নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দশদিক

হাঁটা পথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে হে সভ্যতা। আমরা সাত ভাই চম্পা মাতৃকাচিহ্ন কপালে দঁড়িয়েছি এসে _এই বিপাকে, পরিণামে। আমরা কথা বলি আর আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়।

ফারুক ওয়াসিফ

ফারুক ওয়াসিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতে মাওবাদী বিদ্রোহ নিয়ে অরূন্ধতী রায়: অরণ্যে, কমরেডদের সঙ্গে

২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১২:৩৫



দরজার নিচ দিয়ে আসা খামে মোড়া টাইপ করা ছোট্ট চিঠিটি ভারতের গুরুতর নিরাপত্তা হুমকির সঙ্গে আমার মোলাকাত নিশ্চিত করেছে। মাসের পর মাস আমি তাদের জবাবের জন্য প্রতীক্ষা করছিলাম। আমাকে ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াদার মা দান্তেশ্বরী মন্দিরে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।



দান্তেওয়াদা এক অদ্ভুত শহর। যেন কোনো সীমান্ত শহরকে ভারতের একদম মধ্যস্থলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটিই হলো একটি যুদ্ধের উৎপত্তিস্থল, যেখানে সবকিছু উল্টে গেছে। এখানে পুলিশ সাদা পোশাক পড়ে আর বিদ্রোহীরা পরে ইউনিফর্ম। বন্দীরা এখানে মুক্ত আর জেল সুপার জেলবন্দী। ধর্ষিতারা এখানে পুলিশ হেফাজতে আর সরকারি মদদের খুনে বাহিনী সালভা জুদামের ধর্ষকরা বক্তৃতা দেয় বাজারে।

ইন্দ্রাবতী নদী পেরুলেই মাওবাদী নিয়ন্ত্রিত এলাকা। পুলিশ একে বলে ‘পাকিস্তান’। সেখানে গ্রামগুলি বিরান কিন্তু জঙ্গলে গিজগিজ করছে মানুষ। এই অরণ্যের জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ এক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। প্রকাশ্যে তারা এর অস্তিত্ব স্বীকার না করলেও এই যুদ্ধ নিয়ে সরকার গর্বিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (এই যুদ্ধের সিইও) পি চিদাম্বরম বলেছেন ‘অপরাশেন গ্রিন হান্ট’ বলে কিছু নেই, এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। অথচ বিরাট অঙ্কের টাকা ঢালা হচ্ছে এর পেছনে, জমায়েত করা হচ্ছে লাখ লাখ সেনা। এই যুদ্ধের রণাঙ্গন মধ্যভারতের অরণ্য হলেও, আমাদের সকলের জন্য এর পরিণতি গুরুতর।



বনের মধ্যে মুখোমুখি হওয়া দুই পক্ষের সামর্থ্য অতুলনীয়। একদিকে বিপুল আধাসামরিক বাহিনী, যাদের রয়েছে অর্থ, অস্ত্রক্ষমতা, মিডিয়া ও এক উদীয়মান পরাশক্তির দম্ভ। অন্যদিকে রয়েছে মামুলি অস্ত্রে সজ্জিত সাধারণ গ্রামবাসী, যাদের পেছনে রয়েছে দারুণ সংগঠিত, প্রচণ্ডভাবে উদ্দীপ্ত মাওবাদী গেরিলাদের লড়াকু শক্তি। রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের লড়াইয়ের ইতিহাস অনেক পুরনো: পঞ্চাশের দশকের তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ, ষাট দশকের শেষ থেকে সত্তর দশক অবধি পশ্চিম বঙ্গ, বিহার, অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলাম এবং আবার আশির দশক থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার ও মহারাষ্ট্রে তারা লড়েছে। এখন পর্যন্ত এই লড়াই চলছে। পরস্পরের কৌশল ও যুদ্ধপ্রণালী দুই পক্ষের কাছেই অনেক পরিচিত। প্রতিবারই মনে হয়েছে, মাওবাদীরা কেবল পরাজিতই নয় একেবারে নির্মূল হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিবারই আগের থেকে সংগঠিত, সঙ্কল্পবদ্ধ এবং প্রভাবশালী অবস্থায় আবার তাদের আবির্ভাব ঘটেছে। আজ আবার তাদের অভুত্থান ছড়িয়ে পড়ছে ভারতের খনিজ সমৃদ্ধ ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের বনাঞ্চলে। ভারতের লাখ লাখ আদিবাসীর এই মাতৃভূমি আজ কর্পোরেট জগতের স্বপ্নভূমিও বটে।



