নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
মেয়েটি সুন্দরী; আমরা সুন্দরী মেয়েদের নিয়েই কাব্য লিখি; যারা সুন্দরী নয়, তারা বড়জোর মানবতাবাদীদের সামান্য কৃপা পেয়ে থাকে মাঝে-সাঝে, সেটা মেয়েটির জন্য নয় যতটা, তার চেয়ে ঢের বেশি তাঁদের নাম ভাঙিয়ে অস্তিত্ত্ব ও কৃতিত্ব জাহিরের জন্য।
সুন্দরী মেয়েটির কথাই বলছিলাম।
ছবি : নিজের তোলা
মেয়েটি কোন দেশের? ছোটোবেলায় পড়েছিলাম, ইরানি ও টার্কিশ মেয়েরা পরীর মতো সুন্দরী। পরে যোগ হয়েছিল লেবানিজ আর ইসরাইলি মেয়েদের চোখ-ধাঁধানো রূপের গল্প। যে-কজন ইরানি-তুরানি-লেবাননি ললনা আমার চোখে পড়েছে, তাদের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েদের মনে হয়েছে ‘অতুলনীয়া’।
ব্রিটিশ, ফিনিশ, জার্মান আর আমেরিকানদের খসখসে চামড়াঅলা চেহারায় কোনো মোহ কিংবা মাদকতা আছে বলে মনে হয় নি। তবে, অ্যান-সোফি-অ্যালেগ্রি, ফ্র্যান্সের মেয়েটিকে দেখে, আর পপ-এলিজিকে, আমার মনে হয়েছে, কোনো এককালে বাঙালি-ফ্রেঞ্চ পাশাপাশি বসত ছিল; এদের মধ্যে জিনের এক্সচেঞ্জ ও মিকশ্চার ঘটেছে; কিন্তু তা ঐতিহাসিকভাবে সত্যসম্ভব নয়।
অ্যান-সোফি-অ্যালেগ্রি প্রথম সাক্ষাতে যে অপরূপ হাসিটি আমায় উপহার দিয়েছিল, অনেক কাল আগে, সদ্য-কৈশোর-পেরোনো উত্তাল বয়সে রাহিমার একদিনের একটা হাসির সাথেই কেবল তার তুলনা চলে।
কনফারেন্স টেবিলের উলটো পাশে মেয়েটি বসেছিল রেসিডেন্ট কোর্ডিনেটরের গা-ঘেঁষা সিটটাতে; সে কি সদ্যনিযুক্ত পার্সোনাল সেক্রেটারি? শুকনো কাঠির মতো ব্ল্যাঙ্কা লোপেজ; ও যেন কোন দেশের! ভুলে গেছি; রানি মুখার্জির ফ্যাঁসফেসে গলায় কী অপূর্ব মাধুর্য আছে, তাই না? আর থোবড়ানো পাটের আঁশের মতো এলোমেলো চুলঅলা এ ব্ল্যাঙ্কা লোপেজ, হাসে খুব শুকনো ঠোঁটে, হ্যান্ডশেকের সময় শরীরের হাড়গুলো যেন কড়কড় করে নড়ে ওঠে, আর মনে হয় ওর মনটাও বড্ড খসখসে। মেয়েদেরকে আমরা ‘পেলবতার’ সাথে উপমিত করে অভ্যস্ত। কাষ্ঠখণ্ডি ব্ল্যাঙ্কা লোপেজ এদ্দিন পার্সোনাল সেক্রেটারি ছিল। এ মেয়েটি কে? কী সে?
