নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিমান ছিনতাইয়ের ব্যর্থ চেষ্টা – একটা সফল ‘কমান্ডো অভিযান’ নিয়ে যারা মনগড়া প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন, তাদের জন্য

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৩

এ বিষয়টা নিয়ে অলরেডি ফেইসবুকে আমার মতামত শেয়ার করেছি। দুই-আড়াই ঘণ্টার মাথায় মাত্র ৮ মিনিটের একটা সফল অভিযানের মধ্য দিয়ে পুরো জাতিকে আশ্বস্ত ও শঙ্কামুক্ত করার পর যারা এটাকে ‘সাজানো নাটক’, ‘চকবাজার ইস্যু বা পিলখানা ইস্যু থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানো’, ‘একটি পরিকল্পিত হত্যা’, ষড়যন্ত্র, ইত্যাদি নানাবিধ প্রোপাগান্ডাই ছড়াচ্ছেন না শুধু, সবকিছু ছাপিয়ে এখন তাদের বড়ো প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে - ‘মাহিবি জাহানকে মেরে ফেলা হলো কেন?’ যাঁরা ‘মাহিবি জাহানকে মেরে ফেলা হলো কেন?’ প্রশ্ন করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছেন, হৃদয় গলে মানবতাবোধ উপচে পড়ছে, তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্যেই ব্লগে আমার মতামতগুলো শেয়ার করছি।

আমরা যদি ধরে নিই এটা একটা সাজানো নাটক বা ষড়যন্ত্র, তাহলে যারা ‘সাজানো নাটক’ বা ‘ষড়যন্ত্র’ বলছেন, দয়া করে বিশ্লেষণ করুন এই সাজানো নাটক থেকে বিমান কর্তৃপক্ষ বা সরকার কী ফায়দা লাভ করতে চেয়েছিল। আর এখানে ঠিক কী ধরনের ষড়যন্ত্র করা হয়ে থাকতে পারে, দয়া করে তাও বিশ্লেষণ করুন। মাহিবি জাহান সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো তিনি ২৪ বছর বয়স্ক এক যুবক, নারায়নগঞ্জ তার বাড়ি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকায় থাকতেন; দুবাই যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বিমানে উঠেছিলেন। তিনি চিত্রনায়িকা শিমলার কাছ থেকে ভারসাম্যহীনতার অভিযোগে ৪ মাস আগে তালাকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। মাহিবি এর আগেও একটা বিয়ে করেছিলেন। কোনো একসময় এক তরুণীকে অপহরণের দায়ে তাকে ২০ দিন হাজতে থাকতে হয়েছিল। অপরাধীদের তালিকায় তার নাম আছে বলে র‍্যাব জানিয়েছে। তার বাবা আগে মিডল ইস্টে চাকরি করতেন, বছর চারেক ধরে মুদি ব্যবসা করছেন। মাহিবি একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিলেন, নিজেও অভিনয় করেছিলেন বলে জানা যায়। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার যাতায়াত ছিল। তিনি কোনো বড়ো ব্যবসা বা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে এখনো কোনো তথ্য আসে নি; তার বাবা বলেছেন, মাহিবি খুব বেয়াড়া ছিল। তিনি ছেলেকে সুপথে আনার অনেক চেষ্টা করেছিলেন; শেষে আশাহত হয়েছিলেন। আমাদের মিডিয়া, বিশেষ করে ফেইসবুক আরো শোর তুলছে যে, ‘মাহিবি প্রধান মন্ত্রীর সাথে কথা বলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে মেরে ফেলা হলো’। এ সমস্ত তথ্য থেকে ঠিক কী ধরনের নাটক, কী উদ্দেশ্যে সাজানো হতে পারে, এর পেছনে কী ধরনের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে তা বোধগম্য হচ্ছে না। আর, এই ‘চুনোপুটি’কে হত্যা করার জন্য কি প্লেন হাইজ্যাক করার ঘটনা সাজানোর মতো এত বিশাল ‘পরিকল্পনার’ দরকার আছে? অজ্ঞতা ও মূর্খতা থেকেই মানুষ মনগড়া কথা বেশি বলেন। একটা কমান্ডো অভিযান কীভাবে পরিকল্পনা ও এক্সিকিউট করা হয়, আমাদের মতো আমজনতার তা জানার তেমন কোনো সুযোগ নেই।

কেউ বলছেন, চকবাজারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে, বা পিলখানার ঘটনা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতেই এই নাটক সাজানো হয়েছে। বলুন, চকবাজার বা পিলখানার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কিছু কি আছে? ওসব তো ‘ভয়াবহ’ ঘটনা হিসাবে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত, যা সামলানোর জন্য সরকার খুব আন্তরিকভাবে ও কঠোরভাবে তৎপর রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ও অগ্রগতিও প্রশংসনীয়।

মাহিবির হাতের পিস্তলটি আসল, নাকি নকল, ওর বুকে বোমা বাঁধা ছিল কী ছিল না, যাত্রীগণ প্লেনের ভেতরে গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছেন, তদন্ত শেষে হয়ত এগুলো বেরিয়ে আসবে। আর ওটা যে খেলনা পিস্তল ছিল, এ ‘গুজব’ ভাইরাল হয়েছে অপারেশন শেষ হওয়ার পর। অপারেশন শুরুর আগে যদি কেউ জানতো মাহিবি’র হাতের পিস্তলটা ছিল একটা খেলনা পিস্তল, ওর বুকে কোনো বোমা ছিল না, তাহলে আপনাদের কী মনে হয়, মাহিবিকে প্লেন থেকে জ্যান্ত, একদম জামাই-আদরে নামাইয়া আনতেন যাত্রীরা? জি না, অতো সোজা না। যে-মুহূর্তে যাত্রীরা বুঝতে পারতেন ওটা খেলনা পিস্তল, অমনি যাত্রীরা ওর উপর ঝাপাইয়া পইড়া প্লেনের ভেতরেই মাহিবিকে পিটাইয়া মাইরা তক্তা বানাইয়া ফেলতেন। আর এখন আমরা চিল্লাইতেছি খেলনা পিস্তলওয়ালা মাহিবিকি বাঁচাইয়া রাখলো না কেন? ধরুন ওর হাতে খেলনা পিস্তলই ছিল- যে স্টুপিড নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ১৪২ জনের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে, সেই সন্ত্রাসী মরে যাওয়ার পর আপনাদের এত দরদ উথলে উঠছে কেন? বা-মাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর বিপথগামী ঐশীর যখন ফাঁসির আদেশ হয়, তখনও ঐশীর জন্য আপনাদের মায়াকান্না হয়, ওর মৃত মা-বাবার জন্য মায়া হয় না। লিখে রাখুন, কোনো ধর্ষকের ফাঁসির আদেশ হলে আপনারাই সেই ধর্ষকের প্রাণ ভিক্ষার জন্য হাহাকার করবেন, কারণ, আপনাদের ভেতরেই খুনি, আপনাদের ভেতরেই ধর্ষক, ছিনতাইকারীর বাস।

একটা অপারেশনে যাওয়ার আগে সম্ভাব্য সবরকম পরিস্থিতিই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কী পরিস্থিতিতে কী অ্যাকশনে যেতে হবে, তা মোটামুটি ছকের মতোই থাকে। এটাই যে-কোনো দেশের যে-কোনো কমান্ডোদের জন্য প্রথাগত ট্রেনিং। তো, আগেই যদি জানা যেত, মাহিবির হাতের পিস্তলটা খেলনা পিস্তল, তাহলে তো খেল আগেই খতম হয়ে যেত, কমান্ডো অভিযানের তো প্রশ্নই আসতো না। কিন্তু, অপারেশন পরিকল্পনা করার সময় ওর হাতে পিস্তল আছে, শুধু এটাই বিবেচনায় থাকার কথা না; অন্যান্য এক্সপ্লোসিভ, ধারালো অস্ত্র, ইত্যাদি যা যা আগে মিডিয়া থেকে জানা গিয়েছিল, ওগুলো মাহিবির আছে ধরে নিয়েই অপারেশন প্লান করা হয়ে থাকবে।

