![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ক্ষুদে রচনাটি ছাপা হওয়ার কথা ছিল দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য সাময়িকী। (অবশেষে এই শুক্রবারে তা ছাপা হয়েছে) সেইখানে সলিমুল্লাহ খান গত ২৮ মার্চ একটি নিবন্ধ লেখেন 'আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সংষ্কৃতি চিন্তা' নামে। লেখা পাঠাবার পর দুই সপ্তাহ পার হবার পরও সেইখানের কর্তৃপক্ষ আমার এই প্রতিক্রিয়াখানি প্রকাশ করবার অবকাশ পান নাই। অগত্যা এই খানে পেশ করা হল।
****লিংকটা অবশেষে পেলামView this link
..............................................................................
ছিল একটা রুমাল হয়া গেল বেড়াল। নিজে না থাকিলে মানিতাম সেদিন, মানে ১২ ফেব্রুয়ারি, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্ম দিবসে বুঝি একটা মজমাই বসিয়াছিল। আলোচনা ঈষদোষ্ণ ও কলকলই ছিল কিন্তু কী কারণে বুঝি সেই সভার এক আলোচক_ সলিমুল্লাহ খান, স্বয়ংক্রিয়ভাবে যতই গরম হইয়া উঠিয়াছেন, ততই সভাকে তুলনায় বরফ ঠাউরাইয়াছেন। কিন্তু পলকের ভুল পলকে সারে না। ইহারই প্রমাণ রাখিতে ঘটনার প্রায় আটচল্লিশ দিন পরে তাঁহার সেই ভ্রমকে রাষ্ট্র করিলেন। ইত্তেফাকের সাময়িকীতে আমরা পড়িলাম 'আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সংস্কৃতি চিন্তা'।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্যিক। দুইখানা ঢাউস উপন্যাস আর গোটা পঞ্চাশেক গল্পেই তিনি বিরাজ করেন। আমাদিগের জন্য ইহাই তাঁহার কর্মের ফল। আনুষঙ্গিক হিসাবে যে প্রবন্ধগুলি লিখিয়াছেন, সেগুলিকে ফলের খোসার সহিত তুলনা করা যায়। ফল বাদ দিয়া সলিমুল্লাহ খান এই খোসা লইয়াই বারবার মাতিতেছেন। ফলের দেখা তিনি যেন চাহেনই না! অপিচ, তিনি নাকি ইলিয়াসের রচনা পড়িতেই পারেন না। কী করা যাইবে!
তো সেই 'সংস্কৃতি চিন্তায়' খান সাহেব প্রয়াত সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্মকে রাখা সুবিধা মনে করেন নাই। বিন্দুতে সিন্ধুতে দেখিবার ছলে কেবল তাঁর 'সংষ্কৃতির ভাঙ্গা সেতু' নামক নাতিদীর্ঘ নিবন্ধকেই নিছেন। এটি লিখিবার পরেও ইলিয়াস এক যুগ বাঁচিয়াছিলেন। ইহার মধ্যেই প্রকাশিত হয় তাঁহার শ্রেষ্ঠ কর্ম 'খোয়াবনামা'। যাঁহাদের দাঁত গজাইয়াছে তাঁহারাই মানিবেন, বস্তুটি বাংলা ভাষায় লিখিত এবং তাহা পড়া যায়। কিন্তু সলিম খান বারংবার সভায় দাঁড়াইয়া নিজের দাঁতের দূর্বলতা ঘোষণা করিতে পছন্দ করেন এবং বলেন, 'আমি পড়িতে পারি নাই'। ইহার পর আর কী বলা চলে? তাই বলি-ই না।
তিনি শুনিয়াছেন, জনসংস্কৃতি মঞ্চের ওই সভায় নাকি 'কয়েকজন আলোচক-বলিলেন ইলিয়াস উত্তরাধুনিক ঔপন্যাসিক।' বালাই ষাট! আমি সাংবাদিক, আমার কাছে রেকর্ড আছে। এই কথা কেহ বলেন নাই।
আলোচনা ও সমালোচনার পার্থক্য মিহি ও গোদার পার্থক্য। তো সলিমুল্লাহ খান ইলিয়াসের যে গোদা সমালোচনাটি করিয়া সারিয়াছেন, যতটা বুঝিতে পারি তাঁহার দুঃখ ইলিয়াস ''কোথাও 'কৃষক সংস্কৃতি' বা 'জাতীয় সংস্কৃতি' কথা দুইটা ব্যবহার করেন নাই''। বানান করিয়া লেখেন নাই তবে 'নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী সংস্কৃতি', গ্রামের মানুষ ইত্যাদি অভীধায় ইলিয়াস পুরো নিবন্ধে মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির বিপরীতে যাহাদের লক্ষ্য হিসেবে হাজির করান, তাঁহারা কৃষক বৈ আর কেহ নয়। তবে কথা কি; 'কৃষক সংস্কৃতি'ই জাতীয় সংস্কৃতি কিনা; কোন মতে তাহা সাব্যস্ত হয় তাহা যাচাই না করিয়া কেনই বা বলিবেন! তিনি প্রবন্ধটি লিখিয়াছিলেন বামপন্থি কর্মীদের উদ্দেশ্যে। যে, তাহাদের রাজনীতি ও সংস্কৃতি চর্চা শহুরে বৃত্ত না ছাড়াইলে এবং গরিব মানুষের প্রতি মর্যাদাবোধ অর্জন না করিলে ব্যর্থই হইবে। পাশাপাশি সাহিত্যিকদেরও বলিয়াছেন, গ্রামের মানুষের সঙ্গে এই সংযোগ বিনা ''মধ্যবিত্তের আধুনিক শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চা দেশের সংস্কৃতি চর্চার মূল প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরিণত হয় উদ্ভট ও নিষ্প্রাণ ব্যায়ামে''। কিন্তু যেই কালে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় সংস্কৃতির ধ্বনি শ্রমজীবী মেহনতিকে নাম-পরিচয় মুছিয়া লেজুড় করিবার ফাঁদ হইয়া ওঠে, সেই কালে 'জাতীয় সংস্কৃতি'র সেবা করা শেয়ালের কাছে মুরগি জমা রাখার সামিল। ইলিয়াস তাহা বুঝিতেন, তাই বিশেষ রাজনৈতিক ঝাঁজযুক্ত জাতীয় সংস্কৃতি আউড়ান নাই। এই অপরাধ কী প্রকৃতির-ফৌজদারি না দেওয়ানি তাহা না আলোচনা করিয়া কেবল বলিয়াছেন, গিনি বিসাউ ও কেপ ভার্দের 'স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা আমিলকার কাব্রাল এই বিষয়ে মূল্যবান কথা বলিয়াছেন।' স্থানাভাবে বলিতে পারেন নাই, কিন্তু জ্ঞানের অভাবে আমরা কি বুঝিব? আমাদের আকুল প্রশ্ন, 'কেমনে কি?'
