নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
আঠার বছর বয়স,
কিংবা যে বয়সে যুদ্ধে নামে যুবকেরা, আমার তা ছিল না একাত্তরে
আমার ছিল
রঙিন ঢাউস, ডুবসাঁতার, গেছোমেছো, চড়ুইভাতি আর বেতজঙ্গলে
ঘোড়াঘাপটি খেলা দুরন্ত দুপুর
আমার ছিল
বাবার কাঁধে চড়ে পৌষসংক্রান্তিতে নূরপুরের মাঠে তুমুল ঘোড়দৌড় দেখা
আমার ছিল
শীতের ধামাইল, শানাল ফকিরের ওরস, না-বোঝা জারিসারি গান রাতভর
আমার একটা বিশাল যুদ্ধদল ছিল, অঙ্গুলি দর্শনে
আলের পর আল মাড়িয়ে ওরা ছুটে আসতো মাষকলাই পোড়ানোর মাঠে;
আমার যুদ্ধদল- চোখের ইশারায় পরনের গামছা
কিংবা লুঙ্গি একটানে ছুঁড়ে ফেলে দল্লে গাছের শাখা হতে ঝাঁকে ঝাঁকে
দিগম্বর লাফিয়ে পড়তো খালের পানিতে;
আমার যোদ্ধারা অমায়িক আর খুব বিশ্বস্ত ছিল; আমার অধীনে
আমার আড়িয়াল বিল ছিল,
বাহারি কচুরি ফুল, কার্তিকের ভোরে ঠেলাজালে চিংড়িপোনা-
টেংরাপুঁটি আর টাটকিনির খলবলানিতে সকাল-দুপুর মত্তবেলা
আমার ভেলানৌকো ছিল, আর বাবার ছিল ছোট্ট ডিঙিনৌকো।
অনেক দুপুর সাঙ্গপাঙ্গদের লয়ে ভান করে ঘুমিয়েছি ভেলা
আর নৌকোর পাটাতনে।
আমাদের জলমান আমনক্ষেতে ভেসে থাকা লাশগুলো
কলার ভেলা আর ডিঙিনৌকোয় ঠেলে প্রতিদিন স্রোতের পানিতে
ভাসিয়ে দিতেন বাবা।
বাবার চোখ ছিল রুক্ষ ও অস্থির; আমি তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী ছিলাম।
আমার চাচা গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেন। আমার চাচি কাঁদেন।
আমার দাদি কাঁদেন।
আমার বাবা ও চাচাতো ভাইবোনেরা কাঁদেন।
চাচা আমাকে কত্ত আদর করতেন; চাচাকে না পেয়ে আমিও কাঁদতাম;
কতদিন গোপনে।
আমার চাচা যেদিন যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেন
১৬ ডিসেম্বরের পর কোনো এক উজ্জ্বল সায়াহ্নে- কী ভীষণ কান্নার রোল,
আর হৈচৈ- চাচা আর বেঁচে নেই, এই ভেবে কত আগে আমরা মনকে পাষাণ করেছিলাম।
চাচার গল্পমুখর সন্ধ্যা ছিল; আমার ছিল অবিরাম আক্ষেপ- চাচার মতো
যুদ্ধ না করতে পারার দুঃখ
আমার একটা গান ছিল, সমগ্র কৈশোরে প্রথম বোধন-
‘চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস
আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি’
আমার একটা পতাকা ছিল - কাড়ালের মাথায় প্রিয়সঙ্গী গামছাটি বেঁধে
ভোঁ ভোঁ উড়িয়েছিলাম উড়ন্ত মিছিলের পথে, টগবগে ময়দানে
এসব আমি কিছুই বুঝি নি কোনোদিন;
শুধু টের পেতাম, বুকের ভেতর ক্রমশ গজিয়ে উঠছে অনিবার্য ঘাস,
সবুজ সবুজ কচি পাতা; স্বপ্নের মতো তুলতুলে বাংলাদেশ
২২ অক্টোবর ২০০৯
***
'অসমপর্কের ঋণ', একুশে বইমেলা ২০১৫-এর অন্তর্গত।
***
'অসম্পর্কের ঋণ' ডাউনলোড করতে চাইলে প্লিজ এই লিংকে ক্লিক করুন।
২৬ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শানাল ফকিরের বাড়ি ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার কার্ত্তিকপুর/বাস্তা অঞ্চলে।
আপনি অসধারণ লেখেন কবি। এই সকালে এতবড়ো কমপ্লিমেন্ট পেয়ে আমি আপ্লুত। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভেচ্ছা।
২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:২৪
আরইউ বলেছেন: আমার বোঝা উচিত ছিল যেহেতু আপনার বাড়ি ওদিকে!
