নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
১
এবারের গল্পটা আমাদের সহপাঠী পলাশুদ্দিন তমালকে নিয়ে। ওর গল্পটা বহুদিন ধরেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এ নিয়ে আঙ্গুরির সাথে মাঝেমধ্যে আলাপও করেছি। আঙ্গুরি উৎফুল্ল হয়ে বলতো- খুব ভালো হবে গল্পটা। লিখে ফেলো। গল্পের বাঁক, রহস্য কোথায় কী হবে, সে আমাকে বলতো।
পলাশুদ্দিন তমাল আমাদের ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিল। আঙ্গুরি তার প্রেমে পড়েছিল। গল্পে সেই প্রেমের কাহিনিটাই বলবো বলে ভাবছি। কিন্তু তাতে কোনো ট্র্যাজেডি না থাকলে কি গল্প জমবে? আঙ্গুরি খুব অনুনয় করে বললো- না, ট্র্যাজেডি করো না প্লিজ।
আমাদের পলাশুদ্দিন তমাল খুব নিরীহ, ভাবুক এবং অন্তর্মুখী স্বভাবের। সে শুধু দূর থেকে দেখে আর কল্পনা করে। কাছে গিয়ে মুখটি খুলে বলতে পারে না- ‘বাহ, তোমার নখগুলো সুন্দর তো!’ মেয়েটি হয়ত এ কথায় অবাক হয়ে ফিরে তাকাবে আর কপাল কুঁচকে চোখ সরু করে বলবে- ‘এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি; হুট করেই মেয়েদের নখ দেখে বখাটে ছেলেরা।’ অমনি সে লাজে সংকুচিত হয়ে মাথা নীচু করবে আর মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দেবে- এতকিছু থাকতে সে মেয়েটির নখ দেখতে পেলো কীভাবে? তার চুলগুলো খুব লম্বা; কোমর অব্দি ঝুলে পড়েছে। বলতে পারতো, ‘তুমি কিন্তু খুব সুন্দর করে হাঁটো!’ তখন পলাশুদ্দিন তমালের খুব মন খারাপ হবে, অপমানিত বোধ করবে। আর বেশ কিছুদিন উদাসভাবে আকাশের মেঘ দেখে বেড়াবে।
তারপর একদিন বিকেলে পলাশুদ্দিন তমাল আমার কাছে আসবে। তার চোখমুখ উজ্জ্বল। খাটের উপর আয়েশ করে শুয়ে শুয়ে খুব সুন্দর করে গল্পটা আওড়াবে- ‘হায়, মেয়েরা এমন হয় না কেন?’ তার চোখে একটা মেয়ে ভেসে উঠবে, যাকে সে দেখে নি কোনোদিন, চেনে না; কোনো এক অদ্ভুত কারণে একদিন সেই মেয়েটি তার সামনে এসে পড়বে।
পলাশুদ্দিন তমালের হাত ধরে মেয়েটা এমনভাবে কথা বলতে লাগলো যে তারা বাল্যকাল থেকেই পরিচিত, এক ক্লাসে পড়েছিল বহুকাল ধরে, এমনকি মেয়েটা তাকে ‘তুই’ ‘তুই’ করে কথা বলতে বলতে যখন কাঁধে হাত রাখলো এবং একসময় দুষ্টুমি করে মাথার চুল ধরে ঝাঁকি দিল, তখনো পলাশুদ্দিন তমাল শুধু অবাক হয়েই বলতে থাকলো, ‘আমি তো আপনাকে চিনতে পারছি না। আপনি ভুল করছেন।’
‘না, কোনোকালেই ভুল হবে না। আমরা পালামগঞ্জ হাইস্কুলে একসাথে পড়েছি, জয়পাড়া কলেজে একসাথে পড়েছি, এমনকি তুই আমাকে সাইকেলে করে নিয়ে আসতি তাও ভুলে গেছিস? আমার নাম আঙ্গুরি। মনে নাই?’
স্কুল আর কলেজের নাম ঠিক আছে। সাইকেলের কথাটাও ঠিক আছে। বাকি কিছুই ঠিক নাই। ‘আঙ্গুরি’ কারো নাম হতে পারে, এমনকি এমন অপরূপা একটা মেয়ের নাম আফরিনা কিংবা তাসলিমা না হয়ে পশ্চাৎপদ ‘আঙ্গুরি’ নামটা কেন হলো তাও সে বুঝতে পারছে না।
‘আমরা একসাথে জয়পাড়া হলে সিনেমা দেখতাম। মনে নাই? নদের চাঁদ সিনেমা দেখার পর বাড়ি ফিরতে আমাদের রাত হয়ে গিয়েছিল। তোর বাপে তোকে খুব মেরেছিল। মনে নাই?’
