নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
সতর্কতা
লেখাটা প্রাপ্তবয়স্কসম্ভবা। শিরোনামে ইচ্ছে করেই ‘আঠার যোগ’ লেখা হয় নি, পাছে কেউ ভুল ভেবে বসেন অধিক হিটের উদ্দেশ্যে এ চালাকি। তবে পড়তে পড়তে ‘আঠার যোগ’ সুলভ কোনো রশদ না পাওয়া গেলে সেটা পাঠকের উদারতা ভেবে নেব।
অহেতুক বাগাড়ম্বর
আমার পড়া জীবনের প্রথম উপন্যাস একটা প্রাপ্তবয়স্ক উপন্যাস ছিল। গদাধর। যে কথা বলতে মানা। লেখিকার নাম লেখা ছিল রাজিয়া সুলতানা বা কাছাকাছি কিছু। প্রিন্টার্স স্লাইডে কলকাতার কোনো এক প্রকাশনীর নাম লেখা ছিল। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। ১৯৭৬ বা ৭৭ সনের দিকে। আজ থেকে প্রায় ৩৫-৩৭ বছর আগেকার কথা।
আমার পড়ালেখায় হাতেখড়ি হয়েছিল প্রতিবেশী খোরশেদ কাকার হাতে। তিনি বিনা বেতনে খুব আনন্দের সাথে আমাদের ৬-৭ ঘরের ছেলেমেয়েদের পড়াতেন। স্কুলে তিনি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন। একই স্কুলে আমরা নতুন ভর্তি হয়েছি। ঐ বয়সে কাকাকে অনেক সম্মানিত এবং গুরু শ্রেণির তীব্র ব্যক্তিত্ববান মনে হতো; মনে হতো কাকার বয়স ও স্থান বাবার সমপর্যায়ের। কাকা আমাদের পড়ান, আর আমার পড়ার গতি দেখে তিনি চমৎকৃত হোন। সবার মধ্যে আমিই সেরা ছাত্র, কাকা তা প্রতিষ্ঠিত করলেন।
ঐ বয়সে দিনের বেলা স্কুলে যাওয়া, স্কুল থেকে ফিরে ডাংগুলি, হাডুডু, জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলা, এবং রাতের বেলা কাকার কাছে মহোৎসাহে পড়তে বসা আমাদের রুটিন ছিল। পড়ার প্রতি তখন আমার এত উৎসাহ যে সামনে যা পাই তা-ই পড়ি। বাজার থেকে কাগজের মোড়কে যেসব সওদা আনা হতো, আমি তড়িঘড়ি মোড়ক খুলে সওদা সরিয়ে পড়তে বসতাম। বেশিরভাগ পাওয়া যেতো পরীক্ষার খাতা। ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই’, অথবা ‘দাদখানি চাল মসুরির ডাল...’ ইত্যাদি লেখা থাকতো। মনোযোগ দিয়ে পড়তে পড়তে দেখতাম কাগজ ছেঁড়া, লেখার বাকি অংশ নেই। আফসোস হতো বাকি অংশ পড়তে পারতাম না বলে।
আবার পথের ধারে বালুর উপর অ, আ, ক, খ, বা নতুন শেখা ছোটো ছোটো শব্দ লিখতাম; খাল বা পুকুর কাটা হলে পুকুরের মাটি-কাটা দেয়ালেও লিখতাম। 'বি' থেকে প্রথম শ্রেণিতে উঠবার পর বাড়ির পাশের খালে মাটি কাটা হয়। ওখানে আমরা অনেক লাফালাফি করে খেলাধূলা করেছি। দেয়ালে লিখে হাত পাকা করেছি। একবার একটা ছেলে সেই দেয়ালে খুব সুন্দর করে দুই অক্ষরের একটা বাংলা শব্দ লিখেছিল, যা নারীদেহের একটা গোপনাঙ্গ। তার দেখাদেখি আমি তার চেয়েও বেশি সংখ্যক বার, অধিক সুন্দর করে ঐ শব্দটা লিখেছিলাম। সবাই আমার পারদর্শিতায় অবাক হয়ে আমাকে অনেক বাহবা দিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন সকালে গ্রামের মাদবর এসে আমার মায়ের কাছে এ ব্যাপারে নালিশ পেশ করলে মা আমাকে একটা পাট-শলাকা দিয়ে পিঠে কয়েক ঘা আঘাত করেছিল। এ জন্য আমি ব্যথা পেয়েছিলাম খুব কমই। কিন্তু এত সুন্দর করে ঐ শব্দটা লিখবার জন্য বাহবা না দিয়ে মা কেন আমাকে মেরেছিল তা বুঝতে আমার আরো কয়েক বছর সময় লেগেছিল।
খোরশেদ কাকা আমাকে প্রচুর পড়াতেন। অল্প কয়েকদিনেই খোরশেদ কাকার অবৈতনিক পাঠশালায় আমার প্রথম শ্রেণির বই পড়া শেষ হয়ে গেলে কাকা আমাকে দ্বিতীয় শ্রেণির বই পড়ানো শুরু করলেন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে কাকার কাছে আমার পারদর্শিতা তুঙ্গে। কিন্তু প্রথম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার কিছুদিন আগে স্কুলের ক্লাসে আবিষ্কার করলাম আমি প্রথম শ্রেণির পড়া কিছুই পারি না। ঐ সময়ে কাকাদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারে ঝগড়া হয়েছিল, যার ফলে কাকার কাছে পড়তে যাওয়া বন্ধ ছিল। খুব টেনেটুনে আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠি।
এভাবে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠবার সম্মান অর্জন করি। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার কাকাদের সাথে আমাদের ঝগড়া হয়েছে, যথারীতি আমার পড়া বন্ধ থেকেছে ততদিন। তবে কাকা যেহেতু আমাকে পড়ান, এবং ক্লাসে তিনি বরাবরই ফার্স্ট হয়ে থাকেন (ততদিনে কাকা হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন), আমার মা-বাবা তাঁকে খুব ভালোবাসেন, এবং তাঁর সাথে আমাদের পরিবারের অনেক ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। এখন আমাকে আর কাকার বাসায় পড়তে যেতে হয় না। তবে তিনি নিয়মিত আমাদের ঘরে এসে বসেন, আমার মেধা নিয়ে মা-বাবার সাথে সপ্রসংশ আলোচনা করেন, দীর্ঘ সময় ধরে আড্ডা দেন। আমাকে মারেন, কাটেন, বেত্রাঘাত করেন। শাসন করেন। আমাকে পড়ান। মাঝে মাঝে এমনও মনে হতে থাকে, খোরশেদ কাকা বোধ হয় আমার মা-বাবারও বয়োকনিষ্ঠ শিক্ষক।
মূল পর্ব
দুই পরিবারে ঝগড়ার কারণে গত প্রায় বছর খানেক ধরে কাকার কাছে আমার পড়া হয় নি। আমি একা একা পড়ি। একা একা পড়েই চতুর্থ শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করলাম।
চতুর্থ শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষার অংক খাতা দিয়েছিল সেদিন। আমি হাইয়েস্ট পেয়েছি। ৮৫। অংকে নিকট অতীতে এত নম্বর কেউ পায় নি, ক্লাসে এ নিয়ে হেডস্যার প্রশংসায় আমাকে মাথায় তুলে নিলেন। ক্লাস ছুটি হলে আমি একদৌড়ে খোরশেদ কাকার কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে তাঁকে অংক খাতা দেখাই- ‘আমি হাইয়েস্ট পাইছি কাকা!’ কাকা খাতা হাতে নিয়ে উলটে-পালটে দেখতে থাকেন। আমাদের গ্রামে খোরশেদ কাকার মতো ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র নেই। সেই খোরশেদ কাকাও কোনোদিন অংকে ৮৫ পান নি। কিন্তু আমার খাতা দেখে কাকা খুব একটা খুশি না হয়ে বরং মৃদু তিরস্কার করলেন। খুব সহজ দুটি অংক কাটা গেছে। কাটা না গেলে আমি একশোতে একশো পেয়ে কয়েক তল্লাটে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারতাম। আমাকে নিয়ে তাঁর অনেক আশা-ভরসা। আমাকে কঠোর অধ্যবসায়ী হতে হবে। মাকে ডেকে এনে তার সাথে আমার লেখাপড়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করলেন। কাকা একটা চেয়ারে বসেছেন, মা চৌকিতে পা দুলিয়ে বসা। আমি মায়ের পাশে গিয়ে তার গায়ে ঠেস দিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ মা আর কাকা ঝগড়ার বিষয়াদি নিয়ে কথা বললেন। আমি হাতের বইখাতা চৌকির একপাশে রেখে আবোল-তাবোল কিছু একটা করছিলাম। হঠাৎ দাঁড়িয়ে বুকশেল্ফ থেকে কাকার কিছু বই নামালাম। অষ্টম শ্রেণির বই। ‘সবুজ সাথী’ হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উলটাচ্ছি। ওটা রেখে আরেকটা। আরেকটা রেখে কিছুক্ষণ চৌকি থেকে মাটিতে লাফিয়ে পড়ি; আবার বই নাড়াচাড়া করি। এর মধ্যেই পেয়ে যাই একটা বই, যেটার ওরিজিন্যাল মলাট নেই, বাঁশ-কাগজ দিয়ে পাতলা মলাট লাগানো। পুরোনো। পাতা উলটাই। গদাধর। যে কথা বলতে মানা। আমি কাকাকে জিজ্ঞাসা করি- ‘কাকা, এইডা কোন্ ক্লাসের বই?’ কাকা আমার দিকে একনজর তাকিয়েই কোনো জবাব না দিয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে থাকলেন। আমি পাতা উলটাতে থাকি। অনেক দীর্ঘ লেখা। ক্লাসের বইয়ে এত বড়ো লেখা নেই। আমি পড়তে শুরু করি। কথাগুলো হুবহু মনে নেই, এত বছর পর।
...................
