নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা ছোটো ঘটনা যেভাবে একটা গল্প কিংবা কবিতা হয়ে ওঠে

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩৬

স্কুল ছুটির পর আমরা দৌড়ে রাস্তায় উঠে হৈ-হুল্লোড় করে বাসায় ফিরতাম। আমাদের ডামাডোল আর পাখ-পাখালির কিচিরমিচিরে পুরোটা রাস্তা খুব সরগরম হয়ে উঠতো।

আমাদের ছিল কো-এডুকেশন। তবে, মেয়েরা থাকতো কমন রুমে, শিক্ষকদের সাথে ওরা ক্লাসে আসতো, আবার ক্লাস শেষে ফিরে যেত। ক্লাসের ফাঁকে ছেলেরা যেমন শোরগোল করে আড্ডা দিত, মারামারি, চেঁচামেচি করতো, মেয়েদের সাথে ছেলেদের ওরকম আড্ডা বা খোশগল্প করা তো দূরে থাক, ওদের সাথে সাধারণ দু-একটা কথা বলারও খুব একটা সুযোগ ছিল না; আর আমি মনে করতাম ওদের দিকে তাকানোটাও একটা বড়ো অপরাধ :)

রাস্তায় মেয়েরা খুব সুশৃঙ্খলভাবেই হেঁটে যেত। আমাদের কিছু দুষ্টু আর ডানপিটে ছেলে ফুড়ৎ ফুড়ৎ দৌড়াতো, ছুটে সামনে যেত, আবার পেছনে যেত। ওদের কাণ্ডকীর্তি দেখে মেয়েরা হাসতে হাসতে কেঁদে দিত। এসব দেখে আমি এবং আরো অনেকেই যে খুব মজা পেতাম, তা বলাই বাহুল্য।

সেদিন রাস্তায় এত হৈচৈ ছিল না। ছেলেমেয়েদের সংখ্যাও ছিল কম। আমাদের সামনে আর পেছনে কয়েকটা ছেলেমেয়ে ছোটো ছোটো দলে হাঁটছিল। এমন সময়ে হঠাৎ 'খলি--ল' বলে একটু উচ্চস্বরে পেছন থেকে কে যেন ডেকে উঠলো। ঘুরে তাকিয়ে দেখি সুমি, ওর দিকে তাকাতেই ও চোখ নামিয়ে নিল। ও একা হাঁটছিল। ওর কয়েক কদম সামনে নীমা আর রুলি। সুমি বা অন্য কোনো মেয়ের সাথে ক্লাসে বা ক্লাসের বাইরে আমার তেমন কথাবার্তা হয় না। পথের মাঝখানে সুমি বা অন্য কোনো মেয়ে আমাকে ডাকবে, তাও কোনোদিন ভাবি নি। কিন্তু সুমি কেন আমাকে ডেকে বসলো? ওর দিকে তাকানোর পর কিছু না বলে চোখই বা নামিয়ে নিল কেন?

সুমি কাছে এলে ওরে জিজ্ঞসা করলাম- ডাক দিলি ক্যা?
সুমি অবাক হয়ে বলে- ডাক দিছি? কে কইল?
আমি একটু মুচকি হেসে বলে ফেললাম- বুজছি, মনে মনে আমার নাম বলতেছিলি, হঠাৎ মুখ ফসকাইয়া বাইর হইয়া গেছে।
সুমি বোধ হয় লজ্জা পেলো। বললো, যাহ্‌ ফাজিল। আমার কি ঠ্যাকা পড়ছে মনে মনে তোর নাম নিমু?

এরপর আরেক দিন রাস্তায় সুমিকে জিজ্ঞাসা করলাম, কইলি না, আমারে ডাক দিছিলি ক্যা?
সুমি ক্ষেপে গিয়ে বললো, ঐ বান্দর, গেলি সামনে থেকে? থাপ্পড় দিয়া কিন্তু কানশা ফাডাই দিমু।
ওর কথা শেষ হবার আগেই ওর বেণি থেকে ফিতার মাথা টান দিয়ে ভোঁ ভোঁ করে দৌড় দিলাম, আর সুমি 'ঐ খইল্যার বাচ্চা খইল্যা' বলে গগনভেদী চিৎকার দিয়ে উঠলো। আমি ততক্ষণে আইয়ুব পাগলাদের ভিড়ে মিশে গেছি।

এই ঘটনাটাকেই কীভাবে একটা গল্প বা কবিতার ছাঁচে ফেলা যায়, তা দেখতে আগের এই পোস্টটি ঘুরে আসুন।