এবার আমরা মাহিবির দিক থেকেও ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করি। সন্ত্রাসীরা যে-কোনো অভিযানে নামার সময় ওরা জানে যে ওদের প্রাণ ওদের হাতের মুঠোয়, ওদের মৃত্যুর ঝুঁকি এত বেশি যে, যে-কোনো মুহূর্তেই ওদের মৃত্যু ঘটতে পারে। সন্ত্রাসী গ্রুপ যদি নিয়মিত/শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত একজন সদস্যকেও হত্যা করতে পারে, সেটাই তাদের বড়ো ক্রেডিট হিসাবে গণ্য হয় এবং তাদের মনোবল যেমন চাঙ্গা হয়, তেমনি নিয়মিত বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়, যা মেনে নেয়া নিয়মিত বাহিনী তথা জাতির পক্ষে কঠিন। মাহিবিও এই ভয়ঙ্কর ‘ছিনতাই’ পরিকল্পনা করার সময় তার সম্ভাব্য সব পরিণতির কথা জেনেশুনেই এ পথে পা বাড়িয়েছিলেন। যখন প্লেনের ভেতরে তিনি নিজেকে ছিনতাইকারী হিসাবে ঘোষণা দিলেন, তিনি অবশ্যই জানতেন, যে-কোনো মুহূর্তে যে-কেউ তাকে পাকড়াও করতে পারে, যে-কোনো সময় তার মৃত্যু হতে পারে। আত্মঘাতী জঙ্গীদের প্রস্তুতির মতোই তার মানসিক প্রস্তুতি থাকার কথা।

এখন কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন যে, নিহত মাহিবি জাহানের হাতের পিস্তল আসল, নাকি খেলনা ছিল তা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে জানা যাবে না। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়াতে ভাইরাল হচ্ছে যে, মাহিবির হাতের পিস্তলটি আসল পিস্তল ছিল না, ওটা একটা খেলনা পিস্তল ছিল। কিন্তু কমান্ডো অভিযান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা টিভি ও ফেইসবুক মারফত জানতে পারছিলাম, ছিনতাই চেষ্টাকারীর বুকে বোমা বাঁধা, সে উড়োজাহাজ উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে, এবং ককপিটে দুই রাউন্ড গুলিও ছুঁড়েছে। এবার গভীরভাবে চিন্তা করে বলুন, যদি এই কথাগুলো সত্য হতো, অর্থাৎ মাহিবির হাতে যদি একটা আসল পিস্তল ও বুকে বোমা বাঁধা থাকতো, তাহলে কমান্ডো অভিযানে কী কী ঘটতে পারতো? শুধু এটুকু বলতে পারি, আজও হয়ত পুরো জাতি এক মাহিবির জন্য আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় সময় পার করতো। এমনও হতে পারতো, ওর বুকের বোমাটা ও ফাটিয়ে দিয়েছে, প্লেনসহ কয়েক সেকশন কমান্ডো ও আরো কিছু মূল্যবান স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। চিন্তা করুন ১৯৭৭ সালে রেড আর্মি কর্তৃক জাপানী প্লেন হাইজ্যাক করার কথা, যেটি ২৭ সেপ্টেম্বরে ঢাকায় নেমেছিল, ০২ অক্টোবরে সব যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে প্লেন নিয়ে চলে গিয়েছিল। সবচাইতে রিমোট একটা পসিবিলিটির কথা বলি- এমনও হতে পারতো যে, মাহিবি একজন পাইলট। সে প্লেন চালানোর অ্যাটেম্পট নিতে পারতো, ওটা উড়াতে যেয়ে ভূ-পতিত হয়ে আরো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটাতে পারতো।

প্রশ্ন উঠেছে যে, মাহিবিকে মেরে ফেলা হলো কেন? তাকে জীবিত আটক করা হলো না কেন? আমাদের বোঝা দরকার যে, তাকে মেরে ফেলা হয় নি, তাকে আটক করতে যেয়ে প্রথমে মাহিবি আহত হয়, পরে মারা যায়। আপনি হয়ত এই প্রশ্নও করতে পারেন, তাকে আহতই বা করা হবে কেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হলে আমাদের আরো একটু গভীরে যাওয়া দরকার। যে কোনো অপারেশনে টেরোরিস্টকে জীবিত উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে। এখানেও নিশ্চয়ই সেই চেষ্টাই ছিল। সিকোয়েন্স অব অ্যাকশন কীরূপ ছিল তা আমাদের জানার উপায় নেই, কিন্তু এটা নিশ্চিত, বুকে বোমা বাঁধা টেরোরিস্ট ও কমান্ডোদের মুখোমুখী হওয়ামাত্র দু-পক্ষেরই গুলি বিনিময় হতো এবং এখানে যে আগে গুলি ছুঁড়বে, জয় তার পক্ষেই থাকবে। এটা ঘটে থাকে খুবই তাৎক্ষণিকভাবে, ফ্র্যাকশন অব এ সেকেন্ডের মধ্যেই। এরূপ কঠিন, ভয়াবহ ও ফ্লুইড (ঘোলাটে) পরিস্থিতিতে, জেনেশুনে কোনো কমান্ডোই এই প্রথম গুলি ছোঁড়ার সুযোগ টেরোরিস্টের হাতে ছেড়ে দিয়ে বলবে না- বাবা, তুই আগে গুলি কর, তারপর আমি করবো। যুদ্ধক্ষেত্রে এমন ঘটনার বহু নজির আছে, নিজ পক্ষের সবাই মারা গেছে, বেঁচে থাকা সর্বশেষ সৈনিকটি একটিমাত্র এলএমজি দিয়ে অজস্র শত্রু সেনাকে হত্যা করেছে। এই অভিযানে কমান্ডোরা জানতেন যে মাহিবির হাতে একটা ‘আসল’ পিস্তল আছে, তার বুকে বোমাও বাঁধা আছে, প্লাস, অন্যান্য মারণাস্ত্রও থাকতে পারে- এ অবস্থায় অক্ষত মাহিবিকে উদ্ধারের জন্য মাহিবির মুখোমুখী হয়ে বা মাহিবির দৃষ্টিসীমার কাছাকাছি যেয়ে অপেক্ষা করতে থাকলে হয়ত অনেক কমান্ডোকেই প্রাণ দিতে হতো। এমনকি, আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিমানসহ কমান্ডো ও অন্যান্য স্থাপনা উড়িয়ে দিতে পারতো। তখন আমরা কমান্ডোদের দিকে আঙুল তুলে বলতাম- তোমরা আমার 'জব্বর কমান্ডো’, একজন হাইজ্যাকাররে ধরতে যাইয়া ৫ জনের প্রাণ হারাইলা, যেমন পিলখানার ঘটনার জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করে থাকি, ঐখানে দ্রুত কমান্ডো অভিযান পরিচালনা করা হয় নি বলে।