‘ও-কাজে গদাধরের প্রথম হাতেখড়ি হয়েছিল লুকোচুরি খেলার মধ্য দিয়ে।
সন্ধ্যাবেলায় এ বাড়িতে লুকোচুরি খেলার ধুম পড়ে যায়। প্রতিদিনকার মতো আজও। বাড়ির শেষ মাথায় যে টিনের ঘরটা আছে, তার দরজায় তালা দেয়া। পাটাতনের নিচে অনেক ধুলোবালি জমে আছে, মাকড়সার বাসায় গা জড়িয়ে যায়। হেলেনা আর গদাধর হুড়োহুড়ি করে পাটাতনের নিচে গিয়ে লুকালো। চারপাশে পাটখড়ি, কাঠ, ফেলনা আসবাব, তার মাঝখানে খুব ছোট্ট, খুব ঘিঞ্জি জায়গাটুকুতে খুব চাপাচাপি করে দুজন বসেছে।
হেলেনা বলে, ‘ধুর, জায়গা হচ্ছে না। এক কাজ কর। আমি শুয়ে পড়ছি। তুই আমার বুকের উপর এসে শুয়ে পড়। জায়গা হয়ে যাবে।’ গদাধর তাই করে। একটু পর সে গদাধরকে বুক থেকে নামিয়ে দিয়ে বলে, ‘খুব গরম! চল, আমরা গায়ের জামা খুলে ফেলি।’ হেলেনা তার ফ্রক আর পাজামা খুলে ফেললো। ওর দেখাদেখি আহাম্মক গদাধরও গায়ের জামা খুলে ফেলে। এবার হেলেনা বলে, ‘দেখবি?’ ‘কী?’ ‘এই দেখ!’......এরপর শুরু হয় রগরগে বর্ণনা....আদি রসাত্মক কাহিনি....... ঠিক এই মুহূর্তে আমি খোরশেদ কাকার ভয়ে খুব শঙ্কিত হয়ে পড়ি- বড্ড ভুল বই হাতে তুলে নিয়েছি। কাকার চোখে ধরা পড়লে আর রক্ষা নেই। আমার শরীর কাঁপতে শুরু করেছে। অতি সন্তর্পণে দাঁড়িয়ে তাকের উপর আগের জায়গায় বইটি রেখে দিলাম। তারপর খুব নিগূঢ়ভাবে মা আর খোরশেদ কাকার কথাবার্তা শুনতে লাগলাম।
আমার মা যদ্দিন বেঁচে ছিল, আমার সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত, অন্যান্য মহিলাদের সাথে আমার ব্যাপারে আলাপ করতে শুনতাম- ‘আমার পুলাডা খুব সরল সুজা। কিচ্ছু বুজে না।’ মা এ কথা দ্বারা বোঝাতে চাইত নারীদেহ ঘটিত ব্যাপার-স্যাপারগুলো আমি একদমই বুঝি না। অথচ আমার আজও মনে হয়, আমার আজকের বয়সে আমি যতটুকু পাকা, ঐ বয়সে আমার ইঁচড় এর চেয়ে কিছু কম পাকা ছিল না! নুরু নামের যে ছেলেটি আমার সহপাঠী ছিল, সে-ই আমাকে প্রথম জানিয়েছিল মেয়েদের বুকের স্তন বাচ্চাদের জন্য স্তন্য সরবরাহের চেয়ে আরো অনেক মজার কাজে ব্যবহৃত হয়। নুরু আমার চেয়ে বছর দুয়েক বড়ো ছিল। সে প্রায়ই একটা ছড়া কাটতো- ডালের মজা তলে যদি ডাল গলে- আর মেয়েদের মজা গালে। আমি অবশ্য এসব বুঝতে বেশ কিছু সময় নিয়েছিলাম।
আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি, কখন খোরশেদ কাকা বাড়ি থেকে বাইরে বের হোন। ঠিক ঐ সময়ে বইটি নিয়ে আসবো। সুযোগটা জুটে গেল এর কয়েকদিন পর। খোরশেদ কাকা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। আশেপাশের কোনো গ্রামেই তিনি নেই। এই ফাঁকেই বইটি কব্জাগত করে ফেলি।
এই বইয়ের রসঘন বর্ণনা থেকে আমি সর্বপ্রথম প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের গভীর যৌবন-রহস্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করি।
পুরো বই পড়ে শেষ করতে আমাকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যেতে হয়। পড়তে হয় লুকিয়ে লুকিয়ে। অল্প অল্প করে। এর মধ্যে খোরশেদ কাকা বাড়ি ফিরে এসেছেন। বইটি তিনি খুঁজেছেন কিনা তাও জানি না। খুঁজে না পেলে তিনি নির্ঘাত আমাকেই সন্দেহ করবেন। তখন আমার মরণ ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকবে না। তবে খোরশেদ কাকাকে এড়িয়ে চলি। তাঁর কাছে পড়তে বসতে হয় না এটাই সবচেয়ে বড়ো স্বস্তি। লেখাপড়া বাদ দিয়ে তিনি এখন খালি বখাটেপনা করেন মা-বাবা-ভাইদের সাথে। বেকার মানুষ। তাঁর বাবা লঞ্চের সারেং। সারেংয়ের তখন অনেক দাম ও কদর। কাকাকে লঞ্চে একটা চাকরি-বাকরি ধরবার জন্যও চাপ দেয়া হচ্ছিল। আমার খুব ইচ্ছে হতো- খোরশেদ কাকা যেন খুব শীঘ্র চাকরির জন্য বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যান। তার সাথে এত লুকোচুরি আর ভালো লাগে না।
খুব শীঘ্রই মনের আশা পূরণ হলো। দুই পরিবারের মধ্যে আবার ঝগড়া। এবার দীর্ঘ সময়ের জন্য। প্রায় দুই বছর, বা আরো বেশি। এই সময়ে আমি, নুরু, হাইস্কুলের বন্ধুরা এক জায়গায় জড়ো হয়ে এ বইটি পড়তাম। বইটির মালিক তো আমিই, আর এটা আমিই বেশি সংখ্যক বার পড়েছি, কাজেই গোলাকার আড্ডায় আমি মাঝখানে বসে বইটি পড়ি, মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ লাইন বা প্যারাগ্রাফ ব্যাখ্যা করি, বাকিরা প্রাণ ভরে সেই রস উপভোগ করে!
ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠবার পর হলো কী, বইটি পালা করে একেক দিন একেক জনকে পড়তে দেবার সিদ্ধান্ত হলো। ব্যস। ‘গদাধর’ চক্রাকারে ঘুরতে থাকলো এক হাত থেকে আরেক হাতে। সপ্তম শ্রেণি পার হলো। বই তখনো ফেরত আসে নি। অষ্টম শ্রেণিতে উঠবার পর বইটি উধাও হয়ে গেল- কার কাছে আছে কেউ স্বীকার যায় না। বইটি হারিয়ে গেল! আমার খুব কষ্ট হতে লাগলো বইটির জন্য। এমনকি কাঁদতেও ইচ্ছে করেছিল।
খুব সম্ভবত নবম শ্রেণিতে উঠে গেছি, অথবা অষ্টম শ্রেণির শেষের দিকে। খোরশেদ কাকাদের সাথে সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক, তবে কোনো দহরম-মহরম নেই। একদিন খোরশেদ কাকাদের সেই বাংলা ঘরে গিয়ে বসলাম। কী মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে তাকের উপর হাত বাড়ালাম। একটা বই- যেটি স্কুলে আমাদের বন্ধুদেরকে পালাক্রমে পড়তে দিয়েছিলাম, যেটি হারিয়ে গিয়েছিল বলে খুব আফসোস হয়েছিল। বইটি অনেক জীর্ণ ও মলিন হয়ে গেছে। খুব মায়া হলো। বইটির পাতাগুলো খসে যাচ্ছে- কত টর্চার হয়েছে এ বইটার উপর! আমি আলগোছে ‘গদাধর’ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
এরপর কবে, কীভাবে ‘গদাধর’ কোথা থেকে কী হয়ে গেল তা আর মনে নেই।
পরের উপন্যাস
‘গদাধর’ পড়বার সমসাময়িক কালে আমি আরো কয়েকটা উপন্যাস পড়েছিলাম। ‘সিমি রাণীর গোপন কথা।’ এটি পাশের বাড়ির মনেরা আমাকে পড়তে দিয়েছিল, যখন আমি পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। এ বইটি মনেরাকে পড়তে দিয়েছিল আমার চাচাত ভাই জামাল। জামাল ওর সাথে প্রেম করবার জন্য পাগল ছিল। বইয়ের কাহিনি পড়ে যদি মনেরার মন গলে, জামালের উদ্দেশ্য ছিল এটা! আর মনেরা কেন এটা আমাকে পড়তে দিল? মেলা থেকে বেশ দামি একটা আংটি কিনেছিলাম। সাধারণ আংটির দাম চার আনা থেকে আট আনা। পাশের গাঁয়ের মৌলভ বাড়ির মেলা খাওয়ার জন্য মা আমাকে দেড় টাকা দিয়েছিল। খুব সম্ভবত আমার আংটিটার দাম ছিল এক টাকা বা পাঁচ-সিকা (একটাকা চার আনা)। মেলা থেকে ফেরার পর সবাই একে অপরের জিনিস দেখায়। মনেরাকে আমার দামি আংটিটা দেখালাম। ও খুব আহ্লাদি স্বরে আবদার করে বসলো মাত্র একদিনের জন্য ওকে আংটিটা পরতে দেয়ার জন্য। মেয়েদের আবদার রাখতে পারা যে ভাগ্যের ব্যাপার তা অবশ্য ঢের আগেই বুঝে গিয়েছিলাম! কিন্তু একদিন যায়, দুইদিন, তিনদিন- সাতদিন- মেয়ে তো আংটি ফেরত দেয় না! আংটির জন্য মনেরার পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করি। মাঝে মাঝে মা জিজ্ঞাসা করে, ‘তর আংটি কই?’ আমার জবাব নাই। একদিন সন্ধ্যার একটু পর, দু ঘরের মাঝখানে আবছা অন্ধকারে উলটো দিক থেকে মনেরা আসছিল। খপ করে ওর হাত চেপে ধরে আংটি-পরা আঙ্গুলে জোরে চাপ দিই। ‘উহহহ’ বলে মনেরা কুঁকড়ে ওঠে। হাত ঝাড়তে ঝাড়তে আমার চোখের দিকে তাকায়। আবছা অন্ধকারে মনে হয় ওর গভীর চোখ আমাকে গিলে ফেলছে ক্ষুধায়। ও আমাদের চেয়ে দু বছরের বড়ো। আমার চেয়ে এক বা দু ক্লাস নিচে পড়তো। খুব সুন্দরী ছিল। কথা বলতো শুদ্ধ করে। আমরা বলতাম 'আইছিল', 'আছিল'। মনেরা বলতো ‘এসেছিল’, ‘ছিল’। ওর এ শুদ্ধ ভাষা আমাদের কাছে বড্ড বিরক্তিকর মনে হতো। দল বেঁধে এ নিয়ে মনেরাকে ভেঙাতাম। মনেরা ভুবন-মোহিনী হাসিতে জগৎ ভুলিয়ে দিত। ব্যথার্ত স্বরে মনেরা বললো, ‘কেউ যদি দেখে ফেলতো!’ ‘কী দেখত?’ ‘জানি না’ বলে একটা ঝামটা দিয়ে মনেরা উলটো পথে ফিরে গেল। আমি দু ঘরের মাঝ দিয়ে অন্য উঠোনে যেতেই দেখি মনেরা এসে হাজির। আমার হাতে একটা বই দিয়ে বলে, ‘এটা পড়ো। তোমাকে উপহার দিলাম।’ এই বই পরের দিন জামালকে দেখালে সে আমার উপর ভীষণ ক্ষেপে যায়।
এবার প্রেমোৎপাদক বা প্রেম-সহায়ক বইটির কাহিনি কিছুটা জানা যাক।
গভীর রাতে সিমি রাণী এক বোতল বিষ হাতে নিয়ে বসে আছে। অন্য এক গাঁয়ে তার প্রেমিকও বিষের শিশি হাতে রাত একটা বাজবার অপেক্ষায় সময় গুনছে। একটার সময় দুজন একযোগে বিষপান করে এ ধরাধাম থেকে চিরবিদায় নেবে। তার শিয়রের কাছে পড়ে আছে একটা ডায়েরি- সিমি রাণীর জীবনের করুণ ঘটনাপ্রবাহ।
ডায়েরিটাই হলো সিমি রাণীর গোপন কথা। কী সেই গোপন কথা?
