নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
তার সাথে আমার প্রথম দিনের কথাগুলো খুব বেশি মনে পড়ে।
একদিন পেছন থেকে হঠাৎ দু’হাতে আমার চোখ বন্ধ করে কে যেন বলে উঠলো, ‘বল তো, কে আমি?’ আমি তার চোখ ছাড়িয়ে উলটো ঘুরতেই একফালি হাসি উড়িয়ে সে বললো, ‘আমি তোর তিলাবুবু, আমাকে চিনলি না, বাবুসোনা? এই দেখ, আমার ডান অধরে এই যে একটা কালো তিল, এজন্য আমার নাম তিলাবুবু।’ বুবুর ডান অধরের তিল তাকে করেছে তিলোত্তমা। বুবু যখন হাসলো, আমি তার হাসির বিভায় মিশে গেলাম। তিলাবুবু এরপর বলতে থাকলো, 'আমি তোর পাশের গাঁয়ে থাকি; আড়িয়াল বিলের উত্তর পাড়ে আমার ঘর আর বর।’
কখনো কখনো কেন যে এত বেশি ভালো লাগে জানি না। মন খুব হালকা থাকে আর শুধু ভালো লাগে, শুধু ভালো লাগে, আর ভালো লাগে শুধু। এমন ভালোলাগা-সময়ে কাউকে ভাবতেও অনেক অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে। যেমন ধরো, আজ সকাল থেকেই তিলাবুবুর কথা উথলে উঠছে মনের ভিতর। বুবুর কথা ভাবছি আর সুনিবিড় সুখে আমার বুক ভেসে যাচ্ছে; অতলান্ত আনন্দে আমার হৃদয় দুলছে নৃত্যচ্ছন্দে।
আমার তিলাবুবু, কেমন আছে, কোথায় আছে অনেকদিন সে খবর জানা নেই। আমার জানা নেই, আমার তিলাবুবু কোন ভুবনে কোন দেশে বসত গড়েছে শেষে।
আমার তিলাবুবু আমার সহোদরা নয়, কিন্তু সে আমাকে এর চেয়েও অধিক ভালোবাসে; আমিও তার বাৎসল্যের গভীরে ডুবে গিয়ে পৃথিবীকে ভালোবাসতে শিখেছি। তিলাবুবু আমাকে শিখিয়েছে ভালোবাসতে হবে মানুষকে, যতখানি ভালোবাসা ভিতরে আছে তার সবটুকু বিলিয়ে দিতে হবে মানুষকে।
তিলাবুবুকে নিয়ে একদিন আড়িয়াল বিলে শাপলা কুড়োতে গেলাম। ছোট্ট একটা কোষানাও ঢেউয়ে ঢেউয়ে দুলছিল, বুবুর হাসি ফুটন্ত শাপলার ধবধবে শাদা পাঁপড়ির সাথে মিশে অপূর্ব ধবল বর্ণ হয়ে যাচ্ছিল।
‘পানিতে নাববি না?’
‘না। অথৈ নদীতে আমার ভয় হয়।’
‘ছিঃ! বড্ড ভিতু রে তুই।’ বলেই সে নাও দুলিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিল। কৃষ্ণস্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কেটে বহুদূর চলে গেলো বুবু। আমি নাও বেয়ে তার পেছনে। কয়েকটা ডাহুক আর পানকৌড়ি পানিতে ভাসছিল। একটা দীর্ঘ ডুব দিয়ে অনেকদূর চলে গিয়ে ডাহুকের পা ছুঁতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ডাহুকেরা তার আগেই উড়াল দিয়ে বুবুকে পেছনে ফেলে চলে গেলো দূরের কোথাও। এরপর ডুব দিয়ে শাপলার গোড়া খুঁড়ে তুলে আনলো অনেকগুলো শালুক।
সেদিন বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সন্ধ্যার আঁধারে হেঁটে হেঁটে তিলাবুবু চলে গেলে আমি বহুক্ষণ তার চলে যাওয়া পথের অন্ধকারে তাকিয়ে থেকে অপেক্ষায় ছিলাম, হয়ত, হয়ত-বা তিলাবুবু দৌড়ে ছুটে এসে বলবে, ‘তুইও আয়। একা পথে আমি ভয় পাই।’
তিলাবুবু শেষবার চলে যাবার আগে নিয়ম করে কিছুদিন পর পর হঠাৎ সামনে দাঁড়াতো আর তার স্বভাবসুলভ হাসি ছড়িয়ে বলতো, ‘কেমন আছিস লক্ষ্মীমণি? আমাকে ভুলে যাস নি তো?’ আমি তিলাবুবুকে খুব ভালোবাসি তার সুমধুর, নির্মল হাসির জন্য। আমি তার হাসির ভিতরে ঢুকে যাই, আর উড়ে বেড়াই ভুবনছাওয়া অন্তরীক্ষে। তিলাবুবু শেষবার যখন চলে গেলো, সারাপথ জুড়ে বাতাস ঘূর্ণি খেয়ে আছড়ে পড়ছিল রোদের গায়ে। মোহনীয় কেশগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল পথের প্রতিটি বাঁকে। যেতে যেতে একবার পেছন ফিরে মৃদু হেসেছিল বুবু। আমি দৌড়ে ছুটে গিয়েছিলাম হাসির গন্ধটাকে জড়িয়ে বুকে নিতে। আমার নিশ্বাস ভরে সেই গন্ধটা তোলপাড় করার পর আমি বলতে চেয়েছিলাম, ‘যাস নে বুবু, তোর বুকের ভিতরে আমাকে গলে যেতে দে, বুবু। তোর বুকের গহনে ঘুমিয়ে থেকে জীবনের শেষ শ্বাসটুকু নিতে চাই বুবু।’
বুবু আরেকবার পেছন ফিরে তাকালো না।
খুব নিষ্ঠুর হয়ে গেছে আমার তিলাবুবু। শেষবার চলে যাবার পর এমনকি স্বপ্নেও আর কোনোদিন আমাকে সে দেখা দেয় নি। বুবুর কথা মনে হলেই আমার চোখ ফেটে কান্না আসি। গোধূলির নিভৃত আলোয় আমার অশ্রুর ফোঁটারা করুণ পক্ষী হয়ে হাওয়ায় হাওয়ায় মিশে যেতে থাকে।
১৭ মার্চ ২০১৭
১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:০১
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার হৃদয়টা অনেক বড়
১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো যে আমার একটা অনেক বড় হৃদয় আছে
৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৩৫
জুন বলেছেন: সহ ব্লগার চাঁদ্গাজীর মত আমিও বলি আপনার হৃদয়টা অনেক বড় ছাই ভাই । দিগন্ত জোড়া আড়িয়াল বিলের মত আপনার অন্তর জুড়েও রয়েছে ভালোবাসা যারা আপনার কাছে এসেছিল একদিন । তিলাবুবু ও তেমনি একজন । খুব ভালোলাগলো লেখাটি ।
+
১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:৩৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ দেশি আপু। শুভেচ্ছা।
৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:৪৭
অপ্সরা বলেছেন: তিলাবুবুর জন্য তোমার কষ্টটা দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো ভাইয়ামনি!
১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সমবেদনার জন্য ধন্যবাদ।
৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:১৮
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনার গদ্য যত পড়ছি, মুগ্ধ হচ্ছি ততোই।
খুব মিষ্টি গদ্য। ঝাঁঝালো নয়। আবার শুকনো কসকসেও নয়। মসৃণ।
অসাধারণ লিখেছেন
২৯ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: খুব অনুপ্রাণিত হলাম প্রিয় আরণ্যক রাখাল। শুভেচ্ছা।
৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৯
দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনুভূতির অনেক গভীরে ছুঁয়ে যাওয়া।
শুভকামনা অনেক।
অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়।
২৯ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় কবি। ভালো থাকুন আপনিও।
৭| ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: কখনো কখনো কেন যে এত বেশি ভালো লাগে জানি না। মন খুব হালকা থাকে আর শুধু ভালো লাগে, শুধু ভালো লাগে, আর ভালো লাগে শুধু। এমন ভালোলাগা-সময়ে কাউকে ভাবতেও অনেক অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে। -- ভাল লাগা ভালবাসার এমন কথাগুলোও শুনতে খুব ভাল লাগে।
তিলাবুবু আমাকে শিখিয়েছে ভালোবাসতে হবে মানুষকে, যতখানি ভালোবাসা ভিতরে আছে তার সবটুকু বিলিয়ে দিতে হবে মানুষকে -- এমন দরদী বুবু প্রতি ঘরে ঘরে একজন করে জন্ম নিক!
তিলাবুবু শেষবার যখন চলে গেলো, সারাপথ জুড়ে বাতাস ঘূর্ণি খেয়ে আছড়ে পড়ছিল রোদের গায়ে। মোহনীয় কেশগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল পথের প্রতিটি বাঁকে-- তীব্র আবেগ আর অনুভূতি মাখা অসাধারণ কথামালা! খুবই চমৎকার!
গোধূলির নিভৃত আলোয় আমার অশ্রুর ফোঁটারা করুণ পক্ষী হয়ে হাওয়ায় হাওয়ায় মিশে যেতে থাকে।-- গল্পের সমাপ্তিটুকু মর্মভেদী। তিলাবুবু শেষ পর্যন্ত কোথায় চলে গেলেন, কেন গেলেন, সেটা জানা না গেলেও তার তিরোভাবে লেখকের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, তা পাঠকের মনকেও বেদনায় ভারাক্রান্ত করে তোলে।
অসাধারণ একটি ছোট গল্প পরিবেশনার জন্য লেখককে অভিনন্দন!
২৯ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার মন্তব্যের তুলনা নেই স্যার। এত সুন্দর বিশ্লেষণ যে কোনো লেখককে অনেক অনেক অনুপ্রাণিত করে।
অনেক ধন্যবাদ স্যার অনবদ্য কমেন্টের জন্য।
৮| ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:১০
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: কতা সুন্দর করে লেখেন আপনি!
ভাল থাকুন সব সময় । শুভ কামনা রইল ।
২৯ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:১৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ মোস্তফা সোহেল ভাই। আপনিও ভালো থাকুন।
৯| ২০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:১৫
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: এমন সুন্দর রং না চড়িয়ে বর্ণনায় সবাইকে ধরে রাখা এটাই তো লেখকের দক্ষতা । আপনি তাই পেরেছেন আপনাকে হাজার ছালাম ।
২৯ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপু।
১০| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৭
বিলিয়ার রহমান বলেছেন: হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ!
সুন্দর লেখা!
প্লাস!
২৯ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:১৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ বিলিয়ার রহমান ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫
হাতুড়ে লেখক বলেছেন: বাহ! সুন্দর!