নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
১
একজন রমণী, কিংবা নারী- বিকেলের নরম রোদ পেছনে ফেলে শান্ত সৌম্য পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। একটা ছোট্ট ছেলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার মা যখন হাঁটতো, ঠিক এমন করেই হাঁটতো।
ছেলেটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে- রমণী হেঁটে যাচ্ছেন। তার শাড়ির আঁচল একপাশে ঝুলে পড়ে বাতাসে উড়ছে। শৈশবে মায়ের হাত ধরে গুঁটি গুঁটি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আঁচলের ঝাঁপটায় তার মুখ ঢেকে যেত। দু’হাত পাখার মতো দু’দিকে ছড়িয়ে দিয়ে আঁচল ভেদ করে মুখের হাঁ আর নাক দিয়ে শুউশ্শ্ শব্দে সে বাতাস টানতো। তার খুব ভালো লাগতো। মা মারা গেছে সেই কবে; মায়ের ঘ্রাণও সে ভুলে গেছে। কখনো-বা হঠাৎ হঠাৎ কোথাও থেকে মায়ের একদঙ্গল ঘ্রাণ দমকা হাওয়ার মতো ভেসে এসে যখন ওর মুখ ভিজিয়ে দেয়- মা মা বলে সে করুণ আর্তস্বরে গুমরে কেঁদে ওঠে; ওর বুক ফেটে যেতে চায়, আর মনে হয় পাঁজরগুলো যেন ভেঙে যাচ্ছে।
২
একটু পরই সন্ধ্যা। ছিমছাম চারপাশ মাধুরীমাখা আলো-আঁধারীতে ছাওয়া। এমন সময়ে অকারণে মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, ঢেউ ওঠে হৃদয়ে; মন কত কী যে ভাবে, কত কী যে চায়, মন নিজেই জানে না সে-সব।
ক্যানভাসের মতো সুচারু রাস্তা ধরে কবিতা বুনে যাচ্ছে কে এক স্নিগ্ধ অনামিকা। একটু পেছনে হাঁটছিল এক মন-চঞ্চল, স্বপ্নখোর, দিশাগ্রস্ত তরুণ।
সে এক তরুণী। খোঁপায় গুঁজেছে ফুল। কী সুন্দর ঢঙে ছন্দের মতো খুব ধীরে মাটিতে চরণ ফেলে, মিষ্টিমধুর তালে দুলে দুলে সে হেঁটে যাচ্ছে! বাতাসে মৌ মৌ করছে ফুলের ঘ্রাণ। বেলিফুল। হাসনাহেনা। রজনিগন্ধা। আরো নাম-জানা বা না-জানা হাজারো ফুলের ঘ্রাণে টগবগে ছেলেটা মাতাল হয়ে যাচ্ছে। বয়সটাই এমন। মেয়েদের খুব ভালো লাগে। খুব সহজেই মেয়েদের চোখে চোখ পড়ে যায়। প্রতিটা চোখেই কত শত কথা লুকানো! কত কথা যেন বলতে চায় চোখগুলো!
তরুণী হেঁটে যাচ্ছে। একটা লতানো কবিতার মতো সে দুলে দুলে হাঁটছে, সিনেমার স্লো-মোশন সিকোয়েন্সের মতো অতীব ধীর লয়ে, খুব ধীরে কদম ফেলে ফেলে। সে ডানে তাকায়, বামে তাকায়। মাঝে মাঝে আকাশে তাকায়। আকাশে মেঘ নেই। কী দেখে সে আকাশে? হায়, একবার যদি পেছন ফিরে তাকাতো! খুব দেখতে ইচ্ছে করছে মেয়েটার মুখ। দেখতে ইচ্ছে করছে অনন্ত মাধুর্যে ভরা সেই মুখে একটুকরো হাসির বিভা। একটু দ্রুত হাঁটে ছেলেটা। আরেকটু পা বাড়ালেই বামে ঘাড় ঘুরিয়ে সে মেয়েটার মুখ দেখতে পাবে। একটা দুরন্ত তৃষ্ণা জেগে ওঠে মেয়েটার মুখ দেখার জন্য।
মেয়েটা হাঁটছে; হাঁটছে মেয়েটা।
মেয়েটা ধীর পায়ে হাঁটছে; হাঁটছে ধীর লয়ে।
একটা স্নিগ্ধ কবিতার মতো গন্ধ ছড়িয়ে হাঁটছে।
হাঁটার ঢঙটিতেই এক অপরূপ শিল্প ফুটে উঠেছে।
ছেলেটা জানে না, বুঝতে পারে না- মেয়েরা কীভাবে এত সুন্দর করে হাঁটে। একপলক মেয়েটার মুখ দেখার জন্য সে অস্থির হয়ে উঠলো।
কিন্তু হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে মেয়েটা হারিয়ে গেল। হায়, দেখা হলো না কবিতার মতো স্নিগ্ধ মুখখানি! আক্ষেপ আর বেদনায় তার মন ভরে উঠলো। যতদূর গেল, যতদিন গেল- অনেক অনেকদিন ধরে তার মনে জেগে থাকলো মধুর ছন্দে হেঁটে যাওয়া একটি অপরূপা কবিতার ছায়া, এবং তারপরও মেয়েটার হেঁটে-যাওয়া ছায়াটি তার মন থেকে কোনোদিন মুছে গেল না।
৩