মা-বাবা-হারা সিমি তার বোনের সাথে দুলাভাইয়ের সংসারে বসবাস করে। এক যুবকের সাথে তার প্রেমও হয়। .....গল্প মনে করার চেষ্টা করছি। মনে পড়ে তো পড়ে না। মনে হয় এই তো ধরে ফেলেছি। নাহ্, গল্প মনে নেই। ভাসা ভাসা কিছু মনে পড়ে- তার বোনের একটা অবৈধ সন্তান হয়, যখন তার দুলাভাই থাকে প্রবাসে। দুলাভাই বাড়ি ফিরে এলে বুদ্ধিশুদ্ধিহীন বোন খুব চালাকি করে ঘটনাটা চাপিয়ে দেয় সিমির উপর- বলে বাচ্চাটা সিমির। বিয়ের আগেই প্রেম করে বাচ্চা বানিয়েছে। সিমি সমস্ত দোষ নীরবে মাথায় চেপে নেয়। ....এরপর ঘটনার সাসপেন্স বা সংঘাত কী ছিল, কিছুতেই মনে করতে পারছি না! তবে বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় সিমির এমন একটা কথা লেখা ছিল- ‘বিদায় পৃথিবী।’
বইটা পড়ে আমার কষ্ট হয়েছিল। তবে মনেরার সাথে আমার কিছু হতে পারে নি। মনেরা বড়োদের প্রেমের সামগ্রী ছিল। শাড়ি পরে হেঁটে গেলে ওকে একটা রঙিন রাজহংসীর মতো দেখাতো। অল্প দিনেই ওর বিয়ে হয়ে গেল। মনে মনে ভাবতাম, ‘ধুর, মনেরা কোনো সুন্দরী হইলো?’ আঙুরফল টক, জানেন তো!
অন্য একটি বই আমার মনে খুব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল- ‘দুর্ধ্বর্ষ দস্যু বনহুর’। এ বইটি খোরশেদ কাকার ঘর থেকে এনেছিলাম। ‘গদাধর’-এর সাথেই হয়তো কোনো এক ফাঁকে এই বইটাও নিয়ে এসেছিলাম। তবে ‘সিমি রাণীর গোপন কথা’ আগে পড়েছি, নাকি ‘দুর্ধ্বর্ষ দস্যু বনহুর’, সেটা নিশ্চিৎ করে বলতে পারছি না। যদি আমাকে বলা হয় আমি কোন্ বইটি পড়ে সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছি? আমার একটুও দ্বিধা নেই বলতে যে সে বইটি হলো রোমেনা আফাজের ‘দুর্ধ্বর্ষ দস্যু বনহুর’। নির্জন রাতে গহীন অরণ্যের বুক চিরে দ্রুতবেগে ছুটে চলেছে এক অশ্বারোহী। সর্বমহলে সে একজন কুখ্যাত দুর্বৃত্ত। অথচ গরীবেরা সাহায্যের জন্য তার কাছেই ছুটে আসে। নির্যাতিতরা নির্যাতনের শিকার থেকে নিষ্কৃতি পেতে বনহুরের শরণাপন্ন হয়। এক গভীর ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বনহুর। ঐদিকে তার প্রেমের অপেক্ষায় প্রহর গোনে এক আত্মোৎসর্গীকৃত প্রণয়িনী- মনিরা। ...গল্প নিশ্চয়ই মনে নেই। এরই মধ্যে হয়তো অন্য কোনো সিরিজের গল্প এর সাথে মিলিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এ বইয়ের প্রতিটা অনুচ্ছেদ উত্তেজনায় ভরপুর ছিল। কোথায় যাচ্ছে বনহুর? পারবে তো নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে? আমার সেই বয়সে যদি ফিরে যেতে পারতাম- হায়, খুলে বসতাম সমগ্র রোমেনা আফাজ।
এ মুহূর্তে আরেকটি বইয়ের কথা মনে পড়লো- ‘আমি দালাল বলছি।’ এমনও হতে পারে যে, এ বইটি আমি ‘গদাধরের’ও আগে পড়ে্ছিলাম। মনে পড়লো- এটা একটা ছোটোগল্পের বই ছিল। একটা গল্পের নাম ছিল 'আমি দালাল বলছি।' মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার উপর লিখিত। মেহেদী হাসানের বাবা সিলেটের ছাতুগঞ্জে চাকরি করতেন। তাঁর একটা পারিবারিক লাইব্রেরি ছিল। রিটায়ার করার পর গ্রামের বাড়ি ফিরে এলেন। বইগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলেন ঘরের কাড়ে। মেহেদী হাসানের মা মাঝে মাঝেই আমাকে ডেকে নিয়ে তাঁদের কাড় থেকে জিনিসপত্র নামাতেন। জিনিসপত্রের সাথে আমি বইও নামাতাম। একটা বইয়ের কথাই মনে পড়লো- ‘আমি দালাল বলছি’। একজন সৎ, সাহসী মুক্তিযোদ্ধা নিজেকে দালাল বলছিলেন। বিভিন্ন অসংগতি তাঁকে আহত করছিল খুব। ... মনে পড়ছে না। যা বললাম মূলভাব ঠিক এটাই ছিল কিনা তাও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। শেষের লাইনটা খুব সম্ভবত এরকম ছিল- ‘কারণ, আমি একজন দালাল।’
তিন সাগর কন্যাকে নিয়ে আরেকটা উপন্যাস ছিল- তারা তিন বোন। উপন্যাসের নাম মনে নেই। সপ্তম থেকে নবম শ্রেণি- এর মাঝখানে কোনো এক সময়ে জাহিদ আমাকে ‘শেষের কবিতা’ পড়তে দিয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে ‘ব্যথার দান’ও পড়েছিলাম লঞ্চে বসে। এবার আরো কিছু বইয়ের কথা মনে পড়ছে- ‘চিতা বহ্নিমান’- ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের বই। খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু বইটির নামের অর্থ বুঝি নি তখন। এক অহঙ্কারী ধনীর দুলালীর বিয়ে হয়েছে একজন আপাত-মূর্খ, আনস্মার্ট যুবকের সাথে। বিভিন্ন ভাবে জামাইকে অপমান ও অপদস্ত করে সে মেয়ে। জামাই অবশ্য নিজের ব্যক্তিত্ত্ব বজায় রাখে। সে খুব কনফিডেন্ট, একদিন তার বউ নিজের ভুল বুঝতে পারবে। এ জামাই যে কত শিক্ষিত, মার্জিত রুচিবোধ সম্পন্ন, জ্ঞানী লোক, তা অবশ্য মেয়ের কোনো এক বান্ধবী তাকে দেখা মাত্রই বুঝতে পারে। স্ত্রীও শেষ পর্যন্ত স্বামীকে চিনতে পারে। কত বন্ধু-বান্ধবের সামনে তাকে 'অশিক্ষিত' ও বর্বর বলে তিরস্কার করা হয়েছে- আজ দেখে তার সেই বন্ধুরা তার জামাইয়ের নখেরও তুল্য নয়। অনুশোচনার আগুন জ্বলতে থাকে স্ত্রীর বুকে। বহ্নিমান অর্থ হলো যা জ্বলছে, বা জ্বলমান, জ্বাজ্জল্যমান। যে চিতায় অবিরাম আগুন জ্বলছে। জ্বলমান চিতা।
পড়েছিলাম ‘লালুভুলু।’ বিমল মিত্র ও নীহার রঞ্জন গুপ্তের অনেক বই পড়েছি- যেগুলোর নাম মনে নেই। ‘বমি’ নামে উপন্যাসটা- আবু রুশদ, আবু ইসহাক, শওকত ওসমান- কার লেখা জানি না- ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণিতে থাকবার সময়ে পড়ি।
এভাবে কাগজের ঠোঙ্গা থেকে ছেঁড়াটোটা যেখানে যা পেয়েছি পড়েছি। ক্লাসের পাঠ্যবই ছিল সবচেয়ে বড়ো বিনোদনের বই। তখন কোনো পত্রিকা পড়ি নি আমরা, কারণ আমাদের ওখানে তা ছিল না। সংবাদপত্রের অস্তিত্ত্ব শুধু ক্লাসের বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ‘সংবাদপত্র’ নামক রচনা-লিখনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যদ্দূর মনে পড়ে, সপ্তম শ্রেণিতে উঠবার পর যেবার ঢাকা গিয়েছিলাম, সেবার লঞ্চে সর্বপ্রথম এক ভদ্রলোকের হাতে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ নামক সংবাদপত্রটি দেখেছিলাম। আমি তাঁর পাশে বসা ছিলাম। ইত্তেফাক তাঁর হাতে; আমি ঘাড় বাঁকা করে ঈষৎ ঝুঁকে পড়ে তাঁর হাতে রাখা ইত্তেফাকে চোখ ঘুরাচ্ছিলাম। ভদ্রলোক খুব অবাক এবং বিরক্ত হয়েছিলেন, এখন বোধ করি। তাঁর পড়া শেষ হলে ওটা আমার হাতে দিয়ে ‘তুমি পড়তে পারো?’ বা এ ধরনের কিছু কথা বলেছিলেন। আমার ধারনা, তাঁর বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, এত ছোটো অক্ষরের লেখাগুলো আমার মতো ছোটো চোখঅলা এক কিশোরের পক্ষে পড়া সম্ভব। আমি খুব মনোযোগ সহকারে জীবনে প্রথমবারের মতো সংবাদপত্র পড়ছিলাম। ঐ সময়ে আমাদের দোহারে ‘জয়পাড়া সিনেমা হলে’ প্রচুর ছবি দেখতাম। মেহেদী হাসানদের ঘরে বসে ওদের রেডিওতে, বা প্রতিবেশী সহচর আবুলের রেডিওতে ‘হ্যাঁ ভাই, আসিতেছে’ সিনেমার বিজ্ঞাপন খুব মজা করে ছোটো-বড়ো সবাই একত্রে সমবেত হয়ে শুনতাম। ইত্তেফাকের মাঝের পাতায় এরকম বেশ কিছু সিনেমার বিজ্ঞাপন দেখে আমি যারপরনাই উত্তেজনা বোধ করি। বিজ্ঞাপনের নিচে যে-সব সিনেমা হলের নাম লেখা ছিল, ওগুলো পড়তে পড়তে মুখস্থ হয়ে যায়।