পলকের ভুল কি আর পলকেই ভাঙ্গে? আরো আছে। তিনি দেখিতে পাইয়াছেন, 'মধ্যবিত্ত সমাজে শিল্পীর প্রধান উদ্দেশ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি। তখন মনে হয় তিনি সৌন্দর্য সৃষ্টির কোনো ভাগ নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীকে দিতে রাজি হইতেছেন না।' মনে রাখিতে হইবে ইলিয়াস সমগ্র সংস্কৃতির আলোচনা করিতেছেন না, বিভিন্ন শ্রেণীর সংস্কৃতি চর্চার তুলনা ও সম্ভাবনা যাচাই করিতেছেন। সাধারণভাবে আমরা সংস্কৃতিকে উপরিকাঠামো বলিয়া থাকি। আর বৈষয়িক জগতকে বলি অবকাঠামো। ইলিয়াসের নজরে পড়িয়াছে যে, মধ্যবিত্তের সংস্কৃতি চর্চা উপরিকাঠামোরও উপরিকাঠামো। 'মধ্যবিত্তের সংগঠিত সংস্কৃতি চর্চা অনেকটাই সৌখিন।' পক্ষান্তরে, 'নিম্নবিত্তের সংস্কৃতি চর্চা তাঁর জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।' এক কদম পরেই আরো পরিষ্কার করিয়া বলিতেছেন, 'শ্রমের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন বলে তাঁর (শ্রমজীবীর) সংস্কৃতিকে উপরিকাঠামোর পর্যায়ে ফেললে ভুল করা হবে'। কথাটা নতুন এবং অব্যর্থ। পুরাতন অভ্যাসে এর মাজেজা বোঝা দুষ্কর বটে। সংস্কৃতির মধ্যেই শ্রমজীবী তার নিজস্ব চেতনার দিশা পায়। সেই কারণে সর্বহারা হইয়াও সে সংস্কৃতি হারায় না, উচ্চবর্গের খাঁচার মধ্যে বসিয়াও স্বপ্ন দেখিতে পারে। জীবন-উতপাদন ও সংগ্রামের মধ্যে ইহাই তাহাদের মেলবন্ধন।
সলিম ভাই ইলিয়াসের এই আবিষ্কার রেজিস্ট্রি করিতে রাজি না। আমরা তাই আপিল করিয়া রাখিলাম।
১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:২৯
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: লিংক দিতে পারলাম না, কারণ ওদের আর্কাইভে ওটা পাচ্ছি না। কেউ দিয়ে দিলে ভাল হয়।
১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:১০
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: লিংকটা ওপরে দেয়া হলো।
২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:২৯
আজহার ফরহাদ বলেছেন: মন্তব্যটি সলিম ভাইয়ের পড়া উচিত। ওনাকে পড়ানোর ব্যাবস্থা করা হইলে তর্কটা জমিয়া উঠিত।
যদিও সলিম ভাইয়ের লেখাটি পড়ি নাই, পড়া থাকিলে ভালো হইতো।
৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:৩১
সুতরাং বলেছেন: অফিসের ফাইল থেকে আমি পড়ে নেব বলে ভেবেছি। তবে লিংক পেলে এখনই পড়া যেত।
৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:৩৭
মৃদুল মাহবুব বলেছেন: খান সাহেব যে কি কইবার চান তার একটা মোটামুটি ধারণা লাভ করলাম লেখাটি থেকে। আমাদের এই মহান খান সাহেব পর্যায়ের লোকরা সর্বদা নিজেগো এককাঠি উপরে মনে করে। হেরা ভাবে তারা সক্কল কিছু বোঝে এবং তাগো সক্কল বিষয়ে মত দেবার অধিকার এবং কর্তব্য আছে। নাইলে কি আর ইলিয়াস না পইড়াও আলোচনা করে। আমাদের মত ভেড়ার পালে এমন দুই চারটা বাছুর বেশ দিন গুজরান করতাছে। ভালোই লাগে এগোর কথা বর্তা শুনতে। সব কিছুকে নেগেটিভ জায়গা থেকে দেখার একটা সানগ্লাস পড়া চোখ তিনাদের আছে। আর যে ইলিয়ান না পইড়াই এতো কথা কইতে পারে তারে যে কি কমু, তিনার সম্ভন্ধে কি যে বুঝমু তা বুঝতাছি না। সেলুট একটা মারি বস রে, কি কন?
৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:৩৪
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: প্লিজ
৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:৫০
নাজিম উদদীন বলেছেন: বাপরে বাপ !! এক্কেবারে প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবি খান সাহেবের সাথে বাহাস। উনার একটু উন্নাসিক স্বভাব আছে যেটা লেখায় ধরা পড়ে, তবে মেনেও নেয়া যায়, কথায় বলে না, সুন্দরী মেয়েদের একটু
দেমাগ না থাকলে মানায় না।
৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:৫৮
রাহা বলেছেন: কেউ যদি আখতারুজ্জামানের সাহিত্য না পড়ে তার সংষ্কৃতি চিন্তা নামে প্রবন্ধ লেখেন সেটা আসলে হাস্যকর মনে হয় । তার থেকে তিনি সংস্কৃতির ভাংগা সেতু প্রবন্ধ পড়ে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন । আর আখতারুজ্জামান কি তার সনদ সলিমুল্লাহ খান-এর জন্য অপেক্ষা করে না ।
আর এইটা মনে হয় একরকম ফ্যাশন, একসময় লোকজন এসব করত, রবীন্দ্র নাথ লেখক নাকি?? এসব বলে নিজেরে পাণ্ডিত্য জাহির করার মত অপচেষ্টা করত । খান সাহেব বড়জোড় সেই কাতারের পাণ্ডিত্য জাহির করতে পারেন !!
সলিমুল্লাহ খানরা আসলে কি বলতে চান কিংবা কি বুঝাতে চান সেইটা অনেক কাছ থেকে দেখেও আমার মতো অনেকের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি । অনেক পড়লেই পণ্ডিত হওয়া যায়না , আর যে আখতারুজ্জামান পড়তে হোচট খায় তাকে তো বালো পাঠক হিসেবেও গণ্য করা যায় না । আমার মনে হয় তিনি আর তার গুরু দুজন মিলে ইসলামিক সমাজতন্ত্র টাইপ কোন একপ্রকার রাজনৈতিক দর্শন তৈরী করতে চান ।
৮| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১২:০০
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: আমার ধারণা উনি পড়েছেন।
৯| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১২:০৬
আজহার ফরহাদ বলেছেন: কেমনে? খান সহেব কী ব্লগের খবরও রাখেন?
১০| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:৩৪
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: না সেইটা বলি নাই। উনি ইলিয়াস পড়েছেন হয়তো কিছুটা, কিন্তু উপেক্ষা বোঝাবার জন্য বলেন, `পড়ি নাই'।
১১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৯:৩১
মুক্তকথা বলেছেন: রোগটা পুরানো।
কেউ যদি মাইকে ফুঁ-ফাঁ দিয়ে, গলা খাকারি দিয়ে বলে বসে, রবীন্দ্রনাথ কোন লেখকই না। তবে অন্তত কয়েকজন ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাবে তো! এইটুকুই লাভ।
যে কারণে খান সাহেব ইলিয়াসের সমালোচনা করেন, সেই কারণেই ওয়াসিফ সাহেব খান সাহেবের সমালোচনা করেন।
কি ভাই মাইন্ড করলেন?
১২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৯:৩৩
মুক্তকথা বলেছেন: তবে ইলিয়াসকে আমি ভালা পাই। খান সাহেবকে না।
বলাই বাহুল্য, ফারুক ওয়াসিফকেও আমি ভালা পাই।
১৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১২:১৯
সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেছেন: প্রতিক্রিয়াটি পড়লাম। ভালো লাগলো।
চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ ফারুক ওয়াসিফকে।
দৈনিক সমকালে ফারুক ওয়াসিফের অসংখ্য লেখা পড়েছি।
সলিমুল্লাহ খানের লেখাটি পড়া দরকার।
তবে মৃদুল মাহবুব যেভাবে ঢালাও মন্তব্য করেছেন, তা সমর্থনযোগ্য নয়।
সুতরাংকে বলবো, মূল লেখাটি কি পাওয়া গেছে?