যাই হোক, সন্ত্রাসীকে কাউন্টার অ্যাকশনে যাওয়ার সুযোগ কোনো কালে কোনো দেশের কমান্ডোরাই দিবে না। স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিউর হলো, সুযোগ পাওয়ামাত্র গুলি, যাতে টেরোরিস্ট কোনো কাউন্টার অ্যাকশনে না যেতে পারে; কারণ, কাউন্টার অ্যাকশনের সুযোগ পাওয়া মাত্র টেরোরিস্টরা আত্মঘাতী আক্রমণ দ্বারা ত্বরিত্ব গতিতে যে-কোনো ভয়ঙ্কর অ্যাকশন নিয়ে ফেলবে। ধরুন, মাহিবির হাতে পিস্তল ও বুকে বোমা বাঁধা ছিল। আমাদের গোটা দশেক কমান্ডো আর কয়েকজন যাত্রীকে সাবাড় করে দিয়ে সে অক্ষত অবস্থায় ধরা পড়লো, সেই অক্ষত মাহিবিরে দিয়া আমরা কী করবো? তাকে ধুইয়া পানি খাইব? আদর করতে থাকবো, গালে চুম্মা খাইতে থাকবো? বাহবা দিতে থাকবো, আর যারা মারা গেলো তাদের জন্য মাতম তুলবো, এবং কমান্ডোদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করবো? ফেইসবুকে এটা শেয়ার করলে Nafees Rahman নামক জনৈক ফেইসবুক ফ্রেন্ড একটা সুন্দর কথা বলেছেন এ ব্যাপারেঃ

হয়তো বিলম্ব করা যেতো। এটি নিয়ে আমিও ভেবেছি, মাত্র ৮ মিনিট সময়ে কেন কমান্ডোরা এই অপারেশন শেষ করলো। অনেক নতুন প্রশ্নও হয়তো মনে জেগেছে, যার উত্তর পাই নি। তবে, সকল যাত্রী নিরাপদে প্লেন ত্যাগ করার পর কমান্ডো বাহিনী যখন নিশ্চিত হয়েছে কথিত হাইজ্যাকার কেবল একজন, তাদের কাছে নিশ্চয়ই তখন বড় প্রায়োরিটি হয়ে দাঁড়াবে প্লেনটিকে নিরাপদ করা। হাইজ্যাকারের হাতে যদি একটি আগ্নেয়াস্ত্র দৃশ্যমান হয়ে থাকে, আর কোনো অস্ত্র যে তার কাছে নেই, সেটি কিভাবে কমান্ডোরা নিশ্চিত হতে পারে? যদি বোমাসদৃশ কোনোকিছু হাইজ্যাকারের গায়ে লাগানো থাকে, এবং যদি সত্যিই কমান্ডোরা সেটি থেকে তার ঝুলে থাকতে দেখে, তাঁরা ধরেই নেবে, যে-কোনো সময় সে সেটির বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যার ফলে প্লেনটির বড় রকম ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থায় প্রথম সুযোগেই গুলি করা ছাড়া কমান্ডোদের সত্যিই কোনো বিকল্প আছে বলে আমি মনে করতে পারি না। বুঝতে হবে, কমান্ডোরা পুলিশের মতো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নয়, এরা সেনাসদ্যদের মধ্যে থেকে বাছাই করা এ-ধরনের অবস্থায় যে-কোনো মুল্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স। যে কাজ করতে তাঁরা প্রশিক্ষিত, তাই তাঁরা করবে। এটিই স্বাভাবিক!

এখন তো মাহিবি জাহান ওরফে পলাশ মাহমুদ বা পলাশ আহমেদ বা মাহাদী সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এই জানা থেকে সে প্রধান মন্ত্রীকে এমন কী জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর খবর দিতে চেয়েছিল বলে আমরা মনে করতে পারি? ওর বউ শিমলা ওরে তালাক দিছে। তো, তালাক মিটাইয়া দেয়ার জন্য প্রধান মন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে, আর প্লেন হাইজ্যাক করতে হবে? এমন স্টুপিড বলদ আর আবালের জন্য আপনাদের এই দরদ দেখে আমি ‘কিংবর্লতব্যবিমূঢ়’ হয়ে যাচ্ছি (কি বলবো বুঝতে পারছি না- ‘কিংবর্লতব্যবিমূঢ়। এটা আমার শব্দ)। এখন তাইলে আপনারাও নামজাদা নায়িকারে বিয়া করেন, কিছুদিন পর তালাক খান, বিমান হাইজ্যাক করে আরজ পাঠান- মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাই। ‘প্রধান মন্ত্রী’ পদটা তাহলে এত সস্তা আর সহজপ্রাপ্য, যেনতেন কারবারেই প্রধান মন্ত্রীর সাথে বাতচিত করে ফয়সালা করতে হবে? শালার বেতমিজ আর কারে কয়!

ঐ হালায় যখন বুঝছে সে ধরা পইড়া যাইতেছে, মরণ ছাড়া আর পথ নাই, শেষ চেষ্টা হিসাবে প্রধান মন্ত্রীর সাথে কথা বলার আর্জি করছে বলে মনে হয়। ও মনে হয় ভাবছিল, প্রধান মন্ত্রীর সাথে যখন তখন দেখা করা যায়, ডাক দিলেই দৌড়াইয়া আসবো।

এই হালায় যদি এখন জীবিত থাকতো, তাইলে ওর কাছ থেকে আমরা কী কী তথ্য পেতে পারতাম? বা, ওর নিজের বউরে পাওয়াইয়া দেয়া ছাড়া আর কোন্‌ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়া সে প্রধান মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতো বলে মনে করেন? নাকি প্রধান মন্ত্রীরে বলতো, দেখেন- আমি খেলনা পিস্তল (বা আসল পিস্তল) নিয়া প্লেনে উঠে গেলাম, আমারে আপনার সিকিউরিটি ধরবারই পারলো না? নাকি বলতো- ঢাকা শহরে যানযট বাইড়া গেছে, ঐটা কমাইয়া দেন? আপনাদের কি মনে হয়, মাহিবি সাহেব ঠিক ঐ লেভেলের বিরাট ব্যক্তিত্ব ছিলেন?

নাকি, মাহিবি মারা গেছে বলে আপনারা এখন মহান মানবিকতায় আপ্লুত বোধ করছেন? আপনারা মানবিক হোন, আপনাদের মানবতাবোধের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও কদমবুচি রইল, কিন্তু আমি দুঃখিত, এ ক্ষেত্রে আমি খুবই নিষ্ঠুর, আপসহীন, আমার অপশন শুধু একটাই - ডাইরেক্ট অ্যাকশন।

আমাদের সমস্যা হলো বহুবিধ - ভালো করলেও সমস্যা, খারাপ করলেও সমস্যা, আর কিছু না করলেও সমস্যা।

এটা এমনও হতে পারতো, ঐ একমাত্র মাহিবিকে ঘিরে রেখেছে কমান্ডোদের দল, আর মাহিবি বিরাট এক গোঁ ধরে বসে আছে - তাকে ধরাও যাচ্ছে না, সে সারেন্ডারও করছে না, হয়ত ৩/৪দিন পার হয়ে গেছে, তাহলে চিন্তা করুন, আজ বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকতো। ১৪২ জন যাত্রীর পরিবারের অবস্থা আজকে কেমন হতো! বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি আজ কোনখানে গিয়ে ঠেকতো?