জয়পাড়া যেদিন হাঁট বসতো, হাঁটে যাওয়াও আমার জন্য বড়ো আনন্দের ও বিনোদনের ছিল। রাস্তার ধারে বইয়ের দোকান বসতো- তাতে বিভিন্ন ধরনের ধাঁধার বই, গানের বই, যাত্রাপালার বই, নামজ শিক্ষা, কী করিলে কী হয়, রাশিনামা, আব্দুল করিমের কবিতা (গানে গানে সাম্প্রতিক কাহিনি), উপন্যাস থাকতো; দোকানের পাশে টাঙানো থাকতো নানা ধরনের পোস্টার বা ছবি- কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মায়ের কোলে শিশু, ইত্যাদি। বাবা হাঁটে বেচাকেনা করতো, রসগোল্লা বা চানাচুর খাওয়ার জন্য চার আনা, আট আনা করে পয়সা দিত। ঐ পয়সা দিয়ে বই কিনতাম। ছায়াছবির গান, রাশিনামা, ধাঁধা, এগুলোই বেশি কিনতাম। এ অভ্যাসটা অবশ্য খুব ছোটোবেলা থেকেই ছিল। একটু বড়ো হবার পর কিনতে শুরু করলাম যাত্রাপালার বই। গ্রামে যেসব যাত্রাপাল মঞ্চস্থ হতো, সেগুলোর বই এখানে কিনতে পেরে আমি খুব পুলকিত এবং গর্বিত বোধ করতাম। যাত্রাপালা দেখতে গিয়ে কোন্ সিকোয়েন্সের পর কী ঘটতে যাচ্ছে তা আগোভাগেই বলে দিয়ে পাশে বসা মানুষদের তাক লাগিয়ে দিতাম; কেউ কেউ আবার ধমকও দিত আগে আগে কাহিনি বলে দেয়ার জন্য। আমি এ ফুটপাতের দোকান থেকেই আরেকটা উপন্যাস কিনেছিলাম- ‘দুই দিনের সংসার।’ এটা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির মাঝামাঝি কোনো এক সময় পড়েছিলাম। এ বইটি পড়বার আগে ছাপার অক্ষরে যা পড়তাম, তাই মনে হতো নিখুঁত- এটি পড়েই সর্বপ্রথম আমি বইয়ের কাহিনি ভালো বা মন্দ ইত্যাদি ‘সমালোচনা’ করতে শিখি। এ বইটির প্রথম অধ্যায়ের কাহিনির সাথে পরের কাহিনির কোনো মিল ছিল না। আমি পড়তে পড়তে মনে মনে বলেছিলাম, ঐ অংশ না লিখলেও চলতো। হয়তো এমনও হতে পারে, পুরো কাহিনিটি আমি বুঝতেও পারি নি। এক গৃহবধূ। সুন্দরী রূপসী। এক প্রতিবেশী ভাসুরের সাথে তার প্রেম হয়ে যায়। নিজের সংসার ছেড়ে ভাসুরের সাথে ঘর বাঁধে। কিন্তু নতুন সংসার মাত্র কয়েক দিন স্থায়ী হয়। গল্পের শেষ লাইন আমার মনে এখনও অবিকল ভাসে- ‘তাইতো তার মনে দুদিনের সংসার।’ কিন্তু শেষ কথাটার সাথে অনুচ্ছেদের আগের কথাগুলো কেমন যেন আওগোছালো ছিল, তা আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম।
ক্লাসপাঠ্য বইয়ের বাইরে পড়ার সুযোগ এর চেয়ে বেশি ছিল না। তদুপরি, যে বইগুলো পড়তে পেরেছি ঐ ইঁচড়ে পাকা বয়সে, পরবর্তীতে তা থেকেই বই পড়ার প্রতি কিছু নেশার জন্ম হয় আমার মধ্যে।
ম্যান ইজ মর্টাল। মানুষ মাত্রই বই পড়ে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সে। লিটারেচার ইজ নোবডিজ বেবি। বয়স দ্বারা বুদ্ধি বিচার হয় না। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র হয়েও সেজন্য গদাধর নামক বিখ্যাত বইটি পড়তে সক্ষম হয়েছিলাম। আমি আমার সেই কৈশোরকে কুর্নিশ করি।
৬ মে ২০১২
১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:২৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: বর্তমান সময়টা বোধহয় সবচাইতে কঠিন, দুঃসহ। যে-সময়ের ভেতর দিয়ে আমি বেড়ে উঠেছি, তা অত্যন্ত বন্ধুর ছিল। কিন্তু 'যায় দিন ভালো।' এজন্যই হয়ত অতীত এত মধুর হয়ে ওঠে।
ধন্যবাদ কবি।
২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৩৩
বাকপ্রবাস বলেছেন:
১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪
বিজন রয় বলেছেন: কি বলেন! আমি কবি নাহ!!!
ধুর!!
আপনার প্রতিটি গদ্য লেখা বাংলা ঐতিহ্যকে প্রকাশ করে সবসময়।
১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কি বলেন! আমি কবি নাহ!!! আপনার বিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আপনার প্রতিটি গদ্য লেখা বাংলা ঐতিহ্যকে প্রকাশ করে সবসময়। আপ্লুত ও অনুপ্রাণিত।
৪| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৩৫
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আমাদের সে বয়সে তো ইন্টারনেট ছিল না! কাজেই নিষিদ্ধ জগতের সাথে পরিচয়ের গল্প সবারই মোটামুটি একই রকমের। আমিও আপনার মতোই অকালপক্ক ছিলাম।
ক্লাস ফোরে পড়ার সময় মাসুদ রানার ধ্বংস পাহাড় আর ভরতনাট্যম পড়ি। ওখানেই প্রথম কিছুটা আইডিয়া হয়! সেজন্যে অবশ্য ধরা পড়ে প্রচুর মুল্যও দিতে হয়েছিল। ক্লাস ফাইভে প্রথম প্লেবয় ম্যাগাজিন দেখি। সেসব একেকটা দিন ছিল!!!
পুরানো দিনের অনেক কিছু মনে পড়ে গেল।
১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমাদের সে বয়সে তো ইন্টারনেট ছিল না! কাজেই নিষিদ্ধ জগতের সাথে পরিচয়ের গল্প সবারই মোটামুটি একই রকমের।
আমিও আপনার মতোই অকালপক্ক ছিলাম। এটা একটা কালজয়ী ভুয়া কমেন্ট। আমার মা-চাচিরা গর্ব করে পড়শি মহিলাদের সাথে আলাপ করতো- আমাগো পুলাডা খুব সরল সুজা। ঐসব কিচ্ছু বুজে না। অথচ, ঐ বয়সে আমি কী কী বুঝি না সেই তালিকা শূন্য
ক্লাস ফোরে পড়ার সময় মাসুদ রানার ধ্বংস পাহাড় আর ভরতনাট্যম পড়ি। ওখানেই প্রথম কিছুটা আইডিয়া হয়! সেজন্যে অবশ্য ধরা পড়ে প্রচুর মুল্যও দিতে হয়েছিল। - প্রহারোত্তর সমবেদনা গেপন করিতেছি।
ব্লগে জনৈক ঠ্যাঠা মফিজ আছেন। একজন ভুয়া মফিজও যে আছেন, সেটা জেনেছি মাত্র ক'দিন হলো মফিজ নাম দেখে কখনো মনে হয় নি একাধিক মফিজে ব্লগ ভরে গেছে
আপনার পোস্ট ও কমেন্ট উন্নত কোয়ালিটির।
ব্লগে স্বাগতম।
শুভেচ্ছা।
৫| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: কি মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছি না।
আমি রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ দিয়ে পড়া শুরু করি।
১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ভাবতে ভাবতে তো কমেন্ট করেই ফেলেছেন দেখতে পাচ্ছি
গল্পগুচ্ছ পড়েছি ৮৯-৯০ এর দিকে। রবিকাকার যে-বইটি প্রথম পড়েছি তার নাম 'শেষের কবিতা।'
ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই।
৬| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:০০
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন মাঝেমধ্যে চাচাতো ভাইয়ের বুকশেলফ থেকে দুএকটা বই নিয়ে আসতাম। কিন্তু বড়দের বকাঝকা'র ভয়ে পড়া হতো না। আর লুকিয়ে লুকিয়ে দুএক পাতা পড়ে শেষ করার আগেই বইয়ের খুজ পড়ে যেতো
তখন একটা বই অনেকেই পড়তো। ভাইয়ার বন্ধুরা মাঝেমাঝে আসতো বই নিতে, ভাইয়া খুঁজতে হয়রান। আমি চুপচাপ। পরে সুযোগ বুঝে চিপায়চাপায় রেখে আসতাম।
১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: তখন একটা বই অনেকেই পড়তো। ভাইয়ার বন্ধুরা মাঝেমাঝে আসতো বই নিতে, ভাইয়া খুঁজতে হয়রান। আমি চুপচাপ। পরে সুযোগ বুঝে চিপায়চাপায় রেখে আসতাম। হাহাহাহাহা। কোন রশদের বই ছিল উহা, তাহা বুঝিতে আর কিছু বাকি রহিল না মজা পাইয়াছি।
অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
৭| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:১২
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর। অনেকের গল্পের প্রথম বই পাঠ এভাবেই হয়ে থাকে ।
১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা জানা হলো না প্রিয় কবি সেলিম আনোয়ার ভাই।
৮| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:১৪
ডার্ক ম্যান বলেছেন: আপনার আত্মজীবনী যখন বের করবেন তখন কি এই সব লিখা থাকবে?