১৪| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১২:২২
আজহার ফরহাদ বলেছেন: ফারুক ভাই মূল লেখার যদি লিংক না পাওয়া যায় আর লেখাটি যদি ছোট হয়ে থাকে তো আপনি কষ্ট করে টাইপ করে দিলে ভালো হয়।
১৫| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১২:৫২
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: যে সভা থেকে এই বিবাদের উৎপত্তি সেই সভায় আমার আলোচনার উপসংহার টেনেছিলাম এই বলে যে. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর দুটি উপন্যাসে এমন একটি সাহিত্যিক ধারা (ট্র্যাডিশন) সৃষ্টি করেছেন যা হয়তো আমাদের নিজস্ব সাহিত্য সৃষ্টিতে অনুসরণীয় হতে পারে। সলিম ভাই তাঁর আলোচনার শেষে বলেন, ইলিয়াসের ধারা হয়তো আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে। তিনি আরো অনেক কথা বলেছেন যা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি ইত্তেফাকের ঐ লেখায় ঐ আলোচনা সভা এবং তার আলোচকদের ব্যাপারে তিনি বিতর্কে যে শ্রদ্ধাবোধের প্রয়োজন হয়, তা রাখেননি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, তা নিয়ে মশকরা করা চলে। সলিম ভাই আমাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও চিন্তক। তাঁর সঙ্গে বিবাদ ও বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে আমি সকলের কাছে মিনতি করব বিষয়টি নিয়ে কার্যকর বিতর্কই করা। তামাশা নয়। কেননা তাতে বিষয়ের মর্মনাশ ও সর্বনাশ দুইই ঘটে।
লেখাটি কিঞ্চিত দীর্ঘ, প্রায় সতের আঠারশ শব্দ।
১৬| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:১৯
আপন মাহমুদ বলেছেন: খান সাহেবের ইলিয়াস পড়ার সার্মথ্য হোক
১৭| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:১২
সুমন চৌধুরী বলেছেন: আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে কেহ উত্তরাধুণিক বলিয়া থাকিলে তাহার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা রহিল।
সলিমুল্লাহ খানের লেখাটি পড়িলাম। বিষয়টা ভালো বুঝি না। তবে ইলিয়াস "সংস্কৃতির ভাঙা সেতু" প্রবন্ধে শ্রমের সহিত শ্রমিকের সাংস্কৃতিক জীবনের যে চিত্র আঁকিয়াছেন তাহা অদ্যাবধি অব্যর্থ বলিয়াই জ্ঞান করি। ফসলের মাঠে যাহারা শ্রম দেন তাহারাও শ্রমিক এবং তাহাদিগের শ্রমের পদ্ধতি বা কাঠামোও বুদ্ধিচিবাইয়া জীবনধারণকারীদের ন্যায় প্রতিমুহুর্তেই দৌড়ের উপর থাকে বিধায় ইলিয়াসের দেওয়া নৌকার গলুইয়ের উদাহরণেও গুরুতর ত্রুটি দেখি না। সলিমুল্লাহ খান দেখেন। তবে সেই গূঢ় তত্ত্বটি তিনি পরবর্তী কোন নিবন্ধে উত্থাপন করিতে মনস্থ হৈয়াছেন। তাহার প্রতীক্ষায় হয়তো থাকিবো।
তবে ইলিয়াস পাঠের মতো দুরূহ কর্ম ইতোমধ্যে সম্পন্ন করিয়াছি বলিয়া খান সাহেবের নিকট ক্ষমাপ্রার্থী। বিশেষত: যে চিলে কোঠার সেপাই তিনি, তাহার ভাষ্যমতে শুরু করিয়া ক্ষ্যামা প্রদাণ করিয়াছিলেন, তাহা আযাযিলের অসীম কৃপায় আমি প্রথম বসাতেই সাবাড় করিয়াছিলাম। তারপর একসময় সমগ্রই পাঠ করিলাম।
যে গূঢ় হেতু, আমার কাছে ইলিয়াসকে সুপাঠ্য করিয়া তোলে তাহা বর্জন করিলে অর্থাৎ কথাসাহিত্যপাঠে আমার যে ন্যুনতম অভিজ্ঞতা এবং প্রান্তিক রসগ্রাহীতা ম্লেচ্ছদিগের শিক্ষাকাঠামো হৈতে আমার চৈতন্য আছর করিয়াছে তাহা বর্জন করিবার পরামর্শ দাতাকে, তাহার বস্তুগত জীবন হৈতে ম্লেচ্ছ প্রযুক্তি বর্জন করিতে দেখিলে যাহারপরনাই আল্হাদিতে হৈতাম।
১৮| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:১২
সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেছেন: ফারুক ওয়াসিফ মন্তব্যের শেষাংশে ঠিকই বলেছেন, "সলিম ভাই আমাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও চিন্তক। তাঁর সঙ্গে বিবাদ ও বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে আমি সকলের কাছে মিনতি করব বিষয়টি নিয়ে কার্যকর বিতর্কই করা। তামাশা নয়। কেননা তাতে বিষয়ের মর্মনাশ ও সর্বনাশ দুইই ঘটে।"
আমিও এই বক্তব্যের সাথে একমত।
ধন্যবাদ।
১৯| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:১৩
পাঞ্জুমশাহ্ বলেছেন:
*********************জরুরী বিজ্ঞপ্তি******************************
সৈয়দা তাহমিনা বেগম নামের নিকটি সৈয়দ আমিরুজ্জামানের। এটা উনার বউয়ের নাম। কিন্তু ছবিটা উনার বউয়ের নয়। অন্য মেয়ের ছবিদিয়ে যে কাজটা তিনি করেছেন তা কি মহৎ নাকি বন্ডামী ? সবাই'কে সাবধান করা যাচ্ছে এই ব্লগ থেকে।
২০| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:৫৩
সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেছেন: পাঠকদের সুবিধার্থে সলিমুল্লাহ খানের লেখাটি নিম্নে সংযুক্ত করা হলো।
আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াসের সংস্কৃতি চিন্তôা
স লি মু লস্না হ খা ন
আখতরাউজ্জামান ইলিয়াসের অনুসন্ধানী চোখ তাই শেষ পর্যন্তô সত্য খুঁজিয়া লইয়াছে। তিনি বলিয়াছেন মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ ও জীবনযাপন এক নহে। এই বিরোধ হইতেই জন্মাইয়াছে ‘অপসংস্কৃতি’ নামে কথিত ‘দানব’টি। ইলিয়াসের সংজ্ঞা অনুসারে, ‘সামন্তô ও গ্রাম্য মূল্যবোধের সঙ্গে বুর্জোয়া জীবনযাপনের এই উৎকট মাখামাখির ফলে যে সংস্কৃতি গজিয়ে ওঠে তারও অনেকের চোখে উটকো ঠেকে এবং তখন তাতে অপসংস্কৃতি বলে গান দেওয়া হয়
কিছুদিন আগে (মানে ১২ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৮) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াসের ৬৫শ জন্মবার্ষিকী উৎসবের আয়োজন হইয়াছিল। এই উৎসবের উদ্যোগ লইয়াছিলেন নতুন গঠিত অনুষ্ঠান জনসংস্কৃতি মঞ্চ।
আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস জীবনের শেষ ভাগে একটি সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের সহিত জড়িত হইয়াছিলেন। সেই অনুষ্ঠানের কোন কোন সংগঠনকারী জনসংস্কৃতি মঞ্চে জড়ো হইয়াছেন। ইলিয়াসের উপন্যাস বিশেষ করিয়া ‘খোয়াবনামা’ ও ‘চিলেকোঠার সেপাই’-লইয়া ঐদিন আলোচনা যথেষ্ট বরফ হইয়া উঠিয়াছিল। কথা উঠিয়াছিল ইলিয়াস কোন শ্রেণীর লেখক। তাঁহার উপন্যাসের পরিণতি একমুখী নহে, বহুমুখী। এই দাবির উপর দাঁড়াইয়া কয়েকজন আলোচক-বলিলেন ইলিয়াস উত্তরাধুনিক ঔপন্যাসিক।