যে-সব অপহরণ ও মুক্তিপণের ঘটনা ঘটে, কিংবা সন্ত্রাসীদের আস্তানায় যে-সব অভিযান পরিচালনা করা হয়, তার ফলাফল সচরাচর নিম্নরূপ দেখা যায়ঃ

১। অভিযানকারী দল ও সন্ত্রাসী, উভয় পক্ষেই হতাহত এবং সন্ত্রাসীদের কেউ আটক, কেউ পলাতক।

২। বহুদিন পর অপহৃত ব্যক্তির হাড়গোর উদ্ধার, অপহরণকারী পলাতক, কিংবা পরবর্তীতে আটক।

৩। অপহরকারী ও অপহৃত ব্যক্তিকে আহত বা অক্ষত অবস্থায় আটক/উদ্ধার।

বিমান ছিনতাই চেষ্টায় বা অপহরণ ঘটনায় সচারচর যা ঘটে থাকে, চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টায় তাই ঘটেছে। এমন কিছু ঘটে নি, যা ইতিহাসে এই প্রথম ঘটলো। মাত্র ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে যে এই সম্ভাব্য ভয়ানক পরিস্থিতির অবসান ঘটেছে, পুরো জাতিকে অল্প সময়ের মধ্যে টেনশনমুক্ত করেছে, সেজন্য আমাদের দেশপ্রেমিক দক্ষ কমান্ডো বাহিনী বিরাট অভিনন্দন প্রাপ্য। অভিনন্দন প্রাপ্য স্বয়ং সরকারও, যে তাদের এরূপ গর্ব করার মতো দক্ষ কমান্ডো বাহিনী গড়ে তুলতে পেরেছে। স্মরণ করুন, হলি আর্টিজেন, সিলেটের সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন আমাদের এই দক্ষ কমান্ডোগণ, যারা আমাদের এই মাটিরই সন্তান।


বিঃ দ্রঃ এখানে বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আমি কোনো আলোচনা করি নি। ওটা অন্য বিষয়।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৬

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ব্যপারটা রহস্যজনক ও আরো ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আমি কোন উপসংহারে পৌঁছাতে চাইছি না। তবুও আমার একটা কথা এই পোস্টের পক্ষেই যাবে। তা হল, হলি আর্টিজান-এর সময় কিছু পুলিশ অফিসার জঙ্গিদের গুরুত্ব না দিয়ে ফোর্স ছাড়া এগুতে চেয়েছিল বলে তাদের বিনা অস্ত্রে/বিনা প্রতিরোধে প্রাণ দিতে হয়েছিল বলে একটা খবর এসেছিল তখন। সে কারণে আর্মি হয়তো কোন ঝুঁকি নিতে চায়নি। সাথে সাথেই দেখা মাত্র গুলি করেছে...

অন্যদিকে পলাশ কেন পাইলট, ক্রু, যাত্রীদের নেমে যেতে দিল এটারও ব্যাখ্যা এখনও আসেনি। তার আচরণ আর কথা বার্তা নিয়ে যাত্রীদের কোন উপযুক্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ঐ সময় কেউ না কেউ নিশ্চয়ই মোবাইলে ভয়েস/ভিডিও রেকর্ড করে রাখার কথা। বাংলাদেশী বেশীরভাগ যাত্রীই নির্দেশ দেয়ার পরও মোবাইল সুইচ অফ করে না! 'একা' পলাশ ১৫০+ যাত্রীকে ধমকে কাবু রাখার মত কিছু বলেছিল বা করেছিল কিনা তারও ব্যাখ্যা নেই...

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: যতটুকু জানা গেছে তা হলো, মাহিবি নীচের দিকের সিটে ছিল। সে উঠে সামনে যেয়ে পিস্তল দেখিয়ে ঘোষণা দিয়েছে সে প্লেন হাইজ্যাক করতে যাচ্ছে। ক্রু-রা নানা অজুহাতে তাকে ককপিটে নিয়ে যায় পাইলটের কাছে। পাইলট বুদ্ধিমত্তার সাথে মাহিবির সাথে কথা বলে ওরে এংগেজড রাখে এবং টাইম কিল করতে থাকে। এই ফাঁকে এমারজেন্সি এক্সিট দিয়ে যাত্রীদের বের হতে সাহায্য করে ক্রু-রা। পাইলট বাদে সবাই বের হয়ে যেতে পারে। এগুলো হলো প্রকাশিত খবর থেকে সংগৃহীত। তবে, তদন্তে সবকিছুই বের হয়ে আসবে বলে বিশ্বাস করি, কারণ, সকল সাক্ষীই জীবিত। যাত্রীরা তালিকাভুক্ত, তাদের পাওয়া যাবে। বিমানের স্টাফরা তো আছেই।

যে-কোনো অপারেশনে নিজস্ব সিকিউরিটি অ্যারেঞ্জমেন্ট আগে নিশ্চিত করতে হয়, মূল পোস্টে বলেছি, এই বেটা যদি প্রফেশনাল হতো, তাহলে নিজে মরে সাথে আরো দু-একটা নিয়ে যেতে পারলে সেটাই ওর দলের সাফল্য হিসাবে বিবেচিত হতো, যেটা কমান্ডোরা কখনো হতে দিবে না।

মানুষ যেগুলো প্রোপাগেট করছে, তা হলো ওয়াইল্ড গেস, কোনো বুদ্ধিদীপ্ত পর্যালোচনা কদাচিত চোখে পড়ে।

ধন্যবাদ তালগাছ।

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৮

কলাবাগান১ বলেছেন: বাংগালীরা সারাক্ষন ষড়যন্ত্র ত্বত্তে বিশ্বাসী...কোন কিছুই তাদের কাছে স হজ নয়। আপনি কারো কোন উপকার করলেন..সাথে সাথে ভাববে নিশ্চয় কোন ধান্ধা আছে....।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হেহেহেহেহে। আমি মনে হয় এমন একটা কিছুই অল্প কথায় বলতে চেয়েছিলাম। যাক, আপনিই বলে দিলেন। আমরা বড্ড সন্দেহপ্রবণ জাতি- তাতে আমার 'সন্দেহ' নাই। ধন্যবাদ কলাবাগান১।

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৩

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: সুন্দর আলোচনা করেছেন ভাই, কথা হচ্ছে যারা ষড়যন্ত্র বলছে তা তাদের জন্মগত স্বভাব, তারা জেনেশুনেই এমন অযাচিত মন্তব্য করে সবসময়, তারা সবকিছুতেই সরকারকে দোষী করতে ভালোবাসে, তারা অপরাধীর জন্য মায়ামমতা দেখায়, আবার অপরাধ দমনের জন্য সরকারকে চাপেরও সৃষ্টি করে, এরা আসলে কোন প্রাণী তা বোঝা বড়ই মুশকিল। তাদেরকে অভিযানে পাঠানো উচিৎ

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:২৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: তারা সবকিছুতেই সরকারকে দোষী করতে ভালোবাসে, তারা অপরাধীর জন্য মায়ামমতা দেখায়, আবার অপরাধ দমনের জন্য সরকারকে চাপেরও সৃষ্টি করে। যথার্থই বলেছেন। কিছু মানুষ আছে যারা শুধু ছিদ্র খুঁজতে থাকে, একশটা ভালো কাজের মধ্যে ১টা খারাপ কাজ পেলে ১টা খারাপ কাজই তখন ১০০টা ভালো কাজের চাইতে বড়ো হয়ে যায়। একটা সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে যে অতি অল্প সময়ে জাতি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, এর কোনো ক্রেডিট বা প্রশংসা নাই- ওরে মারলো কেন, খেলনা পিস্তল, ইত্যাদি এখন বড়ো হইয়া গেছে।


৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি স্টিকি করা হোক।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:২৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পরীর ছোটো ভাইয়ের নামটা মাঝে মাঝেই ভুলে যাই, যেমন এখন :(

৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০৮

মাহের ইসলাম বলেছেন: যথেস্ট যুক্তি দিয়েই প্রতিটি দিক তুলে ধরেছেন।
আমরা অনেকেই একটা বিষয় বুঝতে চাই না, সেটা হল - সময়ের বাঁ প্রেক্ষাপটের দাবী কি ছিল?