১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমার মৃত্যুর পর আপনিই আমার আত্মজীবনীটা লিখে দিয়েন। সেখানে এইগুলো সহ আরো যা যা আপনি করেছেন, সেগুলোও দিয়া দিয়েন
৯| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩১
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আমাদের সময় আমিও লুকিয়ে অনেক বই পড়েছি।
প্রথম উপন্যাপ ছিল- বৃষ্টি তোমাকে দিলাম। মেঝ মামার বইটি গোপনে নিয়ে পড়ে ফেলি ।
পোস্টে ভাললাগা।
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: একটা জিনিস উঠে আসছে সবার কমেন্ট থেকে, তা হলো, আমরা মোটামুটি সবাই ছোটোবেলায় ভয়ে ভয়েই পাঠ্যবইয়ের বাইরের বইগুলো পড়তাম। বইগুলোতে অপাঠ্য/অবৈধ/রসালো/রসগুপ্তময় কিছু আছে এবং ওগুলো ছোটোদের জন্য নহে, এ জিনিসটা হয়ত কেউ না কেউ কোনোভাবে আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিত। অথচ, হওয়ার কথা ছিল উলটা। ছোটোদের হাতে শুধু পাঠ্যবই-ই না, বাইরের বইও থাকবে।
আমি অবশ্য খুবই সরল সোজা ছিলাম। ওসব বুঝতাম না কাকা আর মায়ের সামনে এজন্য নির্ভয়েই বইটি পড়া শুরু করি। পড়তে পড়তে আমি টের পাই, আমি জেগে উঠছি এটা আমি ভুল বই পড়া শুরু করছি
ধন্যবাদ মাইদুল সরকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
১০| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৪
জাহিদ অনিক বলেছেন:
হায় হায় ! মাই তো এগুলার একটাও পড়ি নাই------------
এডাল্ট বলতে পড়েছি স্কুলে থাকাকালে মৌচাকে ঢিল
বড় হয়ে বুদ্ধদেব এর 'রাতভরে বৃষ্টি'-- "সুখের কাছে"------ এসবই পড়েছি কেবল !
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:০২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: বুদ্ধদেব বসুর 'রাতভর বৃষ্টি'র অনেক প্রশংসা শুনেছি আমার এক সিনিয়র কলিগের কাছে। কিন্তু বুদ্ধদেবের মাত্র একটা উপন্যাস আমি পড়েছি, যেখানে, যদ্দূর মনে পড়ে, এক ছাত্রের সাথে জনৈকা শিক্ষয়িত্রীর প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কলেজে পড়ার সময় পড়েছিলাম। কিন্তু খুব আকর্ষণীয় মনে হয় নি। তাঁর বই সব জায়গায় পাওয়াও যায় নি।
'মৌচাকে ঢিল' তো খুব ঐ বিবেচনায় খুবই পানসে, তবে 'যায় যায় দিন'-এর বিশেষ সংখ্যাগুলো অধুনার রসময় গুপ্তের চেয়ে কোনো অংশেই কম ছিল না, 'অভিজাত চটি' বলতে যা বোঝায় আর কী
আমার পড়া প্রথম দিকের বইগুলো কোনো বিশিষ্ট লেখকের লেখা না, কাজেই ওগুলো সব জায়গায় পাওয়া সম্ভব না, অনেকেই তা পড়বে ব্যাপারটা সেরকমও না।
শুভেচ্ছা।
১১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৫
মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: কি লিখলেন, মনে হল নিজের শৈশব পড়ছি।
আসলে ১৯৯৫/৯৬ এর আগে থেকে যারা বই পড়ার সাথে সম্পর্কিত ছিলাম তারা এ কাহিনীর মাঝে সবাই নিজেকে খুঁজে পাবে।
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ঠিকই বলেছেন মাহবুবুল আজাদ ভাই। আমরা মনে হয় সমসাময়িক, তাই আমাদের পড়ার জগতটা মোটামুটি কাছের/একই।
ধন্যবাদ পোস্ট পড়ার জন্য।
১২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৬
সোহানী বলেছেন: কঠিন অবস্থা দেখি সোনাবীজ ভাই।
প্রথম দিকের বইগুলো পড়িনি বাট নীহার রন্জন, বিমল মিত্র, ফাল্গুনী এর প্রায় প্রতিটা বই পড়া ছিল। কারন বাবার ছিল বিশাল বইয়ের সংগ্রহ। এমন কোন নামী বই ছিল না যা উনার কালেকশানে ছিল না। তাই কিছুটা লুকিয়ে কিছুটা প্রকাশ্যে বই পড়তাম। কিন্তু বান্ধবীর সংগ্রহে থাকা দস্যু বনহুর যখন পড়া শুরু করেছিলাম ক্লাস সেভেন এ তখন সব ছেড়ে দিনের পর দিন তাই পড়তাম। মনে হয় আমি কোন বই মিস করেনি। তবে মাসুদ রানার বই পড়া শুরু করেছিলাম অনেক পড়ে।
ভালো লাগলো সোনাবীজ ভাই আপনার পড়ার তালিকা পেয়ে। মাঝে মাঝে নিজের কথাগুলো খুব লিখতে ইচ্ছে করে........
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ভালো লাগলো সোনাবীজ ভাই আপনার পড়ার তালিকা পেয়ে। মাঝে মাঝে নিজের কথাগুলো খুব লিখতে ইচ্ছে করে........ নিজের কথাগুলো লিখে ফেলুন, খুব মজার হবে আশা করি।
আজকের মতো তখন আমাদের বই পড়ার এত সুযোগ ছিল না; এসএসসি পর্যন্ত পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পাওয়া ছিল খুব কঠিন। এজন্যই হয়ত বইয়ের জন্য তখন বেশি ক্ষুধার্ত ছিলাম। বই পড়ার শ্রেষ্ঠ সময় ছিল কলেজে পড়ার সময়টা। বাড়ি থেকে ঢাকায় লঞ্চে যাতায়াত হতো। লঞ্চে পেপার ব্যাক নিউজ প্রিন্টের বই খুব সস্তায় পাওয়া যেত। ৪/৫ ঘণ্টা সময় পার হয়ে যেত বই পড়তে পড়তে। নজরুল, শরৎ, রবীন্দ্র, ফাল্গুনী, নীহার, বিমল মিত্রের বই ছিল অত্যন্ত সুলভ। বই বলতেও মোটামুটি এঁদের বই-ই বুঝতাম। আর ছিল ফার্মগেট, পলটন সহ বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাতে পুরান বইয়ের দোকান; দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও অনেক বই শেষ করে ফেলেছি। সস্তায় পাওয়া যেত বাংলায় অনুদিত রাশিয়ান বই। সেগুলোও মজার ছিল।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সোহানী আপু।
১৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩২
কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
ছোট বেলায় ‘আংকেল টমস কেবিন’ পড়ে ভাবতাম কিন্তু কোন কুলকিনারা করতে পারতাম না ৷জসীম উদ্দিনের 'সুজন বাঁধিয়ার ঘাট’ পড়ে উদাস হয়ে যেতাম। মনে পড়ে শরৎ চন্দ্রের ‘দেনা-পাওনা’ 'মেঝ দিদি'র কথা ৷যখন আমি ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ি তখন তখন কাসেম বিন আবু বক্করের 'ফুটন্ত গোলাপ' ও 'বোরকা পরা সেই মেয়েটি' পড়ি। ক্লাস টেনে উঠে যখন ‘দেবদাস’ পড়ি তখন বিশেষ করে শেষের দিকে যখন পার্বতী অন্দর মহল হতে চিৎকার করে কেঁদে ছুটে যায়, তখন আমি কান্নায় ভেংগে পড়ছিলাম। খুব সতর্ক ছিলাম, কেউ না জানি দেখে ফেলে।
রিজিয়া রহমানের ‘নিঃশব্দ শব্দের খোঁজে’ কিংবা ‘প্রদোষে প্রাকৃত জন’, আকবর হোসেনের ‘মোহমুক্তি’, ‘দু’দিনের খেলাঘরে’, শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’ – এক একটা উপন্যাস মানে এক একটা নতুন জগৎ; কিছুটা চেনা তবে অনেকটাই অচেনা ৷অথচ কি যেন দুর্দমনীয় আকর্ষণ। পড়েছি সুফোকলিসের 'ইডিপাস' ৷
"আকর্ষণ আরও কিছুতেও ছিলো। হ্যাঁ, কিছু ‘সে রকম জিনিস’ও পড়েছি।"
চমৎকার এ পোস্ট পড়ে শৈশবে ফিরে গেলাম; পোস্টে ++++++
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: গত বছর কাসেম বিন আবু বক্করের নাম ফেইসবুক ও ব্লগে খুব আলোচিত হচ্ছিল। তাঁর জনপ্রিয়তা ও অসাড়ত্ব নিয়েও অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল। কিন্তু আমি গত বছরের আগে তাঁর বই পড়া কেন, নামও শুনেছিলাম বলে মনে করতে পারি নি। যাই হোক, কখনো সুযোগ এলে দু-একটা বই পড়বো বলে আশা রাখি।
আমি 'দেবদাস' পড়ি প্রেমে পড়ার পর, তাও বইটা ছিল প্রেমিকারই দেয়া। যখন তার বইটা আমার হাতে আসে তখন অবশ্য সে প্রেমিকা ছিল না। সে এক বিরাট কাহিনি