সেই সভায় আলোচকের ভূমিকায় আমাকেও দাঁড়াইতে হইয়াছিল। অনেক কিছু বলিতে হইয়াছিল। আমার কথা শেষ হইবার পর সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আমার সমালোচনা করিয়া কিছু মন্তôব্য করিয়াছিলেন। সভার সৌজন্য বজায় রাখিতে হইলে আমার চুপ করিয়া থাকাই সমীচীন ছিল। এতদিনে হয়তো আর কাহারও সেই সব কথা মনে নাই। কিন্তু বিষয় গুরম্নতর। আমি ছাড়িয়া দিলেও বিষয় আমাকে ছাড়িতেছে না। তাই এখন যাহা মনে পড়িতেছে তাহা সংড়্গেপে লিখিতেছি।
আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াসের ছোট ভাই অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। তিনি ইলিয়াস রচনাবলী তৃতীয় খণ্ডের ভূমিকায় জানাইয়াছেন, আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস বাংলাদেশ লেখক শিবির নামক বামপন্থী প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় সদস্য হন ১৯৮৪ সালে। তিনি আরো বলিয়াছেন,‘এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কখনোই শিথিল হয়নি। খালিকুজ্জামান ইলিয়াস লড়্গ্য করিয়াছেন আখতারম্নজ্জামান প্রায় সব প্রবন্ধই ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এই দুই দশকের লেখা। ‘এদের বেশ কয়েকটি উলেস্নখযোগ্য প্রবন্ধ মার্কসবাদী-লেলিনবাদী পত্রিকা সংস্কৃতিতেই প্রথম ছাপা হয়।
এই সংস্কৃতি পত্রিকারই ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয় তাঁহার সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’। এই নামেই তারপর প্রকাশিত হয় তাঁহার প্রবন্ধগ্রন্থ। সেই গ্রন্থে তো বটেই, ইলিয়াস রচনাবলীর তৃতীয় খণ্ডেও প্রবন্ধটি সংকলিত হইয়াছে। আমার আলোচনা এই প্রবন্ধের চৌহদ্দিতেই সীমিত রাখিলাম।
এই প্রবন্ধে তিনি তিন সংজ্ঞা ধরিয়া সংস্কৃতির ভাগজোক করিয়াছেন। প্রথমে অপসংস্কৃতি, দ্বিতীয়ে বাঙালি সংস্কৃতি সবশেষে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীর সংস্কৃতি। এই শেষভাগকে আবার তিনি ‘বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সংস্কৃতি’ নামেও অভিহিত করিয়াছেন। আমরা ক্রমে ক্রমে এই বিভাজনের পিছু লইব। পূর্বাভাস হিসাবে বলিয়া রাখিতেছি, এই নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধে তিনি কোথাও কৃষক সংস্কৃতি কথাটা ব্যবহার করেন নাই। একই কারণে হয়তো জাতীয় সংস্কৃতি বলিয়া কোন সংজ্ঞাও তিনি আমলে নিলেন না। ইহা আমাদের উদ্বেগের বিষয় হইয়া থাকিল।
ইলিয়াসের বিচারে সংস্কৃতির প্রথম প্রতিপড়্গও এক ধরনের সংস্কৃতি বটে। এই শত্রম্নবরের নাম ‘অপসংস্কৃতি’। ১৯৮০ দশকে এই সংজ্ঞা বুদ্ধিজীবীসমাজে প্রবল হইয়াছিল। হালে ইহার ব্যবহার বড় কানে আসে না। ঘটনা কি তাহা হইলে বদল হইয়াছে? অপসংস্কৃতি মানে-ইলিয়াস বলিতেছেন-মধ্যবিত্তের একাংশের সংস্কৃতি। কোন একাংশের? যে একাংশ উচ্চবিত্ত হইতে চাহে, অথচ এখনও হইয়া সারে নাই। ইলিয়াস লিখিয়াছেন, ‘মধ্যবিত্তসমাজের একটি বড় অংশ নিজেদের সামাজিক ও শ্রেণীগত অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নয়।’ বুর্জোয়া দেশগুলোর উচ্চবিত্তের জীবনযাপনকে আদর্শ ধরে নিয়ে ‘এই মধ্যবিত্তের একাংশ,’ ‘সেটাকেই অন্ধভাবে অনুসরণ করতে শুরম্ন করে। কিন্তু বুর্জোয়া মূল্যবোধ ও মানসিকতা তার ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ এই অস্থিরতার জমিতেই ইলিয়াস অপসংস্কৃতির শিকড় সন্ধান করেছেন।
অপসংস্কৃতি মানে পাশ্চাত্য বুর্জোয়া সংস্কৃতি নয়, সংস্কৃতির এক জাতীয় বিকার বিশেষ। ‘উদাহরণ দিয়াছেন ইলিয়াস। উপরের ধাপে উঠিবার জন্য মধ্যবিত্ত বা নিম্নবৃত্ত যাহা পায় তাহাই আঁকড়াইয়া ধরে; ‘ঐ ধাপে পৌঁছবার জন্য মাজারে বা পিরের কাছে ধরনা দিতেও তার বাধে না।’ অথচ ইলিয়াস ধরিয়া লইয়াছেন ‘পাশ্চাত্য বুর্জোয়া মানসিকতা’ এই ধরনের ধর্মান্ধতাকে অস্বীকার করে। আমাদের সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করিতে হইবে ইহা কতখানি সত্য? প্রথম কথা, মাজারে বা পিরের কাছে ধরনা দেওয়া কি নিছক ধর্মান্ধতা? ইলিয়াস নিশ্চয়ই জানিতেন যাহাদিগকে সচরাচর ধর্মান্ধ বা মৌলবাদী বলা হইয়া থাকে আরবদেশের সেই মতবাদীরা মাজার বা পিরের কাছে যাওয়াকে ধর্মবিরোধী মনে করেন। ব্রিটিশ প্রচারের দৌলতে একদা ইঁহারা ওয়াহাবী নামে পরিচিত লাভ করিয়াছিলেন। দুই নম্বরে, পাশ্চাত্য মানসিকতায় ধমান্ধতা নাই- ইহা তিনি কোথায় জানিলেন? পাশ্চাত্যে পুঁজিবাদী অভ্যুত্থানের আদর্শ খোদ ইংল্যান্ডের ১৭শ শতাব্দীর বিপস্নবকে এই সেইদনিও কি ‘পিউরিটান বিপস্নব’ বলা হইত না? ‘পিউরিটান’ মানে কি? ধর্মান্ধ নয় কি? খ্রিস্টধর্মের প্রতিবাদী শাখার সহিত পুঁজিতন্ত্রের সম্পর্ক লইয়া কত গবেষণাই না হইয়াছে। তবু এই কথা আমরা অস্বীকার করিতেছি না- ফরাসি বিপস্নবে ধর্মসভা বা চার্চের আধিপত্য খর্ব হইয়াছিল।
আখতরাউজ্জামান ইলিয়াসের অনুসন্ধানী চোখ তাই শেষ পর্যন্তô সত্য খুঁজিয়া লইয়াছে। তিনি বলিয়াছেন মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ ও জীবনযাপন এক নহে। এই বিরোধ হইতেই জন্মাইয়াছে ‘অপসংস্কৃতি’ নামে কথিত ‘দানব’টি। ইলিয়াসের সংজ্ঞা অনুসারে, ‘সামন্তô ও গ্রাম্য মূল্যবোধের সঙ্গে বুর্জোয়া জীবনযাপনের এই উৎকট মাখামাখির ফলে যে সংস্কৃতি গজিয়ে ওঠে তারও অনেকের চোখে উটকো ঠেকে এবং তখন তাতে অপসংস্কৃতি বলে গান দেওয়া হয়।’
২·
ইহার বিপরীতে কোন গীত আমরা গাহিব তাহা হইলে? কোন শিল্পচর্চা করিলে ইহার হাত হইতে নিষ্কৃতি মিলিবে? যাহাকে বলা হয় ’রম্নচিশীল বাঙালি শিল্পচর্চা’ ৈযাহা ইলিয়াসের মতে, ‘মধ্যবিত্তের কর্তৃত্বে, মধ্যবিত্তের দ্বারা এবং মধ্যবিত্তের জন্য রচিত” ৈতাহাও মধ্যবিত্তকে উদ্দীপ্ত করিতে অড়্গম। এই সরিষার মধ্যেই যে ভূত!