‘স্যার, আমায় কি ডেকেছিলেন?’ আমি ঘাড় ঘুরিয়ে হেডউইগ-এর দিকে তাকাই। বলি, ‘আপনি বরং এখানে বসুন। আমাদের বেশ কিছু পেন্ডিং ইস্যু রয়ে গেছে। আজ সেগুলো ডিস্কাশনে তুলতে হবে।।’
আমি ভুল দেখছিলাম চোখে। ব্ল্যাঙ্কা লোপেজ রেসিডেন্ট কোর্ডিনেটরের পাশে বসে শুকনো মন নিয়ে শুকনো আঙুলে শুকনো নোটবুকে কনফারেন্সের শুকনো বিষয়গুলো নোট করে নিচ্ছে, মিনিট্স অফ মিটিঙের জন্য। হেডউইগ ওখান থেকে উঠে এসেছে আমার ইশারা পেয়ে।
হেডউইগ ম্যায়েক্স। ব্রাসেলসের নাগরিকা। সুন্দরী। স্মার্ট। চুলগুলো কালো। ভ্রূ তার কালো। তার চোখের মণিও কালো। ঠোঁটে লিপস্টিক পরেছে, যেভাবে বাঙালি মেয়েরা পরে। একটা ব্রাউন-পিঙ্ক মিশ্র স্ট্রাইপের লং স্কার্টের সাথে ডার্ক ব্লু টপস পরেছে, তার উপর ধবধবে সাদা ওভারকোট। বেলজিয়ামের কোনো মেয়ে এর আগে দেখি নি। হেডউইগ-এর পূর্বপুরুষ বাংলাদেশ বা এর আশপাশের দেশের নাগরিক ছিল কিনা জানা নেই। কিন্তু হেডউইগের চেহারা ও কথা অবিকল বাঙালি নারীর।
ফলপ্রসূ মিটিঙের পর হেডউইগ আর আমি দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। ও গাড়ি চালায়, আমি ওর পাশে বসে কনফারেন্সের পয়েন্টগুলো আলোচনা করি, আলোচনার অন্তরালে হেডউইগ-এর সমগ্র ভুবন উথালপাথাল ঘুরতে থাকি। সুদান ভেঙে যাচ্ছে। দশ হাজার শান্তিরক্ষীকে পাঠানো হয়েছে মূলত সুদানকে শান্তিপূর্ণভাবে টুকরো টুকরো করবার জন্যই, উত্তর সুদানিদের সুদৃঢ় বিশ্বাস; ৯ জুলাই ২০১১-তে সিপিএ পিরিয়ড শেষ হবার পর নর্থ সুদানের সরকার এক ঘণ্টাও ইউএনকে নর্থে থাকতে দেবে না; অথচ উভয় সুদানেই আমাদের কর্মকাণ্ড ব্যাপ্ত। আমাদের অফিস ভাগ হয়ে যাবে।
‘আমরা দুজন খার্তুমেই থেকে যাই। কী বলেন, হেডউইগ?’
‘সেটা খুব মন্দ প্রস্তাব নয়। কিন্তু নর্থের ক্রুয়েল গভর্ন্টমেন্ট দারফুরবাসীদের উপর অমানুষিক জেনোসাইট চালাচ্ছে, আমি বরং ওখানে থাকতেই প্রেফার করছি।’
‘আপনি খুব নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছেন, ডিয়ার লেডি হেডউইগ ম্যায়েক্স । আপনার শরীরের জাফরান ঘ্রাণ আপনার মনের সাথে বিলকুল বৈসাদৃশ্যময়।’ এ বলে আমি বাঁ-দিকে কাত হয়ে আলগোছে তার বাহু টেনে কাছে এনে নরম গালে মৃদু টোকার মতো একটা চুমু দিই। হেডউইগ স্মিত হেসে জানায়, ‘অতটা নই, যতটা আপনি সব সময় ভাবছেন।’
ব্লু নাইল আর হোয়াইট নাইল যেখানে একত্রে মিশেছে, আর জন্ম দিয়েছে দীর্ঘতম নাইল নদী, তারপর হোয়াইট নাইলের উজান টেনে চলে গেছে সুদানের বৃহত্তম নগরী অম্দুরমানকে পদ-পললে রেখে দক্ষিণ বরাবর, একদিন অপরাহ্নে এই রুটে আমরা কয়েকজন কলিগ সাফ-এর স্পিড বোটে রিভার ক্রুজ করেছিলাম। এমন রোমান্টিক মোমেন্ট জীবনে বহুবার আসে না। স্মারক ফটোগুলো দেখে হেডউইগ আফসোসে ভেঙে পড়েছিল– সাথে থাকতে পারে নি বলে; আর হেডউইগকে রিভার ক্রুজের দিন পাশে বসিয়ে রোমান্স না-করতে পারার বেদনা প্রকাশের কোনো ভাষা আমার ভাণ্ডারে ছিল না।
যেসব মেয়েরা এভাবে প্রতিদিন কনফারেন্স টেবিলের উলটো পাশে বসে, অজস্র ট্যারা চোখ যাদের বুক ছিদ্র করে নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে ফেলে, কদাচিৎ চোখাচোখিও ঘটে, তাদের নিয়ে উড়াল দিতে ভয়ানক সাধ হয়। মেরি-ফ্র্যান্স আর নায়ালা কী অদ্ভুত ঢঙে শার্পিন্টিয়ারের গায়ে গড়াগড়ি খায়। অ্যান-সোফি-অ্যালেগ্রিকে দেখবার দুর্মদ বাসনায় এলিজির ‘লা-ইসলা-বোনিতা’ দেখি; কী কবিতা জড়িয়ে আছে এ গায়িকার প্রত্যঙ্গের প্রতি ভাঁজে! আমার অ্যান-সোফি-আলেগ্রি, আমার এলিজি, হায় হেডউইগ, তোমাদের প্রতিদিন কনফারেন্স টেবিলের উলটো পাশে দেখি, দেখি আর কৈশোরের রাহিমাকে খুঁজি– ভারী বাতাসে উড়াল দিতে দিতে আমার ডানায় এখন জমাট ক্লান্তি– হায়, তোমরা পরীর দেশে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে সরে যেতে থাকো, নীল উড্ডয়নে আমি কেবল ভাসতেই থাকি, জমে যেতে থাকি প্রগাঢ় ঠান্ডা ও তমিস্রায়–যেখানে রাহিমার একঝাঁক ছায়া ঝাপসা হাত নেড়ে নেড়ে নিবিড় আকুতি জানায়, আর দিগন্তের সুরের সাথে মিলিয়ে যায়।
২১ এপ্রিল ২০১১
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
তা পুরুষ মানুষ তো চিরকালই সুন্দরের চেয়ে সুন্দরীর পুজারী! আপনিই বা ব্যতিক্রম হবেন কি করে !!!!
