নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
আপনারা অধিকাংশ ফুটবলপ্রেমি এখন উদ্ভ্রান্ত, উন্মাদ অবস্থায় আছেন। স্রেফ আপনাদের চেতনা ফিরিয়ে আনার জন্য বলছি, আপনার প্রিয়তম দেশ বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে খেলছে না। আপনি শুধু অন্য কোনো দেশের সাপোর্ট করছেন, সেই দেশটি আপনার নিজের দেশ না, হয়ত-বা কোনোভাবে সেই দেশের সাথে আমাদের তেমন কোনো ডিপ্লোমেটিক সম্পর্কও নেই, তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো উপকারও হয়ত পাচ্ছি না। শুধু তাদের খেলাকে সাপোর্ট করতে যেয়ে এই যে আপনারা পরস্পরের সাথে মন কষাকষি করছেন, ঝগড়া-বিবাদ করছেন, এমন কি খুন-খারাবি পর্যন্ত করে ফেলছেন, এগুলো থেকে আমাদের অত্যন্ত ঘৃণ্য মানসিক বৈকল্যেরর দিকটা বেরিয়ে আসছে।
আমাদের মতো এত খেলাধুলাপ্রিয় জাতি বিশ্বে দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা সন্দেহ। তবে, আমার অভিজ্ঞতা বলে, বাংলাদেশের মানুষ খেলাধুলার দর্শক বা সমর্থক হিসাবে খুব উন্নত মানের না। এর প্রকৃত চিত্র ও প্রমাণ পাওয়া যায় বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়। আর্জেন্টিনা দলের কোনো সমর্থক যদি জানতে পারেন, আমি ব্রাজিলের সমর্থক, অমনি তার মুখ কালো হয়ে যাবে এবং আমি যদি জানি তিনি আর্জেন্টিনা করেন, অমনি তার প্রতি আমার চোখ রাঙানি শুরু হয়ে যাবে। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে ঝগড়া, খুনাখুনি কেবল বাংলাদেশেই হয়। বিশ্বকাপের সময় এ দেশে যত আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা ওড়ে, খোদ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলেও এত পতাকা ওড়ে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের মানুষ খেলাধুলা তেমন বোঝে বলেও মনে হয় না। আমরা মূলত হুজুগে গোষ্ঠি। ক্রিকেট খেলা শুরু হলে আমরা চাই বাংলাদেশ প্রতিটা ম্যাচেই জিতবে। প্রতিটা দলকেই হারাবে। আমাদের আশা এত বেশি ও এত বড়ো যে, বাংলাদেশ হেরে গেলে ক্রিকেট টিমকে তখন একহাত দেখে নিতে উঠে পড়ে লাগি।
আমাদের কিছু কিছু দর্শক আছেন, তারা শুধু বাংলাদেশ যখন কোনো খেলায় হারতে থাকে, বেছে বেছে শুধু সেই খেলাগুলো দেখেন। কিছু কিছু দর্শক আছেন, বাংলাদেশ হেরে গেলে তারা খুশি হোন, তখন বাংলাদেশকে নিয়ে ট্রল করার এলিমেন্ট পান অনেক। হেরে যাওয়া ম্যাচেও যে পজিটিভ কিছু থাকতে পারে, তা আমরা কখনো বিবেচনা করি না। এই গতবছরই অস্ট্রলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়েকে গুঁড়া করে দিল বাংলাদেশ। আমরা সেগুলো মনে রাখি নাই। আগামী ওডিআই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার দৌড়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। এই যে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ, তা তাদের পারফরম্যান্স দিয়েই এগিয়ে আছেন, অথচ টিমের এই পারফরম্যান্সের দিকটা আমরা নজরেই আনি না কখনো।