বিদেশি কিংবা অপরিচিত উচ্চবিত্তের জীবনযাপনের হাস্যকর অনুকরণকে যদি ’অপসংস্কৃতি’ বলি তবে তাহা চিনিয়া ফেলা সহজ। কিন্তু ইহা অপসংস্কৃতি হইয়াছে যে, দোষে তাহা আর কিছু নহে, মধ্যবিত্ত বাঙালি সংস্কৃতির সহিত বিচ্ছিন্নতা মাত্র। এই বিচারের মাপকাঠি ফেলিয়া মাপিলে দেখা যাইবে মধ্যবিত্ত বাঙালি সংস্কৃতিও এক জাতীয় বড় অপসংস্কৃতি বৈ নহে। আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস বলিয়াছেন ‘বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবিত্ত বাঙালির’ সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার কারণেই আজ মধ্যবিত্ত বাঙালি সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চা হইয়া পড়িয়াছে ‘একঘেঁয়ে ও প্রাণহীন নিষ্পন্দ অভ্যাস” বিশেষ। তথাকথিত ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ ৈযাহা মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির একাংশ মাত্র ৈযে বড় অপসংস্কৃতি, এই সত্য আখতারম্নজ্জামানের আবিষ্কার। এই কৃতিত্ব তাঁহাকে অবশ্যই দিতে হইবে।
আমার এই ব্যাখায় পাঠিকা দোষ ধরিতেই পারেন। তাই সাড়্গ্য হাজির করিব। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মানেই তো জাতি। জনগণ হইতে বিচ্ছিন্নতা মানে জাতি হইতে বিচ্ছিন্নতা। মধ্যবিত্ত সংস্কৃতি যদি জাতি হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়ে তবে তাহা আপনা আপনিই বিদেশি সংস্কৃতির নাগপাশে চলিয়া যাইবে। ইহা বালিকায়ও জানে। ইলিয়াস তাই লিখিলেন ‘যাকে ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ বলে ঢাক পেটানো হয় তা যদি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কর্মপ্রবাহ ও জীবন-যাপন থেকে প্রেরণা নিতে না পারে তো তাও অপসংস্কৃতির মতো উটকো ও ভিত্তিহীন হতে বাধ্য। তার বাইরের চেহারা যতই রম্নচিশীল হোক, তাতে ঘষামাজাভাব যতই থাকুক। তা রক্তহীন হতে বাধ্য।” আরও খানিক দূরে এই দুর্দশায় ছায়া পড়িয়াছে। তথাকথিত বামপন্থী রাজনীতির সংকট কোথা হইতে আসিয়াছে তাহাও তিনি নির্ণয় করিয়াছেন।
বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীদের সম্বন্ধে ইলিয়াস বলিয়াছেন মধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক সংকট হইতে ইহারাও মুক্ত নহেন। তাহার কথায়ঃ ‘যে জনসমষ্টির মুক্তির জন্য এঁরা সংগ্রামে নামেন তাঁদের জীবন-যাপন ও সংস্কৃতি এঁদের নাগালের বাইরে। যে-সংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা সাহিত্য-শিল্পের দেহকে রক্তহীন ও চেতনাকে নিস্পন্দ করে তোলে, রাজনীতিকেও তা নিস্তেôজ ও তাৎপর্যহীন করতে বাধ্য।’
আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস দুঃখ করিয়া বলিতেছেন, ১৯৬৯ সালের ব্যাপক গণআন্দোলনকেও বামপন্থি কর্মীগণ সমাজ-পরিবর্তনের লড়্গ্যে লইয়া যাইতে পারেন নাই। অথচ ইলিয়াস জানেন ৈএই আন্দোলনের সূত্রপাত ও বিকাশ ঘটে তাঁহাদের হাতেই। আজিকার রাজনৈতিক সংকটের গোড়াও এই জায়গায়। শ্রমজীবীগণ বামপন্থীদের সঙ্গে গাটছড়া বাঁধিতেছেন না। অথচ তাহারা মধ্যবিত্ত বুর্জোয়াদের উপরও শ্রদ্ধা হারাইয়াছেন। ইহার মূল কারণ বামপন্থী মধ্যবিত্তের বিচ্ছিন্নতা। ইলিয়াস এই দুঃখের নাম কোমল রাখিয়াছেনঃ ‘সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা’। তিনি সাফ জবাব দিয়াছেনঃ ‘এই বিচ্ছিন্নতা দূর করতে না পারলে শ্রমজীবী মানুষের আস্থা ও আত্মীয়তা লাভ করা অসম্ভব।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বামপন্থি যুবকেরাও মনে করেন শ্রমজীবী জনগণের পরিচয় প্রধানত ‘গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষ’। তাহাদের চোখে গরীব হওয়া মানে কেবল খাওয়া পরা থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়, সংস্কৃতিশূণ্য জীবন-যাপন করাও বটে। ব্যাপারটা কি সত্য?ঃ
৩·
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংস্কৃতি বিষয়ক প্রস্তôাব অনুসারে সংস্কৃতিচর্চা সীমাবদ্ধ কেবল মধ্যবিত্তের মধ্যে। ইলিয়াস মনে করেন এই প্রস্তôাব সমর্থনযোগ্য নহে। কারণ তাহা অসত্য। তাহা হইলে এই প্রস্তôাব আদপেই উঠিল কেন? উঠিল, কারণ গরিব মানুষেরও একটা সংস্কৃতির সংকট আছে। ইলিয়াসের মতে একটি বিশেষ পর্যায়ে আসিয়া গবীর মানুষের সংস্কৃতির বিবর্তন প্রায় বন্ধ হইবার উপক্রম হইয়াছে। তাঁহার ভাষার রূপ না বদলাইয়া বলিতেছিঃ ‘দারিদ্র্য যেমন শতাব্দীর পর শতাব্দী তাঁদের একই মানের জীবনযাপন করতে বাধ্য করে, সংস্কৃতিচর্চাও তাঁদের একটি পর্যায়ে থেকে নতুন ধাপে উঠতে হোঁচট খাচ্ছে।’
তাহা হইলে এই সংকট হইতে সে উঠিবে কি করিয়া? এই জায়গায় আসিয়া আমরা আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াসের সহিত একমত হইতে পারিতেছি না। তিনি জানাইতেছেন, নিরড়্গর শ্রমজীবীর হাতে সাহিত্য সৃষ্টি হয় না, হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীর সংস্কৃতি কখনো উঁচুদরের শিল্পে পরিণত হয় না। ‘উঁচুদরের শিল্প’ কথাটা আমার নহে, ইলিয়াসের। তিনি দাবি করিতেছেন নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীর সংস্কৃতি উঁচুদরের শিল্প হইতে পারে শুদ্ধ একটি শর্তে। তাহাকে লেখক ও শিল্পীর হাতে পড়িতে হইবে। ইলিয়াস বানান করিয়া লেখেন নাই। তবে পড়িতে দোষ নাই, তিনি বলিয়াছেন মধ্যবিত্ত লেখক ও শিল্পীর কথাই। তাঁহার প্রস্তôাব অনুসারে আধুনিককালে শিল্প ঠিক প্রাকৃতিক নিয়মে গড়িয়া উঠে না, শিল্পীর সচেতন ভাবনা ও তৎপরতার ফল আধুনিক শিল্প-সাহিত্য। তাঁহার ধারণা, নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীর সংস্কৃতি শিল্পীর হাতে নতুন ব্যঞ্জনা পায়, এই সংস্কৃতিই শিল্পে উত্তীর্ণ হইয়া সর্বজনীনতা লাভ করে। শ্রমজীবীর ব্যবহৃত গান ও ছড়া, প্রবাদ বা প্রবচনকে লেখক উঁচুস্তôরের চিন্তôা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করিয়া তাহাকে নতুন মাত্রা দেন। ইলিয়াস নিজ যুক্তির পড়্গে দৃষ্টান্তô দিয়াছেন ভারতীয় সংগীতের রাগ-রাগিনীর, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাকাব্যের আর বিটোফেন ও বাগনার প্রভৃতি এয়ুরোপীয় সংগীত শিল্পীর।