শহুরে সুবোধ ভদ্রলোকদের পক্ষে বিশ্বাস করা সহজ যে যারা নির্বাচনকে ভাওতাবাজি মনে করে, সংসদকে বলে শুওয়ের খোয়াড় এবং যারা খোলাখুলি ভারতীয় রাষ্ট্রকে উচ্ছেদ করতে চায়; সরকারের সঙ্গে লড়াই চলছে সেই মাওবাদীদের। তারা সহজেই ভুলে যায়, মাও-য়ের জšে§রও শত বছর আগে থেকেই মধ্যভারতের উপজাতীয় জনগণ প্রতিরোধ চালিয়ে আসছে। না লড়লে তারা মুছে যেত। হো, ওরাঁও, কোল, সাঁওতাল, মুন্ডা ও গন্ডরা বারেবারে ব্রিটিশ সরকার, জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। প্রতিবারই নৃশংসভাবে তাদের দমন করা হয়েছে, খুন হয়েছে হাজারে হাজারে, কিন্তু তারা বশ মানেনি। এমনকি স্বাধীনতার পরের প্রথম অভ্যুত্থানগুলোও ঘটিয়েছে তারাই। নকশালবাড়ী আন্দোলনকে ভারতের প্রথম মাওবাদী আন্দোলন বলা হয়। তখন থেকেই নকশালী রাজনীতি ও আদিবাসীদের প্রতিরোধ একাকার।



ভারতের সরকারগুলো সবসময় তাদের প্রান্তিক করে রেখেছে। ১৯৫০ সালে গৃহীত ভারতের নতুন সংবিধানে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বিধিগুলো বহাল রাখা হলে আদিবাসীদের জš§ভূমিগুলো রাষ্ট্রের হাতে চলে যায়। রাতারাতি রাষ্ট্র তাদের খেদিয়ে অল্প কিছু জায়গার মধ্যে জড়ো করে। তারা বঞ্চিত হয় বনের ফলফলাদি থেকে, তাদের জীবনযাত্রাকে বেআইনী করে দেওয়া হয়। তারা ভোটাধিকার পায়, কিন্তু হারায় তাদের জীবনধারণের উপায় আর সম্মান।



প্রতিবারই যখন বড় বাঁধ, সেচপ্রকল্প কিংবা খনি করার প্রয়োজনে বিপুলসংখ্যক মানুষকে সরাতে হয়েছে প্রতিবারই তখন ‘উপজাতীয়দের মূল ধারায় সামিল’ করা অথবা তাদের ‘উন্নয়নের সুফল’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কেবল বাঁধ বানাতেই ভারতে তিন কোটি মানুষকে উচ্ছেদ হয়ে যেতে হয়েছে। তারা হলো ভারতের প্রগতির বাস্তুহারা, আর তাদের বড় অংশই হলো উপজাতীয়। তাই যখনই সরকার আদিবাসীদের কল্যাণের কথা বলে, তখনই তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে।



অতিসম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম জানিয়েছেন, তিনি চান না উপজাতীয় সংস্কৃতি ‘জাদুঘরে থাকুক’। কিন্তু পেশাগত জীবনে কর্পোরেট আইনজীবী হিসেবে বেশ ক’টি খনি কোম্পানির হয়ে কাজ করার সময় আদিবাসীদের কল্যাণে তাঁর আগ্রহ ছিল বলে জানা জায় না। গত পাঁচ বছরে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের সরকার খনি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে শত শত বিলিয়ন ডলারের শত শত সমঝোতাপত্র সই করেছে। ইস্পাত ও লৌহ কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, অ্যালুমিনিয়াম পরিশোধনাগার, বাঁধ ও খনির জন্য করা এসব চুক্তির সবই হয়েছে গোপনে। এসবের মাধ্যমে টাকা বানাবার স্বার্থে আদিবাসীদের বসতি ছাড়তেই হবে।

অতএব, এই যুদ্ধ।



একটি দেশ যা নিজেকে বলে গণতান্ত্রিক, তা যখন নিজ সীমান্তের ভেতরেই যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন কেমন হয় সেই যুদ্ধ? প্রতিরোধের কোনো সুযোগ তখন থাকে কি? মাওবাদী কারা? তারা কি কেবলই কোনো অচল মতবাদ কায়েম করতে চাওয়া নৈরাজ্যবাদী? সশস্ত্র সংগ্রাম কি সর্বদাই অগণতান্ত্রিক?