যে কোনো দল আপনার ফেভারিট হতেই পারে, যেমন আমারও আছে ফেভারিট টিম। আমি সবসময়ই কামনা করবো আমার টিম যেন জিতে। কিন্তু ধরুন, আমি বললাম আজ আমার প্রিয় দল দক্ষিণ কোরিয়া হারাবে আর্জেন্টিনাকে, কিংবা কোস্টারিকা হারাবে জার্মানিকে, অথবা ক্যামেরুন হারাবে ব্রাজিলকে, অমনি কিছু সমর্থক তেড়ে আসবে আমাকে খুন করার জন্য। আমি কেন তাদের পছন্দের টিমের জেতার কথা বললাম না? আমি খেলা বুঝি না, আমার প্রেডিকশন নিম্ন মানের, ইত্যাদি বাক্যবাণে আমাকে জর্জরিত করে তুলবে। আরে ভাই, আমি বললাম বলেই কি দক্ষিণ কোরিয়া জিতে যাবে? আর দক্ষিণ কোরিয়া যদি জিতে যায়ই, আপনার ভেঙে পড়ার তো কোনো কারণ দেখি না, ভেঙে পড়বে আর্জেন্টাইন/জার্মান/ব্রাজিলিয়ান নাগরিকরা। কিন্তু তারা আমাদের মতো এত হীনমন্য মানুষ না। তারা সুশীল, বোঝবান মানুষ। তারা খেলার আনন্দ উপভোগ করতে জানে।
ফেইসবুকে বাংলার মানুষের বৈশিষ্ট্য খুব পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে। হয়ত আমি স্টেটাস দিলাম - আজ আর্জেন্টিনা জিতবে - অমনি একদল তেড়ে আসবে, আমার অ্যাসেসমেন্ট ভুল, খেলা বুঝি না, প্রেডিকশন নিম্নমানের, কটূ মন্তব্যের বন্যা বয়ে যাবে। ব্রাজিল জিতবে - এরকম স্টেটাসেও একদল তেড়ে এসে পারে তো আমাকে কিডন্যাপ কইরা নিয়া যায়। আমার দোষ হলো, কেন আমি বলতে গেলাম আজ ব্রাজিল/আর্জেন্টিনা জিতবে? আরে ভাই, ব্রাজিলও আমার দেশ না, আর্জেন্টিনাও আমার দেশ না। এগুলো এদেশের কোনো রাজনৈতিক দলও না স্রেফ বিনোদনের জন্য তাদের খেলা দেখি। যে দলের খেলা ভালো লাগে, তাকে সাপোর্ট করে ভালোবাসা প্রকাশ করি। এ নিয়ে মুখ কালাকালি, মনোমালিন্য কেন? কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি কেন? আমার আগের পোস্টগুলোতে হয়ত অনেকেই লক্ষ করেছেন, ফুটবল টিমকে সাপোর্ট করার ক্ষেত্রে আমার একটা বৈশিষ্ট্য আছে। সবসময়ই আমি এশিয়ান টিমের সাপোর্টার। এশিয়ান টিমের সাথে অন্য যে-কোনো টিমের খেলা হলে অটোমেটিক্যালি আমি এশিয়ান হয়ে যাই। যারা জাপান, দঃ কোরিয়া বা সউদি আরবের খেলা দেখে থাকেন, আমার বিশ্বাস, তারা এসব টিমের ভক্ত। এবারের বিশ্বকাপে জাপান ও দঃ কোরিয়া ইতিমধ্যে তাদের চমৎকার ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়েছে। আশা করছি তারা পরের রাউন্ডে চলে যাবে। আমার কাছে ভালো লাগবে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার যুদ্ধংদেহী দ্বৈরথী মনোভাবে থেকে সরে এসে আমাদের দর্শকগণ নির্মল আনন্দ উপভোগ করবেন নিজ নিজ প্রিয় দেশের খেলা দেখে।
ক্রিকেটে আমার প্রিয় দল আমার দেশ, আর আছে শ্রীলংকা, যাকে আমি বাংলাদেশের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস মনে করি। ফুটবলে জান কোরবান করে দেয়ার মতো কোনো দলকে আমি সাপোর্ট করি না। এবং আমাদের কারোই উচিত না, কোনো দলকে অন্ধের মতো সাপোর্ট করতে যেয়ে জান দিয়ে দেয়া। প্রতিপক্ষকে পারলে বিষ খাওয়াইয়া মাইরা ফেলতে হবে- আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ডদের অনেকের মধ্যেই এরকম কিছু ঘৃণ্য খাসলত রয়েছে, যেটা আমাকে লজ্জিত, বিব্রতও করে।
খেলা দেখা যেন আমাদের নির্মল আনন্দের একটা উৎস হয়। কেন আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিল বা স্পেন-জার্মানি আপনার প্রিয় দল, তার ব্যাখ্যা ও কারণ নিশ্চয়ই আপনার কাছে আছে। তেমনি, আমি কেন জাপান-কোরিয়া-ইরান-সউদি-এশিয়ান টিমের সাপোর্ট করি, তা আমার মন জানে। আপনার সাপোর্ট করার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান আছে। আপনাদেরকে অন্যদের পছন্দের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল হতে হবে। আমি দেশ-বিদেশে মোটামুটি কমই ঘুরেছি, কিন্তু যতটুকু ঘুরেছি, আমাদের মতো আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দল করার মতো এত নিম্নমানের মনোভাব প্রকাশ করতে দেখি নি কোথাও।
