো। তবে আপনার কবিতাটিতে ‘সমিল’ত্ব খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম। বেসিক স্ট্রাকচার সমিল মুক্তক অক্ষরবৃত্ত ছিল?
আমি আসলে আপনার কবিতার বেসিক স্ট্রাকচার কী ছিল তা উদ্ধার করতে পারি নি।
ধন্যবাদ।
৩৮| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১২
শৌভ বলেছেন: আপনার সমিল অক্ষরবৃত্তকে গদ্য-আকারে উপস্থাপিত করার উদাহরণটি দেখে আমার, নিজেরই লেখা একটি পুরোনো কবিতার কথা মনে পড়ে গ্যালো। এটি সমিল মাত্রাবৃত্তে লেখা হয়েছিলো।
জ্বরের ঘোরে মুনিয়া
----------------------
তুমি ব্যথায় সহজ হয়ে ওঠো, মুখের পাশে অসাধারণ ছায়া লক্ষ্য করি। এ-দেশ অংশত তুষারে ঢাকা, অনবরত হাওয়া বইছে। এবং বুঝতে পারি, দূরে শিথিল হয়ে রয়েছে ডাকঘর, ঠিকানাহীন গেরস্থালি ঘুরে চিঠি আসছে। বহুবছর পর, নিরক্ষর বিকেলগুলি ছুঁয়ে স্বাস্থ্য আজ কঠিন হয়ে আসে। আলোকবিম ধাতুর দিকে নুয়ে পড়ে।
যখন তুমিও অনায়াসে যুদ্ধপরিস্থিতির কথা বলো, চাপা গলায়। ঠোঁটের পাশে ব্যাধি ধারণ করো, মেঝেয় ছুঁড়ে ফ্যালো রক্তমাখা তুলো ও ইত্যাদি
৩৯| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৫
শৌভ বলেছেন: আসলে স্ট্রাকচারটা ছিল এইরকম।
জ্বরের ঘোরে মুনিয়া
----------------------
তুমি ব্যথায় সহজ হয়ে ওঠো,
মুখের পাশে অসাধারণ ছায়া
লক্ষ্য করি। এ-দেশ অংশত
তুষারে ঢাকা, অনবরত হাওয়া
বইছে। এবং বুঝতে পারি, দূরে
শিথিল হয়ে রয়েছে ডাকঘর,
ঠিকানাহীন গেরস্থালি ঘুরে
চিঠি আসছে। বহুবছর পর,
নিরক্ষর বিকেলগুলি ছুঁয়ে
স্বাস্থ্য আজ কঠিন হয়ে আসে।
আলোকবিম ধাতুর দিকে নুয়ে
পড়ে। যখন তুমিও অনায়াসে
যুদ্ধপরিস্থিতির কথা বলো,
চাপা গলায়। ঠোঁটের পাশে ব্যাধি
ধারণ করো, মেঝেয় ছুঁড়ে ফ্যালো
রক্তমাখা তুলো ও ইত্যাদি
৪০| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৭
শৌভ বলেছেন: অক্ষরবৃত্ত নয়, মাত্রাবৃত্ত।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আশ্চর্য সুন্দর একটা কবিতা। এটি অক্ষরবৃত্তেও সিদ্ধ।
৪১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২৯
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: অনেক কিছু শিখলাম।
+++
প্রিয়তে
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ রাজপুত্র।
৪২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৪
মায়াবী রূপকথা বলেছেন: হাজার লাইনের কমেন্ট করা উচিত। অসাধারনতম পোস্ট। অনেক অনেক ভালোলাগা।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ মায়াবী রূপকথা।
আমরা মনে হয় ফেইসবুকে কানেক্টেড নেই। প্লিজ রিকোয়েস্ট পাঠান।
৪৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৩
জেন রসি বলেছেন: মুগ্ধ হলাম।
প্রিয়তে নিলাম।
০৯ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ জেন রসি ভাই।
৪৪| ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:১১
রেজওয়ান তানিম বলেছেন: অনেক ভাল লাগল খলিল ভাই,
শুভকামনা আপনার শরীর ও কবিতার প্রতি।
দীর্ঘদিন আপনার সাথে কোন যোগাযোগ নেই, কবে যে হবে আবার কে জানে।
০৯ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ তানিম ভাই। শুভেচ্ছা।
৪৫| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১:৫৩
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: চমৎকার একটা পোস্ট যার মন্তব্যগুলোও যথার্থ আলোচনা হিসেবে ধরা যায়।
০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আর্কিওপটেরিক্স, পোস্টটা পড়ার জন্য। আমি যে রিপ্লাই দিলাম, এটা কি আপনার চোখে পড়লো?
৪৬| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১০
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: এইসব পোস্টের জন্যই ব্লগে আসা সার্থক।++++++। সোজা প্রিয়তে ......
অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় ভাইকে।
১০ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:৩২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কমেন্টটা অনেকদিন পরে দেখলাম পদাতিক ভাই। ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।
৪৭| ১০ ই জুন, ২০২১ ভোর ৬:৩০
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
অসাধারন লেখা সমৃদ্ধ একটি পোষ্ট ।
পাঠ করে নিয়ে গেলাম প্রিয়তে ।
শুভেচ্ছা রইল
০৫ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৪৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আলী ভাই পোস্ট পড়া ও কমেন্টের জন্য। দুঃখিত, আজই আপনার কমেন্টটি চোখে পড়লো।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৬
লেখোয়াড় বলেছেন:
পুত্তুম পিলাস।
মনে হচ্ছে দারুন লেখা, তাই সময় নিয়ে পড়তে হবে।