সবগুলো টিভিসহ সকলে যখন বলছিল যে, বোমা এবং পিস্তল নিয়ে একজন বিমান ছিনতাই করেছে - ঐ মুহূর্তে আমাদের কেউ কি এমন গ্যারান্টি বাঁ নিদেন পক্ষে তথ্য দিয়েছিল যে তার পিস্তল আসল না ?

আপনার সামনে একজন একটা পিস্তল তাক করে আছে, আপনার দিকে। আপনি জানেন না, এটি আসল না নকল। আপনি এও জানেন না, সে আদৌ আপনাকে গুলি করবে কিনা। আপনি মোটেও শিওর না যে সে, আপনাকে গুলি করবে না।

এমন পরিস্থিতিতে, কত মিনিট/সেকেণ্ড/মুহুরত আপনার সঠিক সিদ্ধান্তের জন্যে যথেস্ট?

যারা ওখানে অপারেশনে গিয়েছিল, তাদের কথা ভাবুন। একজন অস্ত্রধারী সামনে , যে কিনা একটু আগেই প্রায় দেড়শ যাত্রিসহ একটা প্লেন ছিনতাই করার ঘোষনা দিয়েছিল।

কতক্ষন সময়য় নিবেন, সিদ্ধান্ত নেবার, কি করা উচিৎ?

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৫৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মাহের ইসলাম, আপনি খুব সুন্দরভাবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কমান্ডো অ্যাকশনের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেছেন। কমান্ডোরা রিফ্লেক্স অ্যাকশনে কাজ করে। ফ্র্যাকশন অব সেকেন্ডের মধ্যে ডিসিশন নিতে হবে। নয়ত কমান্ডো নিজেই নিহত হবে। সেনা কমান্ডোরা যথার্থ কাজটাই করেছেন।

চমৎকার কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: আপনি পুরো ঘটনাটা যে ভাবে তুলে ধরেছেন তেমন করে সবাই দেখেনি। সবাই কিছু উদ্ভট তথ্য পেয়েছে প্রতি মুহুর্তে তথ্যের গরমিরল লক্ষকরে কেউ -কেউ হয়তো ঘটনাকে নাটক, এই- সেই মনে করেছে।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সবাই তেমন করে দেখবে, তা হয়ত আমিও আশা করি না। কিন্তু, এর পরিণতি কতখানি ভয়াবহ হতে পারতো, তা না হয়ে অতি অল্প সময়ে জাতি শঙ্কামুক্ত হয়েছে, এর কৃতিত্ব সরকার বা সেনা কমান্ডোদের না দিয়ে কোনো এক স্টুপিড কেন মরে গেলো, তার জন্য কাঁদতে কাঁদতে আমরা বুক ভাসাইয়া ফেলতেছি। ব্যাপারটা এমন, দু-চার-দশজন কমান্ডো মারা যাওয়ার পরও জনাব মাহিবিকে জীবিত উদ্ধার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল- ওর কাছে অনেক অনেক স্পর্শকাতর খবর ছিল। এগুলো আমাদের ননসেন্স অ্যাটিচ্যুড ছাড়া আর কিছু না। আমরা বোঝার চেষ্টা করছি না, কোন পরিস্থিতিতে কমান্ডোরা কী ধরনের অ্যাকশনে গিয়েছিল।

ধন্যবাদ মাহমুদুর রহমান সুজন।

৭| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৪

পাকাচুল বলেছেন: সারাবিশ্বে বিমান হাইজ্যাকের যত ঘটনা ঘটেছে, তার মাঝে শতকরা কতভাগ রক্তপাতহীন ভাবে সমাপ্তি ঘটেছে?

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: রক্তপাতহীন হাইজ্যাকিং হয়ত পাওয়া যাবে, কিন্তু তাতে যে ভোগান্তি হয়েছে তা সীমাহীন। ইতিহাসে অনেক দুর্ধ্বর্ষ, রোমহর্ষক, ভয়াবহ বিমান হাইজ্যাকিং-এর ঘটনা আছে। আজকাল গুগল তো খুব সহজেই তথ্য এনে হাজির করে। শুধু The most famous, deadliest, oddest hijackings and how they ended সার্চ দিলেও অনেক কিছু পাওয়া যাবে। fatal events in aeroplane hijacking সার্চ দিয়েও পেতে পারেন।

ধন্যবাদ পাকাচুল সাহেব।

৮| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৫

ঢাবিয়ান বলেছেন: আমজনতা্র মনে প্রশ্ন উঠিয়েছে গনমাধ্যম । কারন সরকারি তরফ থেকেই একেকবার একেক রকম তথ্য দেয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের। এ কারনেই বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে। আরেকটা সন্দেহজনক ব্যপার হচ্ছে ঐ বিমানে থাকা যাত্রীদের বক্তব্য শোনা যায়নি। একটা প্লেনে দূর্ঘটনা ঘটলে সেই প্লেনের যাত্রীদের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত। অথচ এ ক্ষেত্রে কোন যাত্রীর বক্তব্যই শোনা যায়নি।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আরেকটা সন্দেহজনক ব্যপার হচ্ছে ঐ বিমানে থাকা যাত্রীদের বক্তব্য শোনা যায়নি। একটা প্লেনে দূর্ঘটনা ঘটলে সেই প্লেনের যাত্রীদের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত। অথচ এ ক্ষেত্রে কোন যাত্রীর বক্তব্যই শোনা যায়নি। আমিও ব্লগ বা ফেইসবুকে যাত্রীদের বক্তব্য খুঁজছিলাম। হতে পারে, ট্রমা'র ইফেক্টে এখনো কেউ ধাতস্থ হতে পারেন নি; তবে তাদের পরিবারের কেউ না কেউ এ ব্যাপারে ফেইসবুকে কিছু শেয়ার করে থাকবেন, যা আমাদের গোচরীভূত হয় নি। কিন্তু, ভেতরে গুলি হয়েছে, বুকে বোমা বাঁধা, এটা যাত্রীদের মুখ থেকেই শোনা, যা বিভিন্ন মিডিয়াতে এসেছে। তবে, ঘটনা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ায় মিডিয়া উপস্থিতি কম ছিল এবং যাত্রীদেরও হয়ত সেইভাবে পাওয়া যায় নি, যার ফলে যাত্রীদের বক্তব্য আমরা পাচ্ছি না।

এত অল্প সময়ে সঠিক ব্যক্তির কাছ থেকে (যিনি ঘটনাস্থলে অপারেশন পরিচালনা করেছেন) সঠিক খবর পাওয়া খুব কঠিন। ঘটনার আকস্মিকতায় খবর প্রকাশে দু-একটু ভিন্নতা আসতে পারে। কিন্তু এটা তো সত্য যে, প্লেন হাইজ্যাকের চেষ্টা হয়েছিল, এবং ছিনতাইকারী আটক- মানুষ এটাকে গ্রহণ না করে ফালতু কথা, প্রোপাগান্ডা কেন শুরু করেছে, মাহিবির প্রতি কেন এত দরদ দেখাচ্ছে, আমার প্রশ্ন হলো সেটা।

৯| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১১

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আমার প্রশ্ন একটা মানুষ এতো নিরাপত্তার ভিতরে থেকে কি করে একটি পিস্তল নিয়ে বিমানে ওঠেন,হোক সেটা খেলনার?