শরৎ চন্দ্রের যে বইটা পড়ে আমি অনেক দিন ঘোরের মধ্যে ছিলাম, সেটির নাম 'চরিত্রহীন'। খুব সম্ভবত ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ার সময় এটা পড়েছিলাম। গল্পটার কথা মনে পড়লে এখনো আমি ঘোরের মধ্যে ডুবে যাই। স্কুলের রচনায় 'তোমার প্রিয় লেখক/বই'-তে শরৎ চন্দ্রের 'দত্তা'র কথা পড়ি। 'দত্তা' পড়েও খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম।
অগোছালো ভাবে বিখ্যাত-অখ্যাত আরো নানা লেখকের বই পড়া হয়েছে, যেগুলোর নাম মনে নাই।
আপনার অভিজ্ঞতা শুনে ভালো লাগলো কাওসার ভাই।
ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা।
১৪| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৭
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আপনার প্রায় ঘটনার সাথে আমার মিল আছে। আমাদের বাড়ির সবাই পড়ুয়া ছিলেন। মায়েরা পড়ছেন নিহার রঞ্জন, মুকসুদুল মোমিনিন,রোমেনা আফাজ, মুরুব্বিরা পড়ছেন দোয়ায়ে গাঞ্জল আরশ, বিশ্ব নবি, নেয়ামুল কোরআন , জঙ্গে কারবালা ইত্যাদি।
যুব শ্রেনী উপরের সবগুলির সাথে 'ওই সব'ও পড়তো। বিয়ে বাড়ি থেকে চুরি করা 'মধুর মিলন; না কি একটা বই পড়ে কান লাল হয়ে গিয়েছিল। পরে বড়দের বইএর তাকের চিপা চাপা থেকে চুরি চামারী করে নিজেও 'ওসব' পাঠের হাতে খড়ি নিয়েছি।
কত বই যে চুরি করেছি তার হিসেব নেই।
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার 'মধুর মিলন' নামটা দেখে মনে পড়লো ছোটোবেলায় 'মধুর মিলন' জাতীয় বেশকিছু সুদৃশ্য মলাটের (নায়ক-নায়িকার মধুর দৃশ্য সম্বলিত ) বই দেখেছি। তখন একে-অপরকে এসব বই উপহার দেয়ার একটা প্রচলন ছিল। আফসোস, কোনো মধুর মিলন পড়ার সৌভাগ্য হয় নাই। এখন পাইলে নাওয়াখাওয়া ভুলে আগে ওটা পড়ে নিতাম।
'নেয়ামুল কোরআন', 'বিশ্বনবী' আমিও পড়েছি, তবে বড়ো হয়ে।
ভালো লাগলো গিয়াস ভাই আপনার পড়ার ইতিহাস জেনে।
ভালোই থাকিয়েন। দোয়াও রাখিয়েন।
১৫| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪২
আখেনাটেন বলেছেন: সোনাবীজ ভাই দস্যু বনহুরের কথা মনে করে দিলেন। রোমেনা অাফাজের দস্যু আমাকে দস্যুতে পরিণত করেছিল পরিবারের কাছে। হা হা হা। কত দাবড়ানী খেয়েছি। অাবুল বাশারের 'ফুলবউ' ধানের পালার ফাঁকে পড়তে গিয়ে কি প্যাদানিটাই না খেয়েছিলাম।
জন রীডের 'দুনিয়া কাঁপানো দশদিন'র মতো মোটা বই সবেমাত্র হাই স্কুলে উঠা বালক যে কিনা তখনও হাফপ্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট ধরে নি, যখন পড়ার জন্য বগলদাবা করে বাড়ির বাইরে মানে ধানের খলাতে (যেখানে চাল করার জন্য ধান শুকানো হয়) নিয়ে যাচ্ছে তখন পরিবারের সিনিয়রদের এ দৃশ্য দেখাটা কেমন হতে পারে চিন্তা করুন। হা হা হা।
অনেক অনেক ভালো লাগল আপনার এই লেখা। নস্টালজিক করে দিলেন।
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: 'দুর্ধ্বর্ষ দস্যু বনহুর' মনে হয় সবচেয়ে উত্তেজনা নিয়ে পড়া আমার প্রথম উপন্যাস। দস্যু বনহুর সিরিজের ১৬টা উপন্যাসের সংকলন কিনলাম বইমেলা থেকে। কেনার পর থেকেই প্রচণ্ড উত্তেজনা, কতক্ষণে পড়তে শুরু করবো। এক সময় পড়া শুরু করলাম। কিন্তু পড়া এগোয় না। প্রথম পৃষ্ঠা শেষ করতেই অনেক সময় লেগে গেলো। ৮/১০ দিন ধরে পড়তে পড়তে ১০/১২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যেতে পারলাম। আমি খুব অবাক হলাম, একদিন যে বনহুর আমার শরীরে বারুদ ঢেলে দিয়েছিল, তা এত নিরামিষ আর পানসে কেন? কী দেখে আমি এত মুগ্ধ হয়েছিলাম?
সবকিছুরই একটা বয়স আছে। পড়ারও একটা বয়স বা সময় ও পরিবেশ আছে। কোনো এক সময়ে পোকা ছিলাম। কিন্তু বই পেতাম না। এখন আমার ঘরভর্তি বই। হাত বাড়ালেই বইয়ের পাহাড়। কিন্তু মন ও শরীর বইয়ের ভেতর কোনো মজা পায় না।
আপনার কিছু কিছু শব্দে আমিও নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি- যেমন, ধানের পালা, ধানের খলা, ইত্যাদি। আমি জমিদারের পোলা না, কৃষকের পোলা। নিজেও কৃষক ছিলাম। হালচাষ, লাঙল-জোয়াল-মই টেনে বড়ো হয়েছি; কাদামাটি গায়ে মেখে বড়ো হয়েছি, এখনো গায়ে পাটপঁচা পানির গন্ধ। এ জীবন আমাকে এখনো নস্টালজিক করে, টানে।
আমার তো মনে হয় আপনি এখনো দস্যুই রয়ে গেছেন
'আখেনাটেন' শব্দটার অর্থ বলে যান
অভিজ্ঞতা ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা।
১৬| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৩৫
শায়মা বলেছেন: বইপাগল ছিলে ভাইয়ামনি!
তবে তোমার পোস্ট পড়ে আর মন্তব্যগুলা পড়ে হাসতে হাসতে মরলাম!
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ, কোনো একসময় বইপাগল ছিল। কোনো একসময় ব্লগপাগলও ছিলাম। এখন ঝিমুচ্ছি। সব পাগলামি ছুটে গেছে। সময় অনেক কিছু বদলে দেয়।
মন্তব্যগুলো সত্যিই খুব মজার।
১৭| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:১২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
দিলেন তো ঘরেই কথা পরের কাছে ফাঁস করে।
এখন কি হবে!
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হাহাহাহাহা। তাইতো! ঘরের কথা পরেরে ফাঁস করে দিলাম দেখি
এখন কী হবে, উপায়টা আপনিই বাতলে দিন সাজ্জাদ ভাই
১৮| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:১৫
রাকু হাসান বলেছেন: বইময় শৈশব বাহ ,
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ, তবে বইগুলো বিশেষ ক্যাটাগরির হওয়ায় পড়াগুলোও বিশেষত্বময় হয়ে উঠেছিল।
১৯| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০২
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: একবার একটা ছেলে সেই দেয়ালে খুব সুন্দর করে দুই অক্ষরের একটা বাংলা শব্দ লিখেছিল, যা নারীদেহের একটা গোপনাঙ্গ। তার দেখাদেখি আমি তার চেয়েও বেশি সংখ্যক বার, অধিক সুন্দর করে ঐ শব্দটা লিখেছিলাম। সবাই আমার পারদর্শিতায় অবাক হয়ে আমাকে অনেক বাহবা দিয়েছিল।
হা হা
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মায়ের পিটুনি খেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেদেছিলাম, আদতে ব্যথা পাই নি মোটেও
২০| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০৭
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অথচ আমার আজও মনে হয়, আমার আজকের বয়সে আমি যতটুকু পাকা, ঐ বয়সে আমার ইঁচড় এর চেয়ে কিছু কম পাকা ছিল না! [/সব ]
১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: রাখাল, আপনি যে একটা রত্ন তা আমি অনেক আগেই চিনেছিলাম। পোস্ট থেকে এসব রত্ন তুলে জনসমক্ষে পুনঃপ্রচার আপনার পক্ষেই সম্ভব হে
২১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০৮
নতুন বলেছেন: আপনি মনে হয় ক্যাপ্টেন রাজ এর বই এর কথা লিখতে ভুলে গেছেন...
ঐখানেই প্রথম বড়দের বিষয়গুলি পড়েছিলাম.... মনে হয় সেটা নানা বা মামার বইয়ের কালেকসনে ছিলো।
তারপরে মাসুদরানা, বিদেশী অনুবাদ...
দস্যু বনহুরের কথা মনে করিয়ে দিলেন.... কিরিটি রায় এর কথা মনে পড়েগেলো।
বইএর পোকা ছিলাম... এখন পোলাপাইন বই পড়ে না... সামনে যেই সময় আসতেছে তাতে মানুষ বড় হচ্ছে সাহিত্য ছাড়া...
আর বাংলা সাহিত্য এবং বিশ্ব সাহিত্য না পড়ে বড় হওয়া সমাজে মুল্যবোধের অভাব থাকবেই.... এটাও বত`মানের দূনিতি/ভ্যাজাল/জঙ্গীবাদের আরেকটা কারন....