রওনা হওয়ার আগের দিন ঘুমঘোর স্বরে মা বললেন, ‘আমার কেবল মনে হচ্ছে, ভারতের এখন একটা বিপ্লব প্রয়োজন।’



ইন্টারনেটের একটি লেখা বলছে, মাওবাদী সংগঠনগুলোকে ‘নেতৃত্বহীন’ করার জন্য ইসরায়েলের মোসাদ ভারতের ৩০ জন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারকে টার্গেট করে গুপ্তহত্যার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। (বাংলাদেশেও জরুরি অবস্থার সময়ে গঠিত সোয়াত (ঝডঅঞ) বাহিনীর একদল উচ্চপদস্থ অফিসারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকওয়াটার। ইরাক ও পাকিস্তানে সিআইএ-র ভাড়াটে হিসেবে গণহত্যা চালাবার পর এরা নামপরিবর্তন করে রাখে ঢবথঅনুবাদক) সংবাদ মাধ্যমে খবর আসছে, ইসরায়েল থেকে অনেকগুলি যন্ত্র কেনা হয়েছে: লেজার রেঞ্জ-ফাইন্ডার, থার্মাল ইমেজিং ইক্যুইপমেন্ট এবং চালকবিহীন বিমান। মার্কিন সেনাবাহিনীতে এগুলো খুবই জনপ্রিয়। গরিবদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য মোক্ষম সব অস্ত্র।



রায়পুর থেকে দান্তেওয়াদা যাওয়ার ১০ ঘন্টা পথের অঞ্চলটিকে বলা হয় ‘মাওবাদী উপদ্রুত’ এলাকা। উপদ্রব ও সংক্রমণ নির্মুল করাই নিয়ম। এভাবে গণহত্যার শব্দ আমাদের ভাষায় ঢুকে পড়েছে। রায়পুরের ঠিক বাইরেই বিরাট এক বিলবোর্ডে বেদান্ত ক্যান্সার হাসপাতালের বিজ্ঞাপন। এই কোম্পানি (এখানেই একসময় চাকরি করতেন আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) উড়িষ্যার যেখানেই বক্সাইটের খনি বানায় সেখানেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থায়ন করে। এভাবেই খনি কোম্পানিগুলো আমাদের মনে জায়গা করে নেয়। তাদের এই কৌশলের নাম কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর)_ সামাজিক ভাবে দায়বদ্ধ কর্পোরেট। এই সিএসআর-এর মাধ্যমেই তারা তাদের অর্থনৈতিক কায়কারবার ঢেকে রাখে। কর্ণাটক রাজ্যের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন বলছে, প্রতি টন লোহার জন্য খনি কোম্পানি সরকারকে দেয় ২৭ রুপি আর তাদের লাভ হয় ৫০০০ টাকা। বক্সাইট কিংবা অ্যালুমিনিয়াম খনিতে লাভের হার আরো আরো বেশি। এভাবেই প্রকাশ্য দিবালোক বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুট হয়ে যাচ্ছে। এই টাকা দিয়েই তারা নির্বাচন, বিচারক, সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল, এনজিও ও সাহায্য সংস্থাগুলোকে কিনে রাখতে পারে। তাই কোথাও ক্যান্সার হাসপাতাল দেখলেই আমার সন্দেহ হয়, আসেপাশে কোথাও খনি রয়েছে।



পথে পড়লো ব্রিগেডিয়ার বি. কে. পনওয়ারের বিখ্যাত সন্ত্রাসবিরোধী ও জঙ্গলযুদ্ধ প্রশিক্ষণ কলেজ। তাঁর কাজ হলো দুর্নীতিবাজ ও বখাটে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গল-কমান্ডো বানানো। প্রতি ছয় সপ্তাহে এখান থেকে আটশ পুলিশ সদস্য যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে বেরয়। ভারত জুড়ে এরকম আরো বিশটি কলেজ হচ্ছে। এভাবে পুলিশদের সেনা বানানো হচ্ছে (কাশ্মীরে হচ্ছে উল্টোটা। সেখানে সেনাবাহিনীই পুলিশের কাজ করছে)। যা-ই করা হোক, জনগণ তাদের শত্র“।



দান্তেশ্বরী মন্দিরে আমি সময়মতোই পৌঁছলাম। কথামতো আমার হাতে ক্যামেরা ও নারকেল, কপালে টিপ। কিন্তু ক্যাপ পরা কাউকে দেখা গেল না। কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি কিশোর আমার সামনে এল। কিন্তু সঙ্কেতবাক্য বললো না। সঙ্গে একটি আউটলুক পত্রিকা ও কলা আনবার কথা তার, সেগুলোও দেখা গেল না। একটি চিরকুট দিল সে, তাতে লেখা: ‘আউটলুট পত্রিকা পাওয়া গেল না’। আর কলা?

‘খেয়ে ফেলেছি’, কিশোরটি বললো, ‘ক্ষুধা লেগেছিল’।



তার কাঁধে একটি ঝোলা। তার নাম মাংটু। এই নাকি ভারতের বৃহত্তম নিরাপত্তা হুমকি?