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে মূল পোস্টের লাস্ট লাইন পর্যন্ত পড়তে হবে।

১০| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২৭

কলাবাগান১ বলেছেন: @মাহমুদুর রহমান ,

আপনি বোধহয় এই খবর টা এখনও পান নাই। "শেখ হাসিনা স্বয়ং ফোন করে বলে দিয়েছে যে পলাশ সাহেব কে যেন পিস্তল সহ প্লেনে উঠতে দেওয়া হয়"

আর এই প্লেন হাইজ্যাক নাটক করে শেখ হাসিনা পুরা পৃথিবী জয় করে ফেলেছেন..উনার অনেক লাভ হবে বলেই উনি এই নাটক করেছেন...আর ১৮০ জন যাত্রী সবাই বলদ কেউ বুঝল না এটা নাটক...একজন ও এগিয়ে এসে বলছে না এটা নাটক

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনি কিন্তু একটা বিপজ্জনক কমেন্ট করেছেন। আপনার প্রথম লাইনটা যদি স্ক্রিনশটে ভাইরাল হয়, তাইলে কিন্তু খবর আছে :)

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আর ১৮০ জন যাত্রী সবাই বলদ কেউ বুঝল না এটা নাটক...একজনও এগিয়ে এসে বলছে না এটা নাটক প্লেনের সবাই বলদ ছিল, ভীরু ও কাপুরুষ ছিল।

১১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
সুন্দর যুক্তি দিয়ে লিখেছেন।
সেনা কমান্ডোরা প্রফেশনাল ভাবে যথার্থ কাজটাই করেছেন।

সব বিমানযাত্রীরাই নেমে এসে বলছে পিস্তল থেকে ৩ রাউন্ড গুলি করা হইছে।
ফোর্স কমান্ড থেকেও প্রথম বক্তব্যে নিহত ব্যাক্তির সাথে পিস্তলের কথা বলা হয়েছে। কোন খেলনা ফেলনার কথা বলা হয় নি।
সে আগে থেকেই একটি পিস্তলের অধিকারি ছিল, তার পেজে ছবিতে দেখা যায়।
সে খুবই ডেস্প্যারেট উন্মত্ত ছিল, সুযোগ পেলেই বিমানটি বিধ্বস্ত করত, দুজন পাইলট খতম করলেই তো একসময় বিমানটি পড়ে গিয়ে বিধ্বস্ত হত।

এখন কতৃপক্ষ গা বাচাতে খেলনা পিস্তলের কথা বলছে।
নিজেদের নিরাপত্তা গাফলতি ঢাকতে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা স্কোর নেমে যাওয়া ঠেকাতেই খেলনা পিস্তলের কথা বলছে।

এতো নিরাপত্তার ভিতরে থেকে কি করে একটি পিস্তল নিয়ে কিভাবে বিমানে ওঠে?

সে ডমেস্টিক টার্মিনাল ব্যাবহার করে বিমানে উঠে। ডমেস্টিক যাত্রীদের নিরাপত্তা তল্লাসি ইন্টারন্যাশানাল থেকে অনেক কম, শুধু একটা আর্চওয়ে পার হওয়া।

হাইজ্যাকারের মেধাকে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না।
সে সামান্য দরিদ্র টোকাইয়ের পর্যায়ের একজন হয়ে প্রতারনা করে ব্রীটিশ এয়ারওয়েজের ভুয়া আইটি স্পেসিয়ালিষ্ট, শুধু চাপাবাজি করে শোবিজের উচ্চপর্যায়ের হর্তাকর্তা বনে যাতে পারে, সবাইকে বোকা বানিয়ে একজন তারকাকে বিয়েও করে ভিআইপি লাইফ লিড করছিল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার প্রতারনা কেউ ধরতে পারেনি।
তাহলে সে একটা ডমেষ্টিক আর্চওয়ের দুএকটা লোককে বোকা বানিয়ে পার হতে পারবে না কেন?

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৩৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনিও খুব গুছিয়ে অনেকগুলো বিষয়ে সংক্ষেপে বলে দিয়েছেন। এ কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ- হাইজ্যাকারের মেধাকে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না। শত্রুকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই, তাইলে ডিফিট নিশ্চিত। কমান্ডোরা অ্যাকশন প্ল্যানে মাহিবির যতগুলো সম্ভাব্য কোর্স অব অ্যাকশন বিবেচনা করেছে, অন গ্রাউন্ডে মাহিবি হয়ত টোটালি ডিফারেন্ট একটা কোর্সে কাউন্টার অ্যাকশন এক্সিকিউট করে ফেলতো। এখানেই কমান্ডোদের প্রফেশনাল দক্ষতার প্রমাণ মেলে যে, মাহিবিকে তারা সেই সুযোগ দেয় নি, বা মাহিবি ওর প্ল্যান আর কাজে লাগাতে পারে নি।

এখন কতৃপক্ষ গা বাচাতে খেলনা পিস্তলের কথা বলছে।
নিজেদের নিরাপত্তা গাফলতি ঢাকতে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা স্কোর নেমে যাওয়া ঠেকাতেই খেলনা পিস্তলের কথা বলছে।
এটা একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে বলে অনেকেই আলোচনা করছেন।


সে ডমেস্টিক টার্মিনাল ব্যাবহার করে বিমানে উঠে। ডমেস্টিক যাত্রীদের নিরাপত্তা তল্লাসি ইন্টারন্যাশানাল থেকে অনেক কম, শুধু একটা আর্চওয়ে পার হওয়া।
- একমত। মাহিবি এই সুযোগটা নিয়ে থাকতে পারে। সে তো আর হুট করে এই প্ল্যান করে নাই। হাইজ্যাকিঙ্গের উপরে সে অনেক স্টাডিও করে থাকবে, বিমান বন্দরেরও কেউ না কেউ ওর সাথে জড়িত থাকতে পারে ওরে পার করে দেয়ার জন্য। খালি হাতে কেউ হাইজ্যাক করতে যায় না কখনো। ইতিহাসে এরকম আছে বলে আমি জানি না। যে মেধা দিয়ে এই আবাল এত ট্যালেন্টেড কাজ করেছে, সে একটা খেলনা পিস্তল নিয়া হাইজ্যাক করতে যাবে তা বিশ্বাসযোগ্য না।

গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হাসান কালবৈশাখী।

১২| ০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ১:২৬

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
শেষপর্যন্ত আমার অনুমানই সত্য হল।
পিস্তলটি জেনুইনই ছিল।
ক্রুদের সাথে বাদানুবাদের সময় ভয় দেখাতে গুলি করেছিল ওয়াসরুমের দরজায়।
সে খুবই ডেস্প্যারেট উন্মত্ত ছিল, সুযোগ পেলেই বিমানটি বিধ্বস্ত করত, ককপিটের দরজা না খোলাতে পারে নি।
ককপিটের কাছে বিজনেস ক্লাসের এক যাত্রী যা বললেন - মানবজমিন পত্রিকায়

বিমান ছিনতাই প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীর বর্ণনা

০১ লা মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:০৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হাসান কালবৈশাখী, আমি এতক্ষণ বিভিন্ন টিভিস্ক্রল খুঁজলাম, মানব জমিনও খুঁজলাম, সম্ভব হলে আমাকে প্লিজ লিংকটা দিন (ইনবক্সেও দিতে পারেন)।

খবরের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

০১ লা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমি খেয়াল করি নি যে আপনি অলরেডি লিংক দিয়ে দিয়েছেন। লিংকের জন্য ধন্যবাদ। নীচে পুরোটাই তুলে দিলাম।