কারন সাহিত্য না পড়লে কারুর জীবন নিজেস্ব ফিলোসফি সৃস্টি হয় না। তাই মানুষ মনন ছাড়া বেড়ে উঠে।
সামনে এটা বড় একটা সংকট তৌরি করবে।
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনি মনে হয় ক্যাপ্টেন রাজ এর বই এর কথা লিখতে ভুলে গেছেন... ব্যাপারটা ওরকম না; আসলে ক্যাপ্টেন রাজ এর কোনো বই আমার আজও পড়া হয় নি; তবে লেখকের নাম না দেখেও অনেক বই পড়া হয়েছে, বাই চান্স সেখানে কিছু পড়ে থাকলে সেটা আমার দোষ কিন্তু
আর বাংলা সাহিত্য এবং বিশ্ব সাহিত্য না পড়ে বড় হওয়া সমাজে মুল্যবোধের অভাব থাকবেই.... এটাও বত`মানের দূনিতি/ভ্যাজাল/জঙ্গীবাদের আরেকটা কারন....
কারন সাহিত্য না পড়লে কারুর জীবন নিজেস্ব ফিলোসফি সৃস্টি হয় না। তাই মানুষ মনন ছাড়া বেড়ে উঠে। অতি মূল্যবান একটা কথা বলেছেন। একমত না হয়ে উপায় নাই।
তবে, শূন্যস্থান কোনো না কোনো বস্তু দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়। আমাদের ফেইসবুক, ব্লগ, ইউটিউব আছে না? স্টার জলসা, হিন্দি সিরিয়াল আছে, ওরা ওগুলো ঠিক করে দেবে বটে
অনেক ধন্যবাদ চমৎকার একটা কমেন্টের জন্য।
২২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১০
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বইটির মালিক তো আমিই, আর এটা আমিই বেশি সংখ্যক বার পড়েছি, কাজেই গোলাকার আড্ডায় আমি মাঝখানে বসে বইটি পড়ি, মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ লাইন বা প্যারাগ্রাফ ব্যাখ্যা করি, বাকিরা প্রাণ ভরে সেই রস উপভোগ করে!
আপনার জীবনের প্রথম পাঠ চক্র?
প্রতিটা অংশ মজাদার!
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ, ঐ বইটার বিশেষ পাঠচক্র ছিল এরকম। এই বইটির বিশেষত্বের কারণেই পাঠচক্রটাও আজও স্মৃতিতে খুব উজ্জ্বল।
২৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১৬
সনেট কবি বলেছেন: আমিতো বলতে গেলে বইয়ের পোকা ছিলাম।
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো ফরিদ ভাই। ধন্যবাদ পোস্ট পড়ার জন্য।
২৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১৮
কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:
তবে তো দেখছি গদাধরের কাস্টমার ঢের!! হা হা!!
ছোটবেলা থেকেই বইপড়ার প্রতি আপনার অনুরাগ দেখা যাচ্ছে সে যেই বই পড়ে হোক না কেন!!
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: দেখি তো, এই লেখাটা আমি পড়তে পারি কিনা- মনের ভেতর এমন ইচ্ছে বা তাগিদ থেকেই পড়ার প্রতি ঝোঁকটা জন্মেছিল। রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজের টুকরো, কাগজের ঠোঙ্গা, যা পেতাম, বানান করে করে পড়ার চেষ্টা করতাম। পড়ে কী বুঝলাম, বা বোঝারও যে একটা ব্যাপার আছে, শুরুতে তো আর তা মনে হয় নি। আমি সবই পড়তে পারি, এটা বাকিদের দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেয়াতেই ছিল আমার ক্রেডিট
ধন্যবাদ কথাকথি। ফেইসবুকে রেগুলার হলেও ব্লগে খুব কম দেখছি আপনাকে।
শুভেচ্ছা রইল।
২৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৩৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: যা লিখেছেন- অনবদ্য। আমি সাধারণত ব্লগে এলে 'অনুসারিত' ব্লগগুলোই পড়ি আগে। আর যাদের অনুসরণ করি, তারা আমাকে ঠকায় না। প্রতিদিন অন্তত একটা হলেও, অসাধারণ লেখা পড়তে পারা যায়। আজ যেমন আপনার লেখাটা পড়া গেল।
আমার শুরু হয়েছিল শেক্সপিয়ার দিয়ে। ক্লাস সিক্সে বৃত্তির টাকা দিয়ে শেক্সপিয়ার রচনা সমগ্র কিনেছিলাম। সেটা বিশাল সাহিত্যমানের কোন বই নয়। তার নাটকগুলো গল্পাকারে ছিল, শুধুই ঘটনার ঘনঘটা। তবুও সে বই পড়ে দরদর করে চোখের জল ফেলেছিলাম!
এরপর চাঁদের পাহাড়। আর মিচমিদের কবচ। বিভূতিভূষণ বন্দোপধ্যায়ের প্রায় দখল করে নিলেন পুরো কৈশোর। তারপর শরতচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ।
আমি ইঁচড় আপনার চেয়ে কোনদিনই কম ছিলাম না। যাদের সাথে মিশতাম, তারা ওসব ব্যাপারে এতোটাই পণ্ডিত ছিল যে, তাদের সংস্পর্শেই সেবিদ্যায় গ্রাজুয়েশন হয়ে গিয়েছিল! আর রগরগে কাহিনী পড়েছি আপনার মত, অনেক পরে। সে প্রায় ক্লাস নাইন টেনে।
আপনাদের সময়ে অনেক সাহিত্য পত্রিকা ছিল শুনেছি। বটতলার বইয়ের বিক্রিও হত দারুণ। মানুষ ট্রনে, বাসে, লঞ্চে বই পড়ত। এখন মানুষ বই পড়ে না। বেশির ভাগ স্টেশনেই আর বইয়ের দোকান নেই। অবস্থাটা পালটে গেছে অনেক। বইয়ের দোকানেও শুধু নোট আর গাইড।
তারপরও এ যুগে, কিছু কিশোর বই পড়া শেখে। এটা বিশাল আশ্চর্যের ব্যাপার।
২০ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমার শুরু হয়েছিল শেক্সপিয়ার দিয়ে। হুম। আমি খুব আতঙ্কের সাথেই লক্ষ করেছিলাম যে, আপনার লেখার হাত আপনার বয়সের তুলনায় খুব বেশিই পরিণত। শেক্সপিয়র আপনার উপর ভর করে আছে
শেক্সপিয়র সমগ্র কিনে আনার পর দেখি কোথায় নাটক, কোথায় কবিতা, এ দেখি গল্প মনে হয় আমার আর আপনার বইটা একই। ওটা ছাড়া শেক্সপিয়রের আর কিছু আমার পড়া হয় নি।
এ পোস্টে দুজন লেখক খুব অনুচ্চারিত রয়ে গেছেন। আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর 'কেউ কথা রাখে নি'র মধ্য দিয়ে সুনীলের সাথে পরিচয়। এরপর তাঁর অসংখ্য বই পড়া হয়। আরেকজন হলেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর 'এইসব দিনরাত্রি' ধারাবাহিকের সাথে প্রথম পরিচয় (একাদশ শ্রেণি)। একটু বেশি বয়সে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়া শুরু করেছিলাম। এরপর ঝড়ের বেগে একসাথে তাঁর অনেকগুলো বই পড়ে ফেলি।
জীবিকার জন্য কর্মব্যস্ততা বই পড়ার ক্ষেত্রে সবচাইতে বড়ো বাধা। এর সাথে এখন যোগ হয়েছে ব্লগ, ফেইসবুকসহ আরো অনেক কিছু। একটা বই হাতে নিতে পারা ও তা শেষ করতে পারা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে আমি লঞ্চে বসে অনেক বই পড়েছি। এখন বই কিনি সংগ্রহশালায় রাখার জন্য, হয়ত কেউ না কেউ পড়বেই এই বই।
আমি ইঁচড় আপনার চেয়ে কোনদিনই কম ছিলাম না। তা আর বলতে
বইয়ের দোকানেও শুধু নোট আর গাইড।
তারপরও এ যুগে, কিছু কিশোর বই পড়া শেখে। এটা বিশাল আশ্চর্যের ব্যাপার। বই পড়ার যুগ ফিরে আসুক, এই কামনা।
যা লিখেছেন- অনবদ্য। আমি সাধারণত ব্লগে এলে 'অনুসারিত' ব্লগগুলোই পড়ি আগে। আর যাদের অনুসরণ করি, তারা আমাকে ঠকায় না। প্রতিদিন অন্তত একটা হলেও, অসাধারণ লেখা পড়তে পারা যায়। আজ যেমন আপনার লেখাটা পড়া গেল। এই কথাটার জন্য খুব আপ্লুত। অনেক ধন্যবাদ। এবং কৃতজ্ঞতা।
২৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:০৪
চঞ্চল হরিণী বলেছেন: আপনার এই দারুণ কাহিনী ও তার ঘনঘটা পড়ে আমার প্রথম এই ধরণের বই পড়ার কথাটা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না ।
আমাকে একেবারে ছোটবেলাতেই আমার মা এবং মামা গল্পের বই কিনে দিয়েছেন। তাই পাঠ্য বইয়ের বাইরের বই ভয়ে ভয়ে পড়ার হ্যাপা আমাকে পোহাতে হয়নি। কিন্তু বাসায় তো প্রচুর বড়দের বইও ছিল। চোখের সামনে সেলফ, সেলফ ভর্তি বিভিন্ন উপন্যাস, থ্রিলার কত কি ! অথচ এসব ধরা নিষেধ ছিল। লোভাতুর মন ওসব বই ধরতে চাইতো, কিন্তু মায়ের কড়া পাহারা ছিল। কতবার যে বকা খেয়েছি । প্রথম বড়দের উপন্যাস পড়ি আমি ক্লাস সিক্সে উঠে। সেটা ছিল, স্যার হুমায়ূন আহমেদ এর 'ময়ূরাক্ষী'। আমি দেখলাম মামার নতুন কেনা এই বইটা নিয়ে আমি পড়ছি কিন্তু ধরা পড়ে গেলেও মামা কিছু বললেন না। আম্মু দেখে বকা দিয়েছিলেন তখন মামার রেফারেন্স দিয়েছিলাম । তো এই বইতো খুবই নিপাট ভালো বই, এককথায় চমৎকার বই। এরপর আস্তে আস্তে সাহস করে সেলফ থেকে অন্য বই নিয়েও পড়তে শুরু করলাম। বড় তো আসলে হইনি তাই এসব বই পড়লে বেশিরভাগ সময় লুকিয়েই পড়তাম। মামা প্রচুর ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক পড়তো। এরমধ্যে একটা বইতে সর্বপ্রথম নায়ক নায়িকার খুব কাছে আসার পর আদর করতে গিয়ে 'সঙ্গম' শব্দটা পড়েই আমার কিশোরী মন কেমন যেন করে উঠেছিল। এর চেয়ে অধিক ওই ধরণের কোন বই আমাদের বাসায় ছিল না।