সবার আগে নিজের দেশ। অন্য দেশকে সাপোর্ট করতে যেয়ে নিজের দেশকে বা দেশের মানুষকে অসম্মান করছেন কিনা, এবং সেটি কোন স্বার্থে করছেন, সেটি ভালো করে খেয়াল রাখবেন। হয়ত কেউ আপনার অপোনেন্ট টিমের সমালোচনা করলেন, অমনি তাকে আপনি বকাবকিসহ অপমানজনক কথা বলা শুরু করলেন। আপনি যেমন আপনার পছন্দের দেশের নাগরিক না, ঐ সমালোচনাকারীও আপনার অপোনেন্ট টিমের দেশের মানুষ না, এবং আপনাদের মধ্যে কোনো যুদ্ধও চলমান নেই। এরকম বকাবকি, কটূ মন্তব্য করা, অপমান করা আপনার মানসিক দুরবস্থা ও অসামাজিক মনোভাবকেই প্রকাশ করবে। বিরত থাকুন এসব থেকে।
চিয়ার্স - আপনার প্রিয় দল চ্যাম্পিয়ন হোক। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেন দা নিয়ে অন্যকে কোপাইতে না যান, সেইটা খেয়াল রাইখনে।
বাংলাদেশের জন্য শুভ কামনা রেখে শেষ করছি - ক্রিকেটে যেমন প্রিয় বাংলাদেশ এখন আমাদের সবার এক নাম্বার সাপোর্টের দল, এমন একদিন যেন আসে, যেদিন ফুটবল বিশ্বকাপেও আমার প্রিয় বাংলাদেশই হয় সমগ্র বাংলাদেশীদের এক এবং একমাত্র ফেভারিট টিম, যেদিন না থাকবে এদেশে কোনো ব্রাজিল, না থাকবে আর্জেন্টিনা বা জার্মানির কোনো সমর্থক, না উড়বে বিদেশী কোনো পতাকা এই বাংলার লাল-সবুজ পতাকার সুনীল আকাশে।
পড়তে পারেন নীচের পোস্টগুলোও :
১। বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২-এর ফিক্সার তৈরি ও ড্র এবং খেলাধুলাপ্রিয় বাঙালিদের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থন
২। বিশ্বকাপ ফুটবল-২০১৪-এর ড্র ও ফিকশ্চার যেভাবে তৈরি করা হয়েছিল
৩। বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪-এর প্রেডিকশন - একটি মজার খেলা এবং প্রিয়দলকে ভালোবাসা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
৪। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বাদ পড়ে যাক। নতুন নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখতে চাই
০১ লা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৫৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অন্য দেশের দল নিয়া খুনাখুনি করতে ওস্তাদ।
২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:০২
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: বিষয়টা আসলেই ভাবনার। ফুটবল বলেন, রাজনীতি বলেন, আর যাই বলেন না কেন, সবক্ষেত্রেই আমরা এক্কেবারে টিনের চশমা পড়া দলকানা! আপনার গায়ে যদি নিজ দলের লেবেল লাগানো থাকে তাহলে আপনার সাতখুন মাফ, আর যদি বিপক্ষ দলের গন্ধ পাওয়া যায় তাহলেই সবাই দল বেঁধে তেড়ে আসবে।
মাঝে মাঝে উদাস হয়ে ভাবি আর কতকাল আমরা দলকানা তকমা তা বয়ে বেড়াবো? আর কতকাল??
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:১৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মল্লিক ভাই, সুন্দর কথা বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২০
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
বাঙালীরা ভালো ফুটবল বুঝে, এজন্যই তলানিতে Ranking.