আমাদের যুগের বামপন্থী মধ্যবিত্ত শিল্পী ও সাহিত্য লেখকদের সংকট এই জায়গায়। তাঁহার মতে এই যুগের সাহিত্যে, বিশেষ বাংলাদেশে, শ্রমজীবীর জীবন দেখা যায় না। তিনি দুঃখে লিখিতেছেন, আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠের সংস্কৃতি আমাদের কাছে আজ কেবল প্রদর্শনীর বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহাতে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীর সংস্কৃতি প্রাণশক্তিতে ড়্গীয়মাণ হইয়া যাইতেছে আর তাহার বিকাশ থামিয়া থাকিতেছে। শুদ্ধ তাহাই নহে মধ্যবিত্তের সংস্কৃতিচর্চাও পরিণত হইতেছে উদ্ভট ও নিষ্প্রাণ ব্যায়ামে। কারণ তাহা দেশের সংস্কৃতিচর্চার মূল প্রবাহ হইতে বিচ্ছিন্ন থাকে।
বাংলাদেশের লেখকদের শিড়্গা দিবার উদ্দেশ্যে আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস নাইজেরিয়া দেশের ইবো জাতির আধুনিক ইংরেজি ভাষার লেখক চিনুয়া আচিবির উদাহরণ তুলিয়া ধরিয়াছেন। ইলিয়াসের নজরে পড়িয়াছে চিনুয়া আচিবির উপন্যাসে নাইজেরিয়ার গ্রাম্যজীবনের গভীর ভেতরে ঢোকার সফল চেষ্টা। তিনি নাইজেরিয়ার পাশ্চাত্য শিড়্গা বিবর্জিত গ্রাম্য মানুষের সর্বাঙ্গীন ও জীবন্তô রূপায়ন করিয়াছেন। তাঁহার পথ ধরিবার পরামর্শই দিয়াছেন আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস।
তাহা কি করিয়া সম্ভব? আমাদের নতুন লেখকগণ যদি আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াসের কথা মনোযোগ দিয়া শোনেন, আমার ধারণা তাহাদের উপকার হইবে। তারপরও একটা কথা থাকিয়া যাইবে। ইলিয়াস বলিতেছেন নিষ্ঠাবান শিল্পী ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীগণ নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীর সংস্কৃতিতে ঘনিষ্ঠভাবে চিনিলে ভালো করিবেন। কিন্তু চিনিবেন কী উপায়ে? উপায় ৈগভীর মর্যাদাবোধ। গভীর মর্যাদাবোধই তাহাকে উদ্বুদ্ধ করিবে। কিন্তু নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীর সঙ্গে কেবল মেলামেলা করিলেই এই মর্যাদাবোধ জন্মাইবে না। কারণ তাহাতে পরিচয় সম্পূর্ণ হয় না। কেবল ভালোবাসাতেই হইবে না এই পরিচয়। ইলিয়াসের এই কথায় আমার পূর্ণ সম্মতি আছে। তিনি পরিষ্কার বলিয়াছেন শ্রমজীবীর প্রতি মর্যাদাবোধ না থাকিলে বামপন্থী আন্দোলন শেষ পর্যন্তô বামপন্থী থাকিবে না। এই কথার সত্যতা অস্বীকার করিব কি করিয়া?
আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াসের আরো একটি ভারি কথা না উলেস্নখ করিলে আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা হইতে পারে। তিনি বলিয়াছেন শিল্পসাহিত্যে প্রমাণ করার কোন বিষয় থাকে না, ’অনুসন্ধান ও সিদ্ধান্তô সেখানে পাশাপাশি চলে; পরস্পরের সঙ্গে তারা সংলগ্ন, একটি হইতে আরেকটিকে সেখানে ছিঁড়িয়া দেখানো চলে না। ইহা সত্য কথা।
পরিশেষে, আমরা সবিনয়ে দুইটি সমস্যার কথা তুলিব। আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াস যথার্থই বলিয়াছেন নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীর সংস্কৃতিচর্চার উৎস তাঁহার জীবিকা। এই কথাটুকু সত্য। কিন্তু পরড়্গণেই তিনি যখন বলিলেন মধ্যবিত্ত সমাজে শিল্পীর প্রধান উদ্দেশ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি। তখন মনে হয় তিনি সৌন্দর্য সৃষ্টির কোন ভাগ নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীকে দিতে রাজি হইতেছেন না। তিনি পরিষ্কার চলিয়াছেন যদি সৌন্দর্য ও প্রয়োজনে বিরোধ দেখা দেয় প্রয়োজনই জিতিবে। সৌন্দর্য হটিয়া যাইবে। এই বক্তব্য অবিশ্বাস্য হইলেও তিনি লিখিয়াছেন। উদ্ধার করিতেছি ; এমনকি অতিউৎসাহী বামপন্থি কোনো শিল্পী হয়তো কষ্ট কাজের মধ্যে শ্রেণী সংগ্রামের ছবি আঁকলেন। কিন্তু এর ফলে নানা ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।’ কী সেই অসুবিধা? ইলিয়াস বলেন নৌকার গলুইতে এই ছবি খোদাইয়ের ফলে গলুই অতিরিক্ত ভারী বা পাতলা হইয়া যাইতে পারে যাহার ফলে নৌকার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুই নম্বরে মাঝির জীবিকার সহিত সম্পর্ক না থাকায় দুইদিন পর এহেন কারম্নকাজের ব্যবহার উঠিয়া যাইবে। কারম্নকাজের মান ও নৈপুণ্য কোন কাজে লাগিবে না। এই ধারণাকেই বলা হয় হাতিয়ারবাদী ধারণা।
ইহাতেই আমি বুঝিলাম চৌদ্দ পাতার প্রবন্ধে কেন তিনি কোথাও ‘কৃষক সংস্কৃতি’ বা ‘জাতীয় সংস্কৃতি’ কথা দুইটি ব্যবহার করেন নাই। আখতারম্নজ্জামান ইলিয়াসের সংস্কৃতি চিন্তôা বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যবিত্ত অপদেবতা আক্রান্তô। সেই সংক্রমণের কাহিনী লিখিতে হইলে সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে দুই কথা বলা দরকার। তাহা ভবিষ্যতে বলিব। আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গিনি বিসাউ ও কেপ ভের্দে। তাহার স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা আমিলকার কাব্রাল (অসরষপধৎ ঈধনৎধষ) এই বিষয়ে মূল্যবান কথা বলিয়াছেন।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ মার্চ ২০০৮
Click This Link
২১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:৫৫
আলম ভাই বলেছেন: চলিমুল্লাহ খান ক্যাঠা? নতুন পাঠা?