মন্দির থেকে হেটে কিছুটা এগলেই সব কিছু দ্রুত ঘটতে লাগলো। মটরবাইকে করে দুটো লোক এল। তাদের পেছনে চড়ে বসলাম। জানি না কোথায় যাচ্ছি। স্থানীয় পুলিশ সুপারের বাড়ি পার হলাম। গতবার এখানে এসে তার সঙ্গে কথা হয়। সেই এসপি অকপটে বলেছিলেন, ‘দেখুন ম্যাম, খোলাখুলি বলছি, এই সমস্যার সমাধান পুলিশ বা সেনাবাহিনী দিয়ে হবে না। এইসব উপজাতীয়দের সমস্যা হলো তারা লোভ বোঝে না। তাদের লোভী করে তুলতে না পারলে আমাদের কোনো আশা নেই। আমি আমার বসকে বলেছি, বাহিনীগুলো সরিয়ে নিন আর প্রত্যেক আদিবাসীদের বাড়িতে একটি করে টেলিভিশন দিয়ে দিন। দেখবেন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’



আমরা শহর পেরিয়ে এলাম। তিন ঘন্টা চলার পর হঠাৎ একজায়গায় তারা থামলো। আমি আর মাংটু নেমে পড়লাম। ঝোলা কাঁধে নিয়ে আমি এই পুচকে অভ্যন্তরীণ হুমকির পিছু পিছু রাস্তা ছেড়ে বনের ভেতর গিয়ে ঢুকলাম। দিনটা দারুণ সুন্দর। বনের মেঝে ঝরাপাতায় সোনায় মোড়া। কিছুটা যাওয়ার পর একটা নদী পড়লো। ‘ওই পারে’ সেই এসপি বলেছিলেন, কাউকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া আছে’। নদীটা পার হতে হতে আমার সেই কথা মনে পড়লো। কিন্তু মাংটুকে মনে হলো নিশ্চিন্ত। ওর পিছু পিছু আমিও ঢুকে পড়লাম মাওবাদী অধ্যুষিত দণ্ডকারণ্যের অরণ্যের আরো গভীরে। ...

অরণ্যে থাকার শেষ রাতে একটি পাহাড়ের ঢালে আমরা ক্যাম্প করলাম। এটা পেরুলেই সেই রাস্তা, যেখানে আমাকে মটরবাইক থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ ক’দিনে বনটাও যেন বদলে গেছে। চিরাউঞ্জি, তুলা আর আমগাছগুলোয় ফুল আর মুকুল ফোটা শুরু করেছে।



কুদুর গ্রামবাসীরা থেকে আমার জন্য সদ্য ধরা মাছ পাঠিয়েছে। আর পাঠিয়েছে বন থেকে পাওয়া অথবা তাদের ফলানো একাত্তর পদের ফল, সবজি, কালাই ডাল, পতঙ্গের একটি তালিকা। সামান্য একটি তালিকা অথচ এটাই যেন তাদের দুনিয়ার মানচিত্র।



বনে খবর আসে ছোটো ছোটো চিরকুটে করে। ওরা বলে বিস্কুট। আমার জন্য এরকম দুটি বিস্কুট এসেছে। কমরেড নর্মদা পাঠিয়েছে একটি কবিতা আর কমরেড মাসে পাঠিয়েছে সুন্দর এক চিঠি (অথচ কখনো কি জানবো কে এই নারী?)।

কমরেড সুখদেবের কম্পিউটারে আমি ইকবাল বানোর গাওয়া ফায়েজ আহমদ ফায়েজের লেখা হাম দেখেঙ্গে গানটি তুলে দিলাম। গানটি তিনি গেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল হকের দুঃশাসনের সময় লাহোরের একটি বিখ্যাত কনসার্টে।



যখন বাতিল আর অভিশপ্তরা বসবে উঁচুতে

সব মুকুট আর সিংহাসন ধূলায় লুটাবে,

হাম দেখেঙ্গে



গানের জবাবে লাহোরের পঞ্চাশ হাজার দর্শক একসঙ্গে আওয়াজ তুলেছিল, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। এত এত বছর পর সেই আওয়াজ আবার এই অরণ্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। অদ্ভুত, এই মিল।





‘যারা ভুল করে মাওবাদীদের বুদ্ধিবৃত্তিক অথবা বাস্তব সাহায্য করবে’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের হুমকি দিয়েছেন। সঙ্গীত ভাগাভাগি করা কি সেরকম অপরাধের পর্যায়ে পড়ে?