---

২০১৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আমার বয়স ৬৫ বছর হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একজন পেশাদার ব্যাংকার হিসেবে আমার ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর সময় এটা। পেশাগত জীবনে ভাল কাজ করার জন্য আমার বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও সহকর্মীরা আমাকে অভিনন্দিত করলেন। তারা আমাকে বহু কাঙ্খিত বিশ্রাম ও অবসরে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করলেন। তবে অবসরে যাওয়ার প্রথম দিনটি আমার পুরো জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিনগুলোর অন্যতম হয়ে থাকবে তা কখনো বুঝতেই পারি নি।
অবসর নেয়ার পর পরই দুবাইয়ে বসবাসরত লিলির বোনদের কাছে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম আমি ও লিলি। এক সময় দীর্ঘদিন দুবাইয়ে বসবাস করেছি। সেখানে কাজ করেছি।
এর ফলে প্রিয়জনদের সঙ্গে আমাকে নতুন করে দেখাসাক্ষাতের সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমাকে ভাবার কিছু সময় দিয়েছে যে, পরবর্তীতে আমি কি করতে চাই।

তাই, ২৪ শে ফেব্রুয়ারি বিকেলে আমরা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বিজি১৪৭ ফ্লাইটে আরোহন করি। এক দশকের বেশি সময় আমরা আন্তর্জাতিক যাত্রার জন্য জাতীয় পর্যায়ের বিমানে আরোহন করি নি। কিন্তু জানতে পারলাম গত ৫ বছরে এর যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বিজনেস ক্লাসে চড়ে দেখার। আমি আর লিলি জানালার পাশে ২ নম্বর সারিতে আসন নিয়ে বসলাম। বিমানের বাম দিকের সামনের সারির পরের সারিই এটি। আমাদের ডানদিকে সামনের সারিতে বসে ছিলেন বয়স্ক একজন ভদ্র মহিলা ও একজন ভদ্রলোক। সম্ভবত তারা ভারতীয়। বিমানটি ঢাকা ছাড়ার অল্প পরেই একজন ভদ্রলোক বিমানের বাম দিকের আসন থেকে উঠলেন কেবিন ক্রুদের অনুমতি নিয়ে। এতে আমার সামনের একটি আসন ফাঁকা হয়ে গেল।

৫০ মিনিটের এই ফ্লাইটের প্রথম ১৫/২০ মিনিট বা ওই রকম সময় তেমন উল্লেখ করার মতো ছিল না এই ভ্রমণ। এরপর আকস্মিকভাবে ইকোনমি ক্লাস থেকে একজন তরুণ উঠে এসে বিজনেস ক্লাসে প্রবেশ করলেন। আমার সামনের ফাঁকা আসনে বসে পড়লেন তিনি। তার সঙ্গে ছিল একটি ব্যাকপ্যাক। এতে কেবিন ক্রু অবাক হলেন। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ জানানোর আগেই তিনি তার ব্যাকপ্যাক খুলে ফেললেন। তার ভিতর হাত দিলেন এবং বের করে আনলেন একটি অস্ত্র, একটি লাইটার ও বিস্ফোরকের মতো দেখতে একটি ডিভাইস। তিনি দাঁড়ালেন। বন্ধ ককপিটের খুব কাছে সামনের সারির গ্যালারিতে চলে গেলেন এবং ইংরেজিতে বললেন- ‘এই বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছে! অবিলম্বে ককপিটের দরজা খুলুন। যদি বিমানটি অবতরণ করে তাহলে আমি এটা উড়িয়ে দেবো’।

এ শব্দগুলো কেবিনের সামনে সন্ত্রাসের আবহ ছড়িয়ে দিল। তখনও পর্দা নামানো (পরে তা খুলে দেয়া হয়)। ফলে পিছনের দিকে যারা বসা ছিলেন তারা বুঝতে পারেন নি সামনে কি ঘটছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ছিনতাইকারী সশস্ত্র অবস্থায়। তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে সামনের একটি ফাঁকা শৌচাগারের দরজায় একবার তার হ্যান্ডগান দিয়ে গুলি করলেন। বারুদের গন্ধ কেবিনের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল।
যুবকটি চিৎকার করে বলতে লাগলেন- ‘আমি একজন স্কটিশ নাগরিক। আমার মাত্র একটিই দাবি। তাহলো, আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পেতে চাই। সে একজন সেলিব্রেটি...’। যুবকটির আচরণ স্বাভাবিক ছিল না। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি হয়তো মারাত্মকভাবে ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন অথবা মাদকের কারণে এমন করছেন।

বিমানের সামনের সারির একেবারে কাছে বসার কারণে এই ঘটতে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আমি খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি। আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এই ফ্লাইটে তার স্ত্রী আছেন কিনা। জবাবে তিনি বললেন, ‘না। সে এই বিমানে নেই’।
শিগগিরই ওই তরুণ উত্তেজিত হয়ে উঠতে লাগলেন। তিনি ককপিটের দরজায় লাঠি মারতে শুরু করলেন। দাবি তুললেন ভিতরে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার জন্য। কিন্তু ককপিটের ভিতর থেকে কোনো শব্দ এলো না এর জবাবে। কিন্তু পাইলট হয়তো তার জোরালো বার্তা পরিষ্কার শুনতে পেয়ে থাকবেন। বিমানটি দ্রুত নিচে নামতে শুরু করলো। উদ্বেগজনক গতিতে ৩০ হাজার ফুট ওপর থেকে মাটির দিকে যেন মুক্তভাবে পড়ন্ত (ফ্রি ফল) বস্তুর মতো নেমে আসতে লাগলো বিমান। নিচে নামার এই পথে বিমানটি ভয়ঙ্করভাবে এপাশ ওপাশ দুলতে লাগলো। এ সময় পাইলটের একটিই লক্ষ্য ছিল। তা হলো, ককপিট ভেঙে ফেলার আগেই তিনি বিমানটিকে চট্টগ্রামে অবতরণ করাতে চান। তিনি জানতেন, তার হাতে প্রায় ১৫০ জন মানুষের জীবন।

তাই তিনি ওই উন্মাদ ব্যক্তির হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ নিতে যা পারেন তার সবই করেছেন। তার এমন উদ্দেশ্য ছিল ওই ব্যক্তিকে ভারসাম্যহীন করে দেয়া।
উত্তেজনার বশে ওই তরুণ আবারো তার হাতের অস্ত্র থেকে ফাঁকা গুলি করলেন। এ সময় একজন ক্রু তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, বিপদজনকভাবে কি ঘটাতে যাচ্ছেন ওই যুবক তা অনিশ্চিত। ফলে তিনি পিছনে ইকোনমিক কেবিনের দিকে ছুটে গেলেন।পিছনের দিকের যাত্রীরা যখন পরিস্থিতি পুরোপুরি বুঝতে পারলেন তখন শুরু হলো চিৎকার, চেচামেচি।
আমি আবার কথা বললাম এবং ওই যুবকের উদ্দেশে চিৎকার করলাম যৌক্তিক কারণে। জানতে চাইলাম- ‘আমাদের সবাইকে হত্যা করে কি ভাল কাজ করবেন? আমাদেরকে অবতরণ করতে দিন, যাতে আমাদের ১৫০ জনের সবাই কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাতে পারি যেন, আপনি যা চান তা পূরণ করা হয়’। তিনি ছিলেন নাছোড়বান্দা। বললেন, যদি বিমানটি অবতরণ করে তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং তিনি তা ঘটতে দেবেন না। তিনি বোমা দিয়ে বিমানটি উড়িয়ে দেবেন।

তার এক হাতে বিস্ফোরকের ফিউজ ধরা। তার কাছে আরেক হাতে একটি লাইটার নিয়ে দোলাতে লাগলেন এবং আমাদেরকে হুমকি দিতে লাগলেন যে, আমাদের সবাইকে উড়িয়ে দেবেন। বলতে লাগলেন ‘আমি জানি বিমানটি যখন অবতরণ করবে তখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে’।