বাইদাওয়ে আমিরুজ্জামান, তুমার বৌয়েও কি বল্গায় নাকি?
২২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:২৭
সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেছেন: বাইদাওয়ে আলম, তুই ক্যাঠা? নতুন পাঠা?
২৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:১৩
হাসান মইখল বলেছেন: "তিনি পরিষ্কার চলিয়াছেন যদি সৌন্দর্য ও প্রয়োজনে বিরোধ দেখা দেয় প্রয়োজনই জিতিবে। সৌন্দর্য হটিয়া যাইবে।"
এইটা ধ্রুব সত্য।
"এই বক্তব্য অবিশ্বাস্য হইলেও তিনি লিখিয়াছেন।"-সলিমুল্লাহ খানের এই বক্তব্য অবিশ্বাস্য মনে হইলো কেন বোধগম্য হইলো না।
তবে তাঁর অনেক বক্তব্যে'র সাথে একমত, মূলবক্তব্যের সাথে একমত না হলেও।
ফারুক ভাই, খান সাহেবের লিখিত বক্ত্যবের কোথায় কিন্তু পেলাম উনি বলেছেন"আমি ইলিয়াস পড়তে পারিনা"।
১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৫
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: উনি একাধিক সভায় দাঁড়িয়ে এই মত ব্যক্ত করেছেন ইলিয়াসের উপন্যাস বিষয়ে_গল্প বিষয়ে তাঁর মত অন্য। সভায় জানানো মতকে আইনের ভাষায় আনুষ্ঠানিক বলা হয়ে থাকে, সেকারণেই ঐ প্রসঙ্গ টানতে পারলাম। এখানে তো উনি কথাসাহিত্যিক ইলিয়াসকে বিবেচনায় নেননি, নিয়েছেন সংষ্কৃতিতাত্ত্বিক হিসেবে।
২৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ২:৩৮
মানস চৌধুরী বলেছেন: ফারুক পরিশেষে ইমেইলযোগে মানিকের পাঠানো লিংকে জনাব সলিমুল্লাহ খানের লেখাটি পড়লাম। শ্রদ্ধা-অশ্রদ্ধা বিষয়ে আপনার টীকাটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পাঠ করি, সেটা এই কারণেও যে আপনার স্বরটা নিয়েও আমার স্পষ্ট নাখোশী আছে। খান করে থাকলে তা নিয়েও ভিন্ন অবস্থান নয় আমার। এক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই ভাল জায়গায় আছেন যেহেতু আপনি তাঁর স্বর অনুষ্ঠানেও শুনেছেন।
কিন্তু, সলিমুল্লাহ খানের অনেক লেখার থেকে একদম উল্টো, তাঁর এই লেখাটা আমার মনোগ্রাহী এবং স্পষ্ট মনে হয়েছে। অবশ্যই আলোচ্য অনুষ্ঠানে পারস্পরিক ভূমিকার বাইরে এই লেখা কিংবা আপনার প্রতিক্রিয়া পাঠ করা দুষ্কর। বরং আগাপাশতলা ওদিনের উদ্ধৃতি না দিয়ে খান হয়তো সরাসরি ইলিয়াসকে (প্রবন্ধটিকে) পাঠেই নিয়োজিত হতে পারতেন।
আসলে তো মূল প্রসঙ্গ এখানে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর "সংস্কৃতির ভাঙা সেতু" বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রেণীবাস্তবতা ও সাংস্কৃতিক রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কীভাবে কিংবা আদৌ কিনা। সলিমুল্লাহ খান এই প্রসঙ্গে ইলিয়াসের একটা গুরুত্বপূর্ণ পাঠ তৈরি করেছেন: সংস্কৃতি প্রসঙ্গে ইলিয়াসের মাথায় মধ্যবিত্তের মানসংস্কৃতি কাজ করেছে। সেটা আপনারা না মনে করলে তা নিয়েই আলাপ হতে পারে বলে আমি মনে করি। কিংবা আপনি/আপনারা যদি মনে করেন ইলিয়াসের এই প্রবন্ধে ব্যক্ত অবস্থান এবং এর পরের উপন্যাস/সাহিত্যকর্মে উদ্ভাসিত অবস্থান ভিন্ন এবং শেষোক্তটি স্বগুণে পূর্বোক্তের ক্রিটিক তাহলে সেটাই হওয়া দরকার আলাপের মূল জায়গা।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিশ্লেষণের আকালের মধ্যে প্রায়শই ইলিয়াস কিংবা ছফা উচ্চকিতভাবে পঠিত হন। একজন পাঠক হিসেবে "সংস্কৃতির ভাঙা সেতু" পাঠে আমিও মধ্যবিত্ত মানসংস্কৃতির পূর্বানুমান পাই।
একান্ত
মানস
২৫| ২০ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:০১
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: সুমন রহমানের মন্তব্য
এই মন্তব্যটি সুমন রহমান ব্যক্তিগতভাবে আমাকে মেইল হিসাবে পাঠান, কেননা আমি বন্ধুদের অনেককেই সামহোয়ারের লিংক পাঠানোর সময় এটাচড ফাইলও পাঠিয়েছিলাম। সুমন রহমানের অনুমতির বদৌলতে এখানে তা পেশ করা হলো। আশা করি সুমন ও মানসের মন্তব্যে সাড়া দিতে পারব।
Priyo Faruk,
Apnar egiye deya link follow kore Salimullah Khan er
boktobyer byapare apnar proticrea porlam. Tarpor
Nuruzzaman Manik er egiye deya link dhore Salimullah
Khane er lekhati porlam. Apnader dujon-ke onek
dhonnobad.
Proshongoto boli, Akhtaruzzaman Elias er probondho-ke
dhore alochonai ami kono somosya dekhi na. Aar
segulo-ke apni "fol-er khosha" bolleo kono kono foler
khosha je bhitorer shasher cheye kom dorkari na (jemon
guava) ta apni bilokkhon janen. Elias er "Songskritir
Bhanga Setu"-te tini muloto Gramscian framework er
upor daranor chesta korechen jeta tar somoyer egiye
thaka intellectual-ra sara duniyatei korechilen. Elias
er songskriti-bibhajone "krishok songskriti" nei bole
Salim khan je jaigati dekhiye diyechen seti amar
kaache jothesto dorkari legeche kintu.