এবার দুই কৃপণের সেই পুরোনো কৌতুকটা পড়ে বলুন, কোনটা বেশি মজা পেলেন।

এটা সেই আকালের গল্প, যখন বাজারে পিঁয়াজের দর বাইড়া আসমানে উঠে গেছিল, সেই দুক্ষে মানুষ ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। পিঁয়াজের সেই আকালের দিনে একদিন ধলামিয়া বাজারে পিঁয়াজের দর ৫ টাকা সের দেখে পিঁয়াজ না কিনে ভ্যাগা ভ্যাগা হইয়া বাড়ি ফিরে এলো। পিঁয়াজের দুঃখে কান্তে কান্তে তার দুই গাল বাইয়া চোখের পানিতে বুক ভাইষ্যা গেলো। সে সারাদিন কিছু খাইলোই না। পিঁয়াজই নাই তরকারিতে, এই হাদের তরকারি খাইয়া কি বাঁইচা থাকোন যায়? সন্ধ্যার সময়ও কিছু খাইল না। তার বদলে হাঁটতে হাঁটতে গেল প্রাণের বন্ধু চান্দামিয়ার বাইত্তে। চান্দামিয়া তারে দেখে খুব খুশি হইল। বললো, আয় দেখি, বয়, পিঁয়াজের সুখদুক্ষের দুই-চাইরডা প্যাঁচাল পাড়ি। ধলামিয়া বসতে বসতে চান্দা মিয়া বললো, বাত্তিডা তাইলে নিভাইয়া দেই, গল্প করতে গেলে তো আর বাত্তি লাগবো না। এই বলে সে কুপি বাতিটা ফুঁ দিয়া নিভাইয়া দিল।
হেরপর দুইজন পিঁয়াজ নিয়া কত্ত গল্প করলো! ছোডোবেলায় তাগো ক্ষেতে প্রচুর পিঁয়াজ হইত। পিঁয়াজের মরসুমে তারা পেট ভইরা পিঁয়াজ খাইত। ক্ষেত থেকে উঠাইয়া কাঁচা পিঁয়াজ খাইত, আবার বাড়িতে সিদ্ধ কইরাও পিঁয়াজ খাইত। পিঁয়াজ খাইয়া নেশায় টাল হইয়া দুপুরে ঘুম দিত। রসুন, কাঁচামরিচ আর ভাতের গুঁড়া দিয়া পিঁয়াজের ভর্তা বানাইত। সেই ভর্তা খাইয়া সাধ মিটতো না। আহ্‌হারে, কোথায় গেল সেই মনমাতানো পিঁয়াজের দিন! গল্প করতে করতে তারা নস্টালজিক হইয়া যায়।
গল্পগুজব শেষ হইলে চান্দামিয়া তার স্ত্রীকে বললো, গিন্নি, ম্যাচটা দেও, বাত্তিডা জ্বালাই।
ধলামিয়া একটু ধড়ফড়াইয়া উঠে বললো, চান্দু বাই, একটু সবুর করো, লুঙ্গিটা পইরা লই। আন্ধার দেইক্যা লুঙ্গি খুইল্যা রাখছিলাম। আন্ধারে লুঙ্গি পইরা খামোখা ঐডার আয়ু কমামু ক্যা?

০৬ ডিসেম্বর ২০১৯

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: অন্ধকার বলে লুঙ্গি খুলে রাখতে হবে?? কি হচ্ছে এইসব!!!
এর আগে কিন্তু আপনি এই ধলামিয়াকে নিয়ে লিখেছেন।
সুমি থাপ্পড় দিয়ে কানশা ফাতাই দিবে?? কানশা কি জিনিস?? গাল??

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এর আগে কিন্তু আমি এই ধলামিয়াকে নিয়ে লিখেছিলুম- সেটা বোধহয় আপনি পড়েছেন গতকল্য ফেইসবুকে :)

'কানশা' হলো কান :) আমরা চলতি ভাষায় কানসমেত ঐ অংশটুকুকে কানশা বলি। থাপ্পড় দেয়ার জন্য কানশা একটা উপযুক্ত জায়গা বটে। ছোটোবেলায় আমরা কথায় কথায় 'কানশা' ফাটাইতে চাইতাম এবং ফাটাইতামও :)

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩৫

ফয়সাল রকি বলেছেন: নাম ধরে ডাকার এই তাহলে রহস্য!

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হেহেহেহেহেহে

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:০৭

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে ভাইয়া....
শুভসকাল

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ভালো জেনেছে জেনে ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা রইল।

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:২৩

জুল ভার্ন বলেছেন: ছাই ভাই, (বছর দশেক আগের কথা, আমি আপনাকে মজা করে 'ধূলো ভাই ' সম্বোধন করি, তারপর 'বালু ভাই' আর এখন 'ছাই ভাই' সম্বোধন করছি) আপনি বরাবর সিরিয়াস টাইপ লেখা লিখেন যার সাথে আমরা যারা আপনাদের পাঠক তারা পরিচত। ছয় সাত বছর ব্লগ থেকে দুরে থাকায় বর্তমান পোস্টে এক ভিন্নতা লক্ষ্য করছি। ভালো লেগেছে।
শুভ কামনা।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: জুল ভার্ন ভাই, জীবনে যত কম সিরিয়াস থাকা যায়, ততই মঙ্গল :) জীবনে হাসিখুশিটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই হাসিখুশি থাকতে পারাটা হলো সবচাইতে কঠিন কাজ, কারণ, হাসিখুশির জন্য যেসব ফ্যাক্টর প্রযোজ্য, সেগুলো খুব সহজলভ্য না, অনেক দুর্লভ।

সিরিয়াস- ননসিরিয়াস- টক ঝাল মিস্টির সংমিশ্রণ নিয়াই আছি ভাই।

ব্লগে আপনার উপস্থিতি ভালো লাগছে।

ভালো থাকবেন।

৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৪৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: বেশ লেগেছে।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ স্বপ্নবাজ সৌরভ।

৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৯

শের শায়রী বলেছেন: আচ্ছা! ছোটকাল থেকেই বেনী সংহার! ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম ভাই।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: 'বেনী সংহার' !! দারুণ একটা কথা বলেছেন কিন্তু!! টুকে রাখলাম।

৭| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৫

আমি তুমি আমরা বলেছেন: লুঙ্গির আয়ু???!!!

=p~ =p~ =p~

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: যত কম ইউজ করা হবে, ওটা তত বেশিদিন টিকবে :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.