নদের চাঁদ সিনেমা সে দেখেছিল, সেটা ঠিক। কিন্তু সাথে ছিল শাহজাহান আর শাহজাহানের বউ। সেই রাতে শাহজাহান পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে, তারপর থেকে উধাও।
মেয়েটা ওর বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘তুই কিন্তু খুব দেমাগ দেখাচ্ছিস। আমার মতো সুন্দরী একটা মেয়ে আগ বাড়াইয়া কথা বলতেছে তো, তাই এখন তোর দাম বেড়ে গেছে। আমার নাম আঙ্গুরি। মনে পড়ে?’
‘নাহ! আপনি ভুল করছেন।’
‘আরে ঐ-ঐ-ঐ হারামি- আমি আঙ্গুরি আঙ্গুরি আঙ্গুরি। বড়ো বাড়ির আঙ্গুরি। চোখ বড়ো কইরা আমার চোখের দিকে চাইয়া দেখ। আমি আঙ্গুরি।’ বলতে বলতে আঙ্গুরি পলাশুদ্দিন তমালের দুইগাল দুইহাতে টেনে ধরে একদম মুখের কাছাকাছি গিয়ে বললো- ‘এত হারামি হইলি কেমনে, আমারেও ভুইলা গেলি? একটা সুন্দরী মেয়েরে কেউ ভুলবার পারে, এইটা আমারে বিশ্বাস করতে বলিস?’
পলাশুদ্দিন তমাল এখানে এসে থামে। ওর চোখের সামনে আঙ্গুরির গাল টেনে ধরার দৃশ্যটা আমার চোখেও ভেসে ওঠে। সে খুব আবেশিত হয়। জানালা দিয়ে বহুদূর ওর দৃষ্টি চলে যায়, যেখানে ধানফলানো মাঠের দিগন্তে দুটো ছায়া ধীর ছন্দে দুলতে থাকে। মিষ্টি আলো ওর সমস্ত অবয়বে।
‘এমন গল্প মেলানো যায় না। অন্যকিছু কল্পনা করিস না কেন?’ আমি বলি।
পলাশুদ্দিন তমাল ধীরে ধীরে বলে, ‘আমি কি মেলাতে চাই? একটা মমতাবতী মেয়ে, আমার প্রতি খুবই অনুরক্ত, অথচ আমি তাকে চিনি না, আমার হাত ধরে সে গা লেপ্টে থাকে, আমি বিরক্তির ভান করি, আসলে এটা আমি খুব করে চাই- অনন্ত সময়ের এমন একটা স্নিগ্ধ গল্প চাই। আহা, যদি এমন হতো!’
পলাশুদ্দিন তমাল একদিন একটা মধুর স্বপ্ন দেখলো। সারাদিন সে আনন্দে ঘুরে বেড়ালো। আমাকে একবার এসে বলেও গেলো স্বপ্নের কথাটা, কিন্তু গল্পটা বললো না, কারণ, বলে ফেললেই মজাটা শেষ হয়ে যাবে। আমিও গল্পটা জানার জন্য খুব উদ্গ্রীব হলাম এবং বার কয়েক মিনতিও করলাম, কিন্তু সে বললো না। একদিন বিরস মুখে এসে বললো- ‘স্বপ্নটায় আর মজা পাচ্ছি নারে।’
‘কেন?’
‘ধূর!! এত দেখলে কি আর মজা থাকে?’
একটা মেয়ে এক রাতে বিপদে পড়েছিল। খুব অভিজাত বংশের মেয়ে। সাউথ সিটির এক পার্কে বসে সে রাতের আকাশ আর ঝলমলে ঢাকা শহর দেখছিল। বেকার পলাশুদ্দিন তমাল সেই পার্কে খোলা সামিয়ানার নীচে ঘাসের বিছানায় শুয়ে আকাশে জোসনা খুঁজছিল। ঐ সময়ে কয়েকটা লম্পট এসে মেয়েটার সাথে বাজে আচরণ করতে থাকলে পলাশুদ্দিন তমাল তাকে নায়কোচিত বীরত্বে রক্ষা করে নিজের কুটীরে নিয়ে যায়। মেয়েটা সেই দরিদ্র কুটীরে কয়েকদিন থাকে এবং পলাশুদ্দিন তমালের সাথে নানা জায়গায় ঘুরে আনন্দে সময় কাটায়। তার ভালো লাগে পলাশুদ্দিন তমালের সাহচর্য। সে খুব প্রীত হয় এবং মনের মধ্যে একটা ভাব জন্ম লয়। একদিন নর্থ সিটির কয়েকজন পুলিশ এসে মেয়েটাকে উদ্ধার করে। পলাশুদ্দিন তমাল জানতে পারে, মেয়েটার নাম ঐশ্বরিয়া রাই। সে বিশ্বসুন্দরীরের মধ্যে সুন্দরীতমা। সে বাংলাদেশে এসেছিল ভারতের শুভেচ্ছা দূত হিসাবে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে সে রাতের ঢাকা দেখতে বেরিয়েছিল। কুটীর থেকে বিদায় নেয়ার সময় সে হোটেলের ঠিকানা দিয়ে যায় এবং দেখা করতে বলে।
যেদিন পলাশুদ্দিন তমাল টাকা ধার করে দামি পোশাক ও জুতা কিনে বাবু সেজে ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলো, তখন লাউঞ্জে নামিদামি সেলিব্রেটিরা তাকে বিদায় জানানোর জন্য সার বেঁধে দাঁড়িয়ে গেছেন। নিজের পরিচয় বিশদ ভাবে বিধৃত করার পর সে সারিতে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলো। সদাশয়া ঐশ্বরিয়া তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ঠিক সেভাবেই মিষ্টি করে হাসলেন, যেভাবে আগের সবার সাথে হাসি বিনিময় করেছেন, যেমন