Songskritir alochonai ami category hisebe "sreni"
jinishtake problematize korte chai. Shudhu srenir
category diye songskriti-ke bojha sombhob noy bole
amar dharona. Somaje bidyoman patron-client somporko
theke jokhon nana dhoroner vertical cleavage toiri
hote thake taake traditional srenir jaigai dariye
byakhya kora sombhob ki? Khan-kothito "Krishok"
songskriti sei dhoroner problematization er ekta
sombhabyo jaiga bole amar dharona. Sekhane bhumir
malik ebong borga-chashi ebong kheter kamla milei
hoyto krishok-songskriti toiri kore. Othocho
(traditional) srenir bichare tader alada orientation.
Er baire ache gender, race emonki sexual orientation
soho nana dhoroner bibechona. Se brittanto apni janen.
Sobaike dhonnobad.
২৬| ২০ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০০
পুতুল বলেছেন: লগ ইন করেছিলাম, কিছু লিখব বলে। বিশেষ করে খান সাহেবের ইলিয়াস ব্যাবচ্ছেদের বিপরীতে।
আলোচকবৃন্দের কঠিন বর্ণবিন্যাস আর কঠোর আলোকপাতে সে আশা ত্যাগ করলাম।
অনেকেই অনেক বস্তুনিষ্ঠভাবে, বাঙলা সংস্কৃতিতে মধ্যবিত্তের প্রভাবকে, মধ্যবিত্তের ভাষায়, মধ্যবিত্তের আঙ্গিনায়, মধ্যবিত্তের জন্য সীমাবদ্দ রেখেছেন।
মনে হয় সংস্কৃতিচর্চা এমন দুরহ দুর্ভোদ্য ভাষায় করতে হয় বলেই, তা মধ্যবিত্তের ড্রইংরুমের দেয়ালচিত্র হয়ে থাকবে। যেখানে কৃষক বা প্রান্তিকের ধুলোমলিন পায়ের পদচিহ্ন প্রতিরোদ্ধ।
ইলিয়াসের "দুধে ভাতে উৎপাত" পড়লাম দিন কয়েক আগে। "চিলে কোঠার সেপাই" পড়েছিলাম এত ছোটবেলায় যে, সব কথা মনে নেই।
তবে একটি কথা তার লেখা থেকে বুঝতে পেরেছি। " তিনি সব সময় প্রান্তিকের বা কৃষকের কথা বলতে চেয়েছেন"। তাদের জীবনের সাথে মিশে, তাদের জীবন থেকে নিয়ে, তা আমাদের কাছে (পাঠক) তুলে ধরতে চেয়েছেন।
আর একারণেই তার বই সব দোকানে পাওয়া যায়না!
জনপ্রিয় না হয়ে কেউ কেই জনগনের কথা না লিখলে বাংলা সাহিত্যের দরিদ্রতা ঘোচানো কঠিন হত।
২৭| ২০ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৩
আলফ্রেড খোকন বলেছেন: আপন মাহমুদের কন্ঠে আমার কণ্ঠ মিলিয়ে এক লাইন: সলিম ভাই যে হেতু প্লেটো-কে প্লাতন শেখাতে শুরু করেছেন, তাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে কোথা নিয়া যান, তা দেখার একটা পিরীতি আমার মধ্যে ভর করতাছে। মানুষের বয়স অইতাছে রে!!!!
২৮| ২০ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: স্বাগতম আলফ্রেদো
২৯| ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৯
জাহিদ সোহাগ বলেছেন: খান (ফরহাদ মজহারও) সাহেবের জিলিপি প্যাচের তত্ত্ব নিয়া বিরক্তকূলের জবাবে খানেক উষ্মা প্রকাশ বা উহা মৌলবাদ/দ্বীনি-কম্যুনিস্টের কম্ম বলে এড়িয়ে যেতেই অভ্যস্ত দেখি ভদ্রবুদ্ধিবাদীদের কিন্তু খান সাহেবের নির্ঘণ্ট সমান তাদের.....দেখি না।
উক্ত পুস্তক নিয়া আমার ভাষ্য মানসের সমগোত্রীয়।
৩০| ৩০ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
বিগব্যাং বলেছেন: ফারুক ভাই, খান সাহেবের মতো খালি ঠোঙ্গাদের ফুটপাত থেকে এনে গাছে তুলেছেন আপ্নারাই...আজ এগুলোর পাছা ফুলে পাউরুটি হইছে...
আল্লাপাকের অশেষ রহমত যে ঢাকা শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্তগুলোর একটা ক্ষুদ্র বিভ্রান্ত অংশের বাইরে সারাদেশের ব্যাপক ম্যাঙ্গোপিপলের মধ্যে এসব চ্যাটেরবালআব্দুল্লার কোনো প্রভাব নেই...
৩১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:০৩
বিধান রিবেরু* বলেছেন: সলিমুল্লাহ খানের পড়াশোনা যতটা তা দিয়েও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের একটি প্রবন্ধ বিচার করতে তাঁর উপন্যাসসমূহ পড়তে হবে- অর্থাৎ, একজনের একটি ক্ষুদ্র সৃষ্টিকে বিচার করতে হলে তাঁর অন্যান্য সৃষ্টি সম্পর্কে জ্ঞাত থাকতে হবে- এটা ফরাসি অতর তত্ত্বের দর্শনভঙ্গি- যা আমি ঠিক মনে করি না। কারণ ব্যক্তির যদি একটি বিষয়ের ওপর ব্যাপক পড়ালেখা থাকে যেমন- সংস্কৃতির ওপর তাহলে সে অন্য একটি সংস্কৃতির উপর লেখা প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করতেই পারেন। সেজন্য প্রবন্ধ লেখকের অন্যান্য লেখা পড়া বাধ্যতামূলক বলে আমি মনে করি না।
দ্বিতীয়ত, ইলিয়াস তাঁর প্রবন্ধে বলছেন- সমাজব্যবস্থা ভাঙতে চাওয়ার বামপন্থীদের একটি যুক্তি হলো: সমাজের অধিকাংশ মানুষ সংস্কৃতিশূন্য জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ইলিয়াস বলছেন, শ্রমজীবী অর্থাৎ বৃহৎ এই অংশের সংস্কৃতি আছে তবে সেটার বিকাশ ঘটছে না। বক্তব্যটা কি স্ববিরোধী হয়ে গেল না? সলিমুল্লাহ খান এজন্যই এখানে সংশয় প্রকাশ করেছেন। আর খান যে বলছেন ইউরোপে পিউরিটান মুভমেন্টের কথা। সেটাও তো ঠিক। পশ্চিমের বুর্জোয়ারা ধর্মান্ধ নয়, এ ব্যাপারে ইলিয়াস এতোটা নিশ্চিত হলেন কোত্থেকে??
আর শ্রমজীবীর সংস্কৃতি আর জাতীয় সস্কৃতি কী করে এক হয়?? এই পোস্টের লেখকের কাছে প্রশ্ন থেকেই যায়। একটা জিনিস দিয়ে আরেকটা জিনিস কি করে বোঝাবেন ইলিয়াস?
তারপরও পোস্ট লেখককে ধন্যবাদ। এরকম বিতর্কের দরকার রয়েছে। নয় তো সংস্কৃতির গতি প্রকৃতি আমাদের কাছে পরিষ্কার হবে না।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:২৫
সুতরাং বলেছেন: আপনার প্রতিক্রিয়াটি পড়লাম। এবার মূল লেখাটি পড়তে হবে। দেখি, খান সাহেব কী লিখেছেন!