সন্ধ্যার কিছু আগে। একটা বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে সামনের রাস্তায় গভীর মগ্নভাবে তাকিয়ে আছেন তিনি। গোধূলির অপূর্ব সৌন্দর্যে তার মন আকুল হয়ে উঠছে। এ সময়ে ধীর পায়ে হালকা নীলরঙা শাড়ি পরে যে মেয়েটিকে হেঁটে যেতে দেখলেন, তার মনে হতে থাকলো- এটি কিছুদিন আগে অকালে মরে যাওয়া তার মেয়েটিই যেন।
২৬ মে ২০১৯
২৪ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার ফাইন্ডিংস, কিংবা উপলব্ধিটাও দারুণ। একই বয়সের একটা মেয়ে বা একজন নারী ভিন্ন ভিন্ন বয়সের পুরুষের চোখে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেবে। আবার একজন পুরুষ বয়সের বিভিন্ন পর্বে নারীকে বিভিন্নভাবে দেখবেন। অল্প পরিসরে পুরুষের চোখে শুধু তিনটা কালকে এখানে ধরার চেষ্টা করেছি। গল্পটা একটা সত্য ঘটনার উপর দাঁড়িয়ে। মাঝের পর্বটা হলো মূল পর্ব। আমি দূর থেকে একজন নারীকে তার সঙ্গীর সাথে পাশাপাশি হেঁটে যেতে দেখি। তার হাঁটার ভঙ্গিটি আমার কাছে এত রোমান্টিক ও কাব্যিক মনে হচ্ছিল যে তার বর্ণনা যেমন ফুটিয়ে তুলতে পারি নি, অমন চলনভঙ্গি জীবনে আর কোনোদিন দেখিও নি। আমি তাকে পাশ কাটিয়ে আগে চলে যাই, কিন্তু লজ্জার কারণে তার দিকে তাকাই নি। এই ঘটনাটাকে ধরে রাখার জন্যই এই গল্পটা লেখা।
হ্যাঁ, পুরুষের পাপী কিংবা হিংস্র চোখই বরং সংখ্যায় বেশি, তাই মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা আজও একটা বিরাট বিষয়।
সুন্দর কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ রিয়াদ ভাই।
২| ২৪ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:১৮
আখামোরহ মিয়া বলেছেন: চমৎকার কথামালা!
২৪ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:২৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।
৩| ২৪ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৪৭
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আপনি পুরুষটাকে একই রেখেছেন, কালে ভিন্নতা এনেছেন।
আমি নারীটাকে একই রেখে, একই কালে, পুরুষে ভিন্নতা ধরেছি। গল্পের শিরোনাম পড়লে হয়ত আমিও আপনার মতনই ভাবতাম।
২৪ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন রিয়াদ ভাই। ফিরতি কমেন্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৪| ২৪ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:২৮
শেরজা তপন বলেছেন: পুরাই কাব্যিক!!
২৪ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ঠিকই ধরেছে শেরজা তপন ভাই। এক অনুপম কাব্যময়তার ভেতর থেকেই লেখাটার উৎপত্তি। কাব্যিক না হয়ে কি যায়?
৫| ২৫ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৪২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দারুণ বর্ণনা!
৬| ২৫ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর আবেগ থেকে সুন্দর লেখা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫১
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: বাহ, দারুণ। নারী, এক শরীরে বহুরূপ৷ কখনও সে কারও কাছে মায়ের মতন কোমল, কখনও সে কারও কাছে প্রেমিকার মতন স্নিগ্ধ, কখনও সে কারও কাছে মেয়ের মতন চঞ্চলতা আর ভালোবাসায় মুগ্ধ।
একজন নারী হেঁটে যাচ্ছে, তাকে ঘিরে কিছু বিশুদ্ধ ভাবনার প্রলেপ এই গল্পে দেখতে পেলাম। কিন্তু এই প্রলেপের আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে, কত শত বুভুক্ষু দৃষ্টির কথা, যারা শুধু দৃষ্টি দিয়েই ছিড়ে খেয়ে ফেলতে চেয়েছে মেয়েটাকে।