ভোরবেলা আমি বিদায় নিলাম। হাঁটা শুরু করার পর এই প্রথম দেখলাম নীতি আর সুখদেব তাদের একে ৪৭-এর সেফটি ক্যাচ অন করে নিল। ‘আমাদের ওপর আক্রমণ শুরু হলে আপনি কী করবেন, জানেন?’, বললো সুখদেব।

‘হ্যাঁ’, বললাম আমি, ‘সঙ্গে সঙ্গে আমরণ অনশন ঘোষণা করবো’।

পাথরের ওপর বসে সে হাসতে লাগলো।



এক ঘন্টা ধরে আমরা পাহাড়ে উঠলাম। নীচে সেই রাস্তা, যা দিয়ে অরণ্যে ঢুকেছিলাম। লুকিয়ে থেকে আমরা মটরবাইকের আওয়াজের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন তা আসলো, লাল সালাম বলে বিদায় জানাল ওরা। লাল সালাম কমরেড।

পেছন ফিরে দেখি, তারা সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। হাত নাড়ছে। ছোটো এক বন্ধন। ওই মানুষেরা স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করছে, যখন দুনিয়া বাস করছে দুঃস্বপ্নের মধ্যে। প্রতি রাতে আমার এই সফরের কথা মনে আসে। সেইসব রাতের আকাশ, সেইসব বনের পথ। আমি যেন দেখি, আমার টর্চের আলোয় ক্ষয় হয়ে যাওয়া চপ্পলের ওপর কমরেড কমলার পা হেঁটে চলেছে। জানি, সে এখনো ছুটে বেড়াচ্ছে। ছুটছে, কেবল তার নিজের জন্য নয়, আমাদের সকলের হয়ে আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।



আউটলুক থেকে করা মূল রচনার সংক্ষেপিত অনুবাদ।



মূল রচনার লিংক Click This Link

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১:০৩

ফাহমিদুল হক বলেছেন: "বাহিনীগুলো সরিয়ে নিন আর প্রত্যেক আদিবাসীদের বাড়িতে একটি করে টেলিভিশন দিয়ে দিন। দেখবেন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

উক্তিটা খুবই পছন্দ হলো। টেলিভিশন দেখলে, বিজ্ঞাপন দেখলে মানুষ বিরাজনীতিক হয়ে পড়ে।

২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১:২২

ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: মিডিয়া-মিশ্রিত বাস্তবতা হয়তো ডাহা মিথ্যা নয়, কিন্তু প্রতারক। চরম বাণিজ্যের কাছে আমরা চরম সত্য আশা করি, এই আত্মপ্রতারণার রোগ না থাকলে মিডিয়া আজ নিজেই রিয়েলিটি ক্রিয়েট করতে পারতো না।

২| ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১:০৯

রাহা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

৩| ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১:২২

ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়বার জন্য।

৪| ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১:৪৫

রাজর্ষী বলেছেন: সুন্দর।

৫| ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ২:১৭

ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ২২ শে মার্চ, ২০১০ সকাল ৯:৫৪

ফিরোজ-২ বলেছেন: ধন্যবাদ, ভালো লাগলো।

৭| ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৪৩

ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৮| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:০৪

মৃণালকান্তি দাস বলেছেন: আপনার জন্য একটা লেখা... পড়বেন, দয়া করে...


কিষেনজী, আপনাকে

কিষেনজী, শ্রেণীচরিত্র কাকে বলে?
কেউ শ্রেণীশত্রু হয় কীভাবে?
আপনি কোন্‌ শ্রেণীতে অবস্থান করছেন?
বেলপাহাড়ির মাধব মুদি কোন‍‌ শ্রেণীতে অবস্থান করছিলেন?
কিষেনজী, আমি একজন রুজি-রোজগেরে মধ্যবিত্ত।
আমি বৈদ্য। হিন্দু। পুং।
কিষেনজী, আমি কি আপনার শ্রেণীশত্রু?

কিষেনজী, আপনি নাকি সাঁকরাইল থানার ও সি অতীন দত্তকে একটা নতুন সোয়েটার দিয়েছ্নে? তাঁকে নাকি স্টিলের থালায় মুড়ি খেতে দিয়েছেন? খুব ভাল!
আপনার মুখটাতো টিভিতে দেখা যায় না, তবে বেশ একটা মানবিক সুখ্যাত হয়েছে আপনার। চারদিকে অনেকে এই মানবিক মুখের কথা বলছেন।
আপনার বেশ ফ্যান হয়েছে।
বাস্তবিক, আপনি বেশ একটা বিনোদনের বন্দোবস্ত করেছেন। রোজদিন, একই রাজনীতিকদের একই কথা শুনে শুনে লোক একদম বোর হয়ে গেছে। আপনি বেশ একটা ফ্রেশ এয়ার এনেছেন।
চ্যানেলে আপনি মানেই, হাই টি আর পি!
আপনার বাংলা বলার ধরনটাও মিষ্টি।
আপনার কাঁধে যে বন্দুকটা ঝোলে ওটাই কি এ কে ৪৭?
সারাক্ষণ বন্দুকটাকে কাঁধে ঝুলিয়ে রাখতে হয়?
কাঁধে ব্যথা হয় না কিষেনজী?