কেনো যেনো মনে হচ্ছিল "শানাল ফকির" এর বাড়ি নরসিংদী। হা হা হা, কেনো জানিনা।
আমি খুব কম ব্লগারকে কবি বলে সম্বোধন করি। আর আপনি তাদের একজন। ধন্যবাদ আপনাকে!
ভালো থাকুন।
২৬ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এটা কোনো ব্যাপার না।
আমি খুবই গর্বিত যে সেই স্বল্পসংখ্যক কবিদের মধ্যে আমাকে সম্বোধন করেছেন। আবারো অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:০১
বিলিয়ার রহমান বলেছেন: হা বেশ ছিলো !
মুগ্ধতা!
শুভেচ্ছা!
++
২৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ বিলিয়ার রহমান+
৪| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:২৪
ডার্ক ম্যান বলেছেন: আগেও পড়েছিলাম । আপনার মত জীবনবাদী লেখা খুব কম মানুষই লিখতে পারেন।
২৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপ্লুত হলাম ডার্কম্যান। অজস্র ধন্যবাদ।
৫| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১৯
জাহিদ অনিক বলেছেন:
বেশ চমৎকার।
বুকের ভেতরে জমে ওঠে ঘাস, অনবদ্য।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা।
২৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ জাহিদ অনিক।
৬| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২০
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আপনার বইটে সংগ্রহে আছে। আপনি আবার নিয়মিত লিখছেন। ব্যাপারটি দারুণ ভালো লাগছে। শুনেছিলাম আপনি অসুস্থ । কেমন আছেন এখন সুপ্রিয় সোনাবীজ ভাই । আপনার কাছে অনক স্নেহ পেয়েছি। আপনি দীর্ঘায়ু লাভ করুন ।
তবে দীর্ঘ লেখা আমি পড়িনা । আপনার লেখা মিস করতে চাইনা । লেখা বড় হয়ে গেলে ।তাই না পড়তে পারার একটা অতৃপ্তি কাজ করে ।
২৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় কবি সেলিম আনোয়ার ভাই+
৭| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৭
শায়মা বলেছেন: বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ
লিখেছি এই নাম রক্ত দিয়ে
গানটা মনে পড়ে গেলো...
২৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কবিতায় কী আর লিখবো
যখন বুকের রক্তে লিখেছি একটি নাম
বাংলাদেশ।
কবিতার কথাটা আমার মনে পড়লো।
৮| ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০
কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:
শৈশবের মাঝে এঁকেছেন যুদ্ধ, একাত্তর, কচিমনের আক্ষেপ....
আর যারা এখন আফসোসে ফেটে পড়ে কেনো তখন যুবক ছিলাম না ! মূলত এরাই স্বাধীনতা ।
কবিতা ভাল লেগেছে বেশ । সুন্দর গল্পের মত করে এগিয়েছে ।
২৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ কথাকেথিকেথিকথন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭
আরইউ বলেছেন: শানাল ফকির? নরসিংদী?
আপনি অসধারণ লেখেন কবি।
ভালো থাকুন।