এ সময়ই প্রথম আমার ভিতর ভয় ঢুকে গেল, বিমানের অন্য স্থানগুলোতেও তার সহযোগী থাকতে পারে। কিন্তু তার কথা শুনে এবং তার চলাফেরা দেখে আমার কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, তিনি খুব সম্ভবত একা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার মতো দক্ষতা অথবা মানসিক অবস্থা তার নেই। কিন্তু তার কাছে যে বিস্ফোরক ও অস্ত্র তা ভয়ঙ্কর রকম অনিশ্চিতা সৃষ্টি করতে পারে।
তড়িঘড়ি করে অবতরণ করার সময় আমি জানালা দিয়ে বঙ্গোপসাগর দেখতে পাই। সাগরের ওপরেই বিমান চট্টগ্রামমুখী হতে শুরু করে। আমরা কি অবতরণ করার মতো পর্যাপ্ত উচ্চতায় আছি, নাকি পাইলট বিমানটিকে পানিতে অবতরণ করাতে চাচ্ছেন তা আমি নিশ্চিত ছিলাম না। অবশেষে বিমানের চাকা রানওয়ের প্রান্ত স্পর্শ করলো এবং পাইলট ব্রেক চেপে ধরলেন। আমরা যে গতিতে টারমাকে আছড়ে পড়েছি তাতে বিমানের ক্ষয়ক্ষতি বা রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কিন্তু পাইলট খুব দ্রুত আমাদের গতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হন।

আমার নিজের অবস্থা করুণ ছিল। আমি ছিলাম ওই তরুণের দৃষ্টিতে পড়া প্রথম ব্যক্তি। যদি সে কাউকে গুলি করতো, তাহলে সেটা শুরু হতো কেবিন ক্রু বা আমি ও আমার স্ত্রীকে দিয়ে। আর যদি সে বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটাতো, সবচেয়ে বেশি আঘাত পেতাম আমি। আমাকে সেখান থেকে বের হয়ে বিমানের পেছনের দিকে তুলনামূলক নিরাপদ জায়গায় সরে পড়তে হয়।
এমন পরিস্থিতিতে বিমানের কেবিন ক্রুদের সঙ্গে ওই তরুণের উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময় হয়। আমি লিলিকে বাহুতে জড়িয়ে রাখি। আমরা বাহু ও হাঁটুর ওপর ক্রলিং করে নিজেদের সিট থেকে মধ্যবর্তী করিডোরে বের হয়ে আসি। এবং বিমানের পেছনের দিকে অগ্রসর হতে থাকি। বিজনেস কেবিনের অন্য যাত্রীরাও আমাদের অনুসরণ করেন।

যখন আমরা পেছনে পৌঁছাই, ততক্ষণে একটি ইমার্জেন্সি এক্সিট (জরুরি মূহুর্তে বের হওয়ার দরজা) খোলা হয়েছে। সেটির সামনে মানুষের জটলা। এর বিপরীত পাশে যে ইমারর্জেন্সি এক্সিটটি রয়েছে সেটি তখনো খোলা হয়নি। তাই সেটি খোলার চেষ্টা করি। কখনোই আমি বিমানের এক্সিট দরজা খুলি নি। কিভাবে আমি সেটা খুলেছি তাও সঠিক জানি না। কিন্তু আমি দরজাটি খুলেছি এবং বিমানের পাখার ওপর বের হয়ে এসেছি।

পাখা থেকে টারমাক কতটুকু নিচে তখন আমি বুঝে উঠতে পারি নি। অবশ্যই এটা ১২ ফুট বা এর আশেপাশে হবে। আর কোন বিকল্প না থাকায়, আমি টারমাকে লাফিয়ে পড়ি। অনুভব করছিলাম যে, আমি পড়ছিই। আমার পতনটা খুব মসৃণ হয়নি। পরে বুঝতে পারি যে, আমার গোড়ালি বাজেভাবে ছিলে গেছে এবং হাঁটু মুচড়ে গেছে। কিন্তু যখনই চিন্তা করার সুযোগ পেয়েছি, আমি লিলিকে নামতে সাহায্য করার কথা ভেবেছি। আমি ওপরে তাকিয়ে তাকে পাখার কিনারায় বসে কান্না করতে দেখি। আমি উচু হই, কিন্তু পাখায় ঝুলে থাকা তার পায়ের নাগাল পাইনি। তাকে লাফ দিতে বলি, যেন আমি তাকে ধরতে পারি। সে আমার এই কথায় সাড়া দেয়ার আগেই পেছন থেকে কেউ তাকে ঠেলে ফেলে দেয়। বাজেভাবে সে টারমাকে আছড়ে পড়ে, আমি তাকে কিছুটা ধরতে সক্ষম হই। আমি তখনো ওই সন্ত্রাসীর হাতে থাকা বিস্ফোরকের ভয়ে ভীত ছিলাম। বিমান থেকে যতটা সম্ভব দূরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা দৌড়ানোর মতো অবস্থায় ছিলাম না। যত দ্রুত সম্ভব আমরা দূরের টার্মিনালের দিকে হাঁটতে থাকি।

বিমানটি অতিক্রম করার সময় সেটির ইঞ্জিন তখনো চালু ছিল। ঝড়ো গরম বাতাস আমার ও লিলির পায়ে আছড়ে পড়ে, আমরা আবারো পড়ে যাই। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে, আমরা ইঞ্জিনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাইনি। এই সময়ে লিলির গলা শুকিয়ে যায়। ও কথা বলতে পারছিলো না। ওকে ফ্যাকাসে বা মৃতপ্রায় দেখাচ্ছিল। এয়ারপোর্ট থেকে কেউ আমাদের দিকে দৌড়ো আসলো। এবং অন্যকারো খাওয়া একটি অর্ধেক পানির বোতল লিলিকে দিলো।

এয়ারপোর্টে ফিরে আসার পর মুক্ত হওয়ার তীব্র অনুভূতি আমাকে গ্রাস করলো। এই সময়ে আমার মনে পড়ে যে, আমরা পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাসসহ সব মূল্যবান সামগ্রী বিমানে ফেলে এসেছি। সৃষ্টিকর্তার দয়ায় আমরা বেঁচে গেছি। পূর্বের ৩০ মিনিটে অনেক ক্ষেত্রেই আমি নিজেকে বলেছি যে, এটাই, এভাবেই আমার জীবন শেষ হবে। কিন্তু কি এক কঠিন অবস্থা, মানুষ বলবে যে, তার অবসরের প্রথম দিনই ছিল তার জীবনের শেষ দিন। কিন্তু লিলি ও আমাকে নিয়ে সর্বশক্তিমানের পরিকল্পনা ভিন্ন। সেই পরিকল্পনা কি তা জানি না, কিন্তু আমি জানি এই অভিজ্ঞতার মতো আর কিছু হবে না।

আমি বলতে চাই যে, এয়ারপোর্টের ঢোকার পরই আমাদের অগ্নিপরীক্ষা শেষ হয়। আমাদের ভালোভাবে দেখভাল করা হয়। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, পরবর্তী ১২ ঘন্টা আমরাসহ মোট ১৫০ জন যাত্রীর ভোগান্তি চলতে থাকে। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ বা বিমান এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু সে গল্প অন্য সময় বলা যাবে...
(কাজী মশিউর রহমান, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন যাত্রী ছিলেন, যা ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল। কি ঘটেছিল সেই বিমানের ভিতরে, তার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন ফেসবুক পেজে। এখানে তারই অনুবাদ প্রকাশ করা হলো)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.