আপনি কিষেনজী ‘‘মাওবাদী’’।
আমি ‘‘চাকুরিজীবী’’।
আপনি তো নিশ্চয়ই ‘‘শ্রেণীচ্যুত’’।
আমি তো ‘‘মধ্যবিত্ত’’।
‘‘আপনি’’ মানুষ খুনের রাজনীতি করেন।
‘‘আমি’’ খুনের বিরুদ্ধে।
আপনি সেদিন সাঁকরাইল থানার ওসি-কে ‘‘মুক্তি’’ দেওয়ার সময় বলছিলেন, প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিস গুলি চালালে, গোলাপ বেরবে না, আপনারা তাই সাঁকরাইল থানার দুই পুলিসকর্মীকে নাকি খুন করেছেন —
ওঁদের প্রতিরোধ করতে হচ্ছে কেন কিষেনজী?
আপনারা ওঁদের মারতে যাচ্ছেন কেন কিষেনজী?
আপনারা মারতে পারলে ওঁরা প্রতিরোধ করতে পারবেন না?
আপনারাও তো নাকি রাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছেন!
আপনাদের প্রতিরোধটা বৈধ?
ওঁদের প্রতিরোধটা অবৈধ?
বাঁচার অধিকার তো সকলেরই আছে।
আপনারও তো আছে।
আপনার থাকলে সাঁকরাইল থানার দুই পুলিস কনস্টেবলের নেই?
পৃথিবীতে কবে, কোথায়, কে শুনেছেন, শ্রেণীশত্রু বলে চিহ্নিত করে গরিব হতদরিদ্র মানুষ মেরে বিপ্লব হয়?
চীনে মাও জে দঙ এরকম নির্বিচারে ‘‘শ্রেণীশত্রু’’ খতম অভিযান করেছিলেন নাকি?
এরকম হয়েছিল নাকি কিষেনজী?
আমার পড়াশোনা কম, হয়ে থাকলে আপনারা একটা পুস্তিকা প্রকাশ করতে পারেন। যেহেতু, ‘‘চিন্তাধারা’’ না বলে ‘‘মাওবাদ’’ বলছেন, দায় তো তাতে একটা থেকেই যায়। তাছাড়া এতে আমাদেরও জ্ঞানগম্যি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে — বাস্তব জ্ঞানে যা বুঝি, তা এইরকম —
একটা চোখের বদলায় আরেকটা চোখ যদি নীতি হয়, তবে একদিন গোটা পৃথিবীতেই আর কেউ চক্ষুষ্মান থাকবেন না। তখন সমাজ বদলটা কেউ দেখবেন কী করে?
‘‘পরিবর্তনটা’’ দেখতে হবে তো।

শুনছিলাম, আপনি টিভিতে বলছেন, আপনার মাকে বলে বিপ্লব করতে এসেছেন। সাঁকরাইল থানার দুই পুলিস কর্মীও তাঁদের মাকে বলেই চাকরি করতে এসেছিলেন। আপনার আসাটা মহতী, আর ওঁদের আসাটা পাপের?
আপনি তো টিভি ক্যামেরার দিকে পেছন ঘুরে থাকেন, টিভি দেখেন নিশ্চয়ই সামনে ফিরেই। ওই দুই পুলিস কর্মীর বাড়ির লোকজন কাঁদছিলেন, একজনের একটা কিশোরী মেয়ে কাঁদছিল, দেখেছেন? টিভি-তেই দেখিয়েছে। ওই মেয়েটা, ওর বাবা, সবাই আপনাদের শ্রেণীশত্রু?
বেলপাহাড়ির নেকড়া আঁচড়া গ্রামের মাধব মুদি আপনার শ্রেণীশত্রু?
মাধব মুদির মতো ওই রকম গরিব চাষী আপনাদের শ্রেণীশত্রু হলো কোন তত্ত্বে?
কলকাতার বিদ্যা-বুদ্ধিজীবীরা শ্রেণীমিত্র
এই তত্ত্ব কোন বইয়ে আছে কিষেনজী?
জঙ্গলে গোরু চরিয়ে, কাঠ কেটে, পাতা কুড়িয়ে খায় যাঁরা, তাঁরা আপনার শ্রেণীশত্রু? এই ‘‘শত্রু-দের মেরে মেরেই আপনি সমাজ বিপ্লব করছেন? এত খুন পৃথিবী সইবে কী করে কিষেনজী?
এত লাশ রাখবেন কোথায়?
এত রক্ত, আপনাদের গায়ে-হাতেও ছিঁটে আসে না?
ধোবেন কী ভাবে?
দাগ মুছবেন কী করে?