আমি ব্যতিক্রম হতে চাই না আমি সুন্দরীর পূজারিই হতে চাই, আর গাইতে চাই এ গান - তুমি সুন্দরী, তাই চেয়ে থাকি হে স্ত্রী, সে কি আমার অফেন্স?
রাহিমা? রাহিমা আরো কবিতায় আছে। জাস্ট এই লিংকের নীচে থেকে উপরের দিকে ২ নাম্বার - যে গানটি শোনা হয় নি, যে কবিতাটি লেখা হয় নি।
হাসি-আনন্দ ও কান্নায় ভরা কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় আহমেদ জী এস ভাই। শুভেচ্ছা রইল।
২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:২৬
শায়মা বলেছেন: আহারে ভাইয়া সেই মেয়েকে আজও ভুলতে পারলে না!!!
যাই হোক আমার মনে হচ্ছে রহিমাই বেশি সুন্দরী হবে।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কেউ ভোলে, কেউ ভোলে না
বয়স ও অভিজ্ঞতার এ প্রান্তে এসে মন হচ্ছে - 'সুন্দর' জিনিসটা সময় বা বয়স ও স্থানের সাথে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট। একজনের সাথে আরেক জনের তুলনা হয়ত দেয়া যায়, কিন্তু তুলনাটা মনে হয় ঠিক হয় না।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ আপু।
৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৩৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মিশরের মেয়েরাও না কি সুন্দরী হয়। আমার অবশ্য দেখতে কালো মেয়েদের বেশি ভালো লাগে। তবে চেহারাটা মায়াবী হতে হবে। কণা নামের একজনকে পেয়েছিলাম অবশ্য।
লেখাটা দারুণ হয়েছে। প্রিয়তে সংযুক্ত করে নিলাম। এমন লেখা একবার পড়ে পোষায় না।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:০২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ, মিশরীয় মেয়েরা যে সুন্দরী হয়, সে-কথাও শুনেছি।
কালোদের দেশে কালোদের চোখে কালোরা অবশ্যই সুন্দরী। কোনো এক কালো মেয়ে একবার বিশ্বসুন্দরী বা মিস ইউনিভার্স হয়েছিল, সম্ভবত সাউথ আফ্রিকান। সৌন্দর্যের নিজস্ব ভাষা আছে। যে বা যারা ঐ ভাষা বোঝেন, তাদের কাছে গায়ের রঙ ম্যাটার করে না।
লেখাটা আপনার ভালো লাগায় আমি আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত। সুন্দর কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:০৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই।
৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:১১
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: আপনার চমৎকার লেখা পড়ে মনে পড়লো, গ্রিক দেশ থেকে আলেকজান্ডার আফগানিস্তানে এসে রোকসানার প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছিল।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কত কিছি যে জানি না, তার মধ্যে এ তথ্যটাও যোগ হবে রোকসানার গর্বে কি আলেক ভাইয়ার কোনো সন্তানাদি ছিল না? আরো কিছু তথ্য জানতে ইচ্ছে করছে এ ব্যাপারে।
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ হাসান জামাল গোলাপ ভাই। শুভেচ্ছা।
৬| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:০৭
চারাগাছ বলেছেন:
বেশ কয়েকবার পড়ে মন্তব্য করলাম।
গত কয়েকদিনে কয়েকটা পোস্ট মনে রাখার মত।
এই লেখাটা মনে দাগ কেটেছে।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার কমেন্টে অনেক অনেক উৎসাহিত হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা নিন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:২২
আহমেদ জী এস বলেছেন: সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই,
মেয়েটির শরীরের জাফরান ঘ্রানের মতোই সুগন্ধি একটা লেখা।
তা পুরুষ মানুষ তো চিরকালই সুন্দরের চেয়ে সুন্দরীর পুজারী! আপনিই বা ব্যতিক্রম হবেন কি করে !!!!
এতোসব পরীর ভিড়ে এখনও কি "রহিমা"কে মনে পড়ে ?