তো যখন সেভেনে উঠি তখন একেবারে সেই মহাপ্রলয়ঙ্করী ঘটনা ঘটে। মফঃস্বলে আমাদের বাসা। আমরা ভাড়া থাকি একটা দোতলা পাকা দালানের নিচতলায়। আমাদের পাশে একটা টিনশেড বাড়িতে একটা এনজিওর অফিস ও কর্মীরা ভাড়া থাকে। তো সেদিন ওরা ওই বাড়ি ছেড়ে আমাদের দালানের দোতলায় শিফট করে। সব মালপত্র সরিয়ে নেয়ার পর ফাঁকা ঘর দেখতে পাচ্ছি আমাদের বারান্দা থেকে। দেখি অনেক কাগজপত্র, পেপার, পত্রিকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেগুলো নিয়ে যায়নি। কৌতূহলবশত গিয়ে ঢুকলাম শূন্য ঘরে। পেপারগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলাম। এমন সময়ই সেই পত্রিকা আমার চোখে পড়ে। প্রচ্ছদ ছিল না এবং ইংলিশে লেখা ছিল। একটা পৃষ্ঠা ওলটানোর পর সাথে সাথে আমার সারা শরীর স্থির হয়ে যায়। কিশোরী চঞ্চল মন একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়। কি দেখছি আমি ! যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না এমন কাজ মানুষ করে ! তাও সেসব আবার বইতে ছাপা হয় ! ছাপার অক্ষর আমার কাছেও ছিল অত্যন্ত পবিত্র ও সত্য। একটু পরেই কি এক অজানা শঙ্কায় পত্রিকাটা ফেলেই ছুটে বাসায় চলে আসি। দ্বিতীয় পৃষ্ঠা উল্টে দেখার শক্তিও আমার ছিল না। আমার তো হার্টবিট বেড়ে গেলোই আবার ওই দৃশ্যও মাথা থেকে যাচ্ছে না। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো; আর ওই বাসায় যাওয়ার উপায় ছিল না। পরদিন সকালে গিয়ে আর খুঁজে পাইনি কিছু, রাতেই বোধহয় বাকি সব নিয়ে গিয়েছিল। আমার খালি মনে হচ্ছিলো আরও অনেকক্ষণ যদি দেখতে পারতাম । তবে এত ভয়ঙ্কর জিনিস কাছে রাখার ভাবনারও সাহস হয়নি আমার। ওই বয়সে বিদেশীদের এমনিই একটু খারাপ মনে হত, তার উপর এই পত্রিকা দেখে মনে হয়েছিলো বিদেশীরা সত্যি কত খারাপ ! আরও মনে হয়েছিল, অফিসের আঙ্কেলরাও এতটা খারাপ ! ভাবতেই পারিনি। কিন্তু আমার বিদেশী ছবিতে ছেলেমেয়েদের ইন্টিমিসি দেখতে, কিস খেতে দেখতে ভালো লাগতো ।
অনেক কিছু বলে ফেলেছি, এখন চুপ হয়ে যাই । যুগে যুগে আদিবিষয়ে এমন আগ্রহ ছেলেমেয়েদের সবসময়ই ছিল, শুধু আগ্রহ মেটাবার ধরণটা বদলেছে সময়ের সাথে সাথে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনাদের সময়, আমাদের সময় আগ্রহটা ছেলেমেয়েরা মেটালেও একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল সেটা। আর এখন পুরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বিষয়টা।
২০ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার এই দারুণ কাহিনী ও তার ঘনঘটা পড়ে আমার প্রথম এই ধরণের বই পড়ার কথাটা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না বাই চান্স আপনি লোভ সামলাইয়া ফালান নাই। তাইলে আমরা এমন অসাধারণ কমেন্ট ও অভিজ্ঞতার কথা কার কাছ থেকে জানতাম?
আপনি যেই কাহিনি লিখেছেন, প্রতিটা লাইনের উপর কয়েক লাইন করে আমার কমেন্ট করার ইচ্ছে ছিল; জীবন খুব ছোট্ট হওয়াতে সেই সময়টা পেলাম না এই আফসোস নিয়াই কবরে যাইতে হবে
একটা পৃষ্ঠা ওলটানোর পর সাথে সাথে আমার সারা শরীর স্থির হয়ে যায়। কিশোরী চঞ্চল মন একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়। কি দেখছি আমি ! যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না এমন কাজ মানুষ করে ! তাও সেসব আবার বইতে ছাপা হয় ! আমার এক ব্রিলিয়ান্ট ক্লাসমেট আছে, সরকারি হাইস্কুলের নামজাদা ইংলিশ টিচার। সে এখনো বিশ্বাসই করে না যে, সিনেমাতে যে নায়ক-নায়িকারা হাগ করে, বাস্তবে এভাবে শ্যুটিং হয়। তার মতে এগুলো হলো টেকনোলজির কারবার, কিংবা ক্যামেরার কারসাজি, বাস্তবে সিনেমার পাত্র-পাত্রীরা নিরাপদ দূরত্বে থেকেই শরীরের নিরাপত্তা ও মানমর্যাদা সংরক্ষণ করিয়া থাকে। তো, তাহাকেও স্টিল পিকচারসমূহের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিব- এ ব্যাপারে তাহার কী ধারণা
ওই বয়সে বিদেশীদের এমনিই একটু খারাপ মনে হত, তার উপর এই পত্রিকা দেখে মনে হয়েছিলো বিদেশীরা সত্যি কত খারাপ ! আরও মনে হয়েছিল, অফিসের আঙ্কেলরাও এতটা খারাপ ! ভাবতেই পারিনি। এই অংশটা এপিক। আমি ভাষা ও জ্ঞান দুটোই হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছিলাম আর কী (মুগ্ধতায়)।
কিন্তু আমার বিদেশী ছবিতে ছেলেমেয়েদের ইন্টিমিসি দেখতে, কিস খেতে দেখতে ভালো লাগতো এটা আগের অংশকেও ছাড়িয়ে গেছে।
শেষের অংশে যা বললেন, তার সাথে একমত। এ দেশে এক্স-রেটেড ওয়েবসাইটগুলো জলদি বন্ধ করা উচিত। ফেইসবুকে এটা বন্ধের ব্যাপারে তেমন আলোচনা চোখে পড়ে না, অথচ এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও এটা বন্ধ করা খুব জরুরি। বাচ্চাদের রক্ষা করা দরকার।
আমার ব্লগের টাইটেলটা পড়ুন। অ্যাবাভ অল, জীবনের প্রতি সবারই কিছুটা মায়া থাকে, তাই না?
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা আমার আগের একটা পোস্ট আপনি দেখেন নি বোধহয়
শুভেচ্ছা।
২৭| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:১০
রেজওয়ান তানিম বলেছেন: মাঝে মাঝে মনে হয় আপনারা আছেন বলেই ব্লগটা এখনো আছে।
শুভেচ্ছা
২০ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনি এতদিন পর কি ভুল করে ব্লগে ঢুকে পড়লেন নাকি?
ব্লগে ফিরে আসার চেষ্টা করছি। অনেকদিন ব্লগে মন্দাভাব ছিল এবং রিসেন্টলি একটু চাঙ্গা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। লেখার মান নিয়ে অনেকের অনেক রকম আক্ষেপ আর হতাশাও দেখেছি, কিন্তু আমার কাছে তো মনে হচ্ছে ব্লগাররা এখন গড়পড়তা সবাই ভালো লিখছেন। অনেক সমৃদ্ধ আর্টিকেল, অনেক সমৃদ্ধ যুক্তি-পাল্টা যুক্টিসম্পন্ন পোস্টও দেখা যাচ্ছে।
তবে, মোটের উপর কথা হলো, কোনোকিছুই দীর্ঘদিন ভালো লাগে না। আমি ব্লগের সেরা সময় পার করেছি আরো ৪/৫ বছর আগে। এখন আলসেমি লাগে। অথচ অনেক ব্লগারকে এখনো সারাদিন ব্লগেই ডুবে থাকতে দেখা যায়, বিশেষ করে নতুন ব্লগারদের। তাঁদের কাছে এটা একটা ক্রেজ। এরাও হয়ত আর কিছুদিন পর আমাদের মতো ঝিমিয়ে যাবেন, নতুন ব্লগাররা দেই অবস্থান পূরণ করবেন।
ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইত্যাদির কারণেও ব্লগ অনেকটা আকর্ষণ হারাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
যাই হোক, ব্লগে আসুন।
ধন্যবাদ তানিম ভাই ঢুঁ মারার জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
২৮| ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩২
রেজওয়ান তানিম বলেছেন: খলিল ভাই, ভুল করে ঢুকিনি। আপনি তো জানেন, মাঝে মাঝে ব্লগে এখনো আসি। লিখি, পড়ি কমেন্ট দেই।
তবে লেখার মানের ব্যাপারে আমার মতামতের জায়গাটা এই--- আমাদের সময়ে গাইড করার কেউ না কেউ ছিলই, এখন একেবারে কেউ নেই। যারা ভালো লিখছেন তাদের আরও ভাল লেখা কঠিন কারণ, ভুলগুলো ধরিয়ে দেবার কেউ নেই। ব্লগের পরম্পরা নষ্ট হয়ে গেছে। আপনি যেমন বললেন, আমাদের সময় শেষ। আমাদের পক্ষে এটা রক্ষা করা সম্ভব না।
পুনশ্চঃ মাঝে গোটা তিন চার পোস্ট দিয়েছি। দেখে যাবেন সময় করে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:২০
বিজন রয় বলেছেন: আপনার শৈশবকে আমিও কুর্নিশ করি। আপনি ভাগ্যবান।