প্রায় প্রতিদিনই আপনাকে টিভি-তে দেখা যায়। আপনি, কিষেনজী, এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, বুর্জোয়া মিডিয়াকে কাজে লাগাচ্ছেন। ভাল? এটা খুবই ভাল ব্যাপার। আপনারও তাহলে এই প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রে আস্থা আছে! অপহরণ, খুন, এসব গোপনে করলেও, ‘‘মুক্তি সম্মেলন’’ ওপেন!
কেন?
আপনারও জানাবার দায় আছে?
কীসের দায়?
আপনি, আপনার কথা ব্যাপক মানুষকে শোনাতে চান?
কেন? শোনাবার জন্য তো আপনার কাঁধের বন্দুকটাই আছে। ওটা দিয়ে হবে না? তাক করে বলবেন, ‘‘শোন ব্যাটা’’! অমনি সবাই শুনবেন। ভয়ে ভয়ে।
হবে না এটা?
এভাবে কি হয় না?
যদি হয়, তবে তা না করে, অত খাটনি করে, মুখে গামছা পেঁচিয়ে, ক্যামেরার দিকে পেছন ফিরে, মুক্তি দেখাতে হচ্ছে কেন?
কৌশল?
কীসের কৌশল?
‘‘বিপ্লবী’’ লড়াই করবে তার ‘‘বন্দুক’’ দিয়ে। শ্রেণীশত্রু ‘‘খতম’’ করে। কাউকে ধরে। কাউকে ছেড়ে—
এজন্য তো কোনও সামাজিক অনুমোদন দরকার হচ্ছে না আপনার।
নিচ্ছেনও না। তবে —
ঘটা করে মুক্তিটা দেখাতে গেলেন কেন?
কেন সব বিষয়ে নিজের কথা শোনাতে তৎপর আপনি টিভি-র পর্দায়?
আপনারও কি প্রচারের লোভ আছে? না‍‌ কি —
আপনিও জানাতে চান, আপনার কথা ব্যাপক মানুষকে?
যদি তাই সত্যি হয়, তবে লুকিয়ে থাকবেন কেন?
নিজের দেশে, নিজের কথা লুকিয়ে বলতে হবে কেন কিষেনজী?
নিজেকে ওপেন করে, প্রকাশ্যে এসে নিজের কথা বলা যায় না?
বলছেন তো মানুষের কথা।
অন্য মানুষ তা শুনবেন না কেন?
আপনার কি মনে হয়, খুনোখুনি না করলে আপনার কথা কেউ শুনবেনই না? তবে তো বলতে হবে, আপনার নিতান্তই দুর্ভাগ্য? একবার ভেবে দেখতে পারেন।
ইচ্ছে যখন আছে নিজের কথা মানুষকে শোনানোর —
ইচ্ছে যখন আছে নিজের কাজ মানুষকে দেখানোর —
তখন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকবেন কেন?
প্রকাশ্যে এসেই কথা বলুন না কিষেনজী।
প্রকাশ্যে এসেই কাজ করুন না আপনি।
এদেশটা তো আপনারও কিষেনজী।
নয়?
ভারতবর্ষকে নিজের দেশ ভাবেন না আপনি?
মানুষ আপনার কথা শুনলে রাষ্ট্রও শুনতে বাধ্য হবে।
মানুষই যদি আপনার কথা না শোনেন, তবে রাষ্ট্র তা মানবে কী করে?
তাছাড়া, রাষ্ট্র তো আমাকে আপনাকে নিয়েই।
তাই না কিষেনজী?
আমাদের ভূমিকা কি কেবল খুন করা?
মানুষ মেরে মেরে রাষ্ট্র নামে যন্ত্রটাকে পাল্টে ফেলা?
তাতে ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ বা সমর্থন রইল কি রইল না, তা দেখার জন্য কোনও যন্ত্রের দরকার নেই?
তবে আর আপনার সঙ্গে হিটলারের পার্থক্য কোথায়?