করে স্বল্প-পরিচিত কিংবা অপরিচিত মানুষদের সাথে সৌজন্য বিনিময় করতে হয়। পলাশুদ্দিন তমাল খুব আশা করেছিল, আজকের এই মহতী ক্ষণে এই নামজাদা ব্যক্তিবর্গের সামনে মহাশয়া তাকে সপ্রশংস সম্মানে আলিঙ্গনাবদ্ধ করবেন। কিন্তু ঐশ্বরিয়া চোখের ঝলকে একটু রোশনাই ছুঁড়ে দিয়েই পরের মানুষটার সামনে গিয়ে যখন কাঁটায় কাঁটায় ১০ মিনিট ধরে হাত নেড়ে নেড়ে, ঘাড় দুলিয়ে, হাসি ছড়িয়ে খোশগল্প করে তার দিকে তাকিয়ে থেকেই পরের জনের সামনে পা বাড়ালেন, তখন সে আবিষ্কার করলো- ‘তুচ্ছ’ আর ‘অভিজাত’-এর মাঝখানে যে পার্থক্য- তা কোনোদিন পূরণ হবার নয়। সে মনে করলো, তার পায়ের কাছে যে একদঙ্গল দূর্বাঘাস দলিত হচ্ছে, তার বিক্ষিপ্ত ডালপালায় বা মাটির শরীর ঘেষে খাদ্যান্বেষণে ছুটে চলা পিঁপড়াদের মধ্যে সেও একজন, যে কিনা সামনে বিচরণত একটা সাদা হাতি দেখে বিস্ময়ে মূক হয়ে তাকিয়ে আছে।
পলাশুদ্দিন তমাল কোনোদিন ‘রোমান হলিডে’ বা ‘সাদমা’ ছায়াছবি দেখে নি। তা সত্ত্বেও কী করে তার মনে এই গল্প জন্ম নিল তা আমাকে ভাবিয়ে তুললো। নিজেকে এমন চরিত্রে কল্পনা করাকে কোন অভিধায় ডাকা হয় আমার জানা নেই। ‘রোমান হলিডে’ বা ‘সাদমা’ ছায়াছবির গল্পকারদের স্বভাবও ঠিক এমনটাই কল্পনাবিলাসী হয়ে থাকবে। মানুষ মাত্রই কল্পনাপ্রিয় এবং অভিমানী। অভিমান হলো আমার সবচাইতে দামি সম্পদ। কল্পনায় প্রতিটা মানুষই নিজের অভিমানকে ফুলিয়ে বড়ো করে আর সগৌরবে সমুন্নত রাখে।
পুরোটা পরের পর্বে
২৯ মার্চ ২০১৯
২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অড্রে হেপবার্নের কথা মনে পড়ে না? হিরোইন হিসাবে তার প্রথম এবং সাড়া জাগানো ছবি।
২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ ভোর ৬:২০
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার লেখায় প্রাণের সন্চার ঘটছে
২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই।
৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: গল্প গ্রেট।
ভাষা এবং গভীরতা দারুন।
২৯ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই।
৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৪
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আপনার কথাগুলো ভালো লাগলো ভাই।
২৯ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ মাহমুদুর রহমান
৫| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:২৫
সোহানী বলেছেন: ওওও পরেতো এক সাথেই দিয়েছেন। ধুর......... ব্রেইন মনে হয় ডাল ভাত হয়ে যাচ্ছে।
৩১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:২৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: জি, কষ্ট কইরা আবার এইটা পড়লেন। ধূর, আমারও এখন কষ্ট লাগতেছে আপনি কষ্ট পাইলেন বলে
৬| ৩১ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৫২
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: সুন্দর গল্প।
৩১ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:২৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ মাইদুল সরকার।
৭| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:০৪
মিরোরডডল বলেছেন: “মানুষ মাত্রই কল্পনাপ্রিয় এবং অভিমানী”
আর সেটারই রিফ্লেকশন গল্প, কবিতায় অথবা মুভিতে ।
পলাশের জন্য মায়া লাগছে ।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: “মানুষ মাত্রই কল্পনাপ্রিয় এবং অভিমানী”
আর সেটারই রিফ্লেকশন গল্প, কবিতায় অথবা মুভিতে । সৃষ্টিশীল প্রতিটা কর্মেই শিল্পীর গোপন বৈশিষ্ট্যগুলো লুকানো থাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ২:০৯
ঢাকার লোক বলেছেন: বহুদিন আগে দেখা রোমান হলিডের গ্রেগরি পেককে মনে করিয়ে দিলেন!