বিপ্লবের তত্ত্ব, মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, মাও জে দঙের চিন্তাধারা বা মাওবাদ, যা আপনাদের এসব কিছু না জেনেও অনেক লোক টিভি-তে আপনার কথা শোনেন, কাগজে পড়েন, তা কি আপনি জানেন কিষেনজী? আপনি মিডিয়াকে বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। ভাল!
বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একপ্রকার একক সিদ্ধান্তেই দল চালান বলে, শ্রেণীগত অবস্থানে তাঁর দল আপনাদের কাছের না হলেও, ব্যক্তি হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের পছন্দের হতেই পারেন।
ব্যক্তির ওপর তাহলে আপনিও গুরুত্ব দেন?
দ্বিতীয়ত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন তো ভোটে জিতে। তারজন্য তো ২০১১-তে ভোট হবে। আপনি যদি তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান, তবে, জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে ভোটের প্রচারে অংশ নিন না। ভাল তো সেটা!
সামনেই তো ১০টা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন আছে। এখন থেকেই শুরু করে দিন না।
এটা তো একটা গণতান্ত্রিক প্রকাশ্য পদ্ধতি।
বেরিয়ে আসুন না এই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।
এসে বলুন আপনার কথা।
বলুন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিতে।
চাইছেন যখন, তখন বলতে বাধা কী?
প্রকাশ্যে বলুন।
‘‘রাষ্ট্র বিপ্লব’’ — ‘‘সমাজ পরিবর্তন’’, সবই তো পরিণতি পাবে তাহলে। এজন্য এত খুনোখুনির দরকার কী?
এই রকম, এরাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং —
অন্য রাজ্যে যাঁরা আছেন, যাঁদের আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দেখেন, ভাবেন, তাঁরা সেই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হবেন। ব্যস!
গোটা দেশ তখন, আপনার যা ইচ্ছে, তেমন মুখ্যমন্ত্রীর সমাহারে সুজলা-সুফলা হবে।
এজন্য জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে, এত গরিব মানুষ মেরে কেন ‘‘বিপ্লব’’ করছেন কিষেনজী?

কিষেনজী, আমি মনে করি না, আমাদের দেশটা খারাপ।
কিষেনজী, আমি মনে করি না, আমাদের দেশটা অন্ধকার।
কিষেনজী, আমি মনে করি না, আমাদের দেশটা কুৎসিত।
আপনারা বলেন, মতাদর্শের সংগ্রাম —
আমি মনে করি না মতাদর্শের সংগ্রামে এত লাশ, এত রক্ত লাগে। হিংসার বদলায় হিংসা আমি সহ্য করি না।
কোনও যুক্তিতেই খুনের অভিযানকে সমর্থন করি না।
রাষ্ট্রকে আমি মনে করি না মঙ্গলগ্রহের একটা পাথরের টুকরো। তাকে রক্ষা করি যখন আমরাই, তখন বদলাতেও পারি আমরাই।
এবং —
রক্ষা করতে যখন আমার ভূমিকা ঠিক করি, বদলাতেও ভূমিকা ঠিক করতে পারি আমরাই।
সে ভূমিকা এমন খুনোখুনি দিয়ে ঠিক হতে পারে না।
যিনিই বলুন, যেভাবেই বলুন, যেখানেই বলুন, যে তত্ত্বেই বলুন, খুন কোনও সমাধান নয়।
খুন কোনও তত্ত্ব নয়।
রাষ্ট্রের নিপীড়নের পালটাও খুন নয়।
খুন নয়। খুন নয়। খুন নয়।
দুর্বলরা খুন করে।
আমি খুনের বিরুদ্ধে।
আমি একজন ‘‘নগণ্য’’ চাকুরিজীবী।
তবে, ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা ততটা ‘‘নগণ্য’’ নয়।
তাই আমার কথাটাও একবার ভাববেন কিষেনজী।
ধন্যবাদ!
পুন :—
এই লেখাটা শেষ করার পর একটা ঘটনা ঘটল, আপনাকে জানাই তা, আমার শ্যালকের পুত্রের বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। তারই সামনে আলোচনা হচ্ছিল ডিসেম্বরে বেড়াতে গেলে ভাল হয়, এই নিয়ে।
আলোচনার মাঝেই আমার স্ত্রী সাড়ে পাঁচ বছরের সেই বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কোথায় যাব আমরা? পাহাড়ে না জঙ্গলে?’’
বাচ্চাটা প্রচণ্ড চিৎকারে বলে উঠল, ‘‘জঙ্গলে যাব না। ওখানে মাওবাদী আছে।’’
মুহূর্তে আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
সে চিৎকার করল আরও একবার।
তারপর তাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘‘কে বলল’’?
সে বলল, ‘‘টিভি-তে দেখেছি। কাঁধে বন্দুক। যাব না জঙ্গলে।’’
কিষেনজী, আপনিও একটা বাচ্চাকে ভয় দেখাতে পেরেছেন। আর কি চাই?

৯| ১০ ই মে, ২০১০ বিকাল ৫:৫০

সুবিদ্ বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য.....প্রথম আলোতে পড়েছিলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.